somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত গল্পঃ অজানা সত্য

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছু সময় আগেই । মিতুর মনে সেই ভয়টা আস্তে আস্তে ফিরে আসছে । অবশ্য পুরোটা দিনই মিতুর মনে হয় কেউ যেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে । ওর প্রতিটা পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছে । তবে রাতের বেলা এই যেন সেই অনুভুতিটা আরও তীব্র হয়ে ওঠে । তখন মিতুর খুব অসহায় লাগে । দিন যত যাচ্ছে ততই যেন বেড়েই চলেছে ।
ঘরের সব আলো জ্বালিয়ে দিল । সেই সাথে বিকেলে মোমবাতিটাও জ্বালিয়ে দিল । কেন দিন ওটা অবশ্য নিজেও জানে না । কারেন্ট যাওয়ার একটা সম্ভবনা আছে তবে সেটা নিয়েও চিন্তা নেই । ওরা যে এপার্টমেন্টে থাকে সেখানে জেনারেটর আছে । কারেন্ট যাওয়ার সাথে সাথেই সেটা চালু হয়ে যায় । তার পরেও মিতুর ঠিক ভরসা হয় না । যদি ঠিক মত চালু হয় না তখন ?
এই কথা ভাবতেই ধপ ঘরের সব আলো চলে গেল ।
লোড শেডিং !
পুরো ঘরে মোমের আলো ছাড়া আর কোন আলো নেই । কিন্তু সেই মৃদু আলো পুরো ঘরের অন্ধকার তো দুর করেই নি বরং আরও যেন জমাট অন্ধকার সৃষ্টি করেছে । কয়েক মুহুর্ত কেটে গেল । মিতুর মনে হল যেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে যেন । এতো সময়ে জেনারেটর চালু হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু হচ্ছে না কেন ?
মোমের কাছ গিয়ে মোমটা হাতে নিল সেটা । ঠিক সেই সময়ে মিতুর চোখ গেল বারান্দার দিকে । ঢাকার এলাকা কখনই ঠিক মত অন্ধকার হয় না এক এলাকাতে কারেন্ট চলে গেলেও অন্য এলাকাতে থাকে । তবে বারান্দার একটা দিকে একটা জমাট অন্ধকার হয়ে আছে । সেই অন্ধকারে ভেতরে আরও কিছু জমাট অন্ধকার হয়ে দাড়িয়ে আছে । একটু একটু যেন নড়ছে ।

মিতুর বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো । কাজের লোকটার নাম ধরে ডাক দিল । কিন্তু গলার আওয়াজ বের হল না । পেছন ঘুরে দৌড় দিতে চাইলো কিন্তু ওর পা যেন মেঝের সাথে আটকে গেছে । হাতের ধরে রাখা মোমবাতিটা তখনও টিপটিপ করে জ্বলছিলো । এটাই মিতুকে একটু সাহস দিচ্ছে । আলো থাকলে বুকে সাহস আসে ।

মোমের আলোটা একটু যেন কেঁপে উঠলো । বাতাসে কাঁপছে ! বাইরের জানলা দিয়ে দিয়ে যেমন করে বাতাস আসছে যে কোন সময়েই মোমবাতিটা নিভে যেতে পারে ! মনের কথা মনেই রয়ে গেল ঝপ করে মোমটা নিভে গেল । ঠিক তখনই বারান্দায় দাড়ানো কালো অবয়বটা আরও যেন স্পষ্ট হয়ে গেল । মিতু এখন নিশ্চিত ওখানে একজন আছে । অন্ধকারের ভেতরেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।

কিছু বলতে চায় । কিন্তু কি বলতে চায় ?
মিতুর বুকের ভেতরের আতঙ্কটা আরও তীব্র হল । আর থাকা যাবে না । এই অন্ধকারে কিছুতেই থাকা যাবে না । পালাতে হবে !! এই ঘর থেকে এখনই বের হয়ে যেতে হবে । মিতুর মনে হল বারান্দাতে দাড়িয়ে থাকা ঐ মুর্তিটা যেন ওর মনের কথাটা বুঝতে পেরেছে । আস্তে আস্তে ওটা যেন ওর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো ।
এবার সত্যি সত্যি একটা চিৎকার বের হয়ে এল । কেউ শুনলো কি না সেটা মিতু বলতে পারবে না তবে সেটার জন্য মিতু আর অপেক্ষা করলো না । নিজের শরীর সমস্ত শক্তি একসাথে জড় করে পেছনে ঘরে দাড়ালো । ঠিক তখনই অন্ধকারে দরজার সাথে ওর মাথা ঠুকে গেল । মিতু জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেল ।





মিতু বেশ কিছুটা সময় চুপ করে বসে আছে। কি বলবে ঠিক খুজে পাচ্ছে না। কিভাবে বলবে সেটাও ঠিক বুঝতে পারছে না। পাশেই ওর বন্ধু এস আই আরিফ বসে চুপ করে। ও যে পাশে বসে আছে সেটা আরিফ যেন লক্ষ্যই করছে না। অন্য কিছু ভাবছে । মাঝে মাঝে ওদের সামনে বসা মানুষটার দিকে তাকাচ্ছে । যদিও আরিফ নিজেই লোকটার খোজ দিয়ে নিয়ে এসেছে তবুও আরিফ যেন নিজেই যেন অস্বস্তিতে পড়ে গেছে । এখানে ঠিক থাকতে চাইছে না !
মিতু পুরান ঢাকার একটা একতলা বাসাতে এসেছে। কেন যে বসে আছে সেটা ও নিজেই জানে না । ওর নিজের কাছেই কেমন যেন সব অবাস্তব লাগছে । এসবে মিতুর কোন বিশ্বাস ছিল না কিন্তু কদিন থেকে অনুভুতিটা এমন তীব্র হচ্ছে যে ও কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না । গত সপ্তাহে যে তীব্র ভয়টা পেয়েছিলো সেটার পর থেকেই বুঝতে পেরেছিলো সাধারন কোন ডাক্তার ওর এই রোগটা সারাতে পারবে না । জাহিদ ওকে কয়েকবার নিয়ে গেছে ওর পরিচিত এক ডাক্তারের কাছে । সাইক্রিয়াটিস্ট । তাকে সব কিছুই বলেছে মিতু । যা যা দেখে যে যে অনুভব হয় সব কিছু । শুনে লোকটা বলেছে সব নাকি মিতুর মনের কল্পনা । আর কিছু না ।

দিন যতই যাচ্ছে ততই মনে হচ্ছে ওর সুমনের চলে যাওয়ার সাথে এই ভয় পাওয়ার কোন না কোন সম্পর্ক আছে । থাকতে বাধ্য । তাই আজকে ও এসেছে । কেন এসেছে ও নিজেও জানে না । তবে কেবল ওর মনে হয়েছে ওর উত্তরটা জানা দরকার । যে কোন ভাবেই দরকার ।

