somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যালেনটাইন স্পেশালঃ ব্লগারদের প্রথম প্রেমের গল্প গুলো !

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রেমে পড়ে নি এমন মানুষ খুজে পাওয়া আসলেই বেশ কঠিন ! কেউ সেই প্রেমে পড়ার কথাটা বলে ফেলে খুব সহজেই কেউবা বলতে গিয়ে একটু দ্বিধা বোধ করে আবার কেউ লুকিয়ে রাখে নিজের মাঝেই ! আজকে এই ভালবাসার দিনে সেই ভালবাসার কথা গুলোই বলতে এলাম । আমাদের পরিচিত ব্লগারদের প্রথম প্রেমে পড়ার গল্প ! আসুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেওয়া যাক আমাদের পরিচিত ব্লগারদের প্রথম প্রেমে পড়ার গল্প গুলো কেমন ছিল !


ইমন জুবায়ের
স্কুলের ক্লাসটিমেও গোলকিপারই ছিলাম। তবে ফলাফল ভালো ছিল না। একবার তো পাঁচ গোলও হজম করতে হয়েছে । ছোট মাঠ। কখন যে চোখের পলকে জালে বল জড়িয়ে যেত। তবে যে শ্যামলা মেয়েটিকে আমার ভালো লাগত সে পরে পাঁচ গোল খেয়েছি বলে আমায় দেখে ফিক করে হেসেছিল ...এই সুখেই কয়েকটা দিন কেটে গিয়েছিল। মেয়েটি আমাদের পাড়ায় থাকত। একই ক্লাসে পড়লেও কথাবার্তা হয়নি কখনও ... মেয়েটিকে দেখার তৃষ্ণা আসলে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রেমের উপন্যাস পড়ার ফল বলেই মনে হয়। গৌতম, শাকিল, পার্থ- পাড়ার এই বন্ধুদের নিয়ে আমি যে দেয়ালের ওপর বসে আড্ডা দিতাম, সেখান থেকে শ্যামলা মেয়েটির ঘরের জানালা চোখে পড়ত ... কয়েক মাস সাধ্যি সাধনার পর একবার চিরুনি দিয়ে ওকে চুল আঁচড়াতে দেখেছিলাম ... ব্যস, ওই টুকুই ...


শায়মা
সেদিন ছিলো ফাল্গুনের প্রথমদিন আর আমরা তখন ভার্সিটির ফার্স্ট ব্যাচ। খুব ভোরবেলা বাসন্তী হলুদ শাড়ি পরে, চোখে কাঁজল, কপালে টিপ আর গাঁদাফুলের মালা বেণীতে জড়িয়ে বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানে নাচবার জন্য আমরা ছিলাম রেডি।হঠাৎ সুমনার বড় ভাই প্রতীক, সেও একই ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ক্লাসের স্টুডেন্ট, তার সাথে দেখা। সুমনাকে ডেকে কি যেন বলছিলো সে আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমি। কিন্তু তার পাশে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা পরা ছেলেটা, শান্ত গভীর কালো একজোড়া চোখ,গায়ে তার জড়ানো রঙ্গিন উত্তরীয়, হাতে সঞ্চয়িতা। তার সেই সন্মোহনী চোখের সন্মোহন! একটি স্থির চিত্র হয়ে আটকে গেলো চিরজীবনের জন্য আমার মানসপটে। তাকে আর উপেক্ষা করা সম্ভব হলো না আমার। ভেসে গেলাম ফাগুন দিনের স্রোতে...সবুজ পালে লাগলো হাওয়া আর সে জোয়ারে আমরা তখন ভাসমান যুগল তরণী.....
গন্ধে উদাস হাওয়ার মত উড়ে তোমার উত্তরী কর্ণে তোমার কৃষ্ণচুড়ার মঞ্জরী..... আজও ফাল্গুন আসে .......হাওয়ায় ওড়ে রঙ্গীন উত্তরীয়। বিস্মিত সেই তরুণ বালক ফেরেনা আর। তার কথা আমি লিখেছিলাম আমার বসন্তদিন সিরিজে। গল্পটা ছিলো, গল্পের নায়িকা ছিলো লেখিকা হয়ে, শুধু নায়কের অনুপস্থিতিতে প্রতিফলন লিখেছিলো চন্দনের কথা। হ্যাঁ চন্দন, দেশ ধর্ম, জাঁত পাত কোনো কিছুতেই মিল হয়নি আমাদের....... তবুও চন্দন ছিলো আমার সে কিশোরীকালের এক অবাক বিস্ময়!!! তরুণ হাসির আড়ালে কোন আগুন ঢাকা রয় ! একি গো বিস্ময়!!!! অস্ত্র তোমার গোপন রাখো কোন তূণে!!! জানিনা কোন সে গোপন লুক্কায়িত তূনে শরবিদ্ধা ছিলো সে হরিনী! বার বার আমার লেখায়, গানে বা কবিতার খোকাভাই এর বর্ননায় আমি চন্দনকেই এঁকেছি। নানা রূপে,নানা বর্নে নানা ঢঙ্গে .........
কোন দেশে যে বাসা তোমার কে জানে ঠিকানা কোন গানের সূরের পারে ... তার পথের নাই নিশানা তোমার সেই দেশেরই তরে, আমার মন যে কেমন করে ........ তোমার মালার গন্ধে তারই আভাস প্রাণে বিহারে.....


মুশাসি (শাহজাহান সিরাজ)
ঘটনা ঘটেছিলো ফ্যান্টাসি কিংডমে। ক্লাস এইটে পড়তাম তখন।প্রথমবার ঘুরতে গিয়েছি সেখানে। ফ্যামিলির সাথে। বেশ কিছু রাইডে চড়ার পর একটা ব্রীজের মতো যায়গার একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাত দেখি ওপাশ থেকে এক মেয়ে আসছে। আমার বয়সী। শীতকাল তাই পরনে ছিলো একটা হুডি। জিন্স। কেডস। কিন্তু মেয়েটা হাঁটছিলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। প্রথমে ভাবলাম ক্লান্তি জনিত কারনে। পরে বুঝলাম যে মেয়ের ডান পায়ে আসলেই সমস্যা। দেখেই মায়া লাগলো এবং সম্ভবত মায়া থেকেই প্রেম! প্রথম প্রেম।
সেই মেয়ে ছিলো তার ফ্যামিলির সাথে। আমিও তাই! কথা বলতে পারি নি। কিন্তু এরপর প্রায় সব রাইডেই ওদের পেছন পেছন উঠেছিলাম। চলে এলাম বিকেলে। কিন্তু মন থেকে গেলো সেখানে। সেই ছোট বয়সেই টানা তিন দিন মেয়েকে নিয়ে দিন রাত চিন্তার মধ্যে কেটেছিলো। এরপর আর কোনোদিন দেখা হয়নি। ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায় মেয়েটার কথা। প্রথম প্রেমের স্মৃতি নিয়ে লিখতে গিয়ে এই মেয়েটির কথাই কেন যেনো মনে এলো!

শিপু ভাই
আমি প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম ক্লাস থ্রি তে। মেয়ে ক্লাস ফোরে পড়তো। আমার বড় বোনের (কাজিন) বান্ধবী ছিল। আমাকে ছোট ভাই হিসেবে ব্যপক স্নেহ করতো। তার স্নেহে পিছলা খাইয়াই আমি প্রেমে পড়ে গেছিলাম। কিন্তু সেটা তাকে কখনো জানানো হয় নাই। কিন্তু সত্যিকারের প্রথম প্রেম ছিল আমাত কলেজ লাইফের শেষ দিকে। মেয়ে অন্য কলেজে পড়তো। ৬ মাস ধুমসে প্রেম করেছি, প্রায় প্রতিদিনই ডেটিং করেছি। তখন মোবাইল তত এভেইলেবল ছিল না। যেদিন দেখা হত সেদিন পরবর্তি দেখা করার দিন ক্ষন ঠিক করতাম। কোন কারণে সেদিন মিস হলেই শুরু হত অনিশ্চয়তা। কারন কবে কোথায় দেখা হবে জানি না। যোগাযোগেরও কোন উপায় নাই। এমনও হইছে যে দেখা করার কথা সকাল ১০ টায়। কিন্তু সে না আসায় আমি সন্ধ্যাবধী অপেক্ষা করেছি রাস্তায় দাঁড়িয়ে। টানা ৭ দিন। সে অসুস্থ ছিল। সে আমাকে "আপনি" করে বলতো। কথাও খুব কম বলতো। আমাদের দুজনের ইন্টার পরীক্ষার সিট একই কলেজে পরেছিল পাশাপাশি ভবনে। ঘন্টা পরার আগ পর্যন্ত সে আমার রুমে এসে বসে থাকতো। ছুটির পর একসাথে বের হতাম। পরীক্ষার পর দেখা সাক্ষাতের কোন সুযোগ রইলো না। ৩ মাস অসহ্য যন্ত্রণাময় অপেক্ষা আর তার বাসার সামনে দিয়া ঘুরঘুর। রেজাল্টের দিন শেষ দেখা। তার শেষ কথা ছিল- "আমাকে ভুলে যাবেন না। আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না। বিদেশে পড়তে যাওয়ার কোন দরকার নাই।" বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। আবার ৩ মাস দেখা নাই। আসলে আর দেখাই হয় নাই। আজ পর্যন্ত না। শুধু ৩ মাসের মাথায় জেনেছিলাম যে তার বিয়ে হয়ে গেছে এবং এটা এফেয়ার করে।
এবং সেই লোকের নামও শিপু ! :(


নোমান নমি
প্রথম কথা হল, প্রথম প্রেম বলে কিছু নেই। প্রথম প্রেম শব্দটা ইউজ করে প্রেমকে দ্বিখন্ডিত ত্রিখন্ডিত করার অপচেষ্টা কেবল। তবুও হিসাব থাকে, প্রথম কোনবার বুক ধুক করে উঠেছিলো, প্রথম কার জন্য পাগল হয়ে বাম হাতের ঘড়ি ডান হাতে উল্টো পরে ছ'টায় কে বারোটা দেখেছে। থাকে এমন বিষয়, ওটাই প্রথম প্রেম না বরং প্রেমে পড়ার শুরু। আমার শুরুটা হয়েছিলো ক্লাস সিক্সে থাকতে। মেয়েটাকে প্রথম দেখেছিলাম বই বুকে চেপে ক্লাসে ঢুকতে, চোখে কাজল, ঠিক ঠোঁটেরে পাশে একটা তিল। আমার প্রায় ইচ্ছা হত গিয়ে তিলটা ধরে দিই। সাহস করতে পারিনি। দুজন দুই সেকশনে পড়তাম। ফলে দেখা হতো খুব কম। কেবল ধর্ম ক্লাসে দেখা হতো, আর হাবলাম মতো তাকিয়ে থাকতাম। স্যার পড়াচ্ছেন আখলাক, আর আমি ওর তিলে নিজের আখলাক বিসর্জন দিচ্ছি। আমার দৃষ্টি বিনিময়ের প্রতিদানে সে দৃষ্টি বিনময় দিতো। তারপর কেবল চেয়ে থাকা। দুচোখ চার চোখ। এভাবেই যাচ্ছে, যেতে দিতে হচ্ছে। ক্লাস সিক্স সাহস জুগাতে পারিনি। চেয়ে থাকার এই পথ চলে যাচ্ছে, ক্লাস সিক্স, সেভেনে উঠে গেলো। আমার বই পাল্টে গেলো, তার ব্যাগের কালার পাল্টে গেলো। দুজনের ক্লাসের রোল পাল্টে গেলো, কেবল আমাদের দৃষ্টি পাল্টালো না। বোবা মুখ সবাক হলো না।
আমি তখন ধুরুধুরু মনে চেয়ে থাকি, একদিন অংক স্যার এসে বললেন "কাসাফাদ্দৌজা নোমান তুমি এদিকে আসো"। গেলাম, স্যার কিছু জিজ্ঞেস করলেন না, বললেন "অংকে পাস ৪৩ আর পেরেম করস পেরেম?
সেবারই প্রথমবার আমার প্রথম প্রেম প্রথম অপমানে, প্রথম অভিমানে মরে গিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো।


স্বপ্নবাজ অভি
প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম যখন এস এস সি দিবো , ঠিক তার আগে ! প্রেমে পড়ার পাত্রী খুবই সুন্দরী এবং ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন ছিল ! এমন আরেকজন আমি আজো পাইনি , সে ছিল আমার বন্ধুর কাজিনের ক্লোজ ফ্রেন্ড ! সে হিসেবেই পরিচিয় !~ একদিন পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে স্কুল থেকে হেটে আসছিল , আমি প্রপোস করবো তাই ! তার উত্তর ছিল আমি এখন অনেক ছোট ! তারপর বড় হবার অপেক্ষায় ছিলাম ! এক সময় ঢাকায় চলে এলাম ! তারপর কিছু সঙ্গত কারণে আমি আর জানতে পারিনি সে বড় হয়েছে কিনা!

