somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দি এরিয়্যানসের মেয়েটি এবং অসমাপ্ত আইসক্রিম খাওয়ার গল্প!!

০৪ ঠা মে, ২০১৩ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনার হাজবেন্ট মারা গেছে ?
মেয়েটি তার সামনে রাখা ভ্যানিলার আইসক্রিমের বাটি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকাল । চেহারায় এখনও সেই বিষন্নতার ছোঁয়া ।
কি ব্যাপার ? মেয়েটির কি আসলেই স্বামী মারা গেছে নাকি ?
আমার নিজের একটা থিওরি আছে । কোন স্বাভাবিক মেয়ে সামনে আইসক্রিমের বাটি নিয়ে বিষন্ন হয়ে বসে থাকতে পারে না । আপনার গার্লফ্রেন্ড যদি আপনার উপর রাগ করে অথবা অভিমান করে তাহলে তার সামনে এক বাটি আইসক্রিম রাখেন । দেখবেন আইসক্রিম যত দ্রুত গলবে তার থেকে দ্রুত আপনার গার্লফ্রেন্ডের অভিমান গলবে । আর আইসক্রিম যত মজাদার আর দামি হবে বিষন্নতা তত তাড়াতাড়ি গায়েব হয়ে যাবে ।
আর এই মেয়ে কি না ভ্যানিলার এতো বড় বাটি সামনে নিয়ে বিষন্ন হয়ে বসে আছে ।
আশ্চার্য ব্যাপার !
তাও আবার এই এরিয়্যানস এর মত আইসক্রিম পার্লারে ।
দি এরিয়্যানস ।
এটা আমার সব সময়ের পছন্দের জায়গা । যখনই আইসক্রিম খেতে মন চায় তখনই এখানে চলে আসি । বিশেষ করে যখন স্কুল ছুটি হয় । এই আসাদ এভিনিউ এর এই দিকটা বেশ ভিআইপি এলাকা । আর বেশ কয়েকটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে । পিক আওয়ারে দলে টিনএজ মেয়েরা এখানে আসে । কিচির মিচির করে । আমি মজা নিয়ে দেখি । মাঝে মাঝে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয় । সে সব গল্প টল্প লেখার চেষ্টা করি ।
আর একটা কারন অবশ্য আছে । এই আইসক্রিম পার্লারটা একটু বিদেশী বিদেশী ভাব আছে । বিয়ার পাব গুলোতে যেমন দেখতে হয় এখান কার লুকটাও খানিকটা ঐ রকম ।
যাই হোক আজ বিকেল বেলা একটু বাইরে বের হয়েছিলাম । আসার পথে মনে হল একটু ঢু মেরেই যাই । আইসক্রিম নিয়ে বসেই ছিলাম তখনই মেয়েটার দিকে আমার চোখ গেল ।
কালো টিশার্টের সাথে কালো জিন্স পরেছে মেয়েটা । এই গরমের ভিতরেও যে মেয়েটা এমন কালো পোষাক পরেছে এটা ভেবে খানিকটা অবাক লাগছে । আর সব চেয়ে অবাক লাগেছে মেয়েটার বিষন্ন মুখ দেখে ।
আইসক্রিম সামনে নিয়ে বসে আসে ।
আশ্চর্য !

আমি মেয়েটির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার বললাম
-কি কিছু বলছেন না যে ?
মেয়েটি খানিক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল । বোঝার চেষ্টা করল আমি তার সাথে ফাজলামো করার চেষ্টা করছি কি না । আমি আমার চেহারায় একটা গাম্ভীর্য ধরে রাখার চেষ্টা করলাম । মেয়েটি বলল
-আমাকে কি দেখে মনে হচ্ছে আমি বিবাহিত বা আর স্বামী আছে ?
-না । তা ঠিক মনে হচ্ছে না । তবে আজ কাল কার মেয়েদের বিশ্বাস নেই । যে হারে মেক আপ ব্যবহার করে এমনি তেই বয়স ১০ বছর কম মনে হয় ।
আমার এই কথা শুনে মেয়েটি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-আপনি কি চান আমার কাছে ?
-না মানে এই আপনার আইসক্রিমটা নষ্ট হচ্ছে । এটা আমার ভাল লাগছে না ।
-আপনি খাবেন ?
-আপনি খাবেন না ?
মেয়েটি বলল
-নাহ । আমার খেতে মন চাইছে না ।
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম
-কি বলেন এই সব ? আপনিতো দেখছি মানষিক ভাবে অসুস্থ । কোন স্বাভাবিক মেয়ে আইসক্রিম খেতে ভাল লাগছে না এমন কথা বলতেই পারে না । বলতেই পারে না ।
আমার এই কথা শোনার সাথে সাথেই মেয়েটির চোখ দুটো কেমন জানি তীক্ষ হয়ে উঠল । আমি খানিকক্ষন তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে মেয়েটির চোখে পানি জমতে শুরু করেছে ।
আমি চট জলদি বলে উঠলাম
-আরে আরে আমি তো এমনি এমনি বললাম । ইয়ার্কী মেরেছি । প্লিজ আপনি সিরিয়াসলী নেবেন না ।
মেয়েটি কিছুক্ষন সময় নিল নিজেকে সামলানোর জন্য ।
-না ঠিক আছে । বসুন । আইসক্রিম গলে যাচ্ছে ।
-আরে তাইতো ।
আমি আইসক্রিম খেতে বসে গেলাম ।
আহা ! এই মজার আইসক্রিম কেউ না খেয়ে থাকতে পারে ?
-আরে আপনিও নিন না ?
মেয়েটি হঠাত্‍ বলল
-আপনাকে দেখ একজনের কথা খুব মনে পড়ে গেল । অভিও এমন পাগলামো করত ।
-অভি ?
দেখলাম মেয়েটির মুখটা আবার বিষন্ন হয়ে গেল ।
-আরে আগে আইসক্রিম খান । কথা পরে হবে ।

