somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প গল্পঃ সেফজোন !

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক
প্রতিদিন অলির ঘুম ভাঙ্গে একটা স্বপ্ন দেখে ! অদ্ভুদ রকমের একটা স্বপ্ন ! ও স্বপ্নে দেখে চারিদিকে ধ্বংস স্তুপ পড়ে আছে আর ধোঁয়া উড়ছে । সব কিছু কালো ধোঁয়ায় ঢাকা ! স্বপ্নে অলি সামনের দিকে দৌড়াতে থাকে ! সামনে কিছু দেখা যাচ্ছে না, তবুও দৌড়াতে থাকে ! সামনে কিছু একটা আছে কিন্তু কি আছে অলি ঠিক বুঝতে পারে না । কেবল ওর মনে হয় সামনে যেতে হবে ওকে । কেউ একজন ওর জন্য অপেক্ষা করছে ওর জন্য !
সামনে যেতে যেতে কিছুতে অলি হোঁচট খায় ! সেখান থেকেই ওর ঘুম ভেঙ্গে যায় !
প্রতিদিন একই ভাবে ! একই সময়ে !
আজকেও ঠিক একই জায়গায় অলির ঘুম ভেঙ্গে গেল ! সামনে কিসের জন্য ও দৌড়াচ্ছিল জানা হল না ! অলির মন খানিকটা অস্থির হয়ে রইলো !

নিহিন শুয়ে আছে জড়সড় হয়ে ! বিড়াল ছানা যেমন আদর পেয়ে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে থাকে ঠিক তেমন ভাবে শুয়ে আছে ! নিহিনের এই শুয়ে থাকাটা অলির কাছে সব সময় খুব ভাল লাগে ! অলির মনের অস্থিরতা খুব বেশিক্ষন স্থায়ী হল না ! নিহিনের মুখের দিকে তাকিয়ে মুহুর্তের ভিতর সব কিছু ভুলে গেল !

অলি কেবল কিছুক্ষন তাকিয়েই রইলো নিহিনের দিকে ! আর মনে মনে বলল
মেয়ে তোমাকে ভালবাসি ! হাজারও শত বছর কেবল তোমাকে ভালবাসতে চাই এই ভাবে !
আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার ইচ্ছা ছিল কিন্তু সম্ভব হল না ! অলি জানে নিহিন ঠিক এই সময়ই চোখ খুলে তাকাবে ! তারপর মিষ্টি করে হাসবে !
গতকালকেও এমন করেছিল ! তার আগের দিনও !
মাঝে মাঝে অলির একটু অবাক লাগে ! প্রতিদিন সকাল বেলা ঠিক ঐ একই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গা তারপর নিহিনের দিকে তাকিয়ে থাকা । অল্প কিছুক্ষনের ভিতরেই নিহিনের চোখ খুলে তাকানো ! ব্যাপারটা কেমন যেন লাগে ওর কাছে ! আগে লাগতো না ! এখন লাগে !

আজকেও হল তাই ! নিহিন চোখ মেলে তাকালো ওর দিকে । তারপর মিষ্টি করে হাসলো !
-হাই ! বাবু !
-বাবু !
-গুড মর্নিং !
-তোমাকেও গুড মর্নিং !
নিহিন একটু আদুরে গলায় বলল
-তুমি আজকেও আগে উঠলে ! জানো তোমাকে নিয়ে কত সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি !
-স্বপ্ন .....
শব্দটা শোনার পরেই অলির মুখটা আমার একটু অন্য রকম হয়ে গেল ! একটু আগে দেখা স্বপ্নটার কথা মনে গেল মুহুর্তেই ।
নাহ ! কিছু একটা করা দরকার । এমন ভাবে আর চলতে পারে না । একটা মানুষ প্রতিদিন নিশ্চই একই স্বপ্ন দেখতে পারে না । এর ভিতর কিছু একটা নিশ্চই আছে ।