অপর্ণা মম্ময়
আমার ছোট বেলার প্রথম ভালো লাগাটা কাজ করেছিলো আমার চেয়ে নয় বছরের বড় ফুপাত ভাইকে ঘিরে। আমি তখন ক্লাস থ্রী তে পড়ি। গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম বেড়াতে। সময়টা বর্ষাকাল। নৌকায় আমি আমার বাবা আর আমার আপা যাচ্ছিলাম দাদীর বাড়ি থেকে নানীর বাড়ি। আর আমার কাজিন আর আরেক চাচা( বাবার কাজিন ) নৌকায় করে দাদীর বাড়ি দিকেই যাচ্ছিলো নদীতে সাতার কেটে। উনিও গ্রামে বেড়াতেই গিয়েছিলেন।
আমার সেই কাজিন ( বাবার চাচাতো বোনের ছেলে ) বাবার সাথে নৌকা থামিয়েই কথা বলছিল এবং এক পর্যায়ে বলল - মামা, আপনার এই পিচ্চি মেয়েটাকে তো আগে দেখি নি। একে কোথায় কুড়িয়ে পেয়েছেন ?
আমি ক্ষেপে গিয়ে বললাম - এতো বাজে কথা কোথায় শিখছেন? এরপর আব্বাকে বললাম - চলো তো এখান থেকে। এই ছেলের সাথে কথাই বলবা না ।
এরপর সেই কাজিনকে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসতে দেখলাম চার বছর পর। তারপর থেকে প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতেন। উনাকে দেখলেই আমি লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতাম। কারণ উনি আসলে আমার ভয় ভয় লাগতো, গলা শুকিয়ে আসতো, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতো। আর উনি চলে যাবার পর মনে হতো অনেক জ্বর এসেছে। তবে উনি কখনোই বলেনি আমাকে কিছু, আমিও বলিনি। কিন্তু বুঝতাম উনাকে আমার খুব , খুব ভালো লাগে। আমাকে ভুল ক্রমে সামনে পেলে কোন মেয়ের সাথে কোথায় কোথায় প্রেম করেছে সুযোগ পেলে তাই আমাকে শোনাতো। তাই আমি বুঝতে পারিনি কখনো আমাকেও উনি পছন্দ করেন। তবে আমার বিয়ের পর বলেছিলেন, ফুপুও দুঃখ করেছিলেন। বুয়েটে পড়তন উনি। ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারের শুরুতেই আমার বিয়ে হয়ে যায়, উনিও পড়াশুনা করতে সিঙ্গাপুর চলে যান। এরপর আমেরিকাতে। শেষ দেখা হয়েছিলো ২০০১ এ। এরপর উনি আর বাংলাদেশেই আসেন নাই। এভাবেই আলো বাতাসের অভাবে আমার প্রথম প্রেমটা ধুঁকে ধুঁকে মারা গেলো, আফসুস !

S.r. Jony
লালমাটিয়া মহিলা কলেজের পিছনে দাড়িয়ে আছি, দুর থেকে নীল শাড়ি পড়া মেয়েটাকে হেটে আসতে দেখছি। নাহ, একটুও বদলায়নি মেয়েটা, সেই প্রথম যেরকম দেখেছিলাম সেই রকমই আছে। ইশ!! আমি যদি ওর মত ফিগারটা ধরে রাখতে পারতাম!!! নিজের ভুড়িতে হাত বুলাই আর ভাবি।
-এই, কি ভাবছ?
-কিছু না, চলো।
আগে থেকেই রিক্সা দাড় করানো ছিল, আমরা রিক্সায় চড়ে শীতের কুয়াশাছন্ন সকাল উপভোগ করছি।
-গতকাল তোমার স্টাটাস পড়ে খুব মন খারাপ হয়েছিল।
-তাহলে চলে আসতে, আমরা ঘুড়তাম।।
-কি ভাবে আসব, কাল স্কুল ছিল তো,
- ওহ, তুমি এখনো স্কুলে আছ, আর আমি দেখো কত বড় হয়েছি। পড়াশুনা শেষ করেছি, চাকুরী করেছি, এখন ব্যাবসা করছি।
- সেটা তোমার দোষ, তুমি আমাকে বড় হতে দাওনি, এখনো স্কুলে রেখেছ, স্কুল গোয়িং গার্ল।
-কি করব, আমি যে তোমায় বড় হতে দেখিনি। থাকো,আমার কল্পনায় তুমি স্কুলে পড়ুয়া সেই ছোট্র মেয়েটিই থাকো, যাকে আমি অসম্ভব ভালবাসি।
-তুমি একটা পাগল।

আমরা দুজন দুজনার হাত ধরে রিক্সায় ঘুরছি, মিরপুর বেরিবাধ দিয়ে আশুলিয়া যাচ্ছি, চারিদিকে ঝাপসা কুয়াশা, পাশে শান্ত নদী, কল্পনায় হারাচ্ছি, সাথে আমার প্রথম ভালবাসা "শশী"।

মাহী ফ্লোরা
প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম ক্লাসে সেভেনে ! এক বড় আপুর বিয়েতে শখ করে শাড়ি পরেছিলাম । বিয়ের পরের দিন মেয়ে আনতে গেলাম । খুজে খুজে আমাকে অন্যরা বলল গতকাল কি হইছিলো রায়হানের ! ফেরার পথে আমরা গাড়িতে । রায়হান আসলো । গাড়ির জানালা দিয়ে আম্মুকে বলল আন্টি আবার আসবেন । আর আমার হাতের ভিতর একটা প্রায় শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ গুজে দিয়া হাওয়া । আমি পরে খুলে দেখি তাতে ছোট্ট করে ঠিকানা লেখা আর লেখা অপেক্ষা করবো । রায়হানের সাথে আমার আর কথা হয়নি । তবে মাঝে মাঝে চোখিচোখি হত বিভিন্ন পরিবেশে ! হয়তো সে অপেক্ষা করেছিল । এখন হারিয়ে গেছে !


চিরতার রস
তখন ক্লাশ নাইনে পড়ি সাইন্সের খুব ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলাম। তবে আমার ধ্যান ধারণা জুড়ে ছিল ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, দাবা, ফুটবল ইত্যাদি। সারাদিন মাঠে মাঠে পইড়া থাকতাম। রাতে বন্ধুদের সাথে আম কাঠাল চুরির মিশনে যোগ দিতাম। আম্মা কানে ধইরা ধইরা পড়াইতে বসাইতো। তারপরেও সবকিছু ঠিকঠাক চলতেছিল। ওহ একটা ব্যাপার বলে নিই। আমরা ছোট থেকেই আমাদের নানুবাড়ির এলাকাতেই বড় হই। যদিও আমাদের আলাদা বাড়ি ছিল। আমাদের বাড়ি আর নানুবড়ি অনেকটা পাশাপাশি। আমাদের নানুবাড়ির পাশেই খোলা একটা মাঠ ছিল। ওখানে আমরা ক্রিকেট খেলতাম, ফুটবলের সিজনে ফুটবল, ব্যাডমিন্টনের সিজনে ব্যাডমিন্টর খেলতাম। রাতে এই মাঠে আশেপাশের সবাই বসতো। গল্প করতো। সবাই আমাদের পরিচিতজন। একদিন রাতে বন্ধুদের সাথে মাঠের উপর দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম আমার ছোটমামা আর অন্যান্য কাজিনরা বসে আড্ডা দিচ্ছে। সকলের মুখই আমার পরিচিত। কিন্তু ওদের সাথে আরও একটি মেয়ে আছে। যাকে আমি হালকা আলোতে চিনতে পারলাম না। আধো আলোতেও তার মুখ থেকে জোসনা ছড়াচ্ছিল কিন্তু আমি কাওকে আগ্রহ নিয়ে জিগাইলামও না ওইডা কেডা। তার পরের দিন ছিল ছুটির দিন। আমার বড় মামার পিচ্ছি পোলার জন্মদিন। আমার মাথায় এইসব অনুষ্ঠানের কথা মনেও থাকতোনা আর আমি জাইতামও না। সময় পাইলেই খেলা। হুদাই টাইম নষ্ট করতাম নাহ। আমি রেডি হইয়া ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে যাইতেছিলাম। ঘর থেকে বাইর হইয়া একটা অপূর্ব সুন্দরীর সামনাসামনী পড়লাম। মনে হয় আমার মাথায় পিয়ানোও বাজতেছিল। অপূর্ব সুন্দরী কেবলমাত্র গোসল সাইরা ভিজা শরীরেরই আমাদের বাসার উপর দিয়া যাইতেছিল। মনে হয় আমাদের বাড়ির পুকুরেরই গোসল সারছে। আমার সামনে পইড়া তিনিও অনেকক্ষণদাড়াইয়া ছিলেন। বলা বাহুল্য আমিও দেকতে খারাপ ছিলাম নাহ যাই হোক, অনেকক্ষণ চোখাচোখি হইল। তারপর তিনি যাওয়ার পথে আমার মামাতো বোনকে আমার কথা জিগেগেস করলো যে, আমি কে? সেটাও আমি শুনতে পাইলাম। আমার মামাতো বোন বললো এটা আমার ফুপাতো ভাই। এরপর সুন্দরী আমার দিকে আবারও সুনজর দিয়া তার গন্তব্যস্থানে চইলা গেলো। আমি পিছনে খাড়াইয়া তারে দেকতে লাগলাম। মামাতো বোনরে জিগাইয়া জানতে পারলাম মাইয়াডা আজ ৩ দিন যাবত বড় মামার বাড়িতে আইছে। তিনি বড় মামার বন্দুর মাইয়া। বাড়ি নরসিন্দি। হালার এই রকম একটা মাইয়া ৩দিন ধইরা আমার বাড়ির উপ্রে দিয়া যায় আসে আর আমি জানিনা? ক্রিকেট খেলার মায়রে বাপ। ভদ্র ছেলের মত জন্মদিনে যাওয়ার লাইগা বাবু সাজতে লাগলাম। সবাই তো অবাক আমি অনুষ্ঠানে যামু দেইখা। কেউ তো জানেনা কাহিনী কুনখানে। আমিতো মাইয়ার লাইগা ফিদা। মামতো বইনরে কইলাম আমার লাইগা উকালতি করতে। অনুষ্ঠানে মামতো বইন আমারে হের লগে পরিচয় করাইয়া দিলো। লগে আমার এক বস্থা প্রশংসা করলো। মাইয়াও দেখি খুশী। জানলাম সে আমার ব্যাচমেট আর নাম লাবন্য। মামতো বইন হেরে কইলো তুমি না কইলা বোর হইতেছিলা। কাইল থাইকা তুমি তপুর লগে ঘুইরে যাইবা। দেখবা আর বোর লাগবো নাহ। আমার কাম তো পুরাই কিলিয়ার। হের লগে একটানা ২ঘন্টা গল্প করলাম। সবাই দেখি আমাগোর দিকে তাকাইয়া মিটমিটাইয়া হাসতেছে। লক্ষন খারাপ দেইখা আইয়া পড়তে লইছি। আসার সময় আমার ছোট খালা আমারে ফাকে ডাক দিয়া সাবধান কইরা দিলো। কইলো মাইয়াডা ভালা না। খেয়াল কইরা ভাগিনা। আমি ভাবলাম খালায় আমার শত্রু। এমন একটা সুন্দরীরে খালায় খারাপ কইতে পারলো? পড়ের দিন থাইকা আমার খেলাধুলা বন। বন্ধুরা আমারে খুইজা পায়না । আমার স্কুলেও আমি অনুপস্থিত। মাইয়ার লগে নদীর পাড়, বন বাদার ঘুরতে লাগলাম। তার কথা আমি বিমহিত হইয়া শুনি। সেরাম কন্ঠ ছিল। মনডা জুরাইয়া জাইতো। আরো যা যা হয় আরকি। বানাইয়া লেইখো অপু। কিন্তু আমি তারে ভালুবাসার কতা কইনাই। দিধাদন্দে ছিলাম। কয়দিন পড়ে সে নরসিন্দি গেলেগা। আমারে তার ঠিকানা দিয়া গেলো । চিঠি লেখতে কইলো। তখন মুবাইল ছিলনা। সবার বাসায় টেলিফোনও ছিলনা। চইলা যাওয়ার পর আমি আর আমি নাই। কিছুতেই মন নাই ব্লা ব্লা ব্লা। একটা চিডিও লেখছিলাম। কিন্তু পাঠাইনাই। আমার এই অনুভুতিগুলো অনেক শক্তিশালি ছিল। ফাইনাল ঘটনা কই তাইলে। কিছুদিন পরে আমার চাচাতো মামার বিয়া ঠিক হইলো। শুনলাম বিয়াতে লাবন্যও আসতেছে। আমার খুশিতে ............. ও আসলো। আমার আমি হাসিখুশি। বিয়াতে অনেক মজা হলো। আমার কথা মতো ও আমার পছন্দের শাড়ি পড়লো। খোড়ায় গোলাপ দিল এক রিকসায় হলুদে গেলাম। বিয়াতে অনেক সুন্দরীরা আইছিলো। তাই আমার কদরও বাইরা গেলো। আমি সুন্দরীদের মধ্যমনিতে পড়িনত হইলাম। বিয়ার পড়ে একদিন এলাকার একটু বাইরে ক্রিকেট খেলতে গেলি বন্দুদের সাথে। এক বন্দু আইসা কইতাছে দোস একটা জিনিস দেখলাম জলদি আয়। ও লাবন্যরে চিনতো। দূর থাইকা দেখলাম লাবন্য একটা ছেলের সাথে অন্তঙ্গভাবে হাটাহাটি করতাছে। আমারা একটু আড়ালে ছিলাম তাই আমাদের দেখছিল না। জায়গাটা একটু নির্জনও বটে। প্রেম করার জন্য যথেস্ট সুবিধার। প্রস্তুতি নিতেছিলাম পোলাডারে গিয়া ঘারাইতে। বাট পোলার চেহারা দেইখা আমার মাথায় আকাশ ভাইঙা পড়লো । দেহি আমার চাচতো মামা। যার তিন দিন আগে বিয়া হইছে :P:P:P কি আর কমু কও? ফাইনালি আমার খালার কথাই সত্য হইলো। আর আমার পরথম পেমেরও ইতি ঘটলো। যতদূর জানি লাবন্য এখন দুই সন্তানের জননী হইছে।

