somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ কুফা

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-উফ ! কুফা একটা !

একবার মনে হল কিছু না বলি । চুপ চাপ সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাই । কিন্তু মনটা বিদ্রোহী হয়ে উঠলো ! মেয়েটা এর আগেও দুদিন আমাকে দেখে এমন করেছে ।
আমি নিহিনের দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি বললেন ?
নিহিন বিন্দু মাত্র বিচলিত না হয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলল
-কেন শুনতে পান নি ?
-না ঠিক শুনিনি !
-কানের ডাক্তার দেখান ! বলেছি কুফা একটা !
-কাকে বললেন ? আমাকে ?
-জি না ! আপনাকে কেন বলবো ! ঐ যে দারোয়ান দাড়িয়ে রয়েছে ওকে বলেছি !
-কুফা কেন বললেন শুনি ?
-আপনার সাথে যতবার আমার দেখা হয়েছে কিছু না কিছু একটা অঘটন ঘটেই !

নিহিন অবশ্য কথা খানিকটা সত্য বলেছে । সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম ! নিচ তলায় নামতে আর এক তলা বাকি ! তখনই দেখি নিহিন সিড়িয়ে উপরে উঠে আসছে । আমার দিকে চোখ পড়তেই সিড়ির সাথে পা বেঁধে গেল । কোন রকমে পড়তে পড়তে বেচে গেল ! এর আগেও এই ঘটনা ঘটেছে কয়েক বার ! আমাকে দেখেই মেয়েটা এমন কেন করে ? এমন করে কেন পড়ে যায় কে জানে !
আমি বললাম
-বারে ! আপনি নিজে অসাবধানতার কারনে পড়ে গেলেন আর দোষ আমার ?
-জি আপনারই !
-তাই ?
-জি ! ঐ দিন রিক্সা থেকে নামার সময় আপনি গেট দিয়ে বের হচ্ছিলেন ! নামতে গিয়ে আমার ওড়না রিক্সায় বেঁধে ছিড়ে গেল ! আমার এতো সাধের ওড়না টা !
-আহা ! এটাও আমার দোষ ?
-অবশ্যই আপনার দোষ ! আপনি খবরদার আমার সামনে আসবেন না !
-ইস আমার যেন শখ আপনার সামনে আসা !

আরও কিছু বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু নিহিন উপরে উঠে গেল ! আমিও বাইরে বের হয়ে এলাম ! এই মেয়েটা সব সময়ে আমার সাথে এমন করে কেন কে জানে ? আচ্ছা আমি কি সত্যি সত্যি মেয়েটার জন্য দুর্ভাগ্য ?

আমি অন্য সবার জন্য কুফা কি না এই টা পরীক্ষা করার জন্য সারা দিন সিড়ির উপরে বসে রইলাম ! যেই কেউ সিড়ি দিয়ে উঠতে যায় আমি নামার ভান করি ! সে সামনে দিয়ে কোন রকম বিপত্তি ছাড়াই উঠে চলে যায় !
এরকম পরীক্ষা করতে করতে বাড়িওয়ালার সামনে তিনবার পড়লাম ! বাড়িওয়ালা আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে চলে গেল প্রতিবার ! না জানি কত কি ভাবছে কে জানে !

সারাটা দিন নিহিনের কথা ভাবতে লাগলাম ! মেয়েটার প্রতিবার আমার সাথে দেখা হয় আর কিছু একটা ঝামেলা হয় ! সেদিন সত্যি সত্যিই রিক্সা থেকে নামতে গিয়ে নিহিনের ওড়না ছিড়ে গেল রিক্সার হুডে লেগে !

পরের দিন একটা কাজ করে ফেললাম ! নিউমার্কেটে গিয়ে নিহিনের জন্য একটা ওড়না কিনে আনলাম ! মেয়েটা যেহেতু মনে করছে আমার জন্য ওর ওড়না ছিড়েছে আমার দায়িত্ব ওটার ক্ষতি পূরন দেওয়া !
অবশ্য নিহিন বাদ রেখে অন্য কেউ হলে এই ইচ্ছা আমার মনে জাগতো না ! নিহিন বলে কথা !


