somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েটি সুইসাইড করতে যাচ্ছে !!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-পাঁচ টাকা খুচরো আছে !! পাঁচ টাকা !
আমি সিগনালের লাল বাতিটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম । সবুজ হওয়ার অপেক্ষায় ! আমার গাড়িটা সিগনালের একদম শুরুতেই দাড়িয়ে তাই চোখটা বারবার ওইটার চোখ রাখতে হচ্ছে । তাই প্রথমে আনুশেখার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না !
আনুশেখার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি বললেন ?
আনুশেখা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-পাঁচ টাকার খুচরো আছে ? আমার কাছে সব ১০০ টাকার নোট !
একটু লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিল !
আমি জিজ্ঞাসু চোখে বললাম
-পাঁচ টাকা ?
-গোলাপ কিনবো !
তারপর গাড়ির জানালার পাশে দাড়িয়ে থাকা একটা পিচ্চি মেয়েকে দেখালো !
আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম । ১০/১২ বছর হবে ! চুলগুলো কেমন লালচে টাইপের ! মেয়েটার হাতে একগোছা লাল গোলাপ ফুল !
আনুশেখা আবার বলল
-দেখেন না কি টাটকা ফুল গুলো ! আর দামও খুব কম ! ঢাকায় হলে তো একেকটার দামই হত ৩০/৪০ টাকা ! এলখানে মাত্র পাঁচ টাকা !
আমি একটু অবাক না হয়ে পারলাম না ! ভাবতেই অবাক লাগছে এই মেয়েটা একটু আগে মরার জন্য ব্রীজ থেকে লাফ দিতে যাচ্ছিল ! অবশ্য এখন সে লাফ দিতেই যাচ্ছে আমার সাথে !
আমি পিচ্ছি মেয়েটাকে হাতের ইশারায় আমার দিকে আসতে বললাম ! মেয়েটি মুখটা একটু যেন মলিন হয়ে গেল ।
হয়তো ভেবেছে আমি হয়তো ধমক দেবো অথবা ফুল কিনবো না !
পিচ্চি মেয়েটি জানালার পাশে এসে চুপচাপ দাড়াল ! আমি বললাম
-কত দাম !
-৫ ট্যাকা কইরা !
-একটা না । সব গুলোর দাম কত !
এবার ছোট মেয়েটি একটু যেন অবাক হল ! এই সময়েই সব গুলো ফুল একসাথে বিক্রি হয়ে যাওয়া একটু ভাগ্যের ব্যাপার ! হঠাৎ এরকম ভাগ্য সুপ্রশন্ন হয়ে যাওয়াতে মেয়েটার মুখে এক চিলতে হাসি দেখা দিল !
মেয়েটি বলল
-বিশাটার মত হইবো ! আপনে ৮০ ট্যাকা দেন !
একশটাকার একটা নোট বের করে দিলাম ! মেয়েটি আমাকে ফুল গুলো দিয়ে চলে গেল !
আমি ফুল গুলো নিয়ে আনুশেখা কে দিতে যাবো তখন আনুশেখা বলল
-এতো গুলো কেনার দরকার ছিল না !
-সমস্যা নাই ! নিন ! আসলেই ফুল গুলো খুব সুন্দর ! খানিকটা আপনার মতই !
শেষের কথাটা আমি একটু আসতেই বলেছিলাম । ভেবেছিলাম আনুশেখা হয়তো শুনবে না ! কিন্তু কথাটা আনুশেখার কানে ঠিকই গেল ! আমার দিকে খানিক্ষন তাকিয়ে রইলো ! কিন্তু কিছু বলল না !
ফুল গুলো নিয়ে নাকের কাছে নিয়ে গেল । পরম আনন্দে ঘ্রাণ নিচ্ছে ! আসলেই তাজা ফুলের সুবাশের কোন তুলনা হয় না !
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু সিগনাল সবুজ হয়ে গেছে ! আমি গাড়ি ছেড়ে দিলাম !

আমি আনুশেখা কে আজ সকালের আগে ঠিক চিনতামও না আর এখন মেয়েটা আমার সাথে নীলগীরিতে যাচ্ছে ! ভাবতে একটু অবাকই লাগছে ! তার থেকেও অবাক হওয়ার বিষর মেয়েটা আমার সাথে যাচ্ছে পাহার থেকে লাফ মারার জন্য ! লাফ মেরে সুইসাইড করবে !
