somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিশি যে কথা লিখেছিল প্রেমপত্রে !!

০৩ রা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-দোস্ত মেয়েটা কেমন রে ?
নিলয়ের কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম ।
-কোনটা ?
-আরে নিশির ডান পাশের মেয়েটাকে দেখ ।
আমি তাকালাম । তবে ডান পাশের মেয়েটার দিকে না ।
নিশির দিকে ।
কতদিন পর নিশিকে দেখতে পেলাম !
আগে এমন কোন দিন ছিল না যে নিলয়দের বাড়ি আমি আসতাম না । কিন্তু ঐ ঘটনা টার পর থেকে এই বাড়িতে আসতেই কেমন জানি অস্বস্থি লাগত ।
নিলয় শত বলার পরও আসতে পারতাম না ।
কিন্তু আজকে আসতেই হল । আজকে নিশির জন্মদিন । নিলয় আমাকে এক প্রকার জোর করেই নিয়ে এল । নিলয়ের মাও ফোনে আসতে বলল । তারপর আর মানা করতে পারলাম না ।
রাতে কেক কাটার পর এখন আমরা নিলয়দের ছাদে বসে গল্প করছি ।
নিশির দুজন বন্ধুও এসেছে । তাদেরই একজন কে পছন্দ হয়েছে নিলয়ের ।
-কি বললি না কেমন ?
-হু .... হুম ! হ্যা ভাল ।
-ভাল মানে কি খুব ভাল ।
আমি বললাম
-নিশিকে বল ও একটা ব্যবস্থা করবে ।
-আর বলিস না । বলেছিলাম না আবার । বোন হয়ে ভায়ের একটু উপকার করবে তা না । সাফ বলেদিয়েছে এসব তাংফাং চলবে না । তা না হলে মাকে বলে দেবে ! এখন কোথাই যাই বলতো !!
-হবে একটা ব্যবস্থা হবে ।
এমন সময় দেখলাম নিশি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে । কাছে এসে বলল
-ভাইয়া ঝুমুরকে একটু বাসায় পৌছে দিয়ে আয়তো । ওর বাসা থেকে ফোন এসছে ।
আমি বললাম
-চল আমিও যাই । রাত হয়ে যাচ্ছে । হলের গেট বন্ধ হয়ে যাবে । নিশি বলল
-আপনাকে আম্মু খেয়ে যেতে বলেছে ।
নিলয় বলল
-আরে হ্যা তাই তো । মা তো তাই বলেছে । আর আজ না হয় না গেলি ।
তারপর নিশিকে বলল
-যা বন্ধুকে নিচে নামতে বল আমি আসছি ।
নিশি একটু দুরে যেতেই নিয়ল বলল
-তুই কাবাবের মধ্যে হাড্ডি হতে যাচ্ছিস ক্যান ?
-মানে কি ?
-মানে বুঝিস না ! তুই থাকলে কি আর শান্তি পাবো । তুই থাক । আমি ওর সাথে একা যাই ।
নিলয় চলে গেল ।
ছাদের ও পাশটাতে নিশি আর ওর আরেক বান্ধবী এখনও দাড়িয়ে গল্প করছে । হঠাৎ আমার অস্বস্থি শুরু করলো ।
মনে হল যদি এখন নিশি এদিকে আছে ?
ঐ দিনের কথা জিজ্ঞেস করে ? তাহলে ? আমিতো নাই হয়ে যাবো ! আমি এই কথাটা ভাবতে না ভাবতেই দেখলাম নিশি আমার দিকে এগিয়ে আসছে ।
আমি ছাদের রেলিংয়ের উপর বসে ছিলাম । নিশি ঠিক তার পাশে এসে দাড়াল । রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইল কিছুক্ষন । মনে হল কথা গুলো গুছিয়ে নিচ্ছে । তারপর বলল
-আপনি এখন আর আমাদের বাড়ি আসেন না কেন ?
এই প্রশ্নটা করার মানে কি ? নিশি খুব ভাল করেই জানে আমি কেন আর আসি না ।
এরকম ন্যাকামো মার্কা প্রশ্ন করার কোন মানে আছে ?

