somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট্ট একটা গল্প এবং একটি সুন্দরবন

২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়কালঃ ২০৫০

হুমায়ুন সাহেবের নাতি জিতু খুব চঞ্চল প্রকৃতির । সারাক্ষন এটা ওটা নিয়ে মেতে আছেই । আর মুখে আছে হাজারটা প্রশ্ন !
এটা কি ? ওটা কেন ? এটা কখন হবে !
জিতুর বয়স টাই এখন যে কৌতুহলের । জিতুর বয়সে তিনিও জিতুর মতই ছিলেন ! তাই জিতুর জন্য একটু আলাদা আদর সব সময় অনুভব করেন ! আগের যখন জিতুরা হুমায়ুন সাহেবের বাসায় এসেছিল তখন জিতু খুব ছোট ! ঠিক মত কথা দাড়াতেও পারে না । আর এখন সারা ঘরময় ছোটাছুটি চিৎকার চেঁচামিচি !
হুমায়ুন সাহেবের খুব ভাল লাগে । মনে হয় সারা সময় যদি জিতু এমন করে কাটাতো তাহলে তাদের দুজনের খুব ভালই সময় কেটে যেত । কিন্তু চাইলেই তো আর সব কিছু হয় না ।

হুমায়ুন সাহেব টিভি দেখছিলেন এমন সময় জিতু দৌড়াতে দৌড়াতে এসে তার কোল বরাবর একটা ঝাপ দিলেন । হুমায়ুন সাহেব আগে থেকেই টের পেয়ে ছিলেন তাই ঠিক মত ধরে ফেললেন জিতুকে ! তা না হলে জিতু তো ব্যাথা পেতই তিনি নিজেও ব্যাথা পেতেন । পেছন থেকে জিতুর বড় বোন জাহিন বলল
-এই পাজি ছেলে তুই ওভাবে লাফ দিলি কেন ? যদি দাদু ব্যাথা পেত !
জিতু খুব মিষ্টি করে বলল
-কই ? পাই নি তো !
তারপর দাদুর দিকে তাকিয়ে বলল
-বল দাদু তুমি ব্যাথা পেয়েছ ?
হুমায়ুন সাহেব হাসতে হাসতে বলল
-না দাদুভাই ! আমি ব্যাথা পাই নি !
জাবিন জিতুকে বলল
-এই নাম ! এখনই নাম ! দাদুকে টিভি দেখতে দে !
-না না ! আমি যাবো না ! আমি যাবো না ! আমি গল্প শুনবো !
-না চল গল্প শুনতে হবে না ! চল !
হুমায়ুন সাহেব জাবিন কে বলল
-আহা ! থাকুক না ! আমার সমস্যা হচ্ছে না । জাবিন আর কিছু না বললেও চলে গেল না । নিজের ভাইকে সে খুব ভাল করে চিনে কখন কি করে বসবে তার ঠিক নেই !
হুমায়ুন সাহেব জিতুকে বলল
-বল দাদুভাই তুমি কিসে গল্প শুনতে চাও !
জিতু কিছুক্ষন চোখ টিপটিপ করল । কোন কিছু ভাবছে ! তখনও ওর চোখ গেল ড্রয়িং রুমের দেওয়ালে টাঙ্গানো একটা বাঘের চামড়ার দিকে । সে সেই চামড়াটা দেখিয়ে হুমায়ুন সাহেব কে বলল
-দাদু ঐ টা কি ?
-কোন টা ?
-ঐ যে ! দেওয়ালে !
-ও ! ঐটা হল চামড়া ! বাঘের চামড়া !
জাবিন বলল
-সত্যি বাঘের !
-হুম ! সত্যি বাঘের ।
-কোথায় পেয়েছ ? বাইরে থেকে আনিয়েছ ?
হুমায়ুন সাহেব হাসলো । আরে বাইরে থেকে আনাবো কেন ? এটা আমাদের দেশেরই বাঘের চামড়া ! সুন্দর বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের !
জবিন যেন একটা চিৎকার করে উঠল !
-সত্যি বলছো দাদু ?
-হুম ! আমার এক বন্ধু সুন্দর বনের ফরেষ্টার ছিল । সেই চামড়াটা আমাকে দিয়েছে !
জাবিন বলল
-তুমি সত্যি সত্যি সূন্দর বন দেখেছ ? বাঘ দেখেছ ?
হুমায়ুন সাহেবের মন খানিকটা বিষন্ন হল । বলল
-হুম ! বললে তোরা বিশ্বাস করবি না কিন্তু আমি বেশ কয়েকবার সুন্দর বনে গিয়েছি ! বাঘ অবশ্য নিজের চোখে দেখি নি তবে চিত্রল হরিন দেখেছি ! আরো কত কিছু দেখেছি !
