somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ সারপ্রাইজ

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তৃষা ওর বাবার দিকে কিছু সময় শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বলল
-কাজটা না করলে হত না ?
ওর বাবা হাসি আটকাতে আটকাতে বলল
-তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম !
-এটা কে সাইপ্রাইজ বলে ?
-কেন বলে না ?

তৃষা খুব বিরক্ত চোখে ওর বাবার দিকে তাকালো । তবে নিজের কাছেই অবাক লাগছে এই ভেবে যে ওর আসলে সেই বিরক্তি ভাবটা থাকছে না । ও চেষ্টা করছে বিরক্ত হতে কিন্তু পারছে না । তৃষার বাবা বলল
-শোন, বেশি চিন্তা করিস না । আমি ওকে কিছুই বলি নি। বলতে পারিস এটা একটা ভাগ্য ।
-বুঝতে পারছি । এখন তুমি তোমার কাজে যাও । আমাকে কাজ করতে দাও ।

তৃষার বাবা আর কোন কথা বললেন না । তিনি মুখে হাসি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন । তার মন মেজাজ আজ বেশ ভাল । এতো দিন ধরে তিনি কিছুতেই মেয়ের সাথে পেরে উঠছিলেন না । আজকে তার মেয়েকে ভাল বিপদে ফেলা গেছে ।

তৃষা কিছুটা সময় নিজের চেয়ারে চুপ করে বসে রইলো । কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না । কি করা উচিৎ সেটা নিয়েও ভাবতে হবে । এমন সময় ওর ফোন বেঁজে উঠলো । ফোনের দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারলো কে ফোন দিয়েছে । এই রিংটোন টা কেবল একজনের জন্য সেট করা ।

-হ্যালো !
-কি খবর ?
-ভাল ?

কন্ঠস্বর শুনেই ওপাশ থেকে অপু বলল
-কি হয়েছে ?
-কিছু না ।

যদিও জানে এসব বলে খুব একটা ভাল নেই । অপু ওর কন্ঠস্বর শুনলেই বুঝতে পারে যে ওর কিছু হয়েছে । শত চেষ্টা করেও সেটা ঢাকার কোন উপায় নেই । তবুও তৃষা আরেকবার বলল
-কিছু হয় নি ।
-কি হয়েছে ? বল তাহলে আমিও তোমাকে একটা সুসংবাদ দিবো ।
-কি সুসংবাদ ?
-আগে বল তোমার কি হয়েছে তাহলেই বলব ?

তৃষা কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । তারপর
-অফিস সমস্যা । তুমি শুনে কি করবা শুনি !
-তবুও বল শুনি !
-আরে ড্যাড মাঝে মাঝে এমন সব কাজ করে না ? আমি যে কি করবো ? যাই হোক সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না । এখন বল তোমার কি সুংবাদ !

ওপাশ থেকে কিছুটা সময় আবার নিরবতা । তারপর অপু বলল
-আমি চাকরি পেয়েছি !
-সত্যি !!
-হ্যা । একদম সত্যি । জানোই তো মাঝে মাঝে এখানে ওখানে সিভি ড্রপ করি । কবে সিভি ড্রপ করেছিলাম সেটা আমার ঠিক মনেও নেই । সপ্তাহখানেক আগে একটা আসে ।

তৃষা বলল
-কই আমাকে তো বল নি ।
-আরে তোমাকে সেদিন বললাম যে একটা কল এসেছে !

