somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Accident এ ভালাবাসার গল্প !

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল বেলার ঘুম আমার সব থেকে প্রিয় ! এই সময় কেউ যদি ফোন করে খাজুরে আলাপ শুরু করে তাহলে মেজাজটা কার ভাল থাকে ? সকাল থেকে দুই জন এমন খাজুরে আলাপ শুরে এমনিতেই মেজাজ টা খারাপ করে দিয়েছিল ! এগারোটার দিকে মা ফোন করে বলল
-তোর ভাই রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে ! এখন ঢাকায় আছে ! ১২ টার ভিতর নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা কর !
কিছু বলতে পারলাম না ! আর যাই হোন মায়ের উপর কথা বলার সাহস এখনও হয় নাই ! মেজাজটা খারাপ নিয়েই উঠতে হল ! মেজাজ গরম হল ভাইয়ের উপর ! এমন সব কাজ কারবার করে না এই বয়সে !
বুড়া বয়সে ভিমরতি !!
কি রে ভাই বাড়ি ছেলে চলে যাবি ভাল কথা ! ঢাকায় আসার কি দরকার ?
ঢাকায় আসো আর আমাকে ঝামেলায় ফেলো !!

বাসের ভরসায় গেলাম না ! ইদানিং মোহাম্মাদপুর থেকে সব বাস গুলো লোকাল হয়ে গেছে । প্রত্যেকটা স্টপেজে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে ! যতক্ষন না যাত্রী আসে ! আগে জানতাম বাস আসবে যাত্রীরা অপেক্ষা করবে আর এখন এই বাসে উঠলে মনে হয় যাত্রীর জন্যই বাস দাড়িয়ে থাকে ! কোন কোন দিন তো মনে হয় বাসের হেলপার রা যাত্রীদের বাসা থেকে ডেকে আনে !
রিক্সা করেই রওনা দিলাম !
মা বলেছিল ১২ টার ভিতর না পৌছালে নাকি ভাইয়া চলে যাবে !