সামনে বসা মানুষটার নাম রাফায়েল । এই নামে কেউ যে এই দেশে থাকতে পারে সেটা মিতুর জানা ছিল না । আরিফ যখন কোন সাহায্য করতে পারলো না তখন ও নিজেই এই রাফায়েল নামের লোকটার কথা বলল। বলল যে মিতু যে উত্তর খুজছে সেটার উত্তর যদি কেউ দিতে পারে তাহলে এই লোকটাই দিতে পারবে। এর আগেও নাকি রাফায়েল তাদেরকে অদ্ভুদ ভাবে সাহায্য করেছে। লোকটা নাকি মানুষের আত্মার কথা বলতে পারে । মৃত মানুষের আত্মারা নাকি রাফায়েলের সাথে দেখা করে । আরিফ বলল কয়েকটা খুনের কেসে এমন হয়েছে যে ওরা কোন কুল কিনারা করতে পারছিলো না । তখন এই রাফায়েল নাকি ওদের সেই মৃত মানুষের সাথে কথা বলিয়ে দিয়েছে । ব্যাপারটা নাকি বড়ই অদ্ভুদ ! ঠিক ব্যাখ্যা করার মত না !
কিন্তু রাফায়েলের কোন খোজ পাওয়া যায় না সহজে । সব সময় তাকে খুজেও পাওয়া যায় না । হঠাৎ হঠাৎ দেখা হয় ! আবার গায়েব হয়ে যায়। আরিফ বলেছিলো যে ও খোজ লাগিয়ে রাখবে । খোজ পাওয়ার সাথে যদি রাফায়েল রাজি হয় তাহলে ওকে দেখা করাতে নিয়ে আসবে।


আজকে সকালে আরিফ ওকে ফোন করে বলল যে রাফায়েল নাকি আজকে সকাল বেলাতেই ওর সাথে দেখা করতে রাজি হয়েছে । জাহিদ অফিস চলে যাওয়ার পরপরই মিতু বাসা থেকে বের হয়ে পড়ে । তারপর আরিফকে সাথে নিয়ে সোজা এখানে চলে আসে । বাড়িটার সামনে এসে একটু দমে গেছিলো । জড়াজীর্ণ একটা একটা বাসা ! অবশ্য একজন ভুতের ওঝার কাছ থেকে এর থেকে আর কিই বা আশা করা যেতে পারে ! কিন্তু বাসার ভেতরে ঢুকে বেশ অবাক হয়ে গেছিলো । বাড়ির বাইরের দিকটা দেখে ভেতরের দিকটা বোঝার কোন উপায় নেই । তবে সব থেকে বেশি অবাক হয়েছিলো রাফায়েল নামের মানুষটাকে দেখে । ও ভেবেছিলো কোন বুড়ো কিংবা মাঝ বয়সী লোক হবে । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলো লোকটা মোটেও বুড়ো কিংবা মাঝ বয়সী কেউ নয় । বয়সে ওর সমান কিংবা ওর থেকে ছোটই হবেই । যদিও দেখতে আরও ছোট মনে হচ্ছে । তবে সব থেকে বেশি যে জিনিসটা মিতু লক্ষ্য করলো সেটা হল রাফায়েলের চোখ । এতো তীক্ষ চোখ কারো হতে পারে মিতুর জানা ছিল না ।



রাফায়েলের মুখটা কেমন হাসি হাসি । অথবা ছেলেটার চেহারার মাঝেই অন্য রকম কিছু একটা আছে । এমন কিছু একটা যেটা ঠিক স্বাভাবিক মনে হয় না । রাফায়েল বলল
-বলুন মিসেস আহমেদ । আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি ?

মিতু কি বলবে খুজে পেল না । কিভাবে বলবে সেটাও ঠিক বুঝতে পারছে না । যদি কোন পীর ফকির কিংবা ওঝার কাছে আসতো তাহলে হয়তো কথা গুলো আরও সহজে বলা যেত কিন্তু এই একটা ছেলের সামনে এসব কথা সরাসরি বলা যায় না । যে কিনা সামনে এপ্যালের ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে । ল্যাপটপ দিয়ে কেউ ভুতের ওঝা গিরি করে সেটা মিতু এর আগে কোন দিন দেখে নি ।
-আসলে ?
-বলুন সমস্যা নেই । যে কথা ভেবে এসেছেন যাকে দেখে ভয় পেয়েছেন সব বলুন । কোন সমস্যা নেই ।

রাফায়েলের কথা শুনে মিতু চোখ তুলে ওর দিকে সরাসরি তাকালো । ওর কেন জানি মনে হল ও যে কথা বলতে এসেছি সেটা রাফায়েল জানে । যে কোন ভাবে জানে । আরিফ কি বলেছে ? কিন্তু আরিফকে তো ও সব কথা বলে নি । আরিফেরও তো জানার কথা না । মিতুর মনে হল আর ইতস্তত করে লাভ নেই । যা বলতে এসেছে বলে ফেলে ! সব ইতস্তত ভাব দুরে রেখে মিতু বলা শুরু করলো


-আসলে আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম ! ছেলেটার নাম সুমন । আমাদের হোস্টেলের সামনেই থাকতো ছেলেটা । মাঝে মাঝে দেখতাম তারপর একদিন আবিস্কার করলাম ছেলেটা আমার দিকে প্রায়ই তাকিয়ে থাকে । ধীরে আমাদের চোখাচোখী শুরু হল তারপর প্রেম !

লাইনটা বলে কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর আবার বলতে শুরু করলো
-আমাদের ব্যাপারটা আসলে কেউ জানতো না । আমিই ইচ্ছে করে কাউকে বলি নি । কারন আমার বাসার লোকজন এসব ঠিক পছন্দ করতো না । যাই হোক সুমনের কেউ ছিল না । বাবা মা অনেক আগেই মারা গেছে । দুরের এক বড় বোনের কাছে কিছুদিন মানুষ হয়েছিলো তারপরও সেও আফ্রিকার কোন এক দেশে চলে গেল স্বামীর সাথে । সুমন একাই থাকতো । টিউশনী করতো । আরও কি সব করে নিজের খরচ চালাতো ! আমি নিজেও জানতাম আমাদের এই সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ নেই । সুমনও জানতো । তবে ওর জন্য অন্য রকম একটা মায়া অনুভব করতাম । সুমনও আমাকে ভালবাসতো ! তারপর হঠাৎ একদিন সুমন গায়েব হয়ে গেল । কোন খোজ খবর নেই । ফোন বন্ধ । ফেসবুকে নক দেই উত্তর দেয় না আরও যতভাবে সম্ভব সব ভাবেই চেষ্টা করে দেখলাম কিন্তু কোন কাজ হল না । তারও প্রায় মাস খানেক পরে সুমন আমার ফেসবুকে একটা মেসেজ দিয়ে জানালো যে সে তা বোনের কাছে ইউথিউপিয়া চলে গেছে । আর ফেরা হবে না হয়তো !

