পরীবাগের এই ওভার ব্রীজটার উপর প্রায়ই কাপলদের দেখা যায় একে অপরের হাত ধরে জ্যামে দাড়িয়ে থাকা সারি সারি গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ চোখে । তখন ছেলে মেয়ে দুজনের চোখেই এক রকম মুগ্ধতা দেখা যায় । মুখে লেগে থাকে এক চিলতে হাসি ।
আমি আজও এই মুগ্ধতা আর হাসির রহস্য ঠিক মত বের করতে পারি নি । নিজে অনেক সময় দাড়িয়ে থেকেছি । সারি সারি গাড়ির দিকে তাকিয়ে থেকেছি কিন্তু আমার চোখে কোন মুগ্ধতা আসে নি । মুখে একচিলতে হাসিও আসে নাই । তার বদলে গাড়ির হর্ন গুলো আমাকে করেছে বিরক্ত । অবশ্য তখন আমার হাত ধরার জন্য কোন মেয়ে ছিল না পাশে । তাই হয়তো মুগ্ধতা আসে নি ।
কিন্তু আজকে তো রয়েছে । আজকে আমি সত্যি বুক ফুলিয়ে বলতে পারি পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মেয়েটি আমার পাশে রয়েছে । এতো দিন আমি যেমন অন্য কাপলদের এই ওভার ব্রীজটার উপর দাড়িয়ে থাকতে দেখতাম আজকে তারা দাড়িয়ে থাকতে দেখছে । যদি আমার পাশের মেয়েটি আমার গার্লফ্রেন্ড বা প্রেমিকা না ।
কেবলই বন্ধু । তাও আবার খুব কাছের বন্ধু না । হু কেয়ার্স ম্যান !!
আমি মেয়েটির পাশে আসি এটাই বড় কথা !
আমি অহিনের দিকে তাকালাম । মেয়েটি সেই কখন থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে ।
আশ্চার্য এই রাস্তার দিকে তাকানোর কি আছে ? একটু আগে সিগনাল জ্যামে অনেক গাড়ি দাড়িয়ে ছিল এখন তাও নাই । এই মেয়ে কি কোন দিন ওভার ব্রীজ থেকে নীচের রাস্তা দেখে নাই ? এভাবে তাকিয়ে আছে কেন ? আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই অহীন বলল
-এখান থেকে দৃশ্যটা কতটা অন্য রকম লাগে ! তাই না ?
-অন্য রকম ? হুম ।
-জানো যখন গাড়ীর ভিতর থাকতাম । এরকম ওভার ব্রীজের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় খুব ইচ্ছা করতো এই রেলিং ধরে দাড়াতে !
-তাই নাকি ?
-হুম । আমি যখনই এরকম এরকম ব্রীজের নিচ দিয়ে যেতাম গাড়ির জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে থাকতাম । ওখানে দাড়িয়ে থাকা লোক গুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবতাম ওরা কি দেখছে ? উপর থেকে ভাবতাম ওরা আমাদের দেখে কি মনে করছে ।
আমি একটু হাসলাম অহিনের কথা শুনে । মেয়েটির কথা গুলো শুনে একটু অবাকই লাগছে । অহীনের মত মেয়ের চিন্তা এরকম হতে পারে আমি ঠিক চিন্তা করি নি । যখন ওকে ওর ব্ল্যাক পাজেরো থেকে নাম তে দেখতাম কেন জানি অহীনকে সম্পুর্নই অন্য জগতের মানুষ মনে হত । মনে হত যেন ঐ জগতে আমার মত মানুষের কোন এন্ট্রি নাই । আসলেই এন্ট্রি নাই হয়তো । কিন্তু অহীন যে লাফ দিয়ে একেবারে ওর জগত থেকে আমার জগতে এই ভাবে চলে আসবে এটা ভাবি নি ।
আমি বললাম
-আমি কি ভাবি জানো ?
-কিইইই ?
-আসলে আমি প্রায়ই এই ওভার ব্রীজটার উপরে উঠি । আর প্রায় দিনই এখানে কাপলদের দেখি । দেখি তারা একে অপরের হাত ধরে কি দুরে ঐ গাড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে । আর কি মুগ্ধ চোখে দেখছে !!
অহীন আমার কথা শুনে খুব জোরে হেসে ফেলল । এতো জোরে যে আসপাশ দিয়ে হেটে যাওয়া মানুষ গুলো ফিরে চাইছে ।
-আরে এতে হাসির কি হল এতো ? আমার সত্যি খুব জানতে ইচ্ছা করে যে ওরা কি এতো ভাবে ? কি এতো দেখে ?
-তাই ? তা তুমি দেখো নি কোন দিন ?
-হুম দেখেছি । কিন্তু কোন মুগ্ধতা আসে নাই ।
-আসে নাই ?
