somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি মেয়েটির বাড়ির সামনে বসে চিকেন স্যুপ খেতাম !!

২৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-মামা আর এক বাটি দিমু ?
আমি স্যুপ মামা দিকে একবার তাকালাম আর একবার তাকালাম আমার হাতের খালি বাটিটির দিকে ! ইতি মধ্যে দুই বাটি খেয়ে ফেলেছি । এটা নিয়ে তিন নাম্বার বাটি হবে !
আমি স্যুপ মামার দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত হাসি দিলাম ! বললাম
-এক দিনে কি এতো গুলো সহ্য হবে ?
-আরে হইবো মামা ! আমার স্যুপে কুনো ভ্যাজাল নাই ! কোন সমস্যা হইবো না ।
এই বলে মামা আরেক বাটি ভরতে লাগলো ! আমি বললাম
-দাও ! তিন নাম্বার বাটি !

আমি আমার তিন নাম্বার স্যুপের বাটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । আসলে ঠিক তিন নাম্বার বাটির জন্য না । আমি অপেক্ষা করছি তার জন্য । মেয়েটা আজকে আসছে না কেন ? আর যদি আধাঘন্টার মধ্যে না আসে তাহলে আমাকে চলে যেতে হবে । আর কত স্যুপ খাওয়া যায় এক দিকে । পেটের ভিতর এর মধ্যে কেমন একটা ডাকা ডাকি শুরু করেছিয়েছে ! অন্য দিন তো একটা বাটি খেতে না খেতেই মেয়েটি হাজির হয় । আজকে কেন বের হচ্ছে না ?
আসলেই মেয়েদের সময় জ্ঞানেরখুব অভাব ।
স্যুপ মামা আমাকে স্যুপের বাটি হাতে হাতে দিতে বলল
-মামা এইডার ভিতর ঝাল কম দিছি ! মজা পাইবেন ।
-হুম বুঝলাম । তা তোমার রেগুলার কাষ্টমার কই গেল ?
মামা আমার কথা শুনে আবার হাসলো ।
-হ ! আমিও তো খুজতাছি । আজকা আহে না ক্যান ?
-বাসায় আসে তো ?
-কি জানি কইতে পারি না !

আমার কেন জানি মনে হচ্ছে রাইসা বাসায় নেই । বাসায় থাকলে এতোক্ষনে নিশ্চই চলে আসতো ! অন্তত একটা বার জানলা দিয়ে উকি মারতো ! কিন্তু মেয়ের কোন খোজ নাই !

যে কেউ ভাবতে পারে যে মানুষ একবার বসেই পরপর তিনবাটি স্যুপ খেয়ে ফেলতে পারে তার নিশ্চই স্যুপ খুব পছন্দ ! কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা না । স্যুপ মামার নাম মনে হয় রমিজ ! এলাকায় এই স্যুপের দোকান টা খুব বেশি নতুন না ! আর আমার অবশ্য অত জানার আগ্রহও নাই ! আমার চিকেন কর্ন স্যুপ খুব একটা পছন্দও না ! আমি ফুসকা খাই । মাস দুয়েক আগের কথা । বাসা থেকে বের হতে যাবো বড় আপু আমার হাতে একটা বাটি দিয়ে বলল
-আসার আমি যেন এক বাটি স্যুপ নিয়ে আসি । খানিকটা বিরক্ত হলেও কিছু বললাম না । বাটি হাতে নিয়ে বের হয়ে এলাম ।

