somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ মিতুর সকাল

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-ম্যাম আপনি আসুন আমার সাথে ?

মিতু একটু ভয়ে ভয়ে উঠে দাড়ালো । এতো চমৎকার একটা অফিসের একজন এমপ্লোয়ি ওকে ম্যাম বলে সম্মোধোন করছে সেটা ও ভাবতেই পারছে না । মিতু বলল
-সে কোথায় ?
-আবির স্যার একটু ব্যস্ত । উনি আমাকে বলেছেন আপনি এই সময়টুকু ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করুন প্লিজ !

মিতু আর কোন কথা বলল না । চুপচাপ মেয়েটার পেছন পেছন হাটতে লাগলো । মনের ভেতরে কত কথা ঘুরপাক খাচ্ছে । সামনের মেয়েটা হয়তো ওকে নিয়ে কত কথা ভাবছে এই জন্যই হয়তো ওকে এতো সম্মান দিয়ে কথা বলছে । কিন্তু মেয়েটা যখন আসল সত্য কথাটা জানতে পারবে তখন কি এই সম্মান মেয়েটার চোখে থাকবে ওর জন্য ?
থাকবে না ।
থাকার কথাও না ।

ভিআইপি ওয়েটিং রুমে বসার প্রায় সাথে সাথে মিতুর জন্য নাস্তা এসে হাজির ।
মেয়েটি হাসি মুখে বলল
-এসিটা কি বাড়িয়ে দিবো ?
-না না ঠিক আছে । আপনাকে এতো ব্যস্ত হতে হবে না ।
-কি বলছেন ব্যস্ত হব না ! আপনি আবির স্যারের গেস্ট ! আপনি জানেন ওনাকে অফিসের সবাই কত পছন্দ করে, ভয়ও করে অবশ্য !

মেয়েটা হেসে ফেলল । মেয়েটা আবার বলল
-আপনি নিশ্চয়ই স্যারের স্পেশাল কেউ হবেন । নয়তো স্যার আপনাকে অফিসে কোন দিন আসতে বলতো না। আমরা স্যারকে চিনি তো !

মিতুর মনটা খুব খারাপ হল তবে মুখের ভাবে সেটা প্রকাশ করতে দিল না । ওদের মত মেয়েদের অনেক কিছুই হজম করতে হয় । মনের আর মুখের ভাব কখনও এক হতে নেই ।

মেয়েটা যাওয়ার আগে টিভির রিমোর্ট টা ওর দিকে বাড়িয়ে দিল ।
-আপনি টিভি দেখুন । আর কিছু দরকার হলেই এই বেলটা বাজাবেন । কেমন !
মেয়েটিটি টেবিলের সামনে একটা বেল সুইট দেখি দিয়ে চলে গেল ।

মেয়েটি চলে যাওয়ার পরেও চুপ করে বসে রইলো কিছুটা সময় । আজকে সে আবিরের সাথে কথা বলতে এসেছে । বলতে এসেছে যে সে আর সাথে দেখা করবে না কোন দিন । তার সজ্জ্যা সঙ্গী হবে না আর । তার মুখের কেমন হবে সেটা মিতু খুব ভাল করেই জানে । কিন্তু মিতুর করার নেই । ওর মত মেয়ের আসলে আবির এক রাতের সজ্জা সঙ্গীই হয়তো হতে পারে, এর বেশি কিছু হওয়ার অধিকার ওর নেই ।

আবিরের সাথে ওর যেদিন পরিচয় সেদিন সারাদিন ও না খেয়ে ছিল । সকাল থেকে খাওয়ার মত একটা টাকাও ওর কাছে ছিল । ঢাকায় ওর এমন কোন বন্ধুও কিংবা পরিচিত মানুষজন ছিল না যার কাছে ও যেতে পারে । যে হোস্টেলে থাকতো সেই হোস্টের ম্যানেজার ওকে বলেছে এক সপ্তাহের মধ্যেই হোস্টেল ছেড়ে দিতে । অনেক গুলো টাকা ওর বাকি পড়ে গেছে ।

