somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ দ্যা রাইট ওয়ান

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইশরাত আমাকে কোন দিন মুখ ফুটে বলে নি যে ও আমাকে পছন্দ করে । কিন্তু তার কাজ কর্ম দিয়ে ঠিকই বুঝিয়ে দিয়েছে যে আমি যেন অন্য কোন দিকে না যাই, গেলে খবর আছে । এতোদিন তার আচরনও ঠিক সেই রকমই ছিল কিন্তু আজকে মেয়েটাকে কেমন যেন একটু অন্য রকম লাগছে । মনে হচ্ছে যেন ইশরাত খানিকটা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছে ।
কিসের উপর থেকে ?
আমার উপর থেকে ?

ইশরাত সেই কখন থেকে আমার ডেস্কের সামনের চেয়ারে বসে আছে । আজকে কাজ শুরু থেকে শুরু করে একবারও আমার সাথে দেখা করতে আসে নি । এসেছে লাঞ্চ আওয়ারে । এসে চুপ করে বসে আছে কেবল । কোন কথা নেই মুখে । অন্য দিন কতই না কথার খই ফুটতো মুখে !
আমি নিজের চেয়ার ছেড়ে গিয়ে ওর পাশের চেয়ারে বসলাম । তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি হয়েছে বলবেন প্লিজ ?
-কিছু হয় নি ।
-তাহলে এরকম মুখ ভার করে বসে কেন আছেন !
-এমনি !

আমি আসলে জানি ওর মুখ কেন ভার ! কেন ওর মন খারাপ । কিন্তু আমি চাচ্ছি ব্যাপারটা ও নিজে থেকেই আমার কাছে জানতে চাক । তাহলে আমি ওকে সব বলতে পারি । আরও কয়েক মিনিট ও চুপ করে বসেই রইলো । তারপর হঠাৎ করেই মাথা তুলে তাকালো আমার দিকে । বলল
-নাদিরাকে আপনি কতদিন থেকে চেনেন ? ওর সাথে আপনার সম্পর্ক ছিল ? এখনও আছে ?
-গোড়া থেকে বলি সব ? তাহলে হয়তো পরিস্কার বুঝতে পারবে ?
-বলুন !

আমি একটু দম নিয়ে নিলাম । অনেক কথা বলতে হবে । আমার বিশ্বাস সব শোনার পরে ইশরাত ব্যাপারটা বুঝতে পারবে । আমি বলা শুরু করলাম ।
-আমি শুরু থেকেই ছাত্র রাজনীতি করতাম ভার্সিটিতে । ক্ষমতাসীন দলের লোক ছিলাম তাই দাপট কম ছিল না । নাদিরা আমার ডিপার্টমেন্টেই ভর্তি হয় । আমার থেকে দু ব্যাচ জুনিয়র । একদিন লক্ষ্য করলাম অন্য দলের কয়েকটা ছেলে একটা মেয়েকে খুব টিজ করছে । একে তো আমার নিজের ক্যাম্পাস তার উপর আমার নিজের ডিপার্টমেন্টের মেয়ে । আর যায় কোথায় ! ঐ ছেলে গুলোকে সেই পেটালাম ।

ঘটনা হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যেত কিন্তু হল না । দুদিন পরে সেই মেয়েটা নিজ থেকেই আমার খোজ বের করে আমাকে ধন্যবাদ দিল এমন কি আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে লাঞ্চও করালো । এই মেয়েটাই নাদিরা । তারপর থেকে মেয়েটা আমার সাথে মাঝে মাঝেই দেখা করতো । একটা সময় বুঝতে পারলাম যে আমরা দুজন দুজনকেই পছন্দ করতে শুরু করেছি । একদিন সাহস করে বলেও ফেললাম । নাদিরা রাজিও হয়ে গেল ।
বছর খানেক সেই প্রেম করলাম দুজন ।

