somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা লায়নের কাষ্টমার কেয়ার ম্যানেজার রিতু এবং আমার সম্ভাব্য প্রেমের গল্প !

২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রিতু আমাকে দেখে একটুও অবাক হল না । আমার তো মনে হয় এখন যদি আমি একদিন না আসি তাহলেই বরং রিতু একটু অবাক হবে । রিতু আমার দিকে একটু তাকিয়েই আবার কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে মনযোগ দেওয়ার একটা ভাব করলো । যদিও আমি খুব ভাল করেই জানি ওর মনযোগ মোটামুটি আমার দিকেই ।
কেবল রিতুর মনযোগ কেন ওর পাশের মেয়েটার মনযোগ এমন কি বাইরে দাড়িয়ে থাকা দারোয়ানটার মনযোগ আমার দিকে । আমি কি করি সেটা দেখার অপেক্ষা ।
রিতুর পাশে বসা মেয়েটাকে দেখলাম মিসমিস হাসছে । মেয়েটার নাম মনে হয় পলিন !
আসলে মনযোগ কেনই বা আসবে না ? আমি গত সতের দিন ধরে এই বাংলালায়নের কাষ্টমার কেয়ারে আসছি নিয়ম করে । প্রতিদিনই কোন না কাজ নিয়ে । চোখে তো পড়বই ।
রিতুর সামনের চেয়ারটা ফাঁকাই ছিল । আমি ওটা তে বসে পড়লাম । অবশ্য ফাকা না থাকলেও কোন সমস্যা ছিল না । যতক্ষন না রিতুর সামনের চেয়ারটা ফাকা না হয় ততক্ষন আমি অপেক্ষা করতাম । আমি আসলে যে কোন একটা কারন খুজি কেবল এখানে থাকার । যতক্ষন থাকা যায় !
আমি বসার পর একটু সময় অপেক্ষা করলাম । রিতু তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বলুন তানভীর সাহেব ? আজ কি করবেন ? পোষ্টপেইড প্লান চেঞ্জ নাকি বিল পে ?
-জি । আজকে বিল দিবো !
-আপনার নাকি আপনার কোন বন্ধুর ?
-জি আমারই ।
রিতুর এই কথা গুলো আমাকে জিজ্ঞেস করার কারন আছে । গত কয়দিনে আমি আমার প্রায় পনেরটার মত বাংলা লায়ন বিল পে করেছি । ভাগ্যভাল আমার কলিগ আর বন্ধুবান্ধব অনেকেই বাংলালায়ন ব্যবহার করে তা না হলে একটু বিপদেই পরে যেতাম ।
আমার একটা মডেম দিয়ে আর কবার আসা যায় এখানে ? অফিসের কলিগ আর বন্ধুদের সবার কাছে ফোন করে জানতে চেয়েছি যে তারা কোন নেট লাইন ব্যবহার করে । তারপর নিজ দায়িত্বে সেগুলোর বিল দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি । বলেছি যে এখন আমি দিয়ে দিচ্ছি । তোমরা সময় মত আমাকে দিয়ে দিও । সবাই খুশি মনে রাজি হয়েছে ।

