somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বিবাহে সমাপ্তি

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছুটির দিন গুলোতে সব থেকে বিরক্ত লাগে সকাল বেলা কেউ বাসায় আসলে। সপ্তাহের পাঁচটা দিন খেটে মরি, সকালে ঠিক মত ঘুমাতে পারি না। এই ছুটির দিনেও যদি শান্তিমত ঘুমাতে না পারি তাহলে কেমন লাগে।

কলিংবেলটা সেই কতক্ষণ ধরে বেজেই চলেছে। চোখ মেলে মোবাইল খুজে বের করার চেষ্টা করলাম। প্রায় এগারোটার কাছাকাছি বাজে। এই ছুটির দিনে আবার কে এল?
বুয়া কদিন আগে বাসায় গেছে। বলে গেছে এই মাসে আর আসবে না। আর বুয়ার কাছে ঘরের চাবি আছে। সে বেল বাজাবে না।
তাহলে কে এল?
নাদিমও বাসায় নেই। আর আমার কাছে আসার কথা না কারো। আমি একটু বিরক্ত হয়েই দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। যদি অকাজের কেউ আসে, এমন ধমক দিবো!

হাই তুলতে তুলতে দরজা খুলতেই বিরক্তি প্রবল বিশ্ময়ে রূপান্তর হল। আমি নিজের চোখকে ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
বড় চাচা দাঁড়িয়ে আছে।

আমার মনে হল আমি স্বপ্নে দেখছি। এই পৃথিবীতে এখন যদি বড় চাচা কাউকে ঘৃণা করেন, সেটা সম্ভবত আমি নিজে। তিনি বলেছিলেন কোন দিন আর আমার মুখ দেখবেন না। আর সেই মানুষই আমার ঘরের দরজার সামনে। আমি কোন কথা খুজে পেয়ে কেবল তাকিয়ে রইলাম বড় চাচার দিকে। তাকে যে ভেতরে আসতে বলতে হবে সেটাও ভুলে গেছি।
বড় চাচা নিজেই বললেন
-কি এখানে দাঁড়িয়ে রাখবি? ভেতরে আসতে দিবি না?
আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম। তারপর জলদি জলদি বললাম
-আরে তা কেন! আসুন!

আমি দরজা ছেড়ে সরে দাড়ালাম। আমার মাথায় তখন কেবল একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। বড় চাচা হঠাৎ আমার বাসায় কেন?
বড় কোন ঝামেলা হয়েছে?
কিংবা অন্য কোন সমস্যা?

গত রাতেও মায়ের সাথে কথা হয়েছে। সমস্যা হলে সেটা আমি ঠিকই জানতে পারতাম। তেমন কোন ঘটনাই ঘটে নি। তাহলে বড় চাচা হঠাৎ আমার বাসায়?


বড় চাচা ঘরের ভেতরে ঢুকলো। আমি দরজা বন্ধ করে তার দিকে ফিরে তাকালাম। চাচা ততক্ষণে সোফার উপর বসে পড়েছে। আমি বললাম
-চা খাবেন?
-কে বানাবে? তুই?
-হ্যা।
-নিয়ে আয়!

আমি টিভির রিমোট টা চাচার হাতে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে হাটা দিলাম। আমার এখনও সব কিছু কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে। চাচা হঠাৎ করে আমার কাছে কেন? মাকে কি একবার ফোন দিবো?