মামার স্যুপের দোকানটা খুব বেশি বড় না ! একটা বাড়ির সিড়ি ঘরের সামনে একটা বড় নীম গাছ রয়েছে তার নিচে ছোট্ট একটা ঘর ! সাময়িক ! কেবল সন্ধ্যা বেলা বসে । কয়েক ঘন্টার জন্য ! সিড়ি ঘরের আসে পাসেই কয়েকটা বেঞ্চ পাতা । মানুষ জন ওখানে বসে স্যুপ খায় ! আমিও ওখানে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম স্যুপ নেওয়ার জন্য !
অপেক্ষা করছি ঠিক এমন সময় আমার বুকের মাঝে একটা ধাক্কা লগলো !
লাম্বায় আমার থেকে একটু ছোট হবে ! কালো জিন্স পর আর কালো টিশার্ট পরা এক মেয়ে ! একদম ঝড়ের মত এল !
এসেই সবাই কে উপেক্ষা করে মামার দিকে একটা বড় বাটি বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-জলদি একবাটি স্যুপ দেন ! একটুও দেরি করতে পারবো না !
এমনিতেই বেশ ভিড় ছিল ! আমার মত অনেকেই অপেক্ষা করছিল ! কিন্তু দেখলাম মামা সবার আগে মেয়েটাকেই স্যুপ দিয়ে দিল !
মেয়েটি যেমন ঝড়ের মত এসেছিল ঠিক তেমন করে চলে গেল !

মেয়েটি যাওয়ার পরে আমার একটু হুস ফিরলো ! এতোক্ষন আমি কি দেখলাম ! আর কি ভাবছিলাম !
রাতের বেলা কেন জানি মেয়েটার কথাই বার বার ঘুরে ফিরে মনে আসতে লাগলো ! ঠিক মত বুঝলাম না ।
পরদিন ফুচকা খাওয়া বাদ দিয়ে কেন জানি স্যুপ খেতে হাজির হয়ে গেলাম !
অপেক্ষা করতে লাগলাম মেয়েটার জন্য !

হাতের স্যুপের বাটিটাও প্রায় শেষ হয়ে আসছে । এখনকি করি ?
মামার দিকে তাকাতেই বলল
-মামা ! আর এককাপ হবে নাকি ?
-দাড়াও মামা ! আগে এইটা শেষ করে নেই !
-মামা ! আজকা মনে হয় আফামনি আর আইবো না !
-হুম !
আসলেই রাইসা আজকে মনে হয় আর আসবে না ! আমি যখন ধরেই নিলাম যে রাইসা আর আসবে না ঠিক তখনই রাইসা এসে হাজির ! বাইরেই গিয়েছিল । পোষাক দেখেতো তাই মনে হচ্ছে ! হাতেও দেখি বেশ কয়েকটা ব্যাগ !
আমার দেখেই কি যেন ভাবলো ! তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে আমি যে বেঞ্চে বসে স্যুপ খাচ্ছিলাম সেখানে বসে পড়লো ! তারপর মামাকে বলল
-স্যুপ মামা ! একবাটি স্যুপ দিন ! ঝাল বেশি করে দিবেন ।
-আফা ! কই গেছিলেন ?
-এই একটু শপিংয়ে । কেন মামা ? কেউ কি খোজ করছিল আমার ?
এই কথা বলে রাইসা আমার দিকে তাকালো ! একটু যেন মিচকি হাসলো !
স্যুপের বাটি হাতে নিতে নিতে আমার দিকে তাকিয়ে রাইসা আসতে করে বলল
-ক বাটি খেয়েছেন ?
-আমি ?
-হুম !
-এই তো শুরু করলাম মাত্র !
-তাই ? আমি তো জানি তিন বাটি চলছে !
আমি খানিকটা অবাক হয়ে তাকাল রাইসার দিকে ! এই মেয়েটা কিভাবে সব কিছু জেনে যায় !
আমি যে রাইসার জন্য অপেক্ষা করি এটা তো ওর জানার কথা না । দোকান টা যেহেতু ওদের বাসার সামনে সেহেতু যে কেউ ই এখানে স্যুপ খেতে আসতে পারে সেই হিসাবে আমিও আসি ! কিন্তু কদিন থেকেই আমার কেন জানি মনে হচ্ছে রাইসা ঠিকই টের পেয়েছে যে আমি কেবল ওর জন্যই এখানে আসি !
মামা আবার বলে নাই তো ? নাহ ! মামার তো বলার কথা না ! অবশ্য মামাও কদিনের ভিতর টের পেয়ে গেল আমার মনের কথা ! অন্তত আমার আচরন তো তাই বলছিল ! মামাকে মেয়েটার ব্যাপারে টুপটাক কথা বার্তা জিজ্ঞেস করতাম ! মামাও হেসে জবাব দিতো !

