somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিশি, আমার বউ হবে ?

০৬ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপু তুমি আসবে তো আজ ?
আমার মন বলছে তুমি আসবে আজ ?
নিশি কাকে প্রশ্নটা করলো ও নিজেই জানে না । হয়তো আপন মনেই বলল কথাটা । তবে নিশির মনে হচ্ছে আজ ও আসবে ।
এমনটা মনে হবার অবশ্য কারনও আছে ।
নিশির সেই পরিচিত অনুভুতিটা ফিরে এসেছে । সকাল থেকেই এমনটা হচ্ছে । বারবারই মনের ভিতর সেই চিরো চেনা অনুভূতিটা ওর মনকে ছুয়ে যাচ্ছে । আর বলছে আজকে সে আসবে আজকে সে আসবে !
নিশি এই অনুভূতিটার সাথে খুব ভাল করে পরিচিত । অপুর সাথে যতবার দেখা হয় ঠিক তার কিছুক্ষন আগে থেকেই ওর এই অনুভূতিটা শুরু হয় । আগে মনে হত হয়তো এমনিতেই এমনটা হয় কিন্তু ও পরীক্ষা করে প্রমান পেয়েছে এমনটা সত্যিই হয় ।
অপু কাছাকাছি আসলেই নিশির এই অনুভূতিটা শুরু হয় । অথবা কিছুক্ষনের মধ্যে দেখা হবে এমনটা হলেও এই অনুভূতিটা এসে হাজির হয় ।
কিন্তু আজকে বোধহয় নিশির এই অনুভূতিটার কোন মানে নেই । অপু কিভাবে আসবে ?
নিশি এখন ওর গ্রামের বাসায় । ঢাকা থেকে কতটা দুরে । অপু কিভাবে আসবে ? তবুও একবার খোজ নেবার জন্য মোবাইলটা হাতে নিল ।
নো নেটওয়ার্ক ।
এখানকার এই এক সমস্যা । মোবাইলে নেটওয়ার্ক একদম থাকে না । কথা বলতে গেলে বাজারের কাছাকাছি যেতে হয় । নিশির বাড়ির বাইরে যেতে একদম ইচ্ছা করে না ।
নিশির অনুভূতিটা সেই সকাল বেলা শুরু হয়েছে । আর এখন প্রায় দুপুর । অপু আসলে এতোক্ষনে চলে আসতো । ও হয়তো আসবে না । তবুও নিশির অনুভূতিটা লেগেই রইল ।
নিশি আলমারি থেকে নীল রংয়ের শাড়ীটা বের করল । শাড়ীটা পরবে কিনা ঠিক বুঝতে পারল না ।
অপু যদি চলেই আসে তাহলে এই শাড়ীতে ও দেখে নিশ্চই খুব খুশি হবে ।
অপু খুশি হবে ! এ কথা মনে হতে নিশির মন এমনিতেই ভাল হয়ে গেল । খুব যত্ন করে ও শাড়িটা পরতে শুরু করল ।

কয়দিন থেকেই বন্ধু মহলে গুঞ্জন চলছে যে অপু নিলিকে প্রপোজ করবে ।
আরে প্রেমের প্রপোজ না ।
বিয়ের জন্য প্রপোজ ।
ওরা দুজন সেই কবে থেকে একসাথে । নিশির থেকে দুই বছরের সিনিয়ার অপু ।
নিশির অনার্স শেষ হতে না হতেই অপুর চাকরি হয়ে গেল । এখন কেবল ঘর সাজানোর পালা ।
কিন্তু নিশি একটা মেয়ে হয়ে কিভাবে বলে ! বিয়ের কথাটাতো অপুরই বলা উচিত্‍ ।
চাকরির প্রথম বেতন দিয়ে অপু নিশিকে নিল শাড়ি কিনে দিল । বলল
-আগামী শুক্রবার বিকেলবেলা তুমি এই শাড়ীটা পরে বড় পুকুর পাড়ে আসবে । তোমার সাথে জরুরী কথা আছে ।