আসাদ এভিনিউ সব সময় ব্যস্ত রাস্তা । সব সময় গাড়ি ঘোড়া আসছেই । কিন্তু আজকে পুরো রাস্তা কেমন ফাঁকা লাগছিল । বহুক্ষন পরপর একটা দুটো গাড়ি ভুস করে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে । অবশ্য একটু রাত হয়ে গেছে ।
রাস্তায় হলুদ বাতির নিচে আমি হাটছি । সাথে মেয়েটি । অনেকক্ষন কেউ কোন কথা বললাম না । হঠাত্‍ মেয়েটি বলল
-আমার নাম লিয়ানা ।
-আমি অপু ।
-অপু সাহেব কাল রাতে আমি ঠিক করেছি যে সুইসাইড করবো ।
আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম
-এই জন্য পছন্দের আইসক্রিম খেতে এসেছিলেন শেষ বারের মত ?
-হুম ।
-আগে অভির সাথে আসতেন ?
-হুম । নিয়মিত আসতাম । আমি রাগ করলেই ও আমাকে এখানে নিয়ে আসতো । আমার সামনে কত রকমের আইসক্রিম এনে রাখতো । আমি রাগ কয়ে থাকতেই পারতাম না ।
আমি লিয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি কাঁদছে । এই হলুদ আলোতে মেয়েটির অশ্রু ভরা চোখে দেখতে কেমন অদ্ভুত লাগছে । অদ্ভুত সুন্দর ।

-কিভাবে সুইসাইড করবেন বলে ঠিক করেছেন ?
মেয়েটি দাড়িয়ে পড়ল ।
-আপনি আশ্চর্য মানুষ তো । আমি সুইসাইড করতে যাচ্ছি আপনি এটা স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছেন । কারন জানতে চাইছেন না কিভাবে মরব সেটা জানতে চাইছেন ?
-কারনটা তো সোজা । অভি আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে । আপনি এতো দিন ওকে ছাড়া থাকতে চেষ্টা করেছেন । এখন আর পারছেন না । তাই না ?
লিয়ানা কিছু বলতে গিয়েও বলল না । আমি বললাম
-আসলেই আমার বন্ধু বলটু ঠিকই বলে । মেয়েদের মাথায় একটু বুদ্ধিসুদ্ধি কমই থাকে ।
লিয়ানা তীক্ষ কন্ঠে বলল
-মানে কি ?
-মানে হল যে প্রেমের কারনে ছেলেদের থেকে মেয়েদের সুইসাইডের সংখ্যা বেশি । আচ্ছা এটা কি বেকুবী না যে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে তার জন্য আপনি মরতে চলেছেন অথচ আর কত গুলো মানুষ আপনার আসেপাশে আছে যারা আপনাকে ছেড়ে যায় নি । কত গুলো মানুষ সামনে আসবে । তা না ...

আমি চুপ করে গেলাম । দেখলাম মেয়েটিও চুপ করে গেল । দুজন হাটতে হাটতে সংসদ ভবনের সামনে চলে এলাম । একটা জায়গা দেখে বসলাম চুপ করে । চারিদিকটা কেমন চুপচায হয়ে গেছে । লোক জনের সংখ্যাও বেশ কম । হঠাত্‍ আমি বললাম
-গাড়ির নিচে ঝাপ দিবে নাকি ? যদি চাকার নিচে ঠিক মত পড়তে পারেন তাহলেই কেল্লা ফতে ! কিন্তু ঠিক মত না পড়লে কাজ হবে না ।
-আপনি আচ্ছা ফাজিল তো ! আমাকে মরার বুদ্ধি দিচ্ছেন ?
-আরে আশ্চার্য । আপনার আইসক্রিম খেলাম । একটা দায়বদ্ধতা আছে না ?
মেয়েটি কিছু বলতে গিয়ে হেসে ফেলল । মেয়েটি বলল
-আপনি খুব মেয়ে পটাতে পারেন না ? কয়জন পটিয়েছেন এই পর্যন্ত ।
আমি একটু চিন্তা করছি এমন একটা ভাব করে বললাম
-এই সাড়ে বাইশ টার মত ।
-সাড়ে বাইশ ?
-হুম । বাইশটা তো পটিয়েছি । আর হাফ .. আপনাকে পটালাম ।
-তাই না ? এতোই সহজ ! শুনুন মিষ্টার মেয়েদের পটানো এতো সহজ না । অন্তত আমাকে তো না ।
-ওকে ঠিক আছে তাহলে বাইশটাই এন্ড ওয়ান ফোর্থই সই । এটাই কম কি ! দেখুন ওয়ান ফোর্থ তো আপনা পটেছেনই । তাই না ? তো কি ঠিক করলেন ? কিভাবে মরবেন ?
লিয়ানা এবার আসলেই জোরে হেসে উঠল । বলল
-আপনি আসলেই খুব ফাজিল টাইপের ছেলে !
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×