somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আর নিশির বিয়ে ভাবনা !

২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসায় আসতে গিয়েই বিয়ে বাড়িটা চোখে পড়লো আবার ! একেবারে সাজ সাজ রব রব অবস্থা ! কয়েকদিন থেকেই লক্ষ্য করতেছি এই বাড়িটা এমন লাইটিং করা !
আচ্ছা একদিনের বিয়ের জন্য এতোদিন লাইটিং করার কি কোন মানে আছে ? কি জানি ?
নিশিকে এই কথা বললে ও দুম করে আমার উপর রেগে উঠত ! বলত
-তোমার এতো দরকার কেন ? ওরা বিয়ে করছে ওরা বুঝবে !
-না মানে একটা মানুষের স্বাধীনতা হরনের জন্য এমন উৎসব করা ঠিক ?
-মানে ?
-না কিছু না !
-না কি বললা আবার বল ?
-না না ! কিছু বলি নাই তো !
-কিছু বলি নাই তো ! আমি বললাম যে আমাদের বিয়ের সময়ও আমাদের বাড়ি এমন করে লাইটিং করবো কেমন !
নিশি আমার কথায় একটু শান্ত হত ! আমি আবার বলতাম
-শোন আমরা এক মাস ধরে লাইটিং করে রাখবো ! ওরা তো কেবল বাড়ির বাইরে লাইটিং করেছে আমরা বাড়ির ভিতরেও লাইটিং করবো ! এমন কি বাধরুমের ভিতরেও লাইটিংকরবো ! কেমন ?
-ফাজলামো করতেছো ?
-আরে না ! ফাজলামো কেন করবো ! সত্যি বলতেছি !

এই ভাবেই নিশির সাথে কথা চলতো অবিরাম ! ওর সব থেকে পছন্দের বিষয় ছিল এই বিয়ে নিয়ে কথা বলা ! যখন ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতাম ওর চোখে কেবল কাজী অফিস বাধতো ! একদিন আমি ওকে বলেই ফেললাম
-চল বিয়ে করে ফেলি !
আমি আর নিশি ঐ দিন ঘুরতে বেরিয়েছিলাম ! আমাদের স্বাধারনত খুব একটা দেখা হত না ! কথা হতও কম ! ওর বাসা থেকে একটু কড়াকড়ি ছিল ! তবুও সবার চোখ ফাকি দিয়ে ও চলেই আসতো !
আমার কথা শুনে নিশি বলল
-কি বললা?
-বললাম চল বিয়ে করে ফেলি ! তোমার সাথে বাইরে বের হলেই তো তোমার কেবল কাজী অফিস চোখে পড়ে তাই তো বললাম !
-শুনেন মিষ্টার ! আমি এই ভাবে আপনাকে কোন দিন বিয়ে করবো না ! আমাকে বিয়ে করতে হলে আপনাকে ঠিক মত জামাই সেজে আসতে হবে ?
-কি রকম ?
নিশি কিছুক্ষন চুপ করে ভাবলো তারপর বলল
-শুনো তুমি একটা লাল শেরওয়ানী পরবা ! আর মাথায় লাল টোপড় ! আর আমি পড়বো লালা লেহেঙ্গা !
-লাল ? তুমিও লাল আমিও লাল ! ব্যপারটা কেমন হাস্যকর হয়ে যাবে না ? মানুষ বলবে দুই লাল মিলে লুলামী করতেছে !
-শুনো ! বলছি না ফাজলামী করবা না !
-না শুনো না ! শেরওয়ানীর দাম কত জানো ? সেদিন রাসেলের মামার জন্য কিনতে গেছেছিলাম ! দাম নিছে ১৮ হাজার টাকা ! আমি বাপের জমনে ১০০০ টাকার প্যান্ট পর্যন্ত পরি নাই ! একদনের জন্য ১৮ হাজার টাকা খরচ করি কেমনে ?
নিশি আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন শীতল দৃষ্টিতে ! তারপর বলল
-জীবনে কয়টা বিয়ে করতে চাও ?
-একটা !
-একটা বিয়ের জন্য ১৮ হাজার বেশি হয়ে গেল ?
-না তা না ! আসলে আমার কাছে ঐ পোষাকটা কেমন যেন হাস্যকর লাগে !
-হাস্যকর লাগলেও কিছু করার নাই ! আমাকে বিয়ে করতে হলে ঐ শেরওয়ানী পরেই তোমাকে আসতে হবে ?
-যদি না আসি ?
-তাহলে হবে না বিয়ে !
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-মনে কর তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে । বিয়ের দিন আমি হাজির হলাম ! কিন্তু শেরওয়ানী পরি নি তখন ?
নিশি আবারও আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ! তারপর বলল
-তারপর কি হবে জানো ?
-বাসর রাতে যখন লাইট জ্বালবা তখন আমার বদলে আমাদের বাড়ির কাজের মেয়েকে পাবে বউ হিসাবে !
আমি নিশির কথায় হাসতে থাকি ! এই মেয়ে কি পাগল নাকি !
নিশি বলল
-আর শুনো ! রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে আসবা কিন্তু !
-আরে এটা এখন কেউ করে নাকি ? আর আমি মুখ কেন ঢাকবো ?
-তুমি যে লুল পাবলিক ! আমাকে রেখে আর কটা প্রেম করেছ কে জানে ! দেখা যাবে আমার বিয়ের দিন অন্য মেয়েরা এসে তোমাকে নিয়ে টানা টানি শুরু করে দিয়েছে ! তখন ?
-মানে কি ? এই সব কি কথা ?
-এই সব কি কথা ! যা বলছি শুনবা !