গ্রামে যে ফিরে যাবে, কি মুখ নিয়ে ফিরে যাবে ? ওর মায়ের বড় শখ ছিল মিতুকে বড় অফিসার বানাবে । সরকারি অফিসার । ছেলে নেই তো কি হয়েছে মেয়ে হয়েই সে তাদের সব দুঃখ দুর করবে । ঢাকাতে গিয়ে পড়া শুনা করবে । মায়ের মারা যাওয়ার সব কিছু কেমন ধুয়াশা মতে হত মিতুর কাছে । বাবা তো অনেক আগেই মারা গেছে আর কেউ দেখার মত নেই ও । অনেকে অনেক কথা বলেছিলো ওর একা একা ঢাকা আসার কথা শুনে । কিন্তু মিতু সেদিকে খেয়াল দেয় নি । নিজে নিজেই চলে এসেছে ঢাকাতে ।
কিন্তু ঢাকায় আসার ছয় মাসের মাথায় তার সব আশা আকাঙ্খা সব মাটির সাথে মিশে গেল । এই কঠিন জীবন সংগ্রামে সে প্রায় পরাজিত হয়ে গেল ।

তবে মিতু ঠিক করেই নিল যে গ্রামে সে ফিরে যাবে না । যাই করা লাগুক না কেন সে আর ফিরে যাবে না গ্রামে । কিন্তু চোখের সামনে আর কিছু দেখতে পেল না সে ! শেষে সব থেকে কুৎসিত পথ টাই বেছে নিল সে !

ওর হোস্টেলে থাকা এক মেয়েও ঠিক একই কাজ করে । সবাই ব্যাপারটা জেনেও না জানার ভাব করে থাকে । পেটে যখন ক্ষুধা থাকে তখন আসলে অন্য কিছু মাথায় আসে না । মিতুর এল না !

যখন ধানমন্ডি লেকের কাছে ও দাড়িয়েছিলো প্রথম গাড়িটাই ছিল আবিরের । ওর ঠিক সামনেই গাড়িটা এসে থামলো । জানলার কাচ নামার আগ পর্যন্তও ওর এক মন বলছিলো এখনই এখান থেকে চলে যেতে কিন্তু ক্ষুধার জ্বালা বড় বেশি । সেটা ও আর কত সময় সহ্য করতে পারে ওর জানা ছিল না !

মিতু নিঃশব্দে গাড়িতে উঠে এল । কিছু দুর যাওয়ার পরে পাশে বসা মানুষটা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার মুখে কোন মেকআপ দেখছি না ! আর মুখটা এমন শুকনা কেন ?
মিতু খুব মৃদু কন্ঠে বলল
-সারা দিন কিছু খাই নি !

-আবির বেশ কিছু সময় কোন কথা বলল না । তারপর বলল
-এই জন্য এখানে এসে দাড়িয়েছো !
-অনেক কষ্টে কান্না আটকিয়ে মিতু মাথা ঝাকালো !

আবিরের বাসায় পৌছে আগে মিতুকে পেট ভরে খেতে হল । তারপর আবির ওকে অবাক করে দিয়ে বলল
-তুমি চাইলে এখন চলে যেতে পারো । আমি বুঝতে পারছি তুমি কেন এই রাস্তায় নেমেছো । আমার শারীরিক চাহিদার মেটানোর জন্য আমি তোমার ক্ষুধাকে ব্যবহার করতে পারবো না । ঠিক আছে ?

মিতু কিছু সময় চুপ করে বসে থেকে মুখ তুলে চাইলো । তারপর বলল
-না । ঠিক আছে । আজকে চলে গেলে আজকের দিনটা হয়তো ভাল ভাবে পার হবে কিন্তু কালকে কি খাবো ? আমার আর কোন পথ নেই । আর এমন কোন যোগ্যতাও আমার নেই যে আমি সামনে কিছু করতে পারবো !
-বাবা মা কোথায় ?
-নেই । মরে গেছে ।
আবির আর কিছু জানতে চাইলো না !