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়
প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম কাজিনের । আমার তখন বারো বছর বয়স , কাজিনের সতেরো। ছোট্টবেলার প্রেম তো ,লুকিয়ে লুকিয়ে কাজিনরে দেখতাম। চোখে চোখ পড়লেই লজ্জায় লাল হয়ে যেতাম । কাজিন সেটা বুঝতে পারতো কিনা জানিনা, তবে বড় হতে হতে খুব তাড়াতাড়িই আমি বুঝে ফেলি যে , আমাদের সমাজে কাজিনের সাথে প্রেম করা যায়না, বড়দের সাথে তো না ই ।
ব্যাস,এই তো এভাবেই ছোটবেলার প্রেম ছোটবেলাতেই রয়ে গেল । এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আর উনি বাংলার লেকচারার ।

কাণ্ডারি অথর্ব
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। রোজ সকাল বেলা সূর্য মামা জাগার আগে নয় বরং ভর দুপুরে সূর্য যখন মাথার উপর এসে যেত তখন সুখের ঘুম ভাঙত। জীবনে হঠাৎ করেই প্রেমের দুর্যোগ নেমে এলো। মন কেড়ে নিল পাশের বাড়ির একটি মেয়ে। তার চোখের চাহনি দেখলে কলিজার রক্ত শুকিয়ে পানি হয়ে যেত । ডাগর ডাগর চোখ দিয়ে ড্যাগারের মত যেন কলিজাটা ফালা ফালা করে ফেলত । উফ সেকি প্রেম জেগে উঠত হৃদয়ের গহীনে। সব মিলিয়ে প্রেমিক মন নিয়ে স্কুল ফাকি দিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা বখাটে ছেলেদের মত অথবা ছাদে উঠে ফিল্ডিং মারাই হয়ে উঠল দৈনন্দিন কাজের অংশ। সাথে যোগ দিল বস সালমান শাহ এর সব বিখ্যাত বিখ্যাত সিনেমা স্বপ্নের ঠিকানা , স্বপ্নের পৃথিবী, অন্তরে অন্তরে আরও কত কি । টেনশনে টেনশনে শেষ পর্যন্ত সিগারেট ধরে ফেললাম। দীঘল ঘন কালো চুলের সেই মেয়েটিকে ভালোবাসে কিন্তু কখনো সাহস করে বলতে না পারার যন্ত্রণা থেকেই এই ধূমপানের শুরু। যখনি বলতে যাই তখনি শরীরে জ্বর চলে আসত। নাহ প্রেম বুঝি তার আর এই জীবনে হবেনা ।
অনেক ভেবে ভেবে আর দোকান থেকে বাকিতে সিগারেট কিনে খেয়ে খেয়ে পাহাড় সমান দেনায় ডুবে গেলাম। এই সিগারেট খরচ বহন করার জন্য শুরু হল বাইরে কোচিং ক্লাসে পড়াশোনা যদিও কোন প্রকার কোচিং এ কখনো যাওয়া হয়নাই শুধু মাস শেষে বাবার কাছ থেকে কোচিং এর জন্য বেতন নিয়েই কোন রকম সিগারেটের খরচ চালিয়ে নেয়া হত। মনে মনে একটা পরিকল্পনা করে ফেললাম। আর কত কাল এভাবে চুপ করে থাকব। দেখা যাবে ততদিনে তার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে বাচ্চা কাচ্চার চাচা হয়ে গেছে। না কিছুইতেই না । এই অপমান মেনে নেয়া যাবেনা । তাই তার এক বান্ধবীকে খুঁজে বের করলাম। আপাতত পরিকল্পনা হল যে তার বান্ধবীর কাছে একটা চিঠি দেবো এবং তার প্রতিক্রিয়া জেনে নেবো তার বান্ধবীর কাছ থেকে। যেমন পরিকল্পনা তেমন কর্ম। দোকান থেকে পঁচিশ টাকা দিয়ে খুব দামী একটা কলম কিনলাম। তারপর একটা ছোট কাগজে লিখলাম শুধু আই লাভ ইউ। ব্যাস সেই কলম আর চিরকুট নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম রাস্তায় । সামনে দিয়ে হেটে চলে গেল সে কিন্তু তাকে আর কলম ও চিরকুট দেয়া হলনা। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই শরীরে জ্বর চলে এলো।
এরপর থেকেই আমার জীবনে নতুন বসন্ত এলো। আমি প্রতিদিন নতুন নতুন জামা পরে হ্যাভি মাঞ্জা মেরে বারান্দায় দাড়াই , ছাঁদে উঠি গলিতে নেমে বাচ্চাদের সাথে ক্রিকেট খেলি যদি একবার একবার সে এসে বারান্দায় দাড়ায় । রাত দিন ভুলে গেলাম শুধু ছট ফট করতে থাকি আর বারান্দায় যেয়ে দাড়াই। আমাদের স্কুল যেমন এক ছিল তেমনি বাড়ি ছিল গলির সামনা সামনি। তবু আমার ভিরু মনের কারনে প্রেম হতে বেশ সময় লেগে গেল। এর পর একদিন তাকে সাহস করে সেই পঁচিশ টাকা দামের দামী কলম আর চিরকুটে লেখা আই লাভ ইউ দিয়ে দিলাম। ব্যাস প্রেম আর ঠেকায় কে। তখন অবশ্য আজকের দিনের মত এমন ডেটিং করার সুযোগ ছিলনা অথবা মোবাইল ছিল না যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বোলে রাত পার করে দেয়া যেত। বাসায় একটা টি এন্ড টি ফোন ছিল সেটাও ছিল বাবার ঘরে তাই সেটা দিয়েও কথা বলতে পারতাম না। আমাদের প্রেম ছিল শুধু ছাদ আর বারান্দা কেন্দ্রিক।
শুরু হল আমার অমর প্রেম কাহিনী। আমি আর দুপুর বেলা ঘুম থেকে উঠি না। সূর্য মামা জাগার আগেই খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠা শুরু করলাম।

আমি তুমি আমরা
প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম কেজিতে থাকতে। একসাথে দুই জমজ বোনের প্রেমে পড়েছিলাম তাদের দেয়া ক্যাটবেরি খেয়ে...

জেরিফ
নাম রিমি , আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর ছোট বোন । ২০০৭ এর মাঝা মাঝি । প্রায় হাফ প্যান্ট পরা অবস্থা থেকে দেখে আসছি তাকে হঠাৎ কোন এক সকালে ওদের বাসায় যায় তারপর আর চোখ ফেরাতে পারিনি , পরনে একটি হলুদ সেলোয়ার কামিজ । প্রপোজ করেছিলাম ১ বছর পর , কিন্তু কিছুই বলে নি , আর আমিও আজো তার অপেক্ষা, প্রতিটি প্রহর ।


*কুনোব্যাঙ*
ক্লাস ওয়ানে থাকতে মনেমনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বড় হয়ে এক মেয়েকে বিয়ে করব। সেই মেয়ে আমার এক ক্লাস উপরে পড়তো। কিন্তু তার ২/৩ বছর যেতে না যেতেই তারা সপরিবারে চিরস্থায়ী ভাবে ইন্ডিয়া চলে যায় আর প্রেম রোমান্স বোঝার পর যদি বলা হয় তাহলে বলবো, সে সময় টিভিতে "দ্যা গার্ল ফ্রম টুমরো" নামে একটা টিভি সিরিজের প্রধান চরিত্র এলানা'র প্রেমে পড়েছিলাম।

কাল্পনিক ভালবাসা
স্কুল জীবনে কার যে কত প্রেমে পড়ছি, তার খেয়াল নাই। আমাদের সময়ে প্রেম কি বুঝার আগেই প্রেম প্রেম ভাব হত। ফলে আমরা মোটামুটি প্রতিদিনই প্রেমে পড়তাম। যতদূর মনে পড়ে কলেজে একবার একটি মেয়েকে দেখে আমার মধ্যে বেশ একটা প্রেমবোধ নাড়াচাড়া দিয়ে উঠেছিল। এখনকার দিনের আধুনিক ফটোসুন্দরীদের তুলনায় বেশ সাধারন একটা মেয়ে। তাকে দেখে বুঝেছিলাম, মেয়েদের আসল সৌন্দর্য তাদের শ্যামলা বর্ণে, গৌর বর্ণে নয়। এই মেয়েকে নিয়ে অনেকগুলো প্রেমের চিঠি লিখেছিলাম। বাঙ্গালীর লেখালেখি কিংবা কাব্যচর্চার হাতে খড়ি হয় কোন প্রেম বা বিরহের মত নির্মম জিনিসের হাত ধরে। আমারও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। ডায়রীর পাতায় পাতায় ছিল, সেই তরুনীর প্রতি আমার ভালোবাসার কথা। কিন্তু বরাবরের এই দূর্বল আমি কখনই জানাতে পারি নি আমার মনের কথা। চিরকালই সেটা রয়ে কাল্পনিক কোন ভালোবাসা

রিয়েল ডেমোন
প্রথম প্রেম মনে নাই ঠিক। তবে যতটুক মনে পড়ে, পাশের বাড়ির সমাপ্তি আপার প্রেমে পড়ছিলাম। সে আমার হোম টিউটর ছিল। সবাই রহিম-রুপবান বইলা খেপাইত। আমি তাদের বাড়ির দিকে মুখ করে গান গাইতাম, পড়েনা চোখের পলক-কি তোমার রুপের ঝলক।

সান ড্যান্স
ইন্টারমিডিয়েটে কেমিস্ট্রি পড়তাম বিমান স্যারের বাসায়। আমি স্টুডেন্ট হিসেবে গাধা ছিলাম । স্যারের পর্যায় সারনীর হ্যান ত্যান আমার মাথায় আসত না । স্যার আমারে খুব একটা সহ্য করতে পারতেন না । আমাদের ব্যাচমেট ছিল হলিক্রস, আর আমরা ছিলাম রেসিডেন্সিয়াল, বারবার হলিক্রসের কাছে সাপ্তাহিক এক্সামে আমরা হেরে খুব ক্ষেপে গেলাম । আমরা যত ভালই লিখিনা ক্যান, নাম্বার হলিক্রসের উইনি নামের এক মেয়ে আমাদের চেয়ে আধা হলেও বেশী পাবে । ইজ্জত কা সওয়াল । আমি ঠিক করলাম স্যারের দেয়া হ্যান্ডনোট কপি করব, ঐটা দেখে লিখলে নিশ্চই নাম্বার কম দিতে পারবে না । তো পরের শুক্রবার এক্সাম হইল । ডেস্কের উপরে খাতা, আর আমার ক্যালকুলেটর আর বাম হাত ভর্তি স্যারের হ্যান্ডনোটের কপি । জাজাকাল্লাহ খায়ের টাইপ এক্সাম দিলাম । ২৫ এ এক্সাম হইত । শনিবার রেজাল্ট দিল । আমি সান ড্যান্স ২৩ । উইনি আইরিন ২৩.৫ । আমি আর পারলাম না । ক্লাসের মাঝেই স্যারকে বইলা বসলাম ।
স্যার আমারে কি আপনার অপছন্দ?
স্যার কয় ক্যান?
আমি বললাম আমি একটু উইনির খাতাটা দেখতে চাই
স্যার বলে কি করবা?
আমি বললাম স্যার আপনার হ্যান্ডনোটের মান আরো হাফ মার্ক বাড়াব
সত্যি কথা কইলাম । স্যার আমি আপনার নোট কপি করছি, আপনে তাতে আমারে ২৩ দিছেন, ওরে আধা বেশী দিছেন । আমি কি দোষ করছি?
স্যার কয় মায়ের জাত তো, ভালোবাইসা দিছি
আমি বললাম আমিও তাইলে ভালোবাইসা দেখি
স্যার বলল, ঠিকাছে, তোর উপর আমার দোয়া রইল
উইনি এখন যদ্দুর জানি আইবিএ থেকে বের হয়ে আমেরিকা থাকে, দুইটা কিউট বাচ্চা আছে বলে শুনেছি

শুটকি মাছ
ক্লাস টেনের শেষের দিকের কথা । আমার চারপাশের সব ক্লাসমেটরা ধুমায়ে নায়ক গায়ক খেলোয়ারদের নিয়ে মাতামাতি করছে। এক বান্ধবী আবার এর ভিতর কোন এক ক্রিকেটারের জন্মদিন সেলিব্রেট করে ফেলল। তখন আমার মনে হল আমারো কারো প্রেমে পড়া উচিত। আমিও তাড়াতাড়ি সাকিব আল হাসানের প্রেমেপড়ে গেলাম। একটা ডায়েরী বানিয়ে সেখানে সাকিব আল হাসানের ছবি লাগাতে শুরু করলাম। তখন অবশ্য সাকিব আল হাসান উঠতি ক্রিকেটার ছিলেন। আমার কিঞ্চিত ধারণা আমি তার প্রেমে পড়ার কারণেই আজকে তার এই রমরমা অবস্থা! আমার সেই প্রেম দুই বছর টিকেছিল। কারণ এরপরের আমি সত্যিকারের প্রেমে পড়েছিলাম।সেই গল্প নাহয় নাই বলি!


