somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আড়ি পেতে শোনা কথোপকথন !!

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুক্রবার রাতে ঘুমিয়েছিলাম । মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল একটা আওয়াজ শুনে ! চোখ মেলে যে আওয়াজটা কানে এল সেটা হল
-তুই কি বললি আবার ? আর একবার বল কি বললি ?
আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম ! কন্ঠটা একটা মেয়ের ! একটু আগে ভূত এফএম শুনে ঘুমমিয়েছি আর এখন আমার রুমে এই সব কি আওয়াজ শুনি !!
একবার মনে হল লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকি ! অথবা আবার কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনি ! এই সব পেত্নীর আওয়াজ শুনার চেয়ে গান শুনা অনেক ভাল !
ঠিক তখনই আবার শুনলাম
-শোন তোর মত আমি লুইচ্চা না যে পাশে বাড়িতে মেয়ে থাকলেই লুলামী করবো ? আমার পাশের ফ্ল্যাটেরও তো একটা ছেলে থাকে কই আমি তো কোন দিন তার দিকে ফিরেও তাকাই নি ! মাঝে মাঝেই দেখি সে আমার ফ্ল্যাটের দিকে উকি ঝুকি মারে কিন্তু আমি তো কোন দিন ঐ দিকে তাকাই নি ! তাহলে তুই কেন তাকাস ?? তুই আমাকে একদম ভালবাসিস না !!
আমি তারপর কান্নার আওয়াজ পেলাম !!
লেপের ভিতর থেকে বের হয়ে এলাম ।
এবার বুঝতে পারলাম যে আসলে এটা কোন পেত্নীর আওয়াজ না ! এটা আসলে আমার পাশে ফ্ল্যাটের মেয়েটার আওয়াজ । নিশ্চই ওর বয় ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে । রাত হয়েছে বলে সব শোনা যাচ্ছে পরিষ্কার !!
আমি আসতে আসতে বারান্দার দরজার কাছে চলে এলাম । নিজেকে যথা সম্ভব আড়াল করে তাকানোর চেষ্টা করলাম ! মেয়েটার সব টুকু দেখা অবশ্য যাচ্ছে না তবুও বুঝলাম মেয়েটা বারান্দার বসে আছে !
আমি দেওয়ালের সাথে মিশে রইলাম ! আর কান খাড়া করে রইলাম মেয়েটা কি বলে শোনার জন্য !
শুনতে পেলাম মেয়েটা এখনও কেঁদে চলেছে ! তারপর হঠাৎ করে মেয়েটা বলল
-বলেছে তোমাকে ?? তুমি একটা .... তুমি একটা ....
ওপাশে কি কথা বলল আমি ঠিক শহুনতে পেলাম না । তবে কথা আগের কথা আর এখনকার কথা শুনে মনে যে এতো এতক্ষন মেয়েটা তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করছিল ন!! এখন মনে হচ্ছে ছেলেটা মেয়েটাকে পটিয়ে ফেলেছে । আগে তুই করে বলছিল ! এখন দেখলাম তুমিতে নেমে এসেছে ! আমি কান পেতে রইলাম !
হঠাৎ করে আমার আবিদের গাওয়া সেই গানটার কথা মনে পড়লো !
আমি কান পেতে রই
আমি কান পেতে রই
ও আমার ......
যা হোক আমি মেয়েটির কথোপথনে মনোযোগ দিলাম !!
-তুমি একটা ........।
-নিরবতা !!
-তুমি একটা পেঁচা !!
-নিরবতা !!
-পেঁচাইতো !! পেঁচারা যেমন রাত জেগে জেগে চিল্লা ফাল্লা করে তুমিও তো তাই কর ! মেয়েদের সাথে !!
-নিরবতা !!
-কি ? আমি পেঁচী ? দেখ ভাল হবে না বলে দিচ্ছি !!
-নিরবতা !!
-কি ?
-নিরবতা !!
-আর একবার বল ? দেখো আমি কিন্তু খুব কষ্ট পাবো ! তুমি কেবলই আমাকে কষ্ট দেও !!
-নিরবতা !!
-হ্যা ! একবার কষ্ট দিবা আবার সরি বলবা ! এটাই তো পারো ।
-নিরবতা !!
-কি ? না না । এটা হতেই পারে না ! আরে আমি ওখানে ছিলাম তো ।
-নিরবতা !!
-বলেছে তোমাকে ! তুমি দেখলা না কেমন করে তাকায়ে ছিল !! আমার কিন্তু লজ্জা লাগছিল ।
-নিরবতা !!
-তখন ?? মনে হয় একটা খেজুরের কাটা দিয়ে চোখ গেলে দেই !! এতো বড় সাহস তাকায় !
-নিরবতা !!
-হুম ! ঠিক আছে ! কিছু মনে করি নি !!
-নিরবতা !!
-কখন থেকে ?
-নিরবতা !!
-না সম্ভব না ! আমার বাবা বাসায় থাকবে ! আরে বল কি ? পারবো না ! না আমি পারবো না !
-নিরবতা !!
-তুমি আবার ওর নাম নিয়েছে ??
-নিরবতা !!
-কেন করেছে ? আমি কারন টা জানতে চাই ।
-নিরবতা !!
-কি বল তুমি ? সত্যি নাকি ? এই শোন আমার সাথে এমন কিছু করবা না তো ?
-নিরবতা !!
-যাহ ! দুষ্টু ! তুমি আসলেই একটা ফাজিল !! এমন কথা গুলো কেমন করে বল ! লজ্জা লাগে না বুঝি !!
-নিরবতা !!
-আবার ? আমি কিন্তু ফোন রেখে দিবো !
-নিরবতা !!
-চুপ করবা তুমি ?
-নিরবতা !!
-আচ্ছা কাল কিন্তু দেখা হচ্ছে !
-নিরবতা !!
-তো কি হয়েছে ? আমার জানটুস টার কাছ থেকে আমকে কেউ দুরে রাখতে পারে আমাকে বল ?
-নিরবতা !!
-লাল রংয়ের জামা ! আর কলা !
-নিরবতা !!
-মানে?
-নিরবতা !!
- নাহ । আরে বললাম তো এটা কোন ব্যাপার না ! আমি আছি না ! তুমি টেনশন নিচ্ছ কেন ?
-নিরবতা !!
-ঐটা যা জোস ছিল না !! তোমাকে কি বলবো !
-নিরবতা !!
-আহা ! রাগ করছো কেন সোনা !! তুমিতো জানো আমি তোমাকে কত ভালবাসি ! জানো না বল !
-নিরবতা !!
-হুম ! তাই একটা বাস কিনে রেখেছি ! এমন মার মারবো না !
-নিরবতা !!
-নাহ । কি যে বল ! আমার ফ্যামিলি খুবই ফ্রেন্ডলী ! সেদিন কিছু বন্ধুরা এসেছিল !
-নিরবতা !!
-বাবা কি করলো জনো ??
-নিরবতা !!
-শেষে কেরোসিন ঢালত হয়েছে !!
-নিরবতা !!
-অবশ্যই যাবে।
-নিরবতা।
-আর কোন কথা না !!
-নিরবতা !!
-তুমি তো জানো ?
- নিরবতা !!
-আচ্ছা !!
-নিরবতা !!
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে !!
-নিরবতা !
-হুম ! আমি ঠিক করেই রেখেছি !! কেবল ঠিক সময় আসুক ! দেখবা !!
-নিরবতা !!
-সব জামা কাপড় রোদে দিতে হয়েছে !!
-নিরবতা !!

