somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতি-প্রাকৃত গল্পঃ প্রতিশোধ

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মুখবন্ধ
====


আজগর আলী ছাদে উঠে গেট টা বন্ধ করে দিলেন । রাতের বেলা এই ছাদে উঠা একেবারেই নিষেধ । কিন্তু তিনি এই এপার্টমেন্টের সেক্রেটারি । ছাদের একটা চাবি তার কাছেও থাকে সব সময় ! ছাদের রেলিংয়ের সামনে গিয়ে নিচে তাকালেন । ২১ তলা বিল্ডিং । নিচে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না । এদিকটাই আর কোন বাসা নেই । এখান থেকে একটা খেলার মাঠ শুরু হয়েছে । নিচে পড়লে কোন ভাবেই বাঁচার কোন সম্ভাবনা নেই ।

আজগর আলী রেলিংয়ের উপর উঠে দাড়ালেন । অনেক কঠিন একটা সিদ্ধন্ত নিয়েছেন তিনি ।
তার সাত বছরের মেয়েটা !
তার পাপের শাস্তি তার মেয়েটা এভাবে পাবে সেটা তিনি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ।
তিনি চোখ বন্ধ করলেন । উপরওয়ালার কাছে নিজের কৃত কর্মের জন্য ক্ষমা চাইলেন । ক্ষমা চাইলেন রিপনের কাছেও । তার মেয়েটাকে যেন সে ছেড়ে দেয় ! তার পাপের শাস্তি যেন সে নিঃপাপ মেয়েটা না পায় আর !


অধ্যায় এক
=======


মিসেস জোবাইদা হায়দায় আরেকবার লাইনটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন । স্বামীর গরম চোখের দিকে তাকিয়ে মুখের কথাটা মুখেই রয়ে গেল । শেষ করতে পারলেন না ।
হায়দার আহমেদ বললেন
-আর একটা বার যেন এই কথা তোমার মুখ থেকে না শুনি !
-কিন্তু আপনি দেখেন ....
-চুপ ।

হায়দার আহমেদ ধমকে উঠলো । এমনিতেও তার মন মেজাজ ভাল নেই । তার উপর নিজের বউয়ের এরকম উদ্ভট কথা বার্তায় তিনি খুব বেশি বিরক্ত হচ্ছেন । জোবাইদার দিকে তাকিয়ে বলল
-এরপর থেকে যদি এমন কথা বল তাহলে তোমার আর হাসপাতালে আসার দরকার নেই আর ! বুঝতে পেরেছো তুমি ?

জোবাইদা আর কোন কথা বলল না । কাঁচের জানালা দিয়ে মেয়ে মিমির দিকে তাকিয়ে আছে । মিমির হাত দুটো হাসপাতালের বেডের সাথে আটকে রাখা হয়েছে । পায়েও বেল্ট দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে । কিন্তু তবুও ওকে কোন ভাবেই শান্ত রাখা যাচ্ছে না । মনে হচ্ছে কেউ যেন ওকে খুব শক্ত করে ঝাকি দিচ্ছি । দুজন নার্স কুলিয়ে উঠতে পারছে না । আর মুখ দিয়ে কেমন আওয়াজ বের হচ্ছে । এটা যে তার মেয়ের আওয়াজ নয় বরং অন্য কারো কিংবা অন্য কিছুই আওয়াজ সেটা বুঝতে জোবাইদা বেগমের খুব বেশি কষ্ট হওয়ার কথা না । কিন্তু মিমির বাবা হায়দায় আহমেদ সেটা কোন ভাবেই মানতে নারাজ ।

জোবাইদা কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । তার কিছু করারও নেই । স্বামীর কথার উপর একটা কথা বলার সাহস তার কোন কালেই ছিল না, এখনও নেই । মেয়ের দিকে তাকিয়ে কেবল চোখ দিয়ে পানিই ফেলতে লাগলেন । এখন আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই তার করার নেই । যদি উপরওয়ালা মুখ তুলে তাকান তাদের দিকে ।

সব কিছু শুরু হয়েছে প্রায় মাস খানেক আগে । হঠাৎ করেই তার মেয়েটা যেন একদম চুপছে গেল । কদিন থেকেই তিনি সেটা বুঝতে পারছিলেন । তিনি সেটা মিমিকে জিজ্ঞেসও করেছিলেন তবে মিমি কোন জবাব দেয় নি । কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক আছে তিনি মেয়েকে ছাদে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান । বাড়ির কাজের লোকজনকে ডেকে তাকে ঘরে নিয়ে আসা হয় । সেই রাতে সব কিছি ঠিক হয়ে গেছে মনে হলেও আসলে কিছুই ঠিক ছিল না । সেই দিন রাত থেকেই মিমির ঘর থেকে অন্য রকম আওয়াজ পাওয়া যেতে শুরু করলো । মিমি যেন কারো সাথে কথা বলছে কাউকে চলে যেতে বলছে । মাঝে মাঝে কান্না আওয়াজ ।

হায়দার আহমেদের এসবের কিছুর দিকেই লক্ষ্য নেই । তিনি ব্যস্ত তার কাজ আর ব্যবসা নিয়ে । কদিন আগেই তার ব্যবসায়িক পাটনার ছাড থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছে । এটা নিয়ে তিনি মেয়ের কাছে সব কিছু জানতে চান কিন্তু মিমি কিছুই বলে না । চুপ করে থাকে । তারপর গত সোমবার সব কিছু অন্য রকম হয়ে গেল । মিমির অবস্থা একদম খারাপ হয়ে গেল । তাকে কোন ভাবেই সামলানো যাচ্ছিলো না । শেষে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে । যেখানে বেশির ভাগ সময়ই তাকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে রাখা হচ্ছে । কারন যখনই মিমির ঘুম ভাঙ্গছে তখনই মিমি খুব বেশি চিৎকার চেঁচামিমি শুরু করে দিচ্ছে । হাত পা ছুড়ছে । নখ দিয়ে আচড় দিচ্ছে কিংবা কামড়াচ্ছে । আর মুখ দিয়ে অদ্ভুদ আওয়াজ করছে ।


-ম্যাডাম !
জোবাইদা বেগম একভাবে মেয়ের দিকে তাকিয়েই ছিলেন । কখন যে পাশে একজন এসে দাড়িয়েছে সেটা তিনি লক্ষ্য করেন নি । ডাক দেওয়াতে পাশ ফিরে তাকালেন । তাকিয়ে দেখেন হাসপাতালের একজন নার্শ । গত রাতে এই নার্সটাই মিমির পাশে ছিল । আজকে ডিউটি নেই সম্ভবত ।
-বল !
-স্যার কি চলে গেছেন ? মানে আপনার হাজব্যান্ড ?
-হ্যা । একটু আগে গেল । আবার আসবে । কেন ?
-সেটার জন্য না । স্যার শুনলে হয়তো রাগ করবে । এই জন্য আপনাকে একটা কথা বলতে চাই ।
-বল !