এইভাবেই কথা সাজাতো নিশি আপন মনে ! কত কথা বলতো ! আমার শুনতে শুনতে ভালই লাগতো ! এমন কি আমি নিজেও নিশির এই কথা গুলো নিয়েই কল্পনা করতাম ! লাল শেরওয়ানী পরে লাল একটা পাখি বিয়ে করে নিয়ে আসছি !
আমি ঠিক করেই রেখেছিলাম বিয়ে পরানোর পরপরই যখন আমাদের প্রথম মুখোমুখি করা হবে তখনই ওকে একটা চুম খাবো সবার সামনে ! আমার বউ এটা সবাইকে জানাতে হবে না ?
আমার এই কথা শুনে নিশি যেন আকাশ থেকে পরলো !
-কি করবা তুমি ?
-কেন চুম খাবো !
-সবার সামনে ?
-হ্যা ! কোন সমস্যা আছে নাকি ? দেখো খ্রীষ্টানদের বিয়েতে কেমন ফাদার বলে "ইউ মে কিস দ্যা ব্রাইড"
-শুনো তুমি খ্রীষ্টান না ? ঠিক আছে ?
-আমি কিছু জানি না ! আমার যা ইচ্ছা তাই করবো ! আমার বউকে আমি যদি লুকিয়েই চুম খেতে হয় তাহলে সে আমার কেমন বউ ! আর আমিই বা কেমন বর !
-এমন কাজ যদি কর তাহলে ঐ দিনই আমার বাপ তোমাকে ত্যাজ্য করে দিবে !
-ত্যাজ্য পুত্রের মত ত্যাজ্য জামাই ?? হাহাহাহা !!
-এই হাসবা না !
-হা হা হা !

আরো কত কথা হত আমাদের ।

তারপর কয়েকদিন নিশির ফোন আসা বন্ধ ছিল ! জানি না কেন ! অবশ্য এমন ও প্রায়ই করতো ! এমনও আছে সাপ্তাহ পার হয়ে গেছে ওর কোন ফোন আসে নাই ! আমি এটা স্বাভাবিক ধরে নিতাম ! ও বলত যে ওর বাসায় নাকি খুব সমস্যা ! আমি মেনে নিয়েছিলাম ! যদিও মানতে একটু কষ্ট হত তবুও আমি সব মেনে নিয়েছিলাম !
দুদিন পরে যখন নিশি ফোন দিল কত কথা বলার ছিল ! কিন্তু আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না নিশির কথা শুনে !
নিশি কেবল আমাকে বলল
-গতকাল আমার বিয়ে হয়ে গেছে ! ভাইয়ার পছন্দের ছেলে !
আমি প্রথমে ভাবলাম হয়তো ও ইয়ার্কী মারছে । কিন্তু যখন টের পেলাম যে ও ইয়ার্কি মারছে না তখন একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেলাম !

আজকাল আর তাই আর বিয়ে বাড়ি দেখলে ভাল লাগে না ! বুকের ভিতর কেমন এটা কাঁটা বিঁধে থাকে ! আমি চোখ সরিয়ে নিলাম !
নাহ ! কাল থেকে আর এই পথে আসা যাবে না !

ফেবু লিংক
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×