somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত বড় গল্পঃ ইমুপ্সা

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




নিকিতা অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে আসলো । অনেক দিন পরে মুক্ত বাতাসে যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছে । দো-তলার সেমিনার লাইব্রেরির সামনে দাড়িয়ে রইলো কিছুটা সময় । আজকে যেন সব কিছু ভাল লাগছে । সেই শেষ কবে এখানে এসেছিল । তারপর থেকেই ঘরে বন্দী । বাবা তাকে কিছুতেই বাইরে বের হতে দিবে না । ঘরের ভেতরেই আটকে রাখবে । অবশ্য বাবাকে দোষ দিয়ে লাভও নেই । তিনি কেবল তার মেয়েকে রক্ষা করতে চাচ্ছেন । প্রথম যেদিন সে খবরটা শুনেছিলো নিজের কাছেই ভয় লাগছিলো ।

এই দেশে আকসার আহমেদের নাম শোনেনি এমন কেউ নেই । দেশের নাম করা সফল ব্যবসায়ী । প্রচুর টাকার মালিক । দেশের ব্যবসা অঙ্গন থেকে শুরু করে রাজনীতি সব জায়গাতে তার দাপট সমান । ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ সবাই তাকে সমীয় করে চলে । নিকিতার বাবাও নাম করা ব্যবসায়ী কিন্তু সেটা আকসার আহমেদের কাছে সেটা কিছুই না ।

কিন্তু এই ক্ষমতাবান লোকটা যখন নিকিতাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো তখন নিকিতার বাবা সাহাবুদ্দিন আহমেদ অবাক না হয়ে পারলো না । লোকটার বয়স নিকিতার প্রায় দ্বিগুণ তাছাড়া তার ব্যবসার সব কিছু সঠিক পথে আসে না । তাই নিকিতার বাবা সোজা মানা করে দিল । প্রথমে ব্যবহার ভাল করে নানান প্রস্তাব দিয়ে নিকিতার বাবাকে রাজি করাতে চেষ্টা করলো । কিন্তু যখন কোন ভাবেই রাজি করানো গেল না তখন আকসার আহমেদ নিকিতার বাবাকে হুমকি দিতে লাগলো । সেই সাথে এও বলতে লাগলো যে নিকিতাকে তার চাই ই চাই । প্রয়োজনে সে তাকে তুলে নিয়ে যাবে ।

সাহাবুদ্দিন তখন থেকেই ভয়ে ভয়ে আছেন । তিনি জানেন আকসার আহমেদের ক্ষমতা কতটুকু । সে যা বলেছে সেটা সে করতে পারবে । তার মেয়েকে সে তুলে নিয়ে যেতে পারবেন । তাই তিনি নিকিতার ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলেন । এই কদিন নিকিতারও বেশ ভয় ভয় করছিলো । বারবার মনে হচ্ছিলো এই বুঝি তাকে কেউ তুলে নিয়ে যাবে ।

তবে দিন যাওয়ার সাথে সাথে সেই ভয়টা অনেক কমে এসেছে । আজকে সকালে একটা পরীক্ষা আছে । সেটা মিস করতে চাইলো না । তাই চলে এল । অবশ্য তার বাবা অনেক প্রস্তুতি নিয়েই তাকে পাঠিয়েছে । তার জন্য নতুন বডিগার্ড ঠিক করা হয়েছে সেই ড্রাইভারের পাশেই বসে ছিল আসার সময় । তার কাছে আবার লাইসেন্স করা পিস্তল আছে । ক্যাম্পাসের ভেতরে পিস্তল নিয়ে ঢোকার নিয়ম নেই । সে বাইরে বাড়িতে বসে আছে । অবশ্য তাদের ক্যাম্পাসটা নিরাপদ । এখান থেকে তাকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না !

তবে নিকিতার ভাবনাতে একটু ভুল ছিল । দোতলার সেমিনামর লাইব্রেরির সামনের বারান্দাতে দাড়িয়ে থাকার সময়ই ওর মনে হল কিছু যেন একটা ঠিক নেই । একটা তীব্র চিৎকার শুনে ওর চোখটা চলে গেল বারান্দার ডান দিকে । সেদিকে তাকিয়ে ওর চোখ বড় বড় ফেলল । একটা টাই পরা লোক ওর দিকে একটা পিস্তল তাক করে আছে । তার চোখ মুখ দেখেই মনে হচ্ছে এখনই লোকটা তাকে গুলি করে দিবে । সেই পিস্তল দেখেই একটা মেয়ে চিৎকার দিয়েছে ।

নিকিতা কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । কিছুই যেন বুঝতে পারছে না । ওর ঠিক বিশ্বাসও হচ্ছে না যে আকসার আহমেদ বিয়েতে রাজি না হওয়ার কারনে তাকে মেরে ফেলতে লোক পাঠাবে । নিকিতার নিজের মায়ের চেহারাটা মনে হল । শেষ বারের মত ইচ্ছে হল মাকে আরেকবার দেখতে পায় !

নিকিতা খুনির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ওর চোখটা খুনির পেছন দিকে গেল । কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীর ভেতরে হঠাৎ করেই একজনকে ওর চোখে পড়ে গেল । যেখানে অন্য সবাই খুনির কাছ থেকে পালাচ্ছে সেখানে একজন খুনির দিকে এগিয়ে আসছে ।

সাদিক !
মেজর সাদিক
ওর বডিগার্ড । গত সপ্তাহে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে । আজকেই ওকে নিয়ে সে প্রথম বের হল ।

আর সময় নেই । খুনি এবার সত্যি সত্যি গুলো করে দিবে ।

কয়েক সেকেন্ড পার হয়েও গেল । নিকিতার মনে হল এবার ওর দিন তাহলে শেষ । তার বডিগার্ডও তাকে বাঁচাতে পারবে না । পিস্তলের গুলির থেকে গতি তো আর কারো বেশি নেই ।

একটা গুলির আওয়াজ হল । নিকিতা চোখ বন্ধ করে ফেলল ।

কয়েকটা মুহুর্ত কেটে গেল । কিন্তু নিকিতা অনুভব করলো তার শরীরে কোন রকম ব্যাথা অনুভব হচ্ছে না ।
তাহলে কি তার গায়ে গুলি লাগে নি ?

চোখ খুলে দেখলো সাদিক ততক্ষনে সেই খুনির কাছে চলে এসেছে । তার হাতে একটা পিস্তল দেখা যাচ্ছে । সেটা দিয়েই গুলি চালিয়েছে সে । আর খুনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে । সাদিক কাছে এসে খুনি তলপেট বরাবর খুব জোরে একটা লাথি মারলো । সেই সাথে সাথেই খুনির হাতে ধরে পিস্তলটা হাত থেকে ছিটকে গেল । সাদিক আর সেদিকে সময় নষ্ট করলো না ।

আবার সেটা তাক করলো নিকিতার বরাবর । কোন কথা না বলে চেপে দিলো ট্রিগার !

নিকিতা আবার চোখ বন্ধ করলো । কেবল অনুভব করলো ওর কানের পাস দিয়ে কিছু একটা চলে গেল । পর মুহুর্তে পেছনে থেকে কারো আর্তনাদের আওয়াজ এল ! চোখ খুলতেই দেখলো সাদিক একেবারে কাছে চলে এসেছে ।
নিকিতা কেবল বলল
-এরা কারা ?
-আমি কিভাবে বলব ?

নিকিতার প্রথম থেকেই তার এই বডিগার্ডকে পছন্দ হয় নি । এক্স আর্মি ছিল নাকি ছেলেটা । মেজর পর্যন্ত রাঙ্ক উঠেছিলো । কিন্তু তারপর কি একটা কারনে আর্মি থেকে অবসর নিয়ে নিয়েছে । এখন একটা প্রাইভেট সেফটি এজেন্সিতে কাজ করে । সেখান থেকেই এই বডিগার্ডকে ঠিক করা হয়েছে । এই লোকটার আচরন নাকি মোটেই ভাল নয় । খুব বেশি বদ মেজাজী । তবে নিজের কাজে বেশ দক্ষ বলেই এখনও টিকে আছে !

সাদিক নিকিতার হাত ধরলো । তারপর বলল
-লাফ দিতে পারবে ?
-কি বলছেন ?

সাদিক কেবল দুদিকে ইংগিত করলো । নিকিতা তাকিয়ে দেখে ওরা ঠিক যেখানে দাড়িয়ে আছে তার দুদিন থেকে আরও চারজন মানুষ হাতে উদ্ধত পিস্তল নিয়ে এগিয়ে আসছে । নিকিতা কেবল বলল
-আমি লাফ দিতে পারবো না ।

সাদিক অবশ্য এই দিকে খুব একটা মনযোগ দিল না । নিকিতার কোমর চেপে ধরলো । তারপর ওকে এক প্রকার জোর করে চেপে ধরেই বারান্দার রেলিং চেপে ধরে নিচে ঝাপিয়ে পড়লো । নিকিতার মনে হল ও বুঝি এখনই মারা যাবে । তবে অবাক হয়ে দেখলো কিছুই হয় নি । বরং খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওরা মাটিতে এসে পড়লো । নিকিতা তাকিয়ে দেখলো দুই তলা থেকে লাফ দেওয়ার সময় সাদিক ইন্টানেটের একটা তার চেপে ধরেছিলো । এই জন্য পতনটা আরও সহজ হল ।
নিচে পড়তেই ওরা ছাদের আড়ালে চলে এল । তাই উপরে যারা দৌড়ে আসছিলো ওরা ওদেরকে গুলি করতে পারলো না ।

সাদিক নিকিতাকে নিয়ে পেছনের দরজার দিকে দৌড়াতে লাগলো । নিকিতা বলল
-এদিকে কোথায় যাচ্ছেন ? আমাদের গাড়িতো সামনের দিকে ।
-ওদিক গিয়ে লাভ নেই । ওরা ওদিকে থাকবে ।

নিকিতা সাদিকের সাথে সাথে দৌড়াতে লাগলো । তবে সাদিক ওর হাত ধরে রেখেছে । নয়তো এতো দৌড়ানো ওর পক্ষে সম্ভব ছিল না । দৌড়াতে দৌড়াতেই নিকিতা একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে দেখলো যে সাদিক তাদের ক্যাম্পাসটা খুব ভাল করে চেনে । কোন দিক দিয়ে যাওয়া লাগবে সেটা ওকে বলে দেওয়া লাগছে না ।

আরও মিনিট তিনেক দৌড়ানোর পরেই ওরা ক্যাম্পাসের পেছনের রাস্তায় এসে হাজির হল । সেখানে বড় জারুল গাছের কাছে যেতেই দেখতে পেল একটা কালো রংয়ের বাইক দাড় করানো রয়েছে । নিকিতাকে নিয়ে সেটাতেই উঠে বসলো । বাইকের চাবিটা সেখানেই ছিল । নিকিতা অবাক না হয়ে পারলো না । বলল
-এটা কার বাইক ? এখানে কিভাবে এল ?
সাদিক বলল
-জানি না !
-জানি না মানে কি ? এভাবে অন্যের বাইক নিয়ে পালানো ঠিক হচ্ছে নাকি ?
-চারজন লোক আমাদের কে মারার জন্য দৌড়ে আসছে । এই সময়ে কোন ঠিক বেঠিক নেই । আর এই বাইকটা আমাদের জন্য রাখা ।
-কে রেখেছে ?
-জানি না । তবে আমরা সেখানেই যাচ্ছি !
-কোথায় ?
-পুরান ঢাকায় । এতো কথা বল না তো । চুপচাপ আমাকে ধরে বস । আমিও কিছু বুঝতে পারছি না । তবে আগে তোমাকে নিরাপদ জায়গাতে নিয়ে যাই । তারপর সব কিছু বোঝা যাবে । আর কে আমাকে ফোন করলো, এই বাইক কে রাখলো আমাদের জন্য এটাও জানা যাবে ।

নিকিতা আর কথা বলল না । কেবল শক্ত করে সাদিকের কোমর চেপে ধরলো । সাদিক বাইক ছেড়ে দিলো । তার গন্তব্য এখন পুরান ঢাকার সেই মানুষটার কাছে । লোকটাকে সে চেনে না কিন্তু লোকটা তাকে যা যা বলেছে ঠিক সেই সেই জিনিস হয়েছে । সে যদি লোকটার কথা না শুনতো তাহলে এতোক্ষনে নিকিতা মরে ভুত হয়ে যেত ।
এভাবে হুট করেও যে কারো কথা শুনা মোটেই ঠিক হচ্ছে না কিন্তু এখন এর থেকে ভাল কিছু মাথায় আসছে না । ঢাকার বুকে এমন প্রকাশ্যে গুলাগুলির ব্যাপার সহজে মেনে নেওয়া যায় না । সাদিক যদি লোকটা কথা মত না চলতো, তাহলে সত্যি নিকিতাকে রক্ষা করা সম্ভব হত না । সাদিকের কেন যেন মনে হচ্ছে এই সময় আগে তার কাছে যাওয়া দরকার । অন্তত লোকটা অনেক কিছু জানে । কিভাবে জানে সেটা জানা দরকার আগে !