এই বলে অহিন আবার হাসতে লাগলো । অহীনের হাসি সুন্দর । একবার দেখলে যে কেউ তাকিয়ে থাকবে । আমিও কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম ওর হাসির দিকে । অহীন হাসি থামিয়ে বলল
-আমার কি মনে হয় জানো ?
-কি ?
-তুমি একা একা দেখেছ তো তাই বুঝতে পারো নি । তোমার সাথে যদি তোমার গার্লফ্রেন্ড থাকতো তাহলে বুঝতে পারতে ।
-হুম । আমারও তাই মনে হয় । কিন্তু এখন এই দাড়িয়ে থাকা গাড়ির মুগ্ধতা বোঝার জন্য আমি গার্লফ্রেন্ড কোথায় পাই বল ?
অহীন আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
-আচ্ছা যাও আজকের বিকেলের জন্য আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে যাই কেমন ?
-কি বল ? এক দিনের গার্লফ্রেন্ড ।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল অহিন ঠিক এই কথাটাই বলবে । আসলে কয়েক দিন থেকেই অহীনের আচরন আমার কাছে কেমন একটু যেন অন্য রকম ঠেকতেছে ।
অহীনের সাথে ঘনিষ্ঠতা আমার কোন কালেই ছিল না । অন্তত এমন সম্পর্ক তো ছিল না ও ছুটির দিনের বিকেল বেলা এই ওভার ব্রীজের উপরে আমার সাথে গাড়ি গুনবে ।
কিন্তু আজকে মেয়েটার হল কি ? এমন কেন করছে মেয়েটা ! আমি বললাম
-একদিনের জন্য !
-হুম ! হব !
আমি কিছু না বলে কেমন কিছুক্ষন অহীনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা এক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! আমি খুব বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলাম না ! চোখ সরিয়ে নিলাম । অনুভব করলাম আমার বুকের ভেতর কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি শুরু হয়ে ছে ! কেন হয়েছে কে জানে !
অহীন সব সময় ছিল দুরের একজন ! ওর ব্ল্যাক পাজেরোটা আমাদের সবার থেকে ওর লেভেলটা একটু আলাদা করেই দিয়েছিল ! ক্লাসের বলতে গেলেই কারো সাথেই অহীনের খুব একটা দহরম মহরম ছিল না । এই ভাবেই চলে যাচ্ছিল দিন ! হয়তো ভেবেছিলাম এই ভাবেই দিন যাবে ! কিন্তু খানিকটা বৈচিত্র এল যখন ক্লাস এসাইনমেন্টের জন্য দুজন করে গ্রুপিং শুরু হল ! আমি কদিন ক্লাসের বাইরে ছিলাম । এসে দেখি মোটামুটি সবাই যে যার পার্টনার খুজে নিয়েছে !
অহীন আর আমি বাকি ! দুজন হয়ে গেলাম পার্টনার ! প্রথম কদিন এমনি ভাবেই কেটে যাচ্ছিল ! আমরা ল্যাবে বসে কাজ করি ! তারপর চলে যাই যে যার মত ! গত কালকের কথা !
লাইব্রেরীতে বসে নোট বানাচ্ছিলাম দুজন ! টুকটাক কথা বলছিলাম ! কাজ শেষ যখন বের হয়ে যাবো তখন হঠাৎ করেই অহীন আমাকে ডাক দিল !
-হুম !
-আমাকে রেখে চলে যাবা ?
আমি প্রথমে ওর কথা কোন আগা মাথা বুঝলাম না ! বললাম
তখন অহীন মুখটা একটু আদুরে করে বলল
-আমাকে একা রেখে চলে যাবা ?
-না মানে কাজ তো শেষ ?
-কেবল কাজই ! ক্যান্টিনে বসে একসাথে সিঙ্গাড়া খাওয়া যায় না ?
আমি আসলেই অহীনের কাছ থেকে এমন কথা শুনে খানিকটা অবাকই হলাম ! মেয়েটা কি বলতে চাইছে ?
আর এমন করেই বা কেন বলছে !
অহীন বলল
-আমি জানি না তোমরা সবাই আমার সাথ এমন কেন কর ?
-কেমন করি ?
-এই যে কেবল কাজের বেলায়ই । অন্য কন সময় না ! ঠিক বন্ধুর মত না !
কথাটা অবশ্য সত্যি ! ক্লাসের মোটা মুটি সবাই এমন করে ! অহীন কেবল আমাদের ক্লাস মেইট ! বন্ধু না ! আসলেই আগেই বলেছি ! ওর ব্ল্যাক পাজেরো আমাদের আর ওর ভিতরে একটা পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে ! তার জন্য হয়তো এমন টা হয়েছে !
