somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাসর রাতে আমি আর..........

১৭ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-বাবু দরজাটা একটু খোল বাবু ।
নিশি দরজার ওপাশ থেকেই বলল
-তোমাকে না বলেছি আমাকে বাবু বলে ডাকবা না ।
-আচ্ছা পাখি , টিয়াপাখি আমার । দরজাটা একটু খোল । আজকে আমাদের বাসর রাত দরজা বন্ধ করে রাখলে কেমন করে হবে !
আমি জানি নিশি এখন রাগে ফুসছে । রাগ হলে ওর মাথা ঠিক থাকে না ।
-শোন তানভীর ঢং করবা না । তোমার উপর প্রচন্ড রাগ লাগছে । মন বলছে থাপ্পড় দিয়ে তোমার দাত ফেলে দেই ।
-আচ্ছা যা ইচ্ছা তাই কর । কিন্তু দরজাটাতো খুলবে । দরজা না খুলে থাপ্পর দিবা কিভাবে ?
আমার মনে ক্ষীন আশা যে ও আমার কথাতে আরো রেগে যাবে আর দরজা খুলে সত্যি সত্যিই আমাকে থাপ্ড়াতে আসবে । কিন্তু ওরকম কিছু হল না ।
আমি আর দাড়িয়ে থাকলাম না । নিশি এখন যেহেতু রেগে আছে, এখন কিছু না বলাই ভাল । রাগ কমে গেলে ও নিজেই দরজা খুলে দিবে ।
আমি ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলাম । সোফাটা বেশ নরম মনে হচ্ছে । মামুন সাহেব বেশ ভালই খরচ করেছে ফ্লাট টার উপরে ।
এই ফ্লাটটাতে আজ মামুন সাহেবের সাথে নিশির বাসর হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হচ্ছে আমার সাথে ।
মামুন মিয়া এতো বোকা হবে বুঝতে পারি নি । আমি কি চম‍ৎকার সুযোগ করে দিলাম কিন্তু বেটা বেকুব সুযোগটা কাজে লাগাল না ।
ভালবাসায় ভালবাসার মানুষটাকে পাওয়াই হল মূখ্য বিষয় ।
কিন্তু সত্যিই তাই ?
মামুন সাহেব নিশিকে সত্যিই ভালবেসেছিল তাই নিশির সুখটাই বেশি জরুরী ছিল ।
আমার কাছেও তো নিশির সুখটাই বেশি জরুরী ছিল । আমি মনে করেছিলাম মামুনের সাথেই নিশি বেশি সুখে থাকবে । তাই মামুন কে সুযোগ করে দিয়েছিলাম ।

মামুন নিশির খালাত ভাই । নিশির জন্য পাগল । নিশির বাসা থেকে যখন নিশির জন্য পাত্র দেখা শুরু করল স্বাভাবিক ভাবেই আমার থেকে মামুনকেই বেশি যোগ্য বলে মনে হল ।
আর হবেই বা না কেন ? আমার থেকে সব দিক থেকেই মামুন সাহেব বেশি যোগ্য ।
কেবল একটা দিক থেকেই আমি এগিয়ে । সেটা হল নিশি আমাকে ভালবাসে । মেয়েটা সত্যি আমাকে ভালবাসে । তাই তো এক অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে আনতে মন চাইছিল না ।
আমিও তো ওকে ভালবাসি । সত্যিই তাই । কি করে ওকে আমার মত একটা ভবঘুরের সাথে বিয়ে হতে দেই !
সেই তুলনায় মামুন সাহেব অনেক বেশি যোগ্য ।
তাই মামুন সাহেবের সাথে একটা ডিল করলাম । আমার সব কথা শুনে মামুন সাহেব বেশ অবাক হলেন ! বললেন
-আপনি এমনটা কেন করতে চাইছেন ?
আমি ঠিক মত জানি না আমি কেন এমনটা করতে চাইছি । বললাম
-আপনি ওকে অনেক ভালবাসেন ! আপনি ওকে অনেক সুখি রাখতে পারবেন ।
মামুন আমার দিকে খানিক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আপনিও তো ওকে অনেক ভালবাসেন । তাহলে ? আপনি কি ওকে সুখি রাখতে পারবেন না ?
আমি প্রশ্নটা এড়িয়ে বললাম
-মামুন সাহেব জীবনে টাকা পয়সা অনেক প্রয়োজন । অনেক বেশি প্রয়োজন । টাকা ছাড়া জীবনে সব কিছু কেমন অর্থহীন হয়ে পরে !!

আমি মোটামুটি সিওর ছিলাম যে মামুন আমার অফার লুফে নিবে ! নিশি কে বিয়ে করার এমন সুযোগ করে দিচ্ছি ! ডিলটা এমন কিছু না । আমি কিছু দিনের জন্য নিশি জীবন থেকে গায়েব হয়ে যাবো ! মামুন সাহেব নিশিকে গিয়ে বলবে যে আমি ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিশির পথ ছেড়ে দিয়েচি মামুনের জন্য ! প্রমানের জন্য আমার সই করা একটা কাগজ দেখাবে !
আমি জানি মেয়েরা এই দুইটা জিনিস কখনও সহ্য করতে পারে না । এক হল তার ভালবাসার মানুষ কে অন্য কোন মেয়ের সাথে শেয়ার করা আর যখন তারই প্রিয় মানুষটা টাকার জন্য তার সাথে প্রতারণা করে !
আমি নিশির কাছ থেকে দুরে দুরে থাকতে লাগলাম ।পালিয়ে বেড়াতে লাগলাম ! কিন্তু একদিন ও আমাকে খুজে বের করেই ফেলল !
আমি সারা জীবনই জানি নিশি খুব রাগি । একবার রাগ উঠলে আর কিছু হুশ থাকে না । আমার ভয় হচ্ছিল কি না কি করে ফেলে ! যদি চড়টড় মেরে বসে !! কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে !
তবে দেখলাম নিশি বেশ শান্তই ছিল । তবে ওর চোখ দুটো কেন জানি আগুনে রমত লাল ছিল । ধক ধক করে জ্বলছিল যেন !
আমি ওর দিকে তাকাতেই পারছিলাম না । নিশি বলল
-আমার দিকে তাকাচ্ছ না কেন ? লজ্জায় ?
আমি কোন কথা বললাম না । নিশি আবার বলল
-তোমার তাহলে লজ্জা আছে ?? আসলে বাবা ঠিকই বলেছিল ! গরীব মানুষ গুলো টাকার জন্য সব কিছু করতে পারে ! আমারই ভুল হয়েছে ! বাবার কঠা শোনা উচিৎ ছিল । সমস্যা নাই খুব বেশি দেরি হয় নি । নিশি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো ।
তারপর নিশি ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে বলল
-এটা আামর বিয়ের কার্ড ! তোমাকে কেবল এই জন্য খুজছিলাম । আমার বিয়ের কার্ডটা দেবার জন্য । তবে বিয়ে আবার নির্লজ্জের মত এসে পর না যেন !!
নিশি যখন চলে যাচ্ছিল কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছিল । একবার মনে হচ্ছিল চিৎকার করে বলি যে.......... থাক ! কি হবে ??
ও তো সুখে থাকুক !!
দেখালম নিশি নিজেই ঘুরে দাড়ালো । বলল
-আমি তোমাকে দেখাতে চাই তমার মত মানুষের কোন স্থান নাই আমার জীবনে ! এটা তুমি দেখ..।
ঐদিন রাতে আমার একফোটাও ঘুম আসে নি । বুকের ভিতর কেন যেন একটা কষ্ট হচ্ছিল । সবাই বলে স্যাকরিফাইস করলে নাকি ভাল লাগে , তাহলে আমার কষ্ট হচ্ছিল কেন!!