-কি হল বাবু ?
-কিছু না !
-কিছু তো একটা হয়েছে । তোমার মুখ অমন হয়ে গেল কেন স্বপ্নের কথা শুনে ! নিশ্চই .....
কথাটা বলতে বলতেই নিহিন অলির দিকে একটু এগিয়ে এল ! চোখে একটু চিন্তার ছাপ !
-আজকেও ঐ স্বপ্নটা দেখেছো ?
-হুম !
-এমন কেন হচ্ছে ?
-আমি জানি না ! নিহিন আমরা এই দ্বীপটাতে কত দিন ধরে আছি ?
-কেন ? তুমি জানো না ? ঐ যে যেদিন আমরা বাড়ি থেকে পালিয়ে এলাম !
অলি একটু দির্ঘ্য শ্বাস ফেলল । তারপর নিহিনের কপালে একটা চুম খেয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লো ! ঘরের ভিতর কেমন জানি লাগছে । ভাল লাগছে না হঠাৎ করেই !

ইদানিং প্রায়ই এমন হচ্ছে ! আগে এমন হত না । যখন নিহিন আসেপাশে থাকতো তখন সব কিছু ভাল লাগতো । কোন কিছুতেই সে বিরক্ত হত না ! কিন্তু কিছু যে ঠিক মত হচ্ছে না ! কিছু যেন মিলতেছে না !
অলি বাইরে বের হয়ে এল ! সামনে যত দুর চোখ যায় কেবল নীল সমুদ্রের জলরাশি !


দুই
বাংলাদেশ সেফজোনের সিকিউরিটি জয়েন্ট চীপ আজগর আলী নিজের রুমের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন বিষন্ন ভাবে ! জানলা দিয়ে মেঘলা আকাশ দেখা যাচ্ছে ! যদিও এই মেঘলা আকাশের ব্যাপরটা সম্পূর্নই কৃত্রিম ভাবে তৈরি ! ইদানিং প্রকৃতিক পরিবেশ এমন খারাপ হয়েছে পুরানো দিনের মত সেই চমৎকার মেঘলা আকাশ আর এই ২৩১৩ সালে এসে কিছুই দেখার উপায় নাই । পুরো পৃথিবীর আবাহাওয়া কৃত্রিম ভাবে নিয়ন্ত্রিত !
এখন প্রত্যেকটা ঘরের জানালায় অপটিক্যাল ইলুউশন সিস্টেম সেট করা থাকে । তার সাথে সংযুক্ত থাকে ঘরের তাপমাত্র নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের । শীত গ্রীষ্ম বর্ষা যে কোন আবাহাওয়া সেট করে দিলেই বাইরের দৃশ্যের সাথে ঘরের তাপমাত্রাও সেই রকম হয়ে যায় ! খুব একটা খারাপ লাগে না ।

জয়েন্ট চীপের মাঝে মাঝেই এমন ছেলেমানুষীতে পায় । মেঘলা বেলার ঘরের জানালায় পাশে দাড়িয়ে মন বিষন্ন করতে মন চায় ! এই সময় টা তিনি বেশ উপভোগ করেন !
কিন্তু আজকে খুব বেশি উপভোগ করতে পারলেন না ! দরজায় কড়া নড়লো !
-আসবো স্যর !
তার সেক্রেটারীর নাহালের গলা !
তিনি জানালার ইলুউশন সিন্টেম বন্ধ করে দিলেন । ঘরের তাপমাত্রও স্বাভাবিক করে আনলেন ! তারপর অনুমুতি দিলেন তা নাহালকে ঘরের ভিতরে আসার জন্য !