হিমু নিয়েল
ক্লাস ফোরে থাকতে প্রথম প্রেমে পড়ি । মেয়েটা মাথায় একটা ক্লিপ পড়ত যেটা দেখে মনে হত একটা জীবন্ত প্রজাপতি বসে আছে তার চুলে । আর তার চঞ্চল সভাবটাও ভাল লাগত । কিন্তু যেহেতু ম্যান_ইজ_এরশাদ (মানুষ পরিবর্তনশীল) সেহেতু এখন মেয়েটা শুধুই ক্লাসমেট হিসেবেই রয়ে গেছে ।

শাকিল ১৭০৫
ক্লাস টেন এ পড়ি মনে হয় তখন! হটাত বলা নেই কওয়া নেই ঝুপ করে একজনের প্রেমে পড়ে গেলাম! ক্লাসমেট ছিলো সে আমার, এতদিন দেখলে ও ওইদিন ই হটাত করে তার প্রেমে পড়ে গেলাম! সবচেয়ে বড় কথা হলো একসাথে এক ঈ স্যার এর কাছে এক ই ব্যাচ এ পড়তাম আমরা! সকালে একসাথে স্কুলে যাওয়া আর বিকালে ওর সাথে ফিরা!ভালোই চলছিলো! যেদিন প্রপোজ করবো তারে ভাবছিলাম ওইদিন সকাল এ হটাত সে আমার রুমে এসে হাজির! বলাবাহুল্য ওর বাড়ি আর আমার নানুর বাড়ি একই জায়গায় ছিলো আর আমি কিছুদিন ওইখানে ই ছিলাম! আরে এতো দেখি মেঘ না চাইতে ই বৃস্টি! বলে দেবো নাকি ভাবছি,এমন সময় ও বইলা উঠলো তোরে একটা জিনিষ দেবো তুই কাওরে না জানাইয়া একজনের হাতে দিতে পারবি? কেনো নয়!কি বল? দেখি আমার হাতে একটা চিঠি ধরাইয়া দিয়া কয় এটা ওর হাতে দিতে পারবি? যাহা বুঝিতে পারিয়া প্রথম প্রেমের ইস্তফা ওই দিন ই দিলাম! এবং এখনো প্রেম থেকে বহুত দূরে আছি!

অন্ধকারের রাজপুত্র
তখন আমি বড়জোর ক্লাস ৩ এ পড়ছি। পড়ালেখা মোটেও করতাম না। দিনরাত শুধু খেলার সাথীদের সাথে রেডি, লুকোচুরি এই টাইপ খেলায় দিন গড়িয়ে যেত।ঐ দিনগুলোতে খেলার সাথীদের মাঝে ছেলে মেয়ে কোন ভেদাভেদ ছিল না। একদিন আমাদের মাঝে নতুন একজন খেলার সাথী যোগ হল। তার মাথায় চুল ছিল না অর্থাৎ সহজ কথায় সে ন্যাড়া ছিল।আমার এক প্রকার বৈশিষ্ট্য ছিল কমিউনিটিতে নতুন কেউ এলে তার সাথে শুরু থেকেই খুব মিশুক হয়ে পড়া। আমি তার সাথে খুব মিশতাম। মজার ব্যাপার হল সে একটা মেয়ে ছিল।কিন্তু মাথায় চুল না থাকায় বুঝতে পারি নি।এভাবে অনেকদিন কেটে যাবার পর একদিন কথার ছলে সে নিজেকে মেয়ে বলে দাবি করার পর আমি রীতিমতো আকাশ থেকে পড়া অবস্থা হল। খুব অবাক হয়েছিলাম, খানিকটা লজ্জাও হচ্ছিল কিন্তু এর কারন খুঁজে বের করার ক্ষমতা ছিল না তখন ।মেয়েটার চুল দিন দিন যত বড় হতে লাগলো তার সৌন্দর্য আরও বিকশিত হতে লাগলো।মেয়েটার প্রতি আমি প্রতিদিন নতুন করে এক একবার মুগ্ধ হতাম। সবচেয়ে বেশী মুগ্ধ হতাম তার চঞ্চলতায়। রীতিমতো যে ব্যাপারটা হয় সেটাই হল।তাকে অনেক ভালো লাগা শুরু হল।ভালোলাগাটা একসময় একটা নেশায় রুপ নিল।মাগরিবের আজানের সাথে সাথে যখন সে ঘরের দিকে দৌড়ে চলে যেত তখন পিছন হতে কেউ একজন তার দিকে একরাশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকতো।খেলার সময় কখন যে শেষ হয়ে যেত খেয়াল থাকতো না।খুব খারাপ লাগতো।প্রশ্ন হতো বার বার , এতো তাড়াতাড়ি সময় কেন চলে যায়? সময়কে থামিয়ে দেবার কোন পথ কি নেই? অপেক্ষায় থাকতাম কখন আবার বিকেল হবে, কখন আবার তাকে সামনে দেখব। আমি ধীরেধীরে তার প্রতি দুর্বল হতে লাগলাম।বাংলা সিনেমার অবদানেই একদিন এই অনুভূতির নাম ভালোবাসা দিয়ে ফেললাম। এখনকার সময়ে এটা যতটা সহজ শব্দ, ঐ যুগে ততটা ছিল না। কেউ জানতে পারলেই খাইসে কপাল! টাইপ অবস্থা ছিল। এ ওকে বলতো, ও তাকে বলতো ,এভাবে করে পুরো কমিউনিটিতে সেটা মহামারির মতো হিসেবে ছড়িয়ে পড়ত।আমারও স্বভাব খারাপ ছিল। নাহ! স্বভাব খারাপ না অবশ্য, বলা যায় ভালোবাসার প্রথম আবেগ-অনুভুতি। মনের মাঝে কথাটা বেশিদিন ধরে রাখতে পারি নি।ওর এক ঘনিস্ট বান্ধবীকে মুখ ফসকে বলেই দিয়েছিলাম একদিন।আর সেই থেকে কাহিনী শুরু। কথায় আছে মেয়েদের পেটে কথা থাকে না।কথাটা আসলেই সত্যি। আর সেই সত্যিটার প্রমান আমি ঐ বয়সেই প্রেক্টিকেলি নিয়ে পেয়েছিলাম। আমি সবসময় সবকিছু পজিটিভলি ভাবতাম।কিন্তু ঘটনা উল্টো ঘটলো। ঐ মেয়ে জানার পর একদিন সবার সামনেই আমার কথাটা বলে ফেলে। আর সেই কি লজ্জা আমার। সবাই এটা নিয়ে হাসাহসি করেছিল অনেক।পুরো কমিউনিটিতেও দ্রুত খবরটা ছড়িয়ে পড়েছিল। আমাকে কথায় কথায় উস্কে দেয়া হতো অথবা মজা নিত ওর নাম বলে।আমি লজ্জায় আর ঘর থেকেই বের হতাম না অথবা যেদিন আমি সাহস করে খেলতে আসতাম সেদিন সে আসতো না, আসলেও আমার সাথে কথা বলতো না । দূর থেকে চোখাচোখি হতো অতঃপর এক চিলতে হাসি বিনিময়।আমি সুযোগ পেয়ে তার সাথে কথা বলতে গেলে সে দূরে সরে যেত। বুকের মাঝে এক প্রকার হাহাকার হতো।আমি ভাবতাম সে লজ্জায় আমার সাথে কথা বলে না। আমার ধারণা ভুল ছিল। সে আমাকে এভয়েড করতো খুব। বার বার খারাপ লাগতো, তবুও আশা নিয়ে রাখতাম একদিন তার মন গলবে। দিন দিন আমরা বড় হতে লাগলাম। আমাদের দূরত্ব বাড়তে লাগল।কিন্তু আমার ভালোবাসাটা সেই আগের মতোই রয়ে গেলো। বছরখানেক পার হবার পর অনেক কিছুই চেঞ্জ হয়ে গেলো।আমি তখন ক্লাস ৮ এ পড়ি। ছেলে বন্ধুদের সাথে খেলতাম। পথে তার সাথে অনেকবার দেখা হতো।অন্যরা তাকে দেখলেই মজা করে আমার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকাডাকি করতো।আমি বিব্রতবোধ করতাম। সে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেত, কিন্তু আমি সেই আগের মতোই পিছন ফিরে তাকিয়ে থাকতাম।অকেশনাল দিন যেমন বিয়ে, জন্মদিন অথবা ঈদের দিনে ওদের বাসায় আসা যাওয়া হতো।কিন্তু সে এই দিনগুলোতেও আমার সাথে কথা বলতো না। কারন স্বাভাবিক, আমি তার কাছে কিছুই ছিলাম না। এতো গরজ পড়ে নি যে আমার সাথে কথা বলতেই হবে। কিন্তু আমার মন তো মানতে চাইতো না। কষ্টটার তীব্রতা প্রতিবারই বাড়ত।এতবছরে এক মুহূর্তের জন্যও কমে নি।আমার কাছে তখন ভালোবাসার মানে ছিল একদম সিম্পল । সততা, ধৈর্য, অপেক্ষা আর শুধুই ভালোবাসা এইতো... একসময় এই ব্যাপারকে কেন্দ্র করে ব্যক্তিগতভাবে অনেক অপমান হয়েছি, নিজের ঘর থেকেও, বন্ধুদের থেকেও,আশেপাশের সবার কাছ থেকেও, ওর বাসা থেকেও। রাগ লাগতো, দুঃখ হতো, জেদ আসতো অনেক। নানা রকম চিন্তা কাজ করতো আদৌ এর ভবিষ্যৎটা কি? বয়স কম ছিল তাই ভবিষ্যৎ পরিণাম চিন্তা করতাম না। শুধু আশা রাখতাম একদিন ওর ইতিবাচক উত্তর পাবো। হ্যাঁ, শুধু ওর মুখ থেকে আমার প্রতি একটা জবাব পাবার আশায় আমি ৫ টা বছর পার করে দিলাম।যদিও এটা অনেকটা জানা ছিল সে আমাকে পাত্তাই দেয় না। অবশেষে ওর মুখ থেকে আর কিছু শুনতে হল না। মানুষ এমন এক আবেগি সত্ত্বা যার আবেগকে একেবারে নিঃশেষ করে দিতে অবহেলা শব্দই যথেষ্ট।আমারও তাই হল। আমার দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাভাবনার সময়ের সাথে অনেক পরিবর্তন হল।আমি ভাবতে শুরু করলাম যে আমাকে, আমার আবেগকে ঠিকভাবে মুল্যায়ন করতে পারে না তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা দারুন মাপের বোকামি।আরও চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে বের করলাম আমি যাকে ভালবাসতাম মূলত সেই মানুষটা ঐ মেয়ে ছিলই না কখনো।তাহলে? এতো সময় কেন পার করে দিলাম? কার জন্য দিলাম? প্রত্যেকটা চিন্তায় আমার মন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো।তুমুল তর্ক, ঝগড়া, যুদ্ধ হল নিজের সাথে নিজের। চারপাশ থেকে একা ছিলাম।আমার মানসিক অবস্থার উন্নতির দায়িত্ব আমি নিজেই নিলাম। অন্ধকারে বসে প্রতিমুহূর্তে নিজেকেই নিজে বোঝাতাম, অনুপ্রেরণা দিতাম।এক সময় সত্যি সত্যিই এই আবেগ, নেশা, দুর্বলতা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।এরপর সব স্বাভাবিক। জীবন চলছে আজও জীবনের নিয়মে। আজও তার সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় কিন্তু কোন আবেগ অনুভব হয় না। আমি পিছনে ফিরেও তাকাই না। কেউ কাউকে চিনি না আর। যে যার যার পথে হেঁটে চলে যাই দুই মেরুর বাসিন্দা হয়ে । দেখুন তো ।ভেবেছিলাম গল্পটা অনেক সংক্ষেপে বলবো কিন্তু না বড় হয়ে গেলো।সত্যিই তো, ৫ বছরের গল্প কি কয়েকটা শব্দের মাঝেই সীমাবদ্ধ করে নেয়া যায়? যায় না।জীবনের গল্প এমনই, আবেগের গল্প এমনই। শুরু থাকে কিন্তু শেষ থাকে না। কোথাও এক জায়গায় সেটাকে শেষ ধরে নিতে হয়। আমার প্রথম ভালোবাসার এই গল্পটা এখানেই শেষ ধরে নিলাম। কি ? আমার ছ্যাঁক খাওয়া গল্প শুনেই ঠোঁটের কোণে একটা মিনমিনে হাসি এসে পড়লো তাই না ? আসুক হাসি তাতে কি আসে যায়। মূল কথা হল, কাউকে মন থেকে ভালোবেসেছিলাম,প্রথম ভালোবাসা।ভালোবেসে ছ্যাঁক খেয়ে যাওয়া আদৌ হাসির কিছু না, এটা একটা গর্বের ব্যাপার। কারন এই সত্যিকারের অনুভূতিটা মন থেকে একবারই আসে, দ্বিতীয়বার আসে না।

ৎঁৎঁৎঁ খন্ড চন্দ্র
প্রথম প্রেমের কথা কী আর সংক্ষেপে লেখা সম্ভব? সব প্রেমই তো প্রথম প্রেম! তবে ঘটনার শুরু কোথা থেকে জানতে চাইলে আসলে সেটা আমার স্মৃতিতে নাই, অনেক ছোটবেলার কথা! বাসার সবাই দাবী করে যে আমি নাকি(তখনও স্কুলে ভর্তি হই নাই ;) ) আমার সমবয়সী খেলার সাথী প্রতিবেশীনীকে বিয়ে করতে চাইতাম, ভাব তো ছিলই! তবে তার নাম ধাম কিছুই আমার স্মরণে নাই! তো ঐ সময় যেহেতু আমি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সেটাকে প্রথম প্রেম বলতেই হবে!


মামুন রশিদ
"ছোটবেলা আম্মার সাথে বেড়াতে গেছি আম্মার বান্ধবীর বাসায় । আমি ছোট মানুষ, চুপচাপ বসে আছি সোফার কোনায় । কিছুক্ষন পর দেখি দরজার পর্দা ফাঁক করে আমাকে ফুচকি দিয়ে দেখে চলে গেল । আহ প্রথম দেখায় প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো । কিছুক্ষন পরে আবার, এভাবে বেশ কয়েকবার এসে আমাকে তার বদন খানি দেখিয়ে গেলো । আমারতো ইতিমধ্যে ছটফটানি শুরু হয়ে গিয়েছে । পরের বার আসতেই দিলাম চোখ টিপি । সাথে সাথে মুখ ভেংচিয়ে চলে গেলো, আর আসার নাম নেই । আমার আর তর সইছে না, পা টিপে টিপে ভেতরে গেলাম । আমাকে দেখেই লজ্জা পেয়ে আরেক রুমে চলে গেলো । সন্তর্পণে চুপচাপ ঐ রুমে গেলাম । দেখি, উদাস চোখে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে । তাকে আর কোন সুযোগ না দিয়ে পেছন থেকে হঠাত করে ঝাপটে ধরলাম । তার আর্ত চিৎকারে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠলো ।
আম্মা এসে ঠাস করে একটা চড় দিলো । সারা বাড়িতে হইচই পড়ে গেলো । বিল্লীর আঁচড়ে আমার হাত থেকে রক্ত পড়ছে । আম্মা তখনই একটা রিক্সা করে আমাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটলো । আর আমি বারবার পেছনে তাকিয়ে বিল্লীর মালেকীন কে খুঁজছিলাম । কারণ সেই ছিল আমার প্রথম প্রেম !!

