somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমার ইচ্ছা গুলোই আমার ইচ্ছা

২১ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নিহিন অফিসের দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবে এমন সময় ওর হাতটা চেপে ধরলাম । প্রথমে নিহিন একটু যেন চমকে উঠল । হঠাত্‍ করে যে কারো হাত চেপে ধরলে যে কেউ চমকে উঠবে ।
নিহিন কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আমাকে দেখে মুখের ভাবটা পরিবর্তন হয়ে গেল ।
-তুমি এখানে ?
আমি একটু হাসলাম । বললাম
-চল ।
-কোথায় ?
-চল । আমি যেখানে নিয়ে যাই ।
নিহিনের মুখটা একটু কেমন যেন হল ।
-অপু এখন অফিস আমার ।
-তো কি হয়েছে ? চল ।
আমি ওর হাতটা ধরে টান দিলাম কিন্তু ও আসতে চাইল না ।
-আমার অফিস ।
-আসবে না তুমি ?

এবার নিহিন একটু দ্বিধায় পড়ে গেল ।
-প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা কর ।
-আচ্ছা । ঠিক আছে । আসতে হবে না ।
আমি নিহিনের হাত ছেড়ে দিলাম । ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘুড়ে হাটা দিলাম । কয়েক কদম হেটেছি এবার নিহিন নিজেই এসে আমার পথ রোধ করলো । আমি খুব ভাল করেই জানতাম যে নিহিন আসবে এবং আমাকে আটকাবে । আমার হাত ধরে বলল
-এমনটা কেন কর ! আমার অফিস না !
-যাও । আমি মানা করেছি তোমাকে । যাও অফিসে গিয়ে কাজ কর গে মন । তোমার ডিপার্টমেন্ট এইচ আর না ? যাও ।
আমি আবার ঘুরতে গেলাম কিন্তু নিহিন আমার হাতটা ছেড়ে দিলো না ।
-আচ্ছা কতক্ষন লাগবে ?
-জানি না । তুমি আসবে না আমি যাবো !
-আচ্ছা চল । চল । তুমি এমন কর না । জানি না কাল ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আমায় কি বলবে !
আমি হাসলাম । নিহিন কে নিয়ে বাসে উঠলাম । যেখানটায় যাওয়ার প্লান করেছি ওখান টাতে যেতে মোটামুটি দুই আড়াই ঘন্টা লাগার কথা ।

বাসে পিছনের একটা ডাবল সিট নিয়ে বসলাম দুজন ।
যাত্রা শুরু হল ।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
-যাচ্ছি কোন এক জায়গায় !
-সবই ঠিক আছে । শুধু অফিসটা !
-তা কবে যাবো তোমার সাথে । সাধারনত মানুষ ছুটিয় দিন গুলোতে বেড়াতে যায় । কিন্তু একটা ব্যাপার কি জানো ! অদ্ভুদ কারনে আমি যার সাথে বেড়াতে যেতে চাই ছুটির দিন গুলোতে তার কোন খোজই পাওয়া যায় না । এমনকি তার মোবাইল পর্যন্ত থাকে ।
নিহিন কোন কথা না বলে চুপ করে থাকলো ।
আমি এখনও ঠিক বুঝতে পারি না ছুটির দিন গুলোতে নিহিনেরকি হয় ।
ও কোথায় হারিয়ে যায় ? মোবাইলটা বন্ধ রাখে !
এটার কোন মানে আছে ?

বিমানবন্দর স্টেশনে বাস থেকে নামলাম । ওখান থেকে রিক্সা নিতে হল । যখন জায়গা মত নামলাম নিহিনেরআনন্দ দেখে কে ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-সত্যি তুমি এটা করবে আমি ভাবতেই পারি নি ।

তারপর রেললাইনের উপর দিয়ে বাচ্চা মেয়ের মত দৌড়া দৌড়ি করতে লাগল । নিহিনেরআনন্দ দেখে নিজের কাছেই খুব ভাল লাগল । ওর উপর খানিকটা রেগেছিলাম কিন্তু এখন মনে হল খামোখা রাগ করে এমন চমত্‍কার দিনটা নষ্ট করে লাভ নাই ।
অনেক দিন থেকেই এমন একটা জায়গা খুজছিলাম মনে মনে । যেখানে গাছ পালায় ঘেরা থাকবে চারিপাশ । তার মাঝখানে দিয়ে রেললাইন চলে গেছে । আর একটু দুরেই একটা একটা লেক আছে । ওখানে নৌকা আছে ।

নিহিনের অনেক দিনের ইচ্ছা এমন একটা জায়গায় আমার সাথে যাবে ।
-এই কি ভাবছ ?
আমি নিহিনের দিকে তাকিয়ে দেখি ও রেল লাইনের উপর হাটছে আপন মনে ।
-এই এদিকে আসো ।
আমি নিহিনের দিকে এগিয়ে গেলাম । নিহিন যে লাইনটার উপর দাড়িয়ে আছে আমাকে তার পাশেরটাকে দাড়াতে বলল । আমি দাড়ালাম । তারপর নিহিন ওর হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিল ।
তারপর দুজন হাটতে লাগলাম রেল লাইনের উপর দিয়ে !