নাহাল নীল রংয়ের একটা ফাইল নিয়ে ঘরে ঢুকলো ! ফাইলটা রাখলো টেবিলের উপরে !
-স্যর ! রিপোর্ট টা !
আজগর আলী খুব ভাল করেই জানেন নীল রংয়ের ফাইলের ভিতর কি আছে । তিনি সেটার দিকে হাত বাড়ালেন না ! নাহালের দিকে না তাকিয়েই তাকে জিজ্ঞেস করলেন
-কি অবস্থা !
-স্যর । অবস্থা খুব বেশি ভাল না !
-আর কতক্ষন বাকী ?
-খুব বেশি হলে এক সপ্তাহ ! এর পরেই তাকে আটকানো মুশকিল হয়ে যাবে ! আমরা কি এখন একশানে যাবো !

আজগর আলী একটু চিন্তিত হল । সাথে একটু অস্থিরও বটে ! গত দেড় বছরে এই নিয়ে ১১ বার এমন অবস্থা হল ! আগে তো সময়ের ব্যবধান টা বেশি ছিল কিন্তু শেষ দুটোর ভিতর সময় ব্যবধান একদম কম ! সামনে আর কাজ করবে কি না কে জানে ?
আজগর আলী বলল
-গত বার একশনে আমাদের কি পরিমান ক্ষতি হয়েছিল মনে আছে ?
-জি স্যর ! আমাদের ২১ নবম মাত্রার রবো মানব মারা গেছিল এবং তিন জন অফিসার গুরুতর আহত হয়েছিল !
-তারপরেও তুমি আবার একশানে যেতে চাইছো ?
-আর তো কোন উপায় নাই স্যর !
-আচ্ছা দেখো কি করা যায় ! সময় মত ব্যবস্থা নাও !
-ফাইল টা কি দেখবেন ?
-নাহ ! নিয়ে যাও !

নাহাল ফাইল নিয়ে চলে চলে গেল ! আজগর আলী আবারও ইলিউশন সিস্টেম চালু করে দিলেন ! এবার তিনি বাইরের আবহাওয়া ঝড়ের মোড ঠিক করে দিলেন !
সঙ্গে সঙ্গেই বাইরের বিদ্যুৎ চমকানী দেখতে পেলেন ক্ষনে ক্ষনে । বাতাশ শুরু হয়ে গেছে । ঘরের ভিতর থেকেই তিনি সেটা অনুভব করছেন । একটু পরেই আসল ঝড় শুরু হবে ! জয়েন্ট চীফ সেই আসন্ন ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন !

তিন
-কি হয়েছে বাবু ! তুমি এমন কেন করছো ? আমি কিছু করেছি !
অলি নিহিনের দিকে তাকালো খানিকটা বিরক্ত হয়ে ! নিহিন সেই কখন থেকেই এই একই কথা বলে যাচ্ছে ! অলি বিরক্তির সীমা আস্তে আস্তে ক্রোধের দিকে অগ্রসর হচ্ছে !
কদিন থেকেই এমনটা হচ্ছে ! নিহিন কে কেন জানি ঠিক মত পছন্দ হচ্ছে না ! আসলে কথা কদিন আগে ওর প্রতি যেই ভালবাসাটা অনুভব করতো সেই ভালবাসাটা এখন আর অনুভুব করছে না ! বার বার মনে হচ্ছে সামনে থাকা এই মেয়েটি কিছুতেই নিহিন না ! যদিও এমন টা ভাবার কোন কারন নেই । তবুও বারবার এই কথাটাই মনে হচ্ছে !

