somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু গল্পঃ আমার ফোনটা পাচ্ছি না, একটা কল দিবা ?

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শালার কপালই খারাপ !
তিন তিন বার বললাম ভালবাসি ! আর ঐ মেয়ে শুনে না ! শুনে না মানে একদম শুনে না ! বুঝলাম তুমি গান ভালবাস তাই বলে সারাক্ষন কানের ভিতর হেড ফোনে গুজে গান শুনতে হবে ?
ফাজিল মেয়ে !
শুধু ফাজিল না ফাজিলের চুড়ান্ত !!

-এই আমাকে কিছু বললা ?
-না ! না ! তোমাকে কিছু বলবো কেন ? কিছু বলি নাই ! কিছু বলি নাই তো !
আমি মিমির দিক থেকে চোখ সড়িয়ে সাব্বির দের দিকে তাকালাম । শয়তান গুলো মুখ বুজে হাসতেছে । আমি এতোক্ষন মিমি কে যা যা বলেছি সব ওরা শুনেছে কিন্তু যাকে বলেছি সেই কিছু শুনে নাই !
মহারানী কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনতেছে !
এই লাইব্রেরীর ভিতরে কি গান শুনার জায়গা ?
লাইব্রেরী হল পড়া লেখা করার জায়গা ! আর এই বদ মেয়ে গান শুনতেছে !
-এই অপু !
-হুম !
আমি মিমির দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! আমাকে বলল
-একা একা কি কি বিড়বিড় কর ?
-কিছু না তো ! একটা লাইন মুখস্ত করার চেষ্টা করছি !
মিমি আমার দিকে আর একবার ভাল করে তাকালো ! তারপর বলল
-কোথায় ? তোমার সামনে তো কোন বই নাই ! তাহলে কি দেখে মুখস্ত করতেছ ?
আসলেই তো ! আমার সামনে তো কোন বই ই নাই !
-না মানে ! লাইনটা আগেই পড়ে ছিলাম তাই মনে করার চেষ্টা করতেছি !
-অপু ! যদি মনেই থাকে তাহলে মুখস্ত করার দরকার কি ? তোমার মাথা কি দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে !

আমি কিছু বলতে গিয়ে দেখলাম লাইব্রেরীয়ান আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে ! এই অর্থ আমাকে এখন চুপ করতে হবে ! কোন কথা বলা যাবে না ! আমি চুপ করে গেলাম । বেশি কথা বলতে গেলে আমাকে লাইব্রেরী থেকে বের করে দিতে পারে !


-কি মামা ? শুনলো না ?
লাইব্রেরী থেকে বের হওয়ার সময় দেখি সাব্বির আর সুমন দাড়িয়ে আছে ! মুখে একটা খোচা মারার হাসি!
সুমন বলল
-তুমি যে কিভাবে কথাটা বললি ! ভাগ্য ভাল মিমি শুনে নাই ! শুনলে আজকে তোর খবর ছিল !
আমি বললাম
-মানে কি ? খবর ছিল কেন ? কি খবর ছিল ?
-না মানে তুই যেভাবে তোঁতলাতে তোঁতলাতে বলছিলি ভাগ্য ভাল যে শুনতে পাই নাই !

আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না ! কারন কথা সত্য ! আসলেই আমি যেভাবে ওকে প্রোপোজ করছিলাম তাতে যে কেউ যে কোন কিছু করে ফেলতে পারতো ! এমন কি আমার দিকে বই খাতা জামা জুতা ছুড়ে মারারও সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না !

আচ্ছা এমন কেন হয় ? আমি এর আগেও ব্যাপার টা খিয়াল করে দেখেছি ! কেবল মিমির সামনেই আমার এমন অবস্থা হয় ! তাও আবার সব সময় না ! যেদিন আমি ঠিক করে রাখি যে ওকে আজকে মনের কথাটা বলতে হবে ঠিক সেদিনই এমনটা হয় !
হাতপা কাঁপা শুরু করে ! তোঁতলাতে শুরু কররি !
-শোন মামা তোকে একটা বুদ্ধি দেই ! কাজে লাগবে !
-কি বুদ্ধি ?


