somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিশির পাগলামী অথবা একটি ভালবাসার গল্প

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-বাবু আমি এখন একটু রাখি ? আমার এখন কথা বলতে ভাল লাগছে না ।
-না তা লাগবে কেন ? এখন আমিতো পুরনো হয়ে গেছি । এখন তো আর আমার সাথে কথা বলতে ভাল লাগবে না ।
আমি নিশির কথা শুনে কিছুক্ষন থ হয়ে গেলাম । এই মেয়েটার মাথা কি খারাপ নাকি ? কিসের ভিতর কি কথা বলছে ।
আমি বুঝি না এতো বড় একটা মেয়ের মাঝে মাঝে কি হয় ! আরে মাঝে মাঝে বলছি কেন এই মেয়ে তো সব সময়ই এমন করে ! মাঝে মাঝে মনে হয় সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যাই কিন্তু তখনই নিশির নিশ্পাপ চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে । তখন কিছুতেই নিশির উপর রাগ করে থাকা যায় না । ওর সব পাগলামো সব ছেলেমানুষী সহ্য হয়ে যায় ।
একবার ঠিক এমনই হয়েছিল । আমাকে ওর পাগলামোর কারনে খুব লজ্জায় পড়তে হল । রিক্সায় করে ওর সাথে যাচ্ছিলাম । পথের মধ্যে আমার এক বান্ধবীর সাথে দেখা । ক্লাসমেইট । রিক্সা থামিয়ে ওর সাথে কথা বললাম কিছুক্ষন ।
কেন বললাম !
তার একই কথা !
নিশি কেমন পাগলের মত আচরন করতে লাগলো । বলল
-তুমি কেন কথা বললে ঐ মেয়ের সাথে ? আমাকে ইগনোর করে কেন কথা বললে ?
-আরে ওর সাথে কথা বললাম তো কি হয়েছে ? আর তোমাকে ইগনোর করলাম কোথায় ?
-তাহলে তুমি কেন কথা বললে ?
-আরে আশ্চর্য ! কথা বলেছিতো কি হয়েছে ?
-কি হয়েছে ? কি হয়েছে ?
নিশি এতো জোরে চিৎ‍কার করে উঠলো যে আসেপাশের মোটামুটি সবাই ই তাকিয়ে দেখলো আমরা কি করছি । আমার অস্বস্তির সীমা থাকলো না ।
কিন্তু নিশির সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । ওর চিৎ‍কার করেই চলেছে । আমি ওকে কয়েক বার শান্ত করার আমি রিক্সা থেকে নেমে হাটা দিলাম ।
মনে মনে বললাম এই অসুস্থ মেয়ের পাশে আর একটুও নয় ।
এই মেয়ের সাথে আর কোন সম্পর্ক নয় । রাতে নিশি কয়েকবার ফোন দিলেও আমি ধরলাম না । মোবাইল বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম ।
ওর উপর খুব রাগ লাগছিল । খুব বেশি রাগ ।
সম্পর্কের মধ্যে মান অভিমান থাকবেই । মানুষের উপর মানুষ রাগ করতেই পারে কিন্তু সেই রাগ করার তো একটা লজিক থাকা চাই । কিন্তু নিশি বেলায় এই লজিক ফলো করে না । কি সব লজিক বিহীন কারন নিয়ে চিৎ‍কার চেচামিচি শুরু করে । মেজাজটা ঠিক রাখা কষ্টকর হয়ে যায় ।
রাতে ফোন বন্ধ করে শুয়েছিলাম সকালবেলা নিশি এসে হাজির । চোখ মুখের অবস্থা দেখে মনে হল সারারাত একটুও ঘুমাই নি । কান্নাকাটিও করেছে নিশ্চই ।
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হু হু করে কেঁদে দিল । আসলে যত রাগই হোক না কেন এমন করে কেউ যদি কান্না কাটি করে নিজেকে কি ধরে রাখা যায় । কাঁদতে কাঁদতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো । কান্নার বেগ যেন আরো বাড়ল ।
এই মেয়ের উপর কিভাবে রাগ করে থাকি !
প্রতিবারই ও অহেতুক ভাবে এমনটা করবে আমার মেজাজ খারাপ হবে আবার ওকে ক্ষমাও করে দিবো ।

