somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতি সোমবার মেয়েটি কার জন্য অপেক্ষা করতো !!!

০৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরপর চারদিন মেয়েটিকে একই ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । মনের মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন আর কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম মেয়েটির দিকে ।
আজ জিজ্ঞেস করতেই হবে ! আজ জানতেই হবে মেয়েটি কেন এখানে দাড়িয়ে থাকে ? তাও আবার কেবল প্রতি সোমবার !
অন্য কোন দিনে না !
মেয়েটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনার সামনে দাড়িয়ে আছে । মেইন গেটের একটু বাম পাশে ।
কারো জন্য অপেক্ষা করছে হয়তো । কিন্তু প্রতি সোমবার কেন ? একই ভাবে !
আমি মেয়েটির সামনে গিয়ে দাড়ালাম । মেয়েটা একভাবে কি যেন ভাবছে ! মেয়েটি চিন্তায় এতোই মগ্ন যে একটা মানুষ যে ওর সামনে এসে দাড়িয়েছে এটা সে লক্ষ্যই করে নি ।
কি এতো ভাবছে মেয়েটি ?
কার কথা ভাবছে ?

আসলে কদিন থেকে আমাকে মাঝে মাঝেই শামসকে সকালবেলা পড়াতে যেতে হয় । সোমবার আমার ভার্সিটি অফডে তাই মোটামুটি প্রতি সোমবার আমি সকালবেলা ওকে পড়াতে আসি ।
মাস খানেক আগে যখন প্রথম পড়াতে আসি তখনই মেয়েটাকে প্রথম দেখি ।
অতিথি ভবনের সামনে একভাবেই দাড়িয়ে আছে । খুবই স্বাভাবিক ঘটনা । দাড়িয়ে থাকতেই পারে । আমি হয়তো বেশি লক্ষ্য করতাম না ।
কিন্তু লক্ষ্য করতে হল । কারন মেয়েটি সাদা রংয়ের একটা চুড়িদার সেলোয়ার কামিজ পরে ছিল ।
আর এই সাদা রংটার উপর আমার খানিকটা দুর্বলতা আছে তো , তাই মেয়েটাকে লক্ষ্য করতেই হল ।
পরের সোমবার যখন আবার পড়াতে গেলাম মেয়েটাকে দেখলাম একই জায়গায় একই ভাবে দাড়িয়ে আছে । একটু খটকা লাগল মনে । আজ অবশ্য মেয়েটা সাদা সেলোয়ার কামিজ পরে আসে নি কিন্তু তবুও মেয়েটিকে সেদিন ভাল করে লক্ষ্য করেছিলাম । তাই চিনতে অসুবিধা হল না ।
মনের মধ্যে কৌতুহল জেগে উঠল । মেয়েটা কি কারো জন্য অপেক্ষা করছে ?
কেমন যেন বেমানান ঠেকল । তবুও কৌতুহল বুকের মধ্যে চেপে রেখে চলে এলাম ।
এভাবে তো যে কাউকে জিজ্ঞেস করা যায় না যে আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন অথবা কার জন্য অপেক্ষা করছেন , তাও আবার কোন মেয়েকে !
কিন্তু তৃতীয় সোমবার যখন দেখলাম তখন আসলেই আমার কৌতুহল চরম পর্যায়ে । কিন্তু ঐ দিন আমি রিক্সা নিয়ে যাচ্ছিলাম আর একটু দেরীও হয়ে যাচ্ছিল বিধায় জিজ্ঞেস করা হল না ।
কি মনে করে পরের দিন সকালবেলা ঐখানে হাজির হলাম মেয়েটা এসেছে নাকি দেখার জন্য । কিন্তু মেয়েটাকে দেখলাম না ।
তার মানে কি মেয়েটা কেবল সোমবারেই এখানে দাড়িয়ে থাকে !
কিন্তু কেন ?

