somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু-গল্পঃ বালিকার ভালবাসা !

০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-স্যার পিলিজ গিভ মি সাম মানি !

আমি খানিকটা অবাক হয়ে পিচ্চিটার দিকে তাকালাম । সংসদ ভবনে এসেছি তিথির সাথে দেখা করার জন্য ! সন্ধ্যা প্রায় নেমে গেছে । তিথিকে নিয়ে বসে আছি, এখনও আনুষ্ঠানিক কথা বার্তা শুরু হয় নি ! এমন সময় এক পিচ্চি এসে হাজির ! পিচ্চির খালি গা । প্যান্ট টাও বেশ ময়লা । এমন পিচ্চির কাছ থেকে ইংরেজিতে ভিক্ষা চাওয়াটা একটু অন্য রকম । আমি পিচ্চিকে বললাম
-কি বললি ?
পিচ্চি ফিক করে হেসে দিল । তারপর বলল
-স্যার ইংরেজি জানেন না ?
আমি কি উত্তর দেব তাকিয়ে দেখি তিথি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । আমি পিচ্চিকে বললাম
-যা ভাগ এখান থেকে । দেখছিস না কথা বলছি !
-স্যার দেন না ?
-যা ভাগ !
আমার কথা শুনে তিথি বলল
-আহা ! দিয়ে দেন না ! বেচারা ইংরেজিতে ভিক্ষা চেয়েছে !
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম
-মাথা খারাপ ! এদের একজন কে যদি কিছু দিলে চারিদিক থেকে সবাই ছুটে আসবে । তখন ?

তিথি কিছু না বলে চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি বললাম
-তুমি কেন আমাকে ডাকলে ?
-কেন ? এমনি দেখা করতে ইচ্ছা হতে পারে না ?
-না পারে তো ! পারবে না কেন ? তা এমনিই কি ?
তিথি কোন কথা না বলে আবার অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি জানি ও আমাকে কিছু বলতে আজকে আমাকে ডেকেছে, কিন্তু ঠিক মত বলতে পারছে না !
আমি বুঝি না মেয়েটা আমার সাথে কথা বলতে এতো সঙ্কোচ কেন বোধ করে ! আমার সাথে এমন একটা ভাব করে যেন ওর সাথে আমার আগামী মাসে বিয়ে হবে পারিবারিক ভাবে । আমার সাথে প্রথম বারের মত দেখা করতে এসেছে ।
এদিকে আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছাও আছে আবার আমার সাথে কথা বলতে গিয়ে লজ্জায় মরে যাচ্ছে !

আমিও চুপাচাপ এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । সন্ধ্যার দিকে সংসদ ভবন এলাকা টা বেশ জমজমাট ! যডিও নিজের উপর খানিকটা অত্যাচার হয় তবুও সময় ভাল কাটে । তবে বন্ধু বান্ধদের সাথে আসলে ভাল হয় । বর্তমান প্রেমিকা কে নিয়ে আসলে একটু সমস্যায় পড়তে হয় !

সন্ধ্যার অন্ধকার যখন আরও একটু ঘন হল তখন তিথি হঠাৎ করে বলল
-আজ কদিন ধরে আপনার কি হয়েছে ?
-কেন কি হবে ?
আমি খানিকটা অবাক হলাম । এমন তো কিছু হয় নাই ! আমার অবাক ভাব টা দেখে তিথিও খানিকটা অপ্রস্তুত হল । বলল
-না কিছু না ! ভুলে যান !
-আরে ভুলে যান মানে কি ?
-কিছু না ! প্লিজ অন্য কিছু বলেন ! আমি আসলে .....
-কি আসলে ?
-কিছু না ! প্লিজ আপনি আর কিছু জানতে চাইবেন না ! প্লিজ !
আমি আর কি বলবো ঠিক বুঝলাম না ! বললাম
-আইসক্রিম খাবা ?
-হুম ! তবে একটা নিয়ে আসবেন ।
-একটা কেন ? আমি খাবো না ?
-খাবেন । তবে আমারটা থেকে ?
-আমার এটো খেতে পারবে তুমি ?
-খুব পারবো ! আপনি পারবেন তো ?

আমি তিথির ছেেল মানুষী দেখে হাসলাম ! তারপর সামনের আইসক্রিমওয়ালা থেকে আইসক্রিম নিয়ে এলাম !
তিথি আমার দিকে তাকানো বন্ধ করে দিয়েছে ।
কয়েক আইসক্রিমে কয়েক কামড় দিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল আইসক্রিম টা !

