somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে দিন ক্লাসে সব থেকে গম্ভীর মেয়ে আমাকে প্রোপোজ করেছিল !!!

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম আমার সব সময়ই খুব প্রিয় ! আর শীতের সকালের ঘুম হলে তো কথাই নাই ! দুনিয়ার প্রায় সব থেকেই এইটা আমার প্রিয় !
কিন্তু ঐ যে বললাম প্রায় সব কিছু !!
এমন কিছু আছে যার জন্য ঘুম কে ত্যাগ করতে হয় ! ঠিক সেই রকম একটা কারনের জন্য আমি এখন শীতের ভিতর এই সকাল বেলা মনির স্যারের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি ।
আচ্ছা এর কোন মানে হয় ?
মনির স্যার পড়ান শুরু করে সকাল সাতটার সময় আর আমাকে হাজির হতে হয় ছয়টারও আগে ! ইভার একই কথা সকাল বেলা তার নাকি আমার সাথে কথা না বললে ভালই লাগে না ।
কি আর করবো গার্লফ্রেন্ড বলে কথা ! সে দেখা করতে চেয়েছে না দেখা করলে কি হয় ? আর অবশ্য একটা কারনও আছে পুরো দিনের ভিতর আমাদের খুব একটা দেখাও হয় না । আমি আর ইভা কেবল এই মনির স্যারের কাছেই এক সাথে পড়ি তার মানে এটাই আমাদের এক মাত্র ডেটিং স্পট !
আমি আবার সময় দেখলাম ! ছাড়ে ছয়টা বেজে গেছে । অন্য দিন তো ইভা এতো দেরী করে না ! তাহলে আজ কেন ?
আজ কি তাহলে আসবে না ?
কাল তো কিছুই বলল না ? শরীর খারাপ করলো নাতো আবার ??
একটু যেন চিন্তিত হলাম । এমন উপায় নাই আমি ওদের বাড়ি গিয়ে খোজ নিয়ে আসবো ! যদিও ওদের বাসা মনির স্যারের বাড়ির কাছেই !
কিন্তু মেয়েটা আসছে না কেন ??
আমি টেনশন নিয়ে অপেক্ষা করছি এমন সময় দেখলাম মায়া আসছে ।
যাহ !!
গেল আজকের কথা বলা !!
মায়া আমাদের ক্লাসেই পড়ে । একটু জটিল টাইপের মেয়ে ! ও যদি দেখে আমি আর ইভা এক সাথে দাড়িয়ে কথা বলছি তাহলে আজকের ভিতরেই এই খবর সারা এলাকায় সম্প্রচার হয়ে যাবে !!

আমি গেট থেকে একটু সরে দাড়ালাম । মায়াকে ভিতরে ঢুকতে দিবো ! কিন্তু মায়া ভিতরে না গিয়ে আমার সামনেই দাড়িয়ে পড়লো । খুব দরকার না পড়লে আমি মায়ার সাথে কথা বলি না । মায়াও ঠিক একই । আমাকে খানিকটা এড়িয়েই চলে ! কারন অবশ্য আছে ।
আমাদের ক্লাস টিচার ওসমান গননি স্যার আবার খুব কড়া টাইপের মানুষ । খুবই ডিসিপ্লিন মেনে চলে । তার নির্দেশ ছিল কেউ ক্লাস পিরিয়ডে বাইরে থাকবে না ।
একবার কি হয়েছে মায়া সহ আরো কয়েকটা ছেলে মেয়ে বাইরে গিয়েছে । এই দৃশ্য স্যার দেখেছে । পরদিন ক্লাসে এসেই প্রথমেই বললেন
কালকে কারা বাইরে ছিল !
বেশ কয়েকজনা দাড়িয়ে পড়লো । কারন আমাদের স্যার একটু অন্য রকমও ছিল । নিজের দোষ যদি নিজেই স্বীকার করে নিতাম তাহলে স্যার খুব বেশি কিছু বলতেন না । এটা আমরা সবাই জানতাম ।
সবাই দাড়ালেও মায়া দাড়ায় নি ! এইটা আমি আর আমার এক বন্ধু খ্যাল করলাম । আমরা কি করলাম একটা চিরকুট লিখে স্যারের কাছে দিলাম । এমনিতেই স্যারের সাথে আমার সম্পর্ক খুবই ভাল ছিল । স্যার আমাকে খুবই ভালবাসতেন ! এখন আমার এই চিরকুট দেখে স্যার মায়াকে যে পানিশমেন্ট দিলেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । তারপর থেকেই মেয়েদের সবার সাথে আমাদের ছেলেদের একটা ঠান্ডা যুদ্ধ চলতে ছিল । এসব কথা অবশ্য ইভা আমাকে বলেছিল ! আমরা সবাই তাই খুব সাবধান ছিলাম । কিন্তু আজকে আবার কি হল ?
-এই তোর সাথে কিছু কথা ছিল !
আমি মায়ার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম ও আসলে কি বলতে চাইছিল । আমি বললাম
-বল !!
-দেখ আমি যা বলব তুই হাসবি না ! আর সিরিয়াসলী জবাব দিবি !
সিরিয়াসলি ??
আমি একটু চিন্তিত হলাম । সিরিয়াসলি আবার ইভার কথা জানতে চাইবে না তো ? যদি বলে ইভার সাথে কি তোর রিলেশন আছে আমি মুখের উপর না বলটে পারবো না ! আসলে মানুষের চোখের সাথে চোখ রেখে মিথ্যা কথা বলা আমার পক্ষ খানিকটা কষ্ট কর !
আমি বললাম
-বল কি বলবি !!
মায়া আবার বলল
-বল হাসবি না তো ?
-আরে বলবি তো !
মায়া কি যেন ভাবলো !! তারপর বলল
-জেবু কে তোর কেমন লাগে ?
জেবু???? :-/ :-/
আমার মনে হল আমি যেন একটু ভুল শুনলাম !
জেবু !!
জেবু !!
আমি বললাম
-কেমন লাগবে আবার ? ভাল আমরা এক সাথে তো পড়ি !
আমি খানিকটা হাসার চেষ্টা করলাম ।
মায়া বলল
-দেখ হাসবি না ! সত্যি করে বল ! তুই ঠিকই বুঝতে পারছিস যে আমি কি বলতে চাইছি !!
আমি একটু অপ্রস্তুত হই !! আসলে আমি ঠিকই বঝতে পারছি যে মায়া কি বলতে চাচ্ছে ! ও বলতে চাইছে জেবু আমাকে পছন্দ করে !!
জেবু !!
জেবু !!
আমার আসলেই কথাটা ঠিক মত হজম হচ্ছে না । আমাকে যদি কোন নায়িকা এসে বলে যে আমি তোমাকে পছন্দ করি তাহলেও আমি খুব একটা অবাক হতাম না । কিন্তু তাই বলে জেবু !
জেবু হচ্ছে আমাদের ক্লাস টিচারের মেয়ে !!
ক্লাস টিচারের মেয়ে ! একটু নেতা গোছের ভাব আছে । আসলে আমাদের ক্লাসে সবাই জেবুকে একটু সমীহ করে চলে । আমিও এর ব্যতীক্রম নই ! জেবু সব সময় খুব গম্ভীর হয়ে থাকতো !
আমরাও জেবুকে পারতো পক্ষে এড়িয়েই চলতাম ।
ক্লাসে আমি মোটামুটি জনপ্রিয় একজন মানুষ ! ক্লাসে প্রায় ৪৪ জন মেয়ে আছে । তাদের ৪০ জনেরই আমাকে প্রোপজ করলে আমি খুব একটা অবাক হতাম না । কিন্তু তাই বলে জেবু ??