মেসেজ পাঠানোর পরপরই আমি মেসেজ ব্যক করলাম কিন্তু করতে গিয়ে দেখি ম্যাসেজ যাচ্ছে না । বুঝলাম ও আইডি বন্ধ করে দিয়েছে ।

যাই হোক একটা চিন্তা ছিল সেটা দুর হল । খারাপ যে লাগছিলো না সেটা বলব না কিন্তু ও নিজ থেকেই আমার জীবন থেকে চলে গেছে এটা জেনে একটু শান্তি লাগছিলো । ওকে মানা করে দেওয়া কিংবা ওর সাথে ব্রেকআপ আমি কোন দিন করতে পারতাম কি না সন্দেহ আছে ! এদিকে বাবা মায়ের বিরুদ্ধে কিছু করারও আমার জন্য সম্ভব ছিল না । সামনে গিয়ে একটা ঝামেলা বাধতো । সেই ঝামেলা যে আপনা আপনি দুর হল এটা জেনে ভাল লাগছিলো ।

একভাবে কথা বলে মিতু কিছু সময় থামলো । তারপর আবার বলা শুরু করলো ।
-তার মাস খানেক পরেই আমার একটা বিয়ে আসে । আমার বর্তমান স্বামী জাহিদুর রহমান । আমাকে কোথায় যেন দেখেছে । খোজ খবর নিয়ে আমার বাসায় প্রাস্তাব পাঠিয়েছে । বাবাও রাজি । আসলে ওকে মানা করার মত কিছুই ছিল না । আমাদের বিয়ে হয়ে গেল জলদিই । সমস্যাটা তার পর থেকেই । আমার সব সময় মনে হত কেউ যেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে । প্রথম প্রথম ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিলেও ব্যাপারটা দিন দিন বাড়তে লাগলো । তারপরই একটা অদ্ভুদ ব্যাাপর জানতে পারলাম । সুমনের সেই বড় বোন দেশে এসে কিভাবে জানি আমার খোজ বের করলো । আমার কাছে জানতে চাইলো সুমন কোথায় ? আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । সুমন নাকি কোন দিন ইথিউপিয়া যাই ই নি । তাহলে সুমন গেল কই ? কেউ জানে না । আমি সব দিক দিয়ে খোজ করেই সুমনের খোজ বের করতে পারি নি । আমার বন্ধু আরিফ পুলিশে আছে । ওকে দিয়েও চেষ্টা চালালাম । কিন্তু খোজ খোজ পেলাম না । তারপরই আমার মনে হতে লাগলো যে আমার দিকে কেউ তাকিয়ে থাকে এটার সাথে সুমনের গায়েব হওয়াটার কোন সম্পর্কে আছে কোন ভাবে । আমার মনে হতে লাগলো .....

লাইণটা শেষ করলো না মিতু । রাফায়েল শান্ত কন্ঠে বলল
-আপনার মনে হচ্ছে সুমন আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে ?
কিছুটা সময় চুপ করে থেকে মিতু বলল
-হ্যা । কেন জানি মনে হচ্ছে সুমনের কিছু হয়েছে । আমি জানি না কিন্তু না জেনে আমার শান্তি লাগছে না ।
রাফায়েল বলল
-আপনার মনে হচ্ছে সুমন মারা গেছে এবং সে মরে গিয়ে ভুত হয়ে এসে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে ? রাইট ?

মিতুর আসলে এমনটাই মনে হচ্ছে । কিন্তু সেটা মুখ ফুটে বলল না । রাফায়েল বলল
-দেখুন এভাবে আসলে আমি কাজ করি না । আর এসব তো হয় না । কেউ একবার মারা এসব কাজ করতে পারে না । এটা সম্ভব না ।
-তাহলে আপনি খুজে দিন সুমন কে ?
-আমি পুলিশ না । আমি এসব কাজ করি না । আর কি করবেন সুমনকে খুজে ? সে তো আপনার জীবনের অংশ না এখন । জাহিদ সাহেব আপনার জীবনের অংশ । তাকে নিয়ে থাকুন । অতীত নিয়ে চিন্তা করে কি লাভ ?
-দেখুন.....
-এই ব্যাপারে আমি আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারবো না । আপনি প্লিজ আসুন । আমি মানুষকে বিপদে সাহায্য করি কিংবা করার চেষ্টা করি । আপনি কোন বিপদে নেই ।

মিতু কিছু বলার খুজে পেল না । কেন জানি ওর খুব কান্না পেতে লাগলো । কিন্তু একটা অপরিচিত মানুষের সামনে এভাবে চোখের পানি ফেলতে চাইছে না । উঠে দাড়ালো সাথে সাথে । তারপর দরজা দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল ।




সন্ধ্যা হলেই মিতুর ভয়টা বাড়তে থাকে। জাহিদ আগে বাসায় আসতে একটু দেরি করলেও এখন আর দেরি করে না। সন্ধ্যার আগে আগেই চলে আসে। ও আশে পাসে থাকলে ভয়টা কম হয়। তারপরেও কেউ যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে এই অনুভুতিটা ঠিকই হয়।
তবে আজকে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো তেমন কিছুই মননে হচ্ছে না। একটু যেন শান্তি শান্তি লাগছে নিজের কাছেই। কারন টা ঠিক বুঝতে পারছে না ও। এমন কি জাহিদও ওর পাশে নেই আজ। তবুও ওর ভয় লাগছে না।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাতটা পার হয়ে গেছে। জাহিদের এতো সময়ে চলে আসার কথা। আসছে না কেন কে জানে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফোন দিতে যাবে তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো।
নিশ্চয় জাহিদ চলে এসেছে। আর অপেক্ষা করলো না সে। একটু যেন দ্রুত পায়েই দরজার দিকে এগোলো। যদিও দরজা খোলার জন্য কাজের লোক আছে কিন্তু দরজাটা ও নিজেই খুলতে চায়।