রাতুল_শাহ
প্রথম প্রেম!!!! যখনই প্রশ্ন আসে প্রথম প্রেম, বা কখন প্রেমে পড়েছিলাম- তখন পরীর মত একটা মেয়ে আমার সামনে দিয়ে হেটে যায় আর আমি হাত বাড়িয়ে থাকি, কিন্তু সে ধরা দেয় না। প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম ক্লাশ এইটে পড়ার সময়। সম্পর্কে সে আমার মামাতো বোন, তবে আপন মামাতো বোন না।সে তখন ক্লাশ সেভেনে পড়তো। একই রাস্তা দিয়ে স্কুল যেতাম-আসতাম। কোনদিন একটা কথাও হতো না।মা-খালা-মামী-নানী সবাই ওর খুব নাম করতো। খুব লক্ষী একটা মেয়ে। এই ছোট বয়সে সব কিছু জানে, মাথার টুপি, শ্যুয়েটার সব বানাতে পারে। তখন আসিফের একটা গান খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। -“এই বুকে এত জালা পুড়ে গেছে মন, পুড়া মনে বার বার হয় না দহন”; এই গানটা তখন গাইতাম –ঘুরতাম। যখন সে গানটা শুনতো কেউ না তাকালে সে তাকিয়ে থাকতো। এইভাবে চলতে চলতে একদিন হঠাৎ একদিন অনুভব করলাম- আমি তাকে ভালবাসি, তার প্রেমে পড়েছি। কল্পনায় তাকে সাইকেলে ঘুরতে যেতাম।দুজন দুজনের তাকিয়ে থাকতাম। বাস্তবে অসম্ভব ছিলো। কারণ কেউ তার দিকে তাকালে সে বলতো – “চোখ উপড়ে ফেলবো।” হ্যা একদিন কথা বলেছিলাম, তার এসএসসি’র রেজাল্ট বের হলো, জানতে চাইলাম কি রেজাল্ট? সে তার মার্কশীট দেখালো। আমি তার মার্কশীট দেখছিলাম, সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তার সাথে আর কোন দেখা নেই। এখনও মাঝে মাঝে তাকে খুঁজি। “First love is very sweet, but we always lose them, due they come when we are stupid immature children”

জেমস বন্ড
আমার বাসার পাশেই একটি মেয়ে থাকত । বয়স কত হবে খেয়াল নেই তবে সে ক্লাস সিক্সে আর আমি ক্লাস সেভেনে । এক বছরের সিনিয়র জুনিয়র হিসাবে আমার বছর পেরুলেই পুরান বই গুলো তাকে দিয়া দিতাম । তাদের বাসায় বিরাট একটা আমগাছ ছিল । জানিনা সেই থেকেই কিনা আমার একটা বদ অভ্যাস আছে। যেটা হচ্ছে টিনের চালের ওপর দুপুরে ঘুমিয়ে পড়া । ওনার কথা আসবে পরে তবে ওনার একটা কিউটি বান্ধবী ছিল । ছোট্ট বব কাট চুল আর রোল নাম্বার ছিল সিক্স । আমার পাশের বাসার মেয়েটির ব্রেইন খুব ভাল ছিল যার দরুন সবাই ওর কাছে নোট নিতে আসত । আর আমি ছিলাম একটা গবেট টাইপ, মাথায় শুধু দুস্টামি সারাদিন কখন বিকাল হবে আর কখন আমি কুতকুত খেলতে যাবো। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হত চালে উইঠা টিনের সাথে যেই পেরেক আছে তা খুইলা ঐ মেয়েটার গায়ে বিলাই চিমটি ঢাইলা দেই। কারন আম্মু শুধু মাথায় ঠুয়া দিত আর কইত - দেখ ঐ মাইয়াডারে দেখ ও কত ভাল নাম্বার পায় আর তুই ওর থেকে বড় এক ক্লাস ওপরে পরছ লজ্জা করে না " । দিনকে দিন এমুন অবহেলার পাত্র আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না । মনে মনে অইডার গুষ্টি ওদ্ধার করে যাচ্ছিলাম ।

আমাদের বাসা ছিল বর্তমানে যায়যায়দিন পত্রিকা অফিসটা যেখানে আছে সেখানে আর লিজার বাসাটি ছিল বর্তমানের আহসানউল্লাহ যেখানে তার সামনের মেডিক্যল হসপিটালের পিছনে। যেই ভাবেই হোক আর যেমনেই হউক কেমনে জানি সেই এরিয়াতেই আব্বু আমার আরবি পড়ার ব্যবস্তা করে দিলেন । প্রথম দিন আরবি পড়ার জন্য রওনা দিলাম । মসজিদের ভিতরে এক সারিতে ছেলেরা এবং অন্য সারিতে মেয়েরা বসে পড়ছে আর মুয়াজ্জিন সাহেব কঞ্চি হাতে লইয়া মাঝখানে আসন দিয়া আছেন।
মসজিদের ভিতর ঢুকিয়া সবার সহিত পরিচিতি করাই দিল । আমি মেয়েদের দেখলে প্রথম প্রথম লইজ্জা পাই , বাট একবার ফ্রি হইয়া গেলে লজ্জা শরম উইরা যায় । আমার নজর সেই লিজার ওপরেই পড়ল । দেখতে মারাত্নক পতুল পতুল টাইপ। তৎক্ষণাৎ আল্লাহ্‌র কাছে কইলাম - ওরে আমার লগে প্রেম করাইয়া দেও আল্লাহ আমি আর কিছু চাই না এই শেষ। খোঁজ নিয়া জানতে পারলাম সেই নাকি আমার পাশের বাসার জানি দুশমন এর কাছে নোট নিতে আসে । এখন দুশমনি বাদ দিয়া ওরে পটাইলাম । চকোলেট ,তেতুল আর হাবিজাবি দিয়া মন জয় করিয়া নিলাম। কথা দিল দেখা করবে মসজিদে আরবি পড়ার পর । আমি তো মহাখুশি । আর মনে হচ্ছিল এমনিতেই আমি বেহেশতে আছি কারন সামনে আমার হুরপরি উপস্তিত। যথারিতি ক্র্যসিং পর্যায় আমি । আমি জানতাম ই না লিজার বড় ও একটা বইন আছে যে কিনা খানে দজ্জাল এবং ঐ এলাকার মেয়েগুলো যে গ্যং নিয়া রেডি সেটা ও ঘুণাক্ষরে ও টের ই পাই নাই। পড়া শেষ করেই বেরিয়েছি । গেইটের শেষ সিমানায় যেতে না যেতেই লেডি গ্যং ধইরা আক্রমণ শুরু করিয়া দিল । প্রথম কথার আঘাত বড় বইনের পক্ষ থাইকা ।
এই যে মডেল - আপনি আমার ছুডু বইনেরে নাকি চয়েস করেন, এই বয়সেই এত পাকনা হইলেন কেমনে " আমি একা একটি ছেলে এতগুলো মেয়ের সামনে সেইদিন কিছুই বলিতে পারি নাই অতঃপর নিশ্চুপ ছিলাম । এই ভাবে অপমান আমি কেমনে সহ্য করুম এর চেয়ে হজুরের বেতের বাড়ি ও ভাল ছিল। বহুত অপমান এর কারনে আমি বোবা হইয়া গেলাম । মনে চাইছিলো মাটি তুমি ফাক হইয়া যাও আমি হান্দাইয়া পড়ি । পিছন ফিরিয়া হাটিতে লাগিলাম, কিছুক্ষন হাটার পর পিছনে তাকাইয়া দেখিলাম আমার ক্রাসিং লিজা বেগম ও হাসতে হাসতে লুটোপটি। বাসায় আসিয়া আসমানের দিকে চাইয়া আল্লাহ্‌র কাছে কইলাম - সব সময় তুমি এমুন কর কেন আমার লগে ?

যথারিতি ঐ মসজিদে পড়া বাদ দিলাম । আব্বু - আম্মুরে অনেক বুঝাইলাম বাট তারা রাজি না হওয়াতে নিজেদের এলাকায়ই পড়ার জন্য রাজি হইলাম । তারপর ও তো বাচলাম এই রিজেক্ট মুখ আমি কেমনে দেখামু ঐ এলাকায় গিয়া ।

সর্বশেষ খবর জানিতে পারিলাম যে আমার পত্থম ভালুবাসার ক্র্যসিং লিক করেছেন আমার জানি দুশমন । আর সহ্য করিতে পারলাম না । আমার হওয়া প্রেমডা মাটিতে মিশিয়ে দিল মাইয়াডা, বুঝতে পারছিলাম না দুধ কলা দিয়া আমি কালসাপ পুষছিলাম। মাথায় রক্ত উইঠা গেল মনে মনে ওকে শাস্তি দেবার জন্য ওয়াদা করিয়া ফেললাম । তখন বিগ বাবল নামে এক্ষান চুইংগাম বাজারে আসিত যাহার বেলুন অবসরে ফুলাইতে আমার চিত্তে বড়ই আনন্দ লাগিত । এক্ষান বিগ-বাবল ফুলাইয়া যথারিতি বই দেবার নাম করিয়া ওনার বাড়িতে প্রবেশ । আন্টিকে পাশ কাটিয়া ঘরের ভিতর ঢুকিয়া ওনার চিরুনিতে চুইংগাম অলরেডি সাপ্লাই করিয়া মনের সুখে বাইরে বেরিয়ে আসলাম ( উনি তখন গোসলখানায় ব্যস্ত ) । ফলাফল কিছু ঘন্টার মধ্যেই পেয়ে গেলাম অতঃপর পরদিন তাহার টাক্কু মাথা দেইখা আমি হাসতে হাসতে চিত্তে অধিকতর শান্তি পাইলাম

লিজা ক্র্যসিং অতটুকুই ছিল কারন সেটা দেখা করার কথা ছিল না ছিল গোনধোলাইয়ের ব্যবস্তা

রহস্যময়ী কন্যা
আমার লাইফে প্রথম প্রেম!!!!!! হু, প্রেমই তো, দিবানিশি যদি কেউ এসে সারাক্ষণ মাথায় ঢুকে বসে থাকে তাহলে তো তাকে প্রেমই বলতে হবে তাইনা? তখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, আমার ভাগ্য অতিশয় সুপ্রসন্ন হবার কারণে আমার ফ্রেন্ডসার্কেলে তখন থেকেই প্রেম করা ফ্রেন্ড ছিলো, তাই তাদের কাছে থেকে এই বিষয়ে সব ধারণা নেয়াই হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু তা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি মিস্টার পারফেক্টের অভাবে
তো যাই হোক, একদিন আম্মু আব্বু বাসায় ছিলো না, আর আমরা নতুন মুক্তি পাওয়া মুভি লাগিয়ে বসলাম, নায়ক এর ইয়া বড় চুল, মাথার মধ্যিখানে সিঁথি করা, পুরাই কিম্ভুতকিমাকার কিন্তু নায়িকার প্রতি তার হৃদয়ের টান, তার ভালোবাসা, নায়িকাকে তার কেঁদে কেঁদে লাভ ইউ বলা, পুরাই ইমোশনাল হয়ে গেলাম আর অতিচেনা মুখটার প্রেমে পড়ে গেলাম, পুরা মুভি তার দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দিলাম, এরপর থেকে খুঁজে খুঁজে তার পুরোনো সব মুভি দেখতে লাগলাম, দেখতে দেখতে অজান্তেই চোখের আনাচে কানাচে জলের উপস্থিতিও টের পাই মাঝে মাঝে, মেরি সাওয়ালো কা জাওয়াব দো............দোওওও নাআআআ.......উফফ আমি তো পুরাই ডুবে গেলাম তার প্রেমে, তার সাথের সুন্দরীদের দেখে জেলাসও হতে লাগলাম মনে মনে। কিন্তু এতো এতো মেয়ের ভীড়ে ওকে তো জানাতেই পারলাম না যে আমি ওকে কত লাভ করি তবে এখানেই কিন্তু শেষ নয়, এরপর যত বড় হতে লাগলাম ততই কিউট আর ড্যাশিং মুখ বাড়তে লাগলো তখন অবশ্য আমার দুঃখও কমে গেলো এরপর একসময় চাপা পড়ে গেলো সব ফিলিংস, কারণ সময় সবকিছু বদলে দেয়।তবে এখনো মাঝে মাঝে টিভি খুললেই যখন ওকে দেখি তখন অজান্তেই একটা হার্টবিট মিস হয়ে যায়।কি আর করা প্রথম প্রেম তো