দুই

পুরান ঢাকার একটা গলির মাঝে যখন বাইকটা থচলতে লাগলো আস্তে আস্তে নিকিতা তখন চারি দিকে তাকাতে লাগলো । এতোটা সময় সে নিজের মধ্যেই ছিল । একটু আগে ও লক্ষ্য করে কেউ গুলি করেছে এটা ঠিক ও বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে ওকে আসলেই কেউ খুন করার জন্য গুলি ছুড়তে পারে । জীবনে যে একটা মশাও ঠিক মত মেরেছে কি না বলতে পারবে না । আর ওকে মারা জন্য মানুষজন গুলি ছুড়ছে ।

নিকিতা নিজেও জানে ওর চেহারার ভেতরে অন্য রকম একটা আভা আছে । দেখলেই সহজে চোখ ফেরানো যায় না । কেমন একটা সবার চোখ আটকে যায় । প্রথম প্রথম ব্যাপারটা ও বেশ উপভোগ করলেও একটা সময় এটাতে কেবল বিরক্তই হত । বারবার মনে হত অন্য সবার মত হলেই সম্ভবত ভাল হত । একটু শান্তির জীবন পার করতে পারতো । তবে বাবা টাকা পয়সার কারনে সেটা অনেকটা সামলানো গেছে । গাড়ি ছাড়া কোথা যাওয়া আসা করতো না । মানুষজন ওকে দেখার খুব একটা সুযোগ পেত না । কিন্তু ক্যাম্পাস কিংবা অন্য কোন পাব্লিক মিটিং প্লেস গুলোতে এসব এড়ানো সম্ভব হত না । কত ছেলে যে ও পেছনে গেলে সেটা বলতে পারবে না । কিন্তু তাই বলে শহরের এরকম একজন মাঝ বয়সী লোকও যে ওর প্রেমে পড়বে সেটা বুঝতেই পারে নি । ভদ্রলোকের তো বউ থাকার কথা । সে কি কিছু বলছে না ? তার কোন আপত্তি নেই ?

নিকিতা খুজে পেল না । তবে এসব এখন ভাবার সময় নেই । তার এখন যত দ্রুত সম্ভব এই দেশ থেকে বের হয়ে যেতে হবে । বাইকে চলতে থাকা অবস্থাতেই নিকিতার আব্বুর সাথে কথা হয়েছিলো । ওর আব্বু খুব বেশি চিন্তিত ছিল । ও ঠিক আছে জেনে একটু দুঃচিন্তা মুক্ত হয়েছে ।

বাইকটা মানুষজনের ভীড় এদিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে চলছে । মাঝে মাঝে এর ওর কাছে পথ জেনে নিচ্ছে সাদিক । নিকিতা হঠাৎ প্রশ্ন করলো
-আচ্ছা একটা কথা জানতে চাই ?
-বল

একটু মেজাজ খারাপ হলেও নিকিতা কিছু বলল না । এই অবসর প্রাপ্ত মেজর সাহেব সেই শুরু থেকে ওকে তুমি করে বলে আসছে । ছেলেটাক দেখতে বেশ ইয়াংই মনে হয় । বয়স ঠিক বোঝা যায় না । তার মুখ থেকে এমন তুমি ডাক শুনতে ভাল লাগে না । তবে এই মানুষটা না থাকলে আজকে তার কি অবস্থা হত সেটা সে খুব ভাল করেই জানে । তাই বিরক্তিটা হজম করে ফেলল । বলল
-আচ্ছা আপনি কিভাবে জানলেন যে আমার উপর কেউ গুলি করতে যাচ্ছে ? মানে লোকটা যখন আমাকে গুলো করতে যাচ্ছিলো ঠিক সেই সময়েই আপনি এসে হাজির হলেন ! কিভাবে ?
-সেই প্রশ্নের জবাব পেতেই এখানে এসেছি ।
-মানে ?
-বললে বিশ্বাস করবে ?
-সকাল থেকে যা হচ্ছে বিশ্বাস না হওয়ার মত কিছু নেই ।
-আমি বসেই ছিলাম গাড়ির ভেতরে । তখনই আমার ফোনে একটা ফোন আসে । অপরিচিত নাম্বার । সেখান থেকেই আমাকে বলা হয় যে তোমার হামলা হতে যাচ্ছে । তুমি হয়তো দেখে থাকাবে আমার কানে এয়ার ফোন লাগানো ছিলো । পুরোটা সময় আমি ঐ মানুষটার সাথেই কানেকটেড ছিলাম । লোকটা আমাকে যেদিকে যেতে বলছিলো আমি সেদিকেই যাচ্ছিলাম । এমন কি বাইকটা যে ওখানে থাকবে সেটাও সেই বলেছে ।
-আর আপনি ওমনি চলে আসলেন ?
-ফলাফল দেখতেই পাচ্ছো । আমার কেবল কৌতুহল হচ্ছে । না দেখা করলে হয়তো কিছুই হবে না কিন্তু আমার কেবল জানতে ইচ্ছে করছে লোকটা কিভাবে এসব জানলো ? তাও আবার নিখুত ভাবে । আর বাইকটাও ফেরৎ দিতে হবে ।

কথা বলতে বলতে বাইকটা একটা পুরানো এক তলা বাসার সামনে এসে থামলো । নিকিতা বলল
-এই বাসা ?
-তাই তো হওয়ার কথা !

এতো সময় পুরান ঢাকার ভিড় থাকলেও এই এলাকাতে একটু মানুষজনের ভীড় কম মনে হচ্ছে । লোকটা ইতস্তত করে এদিক ওদিক দিয়ে হাটাহাটি করতে । একজন হঠাৎ ওদের সামনে এসে দাড়ালো । সাদিকের দিকে তাকিয়ে বলল
-বাইকটার কাজ শেষ । এটা নিয়ে যাই ?

বুঝতে পারলো ওরা একদম ঠিক জায়গাতেই চলে এসেছে । যদিও খানিকটা সন্দেহ কাজ করছে । যদি আবারও হামলা আসে তখন কিভাবে কি করবে সেটা অবশ্য ও আগে থেকেই ভেবে রেখেছে । দুজনই বাইক থেকে নেম গেল । ছেলেটা বাইকে স্টার্ট দিতে দিতে বলল
-এই দরজা দিয়ে ঢুকে যান । সামনের রুমটা পার করে পরের রুমে বসবেন ।

ছেলেটা বাইক নিয়ে চলে গেল । নিকিতার একটু একটু ভয় ভয় করতে লাগলো । একবার মনে হল সাদিককে বলে যে কারো সাথে দেখা করার দরকার নেই । বাবাকে ফোন করে দিলেই বাবা গাড়ি নিয়ে চলে আসবে । এখান থেকে চলে পারলে বাঁচে । কিন্তু সাদিকের মত ওর নিজেরও খানিকটা কৌতুহল হচ্ছে । সাদিকের কথা যদি ঠিক থাকে লোকটা এতো নিখুত ভাবে এতো সব জানলো কিভাবে ?

দরজা ঠেলে দুজনেই ভেতরে ঢুকে পড়লো । দরজা আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল । নিকিতার মনে হল ও যেন অন্য কোন জগতে চলে এসেছে । বাইরে ফঁকফকা রোঁদ ছিল । আর এই রুমের ভেতরে ঢোকার সাথে সাথেই মনে হল ওরা গভীর রাত পৌছে গেছে । নিকিতা যেন বাইরে ঝিঝি পোকার আওয়াজ শুনতে পেল ।
খুব আশ্চর্য্য হয়ে গেল । এমনটা কিভাবে হচ্ছে !
নিকিতা সমানে দাড়ানো সাদিকের হাতটা চেপে ধরলো । একটু অস্বস্থি লাগছিলো কিন্তু সেটা গায়ে মাখলো না । দুজনই সমানে এগোতে লাগলো । ঐতো দেখা যাচ্ছে সামনে একটা একটা । একটা যেন দরজা ।

সেই দরজা লক্ষ্য করেই ওরা এগিয়ে চলল । নিকিতার মনে হল ওরা অন্তত কাল ধরেই এগোচ্ছে । একটা রুম যে এতো বড় হতে পারে সেটা নিকিতার জানা ছিল । যখন সেই আলোর দরজা দিয়ে বের হয়ে এল তখন অবাক হয়ে দেখলো ওরা একটা আলোকোজ্জ্বল ঘরে চলে এসেছে । ঠিক যেমন করে ধুপ করে আগের রুমটাতে চলে এসেছিলো ঠিক সেই ভাবে এই চমৎকার রুমে চলে এসেছে ।

ওরা দুজনেই তাকিয়ে দেখলো ঘরে একটা ৪০ ইঞ্চি টিভি চলছে নিঃস্বব্দে । দু সারি শোফা সাজানো । সেখানটার একটা একটাতে একজন চুপ করে বসে আছে ।

ওদের জন্যই যেন অপেক্ষা করছে । নিকিতা তাকিয়ে দেখলো সামনের বসা মানুষটার বয়স খুব বেশি ২৫/২৬ হবে । মাথায় ঘন কালো চুল । মুখে খোচা খোচা দাড়ি ।ওদের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে । মুখটা হাসি হাসি হলেও নিকিতার মনে হল লোকটার চোখ খুব বেশি তীক্ষ । এতো তীক্ষ চোখ যে কারো হতে পারে সেটা নিকিতার জানা ছিল না । সামনে বসা লোকটা হাসি মুখে বলল
-আসতে সমস্যা হয় নি তো খুব একটা ? বসুন ! আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি আমি !




