somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েটির কান্নার কারনটি জানা হল না !!

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ষ্টুডেন্টের বাসা থেকে বের হতে যাবো এমন সময় আন্টি এসে বলল
-তুমি কোন দিক দিয়ে যাবা ?
-এই তো আন্টি পরীবাগ দিয়ে !
-দাড়াও একটু শামসের আব্বাও যাবে । তোমাকে পরীবাগে নামিয়ে দিবে !
আমি দাড়ালাম । যাক ২০ টাকা রিক্সা ভাড়া বেঁচে যাবে !

কিন্তু পরীবাগে নামা হল না । আঙ্কেল আমাকে একেবারে খামারবাড়ীর মোড়ে নামিয়ে দিল !
যাক ভালই হল ! অনেক দিন এই দিকটাতে আসা হয় নাই ! আগে একটা সময় ছিল প্রায়ই প্রতিদিনই এখানে আসতাম । আমার রুম মেটের এই সংসদ ভবনের সামনের জায়গাটা বেশ পছন্দ ছিল !
কেন জানি রিক্সা নিতে গিয়েও নিলাম না ! বেশি পথ তো আর না ! অবশ্য রাত একটু হয়েছে ! এরই মাঝে দেখলাম এলাকা একটু ফাকা হয়ে গেছে ! তবুও হেটেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম ! ভুদিন হাটা হয় না এদিকটায় !

আমি আস্তে আস্তে আস্তে থাকি ! বাসায় যাওয়ার কোন তাড়াহুড়া নাই ! এমন কেউ বাসায় আমার জন্য অপেক্ষা করছে না !
লোকজন নেই বললেও এখনও কিছু লোকজন রয়েই গেছে ! এরা সব সময়ই থাকে ! তবে দেখলাম বেশ কিছু গাড়ীও জমা হয়ে আছে । সব বড় লোকের পোলাপাইন । রাত যত বাড়বে এদের ভীড় তত বাড়বে । আমি আপন মনে হাটতে থাকি ! বিকেলের দিকে বৃষ্টি হয়েছিল এখন বেশ ঠান্ডা বাতাস দিচ্ছে !

হঠাৎ দেখলাম সামনে দিয়ে একটা মেয়ে হনহন করে হেটে চলে গেল ! ঠিক তার পিছনেই একটা চিকন মত ছেলে দৌড়ে দৌড়ে আসছে ! কিছু সময় পরপর বলছে বেবি ! যেও না ! দাড়াও না ! এই ....
বেবি ?
সিরিয়াস লি ?
এই পোলা গুলার কি হাসি আসে না যখন সবার সামনে মেয়ে গুলারে বেইবি বলে ডাকে ?
আমি হলে তো কোন দিন ডাকতেই পারবো না !

-মামা চটপটি ! মামা চটপটি !! গরম ! একদম গরম ।
দেখলাম বেশ কয়েক জনই এমন করে ডাকা ডাকি করছে ।
ফুসকা ?
ঘড়িতে সময় দেখলাম ।
নাহ । এখন কিছু খাওয়া দরকার । বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেতে খেতে অনেক দেরি । আর এলাকার চটপটি মামা এতোক্ষনে দোকান বন্ধ করে দিয়েছে । আমি নিরিবিলি দেখে এক মামা দোকানে বসে পড়লাম !
-মামা প্লেট কত ?
-৫০ টাকা মামা !
-এতো ? কপিচ দেও ?
-১০ টা মামা !
-মাত্র ? নাহ মামা ! খাওয়া যাবে না !
আমি উঠে পড়তে যাই ! দোকানদার মামা বলে
-মামা আপনারা না খাইলে আমাদের চলবো কেমনে ? আজকা সারা দিন বেচা কিনা নাই মামা !
-না হলেও মামা কিছু করার নাই ! ৫০ টাকা দিয়ে খাওয়া যাবে না !
-আচ্ছা মামা ৫ টাকা কম দিয়েন মামা !
আরো কিছুক্ষন দর কষাকষি হল ! শেষে ৩৫ টাকায় রাজি হল !

