somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতি-প্রাকৃত গল্পঃ আগমন

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কতটা সময় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম আমি নিজেই বলতে পারবো না । হঠাৎ করেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । একটু যেন শীত শীত করছে । নভেম্বরের শুরুতে শীত পরে যাওয়ার কথা কিন্তু ঢাকা শহরের যে কখন শীত আসবে সেটা কেউ বলতে পারবে না ।
চোখ মেলার সাথে সাথেই যে কথাটা সবার আগে মনে হল সেটা হল, ঘর অন্ধকার কেন ? আমিতো কখনও লাইট অফ করি না । আর একটা ডিম লাইট তো অন্তত জ্বালানো থাকেই । তাহলে পুরোপুরি অফ কেন হল ? ঘরের সব লাইট অফ দেখে আসলেই একটু অবাক হলাম । চোখ যখন দরজার দিকে দিবো তখনই চোখ গেল তখনই একটু চমকে উঠলাম ।

প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আমার বই পড়ার অভ্যাস রয়েছে । সেই পড়তে পড়তেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি আমি বলতে পারবো না । অন্য দিন সুপ্তি টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে দেয় । কিন্তু আজকে ও বাসাতে নেই । তাই কেউ লাইট অফ করবে না । সেই হিসাবে লাইট বন্ধ হওয়ার কথা না । কিন্তু লাইটটা বন্ধ, এমন কি ডিম লাইটও জ্বলছে না ।

এসব চিন্তাই আমার মাথার ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে দরজার পাশের মুর্তিটার দিকে তাকিয়ে । ঠিক সেই সময় মুর্তিটা উঠে দাড়ালো । তখনই আমি ওকে চিনতে পারলাম ।
সুপ্তি !
আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি আরও অবাক হয়ে গেলাম । ওর তো আজকে ফিরে আসার কথা না । ওর অফিসে নাকি আজকে প্রচুর কাজ । পুরো টিম আজকে অফিসেই থাকবে । কালকেই নাকি টেন্ডার সাবমিট করার শেষ দিন ।
সুপ্তি কাছে আসতেই আমি বললাম
-কি ব্যাপার কখন এলে ?

সুপ্তি কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । কোন কথা বলল না । আমি অন্ধকারে ওর চেহারা ঠিক মত দেখতেও পাচ্ছি না । তবে ও যে আমার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হল না ।
ওর কি কোন কারনে মন খারাপ ? অফিসে কোন ঝামেলা হয়েছে ? আমি আবার বললাম
-কি হয়েছে ? কথা বলছো না কেন ?
সুপ্তি একটু শান্ত কন্ঠে বলল
-ভাল লাগছে না । তুমি শুয়ে ছিলে তাই আর ডাকি নি !
-সমস্যা নেই । তাই তুমি খেয়েছো কিছু ? বললে না যে অফিসে আজকে থাকতে হবে !
-কাজ শেষ হয়ে গেল । তাই চলে এলাম ।
-ও ! তা শুয়ে পড়বে এখন ? নাকি গোসল করবে ?
-নাহ । এতো রাতে আর গোসল করছি না । একটু হাত মুখ ধুয়ে শুবো !
-কিছু খাবে ? রাতে খিচুড়ি রান্না করেছি । গরম করে দেই ?

সুপ্তি হাসলো । তারপর বলল
-তোমার রান্না ? তাহলে আর হয়েছে !
-আমার রান্না মানে ! আজকে একদম ঠিক লবন হয়েছে ! আমি ইন্টারন্যাশনাল রাধুনী !
-হুম ! আমি জানি তো ! থাক তোমার আর কষ্ট করতে হবে না । আমি নিজেই গরম করে নিচ্ছি !

আমি উঠতে যাবো বিছানা থেকে তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো । মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম রাত দেড়টা বেজে গেছে । এতো রাতে আবার কে এল ! আমি সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললাম
-এতো রাতে ?
সুপ্তি বলল
-আচ্ছা আমি দেখছি । তোমাকে উঠতে হবে না ।

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সুপ্তি দ্রুত দরজা খুলে বের হয়ে গেল । আমি চুপ করে বসে রইলাম । কয়েকটা মুহুর্ত কেটে গেল । এতো সময়ে দরজা খুলে ফেলার কথা কিন্তু আমি দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম না । এদিকে কলিংবেলটা বেজেই চলেছে ।

শেষে আমি আর না থাকতে পেরে নিজেই উঠে দাড়ালাম । ঘরের আলো জ্বালিয়ে মাঝের ঘরে এলাম । দেখি সেখানে কেউ নেই । সুপ্তি গেল কোথায় ?
চট করে রান্না ঘরটা দেখলাম !
নেই !
কমন বাথরুমে দেখলাম !
সেখানেও নেই !

আমি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলাম না । সুপ্তি গেল কোথায় !