-হুম ! আমটা কেবল শুনেই গেলাম । নিজ চোখে কোন দিন দেখতে আর পেলাম না ! জানো দাদু যখন শুনি পৃথিবীর সব থেকে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট আমাদের দেশে ছিল তখন কি যে ভাল লাগে । কিন্তু মনটা এমন খারাপ হয় যখন শুনি সেই সম্পদটা কেউ রক্ষা করে নি বরং কিছু স্বার্থপর লোক নিজ হাতে ধ্বংশ করেছে নিজেদের লাভের জন্য ! আই মিন এরা কেমন লোক হতে পারে যারা পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, প্রাণ-বৈচিত্রের অসাধারন আধার সুন্দর বন কে এভাবে ধ্বংশ করে দিতে পারে । একটুও কি চিন্তা করলো না ।
হুমায়ুন সাহেব কোন উত্তর দিতে পারেন না । কেবল বিষন্ন হয়ে থাকে ! জিতু এরই মাঝে বলল
-দাদু সুন্দর বনের গল্প বল !
হুমায়ুন সাহেব কিছু বলতেই যাচ্ছিল তখন জাবিন বলল
-আচ্ছা দাদু যখন রামপাল বিদ্যুৎপ্লান্ট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের ভিতর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তখন তোমায় বয়স কত হবে ?
-এই ২৪/২৫ বছর ।
-তোমরা প্রতিবাদ কর নাই । আমরা বই পুস্তকে পড়েছি এই বিদ্যুৎ প্লান্টের জন্যই আস্তে আস্তে সুন্দর বন ধ্বংশ হয়ে যায় । তোমরা কিছু কর নাই ? সরকারে সিদ্ধান্তের বিরোধীতা কর নাই ?
-করেছিলাম যে দাদু !
-তাহলে ?
-আসলে তখন দেশের পরিস্থিতি একটু অন্য রকম ছিল ।
-কি রকম ?
-তখন দেশের মানুষের ভিতরে কোন ঐক্য ছিল না ! সবাই কিছু ভিন্ন ইস্য নিয়ে ব্যস্ত ছিল । কেউ আস্তিক নিয়ে ! কেউ নাস্তিক নিয়ে । কেউ আবার ....
হুমায়ুন সাহেব কথা শেষ করলেন না !
-আশ্চর্য ! দেশের এতো বড় ক্ষতি হয়ে যচ্ছিল আর মানুষ জন নিজেদের কে নিয়ে ব্যস্ত ! এই যে এখন বছর বছর যে প্রাকৃকিত দূর্যোগটা হচ্ছে এটার জন্য দায়ী কে ? এখন যদি সুন্দরবন থাকতো তাহলে অন্তত ৭৫ ভাব দূর্যোগ সে একাই সামলে দিতো !
-হুম !
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ! আসলেই এই কয় বছরে দেশের জলবায়ুর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে । দিন যত যাচ্ছে অবস্থার অবনতি তত হচ্ছে । গত বছর যশোরের মত জেলাও বন্যা হয়েছে ।
জাবিন বলল
-তখন বিরোধী দলে কারা ছিল ? তারা সরকারের এই ধ্বংশাত্বক পদক্ষেপের বিপরীতে কিছু করে নাই ?
-নাহ ! তখন তাড়া তাদের নেতাদের ছাড়ানো নিয়ে ব্যস্ত । অল্প কিছু তরুন আর তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ রক্ষা কমিটি কিছু প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সরকার সেটা আমলে নেয় নি ! বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার যৌথভাবে আন্তর্জাতিক বিধি লংঘন করে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, প্রাণ-বৈচিত্রের অসাধারন আধার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সবচাইতে শক্তিশালী প্রাকৃতিক রক্ষা বর্ম সুন্দরবন ধ্বংস করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছিল । আমরা আর কিছুই করতে পারি নি !
জাবিন মন খারাপ করে বলল
-আমরা তো তাও জানি যে সুন্দর বন বলে একটা বন ছিল ! আমাদের দেশেই ছিল । কিন্তু জিতুদের পরের প্রজন্ম হয়তো জনাবেই না !