অলি নিজের মনেই কারনটা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারছে না ! এমন তো হবার কথা না ! যে মানুষটার জন্য সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে চলে এসেছি, মানুষ বিহীন এই দ্বীপে বসবাস করছে সেই মানুষটা হঠাৎই এমন দুরের মানুষ কেন মনে হচ্ছে !
নিহিন আবার বলল
-তুমি আমার সাথে এমন কেন করছো ? কেন এমন ভাবে তাকাচ্ছ ?
গলার অভিমানের সুর স্পষ্ট !
কিন্তু অলির কিছুই এসব স্পর্শ করছে না ! অলি ভাবছে অন্য কিছু ! তার মাথায় ভিতর সমস্যা হচ্ছে !
নিহিন বলেই চলেছে
-তোমার জন্য আমি সব কিছু ছেড়ে চলে এসেছি ! আমার বাবা মা কে ছেড়ে চলে এসেছি আর তুমি আমার সাথে এমন করছ ?
হঠাৎই অলি বলল
-আমরা কতদিন ধরে এখানে আছি ?
-কেন ?
-কত দিন ধরে আছি ?
-এই তো প্রায় এক মাস ?
-তার আগে কোথায় ছিলাম ?
-আমাদের বাসায় !
-তুমি কি করতে ? আমি কি করতাম ? আমাদের মাঝে কেমন করে দেখা হল ? আমার তো কিছুই ঠিক মত মনে পরছে না !

নিহিন কথা বলতে গিয়েই একটু থমকে দাড়ালো । খানিকটা অবিশ্বাসের চোখে অলির দিকে তাকাচ্ছে । ঠিক যেন বিশ্বাস করতে পারছে না !
-তুমি এমন কথা বলতে পারলে ?
-হুম ! পারলাম ! আমার এই সব কিছুই মনে পড়ছে না ! কেবল তুমি যা বলেছ তাই ! আর কিছু না ! তুমি বলেছিলে তোমার বাবা অনেক ক্ষমতাধর একজন ! তাই আমরা পালিয়ে এসেছি ! কিন্তু আমার ব্রেনের সাথে এই কথাটা কিছুতেই যাচ্ছে না ! আমার কাছে মনে হচ্ছে এই তথ্যটা ঠিক না ! কেন মনে হচ্ছে আমি জানি না । তবে মনে হচ্ছে !

আবারও নিহিন স্থির হয়ে গেলে । স্থির চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো অলির দিকে ! মুহুর্তের ভিতর নিহিনের ভিতর শিশু সুলভ মনভাব দুর হয়ে গেল ! সেখানে দেখা গেল হিংস্র এক মানবীর চেহারা !
কোমর থেকে এক টানে বের করে আনলো রেড বীম গান টা । সরাসরি তাক করলো অলির মাথা বরাবর !
-অলি তুমি বড় বেশি প্রশ্ন কর !
তারপর আর কোন কিছু চিন্তা না করে ট্রিগার টেনে দিল !


চার
নাহালের হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসা দেখেই আজগর আলী অনুমান করে নিল কি হয়েছে ! ঘরে প্রবেশের সময় নাহাল এবার অনুমুতি নেওয়ারও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে নি ! সরাসরি রুমে ভিতর ঢুকে পরেছে !
উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে গেলে আজগর আলী নিজেই তাকে থামিয়ে দিল ! বলল
-এবার কত জন মারা গেছে ?
-প্রায় সবাই !
-ওকে আটকানো গেছে ?
-না স্যর ! সব ঐ বেকুব রোবট টার দোষ !
-নাহাল ! বেকুব কাকে বলছো ? নিহিন একটা অষ্টম মাত্রার আবেগ অনুভুতি সম্পন্ন রোবট ! প্রায় মানুষের কাছাকাছি ! তুমি ওকে বেকুব বলতে পারো না !
-তা হলে কি বলবো ? বেকুব মেয়ে কেন আগে বীম রে গান চালতে গেল ! বেকুব টা কি জানে অলিকে কোন বীম রে হান স্পর্শ করতে পারে না !
-মেয়েটা কি মারা গেছে ?
মেয়েটা ? নিজের কাছেই কেমন একটু হাস্যকর শোনালো কথাটা ! একটা রোবট কে তিনি মেয়ে বলছেন !
-জি স্যর !
-ওকে ! অলি কোথায় এখন ?
-স্যার আমরা এখন ওকে ট্রেস করতে পারছি না !
-ট্রেস করা নিয়ে বেশি চিন্তা কর না । ও ঠিকই জানে ও কি খুজছে । খুব শীঘ্রই বের করে ফেলবে !
-স্যর আপনি এমন রিলাক্স মুডে কেমন করে কথা বলছেন !
-আর কি করবো ? কিছু করার কি আছে ? অলিকে আমরাই তৈরি করেছি ! সব থেকে আধুনিক করে !
-স্যর ? আমনি কি বুঝতে পারছেন না অলি যদি সত্যি সত্যিই নিহিনের কাছে চলে যায় তাহলে কি হবে ? আমরা কিন্তু অলিকে আটকে রাখতে পারবো না ! সেই ক্ষমতা আমাদের নেই !

