somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিথির ভালবাসা

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তিথি কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকালো ! পুরো ক্লাসটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা ! অল্প কয়েকজন ছেলে মেয়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আসে !
আজ কি তাহলে ক্লাস হবে না ?
তিথির একটু চিন্তা হতে লাগলো । অপুকি তাহলে চলে গেছে ! অপুর এই অভ্যাসটা খুব আছে ! ক্লাস না হলে সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাস থেকে হাওয়া ! ার ধারে কাছে আসবে না । কত নাকি কাজ থাকে ওর !!
ক্লাস না হলেও কত মানুষ বসে আড্ডা দেয় । কত কথা বলে ! তিথির খুব ইচ্ছা করে অপুর সাথে এমন করে সময় কাটাতে । কিন্তু গাধাটা যদি একটুও বোঝে ??
তিথি একজন কে জিজ্ঞেস করলো ক্লাস হবে কি না । যে উত্তরটা শুনতে চাইছিলনা ঠিক সেটাই শুনতে হল ! ডিপার্টমেন্টের জহির স্যার নাকি এক্সসিডিং করেছে । তাই ক্লাস ক্যানসেল করা হয়েছে ।
তিথির মনটা খারাপ হয়ে গেল । অপু নিশ্চই চলে গেছে ! আজ আর দেখা হবে না ওর সাথে !! একটা দিন ওর সাথে দেখা হবে না এটা ভাবতেই তিথির কান্না আসতে লাগলো ! এই একটা দোষটা তিথির খুব আছে । খুব অল্প বিষয় নিয়েই তিথি কান্না চলে আসে । আর কান্না আসলে তিথি কিছুতেই কান্না আটকাতে পারে না ।

এতো বড় মেয়ে হয়ে গেছে তবুও এই ব্যাপারটা ওর গেল না ।
এনফ্যাক্ট এই কান্নার জন্যই অপুর সাথে এর পরিচয় হয়েছে । তিথির এখনও সেদিনটার কথা খুব ভাল করে মনে পড়ে !
ফার্ষ্ট ইয়ারের প্রথম দিন ছিল । প্রথম ক্লাস ছিল । স্যার সবার নাম পরিচয় শুনছিল । তিথির কাছে আসতেই তিথি কেন জানি খুব নার্ভাস হয়ে গেল ! কিছুতেই এতোগুলো মানুষের সামনে কথা বলতে পারছিল না । ওর এই অবস্থা দেখে অনেকেই হেসে উঠল । এটা দেখে তিথি আো নার্ভাস হয়ে গেল । কোন রকম নাম আর জেলার নাম বলল । হঠাৎ কে যেন ওর জেলা নিয়ে একটা কটু মন্তব্য করলো । সবাই এটা শুনে হো হো করে হেসে উঠল ।
কিন্তু তিথির চোখে ততক্ষনে পানি চলে এসেছে ! এতো গুলো মানুষের সামনে একটা ১৯ বছরের মেয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল ।
ষ্সবাইকে ধমক দিলেও খুব একটা কাজ হল না । তিথিকে বসতে বলে তিনি অন্য প্রশঙ্গে চলে গেলেন ।
ক্লাস শেষে সবাই যখন বের হয়ে যাচ্ছিল তিথি বসেই ছিল !
একটা ছেলে ওর সামনে এসে দাড়ালো ! তিথির চোকখ তখনও ভেজা ! চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে একটা ফর্সা মত চশমা পড়া ছেলে এর সামনে দাড়িয়ে । মুখটাতে খানিকটা অপরাধির ভাব ! ছেলেটা বলল
-আই এম সরি ! আমি আসলে বুঝতে পারি নি যে তুমি জোকটা সহজ ভাবে নিতে পারবে না । আমি সত্যি খুব সরি !
ছেলেটা মুখ দেখে তিথি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো । কোন রকম বলল
-ঠিক আছে !
-যাক ! এপোলজি গ্রান্ট করলে ! হাই আমি অপু । তুমি তিথি ?
তিথি কেবল মাথা ঝাকালো .।