দিক ভ্রান্তপথিক (আহমেদ লিও)
আমাদের পাশের বাসাটি ছিল ওর নানুবাড়ি। প্রতি বছরই বেড়াতে আসতো। ওদের বাড়ীতে আমাদের যাতায়াত ছিল সবারই, ওরাও আসা যাওয়া করতো। তো যখন ও বেড়াতে আসতো, একা একাই ঘুরতো বেশীরভার। এটা ছোট বেলা থেকে হয়ে আসছিল। একটা সময় গিয়ে আমার ভালো লাগতে শুরু করে ওকে। কোন এক বিকেলে রাস্তায় ওকে ওর বান্ধবীর সাথে হাঁটতে দেখে নার্ভাস আমি চেপে যাই এক সাইডে, কোন এক অজানা কারনে সেও চেপে আসে, হয়ত আমাকে সাইড দেবার ইচ্ছে থেকে। লেগে যায় ধাক্কা! বেশ জোরেশোরেই লাগে। বেশ কিছুক্ষন আমি ওকে স্যরি বলছিলাম, আর সেও স্যরি বলেই যাচ্ছিল, হাস্যকর অবস্থা। এর আগে কোনদিনই কথা বলার সাহস করতে পারিনি। ওইদিনই সন্ধ্যায় থেকেই ও আমাদের বাসায় ছিল। গ্রীষ্মকালের রাতটায় লোডশেডিং চলছিল, আমি ছাদে ছিলাম। সেও ছাদে এলো, আকাশে চাঁদ ছিল বলে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম। সেখান থেকেই পরিচয়। তখন নিতান্তই কিশোর আমি। পরিচয়ের পরে প্রতিদিন গল্প হতো, এভাবেই দিন পনেরো হাসি-ঠাট্টায় কেটে গেলো। তারপরে একদিন, আমাকে কিছু না জানিয়েই ও ফিরে গেলো চট্টগ্রামে, ওদের বাসায়। দুইদিন দেখা না পেয়ে অস্থির হয়ে ওর নানুবাড়ী চলে গেলাম। জানতে পারলাম ফিরে গেছে ওরা। ওর সাথে কন্ট্যাক্ট করার আমার কোন উপায় ছিল না। খুব কষ্ট হচ্ছিল কেন জানিনা, প্রতিদিনই মিস করতাম। কোন দিক ক্রিকেট খেলা মিস হতো না অথচ ও যতদিন ছিল বিকেলটা এটা সেটা কথা বলেই কেটে যেত কীভাবে যেন! ও চলে যাবার পরে কিছুতেই ঠিক মন বসছিল না। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে, খুব বলতে ইচ্ছে করতো ওর জন্য কি অনুভব করছি, কিন্তু কোন পথ ছিল না। পরের বছর ও আবার বেড়াতে এলো। কিন্তু আগের সেই সাবলীল বন্ধুত্বটায় ভাঁটা পড়েছিল। কয়েকদিনের মধ্যে তা ঠিক হয়েও গিয়েছিল। আমি ওকে জানিয়েছিলাম কতোটা মিস করেছি ও চলে যাবার পরে। আর না জানিয়ে যাওয়াতে কষ্টও হয়েছে! শুনে পাজি মেয়েটা খুব একচোট হেসেছিল। যাই হোক, স্যরিটরি বলে আবার ঠিক করে ফেলেছিল আমার মুড। আমি ওকে সরাসরি প্রোপজ করতে পারি নি, সেবার ওর ফিরে যাবার সময় অনেকক্ষণ আমতা আমতা করে হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। খুব খারাপ লেগেছিল সেদিন বলতে না পারায়। এখন ভাবলে বুঝি, অনুভূতিগুলো জন্মেছিল বটে, কিন্তু মানুষটা তো তখনও ছোট! আমার সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য জানিনা, ফোন নাম্বার এক্সচেঞ্জ করা সম্ভব হয়েছিল। ও চিটাগাং ফিরে যায়, দুই তিনদিন পরে একটা মেসেজ পাই, 'তুমি যা বলতে চেয়েছ তা আমি জানি। ওটার উত্তর হ্যাঁ।' সেদিন কেঁদেছিলাম, এর আগে কবে কেঁদেছিলাম আজ আর ঠিক মনে পড়ে না। কিন্তু সেদিনের কান্নাটা কোথায় যেন থেকে গেছে।

নাজিম-উদ-দৌলা
বন্ধু অপু তানভীর আমাকে জীবনে প্রথম প্রেমের কাহিনী লিখে দেওয়ার কথা বলায় বিপদেই পড়ে গেলাম। আমার প্রথম প্রেমের ঘটনা ছোট করে লেখাটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এই কাহিনী নিয়ে খুব সহজেই প্রমান সাইজের দুই তিনটা উপন্যাস লিখে ফেলা যাবে। তবুও যতটা সম্ভব সংক্ষেপে লিখার চেষ্টা করছি...
***
আমার জীবনে প্রথম প্রেম এসেছিল কলেজে ওঠার পর। বয় স্কুলে পড়ার কারনে মেয়েদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়নি একদমই। তাই যখন কম্বাইন্ড কলেজে ভর্তি হলাম প্রত্যেকটা সমবয়সী মেয়েকে মনে হত বুঝি স্বর্গের অপ্সরী! এই অপ্সরীদের মাঝেই একজনকে আমার খুব বেশি ভাল লেগে গেল!
কলেজে আমরা ছিলাম চার বন্ধু। চারজন সব সময় একসাথে থাকতাম। আমাদেরকে সবাই “চার দলীয় ঐক্যজোট” বলে ডাকত। আমি বন্ধুদের কানে একদিন কথাটা তুললাম, “আমি তো একটা মেয়েকে ভালবেসে ফালাইছি”!
বন্ধুরা জিজ্ঞেস করল, “কোন মেয়ে?”
মেয়েটা সায়েন্সে পড়ত। পুরো কলেজে তার মত সুন্দরী আর কেউ নাই। আমি সবাইকে নিয়ে গেলাম মেয়েটাকে দেখাব বলে। তারপরের ঘটনা তো ভয়াবহ! চার ফ্রেন্ড মিলে আবিষ্কার করলাম আমরা সবাই একই মেয়ের প্রেমে পড়েছি! কিন্তু শেষ পর্যন্ত বন্ধুরা আমার জন্য স্যাক্রিফাইস করতে রাজি হল। কারন চার জনের মধ্যে আমিই ছিলাম সব চেয়ে ভাল ছাত্র। তাই আমার কাছ থেকে পড়ালেখা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচুর হেল্প পায় তারা।
ঐ বয়সে ভাললাগা- ভালবাসার মধ্যে তফাৎ বোঝা সম্ভব হয়নি। কিশোর মনের নিখাদ প্রেম। চোখ বন্ধ করে গা ভাসিয়ে দিলাম। আগ-পিছ, উচু-নিচু, সম্ভব-অসম্ভব চিন্তা করার অবকাশ ছিলনা। কিন্তু একটা সমস্যা দাঁড়িয়ে গেল! মেয়েটির সাথে কথা বলতে সাহস পেতাম না। অনেকবার কথা বলার মত ছুতো পেয়েও সাহসের অভাবে এগোতে পারিনি।
বন্ধুরা বুদ্ধি দিল, “চল মেয়েটিকে একদিন ফলো করে দেখে আসি তার বাসা কোথায়। তারপর একদিন তার এলাকায় গিয়ে দেখা করবি, বলবি তোর খালার বাসা এইখানে। ব্যাস! একবার কথা বলতে পারলে আর কোন সমস্যা হবেনা”।
মেয়েটির বাসা ছিল কলেজের কাছেই। প্রতিদিন হেঁটে বাসায় ফিরত। বুদ্ধিমত একদিন চারজন মিলে ফলো করলাম তাকে। মেয়েটা কয়েকবার ঘাড় ঘুরিয়ে লক্ষ করেছে আমাদের। তার বাসার কাছে চলে এসেছি তখন, কাছাকাছি একটা পুলিশের জিপ দাঁড় করানো ছিল। মেয়েটি জিপের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের কাছে কিছু একটা বলল। বন্ধুরা ভয় পেল, “মেয়েটা মনে হয় পুলিশের কাছে কমপ্লেইন করছে! চল পালাই”!
আমি তড়িৎ চিন্তা করলাম। বললাম, “এখন পালানো মানে দোষ স্বীকার করা। পুলিশ ধাওয়া করে এসে ধরে ফেলবে। তার চেয়ে যেভাবে হাটছি সেভাবেই হেঁটে যাওয়া ভাল”।
বন্ধুরা রাজি হলনা। আমি তাদের ছাড়াই বুক ফুলিয়ে সাহস একা একা এগিয়ে এলাম। আমার মনে তখন ভয় ডর একদমই ছিলনা! প্রেমিক পুরুষের ভয় পেলে কি চলে?
পুলিশ লোকটা ঠিকই আমাকে আটকাল। “ঐ এদিকে আয়!”
আমি এগিয়ে গেলাম।
“মেয়েদের ইভ টিজিং করস?”
“কে বলেছে স্যার? আমি তো তেমন কিছু করি নাই?”
“না করলে এমনি এমনি মেয়ে বিচার দেয়! এখন যদি ধইরা নিয়া জেলে ভরি কি করবি তুই?”
ভয়ে ভয়ে চাঁপা ছেড়ে দিলাম একটা! “বিশ্বাস করেন স্যার। আমি কিছুই করি নাই। এদিকে আমার খালার বাসা”।
“পকেটে কি আছে?”
ঘটনা হল ঐদিন পকেটে ফুটা পয়সাও ছিলনা! বুঝলাম কিছু ঘুষ দিতে না পারলে আজ অবস্থা বেগতিক হবে! এইবার সত্যি সত্যি ভয় পেলাম! কান্না পাচ্ছিল। বললাম, “কিছু নাই”।
পুলিশ বলল, “কলম আছে সাথে?”
আমি বিনা বাক্যব্যায়ে কলম বের করে দিলাম। পুলিশ কলম হাতে নিয়ে বলল, “মনে কর তোর কাছ থেকে কলমটা গিফট নিলাম। এইটা দিয়া আমি কবিতা লিখুম। এখন যেই পথে আসছিস সেই পথে ফেরত যাহ”!
আমি মাথা নিচু করে ফেরত গেলাম।
***
পরদিন কলেজেই ধরলাম মেয়েটাকে। রাগে তখন আমি প্রায় অন্ধ বলা চলে! “তুমি পুলিশের কাছে কেন বলছ আমি তোমাকে টিজ করছি”।
মেয়েটা কিছু বলল না। সে সম্ভবত খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তার হাত পা কাঁপছিল।
আমি রাগের মাথায় তার গালে কষে একটা থাপ্পড় লাগালাম। মেয়েটা একপাক ঘুরে গিয়ে ছিটকে পড়ল মাটিতে।
এর পর কি হয়েছিল?
আমার তো ছাত্রত্ব নিয়ে টানাটানি। মেয়েটা কলেজে কমপ্লেইন আমার নামে করল, দুই পক্ষের গারজিয়েন ডাকা হল। বাবার অনেক চেষ্টা তদবিরের পর অবশেষে বিষয়টা মিটমাট হল।
কিছুদিন পর খবর পেলাম মেয়েটিকে আমার ক্লাসের এক ছেলের সাথে কলেজ ক্যাম্পাসের এখানে ওখানে দেখা যায়। আমাদের চার দলীয় ঐক্যজোটের মাথা নস্ট হয়ে গেল। একদিনের ছেলেটাকে পাকড়াও করে কলেজের একাডেমিক বিল্ডিংয়ের চিপায় নিয়ে গেলাম।
তারপর আর কি? বেদম পিটানি দিলাম তাকে। বেচারা হাত জোর করে মাফ টাফ চেয়ে.. কি অবস্থা। আমার মায়া হল খুব। মাফ করে দিলাম। মেয়েটা যখন ওকে পছন্দ করে আমার আর জোর জবরদস্তি করে কাজ নেই! জোর করে ভালবাসা হয়না!
***
এর পর জানতে পারলে মেয়েটার স্বভাব ভালনা। নিত্য নতুন ছেলের সাথে ঘুরে। মেয়েটা তার সৌন্দর্যের ক্ষমতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন ছিল। প্রতি সেমিস্টার বয়ফ্রেন্ড না পাল্টালে তা চলত না। এইসব দেখে আমি একসময় আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। তখন থেকে মাথায় একটা দার্শনিক চিন্তা ঘুরত, আমাকে হতে হবে হুমায়ূন আহমেদের শুভ্রর মত খুব ভাল একজন মানুষ। হিংসা-ঘৃণা-রাগ এসব বিষয় যেন আমাকে স্পর্শ করতে না পারে। সেই চেষ্টা এখনও করে যাচ্ছি।
শেষ হইয়াও হইল না শেষ! দুটি মজার ঘটনা বলে শেষ করে দেই-
১. মেয়েটি বর্তমানে বিবাহিত। একটা কন্যা সন্তানের মাও হয়েছে। কুয়েত ফেরত এক বিরাট ধনীকে বিয়ে করছে যে কিনা তার চেয়ে বয়সে ১০ বছরের বড়। বিশাল বাড়ি আর বিরাট ফ্যাক্টরির মালিক। মজার ঘটনা হচ্ছে তার বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম আমি! দামী একটা গিফট দিয়েছিলাম।
২. আমার প্রথম প্রেম ব্যর্থ হওয়ার পর কলেজে থাকতে আমরা চার বন্ধু মিলে আরও তিনবার প্রেমে পড়েছিলাম। এবার অন্য বন্ধুদের জন্য আমাকে স্যাক্রিফাইস করতে হল। প্রথমবার আমি ব্যর্থ হলেও পরের তিনবার আমার তিন বন্ধু ছিল হানড্রেড পারসেন্ট সাকসেসফুল। এক বন্ধুতো পছন্দের মানুষকে বিয়ে করে ঘর সংসার করছে, অন্যজন এখনও চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে। একজনের অবশ্য পরবর্তীতে ব্রেক আপ হয়ে গিয়েছিল।

