somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কাধে মাথা রেখে মেয়েটির জ্বর ভাল হয়ে গেল !! ওয়াও!!! ;) ;) ;)

৩১ শে মে, ২০১২ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি খানিকটা ইতস্তত করেই নিশির কপালে হাত দিলাম । মনে হচ্ছিল যে ওর কপালে হাত রাখাটা ঠিক হবে কিনা ?
যদিও ও আমার বন্ধু তবুও তো একটা মেয়ের কপালে চট করে হাত দেওয়া যায় না ।
হাত দেওয়া ঠিকও না ।
তবুও ওর কপালে হাত রাখলাম । বেশ উত্তাপ । জ্বর বোধহয় ভাল করেই এসেছে । আমি বললাম
-তোমার গায়ে তো জ্বর ।
-হুম ।
-তাহলে আসলে কেন ?
-পরীক্ষা ছিল ।
-ও ।
-অপু আমার খুব খারাপ লাগছে । আমি তোমাকে ধরে হাটবো একটু ?
-আচ্ছা সমস্যা নেই । ধর । আমার হাত ধর ।
নিশি আমার হাত ধরল । ঠিক তখনই কেমন জানি একটা শিরশিরে অনুভূতি পুরো শরীর জুরে বয়ে গেল ।
কেন গেল ঠিক জানি না । নিশি আমাকে ধরেই হাটতে লাগল । আমি নিশিকে বললাম
-বাসে কি উঠতে পারবে এ শরীর নিয়ে ? বাসে যে পরিমান ভিড় !
নিশিকে খানিকটা অসহায় মনে হল । বলল
-কি আর করা ? বাসায় তো যেতে হবে !
কিন্তু বাসগুলোর যা অবস্থা আর যে পরিমান ভীড় , নিশি কিছুতেই উঠতে পারবে না ।
আর উঠলেও ভিতরে যে পরিমান গরম ওর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে ।
আমি রিক্সা ঠিক করলাম । একেবারে বাসা পর্যন্ত রিক্সা ঠিক করতে দেখে নিশি বলল
-এতো দুর রিক্সায় যাবে ?
আমি কিছু না বলে কেবল হাসলাম ।
-আমি বাসে যেতে পারবো ।
-পারবে ভাল কথা । এখন চুপ করে থাকো ।
খানিকটা কর্তিত্বের সুরে বললাম । নিশি আর কোন কথা বলল না ।
তবে ওর চোখে কেমন যেন একটা দৃষ্টি ছিল । কেমন একটা চোখে ও আমার দিকে তাকাল । শরীর খারাপ বোধহয় এই জন্য এমন মনে হচ্ছে । রিক্সায় উঠে ও হুড তুলে দিতে বলল ।
সত্যি কথা কি বলব আমার একটু অস্বস্তি লাগছিল বটে ।
নিশির এর আগে কয়েকবার রিক্সায় উঠেছি বটে কিন্তু এমন ভাবে কখনও উঠিনি ।
আর নিশি এখনও আমার হাত ছাড়ে নি । খানিক রিক্সা চলার পর নিশি বলল
-আমার শরীরটা আরো খারাপ লাগছে আমি তোমার কাধে মাথা রেখে একটু শোব ?
বলে কি এই মেয়ে !
আমি অস্বস্তির চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছালাম । আমার জবাবের অপেক্ষা না করে নিশি আমার কাধে মাথা রাখল ।
আমার অস্বস্তিটা আর একটু বেড়ে গেল । এর আগে আমি কখনও কোন মেয়ের এতো কাছে আসি নি । বুকের স্পন্দন যেন প্রত্যেক মুহুর্তে আরো দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে ।
আমার সব থেকে ভয় লাগছে এই ভেবে যে যদি এখন আমার ইউনিভার্সিটির কেউ দেখে ফেলে । কি ভেবে বসবে কে জানে ?
আমি বললাম
-তোমার কি খুব খারাপ লাগছে ?
-হুমম !
-আচ্ছা তুমি চুপ করে শুয়ে থাকো ।
অস্বস্তি লাগলেও একটা ভাল লাগার অনুভূতিও ছিল সাথে সাথে ।
এই যে নিশি আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে কয়দিন আগেও এটা আমি ভাবতেই পারতাম না । ভাববো কিভাবে ওকে তো আমি ঠিক মত চিনতামই না ।