তৃষা একটু মনে করার চেষ্টা করলো । আসলেই সপ্তাহ খানেক আগে ও একবার বলেছিলো যে একটা ইন্টারভিউ কল এসেছে । ওর নাকি মনেও নেই এপ্লাই করেছিলো কি না । তাই যাবে কি না ঠিক নেই । এই জন্য তৃষাও খুব একটা গুরুত্ব দেয় নি । তৃষা বলল
-কন্গ্রাস !
অপু বলল
-শুনো এই শুকনো মুখে অভিনন্দন দিলে চলবে না । আজকে আমার সাথে দেখা করতেই হবে ! আজ .....
-আজকে কি ?
অপু কিছু বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছিলো । তারপর বলল
-নাহ আজকে দেখা করা যাবে না ।
-কেন ?
-আরে আমি যে অফিসে জয়েন করেছি, সেই অফিসে নাকি আরেক বস আছে । লেডি বস । খুব নাকি রাগী । সবাই খুব ভয় পায় তাকে । আর মাঝে মাঝে নাকি সবাইকে খুব প্যারা দেয় !
-বাহ । জয়েন করেই দেখছি সব খবর পেয়ে গেছো !
-আরে তুমি তো জানো আমি কারো সাথেও নাই পাঁচেও নাই । দেখি অনেকেই যেচে এসেই বলতেছে । লাঞ্চ আওয়ারেই বলে গেল ।
-কে বলল শুনি ?
-আরে তুমি কি চিনবা নাকি !
-না চিনি তবুও শুনি নাম ।
-ঐ যে ম্যাডামের পিএ সম্ভবত । সে নাকি সব সময় দৌড়ের উপরেই থাকে । তবে আমার মনে হচ্ছে সত্যি !
-একদিন অফিস না করতে করতেই বুঝে গেলে সব সত্যি !
-আজকে মাত্র জয়েন করলাম আজকেই আমাকে যেতে বলেছে গাজিপুর । ফ্যাক্টরী ভিজিটে । বুঝো সামনে কি প্যারা অপেক্ষা করছে !
-হুম ! আসলেই তোমার জন্য প্যারাই অপেক্ষা করছে ।
-আচ্ছা যাই হোক, এখন রাখি । পরে কথা হবে কেমন ! যদি প্রথম দিনই দেখে আমি কাজ বাদ দিয়ে এতো কথা বলছি তাহলে আমার চাকরি আজই নট হয়ে যাবে !

ফোন রেখে তৃষার মনে হল ওর মেজাজ একটু একটু খারাপ হচ্ছে । ফোন করে ওর পিএ হাসানকে ভেতরে আসতে বলল ।



অপু আসলেই কনফিউজ ছিল ওর এই চাকরিটা নিয়ে । এভাবে ওর কপালে চাকরিটা জুটে যাবে ও কোন দিন ভাবেও নি । এখন এমন হয়ে গেছে যে অনেক কোম্পানীতে এপ্লাই করলেও ডাক আসে না কিন্তু এই কোম্পানীতে ডাক চলে কিভাবে সেটা ও বুঝতে পারছিলো না । প্রথমে মনে হয়েছিলো যে হয়তো ভুয়া কল । হয়তো চাকরি দেওয়ার নামে কোন টাকা পয়সার নেওয়া পায়তারা করছে । কিন্তু যখন এতো বড় অফিসে ঠিকানাতে এসে হাজির হল তখন সব সন্দেহ দুর হয়ে গেল । সেই সাথে এও একটা ধারনা হয়েছিলো যে চাকরিটা ওর হচ্ছে না । এপোয়েন্টমেন্ট লেটারটা হাতে পেয়েও ওর ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে চাকরিটা ও পেয়ে গেছে ।

তবে তৃষাকে সারপ্রাইজ দেবেই বলেই সে কিছু বলে নি । আজকেই ওর সাথে দেখা করতে পারলে ভাল হত । কিন্তু এখন ওকে যেতে হবে গাজীপুরে । সেখানে নাকি কি একটা কাজ আছে । চাকরির প্রথমে দিকে ওকে এভাবে এতোদুর পাঠানো হবে সেটা ও ভাবতে পারে নি । বড় ম্যামের নাকি হুকুম । লাঞ্চ আওয়ারে সবাই ওকে এই ম্যামের ব্যাপারে বেশ ভয় দেখিয়েছে । অপু কদিন এখানে চাকরি করতে পারে সেটাই হচ্ছে এখন দেখার ব্যাপার ।

যাই হোক ও গাজীপুর যাওয়ারই প্লান করছিলো তখনই ওকে জানানো হল যে ওকে একা যেতে হবে না । ম্যামও নাকি যাবে এবং সে ম্যামের গাড়িতে করেই যেতে পারবে । তাই তাকে অপেক্ষা করতে বলা হল । চাকরির প্রথম দিন বসে গাড়িতে ওঠার সুযোগ । না জানি সামনে কি আছে !

