somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ করে বিবাহিত হওয়ার গল্প

২৭ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গাঢ় অন্ধকারকে চিরে এগিয়ে চলছে পূর্বাশা পরিবহনের হেড লাইট । ঠিক সামনের সিটটাতে বসেছি, তাই সব কিছু পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি ! প্রথম প্রথম একটু ভয় ভয় লাগছিল । এমন সামনের সিটে আর বসা হয় নি আগে ।
সামনের আসা কোন গাড়ি দেখলেই বুকের ভিতর একটা কাঁপন অনুভুব করছিলাম । বারবার মনে হচ্ছিল ঠিক মত পার হতে পারবে তো ?
পরে অবশ্য ঠিক হয়ে গেছে ! এখন একটু কম ভয় লাগছে । কিন্তু মনের ভিতর অন্য একটা অস্থিরতা রয়েই গেছে ।

সকাল বেলা যখন বড় খালা ফোন দিয়ে জানালো যে নাদিয়ার বিয়ে ঠিক হয় গেছে কেন জানি একটু অস্থিরই মনে হল ! তারপর খালাকে যখন বললাম যে নাদিয়া রাজি ?
খালা বলল
-হুম ! ও তো এমন কিছু বলল না । মানাও করলো না ! আর ছেলেও তো খারাপ না !
-তাই বলে এতো জলদি ! ওর এখনও পড়াশুনাও শেষ হয় নি !
-আর বলিস না ! আমাদেরও ইচ্ছা ছিল না । কিন্তু পাত্র পক্ষে বলল যে ওরা কেবল কাবিন করে রাখতে চায় । পড়াশুনা শেষে, পরে উঠিয়ে নিবে !

আমি আর কোন কথা বলতে পারলাম না !
বারবার মনে হচ্ছিল নাদিয়া রাজি ?
আসলেই রাজি ?
নিশ্চিত হওয়ার জন্য নাদিয়াকে ফোন দিলাম !

-কি রে কি শুনছি ?
-কি শুনছেন ?
-তুই নাকি বিয়েতে রাজি ?
আমার এই কথার কোন চট করে কোন জবাব দিলো না ও ! আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম !
-কি রে কথা বলছিস না কেন ? রাজি তুই ?
-বাবা রাজি !
-তোর বাবা তো আর বিয়ে করবে না । তুই বিয়ে করবি ! তুই রাজি কি না বল ?
-না রাজি হওয়ার মত তো কিছু নাই । দেখতে শুনতে ভাল । ভাল চাকরি করে । সমস্যা কি ? একদিন তো বিয়ে করতেই হবে সুতরাং করেই ফেলি ! আর সব চেয়ে বড় কথা ....
এই বলে নাদিয়া একটু চুপ করে গেল !
আমি বললাম
-কি সব চেয়ে বড় কথা ?
-সব চেয়ে বড় কথা সে আমার কথায় মূল্য দেয় ! আমি যা বলব সে শুনবে !
বুঝলাম শেষ কথাটা নাদিয়া আমাকে উদ্দশ্য করেই বলল । আমি বললাম
-বাহ ! এরই ভিতর এতো কিছু জেনে গেছিস ?
-হুম ! কয়েক দিন থেকেই তো কথা হচ্ছে !

এতো কিছু হয়ে গেল আর আমি কিছু জানতেই পারলাম না ! যে মেয়ে দিনে কম করে হলেও আমার কাছে ১০ বার ফোন দিতো । ফোন দিয়ে নানান প্যাচাল পাড়তো সেই মেয়ে নিজের বিয়ের কথাটা আমার কাছ থেকে চেপে গেল !

মেজাজ টা বড় খারাপ হল ! ফোন কেটে দিলাম ! ভাবলাম জাহান্নামে যাক সব ! ওর বিয়ে হয়ে গেলে আমার কি ?
অফিসের কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলাম । কিন্তু কিছুতেই কোন কাজে মন বসাতে পারলাম না । মনে হচ্ছিল কি যেন আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ।
এটো দিনের পরিচিত একজন হুট করেই অপরিচিত হয়ে যাবে । রাতের বেলায় টিকিট কেটে গাড়িতে উঠলাম ! কেন উঠলাম জানি না !

