বৃষ্টি সব সময়ের জন্যই খুব পছন্দের । কিন্তু এই অসময়ের বৃষ্টি দেখলে মেজাজটা একটু খারাপই হয় । কেমন একটা স্যাঁতস্যাঁতে ভাব লেগে থাকে ! মেজাজ খারাপ হয় ! সাথে মনও !
তারপর কতক্ষন ধরে এই পরিবাগের এই বটতলায় বসে আছি একটা রিক্সারও দেখা নেই । আমি হাতের কাগজ গুলো আরো একটু বাঁচানোর চেষ্টা করলাম । আর আমার এই চেষ্টা দেখে মনে হল বৃষ্টি দেবতার আর একটু ইচ্ছা হল বৃষ্টির গতিটা বাড়িয়ে দিতে ।
নাহ !
কাগজ গুলো বোধহয় আর বাঁচানো গেল না । শার্টের ভিতর কাগজ গুলো ঢুকাবো কিনা ভাবছি ঠিক এমন সময় একটা মিষ্টি কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম ।
-এক্সকিউজ মি ।
মিষ্টি কন্ঠস্বরের সাথে মিষ্টি একটা সুগন্ধও নাকে এসে লাগলো ।
লেডিস পারফিউম !!
আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি মিষ্টি কন্ঠের অধিকারীনীর চেহারা আসলেই বেশ মিষ্টি । একে বারে খুব যে ফর্সা মেয়েটি তা বলব না । তবে উজ্জল শ্যামল । গাঢ় আর ঘন কালো চোখ, খাড়া নাক, পাতলা গোলাপী ঠোট তবে চুল গুলো খুব লম্বা না ।
নাহ ! এই চেহারার সাথে লম্বা চুল খুব মানাতো !
আমি জিজ্ঞাসু চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম
-জি বলুন !
-আপনার কাগজ গুলো ভিজে যাচ্ছে । আপনি ইচ্ছে করলে আমার ছাতার নিচে এসে দাড়াতে পারেন ।
আমি মেয়েটার কথা শুনে একটু চমকালাম ।
বৃষ্টির বেগ আরো বেড়েছে । আসে পাশে লোক জন কেউ নেই বললেই চলে । আমরা কেবল দুজন এই বট গাছের নিচে দাড়িয়ে আছি । একজনের হাতে ছাতা আর একজন বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে । আর যেহেতু বৃষ্টি বেশ জোরেই পরছে তাই কেবল ছাতার ভরশায় এই বটের তলা থেকে বের হওয়াটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ না । তাই মেয়েটি দাড়িয়েই ছিল । আমাকে ভিজতে দেখে নিশ্চই মনে একটু মায়া হয়েছে তাই এই কথাটা বলেছে ।
আমি বললাম
-না ঠিক আছে ।
মেয়েটি বলল
-কোন সমস্যা নাই । আমার ছাতাটা যথেষ্ট বড় ।
আসলেই ছাতাটা যথেষ্ঠ বড় । মেয়েরা যেমন লেডিস ছাতা নেয় এই ছাতাটা তেমন না । বরং বেশ বড় । এতো বড় ছাতা আজকাল দেখাই যায় না । মেয়েটি আবার বলল
-আপনার কাগজ গুলো ভিজে যাচ্ছে আর আমি এখানে ছাতার নিচে দাড়িয়ে আছি আর আপনি দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভিজছেন এই শীতের ভিতর এটা আমার কাছে খারাপ লাগছে । প্লিজ ছাতার ভিতর আসুন !
নাহ ! এই মেয়েটাকে আসলেই ভাল বলতে হচ্ছে ! আজকাল এমন মানুষ তো পাওয়াই যায় না !
আমি আস্তে করে ছাতির নিচে চলে এলাম । মেয়েটির গা থেকে আসলেই খুব চমত্কার একটা স্মেল আসছে । আমি যদিও পারফিউমের গন্ধ সহ্য করতে পারি না কিন্তু আজ এই পারফিউমের গন্ধটা যেন স্বর্গীও মনে হল । মেয়েটি ঠিক আমার থেকে দুই থেকে তিন আঙ্গুল দুরে দাড়িয়ে আছে ছাতা হাতে নিয়ে ।
আচ্ছা এখন আমার কি করা উচিত্ ?
মেয়েটিকে কিছু বলা উচিৎ ?
