somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোদসী আর স্টুপিড তানভীরের গল্প !

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোদসী আবার ঘড়িটার দিকে তাকালো !
১০.১৭ !
এখনও এক ঘন্টাও হয় নি রোদসী তানভীরের সাথে ঝগড়া করেছে, আর এখন থেকেই রোদসীর মনের ভিতর কেমন একটা অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে !
বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে ! আর মনে মনে বলছে গাধাটা এখনও ফোন করছে না কেন ? স্টুপিড কোথাকার ! ফোন করতে মানা করেছি বলে ফোন করবে না ? সব কথা কি শুনতে আছে ?
রোদসী নিজেই মোবাইল ফোনটা হাতে নেয় ! এই স্ক্রীন ওয়াল পেপারে তানভীরের ছবিটা রয়েছে । কিছুক্ষন এক ভাবেই তাকিয়ে থাকে তানভীরের ছবিটার দিকে । রোদসী জানে তানভীরের মোবাইল ওয়াল পেপারেও রোদসীর ছবি সেট করা আছে ।
প্রথম যে দিন রোদসী নিজের ছবি তানভীরের মোবাইল স্ক্রীনে দেখে সে দিন খুব রাগ করেছিল । বলেছিল
-তুমি আমার ছবি মোবাইলে কেন লাগিয়েছ ? মানুষজন দেখলে কি বলবে ?
তানভীর খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-কি বলবে মানে ? আমার বউয়ের ছবি আমি আমার মোবাইলে লাগিয়েছ এখানে কার কি বলা আছে ?
তানভীর যে ভাবে জোর দিয়ে বলল আমার বউয়ের ছবি রোদসী আর কিছু বলতে পারলো না । তানভীর বলল
-দেখ, মোবাইল এখন একটা জরুরী জিনিস । প্রত্যেকটা কাজে এর দরকার । আমি চাই যখনই আমি কোন কাজ করতে যাই তখনই যেন তোমার ছবিটা আমার চোখের সামনে ভেষে উঠুক !
রোদসী আবা রকেবল চুপ করে শুনে যায় তানভীরের কথা ! কি এক অদ্ভুদ ভাল লাগা ছুয়ে যায় ওর সারা মন জুড়ে ! তানভীর আবার বলল
-জানো প্রতিদিন সকাল বেলা চোখ মেলেই আগে মোবাইলের দিকে চোখ যায় । তোমার ছবি দিয়ে দিনটা শুরু হয় ! যখন আমাদের বিয়ে হয়ে তখনতো এমনিতেই প্রতিদিন সকালে তোমার মুখ দেখে ঘুম ভাঙ্গবে এখন থেকেই সেই অনুভুতি নেওয়ার চেষ্টা করছি ।
রোদসী কেবল অনুভব করে যে তার চোখে পানি চলে আসছে ! অন্যদিকে মুখ সরিয়ে নেয় । তানভীর কে এই চোখে রপানি দেখানো যাবে না । ও খুব রাগ করবে ।
রোদসী তাড়াহুড়া করে বলে
-আমি এখন যাই ! মা ডাকছে মনে হয় !
রোদসী আর তানভীরদের বাড়ি প্রায় কাছাকাছি । তাই চটকরে আসা যাওয়া যায় !

আজ রাতের ঝগড়াও বেধেছে এই চট করে আসা যাওয়া নিয়েই । সন্ধা বেলার দিকে রোদসীর মনটা কিছুটা অস্থির ছিল । কিছুই যেন ভাল লাগছিল না ! তানভীর কে কেবল দেখতে ইচ্ছা করছিল । তানভীর কে ফোন দিল ।
-কি কর ?
তানভীর বলল
-কালকে পরীক্ষা আছে । এখন পড়ছি ।
-একটু আসো না ? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ।
-না সোনা এখন আসা যাবে না । বাবা বাসায় আছে । একদম গেটের কাছে বসে আছে । এখন বাসা থেকে কোন ভাবেই বের হওয়া যাবে না । আর বাইরে কি ঠান্ডা দেখেছ !!
-তুমি আসবে না ?
-একটু বোঝার চেষ্টা কর ! দুপুর বেলাতেই তো দেখা হল ।
-আচ্ছা এখন আমার সাথে তুমি সময় হিসাব করে দেখা করবে ? দুপুরে দেখা করেছ বলে আর এখন দেখা করা যাবে না ? ওকে ফাইন ! আমার সাথে দেখা করা যখন তোমার এতো ঝামেলা তখন আজকের পর আর দেখাই করা লাগবে না । খবরদার তুমি আর আমাকে ফোন দিবা না ! মনে থাকে যেন !!
রোদসী ফোন রেখে দেয় ! তারপর মোবাইলটা বন্ধ করে রাখে ।
কিন্তু কিছুক্ষন পরেই রোদসীর রাগ পড়ে যায় । মনে মেন ভাবে তানভীর ঠিকই তো বলছিল । ওর বাবা গেটের সামনে বসে আছে কিভাবে বের হবে এই শীতে রাতে । আর এই বার সিলেটে যা শীত পরেছে । রোদসী মোবাইল অন করে ।
ভেবেছিল তানভীর ফোন করতে না পেরে মেসেজ পাঠাবে । কিন্তু দুতিন মিনিট পরেও যখন কোন মেসেজ আসলো তখন রোদসীর মনটা খানিকটা খারাপ হল ।
তারপর সময় যখন যেতে থাকলো রোদসীর মন তত খারাপ হতে লাগলো । বারবার মনে হতে লাগলো গাধাটা ফোন করছে না কেন ?
ফোন করতে মানা করেছি বলে ফোন করতে হবে না নাকি ?
গাধা !! উল্লুক !!
স্টুপিড !!

