somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট-গল্পঃ আমি নির্দোষ

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি এখন আর রাস্তায় বের হই না । কারো সাথে কথা ঠিক মত কথা বলি না । আরও ভাল করে বললে তারা আমার দিকে কেমন চোখে তাকায় । আমি তাদের কে কত ভাবে বলার চেষ্টা করেছি যে আমি কোন ভাবেই দোষী নই । আমার কোন দোষ নেই । আমার সাথে যা ঘটে গিয়েছে সেটার জন্য আমি কোন ভাবেই দায়ী নই । কিন্তু তাদেরকে আমি কোন ভাবেই বিশ্বাস করাতে পারি নি । তারা আমার দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন আমি নিজে আমার মেয়েকে হত্যা করেছি । আমি যাদেরকে আমার জীবনের সব থেকে বেশি ভালবাসতাম তাদেরকে আমি হত্যা করেছি ।

আমার জীবনটা খুব স্বাভাবিক ছিল । ভালবাসাময় স্ত্রী আর আমাদের আদুরে মেয়েকে নিয়ে আমার জীবন কেটে যাচ্ছিলো খুব চমৎকার ভাবে । শহরের একেবারে শেষ মাথায় আমি বসবাস করতাম । একটা কাঠের দোতলা বাসাতে আমি তাদের কে নিয়ে বসবাস করতাম । জীবনের সব খুশি ছিল আমার কাছে । সকালে কাজে যাওয়ার আগে আমার বউয়ের ঠোঁটে চুমু খেতাম । তারপর মেয়েকে খুব করে আদর করে বেরিয়ে পড়তাম কাজে । আমার কাজের জায়গাটা নিজের বাসা থেকে একটু দুরে ছিল । এমন কি শহর থেকেও খানিকটা দুরেই আমি বসবাস করতাম । একটু শান্তিতে থাকতে চাইতাম সব সময় । এটা নিয়ে অবশ্য আমার পরিচিত মানুষ গুলোর মাঝে একটু কানা ঘুষা চলতো । আমি কেন এতো দুরে থাকি । আমি কেন সবার কাছ থেকে দুরে থাকতে চাই । তারা এই ব্যাপার নিয়ে অনেক কথা বলতো কিন্তু আসল কারনটা কোন দিন কেউ জানতে পারে নি । কোন দিন জানতে পারবেও না ।

আমার শহর থেকে এতো দুরে থাকার প্রধান কারনটাই ছিল আমার গোপন উপাসনা চালিয়ে যাওয়া । কাজটা চলতো আমার স্ত্রী সারজিনার ইচ্ছেতেই । সে ছিল শয়তানের উপাসক । তাকে ভালবেসে বিয়ে করার সময়ও আমি এসবের কিছুই জানতে পারি নি । কিন্তু যখন একবার যখন তাকে ভালবেসে ফেলেছি তখন আর আমার পক্ষে কোন ভাবেই তাকে ছেড়ে আসা সম্ভব ছিল না । আমি যেকোন মূল্যেই তার সাথে থাকতে সম্মত হলাম ।

তারপরই আমাদের বিয়ে হয়ে গেল । আমরা এক সাথে বসবাস করতে শুরু করলাম । শহর থেকে অনেক দুরে আমি একটা বাসা নিলাম ।সারজিনা তখনও তার শয়তানের প্রতি উপাসনা চালিয়ে যেত । আমি তাকিয়ে থাকতাম ওর দিকে । আমার চোখে আর কিছুই ছিল না । কেবল আমার মনে হত আমি ওকে সব থেকে বেশি ভালবাসি । ওর জন্য সব কিছু করতে পারি । তাই করাও শুরু করলাম ।

প্রতি পূর্ণিমাতে সারজিনার দরকার ছিল একজন যুবতীর রক্ত যার বয়স তখনও ২০ পার হয় নি । এমন একজন মেয়ে আমাকেই খুজে আনতে হত । যদিও খুব একটা কষ্ট হত না কাজটা করতে । আমি যেখানে কাজ করতাম সেটার থেকে একটু দুরে একটা জায়গা ছিল যেখানে প্রায়ই কিছু মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখতাম । তাদের মধ্যে একজন কে তুলে নিয়ে আসতাম । এমন মেয়ে যারা শহর থেকে হারিয়ে গেলেও কারো কিছু যেত আসতো না । কেউ তাদের খোজ নিত না । আমিও তাদেরকে নিয়ে আসতাম ।

বাকি কাজটা সারজিনাই করতো । আমাকে কিছু করতে হত না । মাঝে মাঝে কোন কোন মেয়ে আমাদের খাঁচা থেকে পালিয়ে যেত । কিন্টু শহর থেকে আমাদের বাসাটা এতোটাই দুরে যে সে বেশি দুর পালাতে পারতো না । সারজিনাই খুব দ্রুত তাকে খুজে নিয়ে আসতো । এবং তখন মেয়েটার অবস্থা বর্ণনা করার মত থাকতো না । তার ভেতরে কোন মতে প্রাণ থাকতো আটকে তবে খুব বেশি সময়ের জন্য না । কিন্তু একদিন একটা মেয়ের বেলাতে একটু ঝামেলা হয়ে গেল । আমাদের খাঁচা থেকে সে পালিয়ে গেল । এবং বনের ভেতরেই হারিয়ে গেল । সারজিনা তাকে সারা রাত ধরে খোজাখুজি করলো । আমিও বের হলাম কিন্তু মেয়েটাকে খুজে পেলাম না । তবে তাকে পাওয়া গেল ভোর রাতের দিকে । কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটা মারা গেছে । বনের ভেতরে কোন হিংস্র জন্তুর আঘাতে মেয়েটা মারা গেছে । শরীরের বেশ কিছুটা অংশ কেউ খেয়ে ফেলেছে ।