অবশ্যই বলা উচিৎ !
গাধা !
মেয়েটি তোকে এই বৃষ্টির মধ্যে আশ্রয় দিয়েছে অন্তত একটা ধন্যবাদ দেওয়া তো উচিৎ !
আমি ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য মুখ খুললাম ঠিক তখনই মেয়েটি বলল
-আপনার এই কাগজ গুলো কি খুব জরুরী ?
-কেন ? কিভাবে বুঝলেন ?
-আসলে আমি যেভাবে কাগজ গুলো বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন তাই মনে হল !
আমি বললাম
-হ্যা । সার্টিফিকেট । বাংলাদেশ অর্থনীতি সমীতির ।
-তাই বুঝি ? আমার আব্বা ওখানকার মেম্বার ছিলেন । এখন অবশ্য আর যান টান না ।
-ও আচ্ছা ।
আমি আবার চুপ করে যাই । চুপ করেই থাকি কিছুক্ষন ।
আরে মেয়েটাকে তো ধন্যবাদই দেওয়া হল না । আমি আবার মেয়েটাকে কিছু বলার আগে মেয়েটিই আমাকে বলল
-আরে আপনিতো ভিজে যাচ্ছেন । আর এমন অস্বস্তি নিয়ে কেন দাড়িয়ে আছেন বলুন ?
-না মানে .. আমি....
মেয়েটি বলল
-আমার জায়গায় যদি আপনি থাকতেন তাহলে কি করতেন ? আমাকে হেল্প করতেন না ?
-হ্যা । তা তো করতাম ই ।
-তাহলে ? আসুন ছাতার ভিতরে আসুন তো !
আমি আর একটু ভিতরে এসে হজির হলাম ! এবার মেয়েটার হাতের কুনয়ের সাথে আামর হাত লেগে গেল ! একটু লজ্জিত হলাম তবুও কিছু না বলে চুপ করে রইলাম !
মেয়েটিকে একটা ধন্যবাদ দিতে হবে ! আমি এবা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম
-থেঙ্কিউ ।
মেয়েটি হাসলো একটু ।
হায় ! কেন জানি বুকের ভিতর একটা কাঁটা বিধে উঠল ! এই হাসির জন্য নির্দ্বিধায় ঐ ওভার ব্রীজ থেকে লাফ মারা যায় !
ওভারব্রীজ ?
ডায়লগটা কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে না ?
হুম পরিচিত তো !
এর অগের কয়েকটা গল্প ব্যবহার করা হয়েছে !
কিন্তু তাই বলে ওভার ব্রীজ ?
কি আর করা একটা অপরিচিত মেয়ের জন্য দশ তলা বিল্ডিং থেকে লাফ মারা কি ঠিক হবে ?
-কি ভাবছেন !
না এমন কিছু ভাবছি না !
মেয়েটি বলল
-বৃষ্টিতো কমে আসছে । তা আপনি কোন দিকে যাবেন ?
এই তো আর এইতো একটা সুযোগ এসেছে !
এসেছে !!
মেয়েটার সাথে আর একটু সময় কাটানো । আমি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললাম
-আপনি কোন দিকে যাবেন ?
-আমি মৌচাকের দিকে যাবো ।
-আরে আমিও তো ঐ দিকে যাবো । আসলে মৌচাক মার্কেটের আগে যে ফ্রেঞ্চ ফুড দোকানটা আছে ঐ খানে একটু কাজ আছে ।
-ও আচ্ছা ।
মেয়েটা একটু চুপ করে কি যেন ভাবল ।
-চলুন একসাথে যাই ।
-হ্যা অবশ্যই ।
আহা আহা ! এই মেয়ে যেন সব মনের কথাই বলে দিচ্ছে !
সব মেয়ে গুলো কেন এমন কেন হয় না ?
-ঐ তো একটা রিক্সা আসছে দেখেন তো যায় নাকি ?
একেই বলে ভাগ্য ! যদিও এখানকার রিক্সাওয়ালা গুলো একটু ত্যাড়া টাইপের হয় । দেখা যাক সব কিছুই যখন আমার পক্ষেই যাচ্ছে তখন এটাও আমার ফেভারে হবে ।
-এই মামা যাবা !
বৃষ্টি একদম থেমে গেছে । মেয়েটি রিক্সায় উঠে বসে আমার জন্য জায়গা ছেড়ে দিল । আমি উঠতে যাবো ঠিক তখনই মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি কিছু ভুলে যাচ্ছেন না তো ?
