somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কিনা হত আমার ভাবি সেই কিনা আর একটু হলে আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যেত !!

১৬ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-ভাইয়া জানলাটা একটু খুলে দিবেন ?
কথাটা বলেই মেয়েটি একটু লজ্জা পেল । ভাব খানা এমন যে কি একটা কথা বলে ফেলেছে ! এখন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে !
আমি মনে মনে বললাম
কি বল সুন্দরী ! কেবল বাসের জানালা কেন তোমার জন্য সব কিছু খুলে দিতে পারি !
আমি খুব আস্তে করে নিজের নাকটা কাধের কাছে নিয়ে এলাম । বোঝার চেষ্টা করলাম গা থেকে গন্ধ বের হচ্ছে কিনা ?
নাহ । বের হচ্ছে না । আমি যখন জানলাটা খুলতে যাবো আমার শরীরটা মোটামুটি মেয়েটার কাছাকাছি চলে যাবে । যদি গা থেকে গন্ধ বের হয় তাহলে আর মান সম্মান কিছু থাকবে না ।
আমি জানলাটা খুলে দিলাম । এক ঝাক বাতাস তখনই মেয়েটার চুল উড়িয়ে নিয়ে গেল । চুল সামলাতে সামলাতে মেয়েটা যখন থ্যাঙ্কিউ বলল তখন আমি আবার সিটে বসে পড়েছি ।
মনটা আনন্দে ভরে উঠল । মনে হল এমন মধুর করে ধন্যবাদ জীবনে আমাকে আর কেউ দেয় নি ।
সত্যি বলতে হবে আজ আমার ভাগ্যটা এতো ভাল হবে আশা করি নি । সব দিক দিয়েই যেন আজকের দিনটা আমার ।
সকাল বেলা যখন গাবতলী এসে পৌছালাম তখন নয়টার বাস ছাড়ি ছাড়ি করছে । একেবারে শেষ মুহুর্তে গাড়িতে উঠলাম । বলতে গেলে আমি উঠলাম আর বাস ছেড়ে দিল ।
এই বাসটা মিস হলে পাক্কা দেড় ঘন্টা বাস টার্মিনালে বসে থাকতে হত ।
তার উপরে আবার সিটও পেতাম না যদি না বাসের সুপারভাইজার আমার পরিচিত হত ।
সুপার ভাইজারের নাম মানিক । ভাইয়ার সাথে এক সময় স্কুলে পড়েছে । সেই সুবাদে আমাকে চেনে । ঐ মানিক মামাই আমাকে টিকিট যোগার করে দিল ।
যদিও সিট টা একটু পিছনে জি টু । তবুও তো হল । বাসে উঠেই মনটা ভাল হয়ে গেল ।
একদম প্রথম সারির এ ফোর সিটে একটা মেয়ে বসে আছে । পোষাক আষাক সব কিছুতেই ফার্ষ্ট ক্লাস ।
এটা আমার আরেকটা ভাগ্য বলতে হবে । কারন আমি যে গাড়িতে যাতায়াত করি সেই গাড়িতে তো নয়ই ঐ সময় কার অন্য কোন গাড়ীতে আমার বয়সী কোন মেয়ে সে দিন গাড়ীতে চড়বে না , এমন মেয়ে ভাগ্য আমার ।
বিষয়টা আর একটু পরিস্কার করি । আমাদের জেলা থেকে ঢাকায় আসার জন্য মোটামুটি পাঁচটা ভাল কোম্পানী আর তিনটা মধ্যম মানের কোম্পানীর বাস চলে । মনে করুন আমি সকাল নয়টার গাড়িতে টিকিট করেছি ।
থিওড়ি অনুযায়ী নয়টার সময় আরো বাকী যে সাতটা কোম্পানীর বাস ছাড়বে একটা তেও আমার বয়সী কোন মেয়ে উঠবে না ।
আর আমি যে বাসটাতে চড়বো তাতে আমার বয়সী কেন কোন বয়সী কোন মেয়ে উঠবে না ।
তাহলে বুঝুন কি অবস্থা ! আর আজ শয়ং আমার বয়সী জলজ্যান্ত একটা মেয়ে আমি যে বাসে যাত্রা করছি তার প্রথম সিটে বসে আছে ।
ভাগ্য ভাল বলবো না কেন বলুন !
তৃতীয় আর সব থেকে বড় সৌভাগ্যের ঘটনা ঘটল নবীনগর পার হয়ে । নবীনগর থেকে দুজন যাত্রী ওঠার কথা ছিল । কিন্তু তারা বাস ফেল করল । সময় মত পৌছাতে পারল না ।
বাস তাদের রেখেই রওনা দিয়ে দিল । আর আমি আগেই বলেছি বাসের সুপারভাইজার আমার পরিচিত । মানিক মামা কি করল ? যে যাত্রী দুটো বাস মিস করেছিল তাদের একটা সিটে আমাকে বসিয়ে দিল ।
আর বসাবিতো একদম ঐ মেয়েটার পাশে !!