এই লাইন টা বলে ইশরাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখটা খানিকটা মলিণ হয়ে গেছে । আমি আবার শুরু করলাম ।
-ওর জন্য আমাকে রাজনীতি ছাড়তে হল । ওর এক কথাই ছিল যে রাজনীতি করা কোন ছেলেকে নাকি ওর ফ্যামিলি মেনে নেবে না । যাক ছেড়ে দিলাম আস্তে আস্তে । কদিন ঠিক ছিল সব তারপরেও আবার এল নতুন ঝামেলা । ওর বাসা থেকে নাকি ছেলে দেখছে । আমাকে কিছু করতে হবে । তখন সবে মাত্র আমার অনার্স শেষ হয়েছে । মাস্টার্স করতে গেলে হয়তো নাদিরার বিয়ে হয়ে যাবে তাই মাস্টার্স না করেই কাজে নেমে গেলাম । শুরুতে মার্কেটিং অফিসার হিসাবে যোগ দিলাম একটা কোম্পানীতে । বেতন ছিল কম তবুও আর কোন পথ ছিল না । মাস তিনেক পরে বেতন হাজার পনের মত হল । নাদিরাকে তখন বিয়ের কথা বলতে ও যে আকাশ থেকে পড়লো । এতো কম বেতনের চাকরী করলে নাকি ওর বাবা কিছুতেই রাজি হবে না । বললাম যে কয়েকটা দিন যাক বেতন বাড়বে !
ও কেন জানি আমার দিকে অদ্ভুদ চোখে তাকালো । পরিস্কার জানিয়ে দিল যে আরও ভাল বেতনের চাকরি যোগার করতে হবে নয়তো কিছু হবে না ।


এই লাইণ গুলো বলে আমি খানিকটা চুপ করে রইলাম । কেন জানি পুরানো কথা গুলো বলে মনটা খানিকটা সিক্ত হয়ে উঠলো । ইশরাত আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তারপর ? তারপর কি হল ?
-তারপর আর কি ? লক্ষ্য করতে লাগলাম নাদিরা আস্তে আস্তে আমার সাথে যোগযোগ কমিয়ে দিচ্ছে । তারপর একেবারে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল । কেন জানি খুব জেদ চাপলো মনের ভেতরে । চাকরি করার সাথে সাথে এমবিএ ভর্তি হলাম । সেখান পাশ করে আজকে এই চাকরি ! আপনার সাথে পরিচয় !
-এখনও ওকে ভালবাসেন ?
-একসময় বাসতাম । খুব আশা ছিল যে জীবনের কঠিন সময় গুলোতে সে আমার পাশে থাকবে ! আমার হাত ধরে আমাকে বলবে যে ভয় নেই আমি আছি তোমার সাথে । কিন্তু সব আশা তো আর পুরন হয় না !
ইশরাত বলল
-এখন যদি সে চায় হাত ধরতে ?

আমি হেসে ফেললাম ।
-এখন তো আমার হাত ধরার দরকার নেই । আমি সেই কঠিন সময় পার চলে এসেছি । তখন যখন সে ছাড়া কেটেছে এখনও অবস্থা আরও ভাল । তাকে দরকার নেই ।

আমি জানি ইশরাত এসব কথা কেন জানতে চাচ্ছে । আসলেই ইশরাতের সাথে পরিচয় না হলে হয়তো নাদিরার সাথে আবার আমার দেখা হত না । এই ব্যাংকে এমটিও পদে আমি আর ইশরাত এক সাথেই জয়েন করেছি । সেই প্রথম দিন থেকেই মেয়েটার সাথে আমার ভাব হতে শুরু করে । সেটা তাও বছর খানেক আগের কথা । গত সপ্তাহে মেয়েটা আমাকে জোর করে তার এক আত্মীয়ের বিয়েতে দাওয়াত খেতে নিয়ে যায় । এবং সেখানে হঠাৎ করেই আমার আবারও নাদিরার সাথে দেখা হয়ে যায় । ইশরাত নিজে আমাকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো ।

সেই দিন রাতেই প্রায় বছর তিনেক পরে নাদিরা আমাকে ফোন দিল । অনেক কথা বলল । সে অনেক ভুল করেছে জীবনে । আসলে আমার মত নাকি আর কাউকে পায় নি । তার মানে ট্রাই করেছে । শেষে না পেয়ে আবার আমার কাছে ফেরৎ এসেছে । এখন তার বক্তব্য যে সে আবার ফিরতে চায় আমার কাছে ।

আমি ঐদিন ইশরাত কে কিছু বলি নি নাদিরার কথা । তবে বলবো বলবো করছিলাম । সময় আর সুযোগ পাচ্ছিলাম না । আজকে ওর মুখ দেখেই কেন জানি মনে হল ও ব্যাপারটা জেনে গেছে । আমি বললাম
-আপনি কিভাবে জানলেন নাদিরার কথা ?
-আজকে ও আমাদের বাসায় এসেছিল । আমাকে বলল আপনার সাথে নাকি ওর সম্পর্ক ছিল ।
-আর ?
-এখন নাকি আবারো আপনাদের সম্পর্ক ঠিক হয়ে যাবে !
-তাই ?
-হু !
-তা আপনার কি মনে হয় ? ঠিক হবে ?