রাশান শাহরিয়ান নিপুণ
২০০০ সালের ঘটনা। ক্লাস টুতে পড়ি। বাসায় আপুর কাছে এক মেয়ে আর তাঁর পিচ্চি বোন আসে গল্প করতে। পিচ্চি তখন ওয়ানে পড়ে। নাম ছিল স্বর্ণা। হেব্বি প্রেমে পড়ে গেলাম।
আমি বরাবরই দিবা স্বপ্ন দেখায় ওস্তাদ। তখনও ছিলাম। সারাদিন স্বর্ণারে ভাবি। আর রাত হলে খাটে শুয়ে শুয়ে সেও আমার পাশে শুয়ে আছে তাই ভাবি! তখন প্রতি শুক্রবারে বিটিভির সিনেমায় রাজ্জাক-শাবানার সিনেমা দেখে দেখে ধারনা হইছিলো বিয়ের পর মনে হয় নব্য দম্পতিরা একে অপরের কপালে চুমু খেয়ে ঘুম দেয়। যাহা হউক আমিও তাঁরে নিয়ে সেই রকম চিন্তা ভাবনা করতাম। রাত হলে এক সাথে খাওয়া দাওয়ার পর কপালে চুমু খেয়েই ঘুম!
সেই বয়সে বিকালে বাইরে যাওয়া একটা নেশার মতো ছিল। সামনে ভালো স্কুলে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে হবে। এই জন্য পড়ার অনেক চাপ।সেই অছিলায় ঘরে থাকা শুরু করে দিলাম। ইয়েরা বাসায় আসলে আমি এটা সেটা আপুনির কাছ থেকে দেখে আসার ছুতোয় তাঁর রুমে বারবার যেতাম। আর আড় চোখে বারবার এদিক সেদিক তাকাতাম।
এইভাবে বেশ কিছু দিন চলার পর তিনারা কোন এক কারনে একদিন বাসায় এলেন না। (তাঁর বড় বোনরে শিওর সেই দিন কুকুরের বাবু টাইপ কিছু বলছিলাম, অবশ্যই মনে মনে)।
আমি খালি আপুনির রুমে যাই আর ঘুর ঘুর করি। এক সময় আর ধৈর্য থাকলো না। আপুনিরে বলেই বসলাম। "আপুনি, আপুনি; স্বর্ণারা আজ আসছে না কেন?"
এরপরের ঘটনা নাই বা বললাম। আমার বুদ্ধিমতি বোন হাসতে হাসতে চেয়ার উলেটে পড়ার মতো অবস্থা করে ফেলল। আব্বুকে ডেকেও বলে দিলো আমার হঠাৎ আমার সুবোধ বালক সাজার কারন। আব্বু-আম্মু আমাকে খ্যাপানো শুরু করলাম। আমিও লজ্জায় পরের দিন থেকে আবার বিকালে ঘরের বাইরে যেয়ে কিরকেট খেলা শুরু করলাম।
আমার জীবনের প্রথম প্রেম এভাবেই আমার পরিবারের কারনে ছ্যাঁকায় পরিণত হল। এরপরেও জীবনে বহু ছ্যাঁক খাইছি (ইভেন প্রায়ই খাই)! কিন্তু প্রথম সেই ছ্যাঁক এর দুঃখ কিছুতেই ভুলতে পারি নাই।

নৈঋত
প্রথম ক্রাস ছিল Xavi Harnandez.... সেই ২০০৬ সালে দেখা, তখনকার ট্রেন্ড ছিল Cr7 বা মেসির উপর ক্রাস খাওয়া ! কিন্তু আমি Xavi Harnandez এর উপর ক্রাস খেয়েছিলাম ! মেসি রে কেন জানি ভাইজান লাগতো । এমনকি আমার ফিজিক্স বই তে একটা এফোর সাইজের মেসির ছবি ছিল । সবাইকে বলতাম দেখ এইটা আমার ভাই ! উল্টাপাল্টা কিছু বললে পিটিয়ে তক্তা বানায়া দিবো ! আমার কনফেশান ১, cr7 এর উপর ক্রাস খাইনি বললে ভুল হবে, একটু ক্রাস খেয়েছিলাম ! যখন সে ম্যান-ইউ তে খেলতো ! তার আজাইরা ডাইভ গুলো অসাম লাগতো ! যখন ট্রান্সফার করে রিয়েল মাদ্রিদ এ চলে আসলো তখন থেকে তার সাথে আমার কাটাকাটি হয়ে গেল ! সব চেয়ে বড় ছ্যাকা খাইছিলাম xavi harnandez এর বিয়ে কথা শুনে । কনফেশান ২, xavi-nuria এর বিয়ের আগের সময় পর্যন্ত দোয়া করছিলাম সিলি কোন বিষয় নিয়ে যেন বিয়ে ভেঙ্গে যায় !



রেজোওয়ানা
আমার মা খুব কড়া ধরনের মহিলা ছিলেন । তাই কিশোরী বেলায় প্রেম পড়ার কথা চিন্তাই করতে পারি নি । আর আমাদের যুগে প্রেম করা আর প্রেমে পড়া তো হত্যাকান্ড সমতুল্য অপরাধ হিসাবে গন্য করা হত ! আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হবার আগ আবধি সেই অর্থে প্রেমে পড়ার মত সাহসী হতে পারি নি !
তবে একটা হাস্যকর বিষয় হয়েছিল, সেটা বলি ! আমি মনে হয় তখন ক্লাস টেন এ পড়ি ! তখন জাহিদ হাসানের নাটক প্রচারিত হল !
না । তখন মনে হয় ক্লাস এইটে পড়ি ! তাও যা বলছিলাম, সমাপ্তি নাটকে চশমা পরা জাহিদ হাসানকে দেখে বুকের ভিতর কেমন জানি চিনচিন ব্যাথা হতে লাগলো ! আর নাটকের মেয়েটার উপর খুব রাগ হতে লাগলো !
হাহাহাহা !
তারপর কতদিন অপেক্ষা করতাম কবে এই মানুষটার নাটক দেখবো ! কঠিন অবস্থা যাকে বলে ! তবে এই প্রেমের অপমৃত্যু হতে তিন মাস সময় লেগেছিল !
হাহাহাহা

তবে সত্যিকারের প্রেমে পড়া যাকে বলে সেটা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিকে, অনেক চড়াই উতড়াই অনেক কষ্ট অনেক প্রতীক্ষার পরে সেই মানুষটার সাথে বিবাহিত জীবনের নয়টা বছর পার করেছি ! এইটা অন্য এক গল্প, অন্য একদিন বলব !
সবাই ভাল থাকবেন ! ভালবাসা দিবসে সবার জন্য ভালবাসা রইলো !

আমি আজ কোথাও যাবো না (অপ্সরা সিজেল)
আমার প্রথম ক্রাশ কে সেইটা যখন অপু ভাইয়া লিখতে বললেন কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম। কিভাবে বলি যে আমার প্রথম ক্রাশ ক্লাশ এইটে পড়া চশমা পড়া একটি ছেলে ছিলো। শুরুটা বর্ণনা করা যাক। ২০০৬ সাল আমি তখন ক্লাশ এইটে পড়ি। বার্ষিক পরীক্ষা কদিন পরেই। আমি আমার আন্টির কাছে অংক করতে যেতাম। তখন আন্টি আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয় তপু নামের একটি ছেলের সাথে। পরিচয় পর্বটা ইন্টারেস্টিং সেটা পরে বলছি। আমি তপুর সাথে পরিচিত হই। তাকে চিনতে থাকি। অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট ছেলেটা ক্লাশ এইটে পড়ে আমার মতোই। অংকে তার মাথা ভালো কিন্তু বিভিন্ন কারণে পড়াশোনা করতে পারে না। ক্লাশ ফাইভে থাকতে তার বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় সেটা জেনে আমার চোখের পানি আটকাতে পারিনি। এরপর থেকে তপুর একমাত্র অংক ছাড়া বাকি সব সাবজেক্টে গাফেলতি। একদিন গনিত অলিম্পিয়াডে সে অংশগ্রহণ করে এবং চ্যাম্পিয়ন হয়। জ্বি হ্যাঁ প্রিয় ব্লগারগণ আমার প্রথম ক্রাশ মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের “আমি তপু” বইয়ের নায়ক তপু। :( আন্টি কোন একটা কারণে আমার উপর খূশি হয়ে বইটা আমাকে দিয়েছিলেন। আর আমি সেই বই পড়ে তপুর উপর ক্রাশ খেয়েছিলাম। আমি এই পর্যন্ত বই পড়ে কত কত চরিত্রের উপর ক্রাশ খেয়েছি আল্লাহ মালুম। কিন্তু তপুই প্রথম ক্রাশ ছিলো। যদিও এটা কোন প্রেম কাহীনি না তবুও ট্রাজেডি তো থাকবেই। ট্রাজেডি হলো আমি ক্লাশ নাইন টেন একাদশ দ্বাদশ শেষ করে ফেললেও তপু এখনো ক্লাশ এইটেই পড়ে। :’( তখন থেকেই তপুর মতো ছেলে খুঁজতাম। :P তখন থেকেই চশমা পড়া ছেলেদের মনে হতো তপুর মতো। মনে হতো ইসস ঠিক ঠিক তপুর মতো কাওকে খূজে পেলে আমি তাকে প্রোপজ করতাম। :( ঠিক তপুর মতো চশমা পড়া, ব্রিলিয়ান্ট এবং বুদ্ধমান কাওকে। কালের বিবর্তনে আরো অনেক ক্রাশ খেয়েছি বাট ওগুলো বলব না। :P এইটা প্রথম ক্রাশ খাবার কনফেশন বলা যায়। :) বাই দ্যা ওয়ে চশমা পড়া ছেলেদের আমি এখনো অনেক পছন্দ করি। ;)

আমিনুর রহমান জেসন
কবে থেকে প্রেমে পড়েছিলাম সেটা মনে নেই। কিন্তু ঘটনার শুরুটা ছিলো আমি যখন ক্লাস সিক্সে। সেবার নতুন ভর্তি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সে একজন ছিলো। ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট এবং মেধাবী ছাত্র ছিলাম বলে সকলে আমাকে বেশ খাতির ও ভালোবাসতোও। কিন্তু সে বেশ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ক্লাসের সকলের ও শিক্ষকদের খুব প্রিয় পাত্রী হয়ে উঠলো। স্কুল থেকে আমাদের বাসা একই রাস্তায় ছিলো বলে আমরা প্রায় একই সাথে আসা যাওয়া করতাম। ফলে আমরা একে অপরের ভালো বন্ধু হয়ে উঠলাম। এভাবেই সময় পার হতে লাগলো আমাদের ৭ম, ৮ম শ্রেনী শেষে আমি অন্য স্কুলে চলে গেলাম। তাও আমার স্কুল ছিলো নারায়ণগঞ্জে আর সে ছিলো ঢাকায়। এত দুরত্বের মাঝেও আমাদের বন্ধুত্ব ছিলো আর সে কারনে আমি সময় পেলেই ঢাকায় একা একা চলে আসতাম তার সাথে দেখা করতে। স্কুলে পাস করলাম। কলেজে উঠলাম এবং আবারো আমরা একই কলেজে ভর্তি হলাম আমরা। সবচেয়ে মজার বিসয় ছিলো আমি আরো ভালো কলেজে সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও ওর সাথেই একই কলেজে ভর্তি হলাম। কোনদিন একে অপরকে বলিনি আমরা ভালোবাসি কিন্তু দুজনই জানতাম আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি। এভাবেই আরো ৪টি বছর কেটেছিলো আমাদের একে অপরের পাশাপাশি থেকে। কিন্তু এরপর ওর বাবা-মা জেনে যাওয়াতে আমাদের সম্পর্কের বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে যায় ওর বাবা-মা কেননা আমরা দুজন দুই ধর্মের ছিলাম বলে। বাবা মার বিপক্ষের যাবে না বলে সে দুরত্ব তৈরি করতে শুরু করতে লাগলো এবং একসময় সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলো ।