আজগর আলী কিছুক্ষুন চুপ করে রইলো ! তারপর বলল
-তুমি যাও নাহাল ! আমাকে একটু ভাবতে দেও !
নাহাল বাইরে চলে গেল !

পাঁচ
গত দুই বছর ধরেই এমনই সমস্যায় পড়েছেন জয়েট চীফ ! কোন না কোন সমস্যা লেগেই আছে সব সময় ! অবশ্য জোনাল এড়িয়া আসার পর থেকেই টুকটাক ঝামেলা লেগেই থাকতো ! সেফ জোনের বাইরের লোক গুল ঝামেলা করতো । কিন্তু সেফজোনের আধুনিক অস্ত্রের কাছে প্রতিবারই শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়ে ফিরে গেছে ! তারপর মাঝে এই হামলার পরিমান কমে গিয়েছিল !
কিন্তু এখন আবার এটার মাত্রা যেন এখন বেড়ে গেছে ! এখন অবশ্য তারা আর সরাসরি হামলা করে না ! কৌশল বদলেছে ! সাথে সাথে তাদের অস্ত্রস্বস্ত্রেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে ! এই জন্য চিন্তাটা একটু বেড়েছে ! আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে এমন একটা নিহিনের উপরে হামলা হয়েছিল । চেষ্টা করা হয়েছিল ওকে ছিনিয়ে নেওয়ার কিংবা একেবারে মেরে ফেলার ।


ছয়
২১০০ সালের পর তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরেই পুরো পৃথিবীর অবস্থা বলতে গেলে একেবারে শোচনীয় হয়ে উঠে ! যখন পুরো পৃথিবী গন্যমান্য ব্যক্তিরা বুঝতে পারে তারা তাদের আস্তিত্ব বিনাশের দিকে ছুটে চলে ছে তখনই শান্তি চুক্তি হয় ! কিন্তু ততদিনে পৃথিবীর যা ক্ষতি হবার হয়ে গেছে ! অর্ধেকের বেশি লোক মারা গেছে ! যত সম্পদ ছিল তার বেশির ভাগই হয়েছে ধ্বংস ! যত লোক পৃথিবীতে তখন বেঁচে আছে তত লোকের জন্য অন্ন বস্ত্রের সংকুলান হবে না ! অনেক কিছুই বিনাশ হয়ে গেছে । দেশে দেশে দেখা গেছে দুর্ভিক্ষ ! কোন দেশই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারছে না কারন নিজেরাই ঠিক মত বাঁচার উপরকন পাচ্ছে না !

আর সব থেকে বড় সমস্যা হল অক্সিজেন আর বিশুদ্ধ পানি ! বাতাসে এতো পরিমান বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রিত হয়ে গেছে যে বিশুদ্ধ অক্সিজেন যেন এখন সাত রাজার ধন ! পানির ক্ষেত্রেও ঠিক একই সমস্যা !

