somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু গল্পঃ টুকরো জীবন দৃশ্য

০১ লা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মিতুর লিফটের সুইচটা কয়েকবার চাপ দিলো । লিফট টা আটকে আছে নয় তলায় ! বিরক্ত লাগছে ওর । মনে হচ্ছে যেন সব কিছু আজকে থেমে গেছে । লিফট টাও আসছে না । মনে মনে রাগ হল না । যখন তাড়াহুড়া করে তখনই যেন সব কিছু আটকে থাকে !
সিএনজি করে আসার সময়ই মনে হচ্ছিলো সিএনজিটা যেন চলছে না । তার উপর রাস্তায় প্রচুর জ্যাম । ঢাকা শহরের এই এক সমস্যা । এমনিতেই সারাটা সময় এখানে জ্যাম গেলেই থাকে । আর যদি বৃষ্টি হয় তাহলে এই জ্যাম যেন আর ছাড়তেই চায় না । আজকে সারাটা দিন বৃষ্টি হচ্ছে । সেই সকাল থেকে শুরু হয়েছে । এখনও থামার নাম নেই ।
অনেক জায়গাতে পানি জমে গেছে । সেই সাথে পাল্লা দিয়ে জ্যাম ।

আজকে মিতুর অফিসে একটু কাজের চাপ ছিল । অফিস থেকে বের হতে হতেই সাড়ে সাতটা বেজে গেছে । তার উপর রাস্তায় জ্যামে আটকে ছিল প্রায় তিন ঘন্টা । সিএনজির ভেতরে বসে থাকতে কয়েকবার মনে হয়েছে বের হয়ে হাটা দেয় । বৃষ্টি না হলে তাই করতো ।

মিতুর বারবার সুমনের কথা মনে হচ্ছে । বিয়ের পর এতো রাত এর আগে কোন দিন হয় নি । এমনিতেও সুমন কথা বলে অনেক কম । আজকে নিশ্চয়ই আরও গম্ভীর হয়ে থাকবে । বাড়ির বউ যদি রাত দশটা পর্যন্ত বাইরে থাকে তাহলে তাহলে সেটা কোন ভাবেই সুখের কোন কথা না । কিন্তু ও কি করবে ! ওর তো দোষ দেওয়া চলে না ।

মাঝে মাঝে মিতুর মনে হয় চাকরি বাকরি ছেড়ে দেয় । ওর প্রায় সব কটা বান্ধবীই তাই করেছে । বিয়ের পর সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে পুরো দমে গৃহিণী হয়ে গেছে । ফেসবুক চেক করতে গিয়ে দেখে আজকে ওর এক বান্ধবী বাসায় ভুনা খিচুড়ী রান্না করছে স্বামীর জন্য । দুজন মিলে এই বৃষ্টি সেলিব্রেট করবে । সেই ছবিও ফেসবুকে দিয়েছে । আর মিতুকে আবার সেই ছবি ট্যাগও দিয়েছে । মিতুর একটু হিংসাই হল । আজকে বাসায় থাকলে ও নিজেও এই কাজ গুলো করতে পারতো । কিন্তু ও এই কাঁদা মাটি মারিয়ে বাসায় যাচ্ছে । সেখানে বাসায় গিয়ে আবার রান্না করতে হবে ।

জানে সুমন কিছু বলবে না । তবুও নিশ্চয়ই বিরক্ত হবে । ফেরার পথে একবার ভাবলো ও বাইরে থেকে খিচুরী কিনে নেয় দুজনের জন্য । কিন্তু সেটা বাতিল করে দিল । সুমন ঠিক বাইরের খাবার পছন্দ করে না । বাইরের মোরগ পোলাও থেকে ওর ঘরের আলু ভর্তাতেই আগ্রহ বেশি !

যখন গলিং বেল চাপ দিল তখন দশটা বেজে দুই মিনিট । আজকে সত্যিই সুমন বিরক্ত হয়ে যাবে । দরজা খুলতেই সুমনের চেহারা দেখতে পেল । বিরক্ত কিনা ঠিক বোঝা গেল না তবে মুখ বরাবরের মতই গম্ভীর ।
মিতু ঘরে ঢুকেই বলল
-সরি ! অনেক দেরি হয়ে গেল তাই না ? রাস্তায় এতো জ্যাম ছিল । আসলে ...
সুমন ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে । বুঝতে পারছি আমি । বাধরুমে গিয়ে আগে ফ্রেস হয়ে নাও ।

কন্ঠ স্বাভাবিক দেখে মিতুর মনটা ভাল হয়ে গেল চট করেই । সুমনের দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি ফ্রেশ হয়ে তারপর খেতে বসি । তোমার নিশ্চয়ই ক্ষুধা লেগেছে !
-আচ্ছা সমস্যা নেই । তুমি ধীরে সুস্থে আসো ! এতো তাড়াহুড়া করতে হবে না ।

মিতুর ইচ্ছে সুমনের গালে একটা চুমু খেতে । কিন্তু সংকোচের কারনে সেটা ঠিক পারলো না । ওদের বিয়ে হয়েছে কয়েক মাসই কেবল হয়েছে । এখনও ঠিক সংকোচ জিনিসটা কাটে নি পুরোপুরি । তার উপর সুমন মানুষ হিসেবে খুব চুপচাপ । দরকার ছাড়া বেশি কথা বলে না । তাই ওদের সম্পর্কে এখনও খানিকটা শীতলতা রয়েই গেছে ।
মিতু আরেকবার সুমনের দিকে তাকিয়ে হাসি দিল । তারপর ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেল ।