কিন্তু দরজা খুলে খানিকটা ধাক্কার মত খেল। জাহিদ আসে নি। রাফায়েল নামের মানুষটা দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। তখনই ওর মনে হল আজকে ওর ভয় না লাগার কারনটা কোন না কোন ভাবে এই মানুষটার সাথে সম্পর্কিত। মিতু হাসি মুখে বলল
-ভেতরে আসতে বলবেন না?
-আসুন।
নিজের দরজা ছেড়ে দাড়ালো। পেছনে তাকিয়ে দেখলো বাসার কাজের লোকটা এসে দাড়িয়েছে। অপরিচিত মানুষ খুব একটা আসে না এই বাড়িতে। আজকে আসতে দেখে অবাক হয়েছে একটু। কিন্তু মিতু নিজে যেখানে ঘরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে সেখানে কাজের লোকের কিছুই বলার নেই।
রাফায়েল সোফার উপর বসতে বসতে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। যেন কিছু খুজতেছে। মিতু সেটা লক্ষ্য করে বলল
-কি খুজছেন?
-কিছু না। আজকে আপনি ভাল আছেন তো?
মিতু কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-আপনি জানেন উত্তরটা। তাই না?
-হ্যা। আজকে আপনার ভয় লাগছে না। মনে হচ্ছে না যে কেউ আপনার দিকে লক্ষ্য রাখছে। তাই না?
-হ্যা। আপনি চলে যাওয়ার সাথে সাথে কি এটা বন্ধ হয়ে যাবে মানে আবার কি সেই অনুভুতি গুলো ফিরে আসবে?
-আপনি যদি চান তবে সেটা ফিরে আসবে না। সেই ব্যবস্থা আমি করতে পারি। তবে আমার মনে হচ্ছে আপনার এ টা না চাওয়াই ভাল।
-মানে? ঠিক বুঝলাম না।
-আমি যতদুর খোজ করে জানতে পেরেছি সেটা হল আপনার ধারনা ঠিক। সুমন আর বেঁচে নেই।

লাইনটা শোনার পরেই মিতু শোফার উপর বসে পড়লো। একটা তীব্র হাহাকার বোধ জেগে উঠলো ওর ভেতরে। সুমন যখন ওকে মেসেজটা পাঠিয়েছিল তখনই ওর ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না। ওর কেবল মনে হয়েছে যে সুমন ওকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারে না। এই জগতে সুমন যদি কাউকে ভালবাসতো তাহলে সেটা ছিল মিতু।

রাফায়েল বলল
-এবং তার এই মৃত্যুটা স্বাভাবিক হয় নি।
-কেন?
-ওকে কেউ মেরে ফেলেছে ।
মিতু যেন ঠিক বুঝতে পারলো না কথাটা । বলল
-ওতো কারো ক্ষতি করার ছেলে ছিল না। কারো সাথেও ছিল না পাছেও ছিল না।
-সেটা আমি বলতে পারছি না। তবে আমি চাইলে এই ব্যবস্থা করতে পারি যে ও আর আপনার কাছে আসতে পারবে না।
-আর ওর কি হবে?
-কি আর হবে! এমনিতেও মারাই গেছে ও। আর কিছু করার নেই আমাদের ।
-কিন্তু ওকে কে মারলো ? এটা তো জানতে পারেন আপনি ?
-আমি কিছুই পারি না । আমি কারো সাথে ঠিক যোগাযোগ করতে পারি না । তবে আমি এটা ব্যবস্থা করতে পারি যে সে আপনার সাথে এসে কথা বলবে । এখানে যেহেতু আপনার মনে হচ্ছে যে সে আপনাকে দেখছে এখানে ব্যাপারটা বেশ সহজ হবে !
-তাহলে তাই করুন !
-কি দরকার বলুন ? আপনি জানতে চেয়েছিলেন যে সুমনের কিছু হয়েছে কি না ? আমি বললাম তার সাথে কি হয়েছ । সে মারা পরেছে । এরপর থেকে এমন ব্যবস্থা করবো যে সুমন আর আপনার ধারে কাছে আসবে না । যে অনুভুতিটা আপনার হচ্ছিলো সেটা হবে না । ব্যাস !
-কিন্তু একটা মানুষ এভাবে মারা যাবে, কেউ মেরে ফেলবে সেটার বিচার হবে না ?

রাফায়েল অনেকটা সময় কোন কথা বলল না । মিতুর মুখের দিকেই তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-কিছু সত্য না জানাই ভাল । কিছু সত্য জানতে নেই ।
-কিন্তু আমি জানতে চাই ।
রাফায়েল মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি আজকে আসি ! ভাল থাকবেন !

মিতুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাফায়েল উঠে চলে গেল । মিতু কেবল অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । বারবার সুমনের চেহরাটার কথা মনে হচ্ছে । চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করেছে একভাবে ।
-এই ! মিতু !

মিতু চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে জাহিদ অফিস থেকে ফিরে এসেছে । ওর চোখে পানি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । ব্যাগটা সোফার উপর রেখেই ওর পাশেই বসলো । তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে বলল
-কি হয়েছে ? ভয় পেয়েছো ? আই এম সো সরি ! এমন ভাবে বস আটকে দিলো যে সময় মত বেরই হতে পারলাম না । আই এম সরি !

মিতুর কান্নার বেগ যেন আরও দ্রুত বাড়লো । জাহিদকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর হু হু করে কাঁদতে লাগলো । জাহিদের বড় অস্থির লাগা শুরু হল । কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না । সে সব কিছু স হ্য করতে পারে কিন্তু মিতুর চোখের পানি সহ্য করতে পারে না ।
বারবার জানতে চাইলো কি হয়েছে । কেন কাঁদছে ? কিন্তু মিতু কোন কথার জবাব না দিয়ে কেঁদেই চলেছে !
তারপর হঠাৎই মিতু ফোঁফাতে ফোঁফাতে বলল
-আমি তোমার কাছে একটা কথা লুকিয়েছি !
জাহিদ মিতুর চেহরাটা ওর মুখের কাছে এনে কপালে একটা ছোট্ট চুমু খেল । তারপর বলল
-তুমি আমার কাছে যে কথাই লুকাও না কেন তাতে কি যায় আসে না ! ঠিক আছে ? তুমি আগে কান্না বন্ধ কর প্লিজ ! প্লিজ !