রাতের বেলা অহীনের সাথে অনেক কথা হল । মেয়েটা কত কথা বলতে পারে ! আমার ঠিক মনেই হল না যে ওর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা নেই ! মনেই হয় নি ও আমার খুব দুরের কেউ ! আর আজকে এই ঘটনা !
-কি হবে না ?
-হুম ! এমন অফার কেউ কি ফিরিয়ে দিতে পারে ? তাও আবার তোমার বয়ফ্রেন্ড !
অহীন সাথে বিকেল টা কাটলো অনেক সুন্দর ! মিন্টু রোড ধরে আমরা অনেকক্ষন হাটলাম ! ডিবি অফিসের কাছে চা খেলাম দাড়িয়ে দাড়িয়ে !
মানুষজন আমাদের কে কেমন চোখে দেখতে লাগলো ! আমরা সেদিকে থোড়াই কেয়ার করি !!
-হুম ! কি কর ?
-তোমার কথা ভাবছি !
-তাই ? একটু আগে করছিলে ?
-একটু আগেও তোমার কথা ভাবছিলাম !
-শুভ !
-হুম !
-তোমার সাথে এই নিয়ে আগেও কথা হয়েছে !
-হুম ! হয়েছে তো !
-তাহলে তুমি এমন কথা কেন ভাবছ ?
-মানে কি ?
-মানে তুমি বুঝো না ?
-দেখো অহীন ! তুমি আমাকে এক্সসেপ্ট কর নি ভাল কথা ! তাই বলে কি আমি তোমার কথা ভাবতেও পারবো না ? তুমি কি ভাব না ?
কিছুক্ষন ফোনের ওপাশ থেকে কোন কথা শোনা গেল না ! আমি জানি অহীনের মনের মাঝে একটা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে । প্রায়ও হয় এমন টা ! ও আসলে আমার থেকে দুরেও থাকতে পারছে না আবার আমার গ্রহনও করতে পারছে না ! অদ্ভুদ এক সমস্যায় পরেছে ও !
অহীনের সাথে আস্তে আস্তেই খুব বেশি কাছে চলে আসি ! কদিন আগেই যেখানে অহীন কেবল ক্লাসে আসতো আর যেত, গাড়ি থেকে কেবল নামতো আর উঠতো সেই অহীন আমার সাথে ঘন্টার ঘন্টার পর আড্ডা দিতে লাগলো ! বিরাম বীহিন ! কত কথা লুকিয়ে ছিল মেয়েটার মনে !
আমি শুনতাম সব !
ছোট বেলা থেকে নাকি ও এমন ভাবেই কেটেছে ! ছোট বেলা থেকে কি এক অদ্ভুদ কারনে সব জায়গাতে সবাই নাকি ওকে খানিকটা এড়িয়ে চলেছে ! কেন চলেছে ও জানে না !
আমার মনে আছে ওকে যেদিন প্রপোজ করেছিল একটা আশ্চার্য আনন্দ খেলা করছিল ওর সারা চোখ মুখে ! কিন্তু পরক্ষনেই ওর মুখটা মলিন হয়ে গেল ! আমি ঠিক কারন টা বুঝলো ! আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
-এমন ..... কথা কেন বলছ তুমি ?
-কেন ? এমন কথা বলার কথা ছিল না ??
অহীন কোন কথা বলল না ! আমিও আর কোন কথা বললাম না ! আমি হয়তো আগেই জানতাম এটা সম্ভব নয় কোন দিন ! তবুও কেন প্রোপোজ করলাম কে জানে !
-কি কথা বলছো না কেন ?
-এমনি এ তোমার কথা ভাবছি ! সারাদিনই ভাবি !
-কেন ভাবো ?
-এমনি ! কোন কারন নাই ! কোন কারন নাই ! কালকে দেখা করবে ?
-হুম করা যায় !
-ঐ ওভার ব্রীজের উপরে ?
সামনের কোন ভবিষ্যৎ নেই ! আমাদের সম্পর্কেরও কোন ভবিষ্যৎ নেই ! হয়তো আবেগে পড়ে আমরা একসাথে থাকতে পারবো একসাথে কিন্তু কদিন পরে সেখানে কেবল মনের ব্যাপারটা থাকবে না ! যখন আরো কিছু আসবে তখন হয়তো এই ভালবাসাটা হয়তো আস্তে আস্তে বীলিন হয়ে যাবে ! আমি হয়তো হারিয়ে যাবো ! এটা হয়তো অহীন চায় নি !
আমরা প্রায়ই পরীবাগের ওভার ব্রীজের উপরে দেখা করি ! সারি সারি গাড়ির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি ! কখনও অহীন আমার হাত ধরতো ! আমরা মিন্টু রোডের রাস্তা দিয়ে আমরা প্রায়ই হাটি ! কখনও পাশা-পাশি । কখনও হাত ধরে !
ওয়ার্ডপ্রেস !!
আলোচিত ব্লগ
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ
মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!
বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন