somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টোডা উপজাতিঃ যেখানে এক নারী একাধিক স্বামী নিয়ে বসবাস করে

২১ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মহাকাব্য মহাভারত নিয়ে একটা প্রচলিত লাইন আছে। লাইনটা হচ্ছে ‘যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে’। লাইনের এই প্রথম ভারত দিয়ে বোঝানো হয়েছে মহাকাব্য মহাভারতকে আর দ্বিতীয় ভারত মানে হচ্ছে ভারত উপমহাদেশ । অর্থ্যাৎ যে জিনিস আপনি মহাভারত বইতে পাবেন না, সেই জিনিস পুরো ভারতের আর কোথাও নেই। এই মহাকাব্যে কত কাহিনীই না বর্ণনা করা হয়েছে! এই কাহিনীগুলোর ভেতরে একটা হচ্ছে দ্রৌপদী এবং পঞ্চপাণ্ডবের গল্প । ৫ ভাইয়ের এক স্ত্রী । আমাদের সমাজে এক ভাইয়ের পাঁচ স্ত্রী থাকাটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হিসাবেই দেখা হয় কিন্তু এই পাঁচ ভাইয়ের যদি একজন স্ত্রী থাকে তাহলে ? ব্যাপারটা একবার ভাবুন ! তবে যদি বলি বাস্তবেও কিন্তু এই এক স্ত্রী কয়েকজন স্বামীর ব্যাপারটা রয়েছে। এটা একেবারে বাস্তব ঘটনা ! ভারতে টোডা নামে এক উপজাতি রয়েছে যাদের মেয়েরা একের অধিক স্বামীর সাথে একই ঘরে একসাথে বসবাস করে।



টোডা উপজাতির বসবাস দক্ষিণ ভারতে নীলগিরি পাহাড়ে । ইংরেজি উপনিবেশ স্থাপনের আগে টোডা উপজাতি ভারতীয় অন্যান্য উপজাতিদের মতই পাহাড়ের নানান উপত্যকায় বসবাস করত । উপজাতি হিসাবে টোডা জাতি ক্ষুদ্র এবং স্বনির্ভর । পূর্বে টোডা উপজাতিদের একমাত্র পেশা ছিল পশুপালন এবং দুধ উৎপাদন তবে ইংরেজ শাসন শুরুর পর থেকে এরা পশুপালন ছাড়াও আরো নানান পেশায় জড়িয়ে পড়ে। তাদের অর্থনীতি মূলত চারণভূমি ভিত্তিক এবং মহিষ নির্ভর। তাদের আয়ের প্রথম উৎস মহিষের দুধ ও মাংস। এরা মহিষের গাড়িতে করে ড্রাম ভর্তি মহিষের দুধ পার্শবর্তী হিন্দু ও নানান সম্প্রদায়কের কাছে বিক্রি করে । টোডারা এদের পার্শবর্তী সম্প্রদায় কৃষিজীবি আদিবাসী বাগাদাদেরকে দুধ ও মহিষের মাংসের বিনিময়ে কৃষি পন্য নিত। আবার বাগাদারা মাটির পাত্র, লোহার বাসনসহ নানান দরকারী জিনিস টোডাদের সাথে দুধ এবং মাংস দিয়ে বিনিময় করত । ইরুল নামক আরেক আদিবাসীদের কাছ থেকে তারা একই ভাবে বনজ জিনিসপত্র বিনিময় করত। প্রাচীন কালে এভাবেই টোডারা তাদের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখত ।



টোডা সমাজে প্রতিটি মহিলা মহিষের নাম দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। এছাড়া প্রতিটি মহিষের বংশ তালিকা সংরক্ষণ করা হয়। তবে পুরুষ মহিষদের কোন নাম দেওয়া হয় না। টোডা ধর্মে মহিষের রয়েছে এক পবিত্র স্থান। মহিষ এদের কাছে সম্মানীয়। এরা নিজেদেরকে মহিষের সন্তান মনে করে । ধর্মীয় এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মহিষের প্রশংসায় কাব্যগান গাওয়ার রীতি রয়েছে টোডা সমাজে । তবে এখানে সব মহিষকে এই সম্মানের আসনে বসানো হয় না। মহিষগুলো দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এক হচ্ছে, সাধারণ মহিষ এবং অন্য দলে আছে পবিত্র মহিষ । সাধারণত স্ত্রী মহিষ এবং প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্ন পুরুষ মহিষ গুলোকে পবিত্র মহিষ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আর বাকি দলে পড়ে সাধারণ মহিষ । পবিত্র মহিষ গুলো থাকা খাওয়া লালন পালন সব বিশেষ ভাবে করা । সাধারণ মহিষ গুলোকে পাহাড়ে ছেড়ে দেওয়া হয় । ওরা নিজেরাই ঘুরে বেড়িয়ে খাওয়া দাওয়া করে সন্ধ্যার ফিরে আসে।