অবশ্য বুদ্ধিটা আমারই দেওয়া ! আমার সামনে অবশ্য আর কোন উপায় ছিল না ! তা না হলে মেয়েটা কাঁচপুর ব্রীজ থেকেই লাফ মেরে দিত !

সকাল বেলা বের হয়েছিলাম ! কোন কারন ছিল না এমনিই বলা যায় ! মানুষ মর্নির ওয়াক করে আমি মর্নিং কার জার্নি করি ! আসলে সকাল বেলাতে মুক্ত রাস্তা গাড়ি চালানোর মজাটাই আলাদা ! তবে আমি বের হই একটু সকাল সকালই ! গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকার রাস্তায়গাড়ী চললেও সকালে দিকে গাড়ী চলে না বললেই চলে ! এই সময়ে আবার ট্রাফিক পুলিশও থাকে না । তাই ইচ্ছা মত গাড়ীর স্পীডও তোলা যায় ইচ্ছা মত !
আজ সকালে কাঁচ পুর ব্রীজের দিকে আসতেই একটা অদ্ভুদ দৃশ্য দেখলাম ! দেখলাম ব্রীজের রেলিং ধরে একটা মেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করছে ! একটু দুরেই একটা লাল করোলা দাড়িয়ে ! মেয়েটার গাড়ি মনে হল ! প্রথমে মনে হল মেয়েটা ব্রীজের উপর ওঠার চেষ্টা করছে কেন !!কিন্তু কিছুক্ষন পরেই বুঝলাম আসলে মেয়েটা নিচে লাফ মারার প্লান করছে !
তার মানে সুইসাইড !!
আমি আস্তে করে আমর গাড়ীর স্পীড কমিয়ে আনলাম ! গাড়ীটা দাড় করালাম মেয়েটির গাড়ির ঠিক পিছনেই ! দরজা খুলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিচে নামলাম !
একটু সাবধানে সব কিছু হ্যানডেল করতে হবে ! তা না মেয়েটা সত্যি সত্যি লাফ মেরে দিতে পারে ।
একটু দম নিয়ে বলল
-সাতার জানেন ?
এতো সকালে পুরো ব্রীজটা একদমও ফাকা ! মেয়েটি মনে হল একটু চমকে উঠল । আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! আমাকে এখানে কিছুতেই আশা করে নি এখানে !
আমি আবার বললাম
-সাতার জানেন ?
-কেন ?
-না মানে আপনি নিচে লাফ মারার প্লান করছেন তো যদি সাতার জানেন তাহলে খুব বেশি লাভ হবে বলে মনে হয় না ! কারন সাতার জানা মানুষের জন্য ডুবে মরাটা একটু কষ্ট কর ! অবশ্য সাতার না জানা থাকে ভিন্ন কথা ! জানেন সাতার ?
মেয়েটা কিছুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থেকে বলল
-জানি !
-তাহলে তো হল না ! অবশ্য না জানলেও আপনি মরতে পারতেন না !
-কেন ? কেন পারতাম না ? আপনি বাধা দিতেন ?
-নাহ ! আমি বাধা দেব কেন ? আমি বলছি রেলিং টা যত উচু আমার মনে হয় না আপনি রেলিংয়ের উপর উঠতে পারবেন ? তাই না ?
মেয়েটা কথার কোন জবাব দিল না ! তবে কথাটা আসলেই সত্যি ! এই মেয়ের পক্ষে কিছুতেই ব্রীজের রেলিং টপকে কিছুতেই নদীতেই ঝাপিয়ে পড়া সম্ভাব না !
অবশ্য মেয়েটার মাথায় একটু বুদ্ধি থাকলে পারতো ! যদি মেয়েটা গাড়িটা একদম রেলিং ঘেসে পার্ক করতে পারে তাহলে কিন্তু মেয়েটা গাড়ির ছাদে উঠে রেলিং টপকাতে পারে । তবে আমার মনে হয় না এখন মেয়েটার মাথায় এই বুদ্ধি আসবে ! মেয়েটা নিশ্চই মানশিক চাপের মধ্যে আছে !
আমি বললাম
-আপনি চাইলে আমি আমাকে সাহায্য করতে পারি !!