এই লাইণটা বলার সাথে সাথেই ইশরাত আমার দিকে তাকালো । আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম একভাবে । কালো ফ্রেমের চশমা টার ভেতর দিয়ে ওর গভীর চোখে পানি টলমল করছে । আমি হাত দিয়ে ওর চশমা টা খুলে নিলাম । চশমা ছাড়া খালি চোখটা আরও স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে । আমি বললাম
-আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আপনার কি মনে হচ্ছে ? আমি এখনও ঐ মেয়েকে ভালবাসি ?
-উহু !
-আর কি দেখছেন ? অন্য কারো জন্য ভালবাসা দেখছেন ? চশমা পরা কোন মেয়ের জন্য ?

ইশরাতের চোখ দিয়ে পানি টুপ করে গড়িয়ে পড়লো । আমি ওর মুখের আরও একটু কাছে নিজের মুখটা নিয়ে গেলাম । তারপর ওর নাকে ছোট্ট করে একটা চুমু খেলাম । বললাম
-নাদিরার প্রতি আমার ভালবাসা ঐদিন শেষ হয়ে গেছে যদিন ও আমাকে ছেড়ে গেছে আরও ভাল অপশনের জন্য । অন্য দিকে আপনার সামনে আরও ভাল অপশন থাকা সত্ত্বেও আপনি কেবল আমাকেই পছন্দ করে আমাকে ধরে আছেন !


ভাল অপশান কেন বললাম মাস তিন আগে আমাদের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার স্যার ইশরাতের সাথে তার ইঞ্জিনিয়ার ছেলের বিয়ে দিতে চেয়েছিলো । কিন্তু ইশরাত সেটা সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে । আমি একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম তবে ও রাজি না হওয়াতে জানে পানি এল । তখনই মনে হল এই মেয়ে আমাকে ছেড়ে যাবে না কোন দিন । অন্তত টাকা পয়সার জন্য তো নয়ই ।


ইশরাত আবার চশমা পরলো । শুরুর চেহারাটা ওর বদলাতে শুরু করেছে । আগের নিয়ন্ত্রন হারানো ভাবটা কেটে গিয়ে আবার আগের চেহারা ফিরে আসতে শুরু করেছে । আমি ইশরাত কে বললাম
-একটা কাজ করতে চাই
-কি কাজ ?
-তোমার ঐ আত্মীয় মানে নাদিরা একদিন দাওয়াত দিবা তোমার বাসায় ?
-কেন ?
-ঐদিন আমিও যাবো তারপর ওর সামনে আমি তোমাকে একটা চুমু খেতে চাই ।
-মানে কি কেন ?
-প্রতিশোধ বলতে পারো । ওকে ওর চেহরা দেখে আমি তখন পৌশাচিক আনন্দ পাবো !
-তুমি তো ফাজিল আছো বিরাট !
-আমি বদদের সাথে বদমাইশ করি ।
-না এসব করতে হবে না ।
-অবশ্যই হবে ।

যদিও ইশরাত রাজি হল না তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ও ঠিকই এই কাজটা করবে ।


আমার আসলেই নাদিরার জন্য কোন ভালবাসা অবশিষ্ট নেই । যে মেয়ে কেবল ভবিষ্যৎ সুখের জন্য নিজের ভালবাসা ভুলে নতুন কারো খোজে চলে যেতে পারে তার জন্য ভালবাসা থাকার কোন মানে নেই । আমি ইশরাতের জন্য ভালবাসা আছে । মেয়েটা যখন আমার হাত ধরেছে, আমার থেকে ভাল অপশান থাকা সত্ত্বেও আমাকে ত্যাগ করে যায় নি তখন সে আমাকে ছেড়ে যাবে না কোন দিন, অন্তত টাকা পয়সার জন্য তো নয়ই ।



(বাস্তব জীবনের কাহিনী অবলম্বনে)

ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:০৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×