তিন

সন্ধ্যা পার হয়েছে অনেক আগেই । চারিদিকে ঝিঝির ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না । বড় বটগাছটার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদীটা । দিনের বেলাতে এখানে একটা হাট বসে কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই সবাই এখান থেকে দুরে চলে যায় । আজ পর্যন্ত কেউ অবশ্য এখানে কিছু দেখেনি কিংবা ভয়ও পায় নি । তারপরেও এই জায়গাটাকে সবাই ভয় পায় ।

কিন্তু সুমনের এসব কিছুই মাথায় নেই । সেই বিকেল বেলা থেকে এখানেই বসে আছে । মাথার ভেতরে কেবল একটা চিন্তা কাজ করছে ।

আজকে দুপুরের ওর একটা চাকরীর রেজাল্ট দিয়েছে । চাকরিটা ওর শতভাগ হওয়ার কথা ছিল । পরীক্ষা তো ভাল হয়েছিলই সেই সাথে বাবার জমি বিক্রি করে লাখ পাঁচেক টাকাও দেওয়া হয়েছিলো । সে নিশ্চয়তা দিয়েছিলো যে চাকরিটা ও পাচ্ছে । কিন্তু যখন রেজাল্ট টা নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গালো হল সেখানে ওর নাম ছিল না । আর বাসায় যাওয়া হয়ে ওঠে নি । আজকে হাটবার ছিল না তাই জায়গাটা একটু নির্জনই ছিল । এখানেই এসেই বসে ছিলো । আর ওঠে নি ।

কি মুখ নিয়ে সে বাসায় যাবে । ওর বাবা শেষ সম্ভব টুকু বিক্রি করতে চায় নি । সুমন এক প্রকার জোর করেই সেটা বিক্রি করে দিয়েছে । তার একটা চাকরি দরকার ছিল যে কোন মূল্যে । কিন্তু এখন ওর কাছে কিছু নেই । দেওয়া টাকা পাওয়া যাবে কি না কেউ বলতে পারে !

সুমন একভাবে নদীর পানির দিকে তাকিয়ে রইলো । এক বার মনে হল যে ঝাঁপ দেয় সে সাঁতার জানে । ঝাপ দিয়ে খুব একটা লাভ হবে না । কিন্তু এই জীবন রেখে আর লাভই বা কি হবে ? তখনই চোখ গেল ডান দিয়ে । রাত লামলেও আকাশে চাঁদ আছে । হাট বাড়ের এখানে বেশ ভাল দোকাট পাট বসে । সেখানেরই একটা অস্থায়ী দোনের চিহ্ন এখনও পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে । সেখানে বেশ কিছু দড়ি পড়ে রয়েছে ।
সুমন উঠে দাড়ালো । দড়ি টুকু হাতে নিয়ে টেনে টুনে দেখলো । তার ভর সহ্য করতে পারবে ঠিক ।

পানিতে ঝাপ দিলে হয়তো মরবে কিন্তু এই শক্ত দড়ি দিয়ে তো গাছ থেকে ঝুলে পড়তে পারে । তাহলেই সব ঝামেলা শেষ হবে তার । মায়ের চেহারাটা একটু মনে পড়লো । ছোট বোনটার কি হবে সেটা ও জানে না । বাবা কিছু একটা করবে নিশ্চয়ই ।

সুমন আর ভাবলো না । বেশি চিন্তা করলেই কাজটা করতে পারবে না । এই হতাশার জীবন আর তার ভাল লাগছে না । আজই সে মুক্তি চায় । আজকেই সব হতাশার সমাপ্তি হবে তার ।

সুমন দড়িতে একটা ফাঁস দিয়ে গাছে উঠে পড়লো । তারপর অন্য প্রান্তটা বাঁধলো একটা শক্ত ডালের সাথে । ফাঁসটা নিজের গলাতে পরালো ।চূড়ান্ত ভাবে লাফ দেওয়ার আগে আরেকবার ভাবলো সে । মনে মনে বলল এমন কিছু যদি থাকতো ! যে কোন কিছু তৈরি সে নিজের জীবনের এ হতাশা দুর করার জন্য । যে কোন কিছু !

কিন্তু জানে এমন কিছু নেই । কেউ ওকে বাঁচাতে আসবে না । কেউ এগিয়ে আসবে না সাহায্য করতে ।

আর ভাবলো না সুমন । চোখ দিয়ে একটু পানি গড়িয়ে পড়লো । পড়ুক । তবুও তো এই হতাশার জীবন থেকে মুক্ত পাবে সে !
চোখ বন্ধ করে ঝাপ দিল ।

গলাতে একটা হালকা ধাক্কা লাগলো । তারপর দড়ি ছেড়ার একটা আওয়াজ হল । তার পরেই সুমন নিজেকে মাটিতে আবিস্কার করলো। পেছনে একটা লেগেছে দড়ি ছিড়ে পড়ার জন্য ।

সুমন অবাক হয়ে পাড়লো না । দড়িটা ছেড়ার কথা ছিল না । সুমন ভাল করে পরীক্ষা করে দেখেছে । তাহলে ছিড়লো কিভাবে ?

-কি অবাক হচ্ছো ?

সুমনের বুকে যেন কেউ ধাক্কা মারলো । একটা নারী কন্ঠ শুনে এক পাক দিয়েই পেছন ফিরে তাকালো । চারিদিকে চাঁদের আলো দিয়ে আলোকিত হয়ে আছে । শাড়ি পরা মেয়েটাকে চিনতে সুমনের মোটেও কষ্ট হল না । দেখে মনে হচ্ছে গ্রামের কারো নতুন বিয়ে করা বউ । সুমন চেনার চেষ্টা করলো কিন্তু এমন চেহারা আর এমন কন্ঠের কারোর কথা সে মনে করতে পারলো না । সুমন বলল
-আপনি ?
-হ্যা । আমিই বাঁচিয়েছি তোমাকে ?
-মানে ? কি বলছেন আপনি ?

মেয়েটা হাসলো । তারপর হাতের দু আঙ্গুল দিয়ে একটা তুড়ি বাজালো সুমন অবাক হয়ে দেখলো ওর হাতের থাকা দড়িটা আবারও মাঝ খান দিয়ে দুভাগ হয়ে গেল । বিস্ফোরিত চোখ তাকিয়ে রইলো সেদিকে । মেয়েটি বলল
-তোমার জীবন আমি বাঁচিয়েছি ।
-কেন বাঁচালেন ?
-আমার দরকারেই বলতে পারো । মরেই তো যাচ্ছিলে । তা আমার দরকারে যদি আসো !
-যদি না আসি !
-কোন সমস্যা নেই তো মরার হাজারটা উপায় আছে । তবে জেনে রেখো আমার কাজ যদি আসো যদি রাজি হও তাহলে জীবনের সব থেকে বড় সাফল্য টা পাবে । যা চাইবে তাই পেয়ে যাবে তুমি ।

সুমন কিছু বুঝতে পারলো না । মেয়েটি বলল
-তোমার মোবাইলটা তো বন্ধ আছে । চালু করে দেখো । এখনই প্রমান পেয়ে যাবে ।

সুমন নিজের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে চালু করলো । পরিপূর্ণ ভাবে চালু হওয়ার সাথে সাথেই একটা মেসেজ এসে হাজির ।

ঢাকা ব্যাংক থেকে । মাস চারেক আগে এই ব্যাংকে সে ভাইভা দিয়েছিলো । তবে তখন ডাক আসে নি । মেয়েটি বলল
-এটা কেবল শুরু । যদি মনে হয় এটা আমার জন্য হয় নি তাহলেও সেটা তোমার ব্যাপার । কিন্তু যখন হঠাৎ করেই চাকরি হয়েছে ঠিক সেই ভাবেই চলে যাবে ! চিন্তা করে দেখো । আমার যে তোমাকেই লাগবে এমন কোন ব্যাপার না । তোমার মত হাজার হাজার হতাশ যুবক আছে এদেশে । তাদের কেউ না কেউ ঠিকই রাজি হয়ে যাবে !

সুমন আর কিছু ভাবলো না । ঢাকা ব্যাংকের এই চাকরিটাতে মাসে ৪৫ হাজার টাকা পাওয়া যাবে । আজকের চাকরি টার বেতনের প্রায় দ্বিগুন । হাতে আসা এমন সুযোগ কি ছেড়ে দেওয়ার কোন উপায় আছে ? কোন উপায় নেই । সুমন বলল
-আমি রাজি । আমাকে কি করতে হবে বলুন !
মেয়েটি আরও কাছে চলে এল । চাঁদের আলোতে মেয়েটার চেহারা এবার আরও পরিস্কার ভাবে ফুটে ওঠলো । সুমনের কেবল মনে হল ও জীবনের সব থেকে সুন্দর মুখটা দেখতে পেয়েছে । মেয়েটি হেসে বলল
-কিছু করতে হবে না । কেবল আমাকে বিয়ে করতে হবে ।


চাঁর

মেজর সাদিকের হাতটা তখনও নিজের পকেটের রিভালবারের উপর । যে কোন পরিস্থির জন্য প্রস্তুত সে । যদি সামনে বসা মানুষ ওদের উপর কোন প্রকার হামলা করতে চায় তাহলে সেটা সে রুখে দিতে তৈরি । নিকিতা ওর পেছনেই আছে । সামনে বসা মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে । সামনের শোফাতে বসা মানুষটা মুখ হাসি হাসি করে বলল
-মেজর সাহেব, পিস্তল থেকে হাত সরিয়ে নিশ্চিন্তে বসুন । আমার এখানে আপনারা নিরাপদ । আর আমি আপনাদের জন্য হুমকি না !

সাদিক বসার আগেই নিকিতা শোফাতে গিয়ে বসলো । লোকটার চোখে চোখ রেখে বলল
-আপনি কে বলুন তো ? কিভাবে এতো কিছু জানেন আর আমাদের কে বাঁচালেন কিভাবে ? আর ওরা কারা আমাকে মারতে চায় ? আকসার আহমেদের লোক ওরা ? বিয়ে করতে চায় নি বলে মেরেই ফেলবে !

সামনে বসা মানুষটা হেসে বলল
-আরে আস্তে আস্তে । সব উত্তর পাবেন । আগে নাম দিয়ে শুরু করি ।

সাদিক যদিও নিকিতার পাশের শোফাতে বসলো তবে সে এখনও প্রস্তুত আছে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য । লোকটা বলল
-আমার নাম রাফায়েল !
সাদিক বলল
-রাফায়েল কি ? রাফায়েল চৌধুরী নাকি আহমেদ ?
রাফায়েল হাসলো ।
-নাহ ! আগে পিছে আর কিছু নেই । কেবল রাফায়েল ।
নিকিতা বলল
-ওরা কি আকসার আহমেদের লোক ? আমাকে মারতে চেয়েছিলো ?
-নাহ । ওরা তার লোক না । আকসার আহমেদ আপনাকে কোন ভাবেই মরতে দিতে পারে না । বলতে পারে যে কোন ভাবেই সে আপনাকে বাঁচাতে চাইবে ।

সাদিক সাথে সাথেই বলল
-তাহলে আপনি কি তার লোক ?
-নাহ ! আমি তার লোকও না ।
-একটু পরিস্কার করবেন দয়া করে ?
-বলছি ।

তারপর রাফায়েল খানিকটা সময় চুপ করলো । তারপর বলল
-এই দেশে বর্তমানে দুইটা গ্রুপ আছে । একটা গ্রুপ যে কোন ভাবেই নিকিতাকে মারতে চায় । তাকে মেরে ফেলতে চায় । আর আরেকটা গ্রুপ আছে সেটা হল ওকে বাঁচাতে চায় । কোন ভাবেই ওকে মরতে দিবে না । দ্বিতীয় দলটা হচ্ছে আকসার আহমেদের ।

সাদিক বলল
-আর প্রথমটা ?
-ওরা নিজেদেরকে বলে এওজি !
-মানে ?
-আর্মি অব গড !
-আমি কিছু বুঝতে পারছি না । তাহলে আমি কোথা থেকে এলেন ?
-আমি হচ্ছি তৃতীয় পক্ষ যে নিকিতাকে ঐ আর্মি অব গড দের থেকে রক্ষা করতে চায় কিন্তু কোন ভাবেই চায় না যে নিকিতা আকসার আহমেদের হাতে পড়ুক । কারন আকসার আহমেদও নিকিতার সাথে ঠিক একই কাজ করবে । ওকে বিয়ে করার পরে !