মেয়েটি এবার আমার দিকে সরু চোখে তাকাল ! ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না আমি কি বলছি ।
মেয়েটি বলল
-কিভাবে ?
-না ধরুন আমি আপনাকে রেলিংয়ে উঠতে সাহায্য করলাম ! আপনি তার উপর লাফ মারলেন !
মেয়েটি এবার কোন কথা বলল না ! আামর কথা ঠিক বিশ্বাস করছে না । না করাই স্বাভাবিক !
আমি আবার বললাম
-কিন্তু তাতে একটা সমস্যা আছে !
-কি সমস্যা ?
-তখন সেইটা আর আত্মহত্যা হবে না ! হত্যা হয়ে যাবে ! আর আমি হব .....আপনার হত্যা কারী !
মেয়েটা এবার চুপ করে বসে পরলো রেলিংয়ের পাশে ! একটু পরে মেয়েটার চোখ পানি বের হয়ে এল ! মেয়েটা বিরবির করে বলল
-এতো অসহায় আমি ! নিজের ইচ্ছা মত মরতেও পারছি না !
আমার কাছে মেয়েটার কন্ঠে কেমন যেন একটা হতাশা শুনতে পেলাম ! মেয়েটা কন্ঠে বলে দিচ্ছে সে এই পৃথিবীর উপর কত খানি হতাশ ! কিছুতেই এখানে থাকবে না ! যতক্ষন না সফল হবে ততক্ষন সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে !
আমি মেয়েটার কাছে গিয়ে বললাম
-আপনি চাইলে আমি সত্যি সত্যি আপনাকে সাহায্য করতে পারি !
মেয়েটি মুখ তুলে তাকিয়ে বলল
-কি ভাবে ?
-দেখুন আমি নীলগীরি যাচ্ছি ! বেড়াতে ! আপনি আমার সাথে চলেন ! ওখানে পাহাড়ের উপর থেকে নিশ্চিন্তে লাফ দিতে পারবেন ! আর ওখান থেকে লাফ দিলে মরবেন এটা আমি একেবারে ১০০ ভাগ নিশ্চিন্ত !! তার উপর চাইলে আমি আপনাকে ধাক্কা দিতে পারি যদি চান ! পাহারের উপরতো কেউ দেখবেও না ! কি বলেন !
আমি জানি মেয়েটা মাথা এখন ঠিক মত কাজ করছে না ! যে কোন যুক্তির সঠিক বিশ্লেষন মেয়েটা এখন করতে পারবে না !
আমি আবার বললাম
-দেখুন ভেবে !
আমি আর কিছু বললাম না । আস্তে আস্তে গাড়ির ভিতর গিয়ে বসলাম ! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটা আসবে আমার সাথে !

বান্দরবনের ভিটর ঢুকে পড়েছহি বেশ কিছুক্ষন হল ! আমি একমনেই গাড়ি চালাচ্ছি ! মনে মনে ভাবছি কি এমন করা যায় !! মেয়েটার মানষিক অবস্থা এখন বেশ খানিকটা স্টেবল মনে হচ্ছে !
এখন কি কিছু জিজ্ঞেস করবো ?
এখন জিজ্ঞেস অবশ্য করা যায় ! আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আনুশেখা আমাকে বলল
-একটা জিজ্ঞেস করবো আপনাকে ?
-করুন !
-আপনি বান্দরবন যাচ্ছিলেন না ! তাই না ?
-কেন ?হঠাৎ কেন মনে হল এই কথা ?
-আপনার পোশাক দেখে !! যদি বান্দরবন যেতেন তাহলে আপনার পোশাক এমন হত না !
আমি আমার নিজের পোশাকের দিকে তাকালাম । বললাম
-কই সমস্যা কি ?
-কোন সমস্যা নাই ! কিন্তু মনে হচ্ছে না বাইরে যাবার পোশাক এটা ! এমনি হয়তো আপনি গাড়ি সকাল বেলা হাওয়া খেতে বেড়িয়েছিলেন ! আমাকে সুইসাইড করতে দেখলেন মনে হল একটা সমাজ সেবা করি ! তাই !
-আপনার কাছে কি তাই মনে হচ্ছে ?
-ব্যাপারটা কি তাই না ?
-তাহলে আপনি আমার সাথে কেন এলেন ?