আমি নিশিকে বলল
-আচ্ছা তুমি এমন কথা কেন বলছো ?
-বলব না ? তাহলে তুমি কেন ফোন রেখে দিতে চাইছো ? আমাকে আর ভাল লাগে না তাই তো আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে না । কালকেও তুমি এমনটা করেছ ।
-আরে বাবা আমি বললাম না যে আমি আজ সারা দিন সেমিনারে আছি । কাল ছিলাম । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত । এখন তুমি বল সারা দিন খাটা খাটনি করে কি রাত জেগে কথা বলতে ইচ্ছা করে !!
-আমি জানি না । আমি কিছু জানি না । আমার সাথে কথা বলে হবে । আজ সারাদিন তুমি একটুও কথাও বল নি ।
-আরে আমি তো বিজি ছিলাম । কিভাবে বলবো ?
-আমি জানি না । আমি কিছু শুনতে চাই না । কিছু শুনতে চাই না ।
আমি ফোনের লাইন কেটে দিলাম । এই মেয়ের সাথে কথা বলে লাভ নাই । একবার যা বলতে তা থেকে কিছুতেই নামানো যাবে না । আর আমার পক্ষে এখন কথা বলা সম্ভব না কিছুতেই ।
আমি ফোন বন্ধ করে ঘুম দিলাম । ফোন খোলা থাকলে নিশি ফোন করতেই থাকবে !

ঘুমিয়েই পড়েছিলাম । ঘুম ভাঙ্গলো খুব সকালে । সকাল না বলে বলে ভোর বলাই ভাল । কারন এখনও খুব একটা আলো ফোটে নি । আমি আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে মোবাইল হাতে নিলাম । এখনও বন্ধ ।
আরে রাতে না বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরেছিলাম । নিশি কি ঘুমিয়েছে ?
মেয়েটা এমন পাগলামো করে । নিশ্চই ঘুমাইনি ।
আমি ফোন অন করটেই মেসেজের বৃষ্টি শুরু হল যেন ।
নিশর মেসেজ ।
সব গুলোতে কেবল একটা লাইন লেখা
আমি তোমাকে অনেক মিস করছি !!
আমি তোমাকে অনেক মিস করছি !!
আমি তোমাকে অনেক মিস করছি !!
এই মেয়েটা আসলেই পাগল । একদম পাগল ।
আসলে কাল রাতে এতো ক্লান্ত ছিলাম কিছুতেই কথা বলার অবস্থায় ছিলাম । মেয়েটা নিশ্চই মন খারাপ করেছে । কান্না কাটিয়ও নিশ্চই করেছে ।
কি করবো ?
এখন ফোন দিবো !!
আমি জানি একটু সরি বললেই ও মন ভাল হয়ে যাবে কিন্তু আরো বেশি কিছু কি করা যায় না?
যায় !!
আমি চট করে তৈরি হয়ে নিলাম । এতো সকালে কেউ বের হয় নি । সকালটা একদম নির্জন । কোথা থেকে যেন পাখির ডাক ভেসে আসছে !!
নিশি কি ঘুমিয়েছে ?
কে জানে ?

দুবার ফোন বাজতেই নিশি ফোন রিসিভ করল । কিন্তু কোন কথা বলল না । এর মানে হল ও রাগ করেছে । আমি বললাম
-রাগ করেছ?
-হুম !
-খুব বেশি ?
-হুম !
-কথা বলবা না?
-হুম !
আমি হেসে ফেললাম ।
-কথা বলবা ?
নিশি কোন কথা বলল না । আমি আবার বললাম
-তুমি মাঝে মাঝে এমন ছেলেমানুষি কর । আামর দিকটাও তোমার তো দেখা উচিৎ !
-আর তুমি আমার দিকটা দেখবা না ?
-আরে বাবা !! থাক বাদ দাও । দেখ বাইরে কি সুন্দর সকাল ।
-দেখবো না ।
-আরে ! আমি না দোষ করেছি । সকালতো আর কোন দোষ করেনি ।
নিশি কোন কথা বলল না ।
-আচ্ছা তোমার মন ভাল করে দিব? দিবো ?
-কিভাবে ?
-আচ্ছা শুনো , তুমি এখন তোমার জানলা দিয়ে যদি বাইরে তাকাও তাহলে তোমার মন ভাল হয়ে যাবে । আমি গেরান্টি দিচ্ছি ।
-আচ্ছা ?
-তাকিয়ে দেখ !
ঠিক তখনই নিশিকে জানলায় দেখা গেল । আমি হাত নাড়লাম ।
-মন ভাল হয়েছে ?
নিশি কোন কথা না বলে জানলা থেকে সরে গেল দ্রুত ।
কি হল ?
রাগ কি বেশি করেছে ?
এমন তো হবার কথা না ?
ঠিক তার কিছু সময় পরই নিশিকে হলের গেটে দেখা গেল ।
গেট থেকে বের হয়ে একদম এদিকেই এগিয়ে আসছে । এগিয়ে আসছে বলতে এদিকে দৌড়ে আসছে । আসতে আসতে একদম কাছে যখন চলে এল আমার মনে হল ও থামবে না । সিনেমায় যেমন নায়িকারা দৌড়ে এসে নায়কের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে নিশিরও তেমন কিছু করার প্লান ।
ঠিক তাই ই করলো !!
ভাগ্য ভাল যে সকাল বেলা । মানুষ জন কেউ নাই ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:০৮
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×