somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সকালের নাস্তা !

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পিয়নকে ডেকে নাস্তার প্লেট সরিয়ে নিতে বললাম । পিয়ন আমার নাস্তা খাওয়া দেখে বেশ অবাকই হল । কিছুই খাই নি । পিয়ন যেমনটা এনেছিল ঠিক তেমনটাই রয়ে গেছে সব। পিয়নটি বলল
-স্যার কি পরোটা খান না ? অন্য কিছু আনবো ?
-না থাক আনতে হবে না । এগুলো নিয়ে যাও । খেতে ভাল লাগছে না ।
আসলেই খেতে ইচ্ছা করছে না । অনেকক্ষন পরোটার একটা টুকরো হাতে নিয়ে বসে ছিলাম । কিন্তু মুখে দিতে ইচ্ছাই হল না ।
আসলে নিশিকে ছাড়া কিছুতেই কিছু পেটে যেতে চায় না ।
কি অদ্ভুদ এক সমস্যার মধ্যে পরেছি !
আশ্চর্য !
আমি অনেকক্ষন বসে বসে ভাবলাম বিষয়টা । এমনটা কেন হবে ? এর তো কোন লজিক্যাল ব্যাখ্যা আমার জানা নাই ।
আমি মনে করার চেষ্টা করলাম আসলেই বিয়ের পর ওকে ছাড়া কোন দিন কিছু খেয়েছি কিনা ?
নাহ !
মনে পরছে না ।
তাহলে এই জিনিসটা কি নিশির মনে রাখা উচিত্‍ না ?
যতই রাগ হোক এইটুক তো মনে রাখা উচিৎ‍ যে তাকে ছাড়া যখন একটা মানুষ কিছুই খায় না তখন খাওয়ার সময় তার সামনে গিয়ে বসি । কথা না বলি একটু বসি !
নিশি গত রাত থেকে আমার সাথে কথা বলছে না । রাগ করে আছে । অবশ্য এর পেছনে আমার নিজেরও একটু দোষ আছে ।
গতকাল নিশির ভাইজির জন্মদিনের পার্টি ছিল । আমি ও বাড়ীর জামাই আমাকে তো দাওয়াত দেবেই । কিন্তু আমার কেন জানি নিশির ভাইয়ের বাড়িতে একদম যেতে ইচ্ছা করে না ।
আমার মনে হয় ভদ্রলোক আমাকে একদম পছন্দ করেন না । আমার আর নিশির বিয়েতেও নিশির বড় ভাইয়ের একদম মত ছিল না । বিয়েটা হয়েছে নিশির একান্ত ইচ্ছায় ! বলতে গেলে তার অমতেই । কেবল নিশির বাবা রাজি ছিল বিধায় ওর ভাই খুব বেশি উচ্চবাচ্চ করতে পারে নি ।
আমার এখনও মনে হয় যে ভদ্রলোক আমাকে এখনও ঠিক মন থেকে মেনে নিতে পারে নি । আমি চাচ্ছিলাম না যেতে ঐ বাড়ি ।
নিশিও এই ব্যাপারটা খুব ভাল করে জানতো কিন্তু আমাকে সে নিয়ে যাবেই । তবে আল্লাহর রহমত যে কিবরিয়া স্যার আমাকে সাইট পরিদর্শনে নিয়ে গেল । বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত দশটা ।
আমি ঘরে ঢুকে দেখি নিশি হপ করে বসে আছে । একটু আগে সেজেছিল বোঝা যাচ্ছে ।
তবে মুখ খুবই গম্ভীর ।
আমি নিশির দিকে এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা দিয়ে বললাম
-তোমার জন্য !
নিশি ফুল গুলো নিল তারপর ছুরে ফেলে দিল খাটের ওপাশটাতে ।
মাই গড !
অবস্থা তো দেখি খুবই সঙ্গীন । আমি ফুল গুলো মেঝে থেকে নিয়ে তুলে নিতে নিতে বললাম
-দোষ তো করেছি আমি । ফুল তো আর কোন দোষ করে নি ।
নিশি তবুও কোন কথা বলল না ।
-পার্টি কেমন ছিল ?
তবুও কোন কথা নাই । আরে এই মেয়েটা কি বোবা হয়ে গেল নাকি ? আমি নিশির আর একটু কাছে গিয়ে বসলাম ।
-দেখো ! আমি সত্যিই আসতে চেয়েছিলাম । বিশ্বাস কর । আচ্ছা তুমিই বল তুমি একটা কাজ আমাকে করতে বলেছ আর আমি সেটা করি নি এমন কখনও হয়েছে বল ? কিবরিয়া স্যার .......
কথার মাঝখানে নিশি উঠে চলে গেল
-আহা শোন না ! প্লিজ যেও না ।
নিশি কোন কথাই শুনলো না । পাশের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো । কত বার দরজা ধাক্কা দিলাম দরজা আর খুললই না ।
রাতের খাবার আর খাওয়া হল না । কাজের মেয়েটা এসে খাবার সাধলেও খেতে গেলাম না । তাকে বলে দিলাম যে তোর আপা যদি খেতে ডাকে তবেই খেতে যাবো ।
তা না হলে খাবো না ।
আমার একটা বিশ্বাস ছিল যে এই কথা শুনে নিশি নিশ্চই আসবে । কিন্তু এল না ।
সত্যি সত্যিই এল না ।
না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম । সকাল বেলা রেডি হয়ে যখন নাস্তার টেবিলে বসলাম দেখি একই কাহিনী । কাজের মেয়েটা নাস্তা দিয়ে গেল । আমি তাকে বলল
-তোর আপা কই ?
-শুইয়া আছে ।
-যা ওকে গিয়ে বল যে আমি ডাকছি । না আসলে কিন্তু খাবো না ।
কাজের মেয়ে ফিরে আসলো একটু পরেই ।
-বলেছিস ?
-হুম ।
-কি বলল ?
-বলল যে না খেলে না খাবে ।
আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল । নাস্তা না করেই চলে এলাম অফিসে !
একটু অভিমানও হল নিশির উপর ।
ও কেন এমনটা এমনটা করল !
আমার কথা কি ওর একটুও মনে পড়ল না ? ও খুব ভাল করেই জানে কাল রাতে আমি না খেয়েই ঘুমিয়েছি । ঘুমিয়েছি আর কই এপাশ ওপাশ করেছি । ঘুমতো আসে নি । আর নিশিও যে ঘুমাই নি এটা আমি খুব ভাল করে জানি । ওর কি একবারও কথাটা মনে হল না যে আমি রাতেও খাই নি এখনও খাবো না যদি ও না আসে !
নিশির উপর অভিমান হল । খুব বেশি অভিমন হল ।
ঠিক আছে আমার একটু দোষ তো ছিল আমি তো অস্বীকার করছি না তাই বলে এতো রাগ করে থাকতে হবে ।
এমন ভাবে কথা না বলে থাকতে হবে ।
-স্যার চা দিয়ে যাবো ?
-চা ? আচ্ছা আনো ।
চা টা কি খাবো ?
না খাবো না ।
কিচ্ছু খাবো না ।
নিশি যখন শুনবে আমি কিছুই খাইনি দেখবো ওর মনের অবস্থা কেমন হয় ।
ও কি অস্থির হবে ?
এখন কি অস্থিরতা বোধ করছে যেমনটা আগে করতো ?