মিতুর নিজের কাছে কেমন অপরাধীর মত মনে হচ্ছে । তবে সেই সাথে একটা প্রশান্তির অনুভুতিও হচ্ছে । জাহিদের কাছ থেকে সুমনের ব্যাপারটা সে লুকিয়েছিল । মাঝে মাঝে ওর সুমনের কথা মনে হত । ওকে ফেলে এভাবে চলে যাওয়াটা ওর কাছে ঠিক মনে হয় হয় নি । শত বার নিজেকে বলুক যে সুমন এভাবে নিজে নিজে গায়েব হয়ে গিয়ে ওর জন্য ভালই হয়ে তবুও নিজেই জানে যে কথাটা সত্যি । সুমন ওর জীবনের প্রথম প্রেম ছিল । এভাবে চলে যাওয়াটাটা ও ঠিক মেনে নিতে পারে নি ।

মাঝে মাঝেই ওর মন খারাপ হত । তবে জাহিদকে পেয়ে ও নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে । জাহিদ ওকে প্রাণ দিয়ে ভাল বাসে । সেটা ও খুব ভাল করেই জানে । তাই অতীতটা লুকিয়েছিলো বলে মনের মাঝে খানিকটা অপরাধ বোধ কাজ করছিলো । কালকে বলতে পেরে ভাল লাগছে । জাহিদ তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি । কেবল বলেছিলো যে অতীতে যা হয়েছে তা হয়েছে । অতীত নিয়ে ওর কোন মাথা ব্যাথা নেই । তবে জাহিদ যে মন খারাপ করেছে সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছিলো । তাই অপরাধবোধ কাজ করছে । যদি কথাটা বিয়ের পরপরই বলে দিত তাহলে তাহলে এমন হত হত না হয়তো ।

যাক যা হবার হয়েছে এখন আর অন্য কিছু চিন্তা করে লাভ নেই । রাফায়েল নামের ছেলেটা আসলেই ঠিক বলেছে । ওর জীবন এখন জাহিদের সাথে যুক্ত । এখানে সুমনের কোন স্থান নেই । ওকে ভুলে যেতে হবে । যদি রাফায়েলের কথা ঠিক হয়ে থাকে এবং সে যদি মারা গিয়েই থাকে তাহলে যাক । সেটা ওর ভুলেই যাওয়াই ভাল ।

তারপর কয়েকদিন কেটে গেল । মিতু একটা ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো আসলেই সেই অনুভতিটা আর হচ্ছে না । কেউ ওর দিকে নজর রাখছে কিংবা ওর ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা মনে হচ্ছে না । একা থাকাতে ভয় পাচ্ছে না আর । আর এদিকে জাহিদের ভালবাসার পরিমানটা যেন দিন দিন বাড়ছেই । বিশেষ করে ঐ দিনে সব কিছু বলার পরেই জাহিদ যেন ওর দিকে আরও ভাল করে ভালবাসছে । মিতুর ভালই লাগছে ।
কিন্তু সব কিছুর পরেও মনে হচ্ছে কিছু যেন একটা ঠিক নেই । ভয় না থাকলেও যখনই একা থাকে তখনই সুমনের চেহরাটা ওর সামনে চলে আসে । জোর করে চিন্তাটা দুর করে দিতে চাইলেও সেটা ঠিক চলে আসে । যেন কেমন করুন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । যেন বলছে ওকে খুজে বের করতে । ওর কি হয়েছে সেটা জানতে বলছে !

ভয় আর না পেলেও মনের ভেতরে একটু অস্বস্থি থেকেই গেল । মনের ভেতরে লুকানো কোন ইচ্ছে যেন বারবার বলতে চাইছে যে একটু খোজ বের করতে যে সুমন কিভাবে মারা গেছে । কে মেরেছে ওকে কিন্তু সেটাকে জোর করে দুরে সরিয়ে দিতে চাইছে মনের অন্য অংশটা । বারবার মনকে বলে বোঝাতে চাচ্ছে যে সুমনকে নিয়ে ভাবনার কোন কারন নেই । যদিও সত্যিই মারা গিয়ে থাকে তাহলে সেটা ও কিভাবে খুজে বের করবে ? যেখানে ওর পুলিশ বন্ধুটা সুমনের কোন খোজ বের করতে পারে নি সেখানে ও কিভাবে করবে ?
কিন্তু মনের ভেতরের অস্বস্তিটা গেল না কিছুতেই ।

একদিন জাহিদকে বলে দিল সব । ওর ভয় পাওয়াটার কথা জাহিদ জানতো । কিন্তু সুমনের কারনেই যে ও ভয় পেত কিংবা ওর নিজের মনে হয়েছে সুমন ওর দিকে তাকিয়ে থাকতো এই ব্যাপারটা ও কোন দিন বলে নি । তারপর আরিফের মাধ্যমে কিভাবে ও রাফায়েলের কাছে গেল । সেখান থেকে সুমনের মারা যাওয়ার খোজ পেল সব কিছু বলল । সব শুনে জাহিদ খুব জোরে হাসতে লাগলো । এই আধুনিক যুগেও এসেও যে ও এমন একটা ব্যাপারে বিশ্বাস করতে দেখে ওকে নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো । কিন্তু যখন মিতু মুখ গোমড়া করে বসে রইলো তখন নিজেই বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে । তোমার ঐ প্রাক্তন বন্ধু কোথায় আছে আদৌ মারা গেছে কিনা এসব জানতে হলে কি করতে হবে বল । আমি চাই না তুমি কোন কিছু চিন্তিত হও । আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবো । পুলিশকে কাজে লাগাবো ?
মিতু বলল
-আমি তো চেষ্টা করেছিলাম । কাজ হয় নি ।
-তাহলে কি করতে চাও ? ঐ ওঝার কাছে যেতে চাও আবার ?
-যাবে ?
মিতুর আশা নিয়ে জাহিদের দিকে তাকালো ।
-চল না প্লিজ ! আরিফ আমাকে বলেছে ছেলেটা নাকি ওদের বেশ কয়েকটা কেসে সাহায্য করেছে ।
-পুলিশ আবার ওঝার কাছ থেকে সাহায্য নিতে শুরু করলো কবে থেকে ? দেখ এসবে আমার একদম বিশ্বাস নেই । আর আমি চাই তুমিও এসবের মধ্যে পড় না । আমি অন্য ভাবে চেষ্টা করি । পুলিশের ওপরের মহলে খোজ লাগাচ্ছি না । দেখা যাক খোজ পাওয়া যায় নাকি !

মিতু কিছু বলতে গিয়েও বলল না । আর চাপও দিলনা । বেশি আগ্রহ দেখাতে গেলে হয়তো জাহিদ কষ্ট পাবে । বলল যে ও যেমন ভাবে পারে চেষ্টা করুক ।

কয়েকদিন পরেই জাহিদ একটা কাগজ এনে ওকে দিল । একটা ফ্লাইটের প্যাজেঞ্জার লিস্ট ! সেখানে সুমনের নাম দেখতে পেল । তারিখটা দেখলো বছর খানেক পুরানো । জাহিদ কাগজটা বলল
-এই দেখো, তোমার ঐ বন্ধু আসলেই বাইরে গেছিলো । এখান থেকে দক্ষিন আফ্রিকার ফ্লাইটে সে চড়ে বসেছিলো । তার প্রমান । আর ফিরে আসে নি । আর তোমার ঐ ওঝা বলে কি না সে মারা গেছে ! সে তোমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে । বুঝেছো ?

