somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রকাৃত গল্পঃ ভবিষ্যৎ বক্তা

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিবা চমকে উঠলো ।

রেডিওটা লাউডস্পিকারে দেওয়া ছিল । নিজের কানে একটু আগে কি শুনেছে সেটা ঠিক বিশ্বাস করতে পারলো না ! ডান দিকে তাকিয়ে দেখে ওর রুমমেট সোমাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে । ও নিজেও শুনেছে !

সোমা বলল, কি ফাউল প্রোগ্রাম !
প্রতি উত্তরে দিবা কিছু বলল না । ওর কেমন যেন একটা অস্বস্থি শুরু হয়েছে ।

রেডিওতে আবার আর জে কথা বলা শুরু করেছে । তবে আগের ইমেইলটা সে আর পড়লো না । অন্য একটা ইমেল দিয়ে শুরু করলো ।দিবার মনে একটু ভয় করতে লাগলো । ওর আর শুনার সাহস পেল না । রেডিওটা অফ করে দিল ।

দিবা ভুতে ঠিক ভয় পায় না । তবে ভুতের গল্প শুনতে বেশ পছন্দ করে । ইদানিং রাতের বেলা অনেক গুলো ভুতের অনুষ্ঠান হয়ে রেডিও তে । শুনতে ভালই লাগে । লাইট অফ করে কিংবা কাজ করতে করতে শুনতে খারাপ লাগে না । আজকেও তেমনই একটা অনুষ্ঠান শুনছিলো । রেডিওর উপস্থাপক শ্রোতাদের পাঠানোর একটা ইমেইল পড়তে শুরু করলো । ইমেইলে এমন কথা লেখা ছিল যে ছেলেটা মানুষের ভবিষ্যৎ দেখতে পায় । বিশেষ করে কোন দূর্ঘটনা কিংবা মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেই সেটা আগে থেকেই বুঝতে পারে ।

এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল । কিন্তু যখন বলল যে আগামী সপ্তাহে ভুতের এই অনুষ্ঠানটা হবে না কারন এই অনুষ্ঠানের আর জে মারা যাবে !
লাইনটা পড়েই আর জে সাহেব চুপ করে গেলেন ! লাইভ অনুষ্ঠানে এর আগে এমন কিছু হয়েছে কি না কারো জানা নেই । নিজের মৃত্যুর সংবাদ শুনে নিজেই একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিলেন তবে সেটা সামলে নিলেন । আবার কথা বলা শুরু করলেন তবে দিবার কেন জানি আর শুনতে ইচ্ছে করলো না । সে রেডিওটা অফ করে দিল ।


পরদিন অফিসে গিয়েও ওর কলিগদের কাছে এই কথা বলতেও অনেকে হেসে উঠলো । সবাই অবশ্য ওর এই ভুতের অনুষ্ঠা শোনা নিয়ে বেশ হাসাহাসি করে । দিবা ওদের কাছ থেকে সুমনের টেবিলের দিকে হাটা দিল । এক মাত্র এই ছেলেটাই ওকে নিয়ে হাসাহাসি করে না । ওর কথা মন দিয়ে শোনে । সুমনের সাথে ওর কথা বলা শুরুটাও হয়েছিলো এই ভুতের গল্প নিয়েই । সবাই যখন এটা নিয়ে হাসাহাসি করতো তখন সুমন ওকে বলল যে ও নিজেও এসব শোনে নিয়মিত এবং ওর এসবে বিশ্বাস আছে । ওর নিজের সাথে ওর পরিবারের সাথেও নাকি এমন কিছু হয়েছে । দিবা সেগুলোও শুনতো মন দিয়ে ! ওর ভালই লাগলো ! মাঝে মাঝেই ও নিজেও ওর শোনা গল্প গুলো সুমনের সাথে শেয়ার করতো !

