বাজার থেকে মাছ কিনে আনা বড়ই ঝামেলার কাজ । আর সব থেকে ঝামেলার কাজ হল সেই কিনে আনা মাছ কাটা আর মাছের আঁশ ছাড়ানো ।
সেই বিরক্তিকর কাজটা করছিলাম রান্না ঘরে । কদিন থেকে বুয়া বাদ দিয়েছি । বুয়ার সব কাজ কর্ম এখন আমিই করি । বাসায় আরো দুজন আছে কিন্তু বেহুদা সময় কেবল আমার হাতেই আছে । তাই মোটামুটি রান্না বান্না আমিই করি ।
অবশ্য রান্না করতে খুব একটা খারাপ লাগে না তবে এই মাছ পরিস্কার করতে বড় বিরক্ত লাগে । এই বিরক্তির কাজ করছিলাম ।
রান্না ঘরের জানলার পরেই বেসিন । বেসিনের কল ছেড়ে মাছ পরিস্কার করছিলাম তখনই এক ঝটকা আলো এসে আমার চোখে লাগল । প্রথম কিছুক্ষন আমি ঠিক মত তাকাতে পারলাম না ! কারন আলো একদম আমার চোখ বরাবর আসছিল ।
যখন এক পাশের জানলা বন্ধ করে দিয়ে অন্যটা দিয়ে তাকালাম তখন দেখতে পেলাম পাশের বাড়ির ঐ ফাজিল মেয়েটা । আল্লাহ এই মেয়ের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও ।
এই মেয়েটা কি ?
এই মেয়ের সমস্যা কি ?
আমাকে কি কাজের ছেলে ভাবছে নাকি ?
অবশ্য ভাবাটা খুব বেশি অস্বাভাবিক না । ঐ রান্না ঘর আর এই রান্না ঘর মুখোমুখি । আর এখানে যেমন বেসিনের পাশেই জানলা ওখানেও তাই । আমি যখন রান্না ঘরে আসি প্রায় সবসময় মেয়েটাকে দেখি রান্না ঘরে । প্রথম প্রথম কিছু লক্ষ্য না করলেও সেদিনের পর থেকে লক্ষ্য করছি মেয়েটা আমার সাথে কেমন ফাজলামো করছে ।
সেদিনও অবশ্য আমার সাথে ফাজলামোই করছিল । একটা মেয়ে এমন ভাবে ফাজলামো করতে পারে আমি ভাবতেই পারি নি । সেদিন বিকেল বেলা ছাদে বসে হাওয়া খাচ্ছিলাম হঠাৎ কে যেন কাজের বুয়া বলে ডাক দিল ।
আমি তখনও মেয়েটাকে খুব একটা লক্ষ্য করি নি । কিন্তু আসে পাশে লক্ষ্য করে দেখলাম ও পাশের ছাদ আর এই ছাদে কেবল আমি আর সে । এবং সে আমাকেই ডাকছে । আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-আমাকে বলছেন ?
মেয়েটি বলল
-হ্যা ! তোমাকেই বলছি ।
-তুমি ?
আমি খুব বড় না হলেও যে কেউ প্রথমেই আমাকে তুমি বলে ডাকবে এটা মেনে নিতে খানিকটা কষ্ট হয় । আমি বললাম
-কি ব্যাপার আপনি আমাকে কাজের বুয়া ডাকছেন কেন ? আমাকে কি দেখতে কাজের বুয়ার মত ?
মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-না । ঠিক কাজের বুয়ার মত না । তবে কাজের ছেলের মত ।
-মানে ? কি বলতে চাও তুমি ?
আমিও আপনি থেকে তুমিতে নেমে এলাম । আরো বললাম
-মুখ সামলে কথা বল বললাম ।
-নইলে কি করবা ? তরকারিতে লবন কম দিবা !
এই বলে মেয়েটা জোরে জোরে হাসতে লাগলো । আমি যে তরকারিতে ঠিক মত লবন দিতে পারি না এই কথাটা এই মেয়েটা কিভাবে জানলো ?
নাহ ! এটা এই মেয়ের জানার কথা না ! আন্দাজে বলেছে !
আমি বললাম
-কি ? তুমি হাসছো কেন ?