সকাল বেলা যখন আবিরের বাসা থেকে ও বের হয় তখন ওর পকেট ভর্তি টাকা ছিল । এত টাকা ও আশা করে নি । পুরো মাসটা খুব ভাল করেই চলে যাবে । তারপর থেকেই মিতু যাওয়া আসা নিয়মিত হতে লাগলো আবিরের কাছে ।

মিতু খানিকটা বুঝতে পারতো কোন কারনে আবিরের মেয়েদের উপর খুব বেশি রাগ আছে । সেটাই ও প্রতি রাতে টের পেত । তবে সকাল বেলা একদম স্বাভাবিক । যতদিন যেতে লাগলো মিতুর একটা অনুভুত হতে লাগলো যে সে আবিরের প্রতি দুর্বল হতে চলেছে । কিন্তু নিজের অবস্থান সে পরিস্কার ভাবেই জানতো । সেটা লুকিয়ে রাখতো নিজের কাছেই ।

বছর খানেক পার হয়ে গেল এভাবে । মিতু অনেক কিছু শিখতে লাগলো । পড়া লেখার পাশাপাশি একটা পার্ট টাইম জবও জোগার করে ফেলল । কিন্তু আবিরের কাছে যাওয়া বন্ধ করলো না । আবিরও কেন জানি অন্য কাউকে ডাকতো না কখনও । হয়তো দুজনেই দুজনের কাছে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলো ।

সব কিছু ভালই চলছিল । কিন্তু একদিন ঝামেলা বেঁধে গেল ।

মিতু আবিরের ফ্যামিলি সম্পর্ক কিছুই জানতো না । একদিন জানতে চেয়েছিলো কিন্তু আবিরের ধমকে সেদিন চুপ হয়ে গিয়েছিলো । আবির ওকে কঠিন করে বলেছিলো যে ও যেন কোন দিন ওর ফ্যামিলি কিংবা পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে না জানতে চায় ! কিন্তু ঐ দিন হঠাৎ করেই আবিরের ফ্যামিলির একজনের সাথে ওর পরিচয় হয়ে যায় ! এবং সেটা অন্য ভাবে যা কোন দিন ভাবে নি সে !

যেদিন যদিন মিতু আবিরের ফ্ল্যাটে হাজির হত সেদিন সকাল বেলা মিতু নিজের মতেই সকালের কাজ কর্ম গুলো করতো । নাস্তা বানানো ঘর-দোর পরিস্কার করা । এমন কি আবীর অফিসের দিকে রওনা হয়ে যাওয়ার পরেও । ঐ ফ্ল্যাটের একটা আলাদা চাবি মিতুকে দিয়েছিলো ও ।

ঐদিনও আবীরকে নাস্তা খেতে দিয়ে মিতু বসার ঘরটা গোছাচ্ছিলো । তখনই কলিংবেল বেজে উঠে । মিতু অবশ্য খুব বেশি চিন্তুিত হল না । বুয়া থেকে শুরু করে দাঅয়ান পেপারওয়ালা সবাই মিতুকে ততদিনে চিনে গেছে । এবং সেটা সবাই মনে করে মিতু আবিরে প্রেমিকা টাইপের কিছু একটা । তাই মিতুর দরজা খুলতে খুব একটা সমস্যা ছিল না । কিন্তু দরজা খুলে অবাক হয়ে দেখলো সেখানে অপরিচিত একটা মেয়ে দাড়িয়ে ।
ওর দিকে তাকিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
-আপনি কে ?
মিতু ততক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়েছে । ওকে পাল্টা প্রশ্ন করলো
-আপনি কে ?
মেয়েটি কথার জবাব না দিয়ে বলল
-ভাইয়া কোথায় ? তারপর মিতুকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো । আবির তখন নাস্তা খাচ্ছে । মিতু মেয়েটির পেছন পেছন এসে হাজির । আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে খানিকটা সংঙ্কিত ভাবে । মেয়েটি যে আবিরের ছোট বোন সেটা বুঝতে ওর বাকি নেই ।
মেয়েটি বলল
-ভাইয়া এই মেয়েটা কে ?
আবির সেটার জবাব না দিয়ে বলল
-কেন এসেছিস ?
-আগে বল এই মেয়ে কে ?
তারপর কিছু একটা বুঝতে পেরেছে এমন ভাব করে চিৎকার করে উঠলো
-ও মাই গড ! এটা তোমার গার্লফ্রেন্ড ?