শান্তির দেবদূত
“আশ্চর্য সাত দিন”
ডলি আপা, নামেই কেমন যেন পুতুল পুতুল গন্ধ! আমার প্রথম প্রেম। আসলেই কি প্রেম? না কী ভালোলাগা? বয়স কতই বা হবে তখন? সাত? আট? সঠিক মনে নেই তবে ক্লাস থ্রীতে পড়ি সেটা ঠিক ঠিক মনে আছে। মাস ছয়েক হলো দেশের বাইরে এসেছি, শহরের এক প্রান্তে বাসা নিয়ে বাবা, মা আর ছোট ভাই এই কজনের নিস্তরঙ্গ জীবন। দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে গাছে গাছে নতুবা বাগানে বাগানে ঘুরে ফিরে আরে রাতের সময় কাটে দেশ থেকে নিয়ে আসা ঠাকুরমার ঝুলিতে। এক গল্প যে কত হাজার বার পড়েছি গুণে শেষ করা যাবে না। অনেক দূরে দূরে একেকটা বাড়ি, প্রতিবেশিদের সাথে কালভদ্রে সাক্ষাৎ হয়। আর সাক্ষাতে ভাব বিনিময় সে তো বোবাকাব্য! আকারে ইঙ্গিতে কিংবা ভাঙ্গা ভাঙ্গা আরবীতে ভাবের বিনিময় না কী অ-ভাবের বিনিময় সেটা তর্কসাপেক্ষ। বাংলার জন্য কি যে এক তীব্র হাহাকারে হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। তখন টেলিভিশনই ছিল না আমাদের, আর ইন্টার্নেট মোবাইল তো এলিয়েন টেকনোলজি। তেমনি এক ছিন্নভিন্ন সময়ের কথা, বাবার এক বন্ধু স্বপরিবারে এলেন আমাদের বাসায়, সপ্তাখানেক থাকবেন; বলা বাহুল্য পাঠক মাত্রই বুঝে গিয়েছেন ডলি আপা ঐ আংকেলেরই বয়োজ্যেষ্ঠ কন্যা, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে বিষয়টা আমি লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে পারিনি তা হল সেই সময়টা! আহ! এ যেন মরুভূমিতে পথ হারিয়ে তৃষ্ণর্ত মৃতপ্রায় এই আমাকে জমজমের কূয়ায় পুতপবিত্র করার প্রয়াস!
ডলি আপা আমার চেয়ে পাঁচ ছয় বছরের বড় হবেন, উনার ছোট আরেক বোন ও দুই ভাই এই চারজনকে নিয়ে আংকেল আন্টি যখন এলেন তখন আমার খুশি দেখে কে? খুশির প্রথম কারন ছিল যতদিন উনারা থাকবেন ততদিন পড়াশুনা করতে হবে না, আর যাই হোক মেহমানের সামনে তো আর আমার মত সুবোধ বালককে মারধর করা যায় না, তাই না? প্রথম দেখাতেই ডলি আপাকে কেমন যেন স্বতন্ত্র মনে হল, সুন্দর করে হাসেন, নিচু স্বরে কথা বলেন, টানা টানা গভীর কালো চোখ, শান্ত সৌম্য ব্যক্তিত্ববান, চোখা চিকন নাক, বাঁ ঠোঁটের পাশে বড় একটা তীল, একটা গ্যাঁজ দাঁত; সব মিলিয়ে সাক্ষাৎ দেবী।
ড্রয়িং রুমে মেঝেতে বিশাল বিছানা পাতা হল, বাচ্চা কাচ্চা সব মিলিয়ে আমরা ছয় জন সেখানে ঠাই পেলাম। ডলি আপা আমাদের একে একে সবার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতেন। অনেক রাত পর্যন্ত আমাদের গল্প শুনাতেন, কত নতুন নতুন গল্প! উনার গল্পগুলো যে কি ভালো লাগত শুনতে! সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে একে একে সবাইকে মুখ হাত ধুইয়ে নাস্তার টেবিলে নিয়ে যেতেন। সবচেয়ে অস্বস্থি লাগত যখন বাঁ হাতে আমার থুতনী ধরে ডান হাতে চিরুনী দিয়ে চুল আচড়ে দিতেন। তখন উনার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারতাম না, কেমন যে পা অবস হয়ে যেত, কান দিয়ে যেন গরম বাতাস নির্গত হত, গালটাও মনে হয় ইশ্বৎ লাল হয়ে উঠত। কিভাবে কিভাবে যেন উনার প্রতি আসক্ত হয়ে গেলাম, হ্যাঁ বলতে গেলে প্রেমেই পড়ে গেলাম।
উনারা সাত দিনের মত ছিলেন আমাদের বাসায়, এই কদিনেই আমার মধ্যে উনি যে প্রভাব ফেলেছিলেন তা আজও অম্লান। এই সাত দিনেই আমি যেন অনেক অনেক পরিণত হয়ে উঠেছিলাম। উনি আমার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন এনে দিয়েছিলেন। সেই থেকে আমি আমার চেয়ে বয়সে ছোট কোন নারীর প্রতি কোন আকর্ষণ বোধ করিনি, তারপরে আমার জীবনে ভালোলাগা, প্রেম, ভালোবাসা নিয়ে অনেক নারীর আবির্ভাব ঘটেছে কিন্তু তারা কেউই আমার চেয়ে বয়সে ছো্ট ছিল না। সেই সাতদিন, তারপর আর জীবনে ডলি আপার সাথে দেখা হয়নি, জানিনা কোথায় আছেন, কেমন আছেন।
ডলি আপারা যেদিন চলে যাবেন, সেদিন আমি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বাসা থেকে অনেক দূরের এক কাঠবাদাম গাছে চড়ে বসে ছিলাম, এই গাছের ডালে আমি আগে থেকেই চড়ে চড়ে বেড়াতাম, গত সাত দিন ভুলে ছিলাম একে; আজ ডলি আপার বিদায়ের দিনে পুরানো এই বন্ধুকে নিয়ে ভুলে থাকার চেষ্টায় ছিলাম আশ্চর্য এই বিষাদ, আপার চলে যাওয়া নিরবে দেখার মত মানসিক দৃঢতা আট বছরের কিশোরের ছিল না।

কালা মনের ধলা মানুষ
ভাই তুমি কি আমাকে বিপদে ফেলতে চাও ? আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি ? আমার প্রথম প্রেম আমার বউ ! তারে ছাড়া আমি জীবনে আর কারও প্রেমে পড়ি নাই । কসম ! ;) ;)

তন্ময় ফেরদৌস
পাগল হইসো ? বিয়ার পরে জীবনের প্রথম প্রেম নিয়ে কিছু কইলে বৌ আমারে আস্ত রাখবো ?


এরিস
প্রেমে পড়ার অভিজ্ঞতা বলার জন্যে আগে 'প্রেম'বিষয়টি সম্পর্কে কিঞ্চিৎ হলেও জ্ঞান থাকতে হবে। আফসোস,আমার জ্ঞানের দৌড় আমাদের বাসার সামনে তিন রাস্তার মোড়ের পিলার পর্যন্ত। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রেমে পড়লে - কেমন কেমন লাগে, একা থাকতে ইচ্ছে হয়, নিজে নিজে হাসে, নিজে নিজে কাঁদে, রাতে ভাল ঘুম হয় না, খাবারে অরুচি হয়, কেউ কেউ সুন্দর হয়ে যায় (মেয়েরা প্রেমে পড়লে নাকি ওজনও বেড়ে যায়! কি কাণ্ড দেখেন!!)। আমার সবসময়েই কেমন কেমন লাগে, একা থাকতে ভাল লাগে, নিজে নিজে হাসি না (হাসি পায় না), নিজে নিজে কাঁদি না (আমি বাচ্চা মেয়ে নাকি,কাঁদবো কেন!), রাতে ঘুম কখনো হয়,কখনও হয় না;খাবারের বেলায়ও একই রকম,কখনো চেয়ে নিয়েও খাই,কখনো মা মেরেও খাওয়াতে পারে না;আমি সেই সৃষ্টির আদিকাল থেকেই কৃষ্ণকলি( কতো ফেয়ার এন্ড লাভ্লি দিলাম,কাজ হল না।) ,ওজন কখনো বাড়ে কখনো কমে যায়। সো,এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্যে জানানো যাচ্ছে যে প্রেমে পড়ার কিছু অবিমিশ্র সিমপটম আমার মধ্যে খিচুড়ি অবস্থায় বিদ্যমান আছে। যেহেতু পজিটিভ ক্যারেকটারিসটীকগুলোই¬ প্রকট,সেহেতু বুঝতেই পারছেন আমি দিনরাত সাড়ে ২৪ঘণ্টাই প্রেমে পড়ে থাকি, উঠি না। জীবনের প্রতি কদম প্রেমময়!! আমার কাছে প্রথম আর শেষ প্রেম বলে কিছু নেই। ভ্যালেন্টাইনের কথা সবাইকে বলবো কেন? জানে কিঁউ লোগ পেয়ার কারতে হ্যায়? জানে কিঁউ সাফ কেহতে ডারতে হ্যায়? জানে কিঁউ? প্রেমে পড়া টড়া কোন কথা নাই। জাস্ট চুপচাপ পিস্তল তাক করে বাসে থাকবো,একদিন তুলে নিয়ে গিয়ে সিনেমাটিক কবুলক্রিয়া সম্পাদন। দ্যাটস ইট!! )

অদিতি মৃণ্ময়ী
এফ এম এ একটা শো তে বেশ টেক্সট দিতাম, এটা ক্লাস সেভেনে। তো ওখানে টেক্সটেই লিসেনাররা বেশ আড্ডা দিতাম। একটা ছেলে, ওই শোতে আমার জন্য কবিতা লিখে পাঠাত। আমি রিপ্লায় দিতাম মাঝে মাঝে। তবে তাকে চিনতাম না। এরপর ফেসবকে ওই শোর গ্রুপে তাকে খুজেছি... পাইনি। নাম ও জানতাম না। ছেলেটা ভ্যাগাবন্ড নামে লিখত। এভাবে কয়েকবছর গেল, আমিও নতুন প্রেম শুরু করলাম, সেই প্রেম ব্রেকাপের সময় হটাথ ছেলেটার সন্ধ্যান পেলাম।
যেভাবেই পায়, পেয়েছি... ছেলেটা আরো কবিতা লিখত।
পরে জানতে পারলাম, ছেলেটা সিজেফ্রেনিক! সে কল্পনায় নীল রঙ এর শাড়ি পড়া একটা মেয়েকে দেখতে পায়
আর তাকে বাস্তব ভাবতে শুরু করে।
এরপর অনেক ঝামেলা, অনেক দিন গেল, ছেলেটার খোজ জানিনা। তবে তার লেখা গুলো আছে আমার কাছে
শুনেছি এখন জগন্নাতে পড়ছে । মেইবী সেকেন্ড অর ফোরথ ইয়ার ইকোনমিক্স।
নট শিওর।
এখন আর খোজ নেই।

ইনকগনিটো
আমি জীবনে প্রথম প্রেমে পড়েছি ক্লাস সিক্সে ! তাও আমার চেয়ে দুই বছরের বড় এক আপুর ! আমার এক পাড়াতো ভাইয়ের বাসায় বেরাতে এসছিল সে ।আপুকে কেন জানি অনেক ক্ষেপাতাম ! আপু একটুতেই ক্ষেপে যেত । আমাকে ধরতে আসতো ! বলত আমার বাসায় নালিশ করবে !আমি তাতে দ্বিগুন উৎসাহে ক্ষেপাতাম আর পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতাম !এভাবে একদিন তার যাওয়ার দিন এল !যেদিন সে চলে গেল সেদিনও বুঝি নি ।পরে টের পেলাম, আমার আর কিছুই ভাল লাগতো না ! একটা সময় আমি বুঝলাম আমি তার প্রেমে পড়ে গেছি ! কিন্তু সে এতোটাই দুরে থাকে যে তাকে আর কখনই বলা হয় নি ! বালকের প্রথম প্রেমের এভাবেই সমাপ্তি হল ! অনেক বছর পরে ভাইয়ার মুখে শুনেছিলাম আপু একবার আমাদের কথা জিজ্ঞেস করছিল ! তবে ততদিন আপুর বিয়ে হয়ে গেছ !



বটবৃক্ষ~
তখন নাইনে পড়ি । ম্যাবসে কোচিং করতাম । আমাদের ওখানে বুয়েটের এক ভাইয়া ক্লাস নিতে আসতো !
ঘন ঝাকড়া চুল, চোখে চশমা চিকন কিন্তু একটু ছোট খাটো ! দেখতে খুব কিউট ! আর নামটা তো আরও কিউট !
আমাদের ক্লাসের আরও কয়েকটা মেয়ে ভাইয়াটার উপ্রে ক্রাস খাইছিল !
আমরা ভাইয়াকে যতই রাগার চেষ্টা করতাম ভাইয়া ততই কেমন যেন একটা বোকা বোকা হাসি দিতো ! তখন তাকে আরও বেশি কিউট লাগত !
ও হ্যা ! সেই কিউট ভাইয়াটার কিউট নামটা ছিল অপু ! ;) :!> :#>

অপু তানভীর
আমার সেই দিনের কথা এখনও মনে আছে । ক্লাস সেভেনে পড়ি ! শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০০১ সাল ! আমাদের তখন ছেলে মেয়ে এক সাথে ক্লাস হত !
স্যার আসে নি তাই বসে আছি ক্লাস রুমে ! চরিদিকে হইচই হচ্ছে । আমি বরাবর চুপচাপ ! মেয়েদের সারির দিকে চোখ গেল ! তখনই মেয়েটাকে আমি দেখলাম ! নীল জিন্সের জ্যাকেট পরে মেয়েটা পুরো ক্লাস জুড়ে হেটে বেড়াচ্ছে । সবার সাথে কথা বলছে, হাসছে !
আমি জানি না, আমার বুকের মাঝে কি হল ! কেবল লক্ষ্য করলাম আমার অন্য রকম একটা অনুভুতি হচ্ছে ! বুকটা একটু যেন বেশি জোরে কাঁপছে ! এই অনুভুতি আমার কাছে নতুন ছিল !
ছোট বেলা থেকেই আমি ভালা পুলা হিসাবে পরিচিত । মেয়েদের দিকে একদম তাকাতাম না, কথা তো দুরে থাকুক !
কিন্তু মেয়েটার দিক থেকে চোখ সরাতে পারলাম না !

তার কয়েক সপ্তাহ পরে মেয়েটির সাথে আমার মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল ! একদম মুখোমুখি ! আমি যে স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম সেও সেখানে পড়ত ! দেখা হল সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল ! স্যারের বাসায় দরজার কাছে গিয়েছি ঠিক তখনই মেয়েটা এসে হাজির ! একদম মুখোমুখি ! সে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো আমি কিছুক্ষন ! মেয়েটা সেদিন বাদামী রংয়ের কামিজ আর বাদামী ল্যাগিংস পরেছিল ! চুল গুলো একটু যেন ভেজা ভেজা ছিল !
আহা !

পুরা ক্লাস সেভেনে মেয়েটির সাথে আমার কেবল এক দিন কথা হয়েছে তাও মাত্র এক লাইন ! তবে তার খোজ খবর আমি রাখতাম নিয়মিত !
উল্লেখ যে, ঠিক তিন বছর পরে, ২০০৪ সালে সেই মেয়েটির সাথেই আমার প্রথম রিলেশন হয় ! সেটা ?
সেটা অবশ্য অন্য একটা গল্প !!




আজকে এই ভালবাসার দিনে ভালবাসার কথা গুলো এই পর্যন্তই !!
ভালবাসা টিকে থাকুক আজীবন !


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৩
৭১টি মন্তব্য ৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×