-আপনায় বিল দেওয়া আছে ।
আমি আবার রিতুর তাকালাম ।
-জি ? দেওয়া আছে ?
-জি দেওয়া আছে ।
-ও আচ্ছা । তাহলে এক কাজ করুন । আগামী মাসের বিলটা না হয় নিয়ে নিন ।
রিতু আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তানভীর সাহেব আপনার আগামী মাসের বিলই দেওয়া আছে । এখন মার্চ চলতেছে । এপ্রিল পর্যন্ত পে করা আছে ।
-আরে এপ্রিল দেওয়া আছে তো কি হয়েছে ? মে মাসেরটাও নিয়ে নিন । একাউন্টে জমা থাকুক কি বলেন ? হা হা হা ।
আমার এই কথা শুনে দেখলাম রিতার পাশের মেয়েটি হেসে ফেলল । রিতু খানিকটা মুখ গম্ভীর করে বলল
-এমন করে তো এতো অগ্রিম টাকা নেওয়া যায় না ।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই পাশের মেয়েটি বলল
-আরে কোন সমস্যা নাই । এটা তো মোবাইলের একাউন্টের মত । উনি যত ইচ্ছা জমা রাখতে পারবেন ।
তারপর মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তানভীর সাহেব আমি আপনাকে একটা বুদ্ধি দেই । এবার থেকে আপনি একবারে টাকা ভরবেন না ।
-কি রকম ?
-আরে বুঝলেন না ? এই যে আপনার বিল প্লান হল ১৪৩৭ টাকা । আপনি প্রতিদিন আসবেন একশ টাকা করে জমা দিবেন । রিতুর সাথে গল্প করবেন । ব্যস ।
রিতু মেয়েটির দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বলল
-পলিন তুই বেশি বুঝে গেছিস । চুপ থাক ।
আমি পলিনের দিকে তাকিয়ে বললাম
-এটা সম্ভব ?
পলিন বলল
-পারতপক্ষে আমরা এমনটা নেই না । তবে আপনার ক্ষেত্রে নেওয়া হবে ।
রিতু আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-জি না নেওয়া হবে না । বুঝেছেন ? জি বুঝাছি ।
আমি পলিনের দিকে তাকিয়ে বললাম
-আপনাদের অভিযোগ বাক্সটা কোথায় বলতে পারেন ?
-কেন ?
কথাটা বলল রিতু !
-আমার নামে কমপ্লেইন করবেন ?
-আরে না । কি যে বলেন না ? আমি কি আপনার নামে কমপ্লেইন করতে পারি ?
-তাহলে অভিযোগ বাক্সের কথা জানতে চাচ্ছেন কেন ?
-আমি আমার অভিযোগ আর সমস্যার কথা লিখতাম । কেউ যদি একবারে বিল দিতে না পারে তাহলে কি করনীয় । ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিল দেওয়া যাবে কি না । এই সব আর কি ?
রিতু আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ! তারপর মে মাসের বিলের কাগজটা আমা দিকে ধরিয়ে দিয়ে বলল
-আপনার অগ্রিম বিলপে রশিদ ! ১৪৩৭ টাকা দিন !
আমি টাকা বের করে দিলাম !
হায়রে ভালবাসতে গিয়ে কত গুলো টাকা বের হয়ে গেল ! যাদের টাকা দিয়েছি তারা আবার আমার টাকা না দিলে আমি আবার বড় রকমের বিপদে পড়ে যাবো । কে জানে কি হবে !
-আপনার কাছে ভাংতি নাই ?
-না আর নাই তো !
-এখন ? আমি তো ঠিক এমাউন্ট লিখে ফেলেছি ! আর আমার কাছেতো ভাংতিও নাই !
-আচ্ছা ঠিক আছে ! কোন সমস্যা নাই ! অন্য কোন দিন নিতে আসবো !
পলিন বলল
-হুম তাই তো ! এটা তো ওনার এখন সেকেন্ড হোমবলা যায় ! অন্য কোন সময় এসে নিয়ে যাবে !

পরদিন আবার গিয়ে হাজির হলাম ।
-বলুন আজকে কি করবেন ?
-আজকে কিছু করবো না ! কালকের পাওনা টাকা নিতে এসেছি !
রিতুর মুখে এবার একটু বিশ্ময় দেখতে পেলাম !
-আপনি পনের টাকা নেওয়ার জন্য মিরপুর থেকে এখানে এসেছেন ?
আমি রিতুর এই জবাব দিতে একটু সময় নিলাম ! ওর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল
-আপনার কি মনে হয় আমি পনের টাকা নেওয়ার জন্য এতো দুর এসেছি ?
একেবারে ওর চোখের সাথে চোখ রেখে কথা বলছিলাম তাই বলে ব্যাপারটা আমি ধরতে পারলাম ! রিতুর চোখটা যেন একটু কেঁপে উঠলো !
রিতু কিছু না বলে কেবল আমার পনের টাকা বের করে দিল !