ঠিক সেই সময় আবির্ভাব হয় সেফ জোনের । পৃথিবীর ধনী কিছু লোক এক সাথে হয়ে তৈরি করে এই সেফ জোন ! তাদের ক্ষমতা দিয়ে অবশিষ্ট খাদ্য বস্ত্র গুলো নিজেদএর দখলে নিয়ে নিল । নিজেদের জন্য অক্সিজেন ফিল্টার বসালো ! বড় বড় দেশে তৈরি হল এই সেফ জোন জীবন ধারনের সব উপরকন নিয়েই ! আর কিছু মানুষ পড়ে রইলো বিষাক্ত বাতাসের ভিতর ! আউটার ওয়ার্ল্ডে !

সেফ জোনের সবাই মনে করেছিল হয় তো আস্তে আস্তে আউটার ওয়ার্ল্ডের লোক সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে । কিন্তু আশ্চার্য ভাবে লক্ষ্য করা গেল আশ্চার্য প্রান শক্তি নিয়ে মানুষ গুলো বেঁচে আছে ! যেমন এক দেশের সেফ জোন অন্য দেশের সেফ জোনের সাথে যোগাযোগ করে একটা কমিউনিটি গড়ে তুলেছে তেমনি এই এক দেশের আউটার ওয়ার্ল্ডের লোক গুলো অন্য দেশের আউটার ওয়ার্ল্ডের লোক গুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে নতুন কমিউনীটি গড়ে তুলেছে । ঐ আউটার ওয়ার্ল্ডের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে সব সেভ জোন গুলো ধ্বংস করা ! তাদের প্রতি কৃত অবিচারের প্রতিশোষ নিবে ! যে পরিমান কষ্ট তারা করেছে সেফ জোনের মানুষদএরকেও সেই একই পরিমান কষ্ট ভোগ করাবে !

এর মাঝে অনেক সময় পার হয়েছে । শান্তি চুক্তি করার চেষ্টা চলেছে কিন্তু খুব একটা কাজ হয় নি ! আউটার ওয়ার্ল্ডের লোকজন কিছুতেই সেফজোনের মানুষের সাথে শান্তিচুক্তি করতে রাজি নয় ! তাদের বক্তব্য যতদিন সেফ জোনের এক্টিমিয়াম রশ্মির দেওয়াল থাকবে ততদিন কোন প্রকার শান্তি চুক্তি হবে না ! অবশ্য বিভিন্ন দেশে সেফ জোনের সাথে ইতিমধ্যে শান্তি চুক্তু হয়ে গেছে কিন্তু বাংলাদেশে এর কিছুই এগোই নাই !

অবশ্য বাংলাদেশ সেফ জোন চেষ্টার কোন ত্রুটি করে নি । অনেক পদক্ষেক তারা নিয়েছিল হাতে । তার ভিতর একটি হল আউটার ওয়ার্ল্ডের কিছু ছেলে মেয়েদের কে পর্যায় ক্রমে ফেস জোনে বসবাসের সুযোগ দেওয়া !
নিহিন সাবরান সেই সমস্ত আউটার ওয়ার্ল্ডের ছেলে মেয়েদের একজন !
সেফজোনের কর্মকর্তারা এটা ভেবেছিলে যে যদি তাদের ভিতর থেকে একজন বাংলাদেশের সেফ জোনের রিপ্রেজেন্টেটিভ নিযুক্ত হয় তখন নিশ্চই আউটার ওয়ার্ল্ডের মন গলবে ! কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হয় নি ! এক পক্ষ কিছুটা নমনীয় হলেও অন্য পক্ষ্য কিছুতেই গলে নি !