নিকিতা খানিকটা ভিত কন্ঠে বলল
-আমি কি করেছি ? আমার বাবা কি করেছে যার কারনে ওরা আমাকে মেরে ফেলতে চায় ?
রাফায়েল বলল
-নাহ । তুমি কিছু কর নি । তুমি খুব বিশেষ সময়ে জন্ম নিয়েছো ! যে সময় ইমুপ্সা জন্ম নিয়েছিলো ! এই জন্য তুমি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ন !



পাঁচ

নিকিতা আর সাদিক কি বলবে কিছু বুঝতেই পারলো না । সামনে বসা মানুষটা তাদের কে যা বলেছে তার কিছুই তাদের ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । আবার বিশ্বাস না করেও পারছে না । নিকিতা কিছু বলতে যাবে তখনই দরজা দিয়ে আরেকজন ঢুকলো । তিনজনই সেদিকে তাকালো । নিকিতার মুখটা একটু স্বাভাবিক হয়ে এল । লোকটা আর কেউ নয়, ওর বাবা সাহাবুদ্দিন আহমেদ ।

পেছন থেকে রাফায়েল বলল
-এখন তো আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে যে আমি তোমাদের খারাপ চাই না । ওনার সাথে আমি অনেক আগেই যোগাযোগ করেছিলাম । সে আমার কথা মত চলছিলো । সাদিককে সেই নিয়োগ দিয়েছিল । আমাদের লক্ষ্য ছিল কেবল তোমাকে আকসার আহমেদের হাত থেকে রক্ষা করা । তোমাকে তার কাছে যেতে না দেওয়া !

নিকিতার বাবা বসতে বসতে বলল
-ঠিক তাই ।
রাফায়েল আবার বলল
-আমাদের মত আরেকটা দল আছে যারা চায় যে তুমি যেন কোন ভাবেই আকসার আহমেদের কাছে না পৌছাও ।
তখন এতোটা সময় চুপ ছিল । তারপর বলল
-তাই ওকে মেরে ফেলতে চাইছে । কারন ও যদি মরে যায় তাহলে কোন ভাবেই আকসার আহমেদের কাছে পৌছাবে না । তাই না ?
-হ্যা । এটা সব থেকে সহজ উপায় । এবং ওরা আবারও হামলা করবে । যে কোন ভাবেই ওরা চাইবে নিকিতা যেন মারা যায় । তবে নিকিতার উপর হামলার খবর এতোক্ষনে আকসার আহমেদের কাছে পৌছে গেছে । সেও এবার সরাসরি মাঠে নামবে । এতো সময় কেবল নিকিতার দিকে খেয়াল রাখছিলো । সেও চাইবে নিকিতাকে রক্ষা করতে । সম্ভবত আর সে কোন ঝুকি নিবে না । সুযোগ পেলেই ওকে তুলে নিয়ে যাবে । নিজের কাছে রাখবে !

নিকিতা বলল
-কিন্তু আমি কি করলাম ? আমাকে নিয়ে টানাটানি কেন ?

রাফায়েল কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । নিকিতার বাবার দিকে তাকালো । কিছু যেন বলার চেষ্টা করলো চোখে চোখে। তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার আসলে কোন দোষ নেই ।
-তাহলে ?
-আগেই বললাম । তোমার দোষ নেই । বরং তুমি খুব বিশেষ কেউ । এই জন্যই তোমাকে দরকার তার !

রাফায়েল আরও কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল
-আজ থেকে বছর দশেক আগে আকসার আহমেদ কিন্তু খুব সাধারন একজন মানুষ ছিল । পড়ালেখা করে বেকার একটা যুবক । কোন ভাবেই সে যখন জীবনে কিছু করতে পারছিলো না তখন ঠিক করলো সে আর নিজের জীবন রাখবে না । কিন্তু ঠিক মৃত্যুর আগে যে এমন কিছু বলল এমন একটা আকাঙ্খা তার মনে জেগে উঠলো যে সে যে কোন কিছুই করতে প্রস্তুত ছিল সব কিছু ঠিক করার জন্য । বলতে পারো বেপোয়ায়া । ইমুপ্সার ঠিক এটাই দরকার ছিল । সে আকসার আহমেদ কে মরতে দিলো না । তাকে সব কিছু দিল জীবনে । সব ক্ষমতা আর সাফল্য এনে দিল । তার বদলে আকসার আহমেদকে কেবল একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর একজন বিশেষ মেয়েকে খুজে বের করতে হয় যার দেহে ইমুপ্সা প্রবেশ করতে পারে !

-ইমুপ্সা টা কে ?

প্রশ্নটা করলো সাদিক । সেদিক চুপ করে শুনেই যাচ্ছে । তার কাছে সব কেমন যেন মনে হচ্ছে । ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না । সব কিছু কেমন লাগছে তার । কিন্তু এই লোকটাই ওদেরকে যেভাবে বাঁচিয়ে নিয়ে এল সেটা দেখার পর থেকে ঠিক অবিশ্বাসও করতে পারছে না ।

রাফায়েল বলল
-আমি জানি আমার কথা তোমাদের ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । তবে একটা কথা তো বিশ্বাস কর যে আমাদের পুরো পৃথিবীতে মানুষ ছাড়াও আরো কিছু আছে । সর্বোচ্চ শক্তি আছে যে আমাদের তৈরি করেছে । সৃষ্টি কর্তা । এই সৃষ্টি কর্তা তার পছন্দের কিছু মানুষকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে । অনেক কিছু করতে পারতো তারা । ঠিক তেমন ভাবে শয়তানও আছে । এই শয়তান অনেক নামে পরিচিত । একটা নাম লুসিফার ! সব কালো শক্তির মূল । এই লুসিফারেও কিছু কাছের মানুষ আছে । লুসিফারও তাদেরও কিছু ক্ষমতা দিয়ে এই পৃথিবীতে নিয়ে আসে । তেমন একজন হল ইমুপ্সা ।
নিকিতা বলল
-মহিলা শয়তান ?

রাফায়েল হাসলো । বলল
-হ্যা বলতে পারো । প্রত্যেক শয়তানের যেমন বিশেষ কিছু ক্ষমতা আছে ঠিক তেমনি এদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে । এই মহিলা শয়তান পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে কিছু নির্দিষ্ট সময় পরপর একজনের বিশেষ মানুষের দেহের ভেতরে কিছু বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রবেশ করতে হয় । নয়তো সে টিকে থাকতে পারবে না ।

নিকিতা বলল
-আমি হচ্ছি সেই বিশেষ মানুষ ।
-হ্যা । লুসিফার ইমুপ্সাকে ঠিক যে তিথিতে এই পৃথিবীতে এনেছিলো তোমার জন্ম ঠিক সেই তিথিতে । সামনের সময়ে তার টিকে থাকতে হলে প্রত্যেকবারই নিকিতার মত কাউকে দরকার হবে । প্রতিবারই কোন না কোন ভাবে আকসার আহমেদ অনেক আগে থেকে সেই মেয়েকে নিজের কাছে এনে রাখে । কিন্তু এইবার নিকিতার বাবা বেশ ক্ষমতা বান হওয়ার তাকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারে নি । এই জন্যই বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে ।

সাদিক বলল
-এখন আমাদের কি করনীয় ?
রাফায়েল বলল
-আজকে মাসের ২০ তারিখ । এই মাসের ২৭ তারিখটা হচ্ছে সেই বিশেষ সময় । এই সময় পর্যন্ত আমাদের নিকিতাকে দুরে রাখতে হবে । কোন ভাবেই যেন আকসার আহমেদ নিকিতার সন্ধান না পায় ।

নিকিতার বাবা বলল
-আমার একটা বাংলো আছে সেন্ট মার্টিনে, ওখানে কি পাঠাবো ? আমি অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই নিকিতার ভিসার পাচ্ছি না । বারবার রিজেক্ট হয়ে যাচ্ছে । বুঝতে পারছি এর পেছনে কে রয়েছে । নিকিতাকে কিছুতেই সে দেশের বাইরে যেতে দিবে না । পুলিশের কাছে গিয়েও আমি কিছু করতে পারি নি । আকসার আহমেদের হাত আমার থেকেও বেশি লম্বা !
রাফায়েল বলল
-এক জায়গাতে থাকলে চলবে না । আগেই বলেছিলো নিকিতার ভেতরে বিশেষ কিছু রয়েছে । বলতে পারেন যে ওর শরীর থেকে একটা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সী বের হয় যেটা ইমুপ্সা ঠিকই ধরে ফেলবে । এমন কি এখানেও চলে আসবে যদি এখানে বেশি সময় থাকেন । আমি ...

রাফায়েল কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময়ে খুব বড় করে বিস্ফোরনের আওয়াজ হল । ঘরে থাকা সবাই একবার চমকে দরজার দিকে তাকালো ।
নিকিতার বাবা সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলল
-কি হল ?
রাফায়েল বলল
-এতো জলদি ? না এটা তো সম্ভব না ।

তারপর নিজের ল্যাপ্টপের সামনে বসে দ্রুত কি যেন টেপাটেপি করতে লাগলো । তারপর বলল
-না এটা আকসার আহমেদ না । ঐ যারা নিকিতাকে ক্যাম্পাসে হামলা করেছিলো তারা !
-এখানেও চলে এসেছে ।
-তাই তো দেখছি । এরা তৎপর হবে ভাবি নি । তবে খুব একটা চিন্তার কিছু নেই ।

এই বলে রাফায়েল ঘরের অন্য দিকে আরেকটা দরজার কাছে চলে গেল । সেটা খুলে সাদিকের দিকে তাকিয়ে বলল
-কুইক । নিকিতাকে নিয়ে এদিক দিয়ে বের হয়ে যান । একটা বড় উঠান পাবেন । উঠানের উপর দেখবেন একটা গাড়ি রাখা আছে । চাবি পাবেন কি হোলেই । নিকিতাকে নিয়ে সোজা চলে যেতে থাকবেন । থামবেন না । কোন ভাবেই না । মনে থাকবে তো ?

নিকিতা বলল
-কিন্তু আব্বু ! আপনারাও আসুন আমাদের সাথে ।
রাফায়েল বলল
-ভয় নেই । ওরা আমাদের কিছু বলবে না । ওরা কেবল তোমাকে খুজছে ।

নিকিতা নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরলো । নিকিতার বাবা বলল
-চিন্তা করিস না মা । কিছু হবে না । সব ঠিক হয়ে যাবে ।
আবার কাছেই কিছু একটা আওয়াজ হল । কেউ যেন দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করছে ।

রাফায়েল বলল
-আর দেরি করবেন না। জলদি । আর ভয় নেই আমি আপনাদের খুজে নিবো । এখন চলে যান ।

সাদিক আগে থেকে তৈরি ছিল । নিকিতাকে নিয়ে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল । ওরা বের হতেই রাফায়েল দরজা বন্ধ করে দিল । তারপর একটা মোচড় দিলো তালাতে । আপাতত আর চিন্তা নেই ।




ছয়

নিকিতা পেছনের উঠানে এসে খানিকটা অবাক হয়ে গেল । পেছনে আরেকবার ফিরে তাকালো । দরজাটা বন্ধ হয়ে আছে । রাফায়েল ওদেরকে যে দরজা দিয়ে বাইরে পাঠালো সেটা একটা বদ্ধ ঘরের ছিল । অন্ধকার একটা ঘর । সেটা পার হতেই এই উঠান ।

কিন্তু সমস্যা সেখানে না । উঠানটা পেরিয়েই রাস্তা দেখা যাচ্ছে । এবং রাস্তার ঠিক ওপাশেই পাহাড় দেখা যাচ্ছে । নিকিতা নিজের চোখকে ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছে না । দাড়িয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর সাদিকের দিকে তাকিয়ে বলল
-ওটা কি পাহাড় ?