সংকরের কাছে এসে বিশাল জ্যাম বেধে গেল ! আমি চু চাপ বসে রইলাম বিরক্ত হয়ে !
এখন আমার ঘুমানোর কথা ছিল কিন্তু এখন এই রোদের পুরে জ্যামের ভিতর আটকে আছি !
বিরক্ত আর বিরক্ত........।
বাঁ দিকে চোখ ঘুরেতেই আমার চোখ আটকে গেল পাশের রিক্সার দিকে !
একটা মেয়ে আমার মতই বসে আছে ! পরনে কালো জিন্স আর নীল কামিজ ! কানে হেড ফোন !
আমি একটু হলাম এই দেখে যে মেয়েটা রিক্সায় হুড টা তুলে নাই !
মেয়েরা সাধারনত রিক্সায় হুড তুলে বসে তাহলে এই রোদের ভিতর মেয়েটা এমন আচরন কেন করছে ?
কি জানি ?
যা করে করুক ! এই মেয়ে আমার টাইপের না ! আর আমাকে বেলও দেবে না ! খামোখা সময় নষ্ট করে লাভ নাই !
আমি আবার বিরক্ত হওয়ায় মন দিলাম ! বড় ভাইয়ের মেজাজ টা খারাপ হতেই থাকলো !
সিগনাল ছাড়লো কিছুক্ষন পরেই ! আর তখনই সব রিক্সা গুলো রেস শুরু করে ছিল ! কে আগে যেতে পারে ! মেয়েটার রিক্সা আর আমার রিক্সাটা একদম পাশা পাশি চলছিল ! দুটো রিক্সাতেই বেশ গতি ছিল ! আমার কেন জানি ভয় করছিল এই ভেবে যে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে যায় !
আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল !
তখনই একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম ! রিক্সার চাকা ভাঙ্গার শব্দ ! কয়েক মুহুর্তের ভিতরেই ঘটনা টা ঘটলো !
আমার রিক্সা আর মেয়েটার রিক্সা দুটো পাশাপশি চলছিল ! পাশাপাশি চলার ফলে এতো কাছে চলে এসেছিল যে দুটো রিক্সার পিছনের চাকা একে ওপরের সাথে লেগে গেল ! তখনই বাধলো বিপত্তি !
মেয়েটা যে রিক্সাটায় ছিল সেটার চাকা ভেঙ্গে গেল নিমেষেই ! এর ফলে দুইটা ঘটনা ঘটলো ! রিক্সাটা একটু বাকা হয়ে গেল ! মানে আমার রিক্সার দিকে কাত হয়ে গেল ! মেয়েটা ঠিক পরে যাচ্ছিল আমি মেয়েটার হাত ধরে ফেললাম ! মেয়েটা এত চমকে উঠেছে যে চিৎকার করতে ভুলে গেছে !
আসলে রিক্সাটা যেহেতু আমার দিকেই বাঁকা হেয় গেছিল মেয়েটা আমার দিকেই আসছিল ! মেয়েটাকে কোন মতে পতনের থেকে রক্ষা করলাম !
রিক্সা থামিয়ে ততক্ষনে দুই রিক্সাওয়ালা ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে !
আমি মেয়েটার হাত ধরেই নামালাম রিক্সা থেকে !
বললাম
-আপনার লাগে নাই তো !
মেয়েটা একটু শকড হয়েছিল ! কিছুক্ষন পরে নিজের ভিতর ফিরে এসে আমাকে বলল
-না ঠিক আছি ! ভাগ্যিস আপনি ধরেছিলেন !
আমি হাসলাম !
-না ! এ আর কি !
এমন একটা ভাব যে এই রকম দুচারটা কাজ আমি প্রতিদিনই করি !
মনে মনে বললাম সুন্দরী তোমাকে বাঁচাতে আমার মত নায়কই তো আসবে ! মেয়েটির হাত তখনও ধরে আছি !
আহা ! কি নরম তুল তুলে হাত !
মনে হল এই হাত জীবনে না ধরলে আমার জীবন বৃথা হয়ে যেত !
মেয়েটি যখন লক্ষ্য করলো আমি তার হাত এখনও ধরে আছি তখন একটু হাসলো ! তারপর বলল
-এখন আমি আর পরবো না ! আমি ঠিক আছি ! আপনি আমার হাত ছেড়ে দিতে পারেন !
আমিও একটু হেসে হাত ছেড়ে দিলাম !
আমাদের দুই রিক্সাওয়ালা তখন কলহে লিপ্ত ! কার দোষ এটা প্রমানের চেষ্টা ! আমি বললাম
-এখানে দাড়িয়ে থেকে লাভ নাই ! চলুন যাওয়া যাক !
-হুম !
-আপনি কোথায় যাবেন ?
-এই তো একটু ষ্টার কাবাবে !
আমি বললাম
-আরে তাই নাকি ? আসলে আমিও টো ঐ খানেই যাচ্ছি ! এই সময়ে স্টারের কাচ্চি না খেলে আমার হয় ই না ! চলুন এক সাথে যাওয়া যাক !
মেয়েটা কি যেন ভাবলো ! ভাবছে আমার সাথে এক রিক্সায় যাওয়া ঠিক হবে কি না ! আমি একটা অপরিচিত ছেলে !
আবার ভাবছে আমি তাকে একটু আগে দুর্ঘটনায় হাত থেকে বাঁচিয়েছি ! ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না !
আমি বললাম
-কোন সমস্যা ?
-না না ! কোন সমস্যা না ! চলুন যাওয়া যাক !
আমরা ঐ দুজন কে রিক্সা ভাড়া দিয়ে নতুন রিক্সায় উঠলাম ! একসাথে মেয়েটার সাথে !
একটু আগে মেয়েটাকে পাশের রিক্সায় দেখছিলাম আর এখন মেয়েটা আমার পাশে আমার সাথেই যাচ্ছে রিক্সা করে যাচ্ছে ! এই না হলে কপাল !