আবির কোন কথা বলল না । এমন কি মানাও করলো না । নাস্তা খাওয়া শেষ করে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল । মিতু প্লেটটা নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেল । আবিরের ছোট বোন তখনও মিতুর পেছন পেছন হাজির ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-সত্যি সত্যিই তুমি ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড ? থ্যাংকস গড ! ভাইটার সুমতি হল অবশেষে । আমরা তো ভেবেছিলাম ভাইয়ার জীবনে আর কোন মেয়েই আসবে ! ইস ! কি সুইট তুমি দেখতে !

মিতু অস্বস্তি মাখা একটা ভালা লাগা নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো । যদিও জানে এটা সত্য হবে না । ওর ভাইয়া কেন ওকে কিছু বলে নি সেটাও বুঝতে কষ্ট হল না । ওর সাথে আবীরের যা সম্পর্ক যা কোন ভাই তার বোনকে সেটা বলতে পারবে না । এর থেকে ও যেটা ভেবে নিয়েছে সেটাই থাকুক !


সেদিন আবির চলে যাওয়ার পরে আবিরের ছোট বোনের সাথে অনেক কথা শুনতে পেল । বিশেষ করে আবিরের জীবন সম্পর্ক । কেন সে এমন আর কেন এমন গম্ভির সেটার কারনও বুঝতে পারলো । কেন মেয়েদের উপর ওর রাগ ওর ফ্যামিলির সম্পর্কে ওর রাগ সব মিতুর জানতে পারলো ওর বোনের কাছ থেকে ।

আবির যখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ত তখন একটা মেয়ের সাথে ওর সম্পর্ক ছিল । কিন্তু ব্যাপারটা ওর ফ্যামিলির জানার পর কিছুতেই মেনে নেয় নি । কারন মেয়েটার ফ্যামিলি খুব একটা ভাল ছিল না । ওদের ফ্যামিলি স্টাটাসের সাথে ম্যাচ করতো না । তার কদিনের মাথায় মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায় । মেয়েটাও আবিরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ।

কিন্তু আরও বছর খানেক পরে আবির জানতে পারে যে ওর বাবা ঐ মেয়েটার সাথে দেখা করে মেয়েটাকে বেশ কিছু টাকার লোভ দেখিয়ে আবিরকে ছেড়ে যেতে বলে । এটা জানার পর থেকে আবির ওর ফ্যামির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় । সেদিনের পর বাবা মা কারো সাথেই ও কথা বলে নি ।

এটা জানার পর মিতু কেন জানি আবিরের উপর আরও একটু বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে । কিন্তু সেই কথা কোন দিনই মিতু ওকে বলতে পারবে না ।

কিন্তু সব থেকে বড় ধাক্কাটা মিতুর খায় গত কালকে । কালকে ক্লাস শেষ করে হোস্টেলের দিকে যাচ্ছিলো তখনই এক জন মানুষ ওর পথ রোধ করে দাড়ায় । ওকে বলে একজন ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে একটু । মিতুকে একটা সাদা রংয়ের গাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে । ও একটু ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখে সেখানে একজন মহিলা বসে আছে । ওকে ভেতরে ঢুকতে বললে আরও একটু ইতস্তত করে । কিন্তু মহিলার চেহারা আর আভিজাত্য দেখে মনে হল না সে মিতুর কোন ক্ষতি করবে । তাকে কিডন্যাপ করেই বা কি করবে তারা !
গাড়ির ভেতরে বসার পর মিতুকে মহিলা বলল যে উনি আবিরের মা !

মিতুক আসলেই বেশ অবাক হল । ওর খোজ কিভাবে সে পেল সেটা মিতু বুঝতে পারলো না । কিন্তু অবাক হওয়ার ব্যাপারটা মন খারাপের রূপ নিতে সময় লাগলো না । কারন মহিলা কেবল মিতুকেই খুজে বের করেন নি, সে কি এবং কে সেটাও বের করে ফেলেছে । ক্ষমতাবানদের কাছে কিছুই অসাধ্য নয় । মিতু মাথা নিচু করে বসে রইলো । আবিরের মা ওকে ষ্পষ্ট করে বলল যে সে যেন তার ছেলেকে ছেড়ে যায় । এবং এই জন্য তাকে যথেষ্ঠ টাকা সে দিবে !