আজকে মোটামুটি ভাবে আমি প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি ! আজকে কাজ হবে ঠিকই ! আজকে আমাকে সফল হতেই হবে !
পারবো তো ?
নিজের মনের কাছে নিজেই খানিকটা কনফিউজ হয়ে গেলাম !
যদি আবার গত দিনের মত হয় ?
তখন ?
এর আগের আগেও আমি বেশ কয়েকবার মিমি কে বলার চেষ্টা নিয়েছি কিন্তু প্রত্যেক বারই কোন না কোন ঝামেলা হয়েছে ঠিকই !

সব চেয়ে বড় ঝামেলা হয়েছিল যেদিন ওকে একটা চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলাম ! ভাগ্য ভাল যে টাইপ করে পাঠিয়েছিলাম নয়তো খবরই ছিল ! আমার অবস্থা কি হত কে জানে ?
কাকে গার্লফ্রেন্ড বানাতে চাইছিলাম আর কে আমার গলায় ঝুলে পড়তো !

কয়েক দিন আগে মিমিকে একটা চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলাম । অনেকে তো বুদ্ধি করে বই বা ডায়রীর ভিতর চিঠি দেয় আমি আবার বেশি বুদ্ধিমান তো এসবের ভিতর না গিয়ে ঠিক করলাম যে সরাসরি মিমির ঘরে চিঠি পৌছে দিবো !
যা ভাবা তাই ! আমি আমার মনের কথা গুলো টাইপ করে একটা কাগজে লিখে হাজির হলাম মিমি যে ঘরটাতে থাকে সেই ঘরের সামনে ! মিমির ঘরটা দুইতালায় ! ঘরটা ওদের হোস্টেলের পেছন পাশে ! একটা বারান্দা আছে দেওয়ালের কাছেই ! আমি কাগজটা দলা করে সেই বারান্দা বরাবর ছুড়ে মেরেই দৌড় দিলাম !

আমি নিশ্চিত ছিলাম মিমি নিশ্চিত বুঝে যাবে যে কে ওকে চিঠি পাঠিয়েছে ! কিন্তু আমি এই কথা ভুলে গিয়েছিলাম যে ওর রুমে ও ছাড়াও আরো দুইজন থাকে ! সুমি আর কলি ! তার ভিতর কলিকে সবাই একটু এড়িয়ে চলে ওর উগ্র স্বভাবের জন্য !

পরদিন ক্লাসে এসে যা শুনলাম তাতে আমার চোয়াল ঝুলে গেল । সবার মুখেই কেবল এক কথা ! কলিকে কে জানি প্রেম পত্র দিয়েছে !
গতকাল রাতে কলি বারান্দায় বসে বসে গান শুনছিল । হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা কাগজের দলা এসে নাকি কলির গায়ে লাগে ! কাগজ খুলে দেখে সেখানে নাকি টাইপ করা একটা প্রেম পত্র !

ওকে যে কেউ প্রেম পত্র দিতে পারে এটা নাকি কেউ ভাবতেই পারে নাই ! আর সব থেকে বিপদের কথা এইটা কলি নাকি তাকে খুজতেছে । ঝাড়ি দেওয়ার জন্য না ! তার প্রোপোজাল এক্সসেপ্ট করার জন্য ! কলি নাকি সারা রাত চিঠি বুকে নিয়ে শুয়ে ছিল !
কি সর্বনাশের কথা !!
তবে এই টুকু আশার কথা যে আমি চিঠির শেষ নাম লিখি নি !
লিখলে কি হত !
ভাগ্যভাল যে লিখি নি !

যাই হোক ! আজকেই একটা দফারফা করতে হবে ! চমৎকার বুদ্ধি পেয়েছি ! মুখেও বলা লাগবে না ! খালি একবার ফোন দিলেই হবে ! সুমন কালকে ভালই বুদ্ধি দিয়েছিল !
না জানি, এডটা কে বানাইছিল ! তারে কাছে পেলে এই সময়ে ১০ কেজি পেয়াজ কিনে দিতাম !

