somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিডন্যাপ

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখ মেলে অনেকটা সময় আমি সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম । সিলিংটা অপরিচিত মনে হচ্ছে । এমন কি আমি যে বিছানায় শুয়ে আছি সেটাও আমার পরিচিত না । নাকি ঘুম থেকে ওঠার কারনে এমন হচ্ছে ! অথবা এমন হতে পারে যে আমি এখনও ঘুমিয়েই আছি । ঘুমে থাকলে আমার ঠিক কিছুই হুস থাকে না । অনেক টা সময় মাথাটা ঠিক মত কাজ করে না । ঘুম ভাঙ্গার পরেও সেই ঘুমের রেসটা থেকেই যায় ।

ঠিক তখনই আমার সব কিছু মনে পড়ে গেল । আমি এক ঝটকাতে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালাম ।

আমাকে গত রাতে কিডন্যাপ করা হয়েছে ! আমার শেষ স্মৃতি বলতে এটাই যে আমি হেটে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম । ঠিক সেই সময় আমার সামনে একটা মাইক্রোবাস এসে থামে । আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি পেছন থেকে কেউ আমার নাকে কিছু চেপে ধরে । তারপর আমাকে ঠেলে মাইক্রোতে ওঠানো হয় ! একটু রাত হয়েছিলো বলে রাস্তায় তেমন কেউ ছিল না । আর থাকলেও খুব একটা কাজ হত না । আমি কোন চিৎকার শুনলাম না । কেউ বলল না যে আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে ! চেতনা হারানোর আগে কেবল একটা কথাই মনে হল যে কি বেকুবের বেকুব এরা ! আমার মত ছা পোষা মানুষকে কেন এরা কিডন্যাপ করতেছে ।

আমার এখনও তাই মনে হচ্ছে । নিশ্চয়ই এরা ভুল করে আমাকে নিয়ে এসেছে । ওরা যাকে নিয়ে আস্তে যেয়েছিলো আমি কোন ভাবেই সেটা হতে পারি না । অবশ্য এই কথাটা আমি এমনি এমনি বলছি না ।

আমি একদম সাদামাটা একজন মানুষ । মানুষের সাথে আমি ঠিক ঠাক মত মিশিই না যে তাদের সাথে আমার কোন ঝামেলা বাঁধবে এবং আমার বাবা খুবই সাধারন একজন মানুষ । আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে যে টাকা চাইবে সেটারও কোন সম্ভাবনা নেই । মোট কথা আমি কিডন্যাপ হওয়ার মত কেউ না । তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আমাকে কেন এরা তুলে নিয়ে এল ?

খুবই সহজ হিসাব ! রাতের বেলা ছিল । হয়তো অন্য কারো থাকার কথা ছিল । হয়তো সে আমার মতই দেখতে খানিকটা ! আমাকে যে ভুল করে তুলে নিয়ে এসেছে সেটা আমি শতভাগ নিশ্চিত ।

তখনই আমার মনে হল যে ওরা যখন বুঝতে পারবে যে ওরা আমাকে ভুল করে তুলে নিয়ে এসেছে তখন ? তখন কি হবে ? মেরে ফেলবে ? হতে পারে ! আমার এবার সত্যিই সত্যিই একটু ভয় করতে লাগলো ? যদি এমন কিছু হয় তাহলে কি হবে ?

আমি আর কিছু ভাবতে চাইলাম না । আমার এখন কি করা উচিৎ ? এখান থেকে পালানো উচিৎ ? আমি রুমের চারিপাশটা আরও ভাল করে দেখলাম । রুমটার চেহারাটা বেশ ভাল । যে বিছানাতে ঘুমিয়ে ছিলাম সেটাও বেশ নরম ! মনেই হচ্ছে না যে আমি বন্দী হয়ে আছি । মনে হচ্ছে আমি ছুটি কাটাতে আছি !

আমি নিচে নেমে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করবো কি না এমন যখন ভাবছি তখনই সামনের দরজা খুলে গেল । তাকিয়ে দেখলাম একজন যুবক মত লোক রুমে ঢুকলো । তার পেছন পেছন একজন কোর্ট টাই পরা ভদ্রলোক ঢুকলো ! প্রথম জনের চেহারা বেশ গুন্ডা টাইপ হলেই পেছনের জনের চেহারা বেশ সম্ভ্রান্ত মনে হল । বস হবে হয়তো ।

যুবক লোকটা আমাকে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বলল

-কথা বলেন !

আমি খানিকটা কনফিউজ হয়ে ফোনটা কানে দিলাম । জানি না কার কন্ঠস্বর শুনবো । নিশ্চয়ই অপরিচিত কোন মানুষের গলা শুনবো । কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ফোনটা থেকে পরিচিত কন্ঠস্বর বের হয়ে এল ।

তৃষা !

-হ্যালো ! হ্যালো অপু !