মিতু চুপ করে তাকিয়ে রইলো । কিছু বলল না । নিজের কাছেই মনে হল ও আসলেই বোকা । একটা বদমাইশের কথা বিশ্বাস করে আছে । কিন্তু ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা আর নেই কেন !



পরদিন সকালে জাহিদ অফিস যাওয়ার পরপরই মিতু বের হয়ে গেল । সোজা হাজির হল পুরান ঢাকার সেই বাড়ির সামনে । কোন কিছু না ভেবে ভেতরে ঢুকে পরে । ভেতরে ঢুকেই দেখে ঠিক সামনেই রাফায়েলকে দেখতে পেল । সোফার উপর বসে আছে । মিতুর মনে হল যেন রাফায়েল যেন ওর জন্য অপেক্ষা করে আছে । যেন ও জানতোই যে মিতু এখন আসবে ! মিতু সরাসরি রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি আমাকে মিথ্যা কেন বললেন ?
মুখে হাসিহাসি নিয়ে বলল
-আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি মিথ্যা বলছি ? আর আপনাকে মিথ্যে বলে আমার লাভ কি ?
মিতু কোন জুতসই জবাব পেল না । মিতুর কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেয় নি । এমন কি চায়ও নি । মিতুকে সে চিনেও না । তাকে মিথ্যে বলার কোন কারন নেই ।
-তাহলে এটা কি ?
-আপনিি ভাল জানেন ।

মিতু কি বলবে খুজেই পেল না । কেন যে এখানে এল সেটাও জানে না । মিরাহ হঠাৎ বলল
-আমি ঠিক জানি না যে সে কোথায় গেছে । দেশে নাকি বিদেশে তবে তবে সে যে আর বেঁচে নেই এটা নিশ্চিত । আমি বুঝতে পারি ।
-আপনি মিথ্যা বলছেন ।
-আপনি যা মনে করেন । আমি আপনার ভুল ভাঙ্গাবো না । আর আমি তো বলেছিই আপনি সুমন সাহেবকে জীবন থেকে বের করে দিন । তাকে স্থান দিয়েন না ।
-কিন্তু ...... কিন্তু .....
-কিন্তু কি ?
মিতু আরও কিছুটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-কিন্তু মনে হচ্ছে যেন কিছু একটা যেন ঠিক নেই । আমি আসলে জানতে চাই সুমনের সাথে কি হয়েছিল । যে কোন ভাবেই জানতে চাই ! আমি জানি না আপনি যা বলেছেন কিভাবে বলেছেন কেমন জানে সেটা কিন্তু আপনি জানেন তাকে কে মেরেছে কিভাবে সে মারা গেছে ? আমি জানতে চাই ।

কথা গুলো এক সাথে বলতে গিয়ে যেন মিতু হাফিয়ে উঠলো । হাপাতে লাগলো কথা গুলো বলা শেষ করে । রাফায়েল বলল
-ওয়েল ! আপনি যদি চান তাহলে আমি এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি !
-কিভাবে ?
-আসুন ! তবে এর পরের ঘটনার জন্য কিন্তু আমি দায়ী থাকবো না ।
-দিব না ।
-আচ্ছা । আসুন তাহলে !

আর কোন অপেক্ষা না করে রাফায়েল হাটতে লাগলো । মিতু চিশ্চুপ ভাবে তাকে অনুসরন করতে শুরু করলো । কয়কেটা ঘর পার করেই একটা দরজা খুলে ফেলল রাফায়েল । দরজাটা নিচে বেজমেন্টে চলে গেছে । রাফায়েল ওর দিকে পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল
-ভয় পাবেন না । আসুন !
কিন্তু মিতুর একটু একটু ভ পেতে শুরু করলো । নিচের ঘরটা বেশ ঠান্ডা । ঘরের ঠিক মাঝখানে আগুন জ্বলছে । সেটা ঘরের ভেতরে অন্য রকম আলো ছড়িয়ে রেখেছে । রাফায়েল কোন কথা না বলে আগুনের ঠিক একটা জাগয়াতে মিতুকে বসতে ইঙ্গিত করলো । মিতু কোন কথা বলে চুপ করে বসে রইলো । রাফায়েল বসলো ঠিক তার উল্টো দিকে । দুজনের মাঝে ঠিক আগুনটা । রাফায়েল বলল
-নিজেকে শান্ত করে রাখুন । কেবল নিজের ভেতরেই ফোকাস করতে থাকুন চোখ বন্ধ করে । আর যাই ঘটকু না কেন ভয় পাবেন না । নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন । ঠিক আছে ?

মিতু কোন কথা বলল না । চোখ বন্ধ করে ফেলল । সেই সাথে সাথে রাফায়েলের কন্ঠ ভেসে এল । বিড়বিড় করে সে যেন কি বলছে । অচেনা একটা ভাষা । তার একটু পরেই অনুভব করল ওর আস্তে আস্তে একটু শীত শীত করছে । ঘরের পরিবেশটাও যেন কেমন একটু ভারী হয়ে গেছে । মিতু চোখ বন্ধ করেই রইলো ।

মিতু কতটা সময় চোখ বন্ধ করে ছিল সেটা ও জানে না যখন চোখ খুললো নিজেকে কেমন যেন একটু হালকা হালকা লাগলো । চারিদিকটা কেমন যেন একটু ধোয়া আর অন্ধকার অন্ধকার মনে হতে লাগলো । সে একটু ঘরতে যাবে ঠিক সেই সময়ই একটা বড় রকমের ধাক্কা খেল । তাকিয়ে দেখলো আগুনের পাশে এখনও রাফায়েল বসে আছে । তবে সে আর কিছু বলছে না । ঠোঁট নড়ছে না তার । ঠিক আগুনের উল্টো দিকে স্বয়ং মিতু বসে আছে চোখ বন্ধ করে ।
তাহলে ও কে !
ও যদি বসে থাকে ওখানে তাহলে নিজকে ও দেখছে কিভাবে ? নিজের ভেতরেই একটা অস্থির বোধ করতে শুরু করলো । সঠিক ভাবে চিন্তা করতে পারছে না যেন । তখনই রাফায়েলের কথাটা মনে পড়লো ওর ! যাই ঘটুক না কেন নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে । কিন্তু কিভাবে ? মিতু আবার নিজের চোখ বন্ধ করলো ।
ফোকাস !
নিজের উপর ফোকাস কর !
নিজেকে বোঝালো ও !


যখন চোখ মেলে তাকালো তখন অনেকটাই নিজেকে শান্ত মনে হল । যদিও ওর ধারনা নেই ও কোথায় আছে । তবে ও ওর নিজের আসল দেহের ভেতরে নেই । অন্য কোথাও আছে ?
কিন্তু কোথায় ?