বেশিদিন আগের কথাও না আমি প্রতিদিন ভার্সিটিতে যেতাম বাসে করে । বাসা থেকে বাস স্টান্ডটা একটু দুরে হওয়া একটু পথ হাটতে হত । একটু বেলা হলেই ভীড় হত বলে আমি একটু সকাল সকালই রওনা হতাম ।
কিছু দিন যাবার পর লক্ষ্য করলাম আমাদের এলাকা থেকে আর একটা মেয়ে ঠিক আমার মতই যাওয়া আসা করে ।
এবং মেয়েটা আমার ইউনিভার্সিটিতেই পড়ে ।
লম্বায় প্রায় আমার সমান । গায়ের রং উজ্জল শ্যামল । অবশ্য ফর্সাও হতে পারে । কারন মেয়েটা বোরখা পরে । ইরানী বোরখা । মুখটা স্কার্প দিয়ে ঢাকা । তাই খুব ভাল ভাবে বোঝার উপায় নেই ।
যা হোক আস্তে আস্তে মেয়েটার উপর আগ্রহ তৈরি হতে লাগল । আর আমার কেন জানি মনে লাগল যে আমি যেমন মেয়েটার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছি মেয়েটাও ঠিক তেমনি আগ্রহী হয়ে উঠছে । আমি যদি একটু আগে পৌছাতাম মেয়েটার জন্য ওয়েট করতাম । মেয়েটা যে বাসে উঠতো আমিও সেটাতে উঠতাম ।
আমার কেন জানি মনে হল মেয়েটাও আমার জন্য ওয়েট করতো । কিন্তু বিশ্বাস হত না । মেয়েটা কেন আমার জন্য খামোখা ওয়েক করবে !
কিন্তু একদিন আমি বিশ্বাস করলাম ।
ঐ দিন আমরা দুইজনই বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম । বাস আসতে দেখে টিকিট কাটার জন্য আমি পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানি ব্যাগ আনতে ভূলে গেছি ।
দুর !
এখন আবার যেতে হবে বাসায় !
মেয়েটা আমার পকেটে হাত দেওয়া দেখে কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছিল । বাস চলে গেল ।
কিন্তু মেয়েটা বাসে উঠল না ।
আমি আবার বাসায় যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক এমন সময় মেয়েটা খানিকটা ইতস্তত করে বলল
-মানি ব্যাগ আনতে ভূলে গেছ ?
-হুম ।
আমি বোকার মত হাসলাম ।
-এখন কি করবা ?
-যাই বাসায় গিয়ে মানি ব্যাগ নিয়ে আসি !
মেয়েটা বলল
-কিছু মনে না করলে আমি তোমার টিকিট টা কেটে দেই ?
এটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল ।
সত্যিই অপ্রত্যাশিত ছিল ।
আমি না করতে পারলাম না । ঐ দিন এক সাথে বাসে করে ইউনিভার্সিটিতে গেলাম । এমন কি সকাল বেলার নাস্তাটাও ও ই করাল ।
তারপরই আস্তে আস্তে আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে । কিন্তু দুঃখের একটা বিষয় হল ওর চেহারাটাই আমি ভাল করে দেখতে পারি নি এখনও । সব সময় ও বোরখা পরে থাকে আর আর স্কার্প দিয়ে ওর মুখ ঢাকা থাকে ।

বাসায় পৌছে দেবার পর নিশি খুব কৃতজ্ঞতার চোখে তাকাল আমার দিকে । কিন্তু আমি যেন আর কিছু দেখতে পেলাম ওখানে । হয়তো আমার মনের ভুল ।
বাসায় এসে গোছল করে খাওয়াদাওয়া করে নিলাম । শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলাম এমন সময় নিশির ফোন ।
-কি কর ?
গলা বেশ স্বাভাবিক মনে হল । আমি বললাম
-টিভি দেখছি । তোমার শরীরের অবস্থা কেমন ?
-এখন ভাল । গোছল করার পর ভাল লাগছে ।
-ঔষধ খেয়েছ ?
- খাওয়া লাগবে না । এমনি ঠিক হয়ে যাবে ।
-বলেছে তোমাকে !
-উহহ শোন না !
-বল ।
-বিকেলে ফ্রী আছো ?
-এইতো আছি । কেন ?
-আমাকে একটু লেক পাড়ে নিয়ে যাবা ?
-লেক পাড়ে ? তোমার না শরীর খারাপ ?
-না । আমার শরীর ভাল হয়ে গেছে । আর তুমি থাকলে আমার কিছু হবে না ।
নিশির এই কথাটার মানে আমি ঠিক বুঝলাম না । নিশি এমনটা কেন বলল !
-কি হল নিয়ে যাবা না ?
-হুম । যাবো ।

বিকেল বেলা ওর বাড়ির সামনে গিয়ে ফোন দিতেই ও নেমে এল । আমি ভেবেছিলাম হয়তো বোরখা পরেই আসবে কিন্তু ও যখন নিচে নামল আমার বিষম খাওয়ার মত অবস্থা ।
ও আজ বোরখা পরে নি । সাদা রংয়ের একটা চুড়িদার পরেছে । আমি কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলাম না । কেবল তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে ।
বোরখা পরা অবস্থায় ওর চোখ দেখে বোঝা যেত যে ও বেশ সুন্দর । তাই বলে এতো সুন্দর হবে আমি ভাবতেই পারি নি । সত্যি সত্যিই হা করে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । নিশি কাছে এসে বলল
-কি দেখছো অমন করে ?
আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না । স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগল । কেবল এই কথাটাই বলতে পারলাম যে
-তুমি এতো সুন্দর কেন ?
নিশি হাসল । বলল
-এটা কেমন প্রশ্ন হল ? কেন এতো সুন্দর ? এটা কি আমার হাতে নাকি ? চল রিক্সা নিই ।
-চল ।
রিক্সায় উঠে আমার মনটা খানিকটা খারাপ হল । সকালবেলা কি সুন্দর নিশি আমার হাত ধরে ছিল । আমার কত কাছে বসে ছিল । আর এখন !
-কি হল ?
-কিছু না ।
-তোমার চেহারাটা এমন কেন লাগছে ?
-না কিছু না ।
-বল আমাকে ।
-না কিছু না ।
-বল আমাকে । প্লিজ বল ।
আমি অন্য দিকে তাকাই । চারপাশের মানুষ জন দেখতে চেষ্টা করি । হঠাৎ নিশি আমার হাতটা ধরল ।
-এবার ?
আমি সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকালাম ।
কি অদ্ভুদ সেই চোখের দৃষ্টি ! আর কি অদ্ভুদ ভাবেই না আমার দিকে তাকিয়ে আছে !!
আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না । কেবল তাকিয়েই রইলাম ওর দিকে । নিশিও ঠি একই ভাবে তাকিয়ে রইল আমার দিকে ।
এই তাকিয়ে থাকার যেন কোন শেষ নাই
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১২ রাত ১০:২৭
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×