নিহিন সাবরান যখন থেকেই বাংলাদেশের সেফ জোনের রিপ্রেজেন্টেটিভ নিযুক্ত হয় তখন থেকেই ওর প্রান নাশের জন্য তৎপরতা সৃষ্টি হয় ! এর আগেও বেশ কয়েকজন রিপ্রেজেন্টেটিভের এর উপর হামলা হয়েছে । বিশেষ করে একজন রিপ্রেজেন্টেটিভ যকন এক জোন থেকে অন্য জোনে যাওয়ার জন্য রওনা হন তখনই হামলা টা হয় ! এছাড়া সেফ জোনের অন্য কাউকে নিজেদের জোন ছেড়ে বাইরে যাওয়ার কোন দরকার পরে না !
এজন্য কেউ সাধারনত এই রিপ্রেজেন্টিটিভের কাজ টা করতে চায় না ! নিহীন সেখানে আগ্রহ নিয়ে কাজটা করছে !
বেশ কয়েকবারই নিহিনের উপর হামলা হয়েছে ! সব থেকে আশ্চার্যের বিষয় হচ্ছে প্রতিবারই নিহিনের নিরাপত্তায় নিয়জিত রোবট গুলো মারা পড়লেও আশ্চার্য ভাবে নিহিনের তেমন কোন ক্ষতি হয় নি ! হয়তো ওদের নিজেদের লোক বলেই হয়তো কিছু বলে নি ! তবুও পরপর দুবার নিহিনের প্রান নাশের চেষ্টা করা হলে কর্তপক্ষ একটু চিন্তিত হয়ে পরে !
তারপরই নিহিনের নিরাপত্তার জন্য অলিকে সৃষ্টি করা হয় ! অলি একজন এগারো মাত্রার রোব মানব ! নবম মাত্রার উপরে রোব মানব তৈরির নিয়ম নাই কিন্তু অলিকে তৈরিকে করা হয়েছিল কেবল মাত্র নিহিহের নিরাপত্তার জন্য !
অলির ভিতর সকল মানবিক গুনের সাথে সাথে যে জিনিস টা বাইরে থেকে দেওয়া হয় সেটা হল নিহিনের জন্য ভালবাসা ! পুরো পৃথিবীর বিপরীতে যেতে হলেও অলী যেন নিহিন কে রক্ষা করে এমন ভাবে অলির কপ্ট্রোন ঠিক এই ভাবেই তৈরি করা হয়েছে !
এখানেই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে ।


অলির কপ্টোনের কিছু একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যেটাতে অলি সব সময়ই মনে করছে নিহিন যেন কারো কাছ থেকেই নিরাপদ নয় !
খুব সাধারন একটা ঘটনা ! নিহিন একদিন ওর অফিসের ফুড হাউজে দুপুরের লাঞ্চ করতে গিয়ে দেখে ওকে কাটা চামচ দেওয়া হয় নি । ওয়েটার কে কাটা চামচ আনতে বলল ! ওয়েটার যখন কাটা চামুচ নিয়ে নিহিনের দিকে এগিয়ে আস্তে লাগলো তখন অলির মাথা কি এক রিএকশান হল কে জানে ওর কেবল মনে হল এই কাটা চামচ দিয়েই নিহিন কে হত্যা করা হবে । সঙ্গে সঙ্গে ব্ল বীম গান দিয়ে ওয়েটাট খুলি ফুটো করে দিল কোন কিছু চিন্তা না করেই !
এর পর থেকেই সমস্যা হতেই থাকে ! এর পর থেকেই ছোট খাটো ঘটনা থেকে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে ! কোন ভাবেই আটকানো সম্ভব ছিল না অলিকে !
সাধারন আবেক অনুভুতি সম্পন্ন হলেও প্রত্যেকটা রোব মানবকে মুল কম্পিটারের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা যেন ! কিন্তু অলিকে সেই নিয়ন্ত্রনের বাইরে রাখা হয়েছিল ! একটা সময়ে অলি নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে তার প্রতিপক্ষ প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করলো !