আমি ফুসকার জন্য অপেক্ষা করতেছি এমন সময়ই মেয়েটার দিকে চোখ গেল আমার ! আমি যেখানে বসে আসি সেখান থেকে কিছু দুরে বসে আছে আরো দুটো ছেলের সাথে ! অবশ্য ছেলেদুটো এক জন দাড়িয়ে আছে ! আর অন্য জন মেয়েটার পাশে বসে আছে ! সব কথা কানে আসছে না তবে কয়েকটা কথা আমার কানে এল ! তাতেই আমার খানিকটা কৌতুহল হল ছোট্ট দলটার উপর !
মেয়েটা দাড়িয়ে থাকা ছেলটার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার এই কি শেষ কথা ?
যদিও আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম না তবুও কেন জানি মনে হল মেয়েটার চোখে পানি ! আর মেয়েটার গলাটাও কেমন ধরা ধরা !
ছেলেটা কিছুক্ষন চুপ করে রইলো তারপর বল
-আমি তোমাকে বলেই দিয়েছি ! আমার পক্ষে সম্ভব না !
আমি অপেক্ষায় আছি মেয়েটি কি বলে ! কিন্তু হঠাৎ মেয়েটি একটা অদ্ভুদ কাজ করে বসলো ! উঠে গিয়ে ছেলেটির পায়ে ধরতে গেল ! বলল
-তোমার পায়ে পড়ি আমাকে তুমি বিয়ে কর !
ছেলেটি একটু সরে গেল ! কিন্তু কোন ভাবান্তর হল না ! এবার আমি স্পষ্টই দেখলাম যে মেয়েটি কাঁদছে !
মেয়েটি আবার বলল
-প্লিজ !
-অর্না ! আমি তোমাকে আগেই বলেছি ! আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না !
ছেলেটি আর দাড়ালো না ! ওরা দুজনই মেয়েটিকে একা রেখে হাটা দিল !
আমি আরো কিছু দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ! ভেবেছিলাম মেয়েটি হয়তো ছেলেটির পেছন পেছন যাবে ! কিন্তু যেখানে বসে ছিল মেয়েটি সেখানেই বসে রইলো !
আমিও বসে রইলাম মেয়েটির দিকে তাকিয়ে !

মেয়েটি কাঁদছে !
পাশদিয়ে চলে যাওয়া লোকজন গুলো একবার দেখছে মেয়েটিকে ! তারপর যে যার মত চলে যাচ্ছে ! একটি মেয়ে কাঁদছে এতে কারো কিছু যায় আসে না !
আসলেই কারো কিছুই তো যায় আসে না !
কিন্তু আমার কেন জানি মনখারাপ হল । মেয়েটি কেন কাঁদছে জানতে ইচ্ছা করছে !
-মামা ! এই ফুসকা !
আমি কিছুক্ষন চুপ করে ভেবে চটপটি মামা কে বললাম যে ফুসকার প্লেট টা ঐ মেয়েটিকে দিয়ে আসতে !
মামা আমার কথা মতই কাজ করলো !
আমি চুপ করে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটি কি করে দেখার জন্য !

হয়তো মেয়েটি অবাক হবে ! কান্না বন্ধ করবে ! ফুসকার প্লেট টি হাতে নিবে !
হয়তো মেয়েটি অবাক হবে কিন্তু কান্না থামাবে না ! প্লেট ও নিবে না !
হয়তো মেয়েটি বিরক্ত হবে ! কঠিন করে মামা কিছু কথা শোনাবে !
হয়তো....

আরো অনেক কিছুই হতে পারে ! দেখা যাক কি করে !
আমাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি ফুসকার প্লেট টি হাতে নিল ! এবং মেয়েটির মুখ দেখে মনে হল মেয়েটি মোটেও অবাক হয় নাই ! যেন এখন মেয়েটির ফুসকা খাওয়ার কথা ছিল ! কিন্তু কান্না থামালো না ! তবে কান্নার বেগ কিছুটা কম !
মামাকে আরো এক প্লেট ফুসকা দিয়ে বললাম ! আমি একনও মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি ! মেয়েটি একটু পরপর চোখ মুছছে আর একটু করে ফুসকায় কামড় দিচ্ছে !
-মামা ! একটু টক দিয়ে যান তো !
আমি আসলেই এবার অবাক হলাম ! এই মেয়ের সমস্যা কি ? একটু আগে মেয়েটা ভেউ ভেউ করে কাঁদছিল আর এখন মেয়েটি ফুচকা খেতে টক যাচ্ছে !
আশ্চার্য !
আমি নিজেই টক নিয়ে গেলাম মেয়েটির কাছে ! নিজেই ঢেলে দিলাম !
-আর একটু দেব ?
-না থাক ! হয়েছে !
মেয়েটির কান্না তখন পুরোপুরি থেমে গেছে ।
আমি মেয়েটির পাশেই প্লেট নিয়ে বসে পড়লাম । কিছু টা সময় নিয়ে বললাম
-একটা কথা বলবো ?
-জি বলুন ।
-আপনি ভাল আছেন ?
-এই প্রশ্ন করতে আমাকে ফুসকা খাওয়ালেন ?
-না । কোন প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ফুচকা খাওয়াই নি ।
-তাহলে কেন খাওয়ালেন ?
-এমনি । আপনি কাঁদছিলেন । কেন জানি মনে হল ফুচকা খেলে হয়তো আপনার ভাল লাগবে । হয়তো কান্না থামবে । তাই !
-অন্য কেউ হলে কি এমনটা করতেন ?
-হয়তো না । আবার হয়তো । আমার মানুষের কান্না বিজরিত চোখ দেখতে ভাল লাগে না ! চেষ্টা করি আসে পাশের সবার কান্না থামাতে ।
মেয়েটি আমার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-ফুসকা খাওয়ানোর জন্য ধন্যবাদ । আসলেই কান্না কিছুতেই থামাতে পারছিলাম না । আপনার ফুচকা বেশ কাজে দিয়েছে ।
মেয়েটি উঠে দাড়ালো । তাকিয়ে দেখি মেয়েটির প্লেটে তখনও তিনটা ফুচকা পরে আছে ।
-আর খাবেন না ?
-নাহ ।
আর কিছু না বলেই মেয়েটি হাটা দিল ।
আমি ডাক দিবো কি না ভাবছি বা ডাক দেওয়া ঠিক হবে কি না ! তবুও ডাক দিয়েই ফেললাম
-অর্না ?
দেখলাম মেয়েটি দাড়িয়ে পরলো । একটু দাড়িয়ে থেকে আমার দিকে ঘুরলো !
আমি বললাম
-কয়েকটা কথা খুব জানতে ইচ্ছা করছে ! বলবেন ?
অর্না কিছুক্ষন সময় নিলো উত্তর দিতে ! তারপর বলল
-অন্য কোন দিন ! আজকে না !

অর্না আর দাড়ালো না ! আমি হাফ খালি ফুচকার প্লেট নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম ! অর্ণা কেন কাঁদছিল জানা হল না !



পুনশ্চঃ আজকে অনেক দিন পরে টিউশনি থেকে আসার সময় সাংসদ ভবনের সামনে দিয়ে আসছিলাম ! ভাল লাগছিল বেশ !
আর বেশ কয়েক বছর আগে এক সন্ধ্যা, এই রকম একটা মেয়েকে দেখেছিল একটা ছেলের পায়ের পরতে ! মুখে সেই একটা আকুতি যে আমাকে তুমি বিয়ে কর !


ফেবু লিংক
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×