somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লুল গল্পঃ বয়ফ্রেন্ড যখন কুরিয়ার ম্যান !!

০৪ ঠা জুন, ২০১৩ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দারোয়ান আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন । চোখ জুড়ে খানিকটা বিশ্ময় ! আসলে বেচারা ঠিক মেলাতে পারতেছে না । আমি আবার বললাম
-এটা তো ২৭৫/সি তাই না ?
-জি !
-দুই তলায় জামান সাহেব থাকেন ?
-জি !
-উনার নামে পার্সেল এসেছে !
-উনি তো এখন বাসায় নাই !
দারোয়ান এখনও আমার দিকে সন্দের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ! আমার পোষাকের দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস করতে পারছে না যে আমি কুরিয়ারের লোক হতে পারি !
আমি বললাম
-আসলে উনার নামে না ঠিক । পার্সেল এসেছে উনার মেয়ের নামে । উনার মেয়ের নাম তো নিশি ? তাই না ?
-হু !
-উনি আছেন ?
দারোয়ান কিছু যেন ভাবলো কিছুক্ষন । সন্দেহ এখনও যাচ্ছে না ।
আমি বললাম
-কি আছেন উনি ? দেখুন আমার আরো কাজ আছে । আরো কয়েক জায়গায় যেতে হবে । এই দেখুন কত পার্সেল দিতে হবে ।
এই বলে আমার পিছনে থাকা ব্যাগটার দিকে ইঙ্গিত করলাম । আবার বললাম
-দয়া করে মিস নিশিকে একটু ডাক দেন ।
-নিশি আফা আছে কি না তো এখনও জানি না । তয় উনার মায়ে আছে ।
-উহু । মা থাকলে হবে না । পার্সেল উনার নামে আছে । উনাকেই সেটা নিতে হবে ।
-আফা তো পড়া শুনা করে । ক্লাসে যাইতে পারে ।
-আরে না । আজকে তার ক্লা........।
কথাটা বলতে গিয়ে আটকে গেলাম । দারোয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম ।
নাহ ! বেটা ঠিক মত লক্ষ্য করে নাই আমি কি বলতে গেছি ।
নিজেকে একটু সাবধান করলাম ।
নিশির ক্লাস আছে কি না সেটা আমার জানার কথা না কিছুতেই ।
অপু মিয়া চুপচাপ বসে থাকো । এবং অপেক্ষা কর !
কথাবার্তা বল সাবধানে !
দারোয়ান আমাকে কিছুক্ষন দাড় করিয়ে রেখে বলল
-আচ্ছা আপনে খাড়ান । আমি ডাইক্যা আনি ।
আমার মনটা খুশি হয়ে উঠলো ।
এই তো নিশি এখনই আসবে ! আমি এইবার জিতে যাবো ।

আয় নিশি আয় !
আয় নিশি ডাক পারি !
আমার নিশি কোন বাড়ি !

কিন্তু কয়েক মিনিট পরে দেখি নিশি না দারোয়ানের সাথে এক মহিলা নেমে আসছে ! একটু ভাল করে লক্ষ্য করতে বুঝতে পারলাম তিনি হয়তো নিশির মা হতে পারে । চেহারায় তো খানিকটা মিল আছে !
দারোয়ান আমার কাছে এসে বলল
-আফায় ঘুমাইতাছে । আপনে উনার মার কাছে দেন !
আমি একটু লক্ষ্য করে দেখলাম নিশির মাও আমাকে খানিকটা সন্দের চোখে দেখতেছে ।
নাহ !
এই শার্ট টা পরে আসা মোটেই উচিৎ হয় নাই । যে কারো সন্দেহ হতে পারে । নিশির মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি কুরিয়ারের লোক ?
-জি ?
-কোন কুরিয়ার ?
-জি ! আমাজানবন !
-আমাজান বন ? এটা আবার কোন কম্পানি ? সুন্দরবন কুরিয়ার শুনেছি ! আমাজান বন তো শুনি নাই !
আমি খানিকটা অবাক হওয়ার ভাব করে বললাম
-কি বলেন আন্টি ? নাম শুনেন নাই ? সুন্দরবন তো বাংলাদেশে আর আমাজান বন হল পুরা বিশ্বের । আন্তর্জাতিক মানের কুরিয়ার কোম্পানি । বিশ্বের সব গুলো মহাদেশে আমাদের শাখা আছে ।
-আচ্ছা । ঠিক আছে । ঠিক আছে । আমাকে দাও ।
-জি না আন্টি ! এটা হবে না । আমাদের কোম্পানি আন্তর্জাতিক মানের ! এখানকার নিয়মও আন্তর্জাতিক মানের । যার নামে পার্সেল তাকেই দিতে হবে ! তা না হলে আমার চাকরী থাকবে না ।
-আরে তোমার কোম্পানী কি জানে নাকি কে নিলো বা না নিলো ! আমিই যদি নিশি হয়ে নেই তাহলে তো সমস্যা নাই !