-কিন্তু আমিতো শাড়ী পরতে পারি না ।
-এই জন্য তো সাত আগে বললাম । এই সাত দিন ধরে চেষ্টা করবে । তাহলে হয়ে যাবে ।
নিশির মনে মনে খুব খুশি হল । যদিও ও খানিকটা চিন্তিত যে ঠিক মত শাড়ি পরতে পারবে তো ।
আর খুশি হল অপুর এরকম সিনেমাটিক মন মানষিকতা দেখে ।
প্রথম যেদিন অপু নিশিকে প্রপোজ করে তার সে কি প্রস্তুতি । নিশি অবশ্য আগেই বুঝতে পেরেছিল যে অপু ওকে পছন্দ করে । আর অপুকেও অপছন্দ হবার কোন কারন ছিল না ।
ঠিক যেদিন ভালবাসি বলবে তার আগের দিন অপু নিশির কাছে ফোন দিয়ে বলল
-তোমার কি কোন সাদা রংয়ের সেলোয়ার কামিজ আছে ।
নিশি খানিকটা অবাক হয়েছিল । সিনিয়র একটা ভাইয়ার কাছ থেকে এমন একটা প্রশ্ন খানিকটা অন্য রকম শোনালো । তবুও বলল
-আছে ভাইয়া । কেন বলুন তো ?
-কালকে ঐ ড্রেসটা পরে হলগেটের পুকুর পাড়ে আসবে প্লিজ । বিকাল পাঁচ ।
-কিন্তু ..
নিশি কিছু বলতে গেল ।
কিন্তু অপু ওকে খুব করে রিকোয়েস্ট করাতে ও রাজি হয়ে গেল ।
পরদিন পুকুর পাড়ে পৌছাল যথা সময়ে । অন্যদিন এখানে লোকজন থাকে কিন্তু আজ কেমন জানি ফাঁকা মনে হল নিশির কাছে ।
ঠিক পাঁচটার সময় অপু এসে হাজির । নিশি যেমন ধবধবে সাদা সেলোয়ার কামিজ পরেছে অপুও পরেছে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী । সাদা পাঞ্জাবী সত্যি অপুকে কেমন যেন দেব দূতের মত লাগছিল ।
অপুর হাতে ছিল একতোড়া টকটকে লাল গোলাম । ওর সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে অপু লাল গোলাপ গুলো নিশির দিকে বলল
-আমার এ হৃদয়টা আমি তোমার হাতে তুলে দিলাম । তুমি গ্রহন করবে কি ?
তারপর কোথা থেকে এক গাদা গোলাপের পাপড়ি উড়ে এল ওদের দিকে ! আর কোথায় যেন বেহালার সুর বেজে উঠল ।
সব অপুর প্লান । এতোটাই ফিল্মী এই ছেলেটা ।
নিশির মনে হল এবারও ঠিক ঐ রকম কিছু করবে । এই জন্য ও এই নীল শাড়িটা ওকে কিনে দিয়েছে ।
পুরো সপ্তাহ জুড়ে নিশি নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে কেবল শাড়ী পরা শিখলো ।
নির্দিষ্ট দিনে নিশি নির্দিষ্ট জায়গায় হাজির হয়ে গেল । সময় পার হয়ে গেল কিন্তু অপু এল না । ফোন করতে গেল কিন্তু ফোন বন্ধ ।
অপুর ফোন অবশ্য আগের দিন রাত থেকেই বন্ধ ছিল । নিশি ভেবেছিল অপু নিশ্চই স্পেশাল কিছু প্লান করছে তাই ফোন বন্ধ রেখেছে ।
ঐ দিন হলে এসে ওর কেবল বুক ফেটে কান্না আসছিল । বারবার কেবল এই কথাটাই মনে হচ্ছিল অপু এমনটা কেন করল ?
কেন ?