-আমি ? কই না তো ?
মেয়েটি কয়েক মুহুর্ত আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আপনার ছাতা টা ? নীল রংয়ের ছাতাটা !
আমি এবার একটু থতমত খেলাম । এই মেয়েটা আমার নীল রংয়ের ছাতি দেখল কিভাবে ?
কি সর্বনাশ !
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল
-বট গাছটার পিছনে রেখেছেন ?
আমি কোন কথা না বলে কেবল একটু মাথা ঝাঁকালাম !
মেয়েটি হাসি মুখে বলল
-যান নিয়ে আসেন ! তা না হলে হারিয়ে যেতে পারে !
আর কোন উপায় না দেখে আমি বট গাছের পিছন থেকে ছাতাটা নিয়ে এসে রিক্সার সামনে দাড়ালাম ! আমার মনে হয় মেয়েটার সামনে আর দাড়িয়ে থেকে লাভ নাই ! মেয়েটার কাছে আমার সব কিছু ধরা পরে গেছে ?
কিন্তু মেয়েটা বুঝলো কেমনে ?
তাহলে মেয়েটা আমাকে দেখেছে ?
নাহ ! আর কিছু হল না ! এখান থেকেই কেটে পড়া উচিৎ ! মেয়েটা বলল
-কি হল দাড়িয়ে আছেন কেন ? উঠুন !
-উঠবো ?
-হ্যা !
মেয়েটা আবার হাসলো ! একটু যেন দুষ্টামী মিশ্রিত হাসি ! নাকি প্রশ্রয়ের হাসি !
আমি আর সময় নষ্ট না করে আমি রিক্সায় চড়ে বসলাম !
রিক্সা ছাড়ার কিছুক্ষন চুপ করেই রইলাম ! আসলে কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ! মেয়েটি বলল
-আচ্ছা আপনার মাথায় এই বুদ্ধিটা কেমন করে আসলো বলুন তো ?
-কোন ...... বুদ্ধিটা ?
-এই যে বৃষ্টির ভিতর দাড়িয়ে থাকবেন ! তারপর কোন মেয়ে আপনার এই অবস্থা দেখে আপনাকে ছাতার নিচে ডেকে নিবে ! এমনটা হয় নাকি কোন দিন ?
-তাহলে ? আপনি ...।
-আসলে আমি করেছি কৌতুহল থেকে ! আমি যখন ওভার ব্রীজের ওপাশে নামি তখনই আপনাকে দেখতে পেয়েছি ! আপনার যে নীল রংয়ের ছাতা ! যে কারো চোখে পরবে ! তারপর আমি ওয়ার ব্রীজ দিয়ে উপরে উঠছিলাম আর আপনাকে দেখলাম নিচ দিয়েই চলে যেতে ! কিন্তু সব থেকে অবাক হলাম যখহ দেখলাম আপনি এই পাড়ে এসে ছাতা ছাড়া দাড়িয়ে আছেন । একটু অবাক লাগলো কিন্তু ঘটনা বুঝতে আমার খুব বেশি দেরি হল না !
আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম !
মেয়েটি বলল
-আমার মজাই লাগছিল ! আর আপনার ছেলেমানুষী দেখেও খুব মজা লাগছিল !
আমি বললাম
-সরি !
-না ! সরি বলার কিছু নাই ! আমি নিজেও ব্যাপার টা এনজয় করেছি ! তো আপনার নিশ্চই মৌচাকের ঐ দিকে কোন কাজ নাই তাই না ?
-না ! না ! কাজ আছে ?
-ঐ ফ্রেঞ্চ ফুডে ?
-জি !
-কি কাজ শুনি ?
আমি কাচুমুচু হয়ে বললাম
-ভাবছিলাম আপনাকে ওখান থেকে গরম কফি খাওয়াবো ! এই ঠান্ডায় কফি মজা লাগবে !
মেয়েটা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলল ! আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-আমি অ্যারিসা রহমান ! আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভাল লাগলো !
আমি অ্যারিসার হাত টা ধরে বললাম
..........
গল্প এখানেই শেষ !!
নীল ছাতা এবং মেয়েটির কাছে আমার ধরা খাওয়ার গল্প !
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকারের বিয়াইন

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?
কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।
রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।
রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন
দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।