এই প্রাইভেট হাসপাতালের একজন ডাইরেক্টর হল হায়দার আহমেদ । তাকে ভয় পাওয়ার পেছনে যথেষ্ঠ কারন এই নার্সের আছে । বল বলার পরেও মেয়েটা একটু যেন সংকোচ করছে । জোবাইদা আবারও বলল
-বল, কি বলতে চাও ? আমি তোমার স্যারকে এই বিষয়ে কোন কথা বলবো না ।
নার্সটি আরও কয়েক মুহুর্ত চুপ করে রইলো । তারপর বলল
-মিমি ম্যাডামকে কোন ডাক্তার ঠিক করাতে পারবে না ।
স্বপ্রশ্নের চোখে তাকিয়ে রইলেন জোবাইদা বেগম । নার্স বলল
-আপনারা আধুনিক মানুষ তবুও এটা এমন কোন অসুখ না যেটা ডাক্তার বিদ্যায় ঠিক করা যাবে না । মিমি ম্যাডামকে অশরীরি ধরেছে । এটার জন্য বড় হুজুর কিংবা ওঝা লাগবে । আপনি স্যারকে বোঝান । নয়তো ফলাফল কিন্তু ভাল হবে না । মিলি ম্যাডামের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে । কোন ডাক্তার কিছু বুঝতে পারছে না ।

জোবাইদা এক ভাবে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো নার্সটির দিকে । তারপর বলল
-তোমার পরিচিত কেউ আছে ?
-আছে । আমি চিনি তাকে । আমার নিজের চোখে ফলাফল দেখেছি ।
-এখানে নিয়ে আসতে পারবে ?
-এখানে ?
-ভয় নেই । তুমি গেট পর্যন্ত নিয়ে আসবে । বাকি টুকু আমি দেখবো তবে তোমার স্যারকে বলা যাবে না । ও যখন এখানে থাকবে না তখন নিয়ে আসতে হবে । পারবে ?
-পারবো । তবে সে কিন্তু আমাদের ধর্মের কেউ না ।
-তাহলে ?
-তার কি ধর্ম কিংবা সে কোথাকার লোক কেউ সেটা ঠিক মত জানে না । তার কাজ পদ্ধতিও অন্যদের মত নয় তবে সেটা কার্যকরী । কেবল যখন দরকার তখন তাকে খুজলেই পাওয়া যায় শুনেছি ।
-তুমি খোজ লাগাও । তারপর আমাকে জানাও । যতদ্রুত সম্ভব । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !

অধ্যায় দুই
======


ডা. কামাল কিছুই বুঝতে পারছেন না । গত কয়েক দিন ধরে মেয়েটাকে তিনি পর্বেক্ষন করছেন । পড়ালেখা জানা বিজ্ঞানের লোক সে অন্য কিছুতে তার ঠিক বিশ্বাস নেই । কিন্তু এই মেয়ের বেলাতে কিছুতেই কিছু করতে পারছেন না । এরই মধ্যে দেশে স্বনাম ধন্য সব ডাক্তারেরা মেয়েটাকে দেখে গেছে । যে যার মত টেস্ট করতে দিয়েছে । কিন্তু ডা. কামালের কেন জানি মনে হচ্ছে কোন কিছুতেই কিছু হবে না । এই মেয়ের ব্যাপারটা অন্য রকম । অন্য কেউ হবে হয়তো তিনি কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে দিতো যে তাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না । অন্য কোথাও নিয়ে যাও কিন্তু এই বেলাতে সেটাও করা সম্ভব না ।

তিনি মিমিকে আরেক ডোজ ঘুমের ইঞ্জেকশন দিতে উদ্যত হলেন । মেয়েটার হাত পা বেডের সাথে বাঁধা রয়েছে এবং আরো দুজন নার্স তাকে ধরে রেখেছে তবুও মিমিকে শান্ত করে রাখা যাচ্ছে না । একটা ২১ বছরের মেয়ের শরীরে এতো শক্তি থাকার কথা না । ডা. কামাল আসলেই কিছু বুঝতে পারছে না ।

হঠাৎই তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন মিমি একদম শান্ত হয়ে গেছে । এখনও তিনি ইঞ্জেকশন দেন নি তাতেই হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে গেছে । সিরিঞ্জটা সরিয়ে রেখে পালস চেক করলেন । এক দম শান্ত । মনে হচ্ছে মেয়েটা একেবারে ঠিক হয়ে গেছে ।

ডা. কামালকে একটু বিভ্রান্ত দেখালো । তখনই লক্ষ্য করলেন রুমের নতুন আরেক জনের আগমন ঘটেছে । ডা. কামাল পেছন ফিরে তাকিয়েই লোকটাকে দেখতে পেল । লোকটার বদলে যুবক বললে ঠিক হবে । ২৫/২৬ বয়স হবে । দেখতে সুদর্শন । মাথায় একটা মাঝারী ঘনকালো চুল । সেই কাছে মুখে খোচা খোচা দাড়ি । জিন্সের প্যান্টের সাথে একটা কালো রংয়ের শার্ট ইন করে পরেছে ।
যুবক এক ভাবে রুমের ডান দিকে তাকিয়ে আছে । যেন কিছু রয়েছে সেখানে । যুবকের দেখা দেখি তিনিও সেদিকে তাকালো । কিন্তু সেখানে কিছু নেই । একটা নীল রংয়ের প্লাস্টিকের বিন রয়েছে । ডা. কামাল বলল
-কি ব্যাপার আপনি এখানে কি করছেন ? এখানে ঢুকলেন কিভাবে ?

যুবক ডান কোনা থেকে তার দিকে ফিরে তাকালো । মুখের ভাব খুব বেশি শান্ত !
-কি ব্যাপার শুনতে পাচ্ছেন না ? এখনই রুম থেকে বের হন !
-চলে যাবো ?
-হ্যা এখনই চলে যান ।
-আমি ওর সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম ।
-এখন রোগী কথা বলার অবস্থাতে নেই । আর এখন ভিজিটিং আওয়ারও না । আপনি কে বলুন তো ?
-আমাকে এখানে ডাকা হয়েছে !
-এখানে আপনাকে কেউ ডাকে নি । আপনি কোন রুমে এসেছেন ?

যুবক কিছুটা সময় মিমির দিকে তাকালো । মেয়েটা তখনও চোখ বন্ধ করে আছে । ডা. কামাল আবারও বলল
-কি ব্যাপার আপনি এখনও দাড়িয়ে আছেন ?
-আচ্ছা আমি কাউকে নিয়ে আসছি !
এই বলে যুবক দরজার দিকে ঘুরতে শুরু করলো ।
-প্লিজ আপনি যাবেন না !

ডা. কামাল অবাক বিশ্ময়ে দেখতে পেল মিমি চোখ মেলে তাকিয়েছে । একদম স্বাভাবিক কন্ঠেই মেয়েটা ডাক দিয়েছে । এই কদিনে ডা. কামাল মিমির স্বাভাবিক কন্ঠ এই প্রথম শুনতে পেল । তিনি অবাক হয়ে আর কোন কথাই বলতে পারলো না । মিমি আবারও কাতর কন্ঠে বলল
-প্লিজ আপনি যাবে না !
-তুমি না চাইলে যাবো না !