হুমায়ুন সাহেবের মন খারাপ হয় !

আসলেই তখন যদি বিরোধী দল নিজের নেতাদের মুক্তির দাবীর সাথে সাথে এই চুক্তির বিরোধীতা করতো, যদি ব্লগাররা রাজাকারের ফাঁসি চাওয়ার সাথে সাথে এই চুক্তি বাতিলের দাবি জানাতো, যদি মানুষ ইসলাম রক্ষার সাথে সাথে দেশ রক্ষার জন্যও আওয়াজ তুলতো তাহলে হয়তো সরকার নিজের খেয়াল খুশি মত কাজ করতে পারতো না, তাহলে হয়তো আজকে সুন্দরবন আপন মহিমায় বাংলাদেশের বুকে দাড়িয়ে থাকতো !




ইহা একটি কাল্পনিক গল্প ! তবে এমন কিছু সামনে হলেও হতে পারে ! নিচে ncbd.org থেকে পাওয়া রিপোর্ট টা একটু পরে দেখুন !

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত ২০ এপ্রিল রামপাল বিদ্যুৎপ্লান্ট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তা বাংলাদেশের জন্য একটি ভয়াবহ বিপদের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার যৌথভাবে আন্তর্জাতিক বিধি লংঘন করে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, প্রাণ-বৈচিত্রের অসাধারন আধার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের সবচাইতে শক্তিশালী প্রাকৃতিক রক্ষা বর্ম সুন্দরবন ধ্বংস করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে। সুন্দরবনের বৃহৎ এলাকায় পরিকল্পিত কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎপ্লান্ট চুক্তিতে ভারতীয় কোম্পানির উচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য কর মওকূপ, বিদ্যুতের দাম অনির্ধারিত রাখা এবং বাংলাদেশের উপর সব দায় দায়িত্ব চাপানোসহ সবধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা সমীক্ষা করে এই প্রকল্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কিন্তু সরকার বিশেষজ্ঞমত ও জনগণের বিরোধিতা উপেক্ষা করে পরিবেশ অভিমত সমীক্ষা (ইআইএ) না করে এলাকার মানুষের জমি দখল করেছে এবং মানুষ উচ্ছেদ করেছে। প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিশ ও সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এর পরেও প্রতারণামূলকভাবে ইআইএ রিপোর্ট সম্পন্ন করা হয়। গত ১২ এপ্রিল ইআইএ রিপোর্ট পর্যালোচনার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয় একটি পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে। উক্ত সভায় বিশেষজ্ঞরা ইআইএ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে নতুন ইআইএ রিপোর্ট প্রণয়ন করার জন্য দাবী জানান। নতুন রিপোর্ট না হওয়া পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখারও দাবী জানানো হয়। ইআইএ রিপোর্ট এভাবে প্রত্যাখ্যাত হবার পরেও সরকার সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিধি লংঘন করে বিশ্বের অন্যতম সম্পদ সুন্দরবন ধ্বংস করার এই প্রকল্প চুড়ান্ত করেছে। এই ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দুই দেশের সরকারের এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে দুই দেশেরই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।


http://ncbd.org/?p=676

http://ncbd.org/?p=676
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×