সাত
-ম্যাম !
-আজগর সাহেব ! হঠাৎ আমার অফিসে !
-একটু সমস্যা হয়েছে !
-কি সমস্যা ?
-অলিকে আমরা ট্রেস করতে পারছি না !
-কোন অলি ? আমার আগের বডিগার্ড ?
-জি ম্যাম !
-ওকে এখনও ডিএকটিভ করা হয় নি ? আমাকে তো জানানো হয়েছিল তাকে ডিএকটিভ করে রাখা হয়েছে !
-আসলে ম্যাম ! ১১ মাত্রার কোন রোবট কে ডিএকটিভ করে রাখার উপায় নাই ।
-তাহলে এতো দিন ? এতো কোথায় ছিল সে ?
-আসলে আমরা অলিকে একটা ইলিউশন সিস্টেমের ভিতর রেখেছিল । সেখানে আপনি ওর সাথে ছিলেন !
নিহিন ঠিক মত বুঝতে পারলো না ! খানিকটা কৌতুহল নিয়ে বলল
-আপনি কি বললেন আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ! আমি ওর সাথে ছিলাম মানে আপনি বোঝাতে চাচ্ছেন?
আজগর আলী কিছুক্ষন চুপ করে রইলো । কি বলবে ঠিক মত বুঝতে পারলো না !
-আসলে ম্যাম আমরা আমরা আপনার চেহারা একজন অষ্টম মাত্রার রোবট অলির সাথে রেখেছিলাম । তার পর ওর কপ্ট্রোনে এই সিগনাল পাঠিয়ে ছিলাম যে সেই আসল নিহিন ! কিন্তু সেই সিগনাল টা খুব বেশিক্ষন কাজ করে নি ! এক সময় না এক সময় অলি ঠিকই ধরে ফেলেছে !
নিহিন কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলো না । আজগর আলীর দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক হয়ে । তারপর সেই অবাক দৃষ্টি রাগে পরিনত হতে সময় লাগলো না !
নিহিন বলল
-আপনি কি জানেন না একজন মানুষের অনুকরনে বা চেহারা নিয়ে অন্য রোবট তৈরি করার নিয়ম নাই ! আর অষ্টম মাত্রার তো নয়ই ! এই গুরুত্বর অন্যায় কাজ !
-জি ম্যাম আমরা জানি ! কিন্তু ....
নিহিন কিছুটা একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল । ওর এতোক্ষন মনেই ছিল না ও আসলে কার সাথে কথা বলছে । নিজেকে সংযত করে বলল
-কিন্তু কি ?
-দেখুন আপনি আমাদের সেফ জোনের একজন গুরুত্বপূর্ন মানুষ । আপনার সেফটির ব্যাপারে আমরা যে কোন পদক্ষেপ নিতে পারি । এজন্য আমাদের কারো কাছে কৈফৎ দিতে হয় না । এখন মুল কথা হল অলি যে কোন সময় আপনার কাছে পোছে যেতে পারে । সে ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা তৈরি হতে দেরি লাগবে না !
-তাহলে এখন ?
-এখন আপনাকে আমরা যত দ্রুত পারি এদেশ থেকে বের করে দেবো । কোন ভাবেই অলির সাথে আপনার দেখা হওয়া চলবে না । আমি আপনার প্রাইভেট প্রেনের ব্যাবস্থা করছি । আপনি রেডি হয়ে নিন !

আর কোন কথা বলে জয়েন্ট চিফ দরজার দিকে পা বাড়ালো !

জয়েন্ট চিফের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই নিহিনের মুখে একটা সুক্ষ হাসির রেখা ফুটে উঠলো ! মিলিয়ে গেল তা পরক্ষনেই !
বহু দিনের পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে ! সেফ জোনের বিরুদ্ধে একটা শক্ত অস্ত্র হাতে আসছে !!






সামুর কল্প গল্পের সেরা লেখকদের একজনের আজকে জন্মদিন ! তার জন্মদিনে এই অদম ফ্যানের ক্ষুদ্র একটা কল্প গল্প !

শুভ জন্মদিন শান্তির দেবদূত ভাই !


আমার আগের লেখা আরও একটা কল্প গল্প
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×