যুবক আস্তে আস্তে হেটে হেটে এসে মিমির বেডের পাশে বসলো । তারপর ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার মনে হয় আপনার রোগী এখন স্বাভাবিক আছে । অন্তত কথা বলার মত অবস্থায় তো আছে । তাই না ?

ডা. কামাল আবারও অবাক হয়ে একবার মিমির দিকে আরেকবার যুবকের দিকে তাকিয়ে রইলো । কি উত্তর দিবে কিছু বুঝতে পারছে না । যুবক বলল
-আমাকে মিমির আম্মা ডেকে নিয়ে এসেছে । আমি ওর সাথে কিছু সময় কথা বলি ? যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে ।
ডা. কামাল এবার নার্স দুজনকে ইশারা করলো চলে যাওয়ার জন্য । ওর নিঃশব্দে রূম থেকে চলে গেল ।
-ডাক্তার আপনিও !
-নো ! ও আমার পেসেন্ট । ওর দায়িত্ব আমার । আমি ওকে এখানে একা রেখে যেতে পারবো না । কি কথা বলবেন আমার সামনেই বলুন!
যুবক আর কথা বাড়ালো না । মিমির দিকে তাকালো । তারপর মিমির কপালে হাত রাখলো !
-হ্যালো । মিমি । আমি রাফায়েল । আই গেস আই ক্যান হেল্প ইউ !


অধ্যায় তিন
=======


রাফায়েল বেশ কিছু সময় মিমির কপালে হাত দিয়েই রাখলো । মিমির মা ওকে একটা আগে বলেছিলো যে মিমির এই সমস্যাটা মাস খানেক আগে । কিন্তু রাফায়েলের সেটা মনে হল না । রাফায়েলের মনে হল সমস্যাটা আরও কিছু দিন আগের । কেবল এক মাসের ভেতরে অবস্থা এতো খারাপ হওয়ার কথা না ।
মিমি বলল
-আপনি ওটা দেখতে পাচ্ছেন, তাই না ?
-কোন টা ?
-ঐ যে একটু আগে যে দিকে তাকিয়ে ছিলেন ?
মিমি ডান দিকের নীল প্লাস্টিকের বিনের দিকে ইশারা করলো । ডা. কামাল এবার ভয়ে ভয়ে সেদিকে তাকালো । তার বিশ্মিত ভাবটা এখনও ঠিক মত যায় নি । রাফায়েল বলল
-আমি ওখানে কিছু দেখতে পাচ্ছি না তবে ওখানে যে কিছু একটা আছে সেটা বুঝতে পারছি !
-ও আমাকে মেরে ফেলবে !
-দেখা যাক !
-তবে ও আপনাকে ভয় পাচ্ছে । আপনার দিকে রাগত চোখে তাকিয়ে আছে । আপনি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না । আপনি গেলেই ও আবারও আমার বুকের উপর এসে ভর করবে ! আমাকে মেরে ফেলবে !

রাফায়েল এবার মিমির স্যালাইন সুই ঢোকানো হাত টা নিজের হাতের নিল । তারপর হাট থেকে সুইটা খুলে ফেলে দিল ।
-আরে কি করছেন ....
ডা. কামাল লাইন টা বলতে গিয়েও মাঝ পথে থেমে গেল । কারন একটা অদ্ভুদ দৃশ্য দেখতে পেয়েছে সে । মিমির হাতের যেখানে সুইটা ছিল সেই সুই দিয়ে কালো রংয়ের একটা পদার্থ বের হতে শুরু করেছে ।
রাফায়েল বলল
-ব্যাথা লাগছে ?
মিমি মাথা নাড়ালো । ওর কিছুই অনুভব হচ্ছে না ।
রাফায়েল বলল
-এটা ভাল কিছু না । মোটেই ভাল লক্ষ্যন না । তাকিয়ে দেখো তো ঐ প্লাস্টিকের বিনের ওখানে কোন পরিবর্তন হচ্ছে কি না !
-ও চিৎকার করছে ! যেন ব্যাথা পাচ্ছে !
রাফায়েল বলল
-তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে । কেবল তোমার শরীরই নয় এই রুমটাও ওর ঘাটি হয়ে যাচ্ছে । এমন হতে পারে এখানে তুমি আরও যত সময় ধরে থাকবে ঐটা তোমাকে আরো বেশি করে কব্জা করে নিবে । এখন তো আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে তখন তাও আসবে না ।
ডা. কামাল বলল
-এটা কোন ভাবেই হবে না । আপনি ওকে নিয়ে যেতে পারবেন না । অন্তত ওর বাবার অনুমুতি ছাড়া তো নয়ই ।
রাফায়েল খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
-আপনার কি মনে হয় ওর বাবা জানতে পারলে ওকে নিয়ে যেতে দিবে ? আমি সব খোজ খবর নিয়েই এসেছি । ওর বাবার এসবে বিশ্বাস নেই । কিন্তু মিমির ভালর জন্য আমার এখানে থাকাটা জরুরী ! আপনি কি বুঝতে পারছেন আমার কথা !
-দেখুন আমার বুঝে কোন লাভ নেই । আমি এই হাসপাতালের মালিক না । আমি কি চাই তাতে কিছু যায় আসে না । আমাকে কেবল একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা আমি পালন করছি । এর বেশি কিছু না । আপনি কোন ভাবেই ওকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবেন না ।
তখনই একজন সিস্টারকে দরজায় দেখা গেল । ডাক্তার কামাল বলল
-কি ব্যাপার সিস্টার ?
-স্যার হায়দার সাহেব আসছেন ।
-সর্বনাশ ! রাফায়েল সাহেব, আপনি প্লিজ চলে যান ! প্লিজ !
-প্লিজ আপনি যাবেন না । আপনি গেলে ও আবারও আমার উপর চেপে বসবে ! প্লিজ যাবেন না । আই বেগ ইউ ! প্লিজ !
নার্স আবারও বলল
-স্যার উনি করিডোরে চলে এসেছেন !

ডা. কামাল বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলেন । কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না । রাফায়েল নামের ছেলেটার কাজ কারবার তার ভাল ঠেকছে না কিন্তু ছেলেটা যেভাবে মেয়েটাকে শান্ত করে তুললো সেটা তিনি কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারছে না । তার উপর মিমির হাত থেকে কালো রংয়ের রক্ত পরাটাও অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । ছেলেটাকে বের করে দিলে কিংবা সে এই রুম ছেড়ে চলে গেলে আবার মেয়েটা আগের অবস্থায় ফিরে যাবে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই । কিন্তু হায়দার সাহেবকে কি জবাব দেবেন ?


অধ্যায় চার
=======


হায়দার আহমেদ জোবাইদার দিকে তাকিয়েই বুঝে ফেললেন যে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । জোবাইদার আচরন তার মুখস্ত । জোবাইদা যখন কোন কাজ তার কাছ থেকে লুকাতে চায় তখন এমন মুখ করে । তিনি জোবাইদার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি কি করছো ?
-কই কিছু না তো ?
-তাহলে তোমার মুখ এমন কেন ?

জোবাইদা একটু যেন মুখটা গম্ভীর করে ফেলল । হায়দার আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার মেয়েটা এখানে অসুস্থ হয়ে পরে আছে আমার কেমন মুখ করে রাখা উচিৎ ? আপনি বলে দেন কেমন করে থাকবো ? আর আপনি যা ভাবেন করেন কিন্তু আমার মেয়েকে ঠিক করার জন্য আমি যা যা সম্ভব সব করবো । যার কাছে যাবার তার কাছেই যাবো ।

হায়দায় আহমেদের মনে হল তিনি ঠিক মত হয়তো লক্ষ্য করেন নি । যে কোন মায়ের জন্য সময়টা ভাল নয় । হয়তো তিনি ভুল দেখেছেন । তিনি তার মেয়ের ক্যাবিনের দিকে হাটা দিলেন । ক্যাবিনের ভেতরে ঢোকার অনুমুতি নেই তবে বাইরে একটা কাচের জানালা আছে সেখান থেকে ভেতরের সব কিছু দেখা যায় । সেখানে দাড়িয়ে একটা অদ্ভুদ দৃশ্য দেখলো । তারপর দৌড়ে গিয়ে হাজির হলেন রুমের ভেতরে ।
গিয়ে দেখলেন ডা. কামাল হাসপাতালের বেডের উপর উপর হয়ে শুয়ে আছে । তার ঠিক পাশে স্যালাইনের পাইনটা নড়ছে । ওনার মেয়ে মিমি কোথাও নেই ।
হায়দার আহমেদ চিৎকার করে ডাক দিলেন । পাশেই লাল ইমারজেন্সি সুইট ছিল সেটা টিপ দিলেন ! তার অসুস্থ মেয়েটাকে কে নিয়ে গেল ? কোথায় নিয়ে গেল আর কেনই বা নিয়ে গেল !



অধ্যায় পাঁচ
=======


মিমির একটু চোখ লেগে এসেছিলো কিন্তু গাড়ির একটু ঝাকিতেই আবারও জেগে উঠলো । গাড়ির ঠিক সামনের সিটে সে বসে আছে । গাড়ি চালাচ্ছে রাফায়েল । মিমির ভাবতেও অবাক লাগছে ঘন্টা তিনেক আগেও এই ছেলেটাকে সে চিনতোও না । কিন্তু এখন এই ছেলেটার সাথে বের হয়ে পরেছে । কারন ওর মনে হচ্ছে যদি কেউ ওকে সাহায্য করতে পারে তাহলে কেবল এই ছেলেটাই পারবে ।

এতো টা দিন ও কেবল সেই অশুভ জিনিসটাকে দেখে ভয় পেয়ে এসেছে কিন্তু আজকে এতো দিন পরে এই ছেলেটাকে দেখে সেটা ভয় পেয়েছে । কিন্তু ও ভাল করেই জানে ও এতো সহজে ওর মুক্তি নেই । এর পেছনে অন্য কোন রহস্য রয়েছে যা ওকে জানতে হবে । ছেলেটাও ঠিক তাই বলছিলো । আগে সেখানে কি হয়েছিলো সেটা জানতে হবে ।
রাফায়েল বলল
-তোমার মায়ের কাছ থেকে যে ঠিকানা পেয়েছি সেটা আর খুব বেশি দুরে না ।
-আমি ওখানে গিয়েছি আগেই । অবাক লাগছে যে কেমন করে আমার জায়গাটার কথা মনে রইলো না । কিন্তু জানি না সেখানে গিয়ে কি হবে ? কিই বা করবো ?
-অনেক কিছুই করার আছে । তোমাকে যে প্রজেজ করেছে এমনি এমনি করে নি । আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা কোন রিভেঞ্জ থেকে করা!
-কিন্তু আমি তো কোন দিন কারো ক্ষতি করি নি । তাহলে আমার উপর রিভেঞ্জ কেন ?
-তুমি যে করেছো এমন নাও হতে পারে । তোমার পরিবারের কেউ হতে পারে । তোমার বাবা করতে পারে ! তবে তোমার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হল যে উনি কিছু জানেন যেটা লুকাচ্ছেন !
-আপনার তাই মনে হয় ?
-হ্যা ! যাক সেটা পরে বের করলে চলবে । উনি হয়তো পুরোপুরি জানেনও না তাই বলেন নি । তবে আমাদের আগে সেই উৎস টা খুজে বের করতে হবে । এবং তোমার ভিশন অনুযায়ী সেটা ঐ বাড়িতেই থাকার কথা । সেই জিনিসটা যে তোমাকে ধরার চেষ্টা করছে সেটার উৎসটা বের করে ধ্বংশ করতে পারলেই তার আর কিছু করার থাকবে না !
এই বলে রাফায়েল পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে দিলো ।
-এটা কি ?
-এটা হলি সল্ট বলে !
-এটা দিয়ে আমি কি করবো ?
-যদি ওখানে গিয়ে এমন কিছু হয় যে আমি তোমার কাছে নেই আর ওটা তোমার কাছে আসছে তাহলে একেবারে শেষ সময়ে এটা দিয়ে খুলে ওটার গাঁয়ে ছিটিয়ে দিবে । তাহলে কিছু মসয়ের জন্য হলেও ওটা আটকে থাকবে !


রাফায়েল যখন কেবিন থেকে ওকে বের করে নিয়ে এল তখনও ঠিক জানে না ও কোথায় যাচ্ছে । ডা. কামাল ওদেরকে বেশ সাহায্য করেছিলো । উনার কাছ থেকেই জানতে পারে যে আজই মিমিকে নিয়ে যাওয়া হবে এখান থেকে । তারই ব্যবস্থা করতে গিয়েছিল হায়দার আহমেদ । তাই যদি নিয়ে যেতে হয় তাহলে এখনই নিয়ে যেতে হবে । । সিদ্ধান্ত টা তাই নিতে হয়েছে খুব দ্রুত । খুব দ্রুত মিমির জন্য একটা জিন্স আর টিশার্টের ব্যবস্থা করা হয় । সেই সাথে দুটো ডাক্তারের এপ্রোন । ডাক্তার বেশেই ওরা বের হয়েছিলো ক্যাবিন থেকে । ওর মায়ের উপর দায়িত্ব ছিল যাতে ওর বাবাকে আটকে রাখে কিছু সময় । তারপর তিনি চলে যাবেন হাসপাতালের কার পার্কিং এ । সেখানেই মিমিকে নিয়ে হাজির হয়. তারপর ওর মায়ের কাছে । ওর মা ওকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত ছিল । মাকে জড়িয়ে ধরে বের কিছু সময় নিরবে কান্না করলো মিমি । আজকে কতদিন পরে সে সুস্থ মনে মাকে জড়িয়ে ধরলো সেটা ও বলতেও পারবে না ।

মিমি কেবল মনে হয়েছে ওর বাবা ওকে যেখানে কিংবা যে হাসপাতালেই নিয়ে যাক না কেন সেখানে ও কোন ভাবেই সুস্থ হয়ে উঠবে না । সেই জিনিসটা যে ওকে ধরেছে সেটা ওকে ছাড়বে না । এর পেছনে অন্য কোন গল্প আছে । অন্য কোন কাহিনী আছে । ওর মায়েরও ঠিক একই ধারনা ।

মাঝেই মাঝেই মিমির মনের পর্দায় তেমন কিছু ভেসে উঠতো । একটা বিশাল বড় বাড়ি । দুই তলা বাড়ি । চারিদিকে গাছ গাছালিতে ভর্তি । বাড়ির ঠিক সামনেই আছে দুইটা বড় বড় জারুল গাছ । বাড়ির ঠিক পেছনেই একটা বড় কুয়ার পাড় । মিমির সামনে যে দৃশ্যটা ভেসে উঠতো তাতে কেবলই মনে হত এই কুয়ার পাড়েই সব সমস্যা সমাধান রয়েছে । এখানেই ওকে যেতে হবে ।

জায়গাটা ওর পরিচিত মনে হলেও কিছুতেই মনে করতে পারে না ঠিক কোথায় ও এই জায়গাটা দেখেছে । কোন ভাবেই ওর মনে পড়ে না ঠিক এই জায়গাটা কোথায় ? তবে ও নিশ্চিত যে ওখানে গেছে কিংবা থেকেছে !

গাড়ির ভেতরেই মিমি ওর মায়ের কাছে জানতে চাইলো কথাটা ?
জোবাইদা হায়দার বলল
-কেমন বাড়ি ?
-জানি না আম্মু । আমি কেবল চোখের সামনে দেখতে পাই । বড় দুই তলা বাড়ি । বাসার সামনে বড় লন আছে । ফুলের বাগান । আর গেটের সামনে বড় দুইটা জারুল গাছ । অনেক বড় । আর বাড়ির পেছনে আছে একটা বিশাল কুয়া !

মিমি দেখলো ওর মায়ের মুখটা কেমন কালো হয়ে গেছে । রাফায়েলের চোখেও সেটা পড়েছে । রাফায়েল বলল
-আপনি চেনেন জায়গাটা ?
জোবাইদা হায়দার অনেকটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-হ্যা । চিনি ।
মিমি বলল
-কোথায় ? আমি গিয়েছি ওখানে ! আমার জায়গা কেন এতো পরিচিত মনে হয় ?
-হুম !
-কোথায় আম্মু ? বল কোথায় !!



যখন গাড়িটা এসে বড় দুই জারুল গাছের সামনে থামলো তখন বিকেল হয়ে গেছে । গেটের কাছে বড় একটা তালা ঝুলছে । গাড়িটা তাই ভেতরে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই । মিমি গেট দিয়ে বাইরে বের হয়ে এসেই অনুভব করলো বাইরের বাতাসটা কেমন ভারি হয়ে আছে । অশুভ একটা আভাস বোঝা যাচ্ছে পরিস্কার ! মিমি পরিস্কার বুঝতে পারছে ।
রাফায়েল বলল
-তোমার প্রশ্নের উত্তর সামনে আছে । তুমি অনুভব করতে পারছো না ?
-পারছি ।
-কিন্তু সামনে যাওয়া কতটুকু ঠিক হবে বুঝতে পারছি না ।
-কেন ? আপনি আছেন না ? ও তো আপনাকে দেখে ভয় পায় !
-সেটা সব জায়গায় নাও হতে পারে । ভুলে যাচ্ছো কেন ঐ জিনিসটার উৎপত্তি হয়েছে এখান থেকে । আর এই সব জিনিস নিজের সব থেকে বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে যেখান থেকে এদের উৎপত্তি হয় ।

মিমি আরেক বার ভয়ে ভয়ে তাকালো চারিপাশে । একটু আগে যে সাহসটা ওর ভেতরে ছিল সেটা যেন একটু কমে এসেছে ! একবার মনে হল এখান থেকে চলে যায় । দুরে কোথাও । কিন্তু তখন তো ঐ জিনিসটা থেকে ও মুক্তি পাবে না । সারা জীবন ওকে এই ভয়ে বেঁচে থাকতে হবে ।


অধ্যায় ছয়
=======


হায়দার আহমেদ নিজের স্ত্রীর দিকে গরম চোখে তাকিয়ে রইলেন কিছুটা সময় । তিনি ঠিকই অনুমান করেছিলেন । তার চোখ কখনও ভুল হতে পারে না । তার স্ত্রীই মিমির গায়েব হওয়ার পেছনে রয়েছে । তিনি জোবাইদার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বললেন
-বল কোথায় ও ? আমার মেয়ে কোথায় ?
-যেখানে যাওয়ার কথা সেখানেই গেছে !
-মানে ?
-মানে আপনি জানেন না ? আপনার পাপের শাস্তি আমার মেয়েটাকে পেতে হচ্ছে ?
-আমার পাপ !!
হায়দার আহমেদ অবাক চোখে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইলো । কিছুই যেন বুঝতে পারছে না । তিনি বললেন
-কি বলছো তুমি ?
-কেন মনে পড়ছে না ? আরেকবার মনে করে দেখুন ! আজগর আর আপনি কি করেছিলেন ?

হায়দার আহমেদ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো নিজের স্ত্রীর দিকে । তিনি ভেবেছিলেন এতো গুলো বছর পরে সব কিছু সবাই ভুলে গেছে । এতো গুলো বছর আবার সেটা জোবাইদার মনে পড়লো কেন ? আর ঐটার সাথে মিমির এই অবস্থার সম্পর্কই বা কি ? তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না !



মিমি এই জায়গাটার কথা কেমন করে ভুলে গেল ! ওর ভাবতেই অবাক লাগছে । ওর এই স্থানটার কথা মনে রাখা দরকার ছিল । যখন চোখের সামনে এই জারুল গাছ দুটোর ছবি ভেসে উঠতো তখনই মিমির চিনে ফেলা দরকার ছিল কিন্তু মিমি চিনতে পারে নি । এমনটা কোন ভাবেই হওয়ার কথা না ।
অবশ্য এতো গুলো বছর পার হয়ে গেছে । স্মৃতি থেকে চলে যাওয়াটা খুব বেশি অস্বাভাবিক না । তাই বলে একেবারে গায়েব হয়ে যাবে মিমি ভাবতেও পারে নি ।

মিমির বয়স যখন ৮ কি নয় তখনও পর্যন্ত ওরা এই বাগান বাড়িতে আসতো খুব নিয়মিত । ছুটি কিংবা একটু অবসর পেলেই হায়দার সাহেব ছুটে আসতেন এখানে, মিমি আর মিমির মা জোবাইদাও কে নিয়ে । মাঝে মাঝে হায়দার আহমেদের বন্ধুবান্ধবও আসতো । সারাদিন আড্ডা আনন্দ উৎসব চলতো ।

কিন্তু হঠাৎ করেই আসা বন্ধ হয়ে গেল ওদের । প্রথম প্রথম মিমি খুব আসার জন্য জিদ ধরতো । তারপর আস্তে আস্তে সেটা কমে এল । এক সময় মিমির স্মৃতির থেকে এই বাগান বাড়িটার কথা একদম মুছে গেল । গাজীপুরে হায়দার সাহেব আরেকটা বাগান বাড়ি তৈরি করার পরে এটার কথা আর কারো মনেই রইলো না ।

কিন্তু এটার অবস্থা এমন কেন ? হায়দার সাহেবই বা কেন এটাকে এভাবে ত্যাগ করলেন ?
এমন কি ঘটে গেল যে এতো চমৎকার একটা জায়গাকে ত্যাগ করতে হল ।

মিমি মনে করার চেষ্টা করলো । কিছু একটা তো হয়েছিলোই ! কি হয়েছিলো ?
কি এমন হয়েছিলো ?

তখনই মিমির স্মতির পটে একটা ছেলের ছবি ভেসে এল । ওর থেকে ৩/৪ বছরের বড় ছিল ছেলেটা । ওদেরই কোন কর্মচারির কিংবা আসে পাশের কোন বাড়ির ছেলে । ফর্সা আর মিস্টি করে চেহারা । চেহারাতে একটা মেয়েলি মেয়েলি ভাব আছে । সুন্দর করে হাসে ! মিমি এতো গুলো বছর পরে ছেলেটার চেহারাটা পরিস্কার করে ধরতে পারলো ।

রিপন !
ছেলেটার নাম ছিল রিপন । ওরা যখনই এখানে বেড়াতে আসতো তখনই ছেলেটা কোথা থেকে এসে হাজির হয়ে যেত । মিমির পেছন পেছন ঘুরঘুর করতো । মিমিরও রিপনের সাথে খেলতে খারাপ লাগতো না । বাবা মায়েরা মাঝে মাঝে নিজেদের মত করে সময় কাটাতো তখন মিমির সময় কাটতো রিপনের সাথেই । আর যখন বাবার বন্ধুরা আসতো তখন অনেকটা সময়ই কাটতো রিপনের সাথে । রিপন খুব চমৎকার পাতার বাঁশি বাজাতে পারতো ।

মিমি অবাক হচ্ছে এই ভেবে যে এতো দিন রিপনের কথা একবারও মনে পড়ে নি অথচ কতটা সময় কেটেছে ওর সাথে । কেন মনে পড়ে নি ওর কথা !

কিছু একটা হয়েছিলো যার ফলে ওকে আর রিপনের কথা মনে করতে দেওয়া হয় নি ।
কি হয়েছিল ?
মিমি নিজের স্মৃতির উপর আরেকটু জোর দিলো । কিছু মনে করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই মনে পড়লো না । কেবল মনে পড়লো ওর বাবা আর মা সাথে ওর বাবার এক বন্ধু দাড়িয়ে আছে ওর সামনে । ওর মাটিতে বসে আছে । হাটু থেকে রক্ত পরছে । পাশে অপরাধরীর মত রিপন দাড়িয়ে । ব্যাস !
আর কিছু মনে নেই ।


অধ্যায় সাত
=======


রাফায়েল যেন কিছু বুঝতে পেরেছে । অনেকটা অন্ধকার হয়ে এলেও এখনও রাফায়েলের চিন্তিত চেহারাটা মিমির চোখ এড়ালো না । ওর মিমির দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে বলল ভয় নেই । আমি আছি । কোন ক্ষতি হবে না । সেই শুরু থেকে রাফায়েল বিড়বিড় করে কি যেন পড়েই যাচ্ছে । আরবি কিংবা চেনা কোন শব্দ নয় বরং অচেনা কোন শব্দ । ঠিক যেমনটা ও শুনেছিলো ওর হাসপাতালে ঢুকার সময় ।

ঠিক তখনই একটা জোড়ে আওয়াজ হল । কোন কিছু যেন ভেঙ্গে পড়েছে । কিছু বুঝে ওঠার আগেই বড় জারুল গাছের একটা বড় ডাল ভেঙ্গে পড়লো রাফায়েলের গায়ের উপর । মিমি তাকিয়ে দেখলো রাফায়েল মাটিতে পড়ে গেছে ।

কয়েক মুহুর্ত এমনিতেই কেটে গেল নির্বাক । মিমি কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । ওর কাছে গিয়ে ওতে তুলতে যাবে তখনই ওর চোখ গেল পেছনের গেটের কাছে । সেই প্রাণীটা !

ওর দিকে এগিয়ে আসছে । এতো সময় রাফায়েল ওর পাশে ছিল বলেই ও কাছে আসে নি । কিন্তু এখন আসছে ! মিমি মুহুর্তের ভেতরে ওর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলল । ও আর ওটার কাছে ধরা পরতে চায় না । সোজা উঠে গিয়ে দৌড় দিল বাড়িটার দিকে ।

অন্ধকার হয়ে আসছে তবে এখনও কোন মনে রাস্তা ঘাট দেখা যাচ্ছে । অনেক দিন এখানে কেউ আসে না সেটাও বোঝা যাচ্ছে পরিস্কার । মিমির কেবল মনে আছে বাড়ির পেছন দিয়ে একটা দরজা আছে । কুয়ার পাশ দিয়েই যেতে হয় । দরজা দিয়ে বের হলেই একটা মাঠ ছিল । সেটার পরেই গ্রাম । অনেক কয়বার সে ওর মায়ের সাথে এই দিক দিয়ে গ্রামের পথ ধরে হেটেছে ।
মিমি সেদিকেই দৌড়াতে লাগলো । পেছনে তাকানোর সাহস হল না কিন্তু পরিস্কার বুঝতে পারলো সেই জিনিসটা ঠিকই ওর পেছন পেছন আসছে । মিমি কেবল সামনের দিকে দৌড়াতে লাগলো ।

ঐতো কুয়াটা দেখা যাচ্ছে ! ওটার একটু দুরেই গেট টা । ঐতো দেওয়াল । মিমি আরও জোরে দৌড়াতে লাগলো । কিন্তু যেই না কুয়াটা পার হয়েছে ঠিক তখনই কিছুর সাথে ও যেন ধাক্কা খেল । তারপরেই উল্টে পরে গেল । জ্ঞান হারালো না কিন্তু মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো ।

মাথায় হাত দিয়ে একটা সুস্থির হতেই দেখতে পেল সেই জিনিসটা আবারও ওর দিকে এগিয়ে আসছে । তবে এবার জিনিসটাকে ওর কেন জানি এবার আর অপরিচিত মনে হল না । অন্ধকারের ভেতরেও ওটার শরীর দিয়ে যেন একটু একটু আলো ছাড়াচ্ছে । জামা কাপড় ছেড়া । মাথার ঠিক এক পাস থেতলে আছে । যেন উপর থেকে নীচে পড়েছে এক পাশ কাত হয়ে । একটা হাত অস্বাভাবিক ভাবে ঝুলে আছে । অন্য হাতটা দিয়ে দিয়ে ওকে ধরতে আসছে ।

ঠিক প্রথম দিনেও এই রূপ দেখেছিলো ছাদে । দেখার সাথে সাথেই ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । কিন্তু আজকে ও জ্ঞান হারালো না । একটু একটু করে ওটা কাছে আসতে লাগলো । মিমি তখন চিৎকার করে রিপনের নাম ধরে ডাক দিল !

-রিপন !
একটু যেন থমকে দাড়ালো ওটা !

মিমি আবারও বলল
-রিপন আমি জানি এটা তুমি ! আমি কি ক্ষতি করেছি তোমার ? আমি তোমার বন্ধু ছিলাম !!

সেটা থেমে গেল ! একভাবে তাকিয়ে রইলো । মিমির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে । মিমি অনুভব করলো কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে । হঠাৎই মিমির চোখের সামনে কিছু ভেসে উঠলো । ওর চারিপাশে হলোগ্রামের মত যেন সব কিছু চলে আসলো । ওর সামনে চলে এল একটা দৃশ্য !

ছোট একটা মেয়ে মাটির উপর বসে কাঁদছে । তার হাটুর কাছে কিছু হয়েছে । রক্ত পরছে ।

ছোটবেলার মিমিকে চিনতে পারলো ও । মিমির পাশে রিপন ছেলেটা দাড়িয়ে আছে । মাথা নীচু করে । ওদের ঠিক সামনেই মিমির বাবা মা আর আরেকজন লোক দাড়িয়ে আছে গম্ভীর মুখে । পাশের লোকটাকে সে চিনতে পারলো । ওর বাবার বন্ধু ! আজগর আঙ্কেল । ওর বাবার বিজনেস পার্টনার !

এই দৃশ্য মিমি আগেই দেখেছে । এমনটা ওর সাথে হয়েছে । মিমি উঠে দাড়ালো । ওর মা ওকে কোলে নিয়ে বাসার ভেতরে চলে গেল । তারপরে কি হয়েছিল সেটা মিমি জানে না । কিন্তু এখন সেটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে । মিমির বাবা রিপনকে কয়েকটা ধকম দিল । বল যেন আর কোন দিন এ বাড়িতে না আসে ! তিনিও চলে গলে ঘরের ভেতরে এর পরে । কিন্তু ওর আজগর আঙ্কেল রিপনের দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে । এরপর ওর হাতটা শক্ত করে ধরলো । তারপর রিপনকে নিয়ে একদম কোনার ঘরের দিকে চলে গেল । রিপন যেতে চাইছিলো না । চিৎকার করতে গেলে ওর মুখ চেপে ধরলো সে ! তাররপ দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল ।

মিমি কেবল অবাক চোখে দেখতে লাগলো কি হয়েছে । কি হয়েছিলো রিপনের সাথে .....

তারপর ..... মিমি গোঙ্গানির আওয়াজ শুনতে পেল ।

তারপর দৃশ্যটা এক লাফে চলে গেল অন্য খানে ! ওর বাবা আর আজগর আঙ্কেলকে দেখতে পেল । ওর বাবা আজগর আঙ্কেলকে বকছে । খুব মেজাজ গরম করে কথা বলছে । মিমি দেখতে পেল তারা দুইজন কুয়ার কাছে যাচ্ছে । ওর বাবা একভাবে তাকিয়ে রইলো কুয়ার ভেতরে । আজগর আঙ্কেল বলল
-আমি বুঝতে পারি নি হায়দার ।
-তোমার এই স্বভাবটার আর গেল না !
-প্লিজ কিছু কর ! প্লিজ ! আর জীবনে এমন কিছু হবে না ।
-আচ্ছা দেখছি । ভয় পেও না !

মিমি দেখতে পেল এরপর দুইজন মিলে কোদাল দিয়ে কুয়ার ভেতরে মাটি ফেলতে লাগলো । শীতকাল হওয়ার জন্য কুয়ার পানি একদম শুকিয়ে গেছে । সেই শুকনো কুয়ার ভেতরেই মাটি ফেলে কিছু যেন মাটি চাপা দিতে চাচ্ছে ওরা দুজন । মিমি উঠে দাড়ালো । কুয়ার ভেতরে উকি দিতেই মাটির নীচে চাপা পরা রিপনের খোলা চোখটা দেখতে পেল ও । এই অন্ধকারের ভেতরেও ও সব কিছু দেখতে পাচ্ছে !

মিমির বুঝতে কষ্ট হল না কেন এসব হচ্ছে । কেন আজগর আঙ্কেল ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পরেছিল । আর কেন ওর সাথে এমন হচ্ছে । রিপন ওর বাবার উপর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে !


মিমি বাস্তবে ফিরে এল । তাকিয়ে দেখে রিপন ঠিক ওর সামনেই দাড়িয়ে । ওর দিকে ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে । ওর চোখ দিয়ে তীব্র ঘৃণা ঝরে পরছে । কিন্তু মিমির কেন জানি আর আগের মত ভয় লাগছে না । একটু আগে যে তীব্র ভয় কাজ করছিলো সেটা আর করছে না । বরং রিপনের জন্য একটা সহানুভুতি কাজ করছে ওর ভেতরে । ওর সাথে যেটা হয়েছে সেটা হওয়া উচিৎ হয় নি । মিমি শুনেছিলো আজগর আঙ্কেলের ছোট মেয়ের সাথেও নাকি এমন কিছু হয়েছিলো । কিন্তু আজগর আঙ্কেল ছাদ থেকে লাফিয়ে মারা যাওয়ার পরে মেয়েটা একদম ঠিক হয়ে যায় !

তাহলে ও ওর বাবাকেও মরতে হবে ? তারপরেই ও ঠিক হবে ?
না ! মিমি দঢ় পায়ে উঠে দাড়ালো ! রিপনের দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি জানি আমার বাবা তোমার অপরাধী ! কিন্তু আমার জন্য আমার বাবাকে আমি মরতে দেব না ! তুমি আমাকে মেরে ফেলো কিন্তু আমি আমার বাবাকে মরতে দিবো না !

মিমির তখনই ওর রাফায়েলের দেওয়া হলি সল্টের কথাটা মনে পড়লো । কোন কিছু না চিন্তা করেই মিমি সেটা পকেট থেকে বের করলো তারপর মুখ খুলে সোজা রিপনের দিকে ছুড়ে মারলো । ভেবেছিল কাজ হবে না কিন্তু রিপনের গলা দিয়ে দিয়ে একটা তীব্র চিৎকার বের হতে দেখলো ।

এখন কি করবো ও ! কোন দিকে দৌড় দিবে ? রাফায়েল বলেছিলো ওটা কিছু সময়ের জন্য আটকে রাকখবে !

যখন দৌড় দিতে যাবে তখনই রাফায়েল বাড়ির দেওয়ার পাশ দিয়ে বের হয়ে এল । ওর হাতে একটা ব্যাগ দেখতে পাচ্ছে । ওটা নিয়ে ওর দিকে দৌড়ে আসছে !

-কোথায় ওটা ?

রাফায়েলের ওটা দেখার কথা না । কেবল মিমিই ওরা দেখতে পারে । রাফায়েল বলেছিলো রিপনকে কেবল ও অনুভরব করতে পারে । ঠিক তাই হল । মিমি বলল
-আমি ওর গায়ে হলি ফল্ট টা ছুড়ে দিয়েছি ।
-বুঝতে পারছি । ওর মৃত দেহটা কোথায় আছে ! কুয়ার ভেতরে ?
-হ্যা !