-এমনি হাসছি ।
-আর বললে না তো আমাকে কাজের বুয়া কেন ডাকলে ?
মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলল
-আশ্চার্য ! তুমি এই ছয় তলায় কাজ কর না ?
-আমি ? মানে কি ? তোমাকে কে বলল যে আমি ছয়তলায় কাজ করি ?
-কে বলবে ? আমাদের বাড়ির বুয়া বলেছে ।
-তোমাদের বাড়ির বুয়া বলেছে ?
-হুম । তো সে কিভাবে জানলো ?
-আরে আশ্চার্য সে তো প্রতিদিনই তো তোমাকে রান্না করতে দেখে । সেও রান্না করে । তুমিও রান্না কর । ঐ দিন আমাকে কি বলে জানো ? বলে আপাগো দেখেন না ঐ বাড়িতে কি হ্যানসাম একখান পোলা কাম করে । আমার তারে মনে ধরছে ।
এই বলে মেয়েটি আবারও জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগল ।
হ্যানসাম ?
আমি হাসবো নাকি কাঁদবো ঠিক বুঝতে পারলাম না !
শেষ পর্যন্ত কাজের বুয়া ?
রাগে দুগে আমি ছাদ থেকে চলে আসি । সপ্তাখানেক আমি রান্না ঘরে গেলাম না । সব কিছু ডুবে মরুক ।
কিন্তু আমার রুমমেটদের রান্নার যে অবস্থা তাই বাধ্য হয়ে আমাকে আবার রান্না ঘরে যেতে হল ।
আর আজকে রান্না করতে এসে আবার এই বিপত্তি ।
নাহ !
ফাজলামীর একটা লিমিট থাকা উচিৎ। আমি অন্য জানলাটা বন্ধ করে দিবো ঠিক এই সময়ে পাশের বাড়ির মেয়েটা বলল
-এই এই এই ।
খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললাম ।
-এই সপ্তাহটা কোথায় ছিলে ? ছুটি নিয়েছিলে নাকি ?
-দেখ ফাজলামো করবা না ।
-আরে রাগ করো কেন ? গ্রামের বাড়িতে তো যেতেই পারো তাই না এতে রাগ করার কি আছে এতো ?
-শুনো আমি এখানে কাজ করি না । আর আমি কাজের লোকও না । আমার সাথে ফাজলামো করবা না ।
-আরে কি বল ! তাইলে আমার কাজের বুয়ার কি হবে ? ও ব্যাচারী তো তোমারে তার মন দিয়ে ফেলেছে ।
-চুপ ।
আমি জানলা বন্ধ করে দিলাম । ফাউল প্যাচাল পাইড়া লাভ নাই ।
বিকেল বেলা আমাদের গলিটার ভিতরে বেশ ভিড় দেখা যায় । অন্যান্য এলাকার মত না । এখানে সব বাসার ছোট ছোট বাচ্চারা খেলা ধুলা করে । ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে তাদের মায়েরাও বের হয় । এমন কি বাচ্চাদের বড় আপারাও বের হয় । এলাকা জমজমাট হয়ে যায় ।
আমি বিকেলে বের হলে খারাপ লাগে না । আজকেও বিকেলে যখন বের হইছি টিউশনিতে যাওয়ার জন্য । কয়েক কদম হেটেছি তখনই একদম সামনে থেকে সেই ফাজিল মেয়ে এসে হাজির ।
মুখে দুষ্টামির হাসি ।
-এই কাজের বুয়া !
আবার ?
নাহ !
এই মেয়ে ফাজলামি শুরু করেছে । আমি মেয়েটিকে এড়িয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলাম । এই মেয়ের সাথে সময় নষ্ট করার কোন মানে নাই ।
-এই কোথায় যাও ? আমাদের বুয়ার হৃদয় ভেঙ্গে তুমি চলে যেতে পারো না ।
আমি বিরক্ত হয়ে পিছনে তাকালাম । মেয়েটার মুখে তখনও দুষ্টামির হাসি ।
সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে । আমার মেজাজটা আসলেই খারাপ হল । সোজা মেয়েটার দিকে হেটে এসে খুব জোরে একটা ধমক দিলাম । বেশ কর্কশ গলায়ই বললাম
-এই রকম ফাজলামো করলে কি থাপড়ায়ে দাঁত খুলে ফেলব ।
মনে হয় একটু বেশি জোড়ে ধমক দিয়ে ফেলেছিলাম । মেয়েটা নিজেও খানিকটা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন । আমি একটু আসে পাশে তাকিয়ে দেখলাম মোটামুটি সবাই ই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে ।
আমি আর দাড়ালাম না । পেছন ঘুরে হাটা দিলাম । একবারপেছনের দিকে তাকালাম না !