আজকে নিশির বিয়ে হবার কথা ছিল মামুন সাহেবের সাথে !! কাল শেষ রাতের দিকে কয়েকটা ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম । মরার জন্য না । ভেবেছিলাম পুরোটা দিন আমি ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবো । কিন্তু দুপুরের দিকে আমার ঘুম ভাঙ্গতেই হল ! চোখ খুলতে কষ্ট হচ্ছিল ।কোন মতে চোখ খুলে দেখলাম বিয়ের সাজে নিশি আমার সামনে দাড়ি !
একবার মনে হল স্বপ্ন দেখছি ।
স্বপ্নের কথা ভাবছি ঠিক এমন সময় একটা চড় এসে আমার গালে লাগলো !
নাহ ! স্বপ্ন তো দেখছি না । তাহলে তো ব্যাথা লাগার কথা না !
চড় খেয়ে আামর ঘুম মোটামুটি কেটে গেছে ! ভাল করে তাকিয়ে দেকি সত্যি নিশি আমার সামনে বসে আমার খাটের উপর । আর দরজার কাছে মামুন সাহেব দাড়িয়ে !
আমি ভাবলাম বিয়ে হয়ে গেছে ! আমাকে দেখাতে নিয়ে এসেছে !
কি রে ভাই বিয়ে করেছ ভাল কথা !
আমাকে দেখাতে নিয়ে এসেছো তাও ভাল কথা !
কিন্তু চড় মারার কি দরকার ?
বললাম
-মারলে কেন?
নিশি কোন কথা বলল না কেবল রাগে ফুঁসতে থাকলো ! ওর চোখ দেখেই আমি খানিকটা শঙ্কিত বোধ করলাম !
মামুন সাহেব বলল
-বেশি কথা বারিয়েন না !
আমার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল
-এই পাঞ্জাবীটা পরে তৈরি হয়ে নিন !
-কেন?
-আরে আশ্চর্য গেঞ্জি পরে বিয়ে করবেন নাকি ?
-মানে?
মামুন সাহেব হাসলো । আমি নিশি দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখটা আরো লাল হয়ে গেছে !
-তানভীর সাহেব আমি নিশি কে সব কিছু বলে দিয়েছি !
-সেকি!!! কেন??
এবার আমার সত্যি খানিকটা ভয় লাগলো ! নিশির রাগের কারনটা আমি বুঝতে পারলাম ।
আমি চুপচাপ তৈরি হয়ে নিলাম । সব কিছু রেডিই ছিল আমাদের বিয়ে হয়ে গেল । বিয়ের পর, মামুন সাহেব এই ফ্লাটে আমাদের রেখে চলে গেলেন ! আমি মামুন কে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কি কারনে সে সব কিছু নিশিকে বলে দিল !
মামুন বলল
-আপনি যে কাজটা করতে চেয়েছেন আমিও ঠিক একই কাজটা করেছি ! ও কখনই আমার সাথে পরিপুর্ন সুখি হত না ! আপনাকে ও কখনই ভুলে যেত না ! ভুলতে পারতোও না ! আমি ওকে যতই ভালবাসি না কেন, সারা জীবন ও কেবল আপনার কথা মনে করে কষ্ট পেত !
আমি কি বলবো বুজতে পারছিলাম না । মামুন আবার বলল
-আর সত্যটা এক না এক দিন ও জেনে যেতই !! তখন কি হত বলুন !!

আমি আমার বসেই আছি সোফার উপরে ! আর ভাবছি কিভাবে আজকের সারাদিন গেল ! সারা দিন তো গেল বুঝলাম । কিন্তু সারা রাত কিভাবে যাবে তাই ভাবছি !
যদি নিশি সারা রাত দরজা না খুলে !! এই মেয়েটা এমন করতেও পারে ! মানুষ কত বাসর রাতের গল্প করে ! আমি কি বলবো মানুষের কাছে ?
বলবো যে বাসে রাতে আমার বউ আমাকে ঘরে ঢুকতেই দেই নি ! সারা রাত ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখেছে !!
এমন কথা ভাবছি এমন সময় দরজা খোলার আওয়াজ হল !!
কিন্তু নিশি বের হয়ে এল না ।
যাক দরজা তো খুলেছে !
কিন্তু খানিকটা সঙ্কা তো হচ্ছেই !! না জানি নিশি কি বলে!!
তবুও বুকে ভরে নিশ্বাস নিয়ে ঐ ঘরের দিকে হাটা দিলাম । আর যাই হোক আজ এমন দিনে নিশি খুব বেশিক্ষন রাগ করে থাকতে পারবে না !


ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৩০
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×