অপুর উপর খুব অভিমান হল । পরদিনই নিশি ঢাকা ছেড়ে সোজা গ্রামের বাড়ি ।

নিশি নীল শাড়িটা পরে পুকুর পাড়ে বসে আছে চুপচাপ । ওর সেই অনুভূতিটা আরো তীব্র আকার ধারন করেছে । নিশির মন বলছে অপু চলে এসেছে । এ কথা ভাবতেই পেছন থেকে ওর ছোট বোনটা ডাক দিল ওকে । দৌড়াতে দৌড়াতে ওর কাছে এসে বলল
-আপু তোমার এক বন্ধু এসেছে ঢাকা থেকে । তোমাকে ডাকছে ।
নিশি মধ্যে যে একটা চাপ ছিল সেই চাপটা হালকা হয়ে গেল । সেখানে জড় হতে লাগল চাপা অভিমান ।
সেদিনের সেই জমা হওয়া অভিমান টুকু যেন ফুলে ফেঁপে আরো বড় হতে লাগল । বোনকে বলল
-আমি যাবো না । যার ইচ্ছা হয় নিজে এসে আমার সাথে দেখা করুক ।
ওর ছোট বোনটা চলে গেল । অপুকে নিয়ে এল কিছুক্ষন পরেই । অপুকে দেখে নিশির বুকের ভিতরটা কেমন লাফিয়ে উঠল ।
কতদিন পর অপুকে দেখল ! ইচ্ছা করল এখনই অপুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে । কিন্তু নিজের ইচ্ছাটা দমন করল ও ।
অপু ওর সামনে এসে বলল
-এ অধম তোমার ক্ষমা প্রার্থী ।
নিশি কোন কথা বলল না । মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বসল । অপু আবার ওর মুখের দিকে ঘুরে এসে বলল
-একবার আমাকে কি বলার সুযোগ তো দাও । যদি ঐদিন না আসার কারন গুলো তোমার কাছে মনপূত না হয় তুমি যা বলবে আমি তাই করবো ।
নিশি বলল
-আচ্ছা বল কি তোমার কারন ?
-তোমার পাশে বসে বলি ?
-না যেখানে আছো যেভাবে আছো ওভাবেই বল ।
-আচ্ছা । দিপুকে তো চেন ?
-তোমার ছোট ভাই ?
-ঐ দিনটার আগের দিন ওর এপিন্ডিক্স বাষ্ট হয়ে গিয়েছিল । বিশ্বাস কর এই খবরটা শোনার পর আমি একটা মিনিটও স্থির থাকতে পারি নি । সোজা চলে গিয়েছিলাম বাসায় । আর এতোই উত্তেজিত ছিলাম যে কথন যে মোবাইল ফোনটা কেউ পকেট থেকে তুলে নিয়েছিল আমি টেরই পাই নি । ওকে নিতে এতোদিন কেবল দৌড়াদৌড়িই করেছি । বিশ্বাস আমি যে কি পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম তোমাকে বোঝাতে পারবো না । কেবল এই জন্য আমি আসতে পারি নি ।
কি আমার থেকে .... নিজেল মনের মধ্যে কথা বলতে গিয়েও নিশি থেমে গেল ।
ছিঃ ছিঃ কি বাজে একটা কম্পারিজনের কথা বলতে গিয়েছিল । ফ্যামিলি সব সময় অফ লিমিট ! ফ্যামিলির সাথে কখনও কারো তূলনা চলে না ।
নিশি এবার খানিকটা অভিমানের সুরে বলল
-আমি ঐ দিন অনেকক্ষন ওয়েট করে ছিলাম ।
-আমি জানি বেবি !
অপু আর দেরি করল না । নিশিকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল । কিছুক্ষন পর অপু বলল
-আরে তুমিতো আজ নীল শাড়ীটাই পরেছ ।
দাড়াও এই বলে অপু নিজের পকেট থেকে একটা রিং বের করল ।
-এটা আমি ঐ দিন থেকেই পকেটে নিয়ে ঘুরছি ।
তারপর নিশির সামনে প্রপোজের স্টাইলে একহাটু নিচ করে বসল । তারপর রিংটা নিশির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-নিশি আমার বউ হবে ?


ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ২:২৯
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×