কিন্তু আজকে মিতুর জন্য অন্য কিছু অপেক্ষা করছিলো । ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হওয়ার সময়ই ভাবছিলো যে এখনই চট করে হালকা কিছু বানিয়ে দিবে সুমনকে । ঘরে আলুর চিপস আছে । সেটা খানিকটা ভেজে দিক । তারপর একটু ভুনা খিচুরী রান্না করবে । এখনও বাইরে বেশ জোরেই বৃষ্টি পড়ছে । একটু হয়তো রাত হবে খেতে তবে সেটা মন্দ হবে না । তাই ঠিক করে নিল ।

গোসল সেরে আজকে কেন জানি মিতুর শাড়ি পরতে ইচ্ছে হল । চট করে শাড়ি পরে যখন ডাইনিং রুমে এল একটু ছোট খাটো ধাক্কার মত খেল । ওদের ডাইনিং টেবিল ভর্তি খাবার ! মিতু তাকিয়ে দেখে খাবারের আইটেমের ভেতরে রয়েছে ভুনা খিচুরী । গরুর মাংসের ভুনা আলাদা ভাবে । রংটা দেখেই মনে হচ্ছে জিনিসটা খেতে স্বাধ হয়েছে । আরও আছে ইলিশ মাস ভাজা গত দিনের মুরগীর মাংসটা বেশ কড়া করে ভাজা হয়েছে, ঝোল শুকিয়ে ফেলা হয়েছে । একটা ভর্তার আইটেমও রয়েছে ! কিসের ভর্তা এটা কে জানে ! আর সালাদ কেটে সেটা চমৎকার ভাবে সাজানো রয়েছে ।
মিতু আর যাই হোক এই টেবিল ভর্তি খাবার আশা করে নি কোন ভাবেই । কিন্তু এসব সব সুমন রান্না করেছে ভাবতেই পারছে না । রান্না ঘর থেকে সুমনকে বের হতে দেখলো । ওর হাতে কোকাকোলার বোতল । ওটা টেবিলে রাখতে রাখতে বলল
-বস । খাওয়া শুরু করা যাক !
মিতুর অবাক হওয়ার ভাবটা তখনও কাটে নি । সুমনের দিকে তাকিয়ে বলল
-এসব তুমি রান্না করেছো ?
সুমন কোন কথা না বলে কেবল হাসলো । মিতু বললাম
-আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । তুমি এতো কিছু রান্না করতে পারো ?
জবাবে আবারও সুমন হাসলো । তারপর বলল
-আগে আমি নিজেই রান্না করতাম মাঝে মাঝে । আজকে তোমার আসতে দেরি হচ্ছিলো আর তোমার ঐ বদ বান্ধবী এক আইটেম রান্না করে তার ছবি তুলে এমন ভাব করছে যেন কি না কি রান্না করে ফেলেছে । তাই মনে হল আমরাও একটু রান্না করি ।
মিতু কি বলবে বুঝতেই পারলো না । কেবল অনুভব করলো যে ওর অসম্ভব আনন্দ হচ্ছে । একটু সংকোচ হলে একটা কাজ করেই ফেলল । সুমনের কাছে কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর জড়িয়ে ধরা অবস্থায়ই বলল
-আমার তো আসার মনে হচ্ছিলো আজকে তুমি রাগ করবে দেরি দেখে !
-কেন রাগ করবো ? মানুষের দেরি হতে পারে না ? আর ঠিক রাগ করি না । তবে তুমি দেরি হলে টেনশন হয় !
আরেকটু শক্ত করেই যেন জড়িয়ে ধরলো সুমনকে । তারপর বলল
-নিজেকে আজকে অনেক বেশি লাকি মনে হচ্ছে !



তারপর মিতু চট করে নিজের মোবাইলটা নিয়ে এল । মিতুর অবশ্য এমন ভাবে ছবি আপলোড দেওয়ার খুব অভ্যাস নেই । তবে আজকে ওর খুবই ইচ্ছে করছে খাবারের ছবি গুলো মানুষকে দেখাতে । মনে হতে লাগলো যে এই ছবি আপলোড না দিলে ওর শান্তিই লাগবে না !
সব গুলো আইটেমের ছবি তুলল একে একে । এরপর সেগুলো ফেসবুকে আপলোড দিয়ে লিখলো "সবাই তো বাড়ির বউয়ের রান্না খায় কিন্তু কজন বউয়ের এমন বৃষ্টির দিনে স্বামী হাতের রান্না খাওয়ার কপাল থাকে" ।

সারা দিনের কাজের ব্যস্ততা আর জ্যামের ভেতরে বসে থাকতে থাকতে মিতুর মনে হয়েছিলো আজকে দিনটা বাজে আর বিরক্তি ভাব নিয়ে শেষ হবে । এমন চমৎকার ভাবে দিনটা শেষ হবে মিতুর ভাবতেও পারে নি । জীবন মাঝে মাঝেই ওদের কে অপ্রত্যাশিত অনেক কিছু দেয় !



মানুষের জীবন গুলো এমনই কিছু ছোট ছোট টুকরো ঘটনা নিয়ে সামনে এগিয়ে যায় । কোন কোন ঘটনা তাদের অনেক বেশি আনন্দ দেয় আবার কোন ঘটনা দুঃখ দেয় । এরকম ছোট ছোট দুঃখ আনন্দের দুকরো জীবন দৃশ্য নিয়েই মানুষের বেঁচে থাকা !


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪০
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×