মেয়েটাকে এখন কি বলা যায় ? এমন কিছু বলতে হবে যাতে মেয়েটা আমাকে এটু গুরুত্বের সাথে নেয় ! প্রথম বারে যদি বিড়াল মারা যায় তাহলেই কেল্লা ফতে !
নাম দিয়ে শুরু করা যাক ! আমি নাম জানতে যাবো কিন্তু মেয়েটাই আগে আমাকে আমার নাম জিজ্ঞেস করে ফেলল !
বাহ ! ভেরি ফার্ষ্ট !!
-নাম কি আপনার ?
-আমার ? আমি তানভীর !
মেয়েটা একটু মিষ্টি করে আসলো ! তারপর বলল
-তানভীর আমার এক মামার নাম তানভীর
!
উহু !! এটা আবার কি কইলা ? আমারে মামা বানাইয়া দিলা !
মেয়েটা বলল
-আমার নাম জেরিন ! আপনার সাথে পরিচিত হতে পেরে ভাল লাগলো ! আরো টুকটাক কথা বলতে বলতেই ষ্টার কাবাবের কাছে পৌছে গেলাম ! আমার কাছে মনে হল ইস সময় এতো জলদি কেন যায় ?
অন্যান্য দিন যখন জয়ামে বসে থাকি তখন তো এতো জলদি আসে না ! আর আজকে পাশে এাট সুন্দরী মেয়ে রয়েছে, কোথায় একটু লম্বা জার্নি হবে ! তা না ! ফট করে চলে এল !
যাক তবুও মেয়েটার সাথে আরো কিছু সময় কাটান যাবে রেষ্টুরেন্টের ভিতরে !
এটাই বা কম কি ?
কিন্তু রিক্সা থেকে নেমেই আমার সেই ভুল ভাঙ্গলো !
আমরা যখন রিক্সা থেকে নামলাম দেখলাম একটা ছেলে এগিয়ে আসলো আমাদের দিকে ! সামেন এসে আমাকে যেন দেখতেই পাই নাই এমন একটা ভাব করে জেরিনকে বলল
-কি ব্যাপার এতো লেট করলে কেন ?
জেরিন বলল
-আর বল না ! রিক্সা এক্সসিডিং করেছিল !
-কি বল ?
ছেলেটা চিৎকার করে উঠল !
-তুমি ঠিক আছো বেইবি ?
বেইবি ? রাস্তা ঘাতে মাইয়ারে বেইবি ডাকোস ! ফাজিল পোলা !
জেরিন বলল
-আরে ! আমার কিছু হয় নাই ! এই ভাইয়াটা ছিল বলে ! না হলে আমার খবরই ছিল !
দেখলাম ছেলেটা এবার আমার দিকে ফিরলো ! আমাকে খুব একটা পছন্দ করলো বলে মনে হল না ! এমন একটা ভাব এই পাবলিক আবার কোথা থেকে আসলো ?
কোন রকমে বলল
-ভাইয়া ধন্যবাদ !
আমিও বললাম
-না ঠিক আছে !
এমন সময় জেরিন বলল
আচ্ছা ভাইয়া আপনি থাকেন ! কাচ্চি খান ! আমরা একটু আসছি !
জেরিন ছেলেটা হাত ধরে চলে গেল ! আর একবার ফিরেও তাকলো না !

বদ মাইয়া !! আগে কইবি না তোর বয়ফ্রেন্ড আছে !!
হু !!

এইসময় আমার মোবাইল বেজে উঠল !
ভাইয়া !
আমি ফোন রিসিভ করলাম !
-এই তুই কইরে !
-এই তো আসতেছি !
-আমি কতক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছি ! জলদি আয় !
-এই তো আসছি !
আমি আবারও নিউমার্কেটের দিকে রওনা দিলাম !!

ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×