আজ সোমবার আমি বাসা থেকে যখন টিউশনীর জন্য বেরিয়েছিলাম তখন নিয়ত করেই ছিলাম যে যদি মেয়েটাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখি তাহলে মেয়েটার সাথে কথা বলব ।

-এক্সকিউজ মি ?
মেয়েটার কোন ভাবান্তর হল না । এক ভাবেই দাড়িয়ে রইল । আমি এবার একটু জোরেই বললাম
-শুনছেন ?
এবার যেন মেয়েটার তন্ময় ভাঙ্গল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমাকে বলছেন ?
-জি । আপনাকেই বলছি ।
-বলুন ।
প্রথমেই কি বলব ভেবে পেলাম না । মেয়ে বলে কথা ! কি আবার ভেবে বসে কে জানে !
খানিকটা ইতস্তঃ করে বললাম
-আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি , যদি কিছু মনে না করেন ?
মেয়েটি বলল
-না সমস্যা নাই বলুন ।
-আসলে .... আপনি কার জন্য ওয়েট করছেন ?
-আমি ?
মেয়ে একটু হাসল । লজ্জা মিশ্রত হাসি । বলল
-আমি আবিদের জন্য অপেক্ষা করছি ।
তারপর মেয়েটি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
-এই তো এখনই চলে আসবে ।
-আবিদ ?
মেয়েটা আরো একটু লজ্জা পেল । কিন্তু সেই সাথে মেয়েটার সারা মুখ জুড়ে কেমন একটা আনন্দের আভা ছড়িয়ে পড়ল ।
-আবিদ আমার বয়ফ্রেন্ড !
আমি খানিকটা অবাক হলাম । নিজের বয়ফ্রেন্ডের কথা কেউ এমন করে কাউকে বলে ! মেয়েটার মাথায় ক কোন সমস্যা আছে !! আমি জানতে চাইলাম
- বুঝলাম আপনি তার জন্য ওয়েট করে আছেন । কিন্তু প্রতি সোমবারেই কেন আপনি অপেক্ষা করেন ? এটা আমি ঠিক বুঝলাম না ।
মেয়েটা যেন আমার কথা ঠিক বুঝতে পারলো না । বলল
-কি বলছেন আপনি ? আমিতো আজই প্রথম এলাম এখানে । কাল রাতে আবিদ ফোন করে এখানে আসতে বলল ।
আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । কি বলছে এই মেয়ে ! গত একমাস ধরে মেয়েটা এই নিয়ে চার দিন একই ভাবে মেয়েটাকে আমি এখানে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি আর মেয়েটা কিনা বলছে আজই প্রথম আসল !
আমি চোখে চশমা পরি, তার মানে এই নয় যে আমি চোখে দেখি না ।
কিন্তু মেয়েটা এমন ভাবে অস্বীকায় করল কেন ?
আশ্চার্য !
আমি আর বেশি কথা জিজ্ঞেস করলাম না । একটু দুরে সরে গিয়ে দাড়ালাম । কিন্তু চলে গেলাম না ।
মেয়েটা বলছে ও ওর বয়ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছে । তার মানে ছেলেটা আসবে । আজকে আমি দেখেই যাবো কে আসে মেয়েটার সাথে দেখা করতে ! আর কার জন্যই বা মেয়েটা অপেক্ষা করে !
আমি দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম ।
একটু পরই একজন আমার পাশে এসে দাড়াল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-অরিনের সাথে কি কথা হল ?
-অরিন ?
আমি ঠিক বুঝলাম না ।
লোকটা মেয়েটাকে ইশারায় দেখালো । ও আচ্ছা মেয়েটার নাম অরিন ।
আরে মেয়েটার নাম যে অরিন এই লোকটা কেমনে জানল ? লোকটা না বলে ছেলেটা বললেই ভাল হয় । আমার থেকে কিছু বড় হবে বয়সে ।
আবিদ না তো ?
নাহ । আবিদ হতে পারে না । আমি বললাম
-তেমন কিছু না ।
ছেলেটা বলল
-আমি অরিনের বড় ভাই ।
-ও আচ্ছা !
-আমি খুব অবাক হলাম এই দেখে যে অরিন আপনার সাথে কথা বলেছে । ও এই অবস্থায় কারো সাথে কথা বলে না ।
-মানে ? আপনি কি বলছেন ?
-আপনার কি মনে হচ্ছে আমার বোনটা সুস্থ ?
-হ্যা । কেন মনে হবে না কেন ? দিব্যি দাড়িয়ে আছে । আর আমি প্রায় মাসখানিক থেকে ওনাকে লক্ষ্য করছি । প্রতি সোম বার উনি এখানে দাড়িয়ে থাকেন । কিন্তু কারন টা এখনও স্পষ্ট না !
কথাটা বলেই মনে হল ভুল করলাম নাতো । মেয়ের ভাই কে বলছি যে তার বোনকে আমিকে ফলো করছি ।
ছেলেটা খানিকক্ষন চিন্তা করল । তারপর বলল
-আপনাকে খুলেই বলি । আসলে মাসখানেক আগে এক সোমবারে একটা ছেলের সাথে অরিনের এখানে দেখা করার কথা ছিল । অরিন এখানেই অপেক্ষা করতে থাকে ।
-ছেলে মানে আবিদ ?
ছেলেটা আামর দিকে তাকালো কৌতুহলী হয়ে । আমি বললাম
-আপনার বোন বলেছে
-ও
-তারপর
-কথা ছিল । কিন্তু ... আবিদ ...
-কিন্তু কি ? আবিদ আসে নি ?
-এসেছিল । এই যে এই মোড়টা দেখছেন না ?
-হুম ! এখানে এই রাস্তা পার হবার সময় আবিদকে একটা বাস চাপা দিয়ে চলে যায় ।
-তারপর ?
-অরিনের সামনেই ঘটনা ঘটে । ওটা দেখার পর অরিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । ওর যখন জ্ঞান ফেরে ওর তখন এসব কিছু মনে নেই ।
-মানে ?
-মানে হল অরিনের মন এই দুর্ঘটনা মেনে নেয় নি । ওর স্মৃতিটা ঐ সোমবারেই আটকে আসে । ও কেবল মনে আছে সোমবারে ওর এখানে আসার কথা । আবিদের সাথে দেখা করার কথা ।
আমি কি বলব ঠিক বুঝতে পারলাম না । অরিনের ভাই বলল
-কিছুক্ষনের মধ্যেই ও অজ্ঞান হয়ে যাবে । তারপর মোটামুটি পুরা সপ্তাহই সেন্সলেস থাকবে । ঠিক রবিবারে ওর জ্ঞান ফিরে আসে ।
আর ... আর সেখান থেকেই ওর দিন শুরু হয় !
আমি অরিনের দিকে তাকালাম । মেয়েটার জীবনে এমন হতে পারে আমি কখনও ভাবতেই পারি নি ।
কি আনন্দ নিয়েই না মেয়েটি অপেক্ষা করছে !
সত্য থেকে একে বারে বিস্মৃতি হয়ে । এই ভাবছে যে ওর প্রিয় মানুষটি এখনই আসবে ।