সাদিকও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে । খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-তাই তো মনে হচ্ছে ! কিন্তু আমরা এখানে এলাম কিভাবে ?

ওরা পুরান ঢাকায় ছিল । একটা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে এখানে এসে হাজির হলো । এটা আর যাই হোক পুরান ঢাকার পেছনের কোন অংশ মনে হচ্ছে না । এমন কি ঢাকার কোন অংশও মনে হচ্ছে না । কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব ? দুজনেই কিছু সময় চিন্তা করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই খুজে পেল না ।

কথা মত ঠিকই একটা গাড়ি দাড়িয়ে রয়েছে । দুজনে আর কিছু ভাবার চেষ্টা করলো না । সোজা গাড়িতে উঠে বসলো । সাদিক গাড়ি ছেড়ে দিলো । রাফায়েল বলেছিল যেন ওরা যেন কোথাও না থামে ! চলতেই থাকে ! এই সাতটা দিন কোন ভাবেই কোথাও থামা যাবে না !


নিকিতা জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে । সবুজ পাহাড়ের সারি গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে খুব ভাল লাগছে । একটু আগেও ওর মাথার ভেতরে ঠিক ঢুকছিলো না ওরা এখানে কিভাবে এল । ঘন্টা খানেক আগেও ওরা পুরান ঢাকার একটা বাসায় ছিল । তারপর একটা দরজা দিয়ে যখন এই পাশ আসে ওরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করে যে ওরা আসলে সিলেটে চলে এসেছে ।

ওদের দুজনের একজনও ঠিক ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছিলো না কিন্তু নিজেদের সাথে যা হচ্ছে তা বিশ্বাস না করে উপায়ও নেই । রাফায়েলের কথা মতই বাসার উঠানে একটা জিপ গাড়ি দাড়িয়ে ছিল । কিহোলে চাবিও ছিল । সাদিক আর নিকিতা আর কিছু চিন্তা করে নি । শুরু থেকেই ওদের সাথে যা হচ্ছে তার কিছুই মাথায় ঢুকছে না । তাই খুব বেশি কিছু চিন্তা না করাই ভাল । রাফায়েল ওদের কেবল বলেছে যে ওদের পালিয়ে যেতে হবে । কোন ভাবেই ঐ আর্মি অব গড কিংবা আকসার আহমেদের হাতে পড়া যাবে না । একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পালিয়ে থাকতে হবে । ওরা কোথায় যাবে কেউ জানে না । তবে এক জায়গাতে থামা চলবে না ।

ওরা যে কারো সাহায্য নিবে সেটারও উপায় নেই । নিকিতা শুনেছে আকসার আহমেদ প্রচুর টাকার মালিক । আর প্রচুর টাকা প্রচুর ক্ষমতা নিয়ে নিয়ে আসে । ওরা যদি কারো কাছে গিয়ে হাজির হয় তাহলে সেটা আকসার আহমেদের কাছে পৌছে যাবে । তাই এই কটাদিন থাকতে হবে পালিয়ে !

-এই দাড়ান দাড়ান !

নিকিতার চিৎকারে বলে উঠলো । সাদিক এক ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলো । নিকিতার কথা শুনে ওর দিকে তাকালো । তারপর বলল
-কি হল ?
-গাড়ি থামান ?
-কেন ?
-আরে দেখলেন না এক ভদ্রলোক গাড়ি দাড় করানোর জন্য হাত দেখালো ।
-দেখাক । আমরা এখানে কাউকে সাহায্য করতে আসি নি । আর আমরা কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না । তুমি জানো ?
-আরে বাবা একটু থামালে কি হবে ? নিশ্চয় বেড়াতে এসেছিলো । দেখলাম গাড়ির পাশ দাড়িয়ে আছে । নিশ্চয়ই গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে । আর ইনারা কিভাবে জানবে যে আমরা এখানে এসেছি । আমি আর আপনি নিজেই তো জানতাম না আমরা এখানে কিভাবে এলাম !


কথাটা সত্য ! আসলেই ওরা নিজেরাও জানে না ওরা এখানে কিভাবে এল । সাদিক মিররে পেছনের দিকে তাকালো । দেখলো আসলেই একটা সাদা রংয়ের ল্যান্ড ক্রুজার দাড়িয়ে আছে । তার পাশেই এক ভদ্রলোক দাড়িয়ে আছে ওদের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে ।
নিকিতা আবার বলল
-গাড়ি থামান প্লিজ ! আমার তো ইনার কাছ থেকে কোন ক্ষতির সম্ভবনা দেখতে পাচ্ছি না ।


সাদিক গাড়ি থামালো । তারপর গাড়িটা আস্তে আস্তে পেছনে নিয়ে চলল । কিছু দুর আসতেই লোকটা ওদের দিকে এগিয়ে এল । সাদিকের জানলার পাশে এসে হাজির হল । তারপর ওর দিকে তাকিয়ে খানিকটা অপরাধীর মত মুখ করে বলল
-আসলে, আমাদের গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে । আর কোন গাড়ি আসছে না । শুনেছিলাম সামনে কোথায় যেন পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছে । তার গাড়ি চলাচাল বন্ধ হয়ে আছে !
-ও !
সাদিক নিকিতার দিকে তাকালো । তারপর আবার ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনারা কোথাও যাবেন ? নামিয়ে দিব ?
-খুবই উপকার হয় তাহলে ! আসলে এই মাইল খানেক দুরে একটা রিসোর্ট আছে । আমরা আসলে ওখানেই যাচ্ছিলাম । কিন্তু পথে এই অবস্থা !
-আচ্ছা উঠে পড়ুন ।
-আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসি । ও খুব অস্থির হয়ে আছে ।


সাদিক দেখলো ভদ্রলোক গাড়ির ড্রাইভারকে কি যেন বলল । তারপর দরজা খুলে ব্যাগ বের করতে লাগলো । ব্যাগ দেখে সাদিকের দিকে মনের সন্দেহ টুকু দুর হয়ে গেল । লোকটা আসলেই তাহলে বেড়াতে এসেছিলো ।
ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে আসা শুরু করতেই ভদ্রলোকের পেছন থেকে একটা মেয়ে নেমে এল । মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়েই সাদিক চমকে উঠলো । জীবনে এতো সুন্দর মেয়ে সে দেখেছে বলে সাদিকের মনে পড়লো না । ভদ্রলোকও যথেষ্ট সুদর্শন ! কিন্তু মেয়েটার চেহারার কাছে সেটা কিছুই নয় ! দুজনেই গাড়িতে উঠে আসতেই ওদের দিকে তাকিয়ে মেয়েটি হাসলো ।

কিন্তু সাদিকের কেন জানি সেই হাসিটা ভাল লাগলো না । কেমন যেন একটা কৃত্রিম ভাব রয়েছে । ভদ্রলোক বলল
-আপনাদের কি বলে যে ধন্যবাদ দিব !

তারপর সে নিজের আর তার স্ত্রীর পরিচয় দিকে লাগলো । ভদ্রলোকের নাম আবীর আহমেদ । তার স্ত্রীর নিলিমা আহমেদ । ভদ্রলোক একজন উপসচিব । স্ত্রী নিয়ে বেড়াতে এসেছে এখানে কিন্তু এখানে এসে বিপদে পড়েছে । নিকিতাও নিজের পরিচয় দিল । তবে ওর আসল পরিচয় দিলনা । বলল ওরা বিবাহিত । নতুন বিয়ে করেছে । এখানে ঘুরতে বেরিয়েছে । সাদিক কোন কথা বলল না । গাড়ি চালানোর দিকে মনযোগ দিল । তবে মাঝে মাঝে যাচ্ছে রিভার্স মিররে । আর নিলিমা আহমেদের সাথে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে । মেয়েটা কেমন হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে তবে হাসিটা কেন জানি সাদিকের মোটেই ভাল লাগছে না ।

আরও কিছুটা সময় গাড়ি চালানোর পড়ে ওরা রিসোর্ট টা দেখতে পেল । আবীর আহমেদ নেমে ওদের বারবার ধন্যবাদ দিতে লাগলো । তারপর হঠাৎ করেই বলল
-আপনারা এখন কোথায় যাবেন ?
-দেখি সামনে কোথাও যাবো ।
আবীর আহমেদ অবাক হয়ে বলল
-আপনারা ঠিক করে আসেন নি কোথাও যাবেন ?

নিকিতা আর সাদিক দুজনেই দুজনের দিকে তাকালো । কি বলবে খুজে পেল না । নিকিতা বলল
-আসলে আমরা পালিয়ে এসেছি তো ! ওরকম কোন কিছুই ঠিক করে আসা হয় নি । বাবা মাকে জানানো যাবে না যে কোথায় আছি ! আর আমরা এখনও ঠিক বিয়েও করতে পারি নি । সরি আপনাদের প্রথমে মিথ্যা বলেছিলাম !
নিকিতার কথা শুনে আবীর আহমেদ খুব হাসলো । তারপর বলল
-কোন সমস্যা নেই । একটা কাজ করুন এখানে থাকুন ! সমস্যা কি !

নিকিতা আর সাদিক দুজন দুজনের দিকে তাকালো । আবীর আহমেদ বলল
-এটা খুবই রিমোর্ট এরিয়া । এর পরেই ভারত । আপনাদের বাবা মায়েরা এখানে খুজে পাবে না । আর এটা খুবই চমৎকার একটা জায়গা ! সকাল বেলা যখন ঘুম ভাঙ্গবে এখান থেকে মিজোরামের পাহাড় দেখতে পাবেন । এতো চমৎকার দৃশ্য এর আগে কখনও দেখতে পাবেন না ।

সাদিক আর নিকিতা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো । দুজনের মনের ভেতরেই খানিকটা কনফিউশন দেখা যাচ্ছে । এক সময় নিকিতা সাদিকের দিকে তাকিয়ে বলল
-তাই । এখানেই একটা দিন স্টে করি । তারপর না হয় ঠিক করা যাবে কোন দিকে যাওয়া যাবে !
সাদিকের মনটা কেন যেন সায় দিচ্ছে না । তবুও মনে হল যে এখানে থাকাটা মন্দ হবে না । বিশেষ করে এই রিসোর্টটার কথা ও আগেই জানে । যখন আর্মিতে ছিল তখন এদিকে আসতে হয়েছিলো একটা কাজে !
আর ওরা যে এখানে আছে এইটা কারো পক্ষেই জানা সম্ভব না । তাই শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল । গাড়িটা ঢুকিয়ে ফেলল রিসোর্টটার ভেতরে ।


