somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খাইতে চাইলাম, নীলু বলল দুরে গিয়া ঢং করেন...

২৪ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুবার কলিংবেল বাজানোর পরও ভাবছি তিন বার কলিংবেল বাজাবো কিনা । বেশি রাত তো হয় নি । তবুও একটু রাত তো হয়েছেই বলতে গেলে । আর একবার বাজাবো কিনা ভাবছি ঠিক এমন সময় দরজা খুলে গেল ।

নীলু দাড়িয়ে কঠিন মুখে । খানিকটা অবাক হলাম । নীলু সাধারনত দরজা খুলে না । ওর মা ই দরজা খুলে ।

আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । কিন্তু নীলুর মুখের কোন ভাবান্তর হল না । আমি বললাম

-ফুপু জেগে নেই ?

-মার শরীর ভাল নাই । ঘুমাচ্ছে ।

-ও । আমি আসলে রাতের খাবার খেতে এসেছিলাম । আজ রাতে কেন জানি আলু ভর্তা আর গরম ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছা করছে । একটু ব্যবস্থা করা যায় ?

নীলুর কঠিন মুখটা আরো কঠিন হল । বলল

-দেখেন এসব ঢং আমার সাথে করবেন না । আর এটা ধর্মশালা না যে আসবেন খেতে চাইবেন আর হয়ে যাবে ।

-আচ্ছা ঠিক আছে । ফুপুকে কিছু বলার দরকার নাই । আমি চলে যাই বরং !

আমি দরজা থেকেই বেরিয়ে এলাম । মনটা একটু খারাপ হল । আসলেই আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেতে খুব ইচ্ছা করছে । ফুপু জেগে থাকলে ব্যবস্থা ঠিকই করতেন ।

এই শহরে আমার আপন বলতে এই ফুপুটাই আছে । প্রথম যখন গ্রাম থেকে এই শহরে হাজির হলাম এই ফুপুর বাসাতেই আমার জায়গা হল । ফুপুর কোন ছেলে ছিল নাতো আমাকে খুব আদর করতেন ।

ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পরেও তাই ফুপু আমাকে ছাড়তে চাইলেন না । প্রথম প্রথম আমারও খুব ভাল লাগতো কিন্তু বেশি দিন থাকা গেল না । ফুপুর বাসা ছেড়ে হলে উঠে গেলাম । ফুপু কে অন্য কারন বললেও আসলে প্রধান কারন ছিল নীলু ।

নীলুর আচরন কেমন যেন অস্বাভাবিক ঠেকল আমার কাছে । খুব শীঘ্রই বুঝতে পারলাম যে নীলু আমার উপর দুর্বল হতে শুরু করেছে । ওর সাথে কথা বললাম । পরিষ্কার ভাবে বললাম যে ওর প্রতি আমার অনুভুতিতা ঐ রকম না । নীলুকে আমি ঐ চোখে দেখি না ।

ঐ দিন থেকে নীলুর আচরন কেমন গম্ভীর হয়ে গেল । সব কিছুই ঠিক ছিল তবে আমার সামনে আসলেই নীলু কেমন গম্ভীর হয়ে যেত । আমার কাছে কেমন যেন অস্বস্তি লাগত । তাই আর এ বাড়িতে আর থাকতে ভাল লাগত না ।

হলের ওঠার পরও প্রায়ই আসতাম এ বাড়িতে । কিন্তু নীলু আর কখনই আমার সামনে আসে নি । কিন্তু আজ নীলুর আচরনটা একটু কঠিনই মনে হল । আর একটু নমনীয় হলে ভাল লাগত !



অন্ধকার পথে হাটছি । একটু ক্ষুদা লেগেছে । কোন হোটেলে কি যাবো ?

আলু ভর্তা আর ডিম ভাজি পাওয়া যাবে ?

ঠিক এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল ।

-আপনি কত দুরে গেছেন ?

নীলু ?

কন্ঠে খানিক উত্‍কন্ঠা !