নিলয়ের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম থেকেই আমার বন্ধুত্ব । বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে বাসা হওয়াতে প্রায়ই ওদের বাসায় আসা হত । আন্টিও নিজের ছেলের মতই আমাকে আদর করা শুরু করা করে । নিশিকে প্রথম প্রথম যখন দেখতাম কিছু মনে হত না । বন্ধুর ছোট বোন হিসাবেই দেখতাম ।
কিন্তু আস্তে আস্তে লক্ষ্য করলাম নিশির প্রতি অনুভূতি গুলো কেমন যেন পরিবর্তন হচ্ছে । কিছু দিন পর আমি বুঝতে পারলাম যে আমি নিশির প্রেমে পড়েছি ।
তারপর থেকে নিলয়ের বাসায় যাওয়ার পরিমানটা বেড়ে গেল । যেতাম প্রায় প্রতি দিনই । নিশিকে দেখতাম । টুকটাক কথা বলতাম ।
আহা !
কত চমৎকার অনুভূতিই না ছিল !!
কিন্তু এতো কিছুতে যেন মন ভরছিল না । মনে হচ্ছিল ও যদি একটু বুঝতো !
তাই একদিন ঠিক করলাম যে নিশিকে বলব সব । আমার মনের কথা । তার প্রতি আমার অনুভূতির কথা ।
ঐ দিনের কথা আমার আজও মনে পড়ে । আমি ওর কলেজের সামনে দাড়িয়ে ছিলাম । হাতে বেশ কিছু গোলাপ আর রজনীগন্ধা নিয়ে । কিছুক্ষন পরেই ও বেড়িয়ে এল ।
আমি যখন ওকে ফুল গুলো দিলাম নিশি তখন বেশ খানিকটা চমকালো । কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো । তারপর বলল
-অপু ভাই আমি কখনও এমন করে ভাবি নি আপনার ব্যাপারে । আর আমার এসব পছন্দও না ।
নিশি ফুল গুলো ফেরৎ দিয়ে চলে গেল ।
তারপর থেকে নিলয়দের বাসায় যাওয়া আমার একদম কমে গেল । কেমন জানি একটা অস্বস্তি লাগতো সবসময় ।
আর একটা ভয় ছিল সব সময় যে নিশি যদি নিলয়কে সব কিছু বলে দেয় ?
অথবা ওর মাকে ?
আমার ব্যাপারে কি ভাববে ! লজ্জায় শেষ হয়ে যাবো !
তাই মোটামুটি ওদের বাসায় আসাটা বন্ধ করে দিলাম ।

নিশি আবার প্রশ্নটা করলো ।
-কই বললেন না তো এখন আর কেন আসেন না ।
-না এমনি । ঠিক সময় হয় না আর কি !
-আগে তো ঠিক সময় হতো । আমি খুব ভাল করে জানি আপনি আমার উপর রাগ করে আর আসেন না ।
নিশির কথায় কেমন একটা অভিমানের সুর ।
আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । ঐ দিনকার সুর আর আজকের সুর কেমন যেন এক না । নিশি আবার বলল
-আসলে আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারি নি । আগে আপনাকে প্রতিদিন দেখতাম তো তাই কিছু মনে হয় নি । কিন্তু আপনি যখন আমাদের বাসায় আসা বন্ধ করে দিলেন মনে হত কি যেন নেই ! মনে হত আমি যেন কি একটা মিস করছি ! একটা সময় পরে আমি বুঝতে পারলাম যে আমি আপনাকে মিস করতে শুরু করেছি । আমি আপনাকে ....
নিশি কথাটা শেষ করলো না ।
কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতে পারলাম ঐ শূন্য স্থানে ও আসলে কি বলতে চেয়েছিল ।
নিশি আবার বলল
-আগের মত আসবেন আমাদের বাসায় । কেমন?
-আচ্ছা ।
তারপর আমার দিকে একটা কাগজ বের করে দিয়ে বলল
-আর এটা আপনার জন্য ।
বলে নিশি আর দাড়াল না । এক প্রকার দৌড়েই চলে গে্ল ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:০৮
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×