তানভীরের ফোন আসলো আরো বিশ মিনিট পরে । এতোক্ষন তানভিরের ফোনের জন্য রোদসী অপেক্ষা করছিল । আর যখনই ফোনটা এসে হাজির হল তখনই আবার এক বুক অভিমান এসে জড় হল !
বারবার মনে হল এতোক্ষন পরে কেন ফোন দিল ?
আরো আগে কেন দিল না । ফোন রিসিভ করবো না !!!
করবে করবে করেই শেষ মুহুর্তে ফোনটা রিসিভ করেই ফেলল।
রিসিভ করেই বলল
-এতোক্ষন ফোন দেও ন কেন ?
-আরে আজিব তো ! তুমিই তো নিজেই বললে ফোন না দিতে ! আর এখন বলছো কেন ফোন দাও নি ! তোমাদের মেয়েদের সাইকোলজি বড় জটিল ।
-কেন ফোন ফোন দাও নি আগে বল !
-আরে বাবা ! ফোনে টাকা ছিল না একদম । তুমি যখন ফোন রেখে দিলে তোমাকে ফোন দিতে গিয়ে দেখি একদম টাকা নাই । আবার মোড়ের মাথায় গেলাম । রিচার্ড করে তার পর আসলাম ।
-মোড়ের মাথায় ? এতো রাতে ?
-কি করবো ? আমার পাগলী টা আমার উপর রাগ করে আছে । রাগ ভাঙ্গাতে হবে না ?
-তাই বলে এই শীতের ভিতর এতো দুরে যাবে ?
রোদসীর খুব অপরাধী মনে হয় নিজেকে । ব্যাচারা এই শীতে ভিতরে এতো দুরে গেল কেবল ওর একটা ছেলে মনুষীর জন্য ! নিজেকে খুব খারাপ মনে হল রোদসীর । রোদসী বলল
-আমি তোমাকে খুব জ্বালাতন করি ! তাই না ?
তারপর আপনা আপনি খানিকটা ফোঁপানী চলে এল ।
তানভীর বলল
-আরে আরে ! এই পাগলী কোথাকার !! তুমি আমাকে জ্বালাবে না তো কে জ্বালাবে ! বল আর কেউ আছে আমার । এখন কান্না বন্ধ কর ! তা না হলে কিন্তু আমি বাসায় চলে যাবো !
রোদসী অবাক হয় ! বাসায় চলে যাবো মানে ঠিক বুঝতে পারে না । বলল
-বাসায় যাবো মানে ? তুমি এখন কোথায় ?
-আরে তুমি না বললে আমার সাথে দেখা করতে মন চাইছে । এইতো আমি তোমাদের বাড়ীর পিছন পাশে ! জানলা টা একটু খোল ! বাইরে যা ঠান্ডা না !! আবার কালকে পরীক্ষাও আছে ।
হঠাৎ করেই রোদসীর সব কিছু যেন এলো মেলো হয়ে গেল । ওর কেবল একটা কথাই মনে হল তানভীর ওর জন্য এই শীতের ভিতর বাইরে দাড়িয়ে আছে । জানলা খুললে হবে হবে না । যে কোন মূল্যেই ওকে এখন ওর সাথে দেখা করতে হবে ! হবেই !
কেবল একটা চাদর গায়ে দিয়েই রোদসী বের হয়ে গেল । ওর মা পেছন থেকে ডাক দিয়েছিল বলল নীলুদের বাড়ি যাচ্ছে । নীলুদের বাড়ি ঠিক ওদের বাড়ির বাড়ির পাশেই ।

রোদসী জোড়ে পা চালায় ! ঐ তো তানভীরকে দেখা যাচ্ছে । রোদসীর বুকটা কেমন আন্দোলিত হতে থাকে । যেন মনে হচ্ছে কত প্রতীক্ষার পরে ওদের দেখা হতে যাচ্ছে !! একরাশ ভাল লাগা ওর সারা দেহমনটাকে বিমোহিত করে ফেলে !





গল্পের বাকীটুকু আমি আর লিখলাম না । আপনারা নিজেরাই কল্পনাই করে নিন ! গল্পে যে নায়ক তানভীরের কথা বলা হয়েছে সেই তানভীর কিন্তু আমি না ! অন্য এক তানভীর । কারন মরে গেলেও শীতের রাতে আমি লেপের ভিতর থেকে বের হতাম না ! কোন ভাইবেই না !
আমার ফেসবুক পেইজে রোদসীর সাথে আমার প্রায়ই কথা হয় ! রোদসীর মনের মানুষটার নাম তানভীর ! তাদের ভিতর এমন খুনটুসী ভালবাসা লেগেই থাকে ! আমার এই ছোট্ট আপুটার জীবনটা যেন সব সময় সুন্দর হয় !
আপনারা সবাই এই জুটিটার জন্য দোয়া করবেন !!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৮
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×