অরিনের ভাই ঠিকই বলেছিল । হঠাৎ অরিন অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরল । মাটিতে পরার ঠিক আগের মুহুর্তে আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম । যেন ও কিছু একটা দেখেছে । নিশ্চই ঐ দৃশ্যটা ওর চোখে ভেসে উঠেছে ।
অরিনের ভাই ছুটে গেল । ওপাশ থেকে আরো দুজন ছুটে এল । অরিনকে একটা গাড়িতে উঠিয়ে চলে গেল ।
আমি ঐ জায়গাতেই দাড়িয়ে রইলাম । কেন জানি ঐ অজানা মেয়েটার জন্য আমার এক অদ্ভুদ কষ্ট হতে লাগল ।


আমার কথাঃ গল্পটা লেখার আইডিয়া আমার মাথায় আসে ঠিক একই ভাবে ! আমি প্রতি সোমবার সকাল বেলা আমার ছাত্রকে পড়াতে যেতাম । ঠিক একই ভাবে পর পর দুই দিন একটা মেয়েকে আমি রাষ্ট্রীর অতিথি ভবনের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি !! খানিকটা কৌতুহল হলেও জিজ্ঞেস করতে পারি নি মেয়েটাকে !! সে কেন একই ভাবে একই সময়ে ঐ খানে দাড়িয়ে ছিল ! কার জন্য দাড়িয়ে ছিল !!

ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৯:৩৩
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×