মিতু যখন গাড়ি থেকে বের হল তখন ওর খুব বেশি কান্না আসতে লাগলো । হোস্টেলে গিয়ে অনেক কাঁদলো । এমনি প্রথম যদিন এ পথে নেমেছিলো সেদিনও এতো কান্না আসে নি এতোটা নিচ মনে নয় নি নিজেকে । কিন্তু আজকে আবিরের মায়ের কথা শুনে কেবল নিজেকে একটা মাংসের দলা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না নিজেকে !

তাই আজকে এসেছে আবিরের সাথে শেষ বারের মত দেখা করতে । আজকের পরে ও আবির সাথে আর দেখা করবে না । হয়তো আবিরের কিছুই যাবে আসবে না । নতুন কাউকে খুজে নেবে !

ভিআইপি রুমেই আবির আসলো একটু পরে । ওর পাশে বসে ওকে একটু ঝাকি দিয়েই মিতু বাস্তবে ফিরে এল ।
ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-হঠাৎ এতো জরুরী যে বাসায় না এসে সোজা অফিসে ?
মিতু কি বলবে খুজে পেল না ।
আবির আবার বলল
-কি হয়েছে ?
মিতু তখনও চুপ !
-আরে বলবা তো !
মিতু এবার মুখ খুলল । বল
-আজকের পর থেকে আমাদের আর দেখা হবে না ।
-কেন ?
-এমনি । আমি আর চাই না তাই ?
-তাই তুমি চাও না ?

আবির বেশ কিছু সময় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-কেবল এই দুই লাইণ বলার জন্য তুমি এখানে এসেছো ? এটা তো ফোনেও বলতে পারতে !

পারতো । কিন্তু শেষ বারের মত আবিরকে দেখা থেকে ও নিজেকে সমালাতে পারে নি । ফোনে বললে তো দেখা হবে না কোন দিন !

আবির বলল
-আমার মা কিংবা বাবা তোমার সাথে দেখা করেছে । তাই না ?
মিতু সরাসরি আবিরের চোখের দিকে তাকালো । কিছু বলতে হল না আবিরের যা বোঝার বুঝে গেকল ।
-কত টাকার অফার দিয়েছে ?
-আমার টাকা লাগবে না !
-তাহলে আমাকে যেতে চাইছো কেন ?
-উনি ভাবছেন হয়তো আপনি আমার উপর দুর্বল হয়ে পরেছেন কিংবা পড়তে পারেন । তাই চাচ্ছেন যেন আমি চলে যাই । মা হিসাবে উণি তো আপনার ভালই চাইবেন । আর আমার মত কাউকে ......

মিতু কথাটা শেষ করতে পারলো না । এতো সময় ধরে আটকে রাখা কান্নাটা বের হয়ে এল ! আবির আরও কিছু সময় ওওর দিকে তাকিয়ে থেকে হটাৎ শক্ত করে ওর হাত ধরলো । তারপর এক প্রকার টানতে টানতেই ওকে দরজা দিয়ে বাইরে নিয়ে এল । অফিসের সবাই কেবল দেখলো রাগত চেহারা নিয়ে তাদের আবির স্যার একটা মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে অফিস থেকে ।

মিতু একবার বলার চেষ্টা করলো আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেল । কিন্তু যখন আবিরের গাড়িটা থামলো মিতু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো সেটা একটা কাজী অফিস !
-এসো !
মিতু নিজের চোখ কে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলো না । কি হচ্ছে এসব ! ও বলার চেষ্টা করলো যে
-আপনার মা ..... এটা কোন মেনে.....
-এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত খুলে ফেলবো । এসো !

যখন আবার মিতু গাড়িতে এসে বসলো তখন মিতু যেন ঘোরের ভেতরে চলে গেছে । কিছুই বুঝতে পারছে না । তবে তার যে আনন্দ হচ্ছে সেটা সে কোন ভাবেই প্রকাশ করতে পারছে না । আবিরকে জড়িয়ে ধরে চিৎকারে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ।
আনন্দের কান্না । এ জড়িয়ে ধরার অধিকার আবির নিজেই ওকে দিয়েছে !
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২১
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×