এক ইংরেজ পরিচালিত আদমশুমারি থেকে জানা যায় যে ১৯০১ সালে টোডা উপজাতিদের মোট জনসংখ্য্যা ছিল ৮০৭ জন । এদের ভেতরে নারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩০৭ জন। এর ১০০ বছর পরে টোডাদের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭০০ । ১৯৫১ সালে এদের জনসংখ্যা ছিল ৮৭৯ জন, ১৯৬১ সালে ৭৫৯ জন তবে ১৯৭১ সালে তাদের জন সংখ্য্যা কমে দাঁড়ায় ৮১২ জনে । অন্যদিকে ২০০০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭০০ জনে।



প্রাচীন কালে টোডা সম্প্রদায়ের মাঝে এক ভয়ংকর রীতি ছিল । সেই সময়ে কোন কন্যা সন্তান জন্ম হলেই তাকে মাটিতে পুতে ফেলা হত। এভাবে মেয়ে শিশু হত্যার কারণে তাদের গোত্রের ভেতরে নারীদের সংখ্যা আশংঙ্কাজনক ভাবে কমে যায় । এখন অবশ্য এই প্রথা আর পালিত হয় না । এখন যে একজন নারী একাধিক পুরুষের সাথে বিয়ে করে সেটার আদি উৎস এই মেয়ে শিশু হত্যার ভেতরেই নিহিত বলে অনেকে মনে করেন। কোন পরিবারে একাধিক ভাই থাকলে তাদের সবার বিয়ে একজন মেয়ের সাথেই হয়। এবং একজন স্ত্রী নিয়ে ভাইদের ভেতরে কোন মনমালিন্য হয় না । এছাড়া একজন নারী একই পরিবারের বাইরে একই গোত্রের কিংবা অন্য গ্রামের পুরুষের সাথেও বিয়ে করতে পারে । একজন নারী সর্বোচ্চ সাতজন পুরুষকে বিয়ে করতে পারে।

১৮৩৭ সালের দিকে ইংরেজ চিত্রশিল্পী রিচার্ড ব্যারেনের আঁকা ভিউ ইন ইন্ডিয়াঃ চিফলি অ্যামাং দ্য নীলগিরী হিলস নামক এক তৈলচিত্রে (পোস্টের প্রথম ছবিটা) টোডা উপজাতির জীবন চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল । সেই ছবিটি সারা বিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল । ২১ শতকের শুরু থেকেই টোডা সমাজ ও তাদের সংস্কৃতির উপর আন্তর্জাতিক আলোকপাত শুরু হয়। ইউনেস্কো টোডা উপিজাতি এবং তাদের বসবাসের আশের পাহাড় এলাকাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে ঘোষাণা দিয়েছে।


____
এই ধরনের পোস্ট লেখার সময় আমি সাধারণত নেটে ঘাটাঘাটি করে তারপর লিখি। বেশ কিছু পোস্ট পড়ে সেগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করি । তবে এই পোস্টটা লেখার সময় এমন কিছুই করি নি । এবারের বই মেলা থেকে একটা বই কিনেছিলাম । বইটার নাম ''টোডা উপজাতি'' বইটার লেখক মনজুর রহমান শান্ত । সেই বইটা আজকে পড়ে শেষ করলাম । মনে হল সেই পড়া থেকে একটা পোস্ট লেখা যাক । বইটিতে টোডা উপজাতি বিস্তারিত লেখা রয়েছে । আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে বইটা সংগ্রহ করতে পারেন ।

ছবি গুলো ইউকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা।


বইটা

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৬
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×