এদিকে কলিংবেলটা বেজেই চলেছে । আগে তো নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে বাজছিলো এখন ঘনঘন বেজেই চলেছে । আমি তখনও সুপ্তিকে খুজে পাচ্ছি না । কলিংবেলের আওয়াজে আর থাকতে না পেরে আমি দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম । খুলে দিলাম দরজা !
এবং দরজা খুলেই একটা ছোট খাটো ধাক্কার মত খেলাম !

দরজার সামনে সুপ্তি দাড়িয়ে ! আমার দিকে তাকিয়ে আছে বিরক্ত হয়ে ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এতো সময় লাগে ? কত সময় ধরে বেল বাজাচ্ছি !
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় । তারপর বললাম
-তুমি ?
-হ্যা আমি আর কে ?
-তুমি না ছিলে ঘরের ভেতরে !!

সুপ্তি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-অপু কি বলছো এসব ? আমি ঘরের ভেতরে ছিলাম মানে ? আমি মাত্র এলাম অফিস থেকে ।
-কিন্তু ......
আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম । সুপ্তিকে বললে ও কোন দিন বিশ্বাস করবে না । তাহলে কি আমি ভুল দেখেছি । ঘুমিয়ে ছিলাম বলে কোন কিছু ঠিক মত দেখতে পারি নি । কিংবা স্বপ্ন ! আর ঘরের লাইটও বন্ধ ছিলো তাই হয়তো ঘুমিয়েই ছিলাম !

আমি কোন কথা না বলে কেবল ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম এক ভাবে । আমার মাথার ভেতরে কিছুই ঢুকছে না । সুপ্তি বলল
-কি ব্যাপার জনাব আমি আসবো না বলে তুমি আবার তোমার কোন প্রাক্তন প্রেমিকাকে নিয়ে আসো নি তো ? কই দেখি দেখি !

এই বলে সুপ্তি আমার কাটিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো । শোবার ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল
-কিছু কি আছে খাওয়ার জন্য ?
আমার ঘোর তখনও কাটে নি । আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কি হয়েছে ! আমি বললাম
-খিচুড়ি রেধেছি !
-আচ্ছা । একটু গরম করবা প্লিজ ! আমি গোসল দিয়েই খাবো । অফিসে যা ধকল গেছে আজ ! খুব ক্ষুধা লেগেছে ।

আমি সুপ্তিকে আমাদের শোবার ঘরে ঢুকে যেতে দেখলাম । আমি তখনও আগের জায়তেই দাড়িয়ে । চিন্তা শক্তি ঠিক মত কাজ করছে না !

আমার সাথে একটু আগে কি হল ? ঐ আগের সুপ্তি কে ছিল ? নাকি আদৌও ছিল অথবা আমার মনের ভুল ছিল ? আমার আসলেই কোন কিছুই মাথায় আসছে না । এমন কিছু তো হবার কথা না । আমি কি ভুল দেখলাম !

আমি দরজা বন্ধ করতে যাবো তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠলো । মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি নম্বরটা জামানের ! সুপ্তির কলিগ ! এতো রাতে জামানের ফোন ! নিশ্চয় সুপ্তি বাসায় পৌছিয়েছে কিনা সেটা জানতেই ফোন দিয়েছে । আমি রিসিভ করলাম
-হ্যালো ।
-হ্যালো অপু ভাই !
-হ্যা বল জামান !
-অপু ভাই !

আমি জামানের কন্ঠ কেমনে কেমন একটা বিহব্বল ভাব পেলাম । বললাম
-কি হয়েছে ?
-অপু ভাই, সুপ্তি আপু আর নেই !
-মানে !!! কি বলছো এসব ! তোমার মাথা ঠিক আছে তো !
আমি জামানের কান্নার আওয়াজ পেলাম । জামান বলে চলেছে
-আমরা কাজ শেষ করে সবাই বাসায় আসছিলাম এক সাথে । অফিসের মাইক্রোটা আমাদের বাসায় ড্রপ করে দিচ্ছিলো কিন্তু মাঝ পথে একটা ট্রাক এসে আমাদের ধাক্কা মারে । আপু একদম সামনে বসে ছিলো । স্পট ডেড ! আমি এখনও হাসপাতালে ! আমি ....

আমি আর কিছু শুনতে পাচ্ছি না । আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । এমন কিছু হতে পারে নাকি ! সুপ্তি একটু আগেই এখানেই দাড়িয়ে ছিল ।আমাকে কাটিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকলো ও । আর এই জামান বলছে যে সুপ্তি নেই । এমন হতে পারে নাকি !

আমি রোবটের মত আমার শোবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম । বাথরুমের দরজাটা হাট করে খোলা । লাইট জ্বলছে । আমি বাইরে থেকেও বুঝতে পারছি সেখানে কেউ নেই ।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×