পার্কিং লটে অপেক্ষা করতে লাগলো । একবার মনে হল তৃষা আরেকবার ফোন দিতে কিন্তু সেটার পরিকল্পনা বাদ দিল । সেও এখন ব্যস্ত । তাকে রাতে আবার ফোন দিতে হবে । এখন ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে রাতে তৃষার সাথে কথা বলাটা একটা অভ্যাসের মত হয়ে গেছে । কোন ভাবেই ওর সাথে কথা না ঘুম আসে না । কেবল কি ঘুম অন্য কোন কাজও করা যায় না ।

ফোন বের করে কিছু সময় ফেসবুক ব্রাউজ করতে লাগলো । একটু পরেই কালো রংয়ের একটা অডি দেখতে পেল ওর দিকে এগিয়ে আসছে । গাড়িটার সামনে দেখতে পেল ম্যামের পিএ হাসান সাহেব বসে আছে । এই লোকই তাকে সাবধান করেছিলো । পেছনে কেউ বসে তবে তার চেহারা বোঝা যাচ্ছে না ।

অপু একটু চিন্তিত হল । ড্রাইভারের সিটে পিএ বসে আছে এর অর্থ হচ্ছে ওকে বসতে হবে পেছনের সিটে । বসের পাশে ।

গাড়িটা এসে থামলো ঠিক ওর পাশেই । ও একটু দ্বিধান্বিত হয়ে পেছনের দরজারটা খুললে । তারপর মাথা নিচু করে ঢুকতে যাবে তখনই একট বড় ধরনের শক খেল । বের হয়ে আসতে যাচ্ছিলো কিন্তু গাড়ির ছাদে মাথা ঠুকে গেল ! মাঝ পথেই থেমে গেল ।

গাড়িতে তৃষা বসে আছে । ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপার ভুত দেখেছো ?
-তুমি এখানে ?

সামনে থেকে পিএ হাসান বলল
-জি ইনিই আমাদের বস । উঠে বসুন অপু সাহেব ।

আস্তে আস্তে অপুর কাছে সব কিছু পরিস্কার হয়ে উঠলো । কিভাবে ও এতো স হজে চাকরিটা পেয়ে গেল সেটাও বুঝতে কষ্ট হল না । অপুর মুখের ভাব দেখে তৃষার বুঝতে কষ্ট হল না ও আসলে কি ভাবছে । তৃষা বলল
-আমিও তোমার মত সারপ্রাইজড হয়েছিলাম । আজ সকালেই তোমাকে অফিসে দেখেছি তখন । এতে আমার কোন হাত নেই । ড্যাড আর বড় ভাইয়া মিলে করেছে সব ।
সামনের সিট থেকে পিএ হাত তুলে বলল
-আমিও হেল্প করেছি ।
তৃষা সেদিকে তাকিয়ে বলল
-সাট আপ ! এখনও বসে আছো কেন তুমি ? যাও । কাল থেকে সাত দিন অফিসে আসবা না ।

পিএ যেন খুশিই হল কথা শুনে । অপুর দিকে একটু তাকিয়ে নেমে গাড়ি থেকে । তারপরই গাড়ি চলতে শুরু করলো ।

অপু তখনও তৃষার দিকে তাকিয়ে । ওর আসলে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না । তৃষা বলল
-এভাবে তাকিয়ে থেকো না তো ! দুরে বসে থাকবা নাকি একটু সরে এসে বসবা !

অপু হেসে ফেলল । তারপর তৃষার দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বসলো । অনেক দিন এমন আনন্দময় সারপ্রাইজ পাওয়া হয় না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৮
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×