somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ মায়াবতী মেয়েটি

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-এই কই তুই ?
-বাইরে বের হলাম !
-বাইরে বের হয়েছিস কেন ? তোর না শরীর খারাপ ! শুয়ে থাকতে বলেছি না তোকে !
-আরে বাবা খেতে যাচ্ছি ! খিদে লেগেছে ।
-হোটেলে খাবি ?
-আর কোথায় খাবো ? এখন রান্না করতে মন চাইছে না !
-তুই আমাদের বাসায় আয় !
-কি ? ঢং করব না তো ! এখন তোদের বাসায় যাবো কেন ?
-তোকে আসতে বলছি আয় ! একটা রিক্সা নে ! ১০/১৫ মিনিটের ভিতর চলে আসবি ! এখনই আসবি !
-নীলু .....
-কোন কথা শুনতে চাই না ! তুই এখনই আসবি ! না আসলে কিন্তু খবর আছে !

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীলু ফোন রেখে দিল ! আমি ফোন টা হাতে নিয়ে কিছু ক্ষন দারিয়ে রইলাম । কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না । এখন এই দুপুর বেলা নীলুদের বাসায় যাওয়া ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছি না । যদিও ওদের বাসাটা খুব বেশি দুরে না । রিক্সা কেন হেটে গেলেও ১৫ মিনিটের ভিতরে পৌছে যাবো কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যাবো কি না ?

আবার না গেলে নীলু চিৎকার চেঁচামিচি শুরু করে দিবে আবার যাবো যে সেই উপায়ও নেই । কি এক বিচিত্র কারনে নীলুর মা আমাকে ঠিক পছন্দ করে না । যদিও মুখ ফুটে কিছু বলে না তবে ওনার চোখের দিকে তাকালে সেটা ভাল ভাবেই বোঝা যায় !
শেষে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিলাম । হোটেলে খাওয়ার চেয়ে নীলুর বাসায় গিয়ে খেয়ে আসি ! হোটেলে খেতে গেলে নিজেকে বড় বেশি অভাগা লাগে !

একবার কলিংবেল বাজানোর পরপরই নীলু দরজা খুলে দিল ! মনে হচ্ছিলো যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করে ছিল ! ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ টা একটু ফোলা ফোলা । মনে হল যেন একটু আগে কোন কারনে কান্না-কাটি করেছে ।
ওর মায়ের সাথে কোন কিছু হয়েছে ?
এমন একটা সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না একেবারে ! আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-আন্টি কোথায় ?
-ঘুমুচ্ছে ।
-সত্যি ?
-হুম !
-ওনাকে বলেছিস আমি আসছি ?
এই কথা শোনার পরই দেখলাম নীলুর মুখটা একটু মলিন হয়ে গেল ! আমি মোটামুটি নিশ্চিত হলাম যে আমাকে নিয়েই ওর মায়ের সাথে ওর কিছু একটা হয়েছে । আমি কেন আসছি এখন এটা নিশ্চই ওর মায়ের খুব একাটা পছন্দ হয় নাই ! কিন্তু নীলুর জেদের কাছে শেষে পরাজিত হয়ে নিজে ঘর বন্দী হয়েছে । এই মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন পাগলামী কেন করে বুঝি না !
নীলু আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-চল তোর খিদে লেগেছে । আগে খেতে দেই !
-হুম ! কি রান্না হয়েছে আজকে ?
-খুব বেশি কিছু না ! আগে জানলে ভাল কিছু রান্না করতাম !

খাবার টেবিলের আয়োজন একেবারে খারাপ না ! বিশেষ করে রুই মাছের ঝোল টা বেশ দেখা যাচ্ছে । আমি ভাত মাখাতে মাখাতে নীলুকে বললাম
-আন্টির সাথে ঝগড়া করেছিস ?
নীলু কিছু না বলে কেবল মাথা ঝাকালো !
-আমার জন্য ?
-হুম !
-কেন ?
-এমনি ! ইচ্ছা হয়েছে তাই করেছি ! তুই মুখ বন্ধ করে খা তো ! বাইরে কি ছাতার মাথা খাস কে জানে ! এমনিতেও পেট খারাপ আরও খারাপ হবে !
আমি হাসি মুখে ভাত মুখে দেই !
ভাত মুখে নিয়ে নীলুর দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে আছে । আমাকে সামনে বসিয়ে এর আগেও ও যতবার খাইয়েছে ততবারই ওর চোখে এমন একটা চাপা আনন্দ দেখেছি ! অদ্ভুদ মায়া নিয়ে মেয়েটা আমার খাওয়া দেখছে !
হঠাৎ চোখে পানি চলে আসতে চাইলো । তাড়াতাড়ি করে পানি মুখে দিলাম !
নীলু ব্যস্ত হয়ে বলল
-কি হল ?
-এতো ঝাল কেন ?
-ঝাল ? কই দেখি ?
নীলু খানিকটা অবাক হয়ে আমার প্লেট থেকে মাছের কিছু অংশ মুখ নিল !
-কই ঝাল ?
-ঝাল না ? দেখ ঝালের জ্বালায় আমার চোখে পানি চলে এসেছে !
-তাই না ! ঢং ! পানি খা !
আমি আবার খাওয়া শুরু করলে নীলু বলল
-ডাল নে ! এটা ভাল হয়েছে !
-নিচ্ছি ! তুই খেয়েছিস তো ?
-আমার খাওয়া নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না ! আপনি খান !

আমি চুপ করে খেতে লাগলাম ! মাঝে মাঝে নীলু দিকে তাকিয়ে দেখি ও আবার সেই অদ্ভুদ মায়ার চোখে আমার খাওয়া দেখছে ! আমার মন টা কেন জানি ভাল হয়ে যায় !
যখন খাওয়া শেষ করলাম তখন দেখি নীলু তোয়ালে নিয়ে এসে হাজির !