-এই তো বেশি দুরে না ।

-আপনি এখনই বাসায় আসেন । আমি কোন কথা শুনবো না । এখনই আসেন ।

আমি ঐ বাড়ির পথ ধরলাম । দ্বিতীয় বার যখন নীলু দরজা খুলে দিল তখন আগের কাঠিন্য একদম নাই । অবাক হয়ে দেখলাম নীলুর চোখ কেমন যেন ফোলা ফোলা । কেঁদেছে নাকি ?

খাবার টেবিলে আমাকে সত্যিই অবাক হতে হল । গরম ধোয়া ওঠা ভাত সাথে গরম ডিম ভাজি । পাশে আলু ভর্তা । এই টুকু সময়ের মধ্যে নীলু এসব কিছু করেছে ।

আশ্চর্য !

অথচ প্রথম এমন একটা ভাব করল । এই মেয়েগুলোর মন এমন অদ্ভুদ ! কখন কি যে হয় ? আর কখন কি করে কোন ঠিক নাই ।

নীলু বলল

-মাংশ আনবো ?

-আরে এরই মধ্যে মাংশও রান্না করেছ নাকি এরই মধ্যে ?

-না আজ রান্না হয়েছে !

-ও । কি মাংশ ?

-আপনার পছন্দের মাংশই রান্না হয়েছে ।

নীলু খাসির মাংশের বাটি নিয়ে এল ।

-পোলাও নিয়ে আসবো ?

-আরে এতো আয়োজন কিসের ? আজ বিশেষ কোন দিন নাকি ?

নীলু চুপ করে থাকলো ! আমি গরম ভাত মুখে দিতে দিতে বললাম

-কি চুপ করে গেল ? নীলু ইতস্তত করে বলল

-আজ আমার জন্মদিন । তাই !

-আরে তাই নাকি ! আগে জানলে তো আরো আগে আসতাম । বিশাল একটা খাওয়া মিস হয়ে গেল । তবুও এই রাতের বেলা খাওয়াটা বেশ ভাল হল ।

খাওয়া দাওয়া শেষে আমি যখন চলে যেতে চাইলাম নীলু বলল

-এতো রাতে না গেলে হয় না ? নাহ যাই । আবার আসবো নে । আলু ভর্তাটা ভাল হয়েছে । আবার এসে খেয়ে যাবো ।

আমি দরজা দিয়ে বের হত ঠিক এমন সময় নীলু বলল

-অপু ভাই ।

-হুম ।

-আমার গিফট কোথায় ?

আমি খানিকটা হাসলাম । নীলু বলল

-আমি জানি আপনার মনে আছে । এই জন্যই আপনি এসেছেন এই রাতের বেলা ।

আমি পকেট থেকে একটা ছোট্ট একটা ছোট্ট উপহারের বক্স বের করে ওর হাতে দিলাম । নীলু কেমন চোখ ছলছল চোখে আমার হাত থেকে উপহার টা নিল ।

আমি রাস্তায় নেমে এলাম ! আমি জানি নীলু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ! এই মেয়ে গুলাই এমনই ! সামান্য বিষয় নিয়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদা শুরু করে !

আজ সারা রাত হ্যতো কাঁন্না থামবেই না !

একবার কি পেছন ফিরে তাকাবো !

নীলুর কান্না ভেজা চোখটা কেন জানি দেখতে ইচ্ছা করছে !

না থাক ! নীলু আবার কি ভেবে বসবে !!

আমি হাটতেই থাকি !!

তাড়াতাড়ি এখান থেকে দুরে যেতে হবে ! কন্না বড় সংক্রমক জিনিস !!

আমি হাটতেই থাকি !!







আমার কথা:

যারা হুমায়ূন স্যারের লেখা পড়েন তাদের কাছে লেখাটা খানিকটা পরিচিত মনে হতে পারে । স্যারের একটা গল্পের একটা অংশের খানিকটা প্রভাব আছে গল্পটাতে !

আজ যখন শহীদ মিনারে স্যার কে দেখতে গিয়েছিলাম, আসার পথে ভেবেছিলাম একটা কিছু লিখবো স্যার কে নিয়ে ! সবাই এতো লেখা লিখছে যে আমি কিছু লিখলাম না । তবে কোন একসময় নিশ্চই লিখবো
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১০:৪৮
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×