-কি হল বলছিস না ?
-দেখ আমি আসলে................. #:-S #:-S 8-| 8-|
আমার কথা লম্বা হল !! আমি ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না । আমি কি করবো এই ভাবছি ?? কি বলবো এই ভাবছি এমন সময় বন্ধু সবুর এসে হাজির হল ! মায়া আর দাড়ালো না । কেবল যাওয়ার সময় বলে গেল যে জলদি জানিয়ে দেই যেন !
আমি সবুর কে মন থেকেই ধন্যবাদ দিলাম ।
তারপর ওকে সব কথা বলতেই সবুর হাসতে হাসতে কাইত হয়ে গেল । =p~ =p~ =p~ =p~ আসলেই এটা সবার জন্য একটা শকিং নিউজ ছিল ।

মনির স্যার যখন পড়াতে শুরু করলো তখনও আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম জেবুর দৃষ্টি কে ! আমি খুব একটা জেবুর তাকাতাম না । সব সময় ইভার দিকেই চোখ ছিল তো তাই অন্য কাউকে দেখার সময় কোথায় ?
আজ অবাক হয়ে দেখলাম জেবুর দৃষ্টিতে অন্য কিছু ছিল ।

স্কুলে ইভার সাথে একটু কথা বলার সুযোগ পেলাম । দেখি ও হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমাকে বলল
-তো কি জবাব দিবা ?
-মানে ?
আমার মনে হল যে ইভা খুব ভাল করেই জানে সকাল বেলা কি হয়েছে !
আমি বললাম
-তুমি জানতে ?
-হুম !
-আমাকে আগে বলবা না ! শক টা একটু কম খেতাম ।
ইভা বলল
-জেবু প্রথমে আমাকেই বলেছিল যে তোমাকে বলতে !!!
এই কথা বলতে বলতে ইভা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরলো !!
আসলে জেবু তখনও জানে না যে ইভার সাথে আমার একটা রিলেসন রয়েছে । এখন আমার প্রেমিকাকেই দিয়েই যদি আমাকে কেউ প্রোপোজ পাঠায় তাহলে জিনিসটা কেমন হয় !!


এরকম একটা ঘটনা ঘটছিল আমার জীবনে । আসলেই এমন একটা গম্ভীর মেয়ে যা আমি কোন দিন ভাবতেই পারি নাই সেই মেয়ে আমাকে প্রোপোজ করেছিল । যদিও তখন আমার ইভার সাথে রিলেশন ছিল তবুও এটাই ছিল জীবনের পাওয়া প্রথম ভালবাসার প্রোপোজাল !!
আরো অবশ্য আছে ! তবে সেটা অন্য কোন গল্প !!
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×