সাত

নিকিতার মনে যে ভয়টা কাজ করছিলো সেটা চলে গেছে । ওর কেবল মনে হচ্ছে ও কোন এডভেঞ্চারে বের হয়েছে । ওকে রক্ষার জন্য সাদিক ওর সাথেই রয়েছে । প্রথমে সাদিককে ওর ঠিক পছন্দ না হলেও এখন কেমন একটা নির্ভরতা এসেছে ছেলেটার উপর । হ্যা উপর থেকে একটু রুক্ষ স্বভাবের তবে নিকিতাকে বাঁচাবেই ।

আজকে এই রিসোর্টে প্রবেশের পর থেকেই মনটা আরও ভাল হয়ে গেছে । ওরা যখন ঢুকছিলো তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল । রুমের বারান্দার এসে সামনের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল । মনের ভেতরের ভয় টুকু একেবারে দুর হয়ে গেল ।

আবীর আহমেদ এবং তার স্ত্রীর সাথে সময়টা বেশ ভাল কেটেছে । ওনারা অনেক বেশি আন্তরিক । এতো বেশি আন্তরিক যে নিকিতার কেবলই মনে হচ্ছে যে ওনারা নিকিতার ব্যাপারে একটু বেশিই আগ্রহী । এটাই নিকিতার কেমন যেন একটু অস্বাভাবিক মনে হয়েছে একটু । তবে সেটা সেটা খুব একটা আমলে নেয় নি ।


নিকিতা আর সাদিকের রুমটা পাশাপাশিই । বারান্দাটা এক সাথে লাগানো । রাতে খাওয়া শেষ করেই চলে এল বারান্দায় । এসে দেখলো সাদিক আগেই বসে আছে ওখানে । সে নিজেও বারান্দা বসে রয়েছে । চোখটা দুরের পাহাড়ের দিকে ।

নিকিতা পাশে গিয়ে বসলো । সাদিক সেদিকে না তাকিয়েই বলল
-আবীর সাহেবের স্ত্রী তোমার মনকে খানিকটা অস্বস্থিতে ফেলছে, তাই না ?

নিকিতা অবাক হয়ে তাকালো সাদিকের দিকে । বলল
-আপনি কিভাবে বুঝলেন ?
-জানি না । তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই । এখানে সব কিছু পার্ফেক্ট মনে হচ্ছে । পরিবেশ এমন হয় না । তুমি কি লক্ষ্য করেছো যে রিসোর্টে আর কেউ নেই । কেবল আমরা দুজন আর ওনারা দুজন ।
-এই সময় হয়তো টুরিস্ট সিজন না ।
-তারপরেও । এই রিসোর্টের সব সময়ই মানুষ আসে । শীত কিংবা গরম । সব সময় ! তাহলে । এটার নাম আমি আগেও শুনেছি । আসলে এইটা দেখেই আমি এখানে থাকতে রাজি হয়েছিলাম কিন্তু এখানে চেকইন করার পর থেকেই মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই । আমরা কাল সকালেই এখান থেকে চলে যাবো । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !

নিকিতা মাথা নাড়াতেই একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হল । মনে হল যেন ওর পুরা পৃথিবীটা দুলে উঠলো । ভুমিকম্প কি হচ্ছে ?
পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল । সাদিকের কাধে হাত রাখলো । সাদিক ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-কি হল ?
-জানি না । কেমন যেন মাথাটা ঘুরে উঠলো ।

মাথা ঘোরা নিয়েই নিকিতা লক্ষ্য করলো সাদিকও কেমন যেন করছে । সাদিক কোন মতে বলল
-খাবার ! আমাদের খাবারে কিছু একটা মেশানো হয়েছিলো !!

নিকিতার মাথাটা আরও জোরে জোরে চক্কর মারতে লাগলো । পুরোপুরি জ্ঞান হারানোর আগে নিকিতা কেবল দেখলো সাদিক ওকে নিয়ে রুমের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে । কিন্তু নিকিতার পক্ষে আর পা তুলে রাখা সম্ভব হল না । মেঝের নরম কার্পেটে লুটিয়ে পড়লো সে !



আট

নিকিতার মনে হচ্ছে ও কোন আরামদায়ক কোন বিছানাতে ঘুমিয়ে আছে । বিছানাটা আস্তে আস্তে দুলছে । নিকিতার ওর ঘুমটা আরও একটু আরাম দায়ক হচ্ছে । কিন্তু তারপরেই ওর সব কথা মনে পড়ে গেল । ও কিভাবে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছিলো । সেটা মনে হতেই সে ধড়ফড় করে জেগে উঠলো । উঠতেই অনুভব করলো ও একটা গাড়িতে রয়েছে । গাড়িটা চলছিল সেই দুলুনিতেই একটা আমারদায়ক অনুভুতি হচ্ছিলো । পাশে তাকাতেই দেখলো আবীর আহমেদের স্ত্রী নিলিমা আহমেদ বসে আছে । ওর শরীরের সাথে সিটবেল্ট দিয়ে আটকানো রয়েছে তাই ও নড়তে পারছে না । ওর হাতদুটো পেছন দিক দিয়ে বাঁধা রয়েছে ।
নিলিমা আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ?

নিকিতা যেন খুব একটা মজার প্রশ্ন করেছে, এমন একটা ভাব করে নিলিমা হেসে উঠলো ।
-তুমি আমার কাছে যাচ্ছো মাই ডিয়ার !

কথাটা নিলিমা আহমেদ বলে নি । কন্ঠটা চিনতে পারলো ও । আকসার আহমেদ ! ড্রাইভারের পাশে বসে আছে সে । ওর দিকে ফিরে আছে হাসি মুখে । ওর দিকে তাকিয়ে আবার বলল
-এবার থেকে তুমি আমার কাছেই আসবে !

নিকিতা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো । এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আকসার আহমেদকে দেখলো সে । প্রথম যেদিন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ওদের বাসায় এসেছিলো সেদিনই দেখেছিল । নিকিতার মনে একটা তীব্র ভয় দেখা দিল ।

কিন্তু তারপরেই মনে হল সাদিক কোথায় ? ওর খাবার কিছু মেশানো হয়েছিলো তার মানে সাদিকেরও খাবারে কিছু মশানো হয়েছিলো । সেও নিশ্চয়ই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো । ওর মনের কথা মনেই রয়ে গেল । আকসার আহমেদ বলল
-তোমার বডিগার্ড কে খুজছো ?
-সাদিক কোথায় ?
-তোমার বডিগার্ডকে এমন জায়গায় পাঠিয়েছি যে ওর বডি আর কেউ খুজে পাবে না ।
-মানে ? কোথায় সে !

বলতে বলতেই আকসার আহমেদ জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো । নিকিতা সেদিকে তাকাতেই ওর চোখে পড়লো রাস্তার পাশের খাদের দিকে । ওর মন বিশ্বাস করতে চাইছে না । এমনটা হতে পারে না । কোন ভাবেই পারে না । আসকার আহমেদ যেন ওর মনের কথাটাই বুঝতে পারলো । বলল
-মাঝে মাঝেই এই পাহাড় থেকে গাড়ি ছিটকে পড়ে । তোমাদের জিপ গাড়িটাও ছিটকে পড়েছে ।
-না !
আসকার আহমেদ কেবল একটু হাসলো । আর কোন কথা বলল না ।

নিকিতার মনে একটু আগে যে ভয় করছিলো সে স্থানে একটা তীব্র হাহাকার জেগে উঠলো । সাদিককে ওরা মেরে ফেলেছে । এই কথাটা ও মেনে নিতেই পারছে না । একটু আগেও সে নিকিতার সাথে ছিল ।

নিকিতা দেখলো আকসার আহমেদ ফোন বের করে কাকে যেন ফোন দিচ্ছে । মৃদ্যু স্বরে বলল, আমরা আসছি । সব রেডি রাখো !



নয়
সাদিকের মনে হল কেউ যেন ওর নাম ধরে ডাকছে । খুব দুর থেকে মৃদ্যু ভাবে কানে আসছে কথাটা ! কেউ ওর নাম ধরে ডাকছে বারবার । যেন কোথাও ট্রেন ছুটে যাচ্ছে । এখনই ওকে উঠতে হবে । নয়তো খুব বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাবে ।
কেউ সাহায্যের জন্য হাত বাড়াচ্ছে ওর দিকে । একটা আট বছরের মেয়ের মুখ ফুটে উঠলো ওর সামনে । ছেলেটার গায়ের রং ফুটফুটে ফর্সা । ওর দিকে তাকিয়ে চিৎকার করছে । বারবার আরবিতে কিছু বলছে । ভাষা না বুঝলেও ছেলেটা যে ওর কাছে সাহায্য চাইছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । নিজের কাভার ছেড়ে উঠে দাড়ালো ও তার সাথে সাথেই একটা গুলি এসে লাগলো ওর বাম কাধে । আর একটা মর্টার সেল এসে পড়লো ঠিক ছেলেটা যেখানে পড়ে ছিল সেখানে ।

একটা তীব্র ধাক্কা খেয়ে সাদিক উড়ে চলে গেল পেছনের দিকে । জ্ঞান হারানোর আগে কেবল দেখতে পেল যে ছেলেটার ছিন্ন ভিন্ন শরীর এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়েছে ।

সাদিক চোখ মেলে তাকালো । এই একটা দৃশ্যই ওকে দিনের পর দিন ঘুমাতে দেয় নি । এই ঘটনার পরেই ও আর্মি থেকে রিজাইন দিয়ে চলে আসে !

সাদিক এদিক ওদিক তাকালো । একটা সমতল স্থানে সে পড়ে আছে । চারিদিকে বড় বড় গাছপালা দেখা যাচ্ছে । দুরে দেখা যাচ্ছে উচু পাহাড় । উঠতে গিয়ে লক্ষ্য করলো ওর শরীরের প্রচন্ড ব্যাথা । কিন্তু একটা জিনিস লক্ষ্য করলো যে ওর ভেতরে কোন হাড় ভাঙ্গে নি । কোন মতে উঠে বসলো ! বসতেই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো ওর ঠিক সামনেই একটা আগুনের কুন্ডলী । রাত হয়ে গেছে অনেক । আকাশে তারা উঠেছে ।
ওকে কেউ বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে ?
কে ?
নিকিতা কোথায় ?

প্রশ্নটার উত্তর পাওয়া গেল খুব জলদি । বনের থেকে রাফায়েলকে বের হয়ে আসতে দেখলো ।
-আপনি ?
-জ্ঞান ফিরেছে তাহলে ? কেমন লাগছে এখন ?
-নিকিতা কোথায় ?