কসমি মমিন ?
আপনে নিশি হইলে তো কামই হইতো !!
আমি অতি বিনীত স্বরে বললাম
-আন্টি এটা সম্ভব না কিছু তেই ! হয়তো আমি ধরা পড়বো না কিন্তু নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকো .....।
আমর কিছু নীতি কথা শুনিয়ে দিলাম ।
এতে দেখলাম আন্টির মানে নিশির মায়ের সন্দেহ আরো গাঢ় হল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি আসলেই কুরিয়ারের লোক তো ?
-জি আন্টি ! আইডি কার্ড দেখাবো ?
আমি খানিটা সঙ্কিত হলাম । কারন এখন যদি আন্টি আমার আইডি কার্ড দেখতে চায় আমি দেখাতে পারবো না । আসলে আমার নিজেরই খানিকটা সন্দেহ হচ্ছিল হয়তো আন্টি এখনই আমার আইডি কার্ড দেখতে চাইবে তাই নিজে থেকেই দেখাতে চাইলাম ।
এখান আল্লাহ ভরশা !
আমি তাকিয়ে আছি আন্টির দিকে । মুখটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতেছি ।
আসলে সব দোষ ঐ ফাজিল মেয়েটার । ঐ দিন রাতে বলা নাই কওয়া নাই আমাকে বলল
-তুমি আমাকে ভালবাসো না ?
-হুম বাসি তো !
-তাই ?
-হুম তো !
-আচ্ছা । তোমাকে আমি তিন দিন সময় দিলাম । এই তিন দিনের ভিতরে আমার সাথে তোমার দেখা করতে হবে !
-আরে আবার কেমন কথা হল ? চল কালকেই দেখা করি ।
-না ! আমি করবো না ! তুমি দেখা করবা । আমি বলবো না আমি কোথায় যাচ্ছি বা না যাচ্ছি । তুমি নিজে আমাকে খুজে বের করবা ! ঠিক আছে ?
-দেখ ! এটা কিভাবে হবে ? তুমি যদি নাই বল যে কোথায় আছো তুমি তাহলে আমি কিভাবে দেখা করবো ?
-এটাই তো ! যদি পারো ! ভাল ! দেখা যাক !
আমি কত ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কোন লাভ হল না !
তিন দিন সময় দিয়েছিল । বাকি দুই দিনে আমি সম্ভাব্য সব জায়গায়ই ঘুরে বেরিয়েছি কিন্তু ওর দেখা পাই নাই ! আজকে শেষ দিন ছিল । বাধ্য হয়ে এই পথে আসতে হয়েছে !

নিশির মা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! কিন্তু আইডি কার্ড দেখতে চাইলো না । আমার যখন মনে হল তিনি দেখতে চাইে না তখন আমি নিজেই আইডি কার্ড বের করার ভাব করলাম ।
আন্টি বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে । তুমি দাড়াও ! আমি নিশিকে পাঠাচ্ছি !!

আমি অকেক্ষা করতে থাকি । কিছুক্ষনের ভিতরেই নিশি হাজির । আমাকে দেখে খানিকটা অবাক আর বিশ্ময় ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । কিছু বলতে যাবে আমি চোখের ইশারায় আমি ওকে মানা করলাম ।
বেশ কিছুক্ষন সময় লাগলো আসলে কি হচ্ছে সেটা বুঝার জন্য ! যখন সব কিছু বুঝতে পারলো তখন ওর সারা মুখে একটা মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে পরলো !
ওকে বললাম
-ম্যাম আপনার নামে পার্সেল এসেছে !
-তাই ! কোথা থেকে ?
-একজন অতি আগ্রহে আপনার কাছে পাঠিয়েছে !
-কিভাবে বুঝলেন যে সে অতি আগ্রহে পাঠিয়েছে !
-না মানে আমাদের কুরিয়ারের এটা একটা রুলস । যে পার্সেল পাঠায় সাথে সাথে তার খানিকটা আবেগও দিয়ে দেয় ! এটাতে আমরা বুঝতে পারি কারটা কত জরুরী !
নিশি কিছু বলল না আর । কেবল মিসমিস করে হাসতে লাগলো ! আমি ওর কাছে একটা সিগনেচার বই এগিয়ে দিলাম ।
-এই খানে সই করেন ম্যাম !
নিশি সই করলো !
কিন্তু তাকিয়ে দেখি সেখানে সে নিজের নাম লিখে নাই । লিখছে "আই লাভ ইউ" !
আমি বললাম
-বাহ ! আপনি তো অনেক সুন্দর নাম সই করতে পারেন !
নিশি কেবল হাসলো ।

আমি হাটা দিলাম । আমার কাজ শেষ । এখানে থেকে আর নাভ নাই । আর আজ বিকালে তো দেখা হচ্ছেই !!
আমি যতবার পিছন ফিরে তাকালাম ততবারই দেখলাম নিশি আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
মুখে সেই মিষ্টি হাসিটা লেগেই আছে !



Click This Link
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×