একটা সময় ছিল বড় চাচা আমাকে খুবই পছন্দ করতেন। তার তিন মেয়ে ছিল। কোন ছেলে না থাকায় আমাকে তার পছন্দ ছিল সব থেকে বেশি। তিনি একেবারে আমাকে নিজের ছেলে করে নিতে চাইলেন। তার মেঝ মেয়ে নিশির সাথে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করলো আমার বাবাকে। বাবা বড় ভাই বলতে অজ্ঞান ছিল। তার কথা সে কিভাবে ফেলে। নিশি দেখতে শুনতে বেশ তার উপর আবার বেশ চটপটে। আমার থেকে বছর দুয়েকের ছোট।
ছোট বেলা থেকেই আমি এই কথাটাই শুনে আসছি। নিশির অন্য দুই বোন সব সময় ওকে আমার নামে খেঁপাতো। নিশি এতে খুব রেগে যেত। আমাকে খেঁপাতো তবে আমার কেন জানি ভালই লাগতো। সব কিছু নিয়ে আমি আনন্দেই ছিলাম।
সব কিছু সেই ভাবেই এগচ্ছিলো। সব আয়োজন যখন সম্পন্ন, বিয়ের আর কয়েকদিন বাকি তখন আমি বড় ধাক্কাটা খেলাম। নিশি আমার সাথে দেখা করলো। আমাকে একটা কাবিন নামা দেখিয়ে বলল সে তার এক ক্লাসমেট কে বিয়ে করেছে ছয়মাস আগে। কাবিন নামা দেখে নিশির কথার সত্যতা পেলাম। তারপর অবাক হয়ে বললাম
-বিয়ে করে ফেলেছিস ভাল কথা কিন্তু তাহলে তুই এই বিয়েতে রাজি কেন হলি?
-আব্বা কোনদিন রাফিকে মেনে নিবে না। তুমি ঠিক বিয়ের দুদিন আগে মানা করে দিবা, আর বলবা যে বিয়ে করবে না, ব্যস আব্বা চাপে পরবে তখন রাজি হবে!

আমি কেবল নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। নিশি বলল
-তুমি যদি এই কাজটা না কর তাহলে আমার সুইসাইড করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

আমি সেদিন তীব্র একটা কষ্ট অনুভব করলাম। বুঝতে কষ্ট হল না নিশিকে সেই ছোট বেলা থেকে আমি নিশিকে বেশ পছন্দ করেই এসেছি। এক প্রকার ধরেই নিয়েছিলাম যে নিশি আমার বউ হচ্ছে। তাই ভাবতে কষ্ট হচ্ছিলো।

তারপর ঘটনা সংক্ষিপ্ত। কাউকে কিছু না বলে বিয়ের আগের দিন আমি ঢাকা চলে এলাম। আর একটা চিঠি লিখে এলাম যে নিশিকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

বড় চাচা নাকি আমার এই কথা শুনে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল। তবে বাবা ভয়ানক রেগে গিয়েছিল। আমার মুখ আর দেখবেন না বলে দিলেন। বড় চাচা তার পরিবার, আমার পরিবার সবার কাছ থেকে আমি আজ দুই বছর বিচ্ছিন্ন। মা প্রথম কিছুদিন বাবার ভয়ে আমাকে ফোন না দিলেও তারপর লুকিয়ে ফোন দিত আমাকে। এখন নিয়মিতই ফোন দেয়। কিন্তু আমি গত দুই বছরে আর বাসায় যাই নি। আর আজকে স্বয়ং চাচা আমার বাসায় এসে হাজির। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

চা নিয়ে যখন চাচার কাছে গেলান তখন চাচা টিভিতে খবর দেখছে। আমি চাচাকে চা এগিয়ে দিলাম। চাচা চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন
-তুই তো বেশ চা বানাতে পারিস।
-শিখে গিয়েছি। এই আর কি।
-একা একা থাকতে তোর অনেক কষ্ট হয়, তাই না?
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না চাচা হঠাৎ এই কথা কেন বলছে। আমি ঠিক কি বলব বুঝতে পারলাম না। চাচা বললেন
-আমি তোর উপর অনেক রাগ করে আছি, জানিস!

