somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস ডেটিং !!

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি আবার বললাম
-আমি আসতে পারবো না !
এবার গলায় একটু রাগের ভাব ছিল । আর খানিকটা বিরক্তির ভাব !
নিশি নিশ্চই বুঝতে পেরেছে যে আমি ওর কথায় খানিকটা বিরক্ত হয়েছি ! তাই চুপ করে রইলো !
আমি ফোনটা কানের কাছে ধরেই রাখলাম কিছুক্ষন ! কোন সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না ! বললাম
-তুমি শুনতে পাচ্ছ?
নিশি মৃদুস্বরে বলল
-পাচ্ছি তো ! বল !
-আমি এখন আসতে পারবো না !
-দেখ না একটু ? প্লিজ ! তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ! আর খুব তো বেশি দুরে না ! আমি উত্তরা থেকে আসতে পারছি আর তুমি এই দুরে আসতে পারবে না ?
-উত্তরা থেকে আসতে পারছো মানে ?? তুমি কি চলে এসেছো ?
নিশি কোন কথা বলল না । চুপ করেই রইলো ! আমার মেজাজটা এবার একটু সত্যি খারাপ হল ! এই ফাজিল মেয়ে আসবি তো আয় আগে একবার ফোন দিয়ে আসবি না ?
আমার কাজ থাকতে পারে না । আর এখন শীত কাল । সকাল বেলা বেশ শীত পড়ে । বাইরে একদম বের হতে ইচ্ছা করে না ! আমার তাই ইচ্ছাই ছিল না একদম বাইয়ে রের হওয়ার । আর আজকে টিউশনীও নাই ! প্লান ছিল সারাদিন ঘরে বসে বসে ঘুমাবো আর টিভি দেখবো !
তার উপর মাসের শেষ ! হাতে একদম টাকা পয়সা নাই ! নিশি কে নিয়ে বের হওয়া মানে টাকা পয়সার খরচ !
আমি আবার বললাম
-কি হল কথা বলছো না কেন? তুমি চলে এসেছ ?
-হুম !
আমার মেজাজ এবার সত্যিই খারাপ হল । এই শীতের ভিতরেও আমাকে এখন বের হতে হবে ! ঝামেলা !!!
আমি আরো খানিকটা মেজাজ গরম করে বললাম
-যেমন নিজে নিজে এসেছ আবার নিজে নিজে চলে যাও ! আমার কাছে কোন টাকা পয়সা নাই ! রিক্সা ভাড়া দেওয়ার মতও কোন টাকা নাই ! আমি চাইলেও আসতে পারবো না !
নিশি আরো কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ! তারপর নিশি বলল
-তুমি রিক্সা নিয়ে আসো ! আমি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি ! আসো না প্লিজ ! একটু আসো !
-কি টাকা পয়সা বেশি হয়ে গেছে নাকি ?
নিশি চুপ করে রইলো আবার !
নিশির এই ব্যাপার টা আমার একটু পছন্দের ! নিশি কখনও আমার সাথে কোন বিষয়ে কোন আরগু করে না । যদি ও কিছু চায় আর তাতে যদি আমার মত না থাকে তখন চুপ করে থাকে ! কোন চিৎকার চেচামিচি করে না ! ও খুব ভাল করেই জানে আমি যতই নাহু নাহু করি শেষে গিয়ে আমি ঠিকই রাজি হয়ে যাবো !
আমি বললাম
-কোথায় তুমি এখন ?
-এই তো বাস স্টান্ড !
-কোথাকার বাসস্টান্ড ?
-মোঃপুর !
-বাহ ! চলেও এসেছো !
-হুম ! দাড়াও ! আসতেছি !

