somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন দুঃখি বয়ফ্রেন্ডে কথা !!

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে ?
এই রকম প্রশ্ন সাধারনত কারো মুখ থেকে শোন যায় না । অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে তো নয়ই । নতুন বন্ধু হলে কিংবা পরিচিত কারো সাথে আড্ডা মারার সময় এমন প্রশ্ন আসতে পারে । কিন্তু একেবারে অপরিচিত কেউ এসে যদি বলে ভাই আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে ব্যপারটা হজম করা একটু কষ্টকর !
আমারও প্রথমে হজম করতে একটু কষ্টই হল ! আমি বসে আসি রমনা পার্কের বা পাশের গেট টার কাছের একটা বেঞ্চে ! টিউশনীতে যাবো তার আগে একটু হাওয়া খাচ্ছি । এমন সময় এই ভদ্রলোক এসে হাজির ! ঠিক ভদ্রলোক না ! ছোকড়া বললেই মনেহয় ভাল ! আমার থেকে দুএক বছর ছোটই হবে মনে হয় ! আমি যেহেতু এখনও ছোকড়া থেকে লোক হতে পারি নি এই ছেলেটাকে লোক বলাটা ঠিক হবে না ।
আমার পাশে বসতে বসতেই ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো ! প্রতি উত্তরে আমি একটু হাসলাম ! একেবারে মুখ গুরিয়ে নেওয়াটা একটু অশোভন দেখায় !
এই সময় ছেলেটা আমাকে এই প্রশ্নটা করলো !
-ভাই আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে ?
আমি একটু অবাক হলাম ছেলেটার প্রশ্নে ! আরে এমন কথা কেউ কাউকে জিজ্ঞেস করে নাকি ?
কিন্তু ছেলেটার চেহারা দেখে মনে হল সে সব কিচু স্বাভাবিক ভাবেই নিছে । তার মানে এই প্রশ্ন সে আরো অনেকের কাছেই করেছে !
আমি একটু অস্বস্থিতে পড়লাম ।
কি জবাব দেব?
বলে দেই যে নাই !
কিন্তু এখানে আবার দুইটা সমস্যা আছে । প্রথমটা হল সেটা মিথ্যা বলা হবে । আমার গার্লফ্রেন্ড আছে ! আর দ্বিতীয় কারনটা হল এখন কার যুগে যদি কেউ শুনে যে গার্লফ্রেন্ড নাই তাও আবার ঢাকার মত জায়গায় থেকে তাহলে তো তাকে গোনার ভিতরেই ধরে না কেউ । এই ছেলেটাও হয়তো শুনে আমাকে সেই দৃষ্টিতে দেখবে !
কি দরকার !
আমি বললাম
-কেন ? কেন জানতে চাইছেন ?
-আপনার একটা উপকার করতাম ?
-হুম ! উপকার ! আছে ?
-জি আছে ?
-আপনার থেকে ছোট নাকি আপনার সমবয়সী ! মানে আপনার ক্লাসে পড়ে নাকি নিচে ?
আমি আবার একটু ইতস্ত করলাম ! এই খানে ক বলবো ? আসলে নিশি মানে আমার গার্লফ্রেন্ড আমার থেকে একটু উপরের ক্লাসে পড়ে । আমরা সমবয়সী হলেও আমি মাঝখানে একটা বছর ড্রপ দিয়েছিলাম । সেই খানেই এই বিপত্তি !
আমি বললাম
-আমার সাথেই পড়ে । কেন ?
-বেচে গেছেন !
-কেন ? এই কথা কেন বলছেন ?
-আরে ভাই বলবেন না । পিচ্চি মেয়ে গুলো এমন জ্বালাতন করে ! মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে চলে যাই যে দিকে চোখ যায় !
-কি রকম !
ছেলেটা আমার কথার কোন জবাব দিল না কিছুক্ষন । কেবল উদাস হয়ে চেয়ে রইলো সামনের দিকে ! আমি কিছু জানে চাইবো কি না বুঝতে পারতাছি না !
কিছক্ষন পরে ছেলেটাই আমাকে বলল
-জানেন ভাই ট্রিপিক্যাল মেয়েদের সাথে রিলেশন রাখাটা বড়ই ঝামেলার কাজ !
-ঝামেলা ?
-না । ঠিক ঝামেলা না । যন্ত্রনার কাজ ! ভালবাসার মানুষ থাকাটা বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার কিন্তু যদি আপনার ভালবাসার মানুষটি যদি ট্রিপিক্যাল হয় তাহলে আর রক্ষা নাই ?
-আপনার টা কি ট্রিপিক্যাল ?
ছেলেটা যেন আমার এই প্রশ্নের জন্যই অপেক্ষা করতেছিল । একেবারে চিৎকার করে উঠল ।
-ট্রিপিক্যাল মানে ? যদি এমন কোন প্রতিযোগিতা হয় যে কার গার্লফ্রেন্ড বেশি ট্রিপিক্যাল তাহলে জাবিন সেই প্রতিযোগিতায় গোল্ড মেডেল পাবে ! গ্যারন্টি !
-জাবিন ?
-আমার গার্লফ্রেন্ডের নাম !
-আচ্ছা !
-আপনার টাও আপনাকে জ্বালাতন করে ?
-নাহ খুব একটা করে না !