মেয়েটা কিছুক্ষন কি যেন ভাবলো ! তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আসলে আমি ঠিক জানি না । আমি এতোক্ষন এই প্রশ্নটার উত্তর খোজার চেষ্টা করছিলাম । আমি আসলেই কেন এলাম ! কিন্তু পাই নি ।
একটু খানি চুপ করে থেকে আনুশেখা আবার বলল
-তবে আপনি আমাকে খানিকটা অবাক করে দিয়েছেন । অন্য কেউ হলে আমাকে হয়তো আটকানোর চেষ্টা করত । হয়তো তাতে হিতে বিপরীত হতে পারত । কিন্তু আপনি সেইটা করেন নি ।
আমি বললাম
-আর ঘন্টা দুয়েকের ভিতর আমরা নীল গীরির কাছে পৌছে যাবো হয়তো । আপনার কাছে কিছু জানার ছিল । বলবেন ?
-মরার কারনটা জানতে চাইছেন তো ?
-অনেকটা ! তবে প্লিজ এইটা বলবেন না যে আপনি আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ করেছেন অথবা সে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে এই জন্য আপনি সুইসাইড করতে যাচ্ছি ।
আনুশেখা আমার দিকে কিছুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থাকল । আমার কেন জানি মনে হল ঠিক এই কারনটার জন্যই আনুশেখা সুইসাইড করতে যাচ্ছে । আনুশেখা বলল
-আপনার ধারনা সত্যি ।
-শীট ম্যান !
মুখদিয়ে কথাটা বেরই হয়ে গেল ।
-আচ্ছা আপনাদের মেয়েদের মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু নাই নাকি ? আমি হলে কি করতাম জানেন ? আমি হলে সেই ছেলেকে ঐ ব্রীজিতের উপর থেকে ধাক্কা মেরে ফেলেদিতাম !
আনুশেখা আমার দিকে আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো চুপ করে ! তারপর বলতে শুরু করলো
-আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই আমি একা ! আমার মা ছিল না ।
-মা ছিল না মানে ? মারা গেছে ?
-জানি না । তখন আমি কেবল জানতাম আমার মা ছিল না ! আমার বড় ভাইদের মা ছিল কিন্তু আমার ছিল না !
আমি খনিকটা কনফিউজড হয়ে গেলাম ! বড় ভাইদের মা ছিল কিন্তু আমার মা ছিল এই লাইনটার মানে কি ?
আনুশেখা বলল
-আমার বড় ভাইয়েরা তাদের মা আমাকে কোনদিন ভালবাসে নি ! এমন কি প্রয়োজন ছাড়া কোনদিন একটা ডাকও দেই নি ! বাবা একটু ভাল চোখে দেখতেন হয়তো ! কিন্তু সেটা যথেষ্ঠ ছিল না ! আমি যখন এই নির্মম ভালবাসা হীন জীবন থেকে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি ঠিক তখনই নিলয়ের সাথে আমার পরিচয় হয় ! আমার মনে হল আমার জীবনটা একেবারে ভালবাসা শূন্য না ! বাঁচার একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠল সেই ছেলেটা ! কিন্তু ....
-কিন্তু ?
আমি গাড়ি থামিয়েছি অনেক আগেই । সামনের রাস্তাটা বেশ লম্বা । একদম নাক বরাবর । বেশ কিছুটা গিয়ে তারপর বাক নিয়েছে ! আমি আনুশেখার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা কাঁদছে ! আমি মেয়েটা কে কাঁদতে দিলাম ! কাঁদলে মন খানিকটা হালকা হয় ! আনুশেখা ভেজা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা একটা মানুষের জন্মের উপর কি কোন হাত আছে ? আমার জন্মের উপর কি আমার কি কোন হাত আছে ?
-না । তা তো কারই নেই ।
-তাহলে কেন ও চলে গেল আমাকে ছেড়ে ? আমাকে আবার এই নির্মম ভালবাসা হীন জীবনে একা রেখে ?
আমি মেয়েটার কথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ! আনুশেখা আবার বলল
-আমার বাবা খুব ভাল চরিত্রে মানুষ না ! তার খারাপ চরিত্রের কারনেই আমার জন্ম হয়েছে !
আমি চুপ করে গেলাম আনুশেখার কথা শুনে !