তিথি আর দাড়ালো না ওখানে । এখন ওকে বাধরুমে যেতে হবে ! এতো গুলো মনুষের সামনে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদা মোটেই ভাল হবে না ।
অপুর সাথে এমন না দেখা হওয়াটা প্রায়ই হয় । তখন তিথির প্রায়ই হয় । কিন্তু আজকে কান্নাটা আসার আরো একটা কারন আছে !
সকাল বেলা আজ তিথি নিজ হাতে অপুর জন্য রান্না করে নিয়ে এসেছে । বেচারা হলে থাকে ! ঠিক মত বাসায় যায় না । কি খায় না খায় ! তিথির খুব মায়া লাগে । খুব ইচ্ছা করে নিজ হাতে যত্ন করে ওকে কিছু খাওয়াতে !!
মাস খানেক আগে অপুকে একবার অপুকে তিথি ওর মামার বাড়ি দাওয়াত দিয়েছিল ।
মামার বাড়িতেই থেকে পড়াশুনা করে ! মামা ঐদিন বাড়িতে ছিল না । মামীকে বলল
-মামী আমার একটা বন্ধুকে কাল দাওয়াত দিবো দুপুরে খাওয়ার জন্য?
মামীর সাথে ওর ভাল সম্পর্ক তবুও খানিকটা সংকচ হচ্ছিল !
মামী একটা হেসে বলল
-ছেলে বন্ধু !
তিথি খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল
-হ্যা মামী ! মামাকে বলবা না তো ? মামা জানলে আব্বা কে বলে দিবে ! প্লিজ মামী !
-আচ্ছা আমি কি মানা করেছি নাকি ! কিন্তু সাবধান ! তোর মামা জানলে কিন্তু খবর আছে !
পরদিনই অপু এসে হাজির । অপু যখন খাচ্ছিল তিথি কেবল তাকিয়েই ছিল একভাবে ! এতো ভাল লাগছিল দৃশ্যটা দেখতে আর কিছু ভাবছিল না । কেবল মনে হচ্ছিল যে এমন ভাবে যদি সারা জীবন অপুকে খাওয়াতে পারতো !! তিথির চোখে বারবার পানি আসছিল ।
অপু চলে যাওায়র পর তিথির মামী বলল
-তুই ওকে ভালবাসিস, তাই না?
তিথি মিথ্যা বলতে পারে নি । স্বীকার করেছিল ।
-বলেছিস ওকে ?
-না !
-কেন?
তিথি চুপ করে থাকলো ! মামী আর জনতে চাইলো না । কারনটা তিনি ভাল করেই জানেন ।
তার এই ভাগনীটার মনটা অসম্ভব ভাল । কিন্তু সে দেখতে খুব একটা ভাল না ! ছেলেরা যে সব দেখ একটা মেয়েকে পছন্দ করে তার কোন গুনই তিথির ভিতর নাই । এরকম মেয়ে কেবল ভাল বন্ধু হতে পারে ! ভাল প্রেমিকা না !

তিথি আরো জোরে পা চালালো । চোখ দিয়ে পানি বের হওয়ার আগেই ওকে বাথরুমে ঢুকতে হবে !!
এইতো টয়লেট !
তিথি দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবে ঠিক এমন সময় ওর হাত চেপে ধরলো কে যেন !!
ফিরে তাকিয়ে দেখে অপু !!
তিথি প্রথমে বুঝতে পারলো না কি করবে !
ঠিক তখনই টুপ করে ওর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো !
অপু বলল
-কিরে কতক্ষন ধরে ডাকছি ! শুনিস না ? আর এটা ছেলেদের টয়লেট এখানে ঢুকছিস কেন ?
সত্যিতো এটা তো ছেলেদের টয়লেটই !!
-আর কাঁদছিস কেন ? তোকে নিয়ে আর পারা গেল না । তুই এমন ফ্যাসফ্যাস করে কেন যে কাঁদিস !!
তিথি কোন কথাই বলতে পারলো না । কিছুক্ষন কেবল তাকিয়েই রইলো অপুর দিকে !
অপু আবার বলল
-কি হল এভাবে হাবার মত তাকিয়ে আছিস ক্যান? চল এখান থেকে ! নাকি বাথরুমে যাবি ?
-বাথরুমে যাবো না ।
-তাহলে এর মধ্যে যাচ্ছিলি কেন !
আরো কিছু বলতে গিয়ে অপু থেমে গেল । কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো !
তারপর বলল
-আমাকে খুজছিলি?
তিথি কেবল মাথা নাড়লো !
-তোকে নিয়ে আসলেই পারা যাবে না । তুই কি বাচ্চা মেয়ে নাকি ?
তিথি কোন কথা বলে না । কেবল চেয়ে থাকে অপুর দিকে !!
তিথির নিজের ব্যাপারটা ভালই লাগে যখন অপু ওকে বকা দেয় ! কেমন একটা আপন আপন লাগে !
-এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ? চল এখন !!
-অপু !
-হুম !
-তোর জন্য কিছু এনেছি আমি !
-কি? কি এনেছিস ?
-আয় আামর সাথে !
তিথি অপুর হাত টা ধরে কমন রুমের দিকে নিয়ে গেল । এখন ক্লাস আওয়ার । কমন রুম ফাঁকা পাবার কথা !
মোটামুটি ফাকাই ছিল । ওরা শেষের দিকে বসলো !
ব্যাগ থেকে টিফিন বাটি টা বের করে অপুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-আমি নিজে হাতে রান্না করেছি !
-তাই নাকি ! খেয়ে বেচে থাকব তো?
-অপু........

অপু খুব তৃপ্তি নিয়েই খাচ্ছিল । আর তিথি সে তৃপ্তি নিয়ে দেখছিল । মনে মনে কেবল বলল "তুই কি একটুও বুঝিস না তোকে কত টুকু ভালবাসি.....।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×