সাদিকের সব কিছু মনে পড়লো । কিভাবে এবং কত সহজে ওরা আকসার আহমেদের ঝালে ধরা পরলো সেটা ভাবতেই নিজেকের চুপ ছিড়তে ইচ্ছে করল ওর । সাদিক বলল
-এখন কি হবে ?
-আমি জানি না । নিকিতাকে আকসার আহমেদ ওর নিজের আস্তানায় নিয়ে গেছে ।
-চলেন তাহলে । ওখান থেকেই ওকে নিয়ে আসতে হবে !
রাফায়েল তবুও আগের জায়গাতেই বসে রইলো । বলল
-আমি সব জায়গাতে যেতে পারি না । সেখানে আমি ঢুকতেই পারবো না ।
-আপনি পারবেন না । আমি পারবো তো । আমি যাবো !
-আপনি গিয়েও কিচ্ছু করতে পারবেন না । নিকিতাকে কে কেউ বাঁচাতে পারবে না ।

সাদিক উঠে দাড়ালো । আবারও একটা তীব্র ব্যাথা ওর শরীর জুড়ে বয়ে গেল তবে সেটা গ্রাহ্য করলো না । উঠে দাড়িয়ে বলল
-আপনি বসে থাকুন । আমি যাবো ।
-আপনি মারা পড়বেন । গিয়ে কোন লাভ হবে না ।
-পড়লে পড়বো ! কিন্তু দ্বিতীয়বার আমি এই বোঝা মাথায় নিয়ে বাঁচতে পারবো না । আপনি জানেন আফগানস্থানে আমি যখন ছিলাম আমার চোখের সামনে আট বছরের একটা ছেলে মর্টার সেলের আঘাত পেয়ে মারা গিয়েছিলো । ছেলেটার নাম ছিল আয়াত । আমরা যেখানে ক্যাম্প করে ছিলাম ওটার ঠিক পাশেই ছিল ওদের বাসা । প্রায়ই বিকেলে আমি ওদের সাথে ফুটবল খেলতাম । ওদের বাসায় খানাও খেয়েছি আমি । ওদের কে কথা দিয়েছিলাম যে আমি ওদেরকে রক্ষা করবো । আমি পারি নি । কিন্তু এইবার আর তা হবে না । নিকিতা আমার উপর ভরসা করেছিলো । আমি ওকে রক্ষা করবো, যদি না পারি তাহলে রক্ষা করতে গিয়ে মারা পড়বো ! আপনি আমাকে সাহায্য করলে করবেন নয়তো না করবেন কিন্তু আমি যাবোই ।


দশ

তারপর কেটে গেছে আরও একটা সপ্তাহ । এই একটা সপ্তাহে সাদিককে আটকে রাখা বেশ কষ্টের ছিল । সে কোন ভাবেই অপেক্ষা করতে রাজি নয় । রাফায়েল তাকে অনেক কষ্টে ধরে রেখেছিলো । তাকে বলেছিলো একটা ক্ষুদ্র সম্ভবনাই আছে । নির্দিষ্ট সময়ের আগে নিকিতাকে ওরা কিছুই করবে না । যখন ইমুপ্সা নিকিতার দেহে প্রবেশ করা শুরু করবে তখনই বলা চলে আসল সুযোগ । এই সময়টাতে আকসার আহমেদের উপর থেকে ইমুপ্সা প্রভাব থাকবে না । সে একেবারে মানুষ হবে এবং এই সময়টাতেও ইমুপ্সা একেবারে শক্তিহীন থাকবে । আমাদের তখনই হামলা করতে হবে ।

সাদিক বলল
-কিন্তু এর আগেই যদি ওরা নিকিতাকে কিছু করে ফেলে ?
রাফায়েল বলল
-কোন ভাবেই না । সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় আছে । এক মিনিটও ওদিক ওদিক হওয়ার জো নেই । সেই নির্দিষ্ট সময়ের আগে ওরা নিকিতাকে কিছুই করবে না । এমন কি ওর কোন ক্ষতিও হতে দিবে না । এমনি নিকিতা নিজে চাইলেও সেটা করতে পারবে না ।

এই সাতটা দিন সাদিকের জন্য অপেক্ষা করা অনেক কষ্টের ছিল কিন্তু ওর কিছুই করার ছিল না । এই সাত দিন কেবলই নিজেকে তৈরি করার কাজে লাগিয়েছে । রাফায়েলের ভাষ্যমতে আকসার আহমেদ তার মুন্সগঞ্জের ফার্মহাউজের নিচে ইমুপ্সার মন্দির বানিয়েছে । সেখানেই হবে তার যাবতীয় পুজা আর্চনা । সেখানেই ওদের যেতে হবে ।



ওরা যখন নির্দিষ্ট স্থানে এসে হাজির হল তখন রাত প্রায় এগারোটা বেজে গেছে । ওরা অপেক্ষা করতে লাগলো ফার্ম হাউজ থেকে বেশ খানিকটা দুরে । দুর থেকে ফার্ম হাউজটা যেন খাঁ খাঁ করছে । কোথাও কেউ নেই মনে হচ্ছে । কিন্তু ওরা জানে পুরো বাসাটাকে নিরাপত্তা দিয়ে রাখা হয়েছে । দরজা দিয়ে প্রবেশ করা তো দুরে থাকুক, বাড়ির দশ মিটারের ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে গেলেই তার শরীরের ঝাঝরা হয়ে যাবে বুলেকের আঘাতে ।


রাফায়েল বলল
-আর কিছু সময় পরেই প্রতিস্থাপন শুরু হবে । অর্থাৎ আকসার আহমেদ যে বলয়ের মাঝে থেকে এসেছে সেটা কেটে যাবো । যত সময় ট্রান্সফার চলবে তত সময় তার অ্স্বাভাবিক কোন ক্ষমতা থাকবে না । এই সময়েই আপনাকে ঐখানে প্রবেশ করতে হবে নিকিতাকে আলাদা করতে হবে । আর সম্ভব হলে এই ছুরিটা আমুলে বিধিয়ে দিতে হবে ইমুপ্সার বুকে । কিন্তু এটা আপনাকে করতে হবে একা । আমি এই বাসার ভেতরে ঢুকতে পারবো না ।
সাদিক বলল
-আপনি তখনও এই কথা বলেছিলেন । কেন ঢুকতে পারবেন না ?
-আপনি আমাকে কি ভাবছো আমি ঠিক জানি না তবে আমি আপনার মত নই । আমার জন্ম কিংবা আমি যেভাবে এখানে এসেছি সেটা আমাকে এটার অনুমুতি দেয় না । ইমুপ্সা এন্টিটিদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ক্ষমতা আমার নেই যেমনটি ওদেরও নেই । আমি কেবল তোমাকে সাহায্য করতে পারি । তবে ....।
সাদিক বলল
-তবে কি ?
রাফায়েল নিকের পকেট থেকে একটা সাদা শিশি বের করে ওর হাতে দিল । তারপর বলল
-যদি মনে হয় শেষ রক্ষা কোন ভাবেই হল না তখন এই বোতলটা মাটিতে ফাঁটিয়ে ফেলবেন । আমি হয়তো তখন কোন সাহায্য করতে পারবো । আর আপনার সাহায্যের জন্য আমি আরেকটা ব্যবস্থা করেছি ।
-কি ?
-সময় হলেই দেখতে পারবেন । কিন্তু প্রধান কাজ আপনাকেই করতে হবে !


সাদিক ঘড়ির দিকে তাকালো । আর মাত্র কয়েক মিনিট বাকি ! সময় যেন কাটছেই না । বারবার নিকিতার চেহারাটা ফুটে উঠছে সামনে । সাদিক মনে মনে বলল, আর কটা মিনিট নিকি আমি আসছি । তোমাকে কিছু হতে দিবো না । কিছু না !

ঘড়িতে একটা বাজতেই বাড়ির গেটের কাছে একটা বড় বোমা ফাঁটলো ! সাদিক খানিকটা কেঁপে উঠলো । এটা কোন ভাবেই আশা করে নি । রাফায়েলের দিকে তাকালো । ততক্ষনে গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে ।
রাফায়েলের দিকে তাকিয়ে বলল
-এরা কারা ?
-আর্মি অব গড ! মনে নেই নিকিতার উপর যারা হামলা করেছিলো ! আমার বাসায় যারা আক্রমন করেছিলো ।
-এরা এখানে কেন ?
-এরা আপনাকে ব্যকআপ দিবে । সবার চোখে এড়িয়ে ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করবে ! আকসার আহমেদের আর্মিরা ব্যস্ত থাকে এদের নিয়ে আপনার কাজ হবে আকসার আহমেদ সামলানো !

সাদিক আর কিছু ভাবলো না । এখনই তাকে ভেতরে যেতে হবে । সময় হয়ে গেছে । হাতে খুব বেশি সময় নেই ।


এগারো

নিকিতার খুব বেশি ভয় করছে । ওকে একটা বেদির উপর শুইয়ে রাখা হয়েছে উপুর করে । ওর হাত দুটো মাথার পাশ দিয়ে বেদীর উপরে শোয়ানো । সে দুটো হাত লোহার আংটা দিয়ে দিয়ে আটকানো বেদির সাথে । একই ভাবে গলার কাছেও একটা আংটা দিয়ে গলাটাও আটকানো শক্ত ভাবে । একই ভাবে দুই পা এবং কোমড়ের কাছেও আটকানো লোহার আংটি দিয়ে । ওর শরীরের কোন প্রকার কাপড় নেই । পুরো শরীরে তেল জাতীয় কিছু মাখানো হয়েছে । নিকিতা একটুও নড়তে পারছে না । ওর চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো । তখনই দেখলো বেদির পাশে সেই নিলিমা আহমেদ এসে দাড়ালো । মহিলার চেহারা ভয়ানক সুন্দর কিন্তু নিকিতার কেবলই মনে হচ্ছে সেখানে একটা কুৎসিত কিছু রয়েছে । নিকিতার দিকে তাকিয়ে বলল
-আর কিছু সময় সোনা । কোন কষ্ট হবে না তোমার !

নিকিতা কিছু বলতে গিয়েও বলল না । চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সেটা আটকে রেখেছে । বারবার সাদিকের কথা মনে হচ্ছে । নিকিতা কোন মতে মাথা ঘুরিয়ে ডান দিয়ে তাকিয়ে দেখলো নিলিমা আহমেদ নিজের পোষাক খুলে পাশের বেদির উপর শুয়ে পড়লো । একই ভাবে তার হাত পাও আটকে দেওয়া হল ।

তারপর একটা অদ্ভুদ মন্ত্র কানে এল ওর । কিছু পরপরই সেই আওয়াজটা কানে এল । যেন ছোট বেলার ঘুম পাড়ানির গানের মত । নিকিতা বুঝতে পারলো গানটা ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে । নিকিতা আপ্রান চেষ্টা করলো জেগে থাকার কিন্তু খুব একটা লাভ হল না । পুরোপুরি ঘুমানোর আগে কেবল অনুভব করলো কোথাও যেন একটা বিস্ফোরনের আওয়াজ হল ।


আকসার আহমেদ চমকে উঠলো । বাইরে তীব্র গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে । আকসার আহমেদ একটু টেনশন পড়ে গেল । এই সময় তার ক্ষমতা বলতে গেলে শূন্যের কাছা কাছি । অবশ্য যে বাহিনী তিনি ঠিক করেছেন টা দিয়ে বাইরের সব কিছু অন্তত ঘন্টা খানেক আটকে রাখা সম্ভব । আর এই কেবল এই ঘন্টাখানেকই তার দরকার । একমাত্র একবার ট্রান্সফার শেষ হোক তাহলে আর কোন সমস্যা নেই । দেশের পুরো বাহিনী এসে দাড়ালেও কেউ তার কিছু করতে পারবে না ।

ট্রান্সফার শুরু হয়ে গেছে । তিনি দেখতে পাচ্ছেন কিভাবে বিন্দু দিন্দু প্রানশক্তি ইমুপ্সার শরীর থেকে নিকিতার শরীরের ভেতরে যাচ্ছে । তিনি মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে দেখতে লাগলো ।


আর ঠিক সেই সময়েই খুব কাছেই গুলির আওয়াজ হল । আকসার আহমেদ চমকে গিয়ে দেখলেন মন্দিরের দরজাটা নড়ে উঠছে । একটা প্রহরী উল্টে পড়লো তারপরই তাকে দেখতে পেল সে ।

মেজর সাদিক !
এই লোক এখানে কিভাবে এল ! আকসার আহমেদ কি করবে বুঝতে পারলেন না । এতো গুলো বছর ধরে তিনি এই কাজ গুলো করে যাচ্ছে কোন সমস্যা হয় নি কিন্তু আজকে কি হল ?