আনুশেখা আবার বলল
-সোজা বাংলায় বলতে গেলে আমি আমার বাবার অবৈধ সন্তান ! জানেন আমার খুব বিশ্বাস ছিল যে নিলয় আমাকে ভালবাসে কিন্তু যখন সে আমার আসল সত্যটা জানলো কি নিষ্ঠুর ভাবেই না আমাকে ছেড়ে চলে গেল ! আমার সব কিছু যেন এক নিমিশেই শেষ হয়ে গেল ! সব কিছু !!
-সরি !
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না ! আনুশেখা চুপ করে রইলো ! নিরবে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো !
কিছুটা সময় পার হলে আনুশেখা বলল
-চলুন । এখানে আর কতক্ষন দাড়িয়ে থাকবেন ?
আমি একয় ভেবে বললাম
-চলুন একটা কাজ করি !
- কি?
-সামনের রাস্তাটা দেখছেন না ? বেশ খানিকটা দুরে একটা বাক আছে ! একটা কাজ করি !
-কি ?
-আমি এই রিস্কটা প্রায়ই নিই ! বলতে পারেন মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে যাও !
-কিভাবে?
-আমি এখন ফুল স্পীডে আমার গাড়িটা মোটামুতি ১৮০ পর্যন্ত উঠবে ! যদি ঐ বাকের কাছে পৌছানোর আগেই কোন গাড়ি বের হয়ে আসে তাহলে দুর্ঘটনা ঘটনা সম্ভাবনা ১০০% । আর যদি আমাদের কপাল ভাল হয় তাহলে তো বেচে গেলাম !
আনুশেখা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল অবাক হয়ে !
-এটা তো পাগলামো ! সুইসাইড !
-আপনি তো তাই করতে যাচ্ছেন ! এখন মরবেন অথবা কিছুক্ষন পরে মরবেন ! একইতো ব্যাপার ।
-কিন্তু আপনি ?
-আমি এই কাজটা আগেও করেছি । বলতে পারেন এটা আমার একটা হবি ! কিন্তু আজ পর্যন্ত খুব বড় কিছু হয় নি ! একবার কেবল গাড়িটা উল্টে গেছিল ! সিটবেল্ট বাঁধা ছিল । খুব বেশি কিছু হয় নি !
আনুশেখা কি যেন ভাবলো ! তারপর বলল
-চলুন !
আমি এক্সেলেরেটরে চাপ দিলাম ! গাড়ি এগিয়ে চলল সামনের দিকে ! আমি নিজের বুকের ভিতর কেমন একটা উত্তেজন বোধ করলাম ! লক্ষ্য করলাম বুকটার ভিতরে কেমন একটা কাপন অনুভব করছি ! গাড়ি এডিয়ে চলেছে বাকে দিকে ! স্পীড যখন ১৫০ এর কাছাকাছি আমি আনুশেখার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম ।
মেয়েটা একভাবেই সামনের দিকে তাকিয়ে আছে ! একটু একটু কাঁপছে যেন !
বাকটা আর খুব বেশি হলে ৫০০ গজ দুরে ! আমি আর একবার মিটার স্কেলের দিকে তাকালাম ! ১৭০ ছুই ছুই করছে !
ঠিক তখনই বাকটার থেকে একটা ট্রাক বের হয়ে আসতে দেখলাম !
ট্রাকের ড্রাভারের সাথে আমার চোখাচোখি হল ! লোকটা যেন অবাক হয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়া দেখছে ! আসলে এই বাকের কাছে কেউ এতো জোরে গাড়ি চালাতে পারে এটা হয়তো ভাবতেই পারে নি লোকটা !
পাগলের মত হর্ন বাজালো কয়েকবার !
আমার একটু হাসলাম ! চাপ আর একটু বাড়লো এক্সলেরেটরে !
শেষ বারের মত কি আনুশেখার দিকে তাকাবো একবার ?
ভেবেছিলাম আনুশেখা হয়তো চোখ বন্ধ করে থাকবে !
যে কারো পক্ষ্য সামনে আশা মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে থাকা সম্ভব না !
কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখলাম আনুশেখা একভাবেই তাকিয়ে আছে সামনের ট্রাকটার দিকে !

ট্রাকের ড্রাইভার আরও একবার জোরে হর্ন বাজালো !! কেন জানি বড্ড কানে লাগলো সেই আওয়াজটা !!
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×