সুমনকে কথাটা বলতেই ও গম্ভীর হয়ে গেল । তবে অন্যদের মত হেসে উড়িয়ে দিল । দিবা জানতো সুমন এমনই করবে । এমনিতেই ও কম কথা বলে । অফিসের অন্য সবার সাথে মেশে কম । যা মেশে দিবার সাথেই একটু মেশে । দিবা ব্যাপারটা বুঝতে পারে যে সুমন ওকে পছন্দ করে । দিবাও ওকে পছন্দ করে তবে সেটা কোন সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ানোর পর্যায়ে যায় নি এখনও । যাবে কি না সেটা সে নিজেও জানে না ।

দেখতে দেখতে সেই দিন এসে হাজির হয়ে গেল এবং সত্যি সত্যিই ঐ ইমেইল দাতার কথা সত্যি হয়ে গেল । দিবা শুনতে পেল যে ঐ প্রোগ্রামটা ক্যান্সেল করা করা হয়েছে কারন আরজে নাকি অফিসে আসতে নিয়ে এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে । দিবা কেবল থ হয়ে রইলো কিছুটা সময়। আর কিছু ভাবতেই পারলো না ।

পরদিন অফিসের সবাই এবার আর কেউ ব্যাপারটা উড়িয়ে দিলো না । অনলাইনেও অনেক কথা হল এটা নিয়ে । সবাই একটু একটু বিশ্বাস করতে শুরু করলো আসলেই অলৌকিক বলে কিছু একটা আছে । তবে পরের সপ্তাহ থেকে আবার শো চালু হয়ে গেল । নতুন আরজে নিয়ে নতুন ভাবে । জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না । সো মাস্ট গো অন । দিবাও সব কিছু ভুলে এগিয়ে যেতে লাগলো !
আরও মাস খানেক পরে একদিন অফিসে সুমন এসে ওকে জরুরী ভাবে ডেকে নিয়ে গেল ছাদের উপর । তারপর ওকে বলল
-তোমরা আগামীকাল কক্সবাজার যাবে ?
-হ্যা । ভার্সিটির বন্ধুরা মিলে । তুমি কিভাবে জানলে ?
-না গেলে হয় না !
-না । সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে !
-প্লিজ যেও না !
-মানে কি কেন যাবো না ?
-আমি বলছি । প্লিজ !
-না এটা করতে পারবো না ।
হঠাৎ করেই সুমন ওর হাত চেপে ধরলো । তারপর
-আমি যদি তোমার কাছে বিন্দু মাত্র মূল্যবান হয়ে থাকি তাহলে প্লিজ যেও না । আমি আর কিছু চাইবো না তোমার কাছে কোন দিন !
দিবা ঠিক বুঝতে পারলো না কি বলবে তবে সুমনের কন্ঠে এমন কিছু ছিল ও বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে । প্লিজ শান্ত হও ! আমি যাবো না !
-কথা দাও যে যাবা না !
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে যাবো না ! হয়েছে !
-পরের দিন যাও । প্লিজ !

দিবা আসলে একটু ভয় পেল সুমনের আচরনে । এমন শান্ত শিষ্ট ছেলেটা হঠাৎ এমন আচরন কেন করলো ঠিক বুঝতে পারলো না । তবে বন্ধুদের ফোন করে বলল যে ও ঐদিনে যেতে পারবে না । যদি একদিন পরে হয় তাহলে তাহলে পারবে ! সবাই অনেক চিৎকার চেঁচামিচি করলো তবে শেষে পরদিনই ঠিক হল !

এটার কোন ব্যাখ্যা দিবার কাছে ছিল না । কেনই বা সুমন ওকে এমন করে বলল আর ওই বা কেন রাজী হয়ে গেল কে জানে !
কিন্তু সকাল বেলা ওর এক বন্ধুর ফোন পেয়ে ও যেন খুব জোরে একটা ধাক্কা খেল । ওর বন্ধু ফোনে জানালো যে ওরা যে বাসে টিকিট কেটেছিলো সেটা নাকি পথে মারাত্বক এক্সিডেন্ট করেছে । বাসের অর্ধেক যাত্রী মারা গেছে জায়গায় ! ওদের ঠিক ঐ বাসেই থাকার কথা ছিল । আজকে যদি দিবা বেকে না বসতো বসতো তাহলে ওরা সবাই মারা পড়তে পারতো !