এমন প্রশ্ন মনে আসার সাথে সাথেই একজনের আওয়াজ শুনতে পেল !
-তুমি এখন আমার জগতে আছো !

তাৎক্ষণিক ঘুরে তাকালো ।
সুমন !

ওর থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে আছে । সেই গভীর চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । সুমন আস্তে আস্তে ওর কাছে এগিয়ে এল । তারপর ওকে জড়িয়ে ধরলো । নিজেকে যে সরিয়ে নিবে সুমনের কাছ থেকে সেটা ও করতে পারলো না ।

-কেমন আছো তুমি ?
একটা সময় মিতুই জানতে চাইলো !
সুমন খানিকটা শুকনো হাসি হেসে বলল
-জীবিত থাকলে বলতে পারতাম কেমন আছি । এখানে থাকার মধ্যে কোন ভাল মন্দ নেই । থাকতে হয় তাই আছি ।
মিতু কি বলবে খুজে পেল না । সুমন বলল
-আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি । অনেক । যদি তোমাকে এখানে রাখতে পারতাম ! কিন্তু এটা সম্ভব না । আমি নিজেই এখানে থাকতে পারবো না ।
-এটা কোন জায়গা ? কি বলছো এসব ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ।
-কিছু বুঝতে হবে না । কেবল জেনে রাখো যে এটা কেবল একটা ট্রানজিট পয়েন্ট ! এখানে সবার বসবাস অস্থায়ী ! তোমার হাতেও খুব বেশি সময় নেই । তোমাকেও তোমার জগতে ফিরে যেতে হবে আর আমাকেও । আমি যে কারনে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করেছি সেটা বলি !
-বল ! আমিও সেটা শোনার জন্যই অস্থির হয়ে আছি । তুমি কিভাবে মারা গেলে ?
-বললে বিশ্বাস করবে ?
-কেন করবো না ? বল !
সুমন কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল
-আমাকে যখন মেরে ফেলা হয় তখনও আমি ঠিক বুঝতেই পারি নি আমাকে কেন মেরে ফেলা হল । আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তাদের দিকে । যাদের কে চিনি না জানি না তারা আমাকে কেন মেরে ফেলছে !
মিতু চুপ করে কেবল তাকিয়ে থাকলো সুমনের দিকে । সুমন বলেই চলেছে ।
-আমি হয়তো কোনদিন তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করতাম না কিন্তু যখন .......
-যখন ? যখন কি ?

সুমন খানিকটা ইতস্তত করে তাকালো মিতুর দিকে । তারপর বলল
-যখন দেখলাম আমার খুনির সাথেই তোমার বিয়ে হচ্ছে তখন নিজেকে আর আটকাতে পারি নি । তীব্র একটা আক্রোশ আমাকে পেয়ে বসলো কিন্তু দেখো আমার কিছু করারও নেই । কেবল চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া !
মিতু অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইলো সুমনের দিকে । জাহিদ ওকে খুন করেছে ?
না । এটা হতে পারে না কিছুতেই ।
সুমন বলল
-পরে বুঝতে পেরেছি যে জাহিদ আমাকে খুনই করেছে তোমাকে পাওয়ার জন্য । আর কোন শত্রুতা ছিল না ওর সাথে আমার ।
-না । তুমি মিথ্যা বলছো ।
-মৃত মানুষ মিথ্যা বলে না । তবুও তোমাকে দেখাচ্ছি আমি নিজের চোখেই ।
এই বলেই সুমন ওর কপালে আঙ্গুল ছোয়ালো । সাথে সাথেই মিতু একটা ধাক্কা খেল যেন । একেবারে অন্য কোথাও গিয়ে হাজির হল । চোখ মেলে দেখে বাইরে তীব্র বৃষ্টি হচ্ছে । জাগয়াটা ঠিক চিনতে পারলো না । একটা বড় ব্রিজের পাশে দাড়িয়ে আছে ওরা । ব্রিজটার ঠিক পাশেই একটা বড় বট গাছ । জায়গাটা এমনিতেও নির্জন আর বৃষ্টির কারনে মানুষের কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না । রাত হয়ে গেছে । ব্রিজের একটা পিলারের সাথে লাগানো একটা সোডিয়াম বাতি জ্বলছে । সেটা দিয়েই জায়গাটা একটু আলোকিত করে রেখেছে । আর চারিদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না ।
হঠাৎ ই একটা কালো রংয়ের মাইক্রবাস এসে থামলো । সেখান থেকে দরজা খুলে চারজন মানুষ নামলো । পেছনে চলে গেল তারা দ্রুত । তারপর সেখান থেকে আরও একজনকে নিয়ে এল বাইরে । মানুষটা ঠিক মত হাটতে পারছে না । মাথা থেকে একটা রক্তের ধারা ঠিকই বের হয়ে আসছে । এই তীব্র পানিতে সেটা ভিজে গেলেও রক্ত আর পানির ধারাটা আলাদা করে চিনতে পারলো মিতু । এই মৃদু আলোতেও মোটেই চিনতে কষ্ট হল না যে সেই টেনে নিয়ে আসা মানুষটা সুমন । তাকে টেনে নিয়ে চলল বট গাছের পেছনের দিকে । মিতু আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল. তার এগোনোর কোন আওয়াজ হচ্ছে না । মিতু বুঝতে পারলো যে লোকগুলো তাকে দেখতে পারছে না ।
হঠাৎই সুমনের আওয়াহ কানে এল । সুমন লোকগুলোকে বলার চেষ্টা করছে যে কোথাও ভুল হচ্ছে । তারা হয়তো তাকে ভুল করে নিয়ে এসেছে । মিতুর চোখ দিয়ে কেবল পানি পড়তে লাগলো । ওরা যে এখনই সুমনকে মেরে ফেলবে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না ।
কিন্তু এদের সাথে জাহিদের তো কোন সম্পর্ক নেই । ওরা যে কেউ হতে পারে । হয়তো ভুল করেও সুমনকে তুলে এনেছে ।
মিতু আর দেখতে চাইলো না । সে দেখতে চায় না ।
সে আবারও ব্রীজের দিকে উঠে আসতে লাগলো । ঠিক সেই সময়েই ব্রীজের কাছে আগের গাড়িটার কাছে আরেকটা গাড়ি এসে থামলো । গাড়িটা থামতে থেকেই মিতুর বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো যেন । গাড়িটা সে ভাল করেই চেনে ।

