somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

SMS ও প্রোপোজ সংক্রান্ত জটিলতায় আমি !!

১৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেবল কিছুক্ষন প্রিয়তী পাঠানো মেসেজটার দিকে তাকিয়ে রইলাম । বাংলায় স্পষ্ট অক্ষরে লেখা
আমি কিছু বলি না মানে এই না যে তুমি আমাকে যখন তখন মেসেজ পাঠাবা !
প্রিয়তী নতুন মোবাইল কিনেছে । তাতে আবার বাংলা সাপোর্ট করে । ইদানিং দেখছি আবার বাংলায় মেসেজ পাঠাচ্ছা !
ফাজিল মেয়ে !
কি ভাব নিয়ে বলে যে যখন তখন আমাকে মেসেজ পাঠাবা না । ফাজিল মেয়ে তুই আমার গার্লফ্রেন্ড, তোকে যখন তখন পাঠাবো কিনা তো পাড়ার অন্য মেয়েকে পাঠাবো ?
আমি অনুভব করলাম যে আমার মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে ।
আমারে কয় না পাঠাতে !
যাহ তোর ভালবাসার খ্যাতা পুরি !
আমি নিজের টাকা খরচ করে মেসেজ পাঠাবো আবার আমারে কয় ...!! আমি আবার মোবাইলের মেসেজ অফশনে গেলাম । লিখলাম
আর কোন দিন পাঠাবো না ।
সত্যি এই মেয়েকে পাঠাবোই না কোন দিন কোন মেসেজ ।
এখন কি করি ? মেসেজটা পাঠানোর পর কিছুক্ষন একটু দুঃখবোধ হল । প্রিয়তী মেয়েটা ভাল ছিল । কিন্তু মাঝে মাঝে বড় বেশি যন্ত্রনা দিত । আনন্দময় যন্ত্রনা । সহ্য করতে ভালই লাগত ।
মাঝে মাঝে আবার আমাকে সারপ্রাইজও দিতো ! সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ দিয়েছিল ওকে যেদিন প্রথম প্রোপোজ করেছিলাম ।
সরাসরি বলারতো উপায় ছিল না, মোবাইলেই বলেছিলাম কথাটা । তখন অবশ্য ওর নিজের মোবাইল ছিল না ।
রাতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ও আমাকে মেসেজ পাঠাতো । বিশেষ কিছু না । ক্লাস মেইট হিসাবে টুকটাক কথা বলতাম । আস্তে আস্তে ভাল লাগা শুরু । আমি একদিন ভালবাসি লিখে মেসেজ পাঠালাম ।
তারপর থেকে দুদিন মেসেজ ফোন বন্ধ । ক্লাসে দেখা হলেও দেখলাম কেমন মুখ গম্ভীর করে আছে । আমি তো ভাল !
এই সেরেছে ! প্রেম তো হবেই না তার উপর থেকে বন্ধুত্বটাও মনেহয় গেল ।
স্কুল ছুটির পরে বাসায় যাবো দেখি রিয়া আমার পথ আগলে দাড়ালো । একটু দুরে প্রিয়তীকেও দেখতে পেলাম দাড়িয়ে আছে । রিয়ার ভঙ্গিটা একটু মারমুখি । মনে মনে একটু ভয় পেলাম !
রিয়া আর প্রিয়তী জানের বান্ধবী । আমার প্রোপোজের কথা তো নিশ্চই বলেছে রিয়াকে । এখন যদি রিয়া সারা স্কুল ছড়িয়ে দেয় তাহলে তো আমার খবরই আছে ! মান ইজ্জত আর কিছু থাকবে না ।
রিয়া খানিকটা কঠিন গলায় বলল
-কি ব্যাপার রেদু তুই প্রিয়তীকে কি বলেছিস ?
ফাজিল মেয়েটা বলে দিয়েছে ! আমি একটু ঢোক গিলে বললাম
-আমি তো কিছু বলি নাই ।
-বলিস নাই ?
-নাআআ ! বলি নাই তো ।
-ঐ দিন রাতে প্রিয়তীকে মেসেজ পাঠাইছে কেডা !