আমি কিছুটা সময় মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম
-আমাকে মাফ করে দিয়েন চাচা! আমি আসলে....
চাচা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন
-তুই যে নিশিকে বিয়ে করিস নি এটার জন্য যতটা না রাগ করেছিলাম, কেন বিয়ে করিস নি এটা জানার পর আরও বেশি রাগ করেছি।

আমি চোখ তুলে তাকালাম। আমি নিশির ঐদিনের কথা আর কাউকে বলি নি কোন দিন। মা আমার কাছে অনেকবার জানতে চেয়েছে যে নিশিকে বিয়ে না করার পেছনে কারন কি ছিল কিন্তু প্রতিবারই আমি এড়িয়ে গেছি। চাচা কিভাবে জানলো!
-আমি তোকে নিজের ছেলের মতই জানতাম। আর তুই? একবার আমাকে বলতে পারতি না?
-আসলে চাচা.....
চাচা ধমকে উঠলেন। তারপর বললেন
-চুপ থাক, থাপ্পড় দিয়ে দাঁত খুলে ফেলবো একদম।

আমি আর কিছু বলতে পারলাম। তাকিয়ে দেখি চাচার চোখে পানি। তিনি হঠাৎই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমারও কেন জানি কান্না এল। বহুদিন পরে আপন কাউকে জড়িয়ে ধরার আনন্দ চোখে পানি এল।

চাচার কাছে জানতে পারলাম যে নিশি নাকি নিজে তাকে সব সত্য কথা স্বীকার করেছে। ঐ ঘটনাতে যে আমার কোন দোষ ছিল না সেটা বুঝিয়ে বলেছে। সেটা জানার পরেই চাচা ঢাকাতে চলে এসেছে। আমার বাবার বাসাতে গিয়েছিল প্রথমে পরে সেখান থেকে এখানে এসেছে।


তারপর চাচা নিজে আমাকে বাসায় নিয়ে গেলেন। নিশির কারনেই যে সেদিন এমন টা হয়েছিল সেটা আমার বাবাকে বললেন।
কিন্তু তখনও আমার জন্য আরেকটা বড় চমক অপেক্ষা করছিল। বহুদিন পর নিজের ভাই বোন মা বাবার সাথে দেখা করতে পেরে আমার খুব বেশি ভাল লাগছিল। তবে সবার মাঝে অন্য আরেকটা মুখ দেখতে পেলাম। একটু কষ্ট হলেও চিনতে পারলাম। নিশির ছোট বোন ঐশি। দুই বছর আগে ও ইন্টারমিডিয়েট পড়তো। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ঢাকাতেই থাকে।

বড় চমকটা ছিল যে চাচা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আমাকে তার ছেলে বানাবেনই। পাত্রী এবার ঐশি। এবং ঐশির নাকি এতে কোন আপত্তি নেই। আমার প্রথমে কিছুই এল না মাথাতে। বাবা আর চাচা মিলে কি সব আলোচনা করতে লাগলো। তারপর রাত দশটা বাজার আগেই ঐশির সাথে আমার সত্যি সত্যিই বিয়ে হয়ে গেল।

বাসর রাতে ঐশি সবার আগে আমাকে বলল,
-ঐদিন নিশি আপুর সাথে আপনার বিয়ে না হওয়ায় সব চেয়ে কে বেশি খুশি হয়েছিল জানেন?
-কে?
-আমি। আমি খুব করে চাচ্ছিলাম যেন বিয়েটা না হয়। খুব করে চাচ্ছিলাম।
-তাই নাকি?
আমি অবাক হচ্ছি ঐশির চটপটে কথা শুনে। ঐশি বলল
-আপনি হয়তো জানেন না, আপনার ফেসবুকে আমি এড আছি, অন্য নামে। আপনার সব কিছু আমি জানি বুঝেছেন। আমার কাছে কিছু লুকাবেন না। বউয়ের কাছে কিছু লুকাতে নেই!

এই বলেই ঐশি বেশ খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেল। আমি কেবল তাকিয়ে রইলাম ঐশির দিকে। এই ঘটনাটা যে এভাবে শেষ হবে সেটা আমি কোনদিন ভাবিও নি।

তারপর.....
তারপর আর না ই বা শুনলেন অন্যের বাসরের গল্প শুনতে নাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×