দুই সপ্তাহ আগের কথা ! আমি সন্ধ্যা বেলা বসে আছি । টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল এটা দেখে কাস্টমারও কম ছিল !
কয়েক মিনিট পরেই রাইসা এসে হাজির !
আজকে দেখলাম ওর হাতে কোন বাটি নাই । খালি হাতে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ।
-আজকে স্যুপ খাইবেন না আফা !
-নাহ ! আজকে খাবো না ! এমনি এলাম ।
এই বলেই রাইসা আমার পাশ দিয়ে আস্তে করে চলে গেল ! যওয়ার সময় আস্তে করে বলল
-এতো স্যুপ খাওয়া ভাল না !
আমি রাইসার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম । স্যুপ মামার দিকে তাকিয়ে দেখি সেও মিটমিট হাসতেছে !
আমি মামার দিকে তাকাতেই মামা বলল
-কাম হইতাছে মামা !
-কি বল মামা ?
-মামা ! আপনি ঠিকই জানেন আমি কি বলতাছি ! লাইগ্যা থাকেন ! সিগনাল গ্রিন !
তার পর থেকেই রাইসা সাথে আমার চোখাচোখির খেলা চলতে শুরু করলো ! রাইসা আসতো ! আমি স্যুপ খেতাম । স্যুপ খেতে খেতে ওর দিকে তাকাতাম । ওর আমার দিকে তাকাতা ! ওর আমার দিকে তাকাতো !
আর আজকে এই ব্যাপার !

আমি একটু সংকুচিত হয়ে বসলাম !
রাইসা বলল
-সিরিয়াস লি ? এখানে বসে তিন বাটি স্যুপ কিভাবে খেলেন ? মানে আপনার মত রোগা পাতলা একজন মানুষ কিভাবে তিন বাটি স্যুপ খেয়ে ফেলল ! আসলেই সরুর পেটে গরু আটে !
আমি কেবল রইসার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন ! রাইসা এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমাকে অনেক দিন আগে থেকেই চিনে !
কিন্তু সমাস্য হচ্ছে এই মেয়েটা এতো খবর কিভাবে জানে ?
আর আমি যে তিন বাটি স্যুপ খেয়েছি এটাই বা মেয়েটা কিভাবে জানে ?
জানুক ! যে ভাবে জানে জানুক !
আমি বললাম
-আমি তিন বাটি স্যুপ খেয়েছি তোমাকে কে বলল
-কিভাবে জানি সেটা তো বড় কথা না ! ক্থাটা সত্য কিনা বলেন ?
-হুম !
-কেন ?
আমি কোন জবাব দিলাম না ! রাইসা আবার বলল
-আমার কি মনে হয় জানেন ? আপনি ইতিহাসে প্রথম একজন যে কিনা মেয়ে পটানোর জন্য বসে বসে স্যুপ খান ?
-মানে কি ?
-মানে কিছু না ! আমার খাওয়া শেষ ! আমি যাই !
এই বলে রাইসা উঠে গেল । মামার কাছে বাটি দিতে দিতে বলল
-আজকে আমার স্যুপের বিল তানভীর সাহেব দিবে !
তানভীর ?
এই মেয়ে আমার নাম জানে কিভাবে ?
আশ্চার্য !
রাইসা আমার দিকে আবার তাকিয়ে একটু হেসে চলে গেল !
আমি খনিক্ষন বসে রইলাম চুপ করে । কি হচ্ছে ?
কেমন করে হচ্ছে ?
মামার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি হল এটা মামা ?
-মামা ! আমি আগেই কইছিলাম ! সিগনাল গ্রিন !
আমি বিল দিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দিলাম !

আসলেই মনে হচ্ছে সিগনাল গ্রিন !! সিগনাল গ্রিন !

Click This Link
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাগতম ইরান

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

ইরানকে ধন্যবাদ। ইসরায়েলকে দাত ভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য।

হ্যাঁ, ইরানকে হয়তো এর জন্য মাসুল দেওয়া লাগবে। তবে, কোন দেশ অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপে করবে আর সেদেশ বসে থাকবে এটা কখনোই সুখকর... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×