একটু শক্তি নিয়ে বললাম
-তাই বল । আমি তো কেবল মেসেজ পাঠাইছি । কিছুতো বলি নাই ।
রিয়া মনে হল একটু বিরক্ত হল ।
-দেখ রেদু তোর সব সময় ফাজলামী করার অভ্যাস । মেসেজে কি বলেছিহ গাধা !
আমি কোন কথা না বলে প্রিয়তীর দিকে তাকালাম । মেয়েটা এখনও দাড়িয়ে আছে অন্য দিকে তাকিয়ে ।
-আরে কথা বলছিস না কেন ?
-কি বলব ?
-প্রিয়তী অনেক রাগ করেছে ।
-বুঝতেই পারতেছি । এখন কি করতে হবে ? সরি বলতে হবে ।
-সরি তো বলবিই । শোন এবার ওর সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে তারপর প্রোপোজ করবি ।
আমি রিয়ার কথা যেন ঠিক মত বুঝতে পারলাম না । বললাম
-কি বললি ? আবার প্রোপোজ করবো ?
-হুম ।
-এই না বললি প্রিয়তী রাগ করেছে । আবার প্রোপোজ করবো কেন ?
আমার কথায় রিয়া আবার বিরক্ত হল । বলল
-তুই আসলে গাধাই রয়ে গেলি । প্রিয়তী রাগ করেছে তোর ঐ এক শব্দের প্রোপোজ দেখে । এই ভাবে কেউ প্রোপোজ করে ?
-তাহলে ?
-শোন এখন যা । ঐ দেখ প্রিয়তী দাড়িয়ে আছে । যেভাবে বললাম ঐ ভাবে প্রোপোজ করবি । ঠিক আছে ?
আমি প্রিয়তীর দিকে হেটে গেলাম । আমাকে আসতে দেখে প্রিয়তী যেন একটু নড়ে চড়ে দাড়ালো । অবশ্য আমার কনফিডেন্ট ততক্ষনে ফিরে এসেছে ।
আমি জানি প্রোপোজ করলেই তা এক্সেপ্টে হবে । সুতরাং কোন চিন্তা নাই । আমি ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম । একটু হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু প্রিয়তী হাসলো না । আসলে আমার কেন জানি মনে হল প্রিয়তী ওর মুখটা গম্ভীর রাখার চেষ্টা করছে ! দুদিন থেকেই এই ভাবটাই মনে হয় ও নেওয়ার চেষ্টা করেছে । আমি বললাম
-তুমি কি ইংরেজি পড়তে ভুলে গেছ ?
প্রিয়তীর মুখে একটা অবাক হওয়ার ভাব ফুটে উঠল । বলল
-মানে ? হোয়াট ডু ইউ মিন ?
-আরে এই তো ইংরেজি বলতেছ ? তার মানে ভুল নাই ! তাহলে ?
প্রিয়তী এইবারও বুঝলো না । বলল
-কি তাহলে ?
-মোবাইলে টাকা ছিল না ?
-রেদোয়ান তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছি না ।
-না মানে দুদিন আগে তোমাকে কিছু লিখে পাঠিয়েছিলাম তুমি তার জবাব দিলে না তো তাই ।
এবার দেখলাম প্রিয়তীর মুখটা একটু মলিন হয়ে গেল ।
-আচ্ছা আমি যাই !
প্রিয়তী চলে যেতে চাইলে ওর হাত ধরলাম । বললাম
-আরে আমি কিভাবে বুঝবো যে কিভাবে মেয়েদের প্রোপোজ করবো ? আমার মনের কথাটা তো আমি তোমাকে বলেছি তাই না ?
-আমি জানি না ।
-আচ্ছা ! এই দেখো !
এই বলে ওর সামনে হাটু ভেঙ্গে বসলাম । বললাম
-এই মেয়ে ! তোমার মনটা কি আমায় দেবে ?
আমি তখনও ঠিক মত বুঝতে পারি নি আসলে কি সর্বনাশ হয়ে গেছে । আসলে একটু উত্তেজিত ছিলাম তো তাই বসার সময় ঠিক বুঝতে পারি নি । আমার শরীর একটু ভারিই বলতে হবে ।
যখনই বসেছি একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম । প্রিয়তীও নিশ্চই শুনেছে কিন্তু দুজনেই ঐ দিকে লক্ষ্য করি নাই । কিন্তু যখন উঠলাম কেমন যেন পেছন থেকে একটা বাতাসের আগমন অনুভুত হল ।
এই সেরেছে !