মাস দুয়েক আগের কথা । নিশি ওর বাবার বাসায় গেছে । আমি বাসায় । রাতের বেলা খেতে বসেছি দেখি খেতে ইচ্ছা করছে না ।
এমন না যে ক্ষুদা নেই কিন্তু খেতে ইচ্ছা করছে না । ভাত নিয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষন কিন্তু কোন লাভ হল না । টেবিলে বসে থাকতেই নিশির ফোন এসে হাজির ।
-খেতে ইচ্ছা করছে না । তাই না ?
-হুম !
-কি করবা ?
-জানি না ।
-এরকম করলে কি ভাবে হবে ? ছেলেমানুষী না করে খেয়ে নাও ।
-না খাবো না । তুমি কেন গেল ? তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমি কিছু খেতে পারি না ।
নিশি কোন কথা না বলে চুপ করে রইল । এমন সময় বেল বেজে উঠল ।
-দাড়াও । কে যেন এসেছে ?
নিশি বলল
-খেতে খেতে উঠতে নেই । খাওয়া শেষ করে উঠ ।
-তাহলেই হয়েছে । দাড়াও আগে দেখি কে এসেছে ?
দরজা খুলে দেখি নিশি দাড়িয়ে !
আমি কোন কথা না বলে টেবিলে খেতে বসলাম । নিশি বসলো আমার সামনে ।
আহ ! কি চমৎ‍কার কি দিনই ছিল !
আর আজ ?
কিন্তু একটু খিদে তো লেগেছে ! তো কি হয়েছে ?
খাবো না খাবো না ।

-স্যার !
পিয়ন দরজা দিয়ে উকি দিলো ।
-কি ?
-ম্যাডাম এসেছে ।
-ম্যাডাম ? কোন ম্যাডাম ?
-নিশি ম্যাডাম ।
যাক ! ম্যাডাম এসেছে তাহলে ?
-কোথায় ?
-ওয়েটিং রুমে বসে আছে ।
-আচ্ছা যাও । আমি আসছি ।
আচ্ছা এখনই যাবো নাকি একটু পর যাবো ?
একটু পরে যাই । তাহলে বুঝতে পারবে যে আমিও রাগ করেছি ।
৩০ মিনিট পরে যাই । সাড়ে দশটা বাজে । এগারটার দিকে যাই । তাহলে .
আচ্ছা নিশি এখন কি ভাবছে ?
আমি যখন ওর সামনে যখন যাবো তখন কি বলবে ?
আমি তো কোন কথা বলবো না আগে ? ও ই আগে বলবে ? ঘড়ির দিকে তাকালাম !
১০ টা ৩১ ।
আরে এই ঘড়িকি বন্ধ নাকি ?
সময় যায় না কেন ?
দুর .....!
আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না । ওয়েটিং রুমে গিয়ে দেখি মহারানী মাথা নিচ করে বসে আসে । টেবিলের উপর একটা টিফিন ক্যারিয়ার ।
আমি সামনে গিয়ে দাড়ালাম । নিশি আমাকে দেখে টিফিন বাটি খুলতে আরাম্ভ করলো । আমি দাড়িয়েই রইলাম ।
-দাড়িয়ে কেন আছো ?
বাবারে এখনও রাগ আছে । আমি বসলাম চুপচাপ । নিশি নাস্তা গুছিয়ে আমার সামনে এগিয়ে দিল । পরোটা সাথে মংশের লটপটি । আলু ভাজিও আছে !!
-এভাবে রাগ করে দিলে খাবো না ।
নিশি এবার আমার দিকে তাকাল । কেমন গভীর চোখে ! তারপর নিজ হাতে মুখে তুলে দিতে লাগল । বলল
-তোমার উপর আমি একটু রাগও করতে পারবো না শান্তি মত !!
আমার কেবল মনে হল যে
আহা ! এমন সাধের নাস্তা আমি আগে কখনও খাই নি !!
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×