পিস্তলটা দিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে । কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না । এখন যে যাই করুক না কেন ভাগ্য তার পক্ষ্যে থাকবে না । মেজর সাদিক বলল
-খবরদার চালাকির চেষ্টা করবেন না । একটুও নড়বেন না !

ট্রান্সফার শেষ হতে এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি ! এখন কি করবে সে ! আকসার আহমেদ বলল
-দেখ মেজর ! এই মেয়েটা মরলে তোমার কিছু যাবে আসবে না । এটা কেবলই তোমার একটা জব আর কিছু না ! আমার সাথে চলে এস জীবনে যা চাইবে তাই পাবে !

সাদিক কোন কথা বলে আরেকটু এগিয়ে এল । নিকিতা থেকে কয়েক হাত দুরে । ওর দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে । আস্তে আস্তে নিকিতার চেহারা বদলাতে শুরু করেছে । সাদিক একভাবে সেদিকে তাকিয়ে রইলো । আকসার আহমেদের মনে হল এই সুযোগ । তিনি সাদিককে লক্ষ্য করে লাফ দিল । কিন্তু সেখানে পৌছাতে পারলো না । তার আগেই সাদিক সাবধান হয়ে উঠেছে । দুই পা পিছিয়েই সোজা গুলি করলো । গুলিটা লাগলো আকসার আহমেদের ডান কাধে । তিনি পড়ে গেলেন । কাধ চেপেই গোঙ্গাতে লাগলো !



সাদিককে দ্রুত কাজ করতে হবে । রাফায়েল বলেছিল নিকিতাকে যথা সম্ভব বেদির উপর থেকে সরিয়ে দুরে নিয়ে রাখতে হবে । তাহলেই ট্রান্সফার বন্ধ হয়ে যাবে ! হাত পায়ের আংটা গুলো খুলে দিয়ে ওকে বেদি থেকে দুরে নিয়ে এল । নিকিতা তখনও অচেতন হয়ে পড়ে আছে । নিকিতার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করলো না । আগে ইমুপ্সাকে শেষ করতে হবে ।

সাদিক রাফায়েলের দেওয়া ছুরিটা হাত নিয়ে অন্য বেদির সামনে এসে দাড়ালো । যেখানে নিলিমা চৌধুরী শুয়ে আছে । মেয়েটার দিকে তাকিয়ে সাদিক কিছু সময় ইতস্তত করলো । নিঃস্পাপ একটা মেয়ে শুয়ে আছে যেন । এই আস্তে ছুরিটা তার বুকে বিধিয়ে দিতে সাদিকের মন চাইলো না । কিন্তু এই অশুভ জিনিসটাকে এই পৃথিবী থেকে দুর করতেই হবে ।

ছুরি তুলে তখন সে নামিয়ে আনতে যাবে তখনই পেছন থেকে একটা কিছু এসে আঘাত করলো তাকে । সাদিকের হাত থেকে ছুরিটা দুরে পরে পড়ে গেল । পেছনে তাকিয়ে দেখে আকসার আহমেদই উঠে দাড়িয়েছে । তার হাতে একটা লোহার রড । সেটা নিয়ে আবার সাদিকে মারতে এল কিন্তু এইবার সাদিক প্রস্তুই ছিল । ডান দিকে পাশ কাটিয়ে ফেলল । তারপর আকসার আহমেদের ডান হাতটা ধরে ফেলল । এই পাশেই তার গুলি গেছেছিলো । তারপর দ্রুত দুটো ঘুসি চালালো মুখে আর পেটে ।
হাত থেকে রড পরে গেল । সে নিজেও মাটিতে পড়ে গেল আবার । শেষ একটা লাথি চালালো তার পেট বরাবর । তারপর আবার ছুটলো বেদির দিকে । ছুরিটা বিধাতেই হবে ।

ছুরিটা একটু দুরেই পরে ছিল । সেটা হাতে নিয়ে আবারও ফিরে এল সেই বেদির কাছে । এবার ছুরিটা তুলে ধরলো উপরে । কিন্তু তখনই দেখলো বেদিতে শুয়ে থাকা নিলিমা ওরফে ইমুপ্সা চোখ মেলে তাকিয়েছে । এক ঝটকাতে হাতের আংটা ছুটিয়ে ফেলল সে । তারপর সাদিকে এক হাত দিয়ে ধাক্কা দিল । সাদিক যেন উড়ে গিয়ে পড়লো সামনের দেওয়ালে !

একে একে সব গুলো আংটা পাট কাঠির মত খুলে ফেলল নিলিমা আহমেদ । সাদিক অবাক বিশ্ময়ে দেখলো সুঠম দেহের এক নগ্ন সুন্দরী নারী ওর দিকে এগিয়ে আসছে । কেবল তার চোখে যেন আগুন জ্বলছে !



ইমুপ্সা এসে আবারও সাদিককে এক হাত দিয়ে উচু করে তুলে ধরলো । ছুরে ফেলে দিলো আবারও । মাথা ঠুকে গেল ওর দেওয়ার সাথে । মাথাটা যেন ঝিমঝিম করতে লাগলো !

সাদিক কোন ভাবেই বুঝতে পারছিলো না যে এই মেয়ের গায়ে এতো আশুঢ়ে শক্তি কিভাবে এল । কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছিলো যে এই অশুভ মেয়ের কাছ থেকে তার মুক্তি নেই । হঠাৎই ইমুপ্সা বলে উঠলো
-ঐ মেয়ের জন্যই তুই এমন টা করলি ? আমাকে গ্রহন করতে দিলি না । দাড়া আগে ওকেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় করে নেই ।

এই বলে ঘুমন্ত নিকিতার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো । সাদিকের মত এই এতো কষ্ট যাকে বাঁচানোর জন্য সেই নিকিতাকেই মারতে যাচ্ছে । নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে সে উঠে দাড়ালো । তখনও সেই ছুরিটা ওর হাতেই ধরা রয়েছে । দুইবার ছুড়ে ফেলার পরেও সেটা হাত থেকে ছুটে যায় নি ।

সাদিক নিলিমার শরীরের উপরে গিয়ে পড়তে গেল কিন্তু লাভ হল না । তার আগেই একটা হাত দিয়ে নিলিমা ওকে ধরে ফেলল । আগের মতই ওকে ছুড়ে ফেলে দিল ! এইবার এতোই জোড়ে দেওয়ার সাথে ধাক্কা খেল যে সাদিকের মনে হল ও আর বুঝি উঠতেই পারবে না । কেবল চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো নারি মুর্তিটা নিকিতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।

আর কিছু চিন্তা করলো না সে । রাফায়েলের দেওয়া শিশিটা পকেটে থেকে বের করলো । তারপর শরীরের সমস্ত শক্ত দিয়ে সেটা মেঝেতে আছার মারলো ।

সাথে সাথেই পুরো ঘর জুড়ে একটা একটা তীব্র আলোর ঝলকানি দেখতে পেল । সাদিক দেখলো সেই শিশির ভেতর থেকে একটা সাদা আলোর কিছু বের হয়ে দাড়িয়েছে ওর সামনে । অনেক টা ধোয়ার মত গুচ্ছ হয়ে দাড়িয়ে আছে । তারপর সেটা আস্তে করে সাদিকের নাক মুখ দিয়ে ওর ভেতরে প্রবেশ করলো । সাদিক অনুভব করলো ওর ভেতরে অন্য কিছু যেন একটা প্রবেশ করছে । নিজের বুকের হৃদস্পন্দনটা দ্রুত লাফাতে লাগলো !


বারো

নিকিতার যখন চোখ মেলল একটা অদ্ভুদ দৃশ্য দেখতে পেল । সেই নগ্ন মেয়েটির সাথে সাদিক লড়াই করছে । আরও ভাল করে বলল দুজন যেন পুরো ঘর ময় ছুটাছুট করছে । সাদিকের হাতে একটা ছুরি সেটা নিয়ে সে মেয়েটিকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে আর েময়েটিও যেন পালিয়ে বেড়াচ্ছে । সাদিকের কাছ থেকে পালাতে চাইছে । প্রতিবার আঘাত করতে চাইছে কিন্তু সাদিক সেটা ফিরিয়ে দিচ্ছে এবং পাল্টা আঘাত করছে । আস্তে আস্তে নিলিমা আহমেদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ছে । তারপর একটা সময় সে হার মেনে মাটিতে পড়ে গেল !

তারপর ইমুপ্সা বলে উঠলো
-আমাকে তুমি মারতে পারবে না । মারলে তুমিও মারা যাবে ! তোমাকে ওরা খুজে খুজে মারবে !
এই কথা শুনে সাদিক যেন হেসে ফেলল । বলল,
-আমি এখানে নেই ইমুপ্সা। এটা আমি না । এটা মেজর সাদিক যাকে তুমি আঘাত করেছো একটু আগে । সে তোমাকে মেরে ফেলবে । আমি না !
-না । তুমি এটা করতে পারো না ।
সাদিক আবারও হেসে ফেলল
-আমি করছিও না । এটা এই ছেলেই করবে । দেখো কিভাবে করে !
এই বলে সাদিক তার হাতে ধরা ছুরিটা উপরে তুলে ধরলো !

নিকিতা দেখলো আবার সাদিকের শরীরটা একটা ঝাকি খেল । নিকিতার মনে হল সাদিকের শরীর থেকে কিছু একটা যেন আলাদা হয়ে গেল ।
তারপর সাদিক সেই ছুরিটা আমুলে বিঁধিয়ে দিল নিলিমার বুকের ভেতরে ...



কিছুটা সময় চটফট করে করতে করতে নিলিমার দেহটা শান্ত হয়ে গেল । চোখের সামনে সেটা মাটির ছাইয়ে পরিনত হত !



নিকিতা তখনই তাকিয়ে সাদিকের দিকে । ওর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে সাদিক বেঁচে আছে ও নিজে বেঁচে আছে । ও তো ভেবেছিলো জীবনে আর কোন দিন এই মুখটা দেখতে পারে না যে ! কোন রকম উঠে গিয়েই সে সাদিককে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে ! ও নিশ্চিৎ জানে সব ভয় কেটে কেছে তারপরেও ও সাদিকের বুকঐ নিজেকে বেশি নিরাপদ মনে করলো !



পরিশিষ্ট

সেই ঘটনার পরে কেটে গেছে অনেক দিন ।আকসার আকাসার আহমেদকে ওরা আর কিছু করে নি । আর কিছু করার দরকারও পড়বে না । সে এমনিতেও ধ্বংশ হয়ে যাবে । শয়তানের সাহায্য নিয়ে যে সম্পদ তিনি অর্জন করেছেন সেটা এমনিতেও টিকে থাকবে না ।

অবঃ মেজর সাদিক এখনও নিকিতার বডিগার্ড হিসাবেই রয়ে গেছে । যদিও সাদিক আর থাকার ইচ্ছে নেই কিন্তু নিকিতা তাকে কোন ভাবেই যেতে দিবে না । তার বাবাও মেয়ের ইচ্ছে বুঝতে পেরেছেন বিধায় তিনিও সাদিকে থেকে যেতে বলেছেন।

ঐ ঘটনার কয়েকদিন পরে সাদিক আর নিকিতা দুজনেই হাজির হয়েছিলো পুরান ঢাকাতে কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও রাফায়েলের সেই বাসাটা তারা খুজে পায় নি । কাউকে জিজ্ঞেস করেও খোজ পাওয়া যায় নি । বাড়িটা যেন গায়েব হয়ে গেছে ।


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৯
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×