কুয়ার মুখটায় অনেক জঞ্জাল হয়ে আছে । সেদিনের পর ওটা আর কেউ ব্যবহার করে নি । ব্যবহার করতে পারে নি । রাফায়েল নিজের হাতের ব্যাগ থেকে একটা বড় বোতলের মত বের করলো । তারপর আরেকটা বোয়মের বের করলো সেটা সাদা মত কিছু দেখা যাচ্ছে ।
মিমি বলল
-আপনি কি করতে যাচ্ছেন ?
-যার যেখানে যাওয়া উচিৎ সেখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি । যখন কোন দেহ সঠিক ভাবে সমাহিত না হয় তখন সেটার আত্মা এই পৃথিবীতেই আটকে থাকে । বুঝেছো !
মিমি পেছনে ফিরে তাকালো ।
-এখন ওটা ওপারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে ! তাহলেই আশা করি সব ঠিক হবে !

রাফায়েল আরও একটা প্যাকেট বের করে দিলো ওর হাতে ।
-যখনই ওটা আবার তোমার দিকে ছুটে আসতে যাবে আবারও ওর দিকে এটা ছুড়ে দিবে ।

মিমি রাফায়েলের কাজ কর্ম দেখতে লাগলো । কুয়ার সামনে থেকে যতটা সম্ভব জঞ্জাল সরিয়ে সে তার রিচুয়্যাল শুরু করে দিল ! কয়েকবার বোতল থেকে পানি আর সাদা গুলো ছিটিয়ে ফেলতে লাগলো কুয়ার ভেতরে । আর সেই সাথে অদ্ভুদ ভাষায় কিছু পরে চলেছে । কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম ! এটাকে সঠিক পথে না পাঠাতে পারলে মেয়েটার জীবন বিপন্ন হয়েই থাকবে ! মিমি তখনও তাকিয়ে আছে রিপনের দিকে । রিপনের জন্য মায়াই লাগছে ওর । কেন জানি খুব বেশি খারাপ লাগলো ।

রাফায়েল জোরে জোরে সেই অজানা ভাষায় কিছু পড়া শুরু করেছে । মিমি দেখতে পেল আস্তে বোতল থেকে পানি আর সাদা গুড়া গুলো সেটা ছুড়ে ফেলতে শুরু করেছে কুয়ার ভেতরে । যতই সময় যেতে লাগলো রাফায়েলের কন্ঠ যেন আরও একটু বেশি চড়া হতে শুরু করছে । এদিকে মিমির রিপনের দিকে তাকিয়ে একটা অদ্ভুদ জিনিস দেখতে পেল । যে চিৎকারটা সে করছে সেটা অনেকটাই কমে এসেছে । আর যে ভয়ংকর চেহারা তার ছিল সেটা আস্তে আস্তে ঠিক হতে শুরু করেছে । দেখতে দেখতে একেবারে আগেই ১১/১২ বছরের রিপনে পরিনত হয়ে গেল সে । মিমির দিকে তাকিয়ে রয়েছে ।

মিমির ভয় হল সে হয়তো আবার ছুটে আসবে তবে সেদিকে এল না । ওর দিকে তাকিয়ে একটা হাত উঠালো । যেন কিছু বলতে চাইছে । তারপর একটা তীব্র আলোর ঝলকানী দেখতে পেল । এতটাই তীব্র যে মিমির চোখ বন্ধ করে ফেলল । যখন চোখ খুলল তখন দেখে আসে পাশে কিছু নেই । সেই সাথে একটা দম বন্ধ অশুভ ভাব ছিল সেটাও নেই ।



পরিশিষ্টঃ
=====

যখন গাড়িটা বাড়ির সামনে থামলো তখন বেশ রাত হয়ে গেছে । হায়দার আহমেদ গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে এল তার পেছন পেছন তার স্ত্রী জোবাইদাও বেরিয়ে এল । গেটের সামনে তার স্ত্রীর গাড়িটা দাড়িয়ে আছে । হায়দার সাহেব সামনের দিকে এগোতে লাগলেন । তার মনে অদ্ভুদ ভয় হতে লাগলো । তার স্ত্রী তাকে সব কিছু খুলে বলেছে । তিনি কেবল অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে ছিল স্ত্রীর দিকে । ডা. কামালের মুখের কথা শুনে তিনি আরও একটু ভড়কে গেল ! কোথায় গেছে সেটা জানার পর নিজেই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে এল মেয়ের খোজে !


গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই হায়দার আহমেদ একটা অদ্ভুদ দৃশ্য দেখলেন । তার পুরানো এই বাড়িটার সামনে একটা আগুন জ্বলছে । তার সামনে দুজন বসে আগুন তাপাচ্ছেন । একজন ছেলে একজন মেয়ে ! আরেকটু সামনে যেতেই তিনি চিনতে পারলো তাদের । অপরিচত একটা ছেলে সাথে তার মেয়ে বসে কথা বলছে ।

হায়দার আহমেদ কে দেখে দুজনেই দাড়িয়ে পড়লো !


মিমি তার বাবাকে আসতে দেখলো । কত দিন পরে যেন বাবাকে দেখতে পেল । কিন্তু আজকে মিমির বাবার প্রতি অন্য রকম একটা অনুভুতি হচ্ছে । আজকে তার আর বাবার মাঝে রিপন নামের একটা ছেলের প্রতি করা অন্যায় এসে দাড়িয়েছে । মিমিভায়দার আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি কাজটা কিভাবে করলে বাবা ?
-কি বলছিস তুই ?
-তুমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারছো কি বলছি ! একবারও মনে হয় নি আমার সাথে যদি কেউ এমন করতো ?

হায়দায় সাহেব কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল । মিমি বলল
-তুমি আজকেই রিপনের বাবা মা কেখুজে বের করবে । কিভাবে করবে আমি জানি না । করবে ব্যাস । তারপর এই বাড়ি ঠিক ঠাক করে ওদের নামে লিখে দিবা ! যতদিন না তুমি এই কাজ করছো ততদিন তোমার সাথে আমি একটা কথা বলবো না !

মিমি লাইন গুলো বলে রাফায়েলের দিকে তাকালো ।
-চলুন !
তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-আম্মু তুমি আমার সাথে যাবে না বাবা সাথে !

জোাবইদা বেগম কিছু সময় স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল
-তোরা যা ! আমি তোর বাবার সাথে আসছি !

রাফায়েল মিমির সাথে সাথে হাটতে লাগলো । এতোটা সময় ওদের মাঝে অনেক কথাই হয়েছে ।

যাক আরেকটা কাজ শেষ হল । সামনে আরও কত এরকম ঝামেলার সম্মুখিন হতে হয় কে জানে । এবার ওর যাওয়ার সময় হয়েছে । আগের বারের জার্নিতে মিশু নামের মেয়েটার সাথে ঠিক ঠাক মত বিদায় নেওয়া হয় নি । এবার মিমির কাছ থেকে ঠিক মত বিদায় নিয়ে যেতে হবে !


(সমাপ্ত)

#রাফায়েল সিরিজ দুই
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×