মৃত দেহটা দেখে সারজিনা খুব বিমর্ষ হয়ে গেল । কারন এই মাসে তার উপাসনাটা ঠিক মত সমাপ্ত হয় নি । সে শয়তানকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি । সে মনে মনে খুব ভয়ে ছিল । আমি তাকে খুব করে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু তাতে কিছুই কাজ হল না । সে খুব ভয় পাচ্ছিলো ।

আমি ওকে শান্তনা দিয়ে শুইয়ে দিলাম বিছানাতে । সারা রাত ওর অনেক পরিশ্রম গিয়েছে । ওর একটু ঘুম দরকার ছিল । তারপর ড্রয়িং রুমে বসে বসে সিগারেট খেতে শুরু করলাম । যদিও আমার বাসাতে সিগারেট খাওয়া মানা ছিল বাসাতে । সারজিনার থেকেও আমাদের ৫ বছরের মেয়ে ইমু ব্যাপারটা একদম পছন্দ করতো না । তবুও নেশ বলে একটা ব্যাপার ছিল । আমি স্বাধারনত বাসার বাইরেই ধূমপান করতাম । কিন্তু আজকে বাসাতেই শুরু করে দিলাম । ঠিক এই সময়েই দেখতে পেলাম ইমু নিচে নেমে আসছে । আমি দ্রুতই সিগারেট টা লুকিয়ে ফেললাম । সিগারেটা নামিয়ে রাখলাম পর্দার পেছনে । তারপর ইমুকে কোলে নিয়ে আবারও আদর করতে করতে ওর রুমে নিয়ে গেলাম । ওকে আরও কিছুটা সময় ঘুমাতে বললাম । আরেকটু সকাল হলে আমি ওকে নাস্তা বানিয়ে দিবো বলে ওকে আবারও বিছানাতে শুইতে দিলাম ।

ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আবার ফিরে এলাম বসার ঘরে । তখনই আমার ফোনে ফোন এসে হাজির হল । আমাকে তখনই বাসা থেকে বের হতে হল । তখন কেবল ভোরের আলো ফুটতেছে । আমি বাইরে বের হয়ে এলাম । বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলাম । ওরা সবাই এখন ঘুমুচ্ছে । কেউ এসে দরজা আটকাতে পারবে না ।

আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলাম । সকালে কাজে যাওয়ার আমাকে আরেকটা কাজে যেতে হবে । একজন গুরুত্বপূর্ন মানুষের সাথে দেখা করতে হবে । মাঝে মাঝেই আমাকে এই লোকটার সাথে দেখা করতে যেতে হয় । দরকার হলে সে আমাকে ফোন করে । ঘন্টা দুয়েক পার হয়ে গেল সেখানেই । যখন আবার আমি বাসার ফিরতো পথ ধরলাম তখনই আবিস্কার করলাম আমার সামনে সামনে একটা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে । আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম কারন এই রাস্তায় আমার বাসা ছাড়া আর কারো বাসা নেই । মনের ভেতরে একটা কু ডেকে উঠলো । আমি দ্রুত গাড়ি চালাতে শুরু করলাম ।

তারপরই আমি দেখতে পেলাম সেই অকল্পনীয় দৃশ্য । আমার বাসাটা তখন দাউ দাউ করে জ্বলছে । আমি গাড়ি দাড় করিয়ে কেবল সেদিকে তাকিয়ে রইলাম । আমার মাথায় কিছু আসছিলো না । কিভাবে আগুন লাগলো আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না । তারপরেই মনে হল সারজিনা কি বলেছিলো । সে বলেছিলো শয়তানে উপাসনা ঠিক মত হয় নি । তাই তাকে শাস্তি পেতে হবে । কিন্তু আমি ঠিক গুরুত্ব দেই নি । তবে কেমন করে আগুন লাগলো সেটা আমি পরিস্কার বুঝতে পারি । আমি সিগারেট টা রেখেছিলাম পর্দার আড়ালে ইমুর কাছ থেকে লুকানোর জন্য । সেটা আর নিতে আমার মনে নেই । সেই আগুনেই পুরো বাড়িতে লেগেছে ।
কিন্তু সামান্য ঐ সিগারেটের আগুন কি পুরো বাড়িটাকে জ্বালিয়ে দিতে পারে ?
সত্যিই কি শয়তান সারজিনাকে শাস্তি দিয়েছে !


তারপরই সবাই আমার দিকে কেমন চোখে তাকাতে লাগলো ! আমি কেবল করে এই সকালবেলা বাইরে ছিলাম যখন আমার স্ত্রী আর মেয়ে ঘরের ভেতরে আগুনে পুড়ে মারা গেল । অনেকে বলতে লাগলো আমি শুরু থেকেই অন্য রকম ছিলাম । আমার ভেতরে অদ্ভুদ কিছু লক্ষ্য করেছে আগে থেকেই । আমিই হয়তো আমার স্ত্রী আর মেয়েকে জ্বালিয়ে মেরে ফেলেছি ।

কিন্তু আমি কাউকে বিশ্বাস করাতে পারলাম না । সবাই আমার দিকে কেমন চোখে তাকাতে থাকে ! যেন আমিই ওদেরকে মেয়ে ফেলেছি । কিন্তু আসল সত্যটা কেউ জানে না । কেউ বিশ্বাস করতে চায় না । আমার কোন দোষ নেই । যদি শয়তানের ঐ ব্যাপারটা আমি বাদও দিয়ে দেই তবুও আমি নির্দোষ । যা ঘটেছে সেটা কেবলই দুর্ঘটনা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×