ঢাকায় এসে এই জিনিস টা আমি খুব বেশি মিস করি ! আমার মতে এই পৃথিবীতে দুই প্রকার মানুষ আছে । এক, যাদের খাওয়ার সময় তাদের প্রিয় মানুষ তাদের পাশে থাকে । দুই, যাদের কে একা একা খেতে হয় । পৃথিবীতে একা একা ভাত খাওয়ার মত দুর্ভাগা লোক আর কেউ নেই !

হাত মুছতে মুছতে বললাম
-আমি এখন যাই !
নীলু চোখ কপালে তুলে বলল
-তুই বিহারীদের মত হলি কবে থেকে ?
-মানে কি ?
-মানে জানিস না ! বিহারীরা খাওয়ার পরে কোথাও আর এক মিনিট বসতে চায় না !
-আমি তো পারলে থেকেই যাই কিন্তু তোর মা.....।
-তোকে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না ! তুই বসার ঘরে গিয়ে আরাম কর ! ঘরে দই আছে । নিয়ে আসছি !

আমি বসার ঘরের বসতে বসতেই নীলুর মা বেরিয়ে এল ঘর থেকে ! আমি উঠে সালাম দিলাম ! তিনি এমন একটা ভাব করলেন যেন আমাকে ঠিক দেখতে পারেন নি এবং আমার সালাম টাও শুনতে পারেন নি ! টেবিল থেকে পানি নিয়ে আবার নিজের ঘরে চলে গেলেন আমার সামনে দিয়ে ! ভাগ্য ভাল নীলু সামনে ছিল না । থাকলে হয়তো আবার ওর মায়ের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিতো !

নীলু আসলো আরও কিছু সময় পরে । এরই ভিতরই পরনের সেলোয়ার কামিজ বদলেছে । মুখে পানি দিয়েছে । চুল গুলো সমান করে আচড়ানো ! আবার একটু কাজলও দিয়েছে চোখে ! আমার দিকে দইয়ের বাটি দিতে দিতে বলল
-এখন কেমন লাগছে তোর ! শরীরের অবস্থা কেমন ?
-এতোক্ষন পরে জানতে চাইলি ?
-আসলে তখন মন মেজাজ ভাল ছিল না তাই জানতে চাই নি !
আমি বাটি হাতে নিতে নিতে বললাম
-এই ঝামেলাটা টা না করলেও পারতি ! কি হত আমি বাইরে খেলে ! কত বেলাই তো খাই তাই না ?

এই কথা বলেই মনে হল ঠিক হল না ! নীলুর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর কাজল দেওয়া চোখে ততক্ষনে পানি জমতে শুরু করেছে । আমি ওকে থামানোর চেষ্টা করলাম না । এই মেয়েটা অকারন কাদে যখন তখন । আমি বাইরে খাই এই কথার কান্নার কি হল ?
কিছু না ! আমি এভাবেই আছি এই শহরে ! এখানে সেখানে খেয়েই এই ইট কাঠের শহরে বেঁচে আছি । আমার মত একজন কে নিয়ে এটো চিন্তা করার কি আছে ?
আমি বললাম
-খাবি একটু ?
-না ! তুই খা ! খেয়ে বিদায় হ !
-নে একটু !
বলে চামচটা ওর দিকে এগিয়ে দিলাম ! ও মুখ বাড়িয়ে সেটা মখে নিল ! ভাগ্য ভাল যে নীলু মা এখন এখানে নেই । থাকলে এই দৃশ্য দেখলে আমাকে আস্ত চিবিয়ে খেত !
-আরেকটু দে !
-বাহ ! মেহমান কে খেতে দিয়ে তুই ই সব খেয়ে নিবি !
-কে মেহমান ? আহ ! আমার মেহমান রে ...
নীলু খানিকটা হেসে ওঠে !


আমি আশ্রু চোখে হাসতে পারা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকি ! আমার প্রতি কি এক মায়া মেয়েটা অনুভব করে আমি জানি না ! কেন করে তাও জানি না ! কিন্তু মনে হয় এই মায়া টুকু ছাড়া যেন আমার জীবন টুকু অসম্পূর্ন থেকে যেত !

------

বাস্তবে মেয়ে গুলো এমন মায়াবতী হয় না ! এমন মায়াতী মেয়ে কেবল হুমায়ুন আহমেদের বইতে পাওয়া যায়, যারা তাদের কাছের মানুষ গুলোর জন্য অদ্ভুদ মায়া মায়া অনুভব করে । সেই মায়া জন্ম এই পৃথিবীতে না ! অন্য কোথাও !
আমি সারা জীবন সেই মায়াবতী সন্ধান করে গেছি ! যাকে প্রাণ দিয়ে ভালবেসেছি সেও আমার প্রতি এমন মায়া অনুভব করে কি না জানি না ! আমি জানতে চাইও না ! কেবল কল্পনা করে নিতে চাই যে, নাহ, এটা সত্য না । এমন একজন আছে আছে । অবশ্যই আছে যে আমার জন্য এমন মায়া অনুভব করে ! আমি বাইরে খেতে গেল সে জোর করে আমাকে নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে আসবে । বাবা মায়ের চোখ রাঙ্গানী উপেক্ষা করে আমাকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে গরম ভাত খাওয়াবে ! রুই মাছের ঝোল আর ডাল ! কখন কি লাগবে সেটার জন্য আমার সামনেই বসে থাকবে ! খাওয়া শেষ হতেই সাবান আর তোয়ালে নিয়ে সামনে এসে হাজির হবে !
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×