বাস চলছে দুর্বার গতিতে । সাই সাই করে আশে পাশের ঘরবাড়ি গাছপালা ফেলে এগিয়ে চলছে । আমি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনে ! কোন দিকে তাকিয়ে আছি বা কোন কিছু দেখছি কি না জানি না তবুও তাকিয়ে আছি ! এই বাসের ভিতর ঘুম আসছে না ! আমি পুরানো দিন গুলোর কথা ভাবছি !

বংশের ভিতর সব চেয়ে বড় ছেলে হওয়াতে আমার সব কিছুর উপর একটা আলাদা প্রভাব ছিল ! আমার চাচা খালা সবার কাছেই আমি ছিলাম প্রিয়পাত্র । বিশেষ করে বড় খালার কাছে । আর পাশাপাশি বাড়ি হাওয়ার কারনে বড় খালার বাড়িতে যাওয়া আসাও ছিল বেশি !
আমার যখন ১০ বছর বয়স তখন নাদিয়ার ছয় !
তখন থেকেই আমার খেলার সাথী সে। তবে ওর সাথে খেলা কম করতাম আর ওকে মারতাম বেশি ! আমার হাতে মার খেতে খেতে ওর অবস্থা খারাপ হয়ে যেত ।
মা বাবার কাছে বিচার দিয়েও খুব একটা লাভ হত না !
এমন কি আমি যখন ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছি তখনও নাদিয়া আমার হাতে মার খেয়েছে। মাঝে মাঝে চুলের মুঠি ধের ঝাকি দিতাম ! ও "মাগো" বলে চিৎকার দিতো । আর আমি দাঁত বের করে হাসতাম !
আমার কোন কথার অবাধ্য হলেই হয় ওর খবর ছিল । এতো মার খাওয়ার পরেও নাদিয়া ঠিকই আমার পিছন পিছন ঘোরাঘুরি করতো ! কেন করতো কেন জানে ?
বাসায় ভাল কিছু রান্না হলেই বাটিতে করে নিয়ে আসতো আমার জন্য !

একদিনের কথা মনে আছে । ভুনা চিংড়ি মাছ আমার খুব পছন্দের । একদিন দুপুরে ভাত খেতেছি দেখি নাদিয়া বাটিতে কিছু নিয়ে এসেছে । আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-নেন আপনার জন্য মা পাঠিয়েছে ।
আমি বাটি নিয়ে দেখি চিংড়ি মাছ ভুনা । আমি মুখে দিয়েই আবার থু দিয়ে ফেলে দিলাম ! বললাম
-ইয়াক ! এতো লবন কেন ? নিশ্চই তোদের বাড়ির বুয়া রেধেছে ?
নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ গম্ভীর হয়ে গেছে । আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকেই দৌড় দিয়ে রুম ছেড়ে চলে গেল । আমি কিছু বুঝতে পারলাম না ।
পরে জানতে পারলাম যে চিংড়ি টা নাদিয়া নিজে রেঁধেছিল ! আমাদের বাসা থেকে এসে নাকি ও নিজের হাতে সব তরকারি নর্দমায় ফেলে দিয়েছে !
শেষে আমি নিজের গিয়ে ওকে শান্ত করি !


বাস থেকে যখন নামলাম তখন প্রায় ছয়টা বেজে গেছে ! খালাদের বাড়ির সামনে এসে দেখি সারা বাড়ি জেগে আছে । দুই দিন পরেই বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে হচ্ছে । এখন কি ঘুমালে চলে ?

আমার নিজের বাসায় যাওয়ার কথা আগে কিন্তু আমি নাদিয়াদের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম ! আমি বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দেখলাম খালু বের হয়ে এল ! আমাকে দেখে এগিয়ে এলেন ! কোনার ঘর থেকে দেখলাম নাদিয়াও বের হয়ে এল ! কাছে এল না কেবল দুর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমার কেন জানি মনে হল ওর মুখে সুক্ষ একটা হাসির রেখা !