ছেলেটার মুখটা একটু যেন হতাশ হল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি তো আসলেই ভাগ্যবান ভাই ! আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে ! তার উপর আপনাকে একটুও জ্বালাতন করে না ! এইটা তো ভাল ।
আমি মনে মনে হাসার চেষ্টা করলাম ! মনে মনে ভাবলাম এই বেচারার থেকে মনে হয় আমার অবস্থা ভাল ! বেচারার অবস্থা একটু জানতে ইচ্ছা করলো ! আমি বললাম
-কথা যখন শুরু হয়েই গেছে আসুন পরিচিত হওয়া যাক ! আমি তানভীর ! আপনি ?
এই বলে আমি ছেলেটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম ।
ছেলেটা আমার হাত ধরে বলল
-আমি জুয়েল !
আমি খানিকটা কৌতুহল নিয়ে বললাম
-জাবিন মানে আপনার গার্লফ্রেন্ড যে ট্রিপিক্যাল এটা কিভাবে বুঝলেন ? মানে আমি বলতে কি কি কাজ করলে গার্লফ্রেন্ডের কে ট্রিপিক্যাল বলা যাবে !
জুয়েল সাহেব একটু যেন চুপ করে রইলো কিছুক্ষন ! তারপর বলল
-ট্রিপিক্যাল মেয়েদের সব থেকে বড় সমস্যা হল তারা কথায় কথায় আপনার সাথে ঝগড়া বাঁধাবে ! বড় সিলি পয়েন্ট ধরবে । তারপর এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি করবে যেখানে আপনি তার উপর বিরক্ত হতে বাধ্য হবেন ! কিন্তু আপনি বিরক্ত হতে পারবেন না । বিরক্ত হলেই আপনি হয়ে যাবেন একজন খারাপ বয়ফ্রেন্ড । মোট কথা সে যেমন টি বলবে আপনাকে ঠিক সেমন ভাবেই চলতে হবে ।
আমি বললাম
-একটা উদাহরন দেন তো ভাই । আমার মাথায় ঠিক মত ধরছে না !
-আচ্ছা আমি আর এক জাবিনের এক দিনের কথা আপনাকে বলি । তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন । একদিন কি কথা নিয়ে আমি জাবিন কে বললাম জানো আজকাল না আয়নায় নিজের চেহারা দেখলে কেমন জানি রাগ হয় । আমার কথা শুনে জাবিন কিছুক্ষন চুপ করে রইলো ! তারপর বলল
-আমাকে দেখলে তোমার এখন রাগ হয় তাই না ?
আমি জাবিনের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম ! আমি বলতে চেষ্টা করলাম
-আরে আমি তো তোমার কথা বলি নাই ! আমি বলেছি যে আয়নায় যখন নিজের চেহারা দেখি তখন আমার রাগ হয় !
-ঐ তো একই কথা ! তুমি মানেই তো আমি ! তোমাকে দেখে রাগ হওয়া মানেই তো আমাকে দেখে রাগ হওয়া !
আম এবার সত্যি সত্যি অবাক হলাম ! মনে মনে বললাম এই মেয়ের সমস্যা কি ? এই মেয়ে আমার সাথে গায়ে পরে ঝগরা বাধাতে চাইছে কেন ?
আমি তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলার চেষ্টা করলাম
-দেখো আমি আসলে ঐ কথা বলতে চাই নি !
জাবিন গলা দিয়ে যেন বোমা ফাটলো !
-আমি বুঝি না তোমার চালাকি ? আমাকে সরাসরি কিছু বলতে পারো না তাই ঘুরিয়ে বল ! আমি বুঝি কিছু বুঝি না ! সেদিন আমি তোমাকে বলেছিলাম না যে তোমার আর আমার মাঝে কোন পার্থক্য নাই ! তুমি আর আমি একই ! তুমি সেই কথাটা মনে রেখেছ ! আর আজকে আমাকে এই ভাবে আক্রমন করলে !
ভাই সাহেব আর বলবেন না ! এই রকম প্রত্যেকটা কথায় আমার কথা ধরে ! একটু উনিশ বিশ হলে আর রক্ষা নাই ! প্যানপ্যানি শুরু হয়ে যায় ! জীবন একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে !
আমি খানিকটা দীর্ঘশ্বাস লুকালাম !
জুয়েল বলল
-আপনার টা এরকম না তো ?
-না না ! আামর টা অনেক আন্ডারস্টান্ডিং !
জুয়েল আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল দেখলামওর ফোন বেজে উঠল ! মোবাইলের স্ক্রীনটা চোখের সামনে নিতেই জুয়েলর চোখে হতাশা দেখা দিল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা ভাই আমি যাই ! আপনার সাথে কথা বলতে পেরে ভাল লাগলো ! জুয়েল উঠে গেল !
আরে চলে গেল যে !
জুয়েল যেন আরো কিছু বলতে চেয়েছিল ! বলেছিল না যে আমার উপকার করবে ?
কি বিষয়ে উপকারের কথা বলেছিল ?
একবার ভাবলাম ডাক দেই কিন্তু দিলাম না ।
আমি বসে বসে জুয়েলের চলে যাওয়া দেখলাম । জুয়েল যখন চোখের আড়ালে চলে গেল তখনও বসেই রইলাম ওর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে !
নিজেকে জুয়েলের সাথে তুলনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম ! মনে করার চেষ্টা করলাম আমার নিশি আমার সাথে এমন করে নাকি !!
কিছু মনে পড়লো আর কিছুটা আমি মনে করতে চাইলাম না !
দুঃসময়ের কথা না মনে করাই ভাল !


ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৭
২০টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×