কেন জানি নিজের কাছেও খানিকটা কেমন লাগছিল ।
একটা পিচ্চিকে ধমক দেওয়া যায় ।
একটা ছেলেকেও ধমক দেওয়া যায় কিন্তু এক মেয়েকে এভাবে সবার সামনে ধমক দেওয়াটা জানি কেমন ।
যাক যা হয়ে হয়েছে । মেয়েটির জ্বালানো বন্ধ হবে । কিন্তু তবুও মনটা একটু খুতখুত করতে লাগলো ।
কয়েকদিন মেয়েটার কোন খোজ রইলো না । তার আরও দিন দুয়েক পর মেয়েটাকে ছাদে দেখতে পেলাম । আমাকে দেখেও কেন জানি দেখলো না । মুখটাও কেমন বিষন্ন মনে হল । সেদিনের সেই হাস্যজ্জল চেহারাটা আর দেখা যাচ্ছিল না । মেয়েটা চলে যাচ্ছিল তখন আমি নিজেই মেয়েটাকে ডাক দিলাম ।
-এই ।
মেয়েটা দাড়িয়ে আমার দিকে তাকাল ।
-কি ?
-তোমাদের বুয়ার কি খবর ?
-কেন ?
-এমনি । আমার উপর তার মন এসেছে তাই ভাবলাম একটু খোজ খবর নেই ।
মেয়েটি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি খুব খারাপ ।
-কেন ?
-আমাকে ঐ ভাবে বকলে কেন ? আমার আব্বু আম্মুও কোন দিন আমাকে এভাবে বকে নাই ।
-আচ্ছা । তা তুমি আমার সাথে ওমন ফাজলামো করছিলে কেন ?
মেয়েটি আমার কথার জবাব দিল না । কেবল কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ।
-আচ্ছা আমি সরি ।
মেয়েটি তবুও চুপ ।
-আরে তুমি এভাবে চুপ থাকলে আমার প্রেম কাহিনীর কি হবে ? তুমি ছাড়া যে এই কাহিনী এগোবেই না ।
এই কথাতে মনে হল খানিকটা কাজ হল । মেয়েটি আমাকে মুখ ভেঙ্গালো ।
-তুমি পচা ।
-তুমি তো সুইট ।
-ইস ।
-সুইট আর সুন্দর ।
-ইস । ঢং । আমাকে বকতে আবার ঢং করবে ।
আমি হেসে ফেললাম । আমি আরো কি বলতে যাচ্ছিলাম তখন দেখি এক মাঝ বয়সি মহিলা ছাদে এসে হাজির । মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটা মোবাইল এগিয়ে দিতে দিতে বলল
-আফা মনি আপনার ফোন ।
মেয়েটা ফোনটা হাতে নিল । মহিলা যখন চলে গেল আমি বললাম
-আরে তোমার মোবাইল আছে দেখি ।
-তো ! থাকবে না ?
-আচ্ছা ! মোবাইলে ব্যালেন্স আছে তো ?
-কেন থাকবে না ?
-দেখি আমাকে একটা কল দাও তো ।
-ইস ! এই সব ফালতু ট্রিকস আমার সাথে চলবে না ।
-আচ্ছা । বুঝলাম । এসো ঝগড়া পাশে রেখে এখন একটু কথা বলি ! মেয়েটি অন্য দিকে তাকিয়ে রইল ।
-বলবা না ? আচ্ছা ঠিক আছে ! ঐ মহিলা কে যে তোমাকে মোবাইল দিয়ে গেল ?
এবার মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল ! তারপর বলল
-তোমার বুয়া প্রেমিকা । হিহিহিহি !
facebook
আলোচিত ব্লগ
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই
বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজাকারের বিয়াইন

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?
কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।
রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।
রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন
দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।