-এই মিমি !
হোস্টেল থেকে সবে মাত্র বেরিয়েছে ! বিকেল বেলা মিমি প্রতিদিন হাটতে বের হয় আমি জানি ! কোন দিন একা আবার কোন দিন বন্ধুদের সাথে । ভাগ্য ভাল যে আজকে একাই বের হয়েছে ! আমার ডাক শুনে ফিরে চাইলো আমার দিকে ! তারপর আমার দিকে এগিয়ে এল হাসি মুখে ! যথা রীতি কানে হেড ফোন ! এই মেয়েটা কি গান ছাড়া একটুও থাকতে পারে না ?
আমার কাছে এসে মিমি বলল
-এই খানে কি ?
-কিছু না ! এই দিকে আসতে মন চাইলো । ভাবলাম তোমার সাথে আজকে একটু হাটি !
-বাহ ! চল তাহলে !
-নদীর ঐ দিকটাতে যাবে ?
-চল !
আমরা দুজন হাটতে লাগলাম ! মনে মনে ভাবছি এখন কি করবো ! এখনই বলব ?
নাকি ? আর একটু পরে !
-কি চুপচাপ কেন ?
-নাহ ! এমনি ! তুমি কি গান শুনছ ?
-কোন গান না ! এখন তোমার সাথে আছি না ! তোমার সাথে কথা বলি !
এখনই সুযোগ ! আমি বলে উঠলাম
-এই সেরে রে !
-কি হল ?
-আমার ফোন টা পাচ্ছি না !
-কি বল ? কোথায় রেখেছিলে ?
-কি জানি ! এখানে আসার আগে তো আমার কাছেই ছিল !
-তাহলে ?
-একটা ফোন দিবা ?
-হুম !
এই কথা বলেই মিমি ফোনের ডায়াল ঘুরাতে লাগলো !
আমার অপেক্ষা করতে লাগলাম ! কখন ফোন বেজে উঠবে ? কখন বেজে উঠবে ?
এই তো ফোন বেজে উঠেছে !

কিছুক্ষন কোন কথা নাই ! যাক কাজ হচ্ছে মনে হয় ! মিমির কানে হেড ফোন ! সে গান শুনতে পারছে !
রবিবাবুর ভালবাসি ভালবাসি !
আমি আমার পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম ! মিমি ফোন টা দেখেও কানে হেড ফোন লাগিয়ে আমার ওয়েলকাম টিউন শুনতে লাগলো !
ভালবাসি ! ভালবাসি !
এই সুখে ........
কাছে দুরে ...

আমি মনে মনে ঠিক করতে লাগলাম এর পর কি বলব আমি ! মিমিইবা কি বলবে ?
-আরেএএএএএএ !!
আমি খানিকটা চমকে উঠলাম ! "আরেএএএএ" তো বলার কথা না ! তাও আবার এতো জোরে ! মিমি "আরেএএএ" কেন বলছে ! আমি কিছু না বুঝে বলললাম
-আরে কেন বলছ ?
-জানো এই গানটা আমি কত খুজেছি ! মাই টিউন বানাবো বলে ! গানটার কোড নাম্বার কত ? তোমার জানা আছে ! প্লিজ বল না ! বল না !!
আমি খানিকটা মুখ হা করে মিমির দিকে তাকিয়ে রইলাম !
দুর !!
-এই বল না !
-দুই বার স্টার চাপ দাও ! হয়ে যাবে !
-আরে তাই তো ! দাড়াও !
মিমি আবার আমাকে কল দিয়ে কি মোবাইল টেপাটেপি করতে লাগলো !
কিছুক্ষন পরে আমাকে বলল
-এই আমাকে ফোন দাও তো ! দেখো তো গানটা চালু হয়েছে নাকি ?
-হুম ! দেখতাছি !
আমি বিরক্ত মুখে ফোন দিলাম !
শালা কি কাজে আসলাম ! আর কি হল !

এই এড টা কে বানাইছে একবার পাইলে হয় ! মাইয়াদের এতো সহেজ প্রোপোজ করা যায় ! বেটা কে কাছে পেলে ১০ কেজি পিয়াজ কাটতে দিতাম ! বেটা তখন মজা বুঝতো !!
নাহ ! নতুন পদ্ধতি বের করতে হবে !
নতুন পদ্ধতি !!

(গ্রামীন ফোনের একটি বিজ্ঞাপন দ্বারা অনুপ্রানীত)


ওয়ার্ডপ্রেস লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১১
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×