দিবা আর কি বলবে খুজে পেল না । পরদিনের ট্যুরও ওরা ক্যান্সেল করে দিল । অফিসে এসে সুমনকে খুজতে লাগলো কিন্তু জানতে পারলো যে সুমন নাকি অফিসে আসে নি । কাল থেকে সুমনের ফোনে খুজে যাচ্ছে কিন্তু সুমনকে পাচ্ছে না । দিবা মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলো । দিবার কেবলই মনে হতে লাগলো সুমন ব্যাপারটা ঠিক ঠিকই জানতো । নয়তো এমন আচরন ও করতো না কোন দিন । কিন্তু সমুনের কোন খোজ নেই কেন ?

তারপর পরপর সাত দিন সুমনের কোন খোজ পাওয়া গেল না । ও যেখানে থাকতো সেখানে গিয়েও সুমনের কোন খোজ পাওয়া গেল না । ও নাকি গত সপ্তাহ থেকে রুমেই আসে নি !

দিবার কেন জানি খুব অস্থির লাগতে লাগলো সুমনের জন্য । ছেলেটা এমন করে গায়েব কেন হয়ে যাবে ! ওর ফ্যামিলির সম্পর্কেও ও খুব একটা জানে না সেখানে গিয়ে খোজ নিবে । ও কেন কেউই বলতে পারে না । ছেলেটা ওকে এমন নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে কোথায় চলে গেল ।

ঠিক তার এক মাসের মাথায় দিবার নামে একটা চিঠি এসে হাজির । প্রেরকের কোন নাম নেই । কেবল ওর ঠিকানা লেখা !
চিঠি খুলেই বুঝতে পারলো সেটা কে পাঠিয়েছে । সুমনের হাতের লেখা ও ভাল করেই চেনে !

দিবা,
জানি আমাকে খুব করে খুজে বেড়াচ্ছো । কিন্তু আমি এমন জায়গাতে যাচ্ছি সেখান থেকে আর ফিরে আসা হয়তো সম্ভব না । যাই হোক তুমি আমাকে খুজে বেড়াচ্ছ আমার জন্য অস্থির হচ্ছো এটাই আমার জন্য অনেক কিছু ! জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন । যাওয়ার আগে কিছু বলে যেতে চাই ।
কদিন আগে রেডিওতে একটা ইমেইল এসেছিলো আরজে মৃত্যু নিয়ে । সেই ইমেইলটা আমি পাঠিয়েছিলাম । আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই দিবা । জন্ম মৃত্যু সব কিছু । কিন্তু সেগুলো বদলানোর নিয়ম নেই । যে যখন মরবে মরবেই । আমি চাইলেই আরজে কে ঐদিন ঠিকই বাঁচাতে পারতাম । কেবল ও যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিল তখন ওকে কোন ভাবে ৩০ সেকেন্ড লেট করিয়ে দিলেই হয়ে যেত । কিন্তু এটা আমি করতে পারি না । করলে আমাকে কঠিন শাস্তি পেতে হত ।
কিন্তু তোমার বেলাতে আমি নিজেকে শান্ত রাখতে পারি নি । এই জন্য তোমাকে আটকেছিলাম । ফলাফল স্বরূপ আজকে আমি অনেক দুরে চলে যাচ্ছে । এতে আমার কোন দুঃখ নেই । যে জীবনে তুমি থাকতে না সে জীবন নিয়ে আমি কি করতাম । অন্তত তুমি এখন আমাকে মনে রাখবে । এটাই আমার জন্য অনেক কিছু । ভাল থেকো । আর আমাকে মনে রেখ !

ইতি
সুমন



চিঠিটা পড়ার পড়ে দিবা কিছুটা সময় বিমূঢ় হয়ে বসে রইলো । চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু বেরিয়ে এল সুমনের জন্য ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৫৪
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×