-আপনি এখনও বাসায় যান নি ?
আমি একটু হাসি । রিতু আমার দিকে তাকিয়েই থাকে কিছুক্ষন । তারপর বলল
-তানভীর সাহেব । আপনি কি করছেন এসব ? এমন পাগলামো করার বয়স কি আছে আপনার ?
-চা খাবেন ?
-আমি আপনাকে কি বলছি আর আপনি জবাব দিচ্ছেন ?
-চা খাবেন ? চা খেতে খেতে বলি !
-আচ্ছা ।
রিতু বসলো আমার পাশেই । সূর্য ডুবেছে বেশ কিছুক্ষন আগেই । কিন্তু আকাশের লালিমা এখনও রয়ে গিয়েছে । আমি লাল আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম
-জানেন রিতু প্রথম যেদিন আপনাকে দেখি ! ঐ দিন বেশ ভিড় ছিল । আমি লাইন ধরে অপেক্ষা করছিলাম । ঠিক তখনই আপনার দিকে আমার চোখ গেল । আপনি আপনার চশমাটা মাথার উপর তুলে রেখেছিলেন । আপনার দুটো পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিলাম । আমি তখন বুঝতে পারি নি কি হল কিন্তু কিছু একটা যে এটা পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম । রাতের বেলা যখন ঘুমাতে তখন আশ্চার্য ভাবে টের পেলাম যে আমার ঘুম আসছে না । যতবারই চোখ বন্ধ করতে যাই তখনই কেবল আপনার চোখটা আমার সামনে ভাসছিল । আমি ……
আমি চুপ করলাম ।
-আপনি ?
কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম । কোথায় যেন পড়েছিলাম মেয়েরা এসব খুব চট করেই বুঝে ফেলে ।
এই মেয়েটা কি বুঝতে পারছে ?
এই ফাজিল মেয়েটা কি বুঝতে পারছে না যে আমি তার প্রেমে পড়েছি !
আমি বললাম
-রিতু রাত হয়ে যাচ্ছে । চলুন বাসার দিকে যাওয়া যাক ।
-আপনি যাবেন আমার সাথে ? আমিও মিরপুরের দিকেই থাকি ! এটা আমার কাছে কেমন যেন লাগলো ।
-আমার সাথে যাবেন ?
রিতু একটু হাসলো !
-আমার জন্য এতো অগিম মাসের বিল দিলেন একটু খানি রিক্সায় চড়াই যায় !

কিন্তু একসাথে যাওয়া সহজ হল না । এখন অফিস ছুটির সময় । বাসে তো ওঠার উপায় নাই । আর সি এন জি ও পাওয়া গেল না । শেষ ভরসা রিক্সা । একবারে হয়তো যাবে যাবে না । ভেঙ্গে ভেঙ্গে যেতে হবে । রিতুর সাথে রিক্সা চড়তেই মনটা ভাল হয়ে গেল । ওর চুল গুলো বাতাসে উড়ছিল । মাঝে মাঝে এসে লাগছিল আমার মুখে । মনে হল দিন টা এমন হয় না কেন প্রতিদিন !!


এভাবে ভালই দিন কাটতে লাগলো ! কয়েকদিন পরে গিয়েছি । গিয়ে দেখি কাষ্টমার কেয়ারের সবাই মিষ্টি খাচ্ছে ! আমাকে দেখতেই পলিন নিজেও আমাকে একটা মিষ্টি এগিয়ে দিল ! আমি মিষ্টি মুখে নিতে নিতে বললাম
কিসের মিষ্টি ?
আরে আপনি জানেন না ?
-না !
-রিতুর জব হয়ে গেছে ডাচ বাংলা ব্যাংকে !সামনের মাস থেকে জয়েনিং !
আমি রিতুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-ডাচ বাংলা ব্যাংক ?
-হুম ! জুনিয়র অফিসার হিসাবে !
আমি বললাম
-ব্রাক ব্যাংকে করা যায় না ?
রিতু আমার কথা ঠিক বুঝতে পারলো না মনে হয় !বলল
-মানে ? কি বলছেন আপনি ?
-না মানে আমার ব্রাক ব্যাংকে একাউন্ট আছে ! ডাচ বাংলা ব্যাংকে নাই ! এখন আবার আমাকে ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে হবে !
-আপনি এসব কি বলছেন ?
আমার কিছু বলা আগেই পলিন বলল
-আরে গাধা বুঝলি না ? যদি ডিবিবিএলে একাউন্ট না খোলে তাহলে তোর সাথে টাংকি মারবে কিভাবে ?
-টাংকি ?
রিতু কেবল আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! মুখে কেমন একটা দুষ্টমীর হাসি ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি একাউন্ট খুলে ফেলুন ! ঠিক আছে ? আর আপনার যত পরিচিত জন আছে সবাইকে বলেন ওখানেই একাউন্ট খুলতে !
আমি বললাম
-আমি বরং একটা কাজ করি ! আমার বাবা আর মাকে আগে একাঊন্ট খুলতে বলি ? ওনারা আপনার সাথে দেখা করুক ওখানে ! কথা বার্তা বলুক ! কি বলেন ?
-আপনি একটা পাগল বুঝছেন !

আমি আসলেই পাগল ! আমি তোমার জন্য পাগল !


ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৯
২৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×