আমি অনেকক্ষন একভাবেই দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনছিলাম ! একটু সরতে গেছি পায়ের সাথে টুলটা লেগে পড়ে গেল ! আর এই রাতের বেলা আওয়াজও হল ! মাশাল্লা !!
তখনই শুনতে পেলাম মেয়েটি বলছে
-এই শুনো ! কেউ মনে হয় আমার কথা শুনছে !!
-নিরবতা !!
-হুম ! ঐ পাশে ফ্ল্যাটের ফাজিলটাই মনে হচ্ছে !!
-নিরবতা !!
-আরে এসব কি বল ? পাশাপাশি থাকি না ? এসব করা যাবে না !
-নিরবতা !!
-আচ্ছা ! মাথা ঠন্ডা কর ! আমি দেখছি !!
-নিরবতা !!
-আচ্ছা রাখছি !! লাভ ইউ !!
-নিরবতা !!
-(হাসির শব্দ)
-নিরবতা !!
-আচ্ছা বাই !!






কয়দিন আগেই ব্লগার রীতিমত লিয়া মার্ক টোয়েনের‘A Telephonic Conversation’ এর বাংলা অনুবাদ করেছিল ! পড়ে বেশ মজা পেয়েছিলাম । কিন্তু গত পরশুদিন এর বাস্তব অভিজ্ঞতা পেলাম । রাতের বেলা টিউশনী থেকে ফিরছিলাম । রাতের বেলা বাস বেশ ফাকাই ছিল ! আমি বাসে উঠলে শেষের দিকেই বসি ! সাইন্সল্যাবের কাছে বাসে একজন লোক উঠল । বসলো আমার ঠিক সামনে । আমার থেকে কিছু বড় হবে ! কিছুক্ষন পরেই মোবাইলে কথা শুরু করলো ! কথা শুনেই মনে হচ্ছিল যে কোন মেয়ের সাথে কথা বলছে । মেয়েটাক কিছু একটা বোঝাচ্ছে ! পাশে থাকার কথা বলছে !! যদিও অন্যের কথা শুনতে নাই তবুও আমি কান খাড়া করেই রইলাম ! আমি সত্যি অবাক হয়ে লক্ষ্য করতে লাগলাম আমি কেবল এক পাশের কথা শুনতে পারছি আর অন্য পাশে কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছি না ! কেমন একটা কৌতুহল হতে লাগলো !! পুরা কথা মালাই শুনলাম !! কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না !!
সেই ঘটনা থেকেই এই গল্পের সূচনা !!
তবে গল্প লিখতে গিয়ে ব্লগার রীতিমত লিয়ার পোষ্ট টি আমি বেশ কয়েকবার পড়েছি !!
লিয়াকে ধন্যবাদ !!
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×