তৃষার উদ্দিগ্ন কন্ঠস্বর শুনে আমি কেন জানি নিজেও খানিকটা বিচলিত হয়ে গেলাম । বললাম

-হ্যা । বলছি !

-তুমি ঠিক আছো ? ওরা তোমার কোন ক্ষতি করে নি তো ?

-না । আমি অজ্ঞান ছিলাম এতো সময় । কেবল ঘুম ভাঙ্গলো ।

মনে হল ও একটু টেনশন ফ্রি হল । আমাকে বলল

-তুমি কোন চিন্তা কর না । ঠিক আছে ? একদম ভয় পাবে না । আমি দেখছি সব ।

-কিন্তু এরা আমাকে কেন নিয়ে এসেছে ? আমি কি করেছি ?

-তুমি কিছু কর না । এসব কিছু ভাবতে হবে না । ঠিক আছে ? একদম চিন্তা করবা না ।

আমি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম লোকটা আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল । তারপর কথা বলতে বলতে দেখলাম ঘরের বাইরে চলে গেল । কিন্তু সেই ভদ্রলোক তখনও রুমেই রয়েছেন । একটা চেয়ার টেনে বসলেন আমার সামনে । আমার কিছু বলা উচিৎ তবে কি বলব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । ভদ্রলোক নিজেই আগে কথা বলল

-তোমাকে এখানে কেন নিয়ে আসা হয়েছে জানো কিছু ?

-বুঝতে পারছিলাম না। তবে এখন বুঝতে পারছি । আপনারা তৃষার কাছ থেকে টাকা নিবেন ।

লোকটা একটু হাসলো । তারপর বলল

-আমাকে তুমি চেন ?

-জি না । চিনি না ।

লোকটা যেন খুব মজা পেল । তারপর বলল

-আমি তৃষার বাবা!

আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । তৃষার বাবার কথা আমি তৃষার মুখ থেকে অনেক শুনেছি । কিন্তু কোন দিন ওকে দেখি নি । আজকে এখানে দেখবো সেটাও ভাবতে পারি নি । আমাকে অবাক হতে দেখে তৃষার বাবা বলল

-অবাক হচ্ছো যে তোমাকে ঠিক কেন এখানে এভাবে নিয়ে এলাম ?

-অবাক হওয়া কি স্বাভাবিক না ?

ভদ্রলোক আবারও হাসলেন । তারপর বললেন

-আমার মেয়ে যে তোমাকে ভালবাসে সেটা কি তুমি জানো ?

-হ্যা । জানি ।

-আমার মনে খানিকটা কনফিউশন ছিল । তাই এই কাজটা করতে হয়েছে । আমার কাছে সে এমন একটা ভাব নিয়ে থাকে যে তোমাকে সে ঠিক মত চেনেই না । তুমি যেন ওর পেছনে পরে আছো ।

আমি কি বলব খুজে পেলাম না । ভদ্রলোক বলল

-তুমি নিশ্চয়ই জানো যে সে যা ইচ্ছে তাই করে । কারো কথা শোনে না । তাই না ?

-হুম । জানি ।

তৃষাকে আমি খুব ভাল করে জানি । সে খুবই একগুয়ে আর জেদি । একবার যা ভাববে সেটাই করবে । কেউ সেটা আটকাতে পারবে না । তৃষার বাবা বলল

-কিন্তু তাকে অনেক কিছুইতে রাজি করাতে পারো । মানে তোমার কথা সে শোনা । একবার না আমি কয়েকবার দেখেছি । আর তোমার জন্য সে যে কি করতে পারে সেটা তো দেখছেই । তার কাছে এক কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে । এবং সে এটা দিতে রাজিও হয়ে গেছে ।

আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না । ভদ্রলোক উঠে দাড়ালেন । তখনই দেখি একজন ট্রে হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলো । আমার জন্য নাস্তা । আমার সামনেই রাখা হল । ভদ্রলোক যেতে যেতে বলল

-নাস্তা খেয়ে নাও । আর আজকের দিনটা এখানেই থাকো । সন্ধ্যায় তোমাকে পৌছে দেওয়া হবে । বাইরে বের হতে পারো ইচ্ছে করলে । আর দয়া করে আমাদের যে কথা হয়েছে এটা যেন তৃষা না জানে । তোমার আর আমার দুজনের জন্যই ভাল । কারন বিয়ের পর আমার মেয়েকে তুমি একা সামলাতে পারবে না । এই শ্বশুরের হেল্প তোমার লাগবেই ।

এই বলে তৃষার বাবা হাসলেন আবারও । তারপর বেরিয়ে গেলেন ।

তৃষা কেন যে এমন হয়েছে সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হল না । এই পরিবারের মানুষ গুলোর মাথায় সমস্যা আছে । সামনে আমার জন্য কি অপেক্ষা করে আছে কে জানে ।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×