খালু আমার দিকে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন । বললেন
-যাক তুই এসেছিস আমার ঝামেলা একটু কমবে ! এতো কিছু কি আমি আর তোর বাপ মিলে সামলাতে পারি ?
আমি খালুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
-খালু আপনি ওদের মানা করে দেন !
-মানে কি ? কাদের মানা করে দিবো ?
খালু মনে হয় আমার কথা ঠিক মত বুঝতে পারলো না । আমি বললাম
-নাদিয়া কে আমি বিয়ে করবো ! আপনি ওদের মানা করে দেন !
খালু সাহেব খানিকটা অবাক বিশ্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন । ঠিক যে বিশ্বাস করতে পারছে না । আবার আমার চেহারার গাম্ভীর্য দেখে ঠিক অবিশ্বাস করতে পারছে না ।
আমি বললাম
-আমি বাসায় যাচ্ছি ! আব্বাকে পাঠাচ্ছি !

আর কিছু না বলে ঘুরে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম । তখনও খালু সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে ।


বাসায় সব কিছু মেনেজ করতে খুব বেশি বেগ পেতে হল না । সব থেকে কাজ হল খালার ইচ্ছা । খালারও নাকি আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল কিন্তু আত্মীর ভেতরে আত্মীয় হবে এইজন্য তিনি কিছু বলেন নি । খালু সাহেবও অরাজি ছিল না ।কিন্তু বর পক্ষকে কি বলবে তাই নিয়ে চিন্তত ছিল !


ঠিক দুই দিনের মাথায় নাদিয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল ! সব কিছু ঠিক ছিল কেবল বরের জায়গার আমার নাম বসে গেছে ! বাসর রাতে যখন রুমে ঢুকলাম দেখি নাদিয়ে ইয়া বড় এক ঘোমটা দিয়ে বসে আছে খাটের উপরে ! এই দিনে নাদিয়ার সাথে কথা হয় নি একদম । আমাকে কেন জানি একটু এড়িয়েই চলেছে সব সময় ! আমি ওর পাশে বসতে বসতে বললাম
-কি তুই ঐ বদ লোকের সাথে এতো কি ইটিশ পিটিস করেছিস ?
আমার কথায় নাদিয়া নিজেই ঘোমটা খুলে ফেলল !
-কি বললেন ? আমি ইটিশ পিটিস করেছি ?
-তা না হলে তুই এটো কিছু জানলি কিভাবে ?
-আপনাকে কেন বলবো ?
-কেন বলবো মানে ?
আমি এই বলে ওর চুলের মুঠি ধরতে গেলাম তখনই একটা অবাক করা ঘটনা ঘটলো !
নাদিয়া আমার হাত চেপে ধরে বলল
-এই খবরদার কিন্তু ! আমি কিন্তু এখন আর সেই নাদিয়া নেই !
আমি আসলেই খানিকটা অবাক হয়ে গেলাম । কি বলে এই মেয়ে ! মানে কি ? বললাম
-মানে ?
-মানে বুঝেন না ? আমি এখন আপনার কাজিন না ! আমি আপনার বউ ! এটা মনে রাখেন !

আমি কিছুক্ষন নাদিয়ার দিকে আসলেই তাকিয়ে রইলাম । এই কয় ঘন্টায় এই মেয়ের কত পরিবর্তন !
নাদিয়া বলল
-আর এখন থেকে আমাকে তুই করে বললেন না !
-কি বলতে হবে ? আপনি ?
-তুমি করে বলবা ? আম তোমাকে তুমি করে বলবো !
-থাপড়িয়া তোর দাঁত খুলে ফেলবো !
নাদিয়া আমার দিকে কেবল তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! একভাবেই তাকিয়ে রইলো ! আমি নিজের ভিতরেই একটা অস্বস্থি বোধ করলাম !

আমি তখনই ওর চেহারাটা ভাল করে দেখলাম ! লক্ষ্য করলাম নাদিয়াকে সুন্দর লাগছে । বেশ সুন্দর লাগছে । ও যে এতো সুন্দর আগে লক্ষ্য করি নি তো ! আমি আস্তে করে ওর হাত ধরতে গেলাম !
তারপর ..........


তারপর কি হল নাই শুনলেন । জামাই বউ বাসর রাতে কি করবে তা আপনাদের কেন বলবো ? ফুটেন ......।


Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×