পেছনে হাত দিয়ে দেখি যা হওয়ার হয়ে গেছে । প্রিয়তী বলল
-ইস ! এতো সুন্দর করে বলতে পারো তাহলে আগে বল নি কেন !
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । একটা কথা চিন্তা আসতেই একটু অবসাদ বোধ করলাম । প্রিয়তী যদি ওর সাথে কোথাও যেতে বলে তাহলেই তো খবর হয়ে যাবে ।
-এই ! কি ভাবছো ?
-কিছু না ।
-আমি কিন্তু এখনও হ্যা বলি নাই । যদি হ্যা শুনতে চাও তাহলে ঐ বেইলিরোডে চল । ওখানে একটা লাভ ট্রি আছে । চল ।
আমি আবার একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।
-তুমি আগে হাটো আমি হাটতেছি ।
কাধের ব্যাগটা আরো নিচে নামালাম । আর যাই হোক নিজের ইজ্জত তো বাঁচাতে হবে । যাক যখন মনে হল যে ছেড়া অংশটা আর দেখা যাবে না তখন ওর পেছনে হাটা দিলাম ।
এতো সংগ্রাম করে যে গার্লফ্রেন্ড পেলাম সেই গার্লফ্রেন্ড আমারে কয় যখন তখন এসএমএস না দিতে ।
যা বেটা দুরে গিয়া মুড়ি খা ।
বেটা না বেটি !
আমি মোবাইল বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম ।
রাত্রে আব্বার চেঁচামিচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল । ঘর থেকে বের হয়ে দেখি আব্বা কাকে যেন ল্যান্ড লাইনে ধমকাচ্ছে ।
-বেটা বদমাইশ ! রাত দুপুরে ফোন দিয়ে কথা বলিস না । থাপ্ড়ায়ে দাঁত ফেলে দিবো ।
আমি বললাম
-কি হয়েছে বাবা ?
আর বলিস না কোন ফোন দিয়ে কথা কয় না !
-আচ্ছা তুমি ফোন রেখে লাইন খুলে রাখো ।
-এসব ফাজিলগুলারে কেবল থাপ্ড়ানো দরকার ।
আব্বা চলে গেলেন । আমি আবার নিজের রুমে ফিরে গেলাম । আমার মোবাইল বন্ধ দেখে প্রিয়তী ল্যান্ড লাইনে ফোন দিয়েছে নিশ্চই । আমি ফোন চালু করতেই ফোন এসে হাজির । একবার ভাবলাম ফোনটা রিসিভ করবো না । কিন্তু রিসিভ করলাম ।
-এই তুমি ফোন কেন বন্ধ করেছ ?
-ইচ্ছা !
-রাগ করেছ ?
-নাহ রাগ করবো কেন বল ? রাগ করার কি কোন কারন আছে ?
-তুমি রাগ করেছ । আমি বুঝতে পারছি তুমি রাগ করেছ । আসলে ঐ সময় আপু ঘরে ছিল । আর একটু হলে তোমার মেসেজটা দেখে ফেলতো । একটু রাগ উঠে গিয়েছিল ।
-আর এখন যে তুমি আবার বাবাকে ফোন দিয়ে রাগিয়ে দিলে ।
-উনিতো বুঝতে পারে নাই ।
-তাই না ? শুনো আমার বাবা তো আর তোমার মত মুড়ি খায় না । উনার বুঝতে কিছু বাকি নাই ।
-এই তুমি কি বললে ?
-কিছু বলি নাই । শুনো মুড়ির কেজি কত জানো ?
-মানে ?
-মানে কিছু না । বাজারে গিয়ে মুড়ি কিনো । আর দুরে গিয়া মুড়ি খাও ।
আমি ফোন রেখে দিলাম । মনের ভিতর একটা শান্তি অনুভব করতেছি । একটা প্রতিশোধ নেওয়া গেছে !
ফাজিল মেয়ে আমাকে বলে মেসেজ না দিতে ! গ
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×