রিক্সা করে যখন বাসস্টান্ড নামলাম তখন বাইরে আসলেই বেশ শীত পড়েছে । গায়ে গ্যাবাডিনের ব্লেজারেও শীত মানছিল না ! কাঁপতে কাঁপতে রিক্সার ভাড়া দিতে যাবো তখন কোথা থেকে নিশি এসে হাজির ! বলল
-আমি দিচ্ছি !!
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে বললমা
-এতোটা ফকির হয়ে যাইনি এখনও !
আমার কথা শুনে একটু হাসলো ও ! আমি নিশি দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হলাম । অবাক হলাম ওর পরনের পোষাক দেখে ! নিশি সাদা রংয়ের একটা চাদর পরে আছে ! ভিতরে কালো কামিজ ! আর কালো ল্যগিংস !
এই শীতে কেবল ল্যাগিংস পরে বের হয়েছে মেয়েটা ?
মাথা খারাপ নাকি ? আমার জিন্স প্যান্টেও শীত মানছে না !
আর এই মেয়েটা ???
আর মাথায় কোন টুপিও পরে নি ! ঠান্ড বাতাসে যেন একটু কাঁপছে ! সারাটা পথ নিশ্চই এমন কাঁপতে কাঁপতে এসেছে !!
আমি বলল
-তোমার শীত লাগছে না ? শুধু ল্যগিংস পরেছ কেন?
নিশি আবারও চুপ করে রইলো !
আমি আবার বললাম
-দেখ কথা বল ! চুপ করে থাকবা না !
নিশি নিচু স্বরে বলল
-তুমি পছন্দ কর যে !
-আমি পছন্দ করি বলেই এতো ঠান্ডার ভিতরে পাতলা ল্যাগিংস পরে বের হতে হবে ! আমি যদি বলি মিনিস্কার্ট আমার খুব পছন্দ তুমি তাই তাই পরে রাস্তায় বের হবে ?
কোন উত্তর নাই ?
এই ফাজিলটা কথা বলে না কেন ?
আমি রাগ করতে গিয়েও পারি না ! এমন মেয়ের উপর কেমনে রাগ করবো !!
একটু নমনীয় কন্ঠে বললাম
-এই রকম পাগলামী আর করবা না । মনে থাকবে ?
নিশি এবার আমার মুখের দিকে তাকালো ! ওর মুখটা কেমন হাসি হাসি মনে হল ! যেন খুব মজা পাচ্ছে ! আমার কথায় উত্তরে নিশি একটু মাথা নাড়িয়ে বলল
-না ! মনে থাকবে না !
আমি বললাম
-তোমার খুব মজা লাগছে ! তাই না? আমি তোমাকে বকছি গায়ে লাগছে না ?
-তোমার বকা শুনতে খুব ভাল লাগে যে ! তুমি যখন আমাকে বকা দেও তোমার কান আর নাকটা কেমন লাল হয়ে যায় ! দেখতে খুব সুইট লাগে !
নিশি মুখ টিপে হাসতে লাগলো ! আমি তাকিয়ে রইলো ওর দিকে ! রাগ আনার চেষ্টা করলাম ! কিন্তু কেন জানি ঠিক রাগ উঠছে না ।
নিশি আবার বলল
-শুনো খামোখা চেষ্টা কর না ! তুমি এখন আমার উপর রাগ করতে পারবে না !
-বুঝলাম ! এখন কি করবা বল !
নিশি বাচ্চা মেয়েদের মত খুশি হয়ে বলল
-চল বাসে উঠি ! সেদিন মতিঝিলের দিকে গেছিলাম আজ চল গুলাশানের দিকে যাই !
-এই শীতের ভিতর ?
-চল না ! প্লিজ ! একদম শেষ মাথা পর্যন্ত যাবো আবার আসবো !
নিশির এই একটা অভ্যাস খুব আছে ! মানুষ তো ডেটিং করতে কত যায়গায় যায় ! কত রেস্টুরেন্টে যায় নিশির এসবের কোন কিছুই পছন্দ না ! ও প্রায়ই কোন বাস উঠে পরবে আমাকে নিয়ে ! পিছনের দিকে একটা ডাবল সিটে বসে এবার গল্প করতে করতে যাবে !
একবার ইডেনের সামনে থেকে নিশি আমাকে নিয়ে মিরপুর ১৪ নম্বরের একটা বাসে উঠল ! পিছনের দিকে বসে আমরা প্রায় তিন ঘন্টা পর ১৪ নম্বরে পৌছালাম । আমার মনে হয়েছিল যে ওর নিশ্চই কোন কাজ আছে এই জন্য আমাকে নিয়ে যাচ্ছে ! মিরপুরে গিয়ে আমরা যখন নামলাম তখন নিশি বলল
-চল যাই !
আমি অবাক হয়ে বললাম
-চল যাই মানে? তুমি কিসের জন্য এখানে এসেছ !
নিশি খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-এই তোমার সাথে আসলাম । গল্প করতে করতে আসলাম ! কি চমৎকার সময় কাটলো !
-এই তিন ঘন্টা জ্যামে আটকে থেকে আমি হাজির হলাম । কোন করন ছাড়াই !
নিশি বলল
-কেন এই যে আমরা একসাথে আসলাম না ?
আমি খুব হবাক হয়ে রইলাম !!
তারপর থেকে প্রায়ই এরকম প্রেম ভ্রমন করতে হত !
প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও পরে মনে হল নিশির সাথে জার্নিটা নেহত মন্দ হয় না ! সময়টা ভালই কাটে !

আমি টিকিট কাটতে যাবো নিশি বলল
-আমি টিকিট কেটেছি ! আসো এই বাস !
নিশি আমাকে বাস দেখালো !আমি বললাম
-আমি চিনি গুলশানের বাস চিনি ! চল !
নিশিকে নিয়ে বাসের শেষের দিকের একটা ডাবল সিটে বসলাম ! নিশি বসল জানলার পাশে ! কেমন জড়সর হয়ে !
ওর শীত লাগছে !
আমার মাথার কানটুপিটা ওকে পরিয়ে দিলাম ! বললাম
-এমন বোকামী আর করবা না ? মনে থাকবে ?
-আচ্ছা থাকবে থাকবে ! এখন বসতো আমার পাশে !
আমি বসলাম !
একটু পরেই বাস চলতে শুরু করলো ! শুরু হল আমাদের বাস ডেটিং !





আমি সব সময় কল্পনা করি আমার এমন একজন ভালবাসায় মানুষ থাকবে যে আমাকে সবমসয় আমাকে তার ভালবাসায় ঘিরে রাখবে ! বাসে চলার সময় আমি প্রায়ই এমন জুটি দেখতে পাই ! বাসের শেষের দিকে বসে তারা আপন ভুবনে হারিয়ে আছে ! কেন জানি আমার বড় মন খারাপ হয় ! মনে হয় ইস ! এমন যদি আমার হত !!
যদি এমন আমি বাস জার্নি করতে পারতাম !!
কিন্তু হায় !!


৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×