এমনিতেও ও আমার দিকে ঠিক মত তাকায় না । একটু যেন লজ্জা লজ্জা পায় ! সেই শুরু থেকে ।
আমার মনে আছে আমাদের প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিন ও একটা বারের জন্য আমার দিকে তাকায় নি । আমি যতবার ওর সাথে কথা বলতে যাই ও ততবার অন্য দিকে তাকায় !
আজকেও তেমন করছে ।

আমি আইসক্রিমে কামড় দিতে দিতে বললাম
-তুমি কি আমার গত কয়েক দিনের স্টাটাস দেখে খানিকটা চিন্তিত ?
তিথির নিরবতা দেখে বুঝলাম তিথি সেটা নিয়েই খানিকটা চিন্তিত ! আমি বললাম
-আরে চিন্তিত কেন হচ্ছো ?
-কেন ? হব না ?
-কেন মানে ওসব তো প্রাক্তন প্রেমিকাদের নিয়ে !
-প্রেমিকাদের ?
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-কেন ? তুমি জানো না ?
-জানি তো ! কিন্তু আমার ভাল লাগে না ! আপনার মুখে অন্য মেয়েদের কথা শুনতে ভাল লাগে না !
-তো কি শুনতে ভাল লাগে শুনি ?
এই কথার জবাব না দিয়ে তিথি চুপ করে রইলো !

তিথি আমার থেকে এক হাত দুরুত্ব রেখে বসে ছিল । সব সমসয় এমন করেই বসে । আমি ওর দিকে একটু সরে বসলাম ! কাছে গিয়ে ওর দিকে আইস ক্রিম বাড়িয়ে বললাম
-তো তোমার কি ভাল লাগে ? সারা দিন কেবল তোমাকে নিয়ে কথা বলবো ?
তিথি কোন কথা বলে না বলে কেবল মাথা নাড়লো ! আমি ওকে বললাম
-চিন্তা কর না ! ওগুলো তো এক্সদের কে নিয়ে লেখা । তুমি তো আর এক্স নাও । তাই না ?
-তাহলে আমি কি ?
-তুমি হচ্ছ সি ?
-সি ?
-হুম ! সি মানে কারেন্ট ! কন্টিনিয়াস প্রোসেস !
-মানে আমিও এক্স হতে যেতে পারি ?
-সেটা তোমার বিবেচনা !
-মানে ?
-মানে হল তুমি যদি আমার থেকে যে তোমাকে বেশি আর্থিক নিশ্চয়তা দিতে পারা কারো কাছে চলে যাও তাহলে এক্স হয়ে যাবেই ! যেমন করে আগের জন চলে গেছে ।

তিথির দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে আছে । চোখের কোনে পানি জমতে শুরু করেছে ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি কোন দিন আপনাকে ছেড়ে যাবো না ! কোন দিন না ! যদি আমাকে সারা দিন না খেয়ে থাকতে হয় তবুও না !

কিছু একটা বলতে গিয়েও কেন জানি বললাম না ! বালিকার তীব্র আবেগ কে কেন জানি প্রশ্রয় দিতে মন চাইলো ! কিন্তু আমি এটাই জানি বয়স বাড়ার সাথে এই তীব্র আবেগ আস্তে আস্তে কমতে থাকবে । সেখানে প্রক্টিক্যাল চিন্তা ভাবনা শুরু হবে । কে বেশি ভালবাসতে পারে এই চিন্তা থেকে বালিকা তখন এই চিন্তা করবে কে বেশি ভাল বাসায় তাকে রাখতে পারবে !

-স্যার পিলিজ গিভ মি সাম মানি !

পিচ্চি ছেলেটা আবার ফিরে এসেছে । আমি তিথিকে চোখের পানি সামলে নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিয়ে পিচ্ছির সাথে কথা বলতে লাগলাম !
-এই আর কি কি ইংরিজি জানিস ?
-আরও মেলা ?
-বলতো কয়েকটা ! যত গুলো বলতে পারবি তত টাকা পাবি !
-সত্য তো ?
-হুম ! সত্য !

পিচ্চিটা আবারও ইংরেজি বাক্য বলার প্রস্তুতি নিতে থাকে ! আমিও চুপচাপ অপেক্ষায় থাকি !
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৩:০০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×