-এই যে শুনুন !
-আবার আপনি ?
-দেখুন আজকে আপনি সিড়িতে নেই ! রিক্সা থেকেও নামছেন না ! সুতরাং সমস্যা নেই !
-আপনাকে বলেছে !
-আচ্ছা ঠিক আছে ! আমি মেনে নিচ্ছি ! আমি আমি চেষ্টা করব আপনার সামনে আর না আসার ! আমি এই কদিন ধরে লক্ষ্য করেছি আপনি কোন কোন সময়ে বাইরে যান কোন সময়ে ফিরে আসেন !
নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা ! তাহলে আপনি এখন আমার পিছেও লেগেছেন ?
-আরে প্লিজ একটু শুনুন ! আসলে আমি সরি যে আমার জন্য আপনার বারবার ঝামেলায় পড়তে হয় !
নিহিন কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! আমি প্যাকটে টা নিহিনের দিকে বাড়িয়ে দিতে নিহিন বলল
-এটা কি ?
-ঐ যে আমার কারনে আপনার ওড়না ছিড়ে গিয়েছিল না ?
-তো ?
-এখানে একটা ওড়না আছে ! জানি না আপনার পছন্দ হহবে কি না !
-আমি কেন নিবো এটা ?
-নিলে আমার ভাল লাগবে ! যদি না নিতে চান তাহলে নিজের কাছে আমি খানিকটা অপরাধী হয়ে থাকবো !
আমি ভেবেছিলাম যে নিহিন হয়তো নেবে না কিন্তু আমাকে খানিকটা অবাক করে দিয়ে ওড়নার প্যাকেট হাতে তুলে নিল ! আমি আর দাড়ালমা না !


তারপরের কদিন একটু সাবধানে বের হলাম বাসা থেকে ! মানে কখন নিহিন বের হয় সেইটা খোজ রেখে বের হতে লাগলাম । সপ্তাহ খানেক দেখাই হল না নিহিনের সাথে । নিহিন আমাকে দেখতে পেল না তবে আমি ওকে দেখতে পেতাম আড়াল থেকেই !


কিন্তু একদিন দেখা হয়েই গেল । ছাদে সন্ধ্যার পরে বসে হাওয়া খাচ্ছি ! এমন সময় নিহিন এসে ছাদে এসে হাজির ! আমি নিহিন কে দেখে জলদি জলদি নেমে যেতে পা বাড়ালাম । কিন্তু আমাকে খাননিকটা অবাক করে দিয়েই নিহিন আমার পথ আটকে দাড়ালো !
-কোথায় যাচ্ছেন ?
-নিচে !
-কেন ?
-আমি আপনার জন্য কুফা না ?
-তাই ! এই জন্য নিচে যাচ্ছেন ?
-হুম ! কোথা থেকে কি হয়ে যাবে শেষে আমার দোষ হবে ! তাই আগে ভাগে চলে যাই !
-আমি কি সব সময় আপনাকে দোষ দেই ?

নিহিনের গলার সুর শুনে একটু অবাক হলাম ! একটু যেন নমনীয় আর কন্ঠে একটু অপরাধীর সুর ! আমি কিছু বলছি না দেখে নিহিন বলল

-আমি গত কালকেও সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে হোচট খেয়েছি !
-তো ?
-তো মানে হল এটা আপনার দোষ না ! আমিই তাড়াহুড়া করতে গিয়ে হোচট খেয়েছি !
-তো আমাকে কেন দোষ দিলেন ?
নিহিন বলল
-বোঝেন নি ?
-নাহ ! কেন ?
-আপনি না আসলেই একটা...।
-আমি কি ?
-কিছু না ! তবে ?
-তবে ?
-তবে......

কিছুটা সময় নিরবতা
-আমি আপনাকে খানিকটা মিস করেছি !
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ! নিহিন আমাকে কেন মিস করবে ? আমি কিছু না বুঝতে পেরে বললাম
-সত্যি আপনি আমাকে মিস করেছেন ?
-হুম ! প্রতিদিন উপরে সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে মনে হয়েছে কে যেন নেই ! কিছু যেন একটা নেই !

আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম নিহিনের দিকে ! নিহিনও তাই করলো ! এক ভাবেই তাকিয়ে রইলো আমার দিকে ! কিছু একটা ছিল সেই চোখে !

নিহিন আর কিছু না বলে চলে গেল ! আমি ঠিক বুঝলাম না ! মেয়ে গুলো এতো রহস্য আচরন কেন করে ? কখন চায় তাদের আশে পাশে না থাকি, আবার যখন তাদের আশে পাশে থাকি না তখন চায় যেন তাদের আসেপাশে থাকি !

তবে একটা ভাল দিক হচ্ছে মেয়েটা আমাকে মিস করেছে । দেখা যাক সামনে কিছু হয় নাকি !

৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×