নিহিনের অনেকদিনের ইচ্ছা এমন করে দুপাশে রেল লাইন দিয়ে হাটা !
হাটে হাটতে আমরা অনেকদুর চলে এলাম ।
ওর মুখটার দিকে তাকিয়ে মনে হল যেন ওর মত আনন্দে আর কেউ নাই ! আমাকে নিয়ে রেল লাইনের উপরেই বসে পড়লো ।
ভাগ্য ভাল আজ রোদের তেজটা কম । আকাশ টা কেমন একটু মেঘ মেঘ !
নিহিন আমার কাধে মাথা রেখে অনেকক্ষন চুপ করে থাকলো !
আমি বললাম
-কি হল ? চুপ করে আছো কেন ?
-স্বপ্নের মধ্যে আছি মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে কথা বললেই হয়তো স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে !
-আচ্ছা !!
আমি নিহিনের মুখটা হাত দিয়ে উচু কে ওর নাকে মৃদু করে একটা কামড় দিলাম ।
-আউ !!
আমি বললাম
-স্বপ্ন ভেঙ্গেছে ! এটা স্বপ্ন না বাস্তব !
-কিন্তু স্বপ্নের থেকেও সুন্দর ! আমি কখনও ভাবি নি আমার স্বপ্নটা এভাবে পুরন হয়ে যাবে !!

কিছু বলার আগেই নিহিন আমাকে জড়িয়ে ধরলো । খুব জোড়ে জড়িয়ে ধরলো । যেন কিছুতেই আমাকে হারিয়ে যেতে দিবে না ।
-আরে বাবা এভাবে জড়িয়ে ধরেছ কেন ? আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি ?
-তুমি চাইলে্ও পারবে না । আমি তোমাকে হারিয়ে যেতে দিবো না । কিছুতেই দিবো না !
-আচ্ছা ঠিক আছে এবার আসো !
-কোথায় ?
নিহিন কে নিয়ে সামনের লেকের দিকে যাই ।
লেকটা বেশ বড় !
আমি বললাম
-নদী এখানে নাই । আপাতত লেক দিয়ে কাজ চালাতে হবে । চলবে ! লৌকায় চড়ি চল ।

যখন নিহিনকে নিয়ে নৌকায় উঠলাম দেখি ওর চোখে পানি চলমল করছে ।
স্পষ্টই সেটা আনন্দের ! আশ্রু ভড়া চোখ নিয়ে ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে !!
-তুমি এস আমার জন্য করেছ ?
-আমি কি করলাম ? তুমি এরকম জায়গা যেতে চেয়েচিলে আমি নিয়ে আসলাম ।
নিহিন আমার আরো একটু কাছে এগিয়ে এল ।
নৌকায় এক পাশে আমি বসে ।অনিনদিতা আমার গায়ের উপর হেলান দিয়ে বসলো ! আমি ওকে ভাল করে জড়িয়ে ধরলাম পিছন থেকে ।



-আমার খুব ভাল লাগছে ! খুব বেশি ! আচ্ছা তুমি কিভাবে জানলে আমার এই ইচ্ছার কথা গুলো !
-আমি না জানলে আর কে জানবে ?
নৌকা চলছে তার আপন মনে আমরা গল্প করছি আপন মনে ।
হঠাৎ নিহিন বলল
-ক্ষুদা লেগেছে ।

আমি ঘড়ির দিকে তাকয়ে দেখি প্রায় তিনটা বেজে গেছে । কখন যে এতো সময় পার হয়ে গেছে টের পাই ননি ।
আমি আগে থেকেই সব রকম প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলম । ব্যাগে করে খারার নিয়ে এসেছিলাম । দুজন মিলে নৌকার উপর লাঞ্চ করলাম !!
-আই মিষ্টি খাওয়া বা না ?
-এখনে মিষ্টি পাবো কোথা....
আমি নিহিনের চোখে দিকে তাকয়ে কথা শেষ করতে পরলাম না ।
এই দুষ্ট মেয়েটা !!
আমি বললাম
-মিষ্টি ?
নিহিন একটু হেসে মাথা নাড়াল !
-হুম ! মিষ্টি !
-আসো তোমাকে খাওয়াচ্ছি !!
এই বলে ওর দিকে আরো একটু এগিয়ে গেলাম ।
-এই ভাল হবে না বলছি......
-ভাল করছি দাড়াও ..। যাবে কোথায় ....




তোমার যখন ইচ্ছা করে
কাছে নিতে আপন করে
বলবে শুধু একটা বারে
আসবো আমি ঘোড়ায় চড়ে !

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৩২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×