মনে প্রাণে আশা করলো গাড়ি থেকে যে জাহিদ না নামে । অন্য কেউ যেন নামে । কিন্তু গাড়ির দরজা খুলে জাহিদই নেমে পড়লো । ওরা জড়ানো রেইন কোট টাও চিনতে অসুবিধা হল না । জাহিদ এখনও এই রেইনকোট টাই ব্যবহার করে । ওকে ঠিক পাশ কাটিয়ে জাহিদ এগিয়ে গেল বট গাছের দিকে । মিতু আর আর কিছু দেখতে চাইলো না । দৌড়াতে লাগলো । ব্রীজের ঠিক মাঝখানে আসতেই একটা গুলির আওয়াজ শুনতে পেল সে । থমকে দাড়ালো মিতু । সেই সাথে ওর সাথে যেন থমকে গেছে সব কিছু ।

যাকে সে ভালবাসতো সেই মানুষটা কে মেরে ফেলা হয়েছে । আর যাকে সে এখন ভালবাসে সেই মানুষটাই হচ্ছে খুনি । মিতুর পুরো পৃথিবীটাই যেন নড়ে উঠলো ! ব্রীজের উপর হাটু গেড়ে বসে পড়লো সে । চিৎকার করে কাঁদতে চাইলো কিন্তু কেন যেন কাঁদতে পারছিলো না । একটু পরেই ওর কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেল । মিতু ভেবেছিলো হয়তো সুমনকে দেখতে পাবে । কিন্তু তাকিয়ে দেখে সেখানে রাফায়েল দাড়িয়ে । ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি বলেছিলাম এটা আপনার জন্য ভাল নাও হতে পারে ।
মিতু কেবল শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রাফায়েলের দিকে । রাফায়েল বলল
-চলুন আমাদের যাওয়ার সময় এসেছে !





রাতের খাবার টেবিলই মিতু কথাটা জানতে চাইলো জাহিদের কাছে । জাহিদ তখন সবে মাত্র খাবার মুখে দিয়েছে । মিতু খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
-তুমি সুমনকে খুন করেছো তাই না ?
জাহিদের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল । কিছুটা সময় অবাক হয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল
-কিকককি বলছো এসব ?
-জাহিদ । সত্য কথা বল । আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল যে তুমি সুমনকে খুন করো নি !

জাহিদ কোন কথা না বলে কেবল মিতুর দিকে তাকালো কিছুটা সময় । তারপর মাথাটা নিচু করে ফেলল । মিতু বলল
-বট গাছের পেছনে নিয়ে গিয়ে গুলিটা কি তুমি করেছিলে ? নাকি তোমার লোকজন ?
জাহিদ অনেকটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-আমি গুলি করি নি । ওরা করেছিলো ।
-ওর সাথে কি শত্রুতা ছিল ? এমন কি ছিল যে ওকেই মেরে ফেলতে হল ? কারনটা কি আমি ? আমাকে পাওয়ার জন্য ওকে মেরেছিলে !

জাহিদ ওর দিকে ফিরে তাকালো । জাহিদের চোখের দৃষ্টিতেই সেই উত্তর ছিল ।


জাহিদ মিতুকে অনেক কথা বলতে চাইলো কিন্তু কেন জানি একটা কথাও বলতে পারলো না । এতোদিন জাহিদ মিতুর চোখে যে ভালবাসা দেখতো আজকে সেখানে তার জন্য ঘৃনা দেখছে । জাহিদ ওকে বলতে চাইলো ওকে ভালবাসে বলেই ওর পাশে আর কাউকে সহ্য হত না । কাউকে দেখতে চাইতো না । বন্ধুর বিয়েতে যখন ওকে প্রথম দেখে সেদিন থেকে দিন রাত মিতু ছাড়া ওর জীবনে আর কিছু ছিল না । ওর ঘুম আসতো না রাতে । সারাটা দিন কেবল মিতুর কথা ভাবতো ।

খুব বেশি সময় লাগে নি মিতুর সম্পর্কে খোজ খবোর বের করতে । তখনই সুমনের সম্পর্কে জানতে পারে ও । সেদিন এক তীব্র রাগ অনুভব করে সুমনের উপর । বারবার মনে হতে থাকে সুমনের ছেলেটা তার মিতুর উপর অবৈধ অধিকার আদায়ের চেষ্টা করছে । যাকে চেনে না জানে জানে না তার উপর এমন রাগ উঠতে দেখে জাহিদ নিজেই অবাক হয়ে গেল । সেই সাথে এও বুঝতে পারলো যে মিতুকে ছাড়া ওর জীবন চলবে না কোন ভাবেই । আর ওকে পাওয়ার জন্য সামনে যা আসবে যে আসবে সব কিছু সরিয়ে দিতেও ও ইতস্তবোধ করবে না ।

কিন্তু আজকে সেই মিতুর চোখেই ওর জন্য ঘৃণা দেখে জাহিদের পুরো পৃথিবীটাই যেন নড়ে উঠলো । কেবল মনে হল ও ওর বেঁচে থাকার আর কোন অর্থ নেই ।



পরিশিষ্টঃ

-মিতু কই তুই ?
মিতু সারাদিন শুয়েই ছিল । কালকে জাহিদের সাথে ঐ কথা বলার পর থেকে সেই যে এসে শুয়েছে আর ওঠে নি । সকাল বেলা কখন জাহিদ অফিস ছেলে সেটাও সে জানে না । কি করবে কিভাবে জাহিদের সাথে একই ছাদের নিচে থাকবে সেটা মিতু আর ভাবতে পারছে না । তবে এটা ঠিক যে জাহিদের সাথে আর এক ঘরে তার সংসার করা হবে না !
দুপুরের দিকে আরিফের ফোন পেয়ে একটু অবাক হল । বলল
-কেন কি হয়েছে ?
-তোর জামাই এসেছে আমাদের থানায় । এএসপি স্যারের রুমে বসে আছে ।
-মানে ? ওখানে কেন ?
-তুই যাকে খুজতেছি সেই সুমনের ব্যাপারে অনেক তথ্য দিয়েছে । আসলে খুনটা লোক লাগিয়ে ঐ করিয়েছে । সেই কনফেস করতে এসেছে !
-ও !
-তুই জানতি ?
-হ্যা । গতকালকে জেনেছি !

ফোন রেখে দিল । ওর মন ভাল হওয়ার কথা । যদিও ও হয়তো কোনদিনই পুলিশের কাছে গিয়ে জাহিদের নামে কিছুই বলতে পারতো না । সুমন হয়তো কোন দিন সুবিচারও পেত না । জাহিদ নিজ থেকেই ধরা দিল কেন সেটা মিতু হয়তো বুঝতে পারছে ।
রাফায়েল সাহেব ঠিকই বলেছিলো । সব সত্য জানতে হয় না । এই সত্যটা না জানলে আজকে ওর জীবনটা কত চমৎকার হত । এভাবে মুহুর্তের ভেতরে সব কিছু ধ্বংশ হয়ে যেত না !


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:০১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×