প্রথমে কিছুক্ষন মনে হল বুঝি স্বপ্ন দেখছি ! আমি যে গাড়িতে উঠি সে গাড়ি সুদ্ধ কোথাও মেয়ে থাকে আর সেই আমার পাশের সিটেই যদি মেয়ে তাও অন্যন্য সুন্দরী মেয়ে বসে তাহলে কি বিশ্বাস হতে চায় ।
দুতিন হাতে চিমটিও কেটে দেখলাম স্বপ্ন দেখছি কি না !
-ভাইয়া আপনার কাছে কি পানি আছে ? সরি আমি পানি কিনতে ভুলে গেছি ।
আরে বলে কি ? আমি থাকতে সুন্দরী , তুমি কিনবে পানি ? তা কি করে হয় !
আমি আমার পানির বোতলটা এগিয়ে দিলাম ।
আহা ! মেয়েটা কি সুন্দর করেই না পানি খেল ! আসলে সুন্দর মানুষের সব কিছুই সুন্দর । পানির বোতল ফেরত্‍ দিতে দিতে মেয়েটা বলল
-আপনাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি , তাই না ?
-না না কি যে বলেন ! কষ্ট কিসের !
মেয়েটা আবার সেই ভূবন ভোলানো হাসি দিল ।
আজ আমার দিনটা সার্থক হয়ে গেল ।
মানিক মামা টিকিট চেক করতে আসল একটু পরেই । আমার পাশে বসা মেয়েটির টিকিট নিতে নিতে বলল
-তো নাদিরা , কোন সমস্যা হচ্ছে না তো ?
-না মাকিন ভাই কোন সমস্যা হচ্ছে না ।
তারপর আমাকে দেখিয়ে বলল
-এই ভাইয়াটা আছে না ! ইনি খুব হেল্পফুল ।
মানিক মামা দেখলাম আমার দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল । তারপর নাদিরাকে বলল
-এ কে জানো ?
-কে ?
-এ হচ্ছে রানার ভাই ? ঢাকায় পড়াশুনা করে ।
এবার দেখলাম নাদিরা আমার দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল ।
পাঠকদের বলে রাখি রানা আমার বড় ভাইয়ের নাম । আমাদের এলাকায় মোটামুটি বিখ্যাত একজন মানুষ ।
যা হোক মানিক মামা চলে যাবার পর নাদিরা বলল
-আপনি রানা ভাইয়ার ভাই ? আপনার নাম অপু তাই না ?
ওরে বাব্বাহ ! এই মেয়ে দেখি আমাকে চিনে ? ভাইয়ার সুবাধে আমাকে চিনে ।
নাদিরা !
হঠাৎ‍ নাম টা কেন যেন একটু পরিচিত মনে হল । কিন্তু ঠিক মনে পড়ল না । এই জন্য আপনাকে কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছিল ।
আপনার চেহারার সাথে আপনার চেহারা আশ্চার্য মিল । নাদিরার সাথে পুরো রাস্তায় কথা হতে লাগল ।
আমি খানিকটা অবাক হলাম এই দেখে যে নাদিরা নিজেই আমার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে দেখে !
এইটাই আমার অস্বস্তির কারন হয়ে দাড়াল । ফেরিতে নেমে নাদিরা নিজেই আমাকে ক্যান্টিনে নিয়ে গেল । চা নাস্তা খাওয়ালো ।
শেষে বিলটাও আমাকে দিতে দিল না । আমি সত্যিই খানিকটা অবাক না হয়ে পারলাম না । নাদিরাকে বাসে তুলে দিয়ে আমি ফেরির এক ধারে আসলাম হাওয়া খাওয়ার জন্য তখন দেখলাম মানিক মামাকে আমার কাছে আসতে ।
-মামা আর কতক্ষন ?
-এই তো আর দশমিনিট । তা ভাগনে ঐ মেয়ের কাছ থেকে একটু সাবধান ।
-কেন মামা ?
-তুমি ওকে চিনতে পারো নি ?
-কই না তো মামা ?
-আরে এতো সেই বিখ্যাত নাদিরা । আমাদের এলাকার খুব কম ছেলেই আছে যাকে এই মেয়ে নাকাকি চুবানি খাওয়াই নি । তোমার ভাইয়ের সাথেও তো নাদিরার রিলেশন ছিল ।
ঠিক তখনই আমার মনে পড়ল ! নাদিরা কে নিয়ে মার সাথে ভাইয়ার প্রায় ঝগড়া হত ।
মা বলত প্রেম করবি ভাল মেয়ে দেখে কর নাদিরার মত এমন একটা থার্ড ক্লাস মেয়ের সাথে কেন প্রেম করবি ।
আমি বুঝলাম যে কেন নাদিরা নামটা আমার এতো পরিচিত মনে হচ্ছিল ।
সব কথা মনে আসবার পর আমার মনটা অস্বস্তিতে ভরে গেল । সব কিছু ঠিক থাকলে নাদিরা এতো দিনে আমার ভাবি হযে যেত !
আর আমি কি এর সাথেই লাইন মারার চেষ্টায় ছিল । এখন কেমনে ঐ মেয়ের সামনে যাই !
এতো ক্ষনপর মনে হচ্ছে আজ ভাগ্যটা এতো ভাল না হলেই বরং ভাল হত !
কি লজ্জা !
কি অস্বস্তিকর !
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১২ রাত ৯:৫৭
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×