somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" বাধাই হো " জীবনের রোমান্সের শুরু এখানেইঃ মুভি রিভিউ

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটাই তো জীবন । তো সেটা কি আসলাম গেলাম খেলাম আর ঘুমাল এসবেই কেটে যাবে । জীবনে তো এডভেঞ্চার, রোমান্স, হাসি কান্না সব কিছুর ই দরকার আছে । তাছাড়া জীবন উপ ভোগ করার জন্য কি কোন বয়স আছে । কোন নিয়ম আছে যে এই বয়সের পর এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না । নাকি বয়েসের বাধনে বেধে তারপর জীবন কে পরিচালনা করতে হবে । আরে জীবন তো একটাই সেটাকে কেন যান্ত্রীকতার মধ্যে ডুবিয়ে দেব । জীবন চলুক আপন গতিতে ভালবাস, এভেঞ্চার আর রোমান্সে । হ্যা সব মিলিয়ে হচ্ছে জীবন । “ বাধাই হো ” আপনি ও জীবন উপভোগ করা শিখেছেন ।

কাহিনী সুত্র

নকুল কৌশিক সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে । যে এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত আছে । তার কলিগ রিনি এর সাথে রিলেশনশীপে আছে । তাদের রিলেশনশীপ নিয়ে তারা খুশি । নকুলের একটি ছোট ভাই আছে যে উচ্চ মাধ্যমিক এ পড়ছে । এছাড়া পরিবারে আছে বাবা মা আর দাদী । সব মিলিয়ে তাদের ছোট পরিবার ।

তবে এখানেই প্রশ্ন । দাদী সব সময় নকুলের মা কে সব ব্যাপারেই দোষারোপ করেন । এমন কি ছেলেকেও বকাঝকা করতে ছাড়েন না । তেমনি একদিন নকুলের দাদী তার বউকে বকাঝকা করেছেন । নকুলের মা কষ্টে ঘরে গিয়ে একা একা কাদছেন । নকুলের বাবা তাকে স্বান্তনা দিতে যান । তার প্রকাশিত একটা কবিতা পরে শোনান । সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল বাইরে । সব কিছুই ঠিক ছিল ।

কয়েক দিন পর নকুলের মা একটু অসুস্থ বোধ করল । ডাক্তার দেখানোর পর কনফার্ম হলো যে তিনি প্রেগনেন্ট । নকুলের বাবা পরে গেলেন ঝামেলায় । এই বয়সে এসে লোকে কি বলবে । নকুলের মাও বিব্রত । এখন কি হবে । ডাক্তার বলে দিয়েছে যদি এবোরশন করতে হয় তবে যেন ৪ বা ৫ দিনের ভিতর করে নেয় । না হলে পরে অনেক সমস্যা হবে । কিন্তু না নকুলের মা বাচ্চা জন্ম দেবেন বলে ঠিক করেন ।



এই খবর শোনার পর নকুল, নকুলের ভাই আর তাদের ফ্যামিলি নিয়ে শুরু হয় ঝামেলা । শেষ পর্যন্ত কি হবে নকুলের । সমাজের চোখ কে কি তারা ভিন্ন দিকে নিতে পারবে । নাকি তাদের ফ্যামিলি একটা সারকাস ফ্যামিলিতে পরিনত হবে ।

আলোচনা

“বাধাই হো” মানে হচ্ছে অভিনন্দন । এটি হিন্দি শব্দ । সে যাইহোক, এক মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে । যেখান আছেন এক আশি উর্দ্ধো এক দাদী, এক ছেলে যার বিয়ের বয়স হয়েছে আর ছোট ছেলে যে উচ্চ মাধ্যমিক এ পড়ছে । সেখানে যদি তাদের মা প্রেগনেন্ট হয়ে যায় তবে সেটা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে । এইটা সত্য । কারন সমাজ এর স্বীকৃতি দেয় না । ৫০ উপরের বয়সের মানুষের রোমান্সের কোন অধিকার নেই ।

তাই নকুলের মা যখন প্রেগনেন্ট সেটা আশে পাশের কেউ মেনে নিতে পারেনি । তবে যাদের সাথে থাকার কথা সেই পরিবার ই সাথ ছেড়ে দিয়েছে । সমাজের কথা বলে তো দোষ নেই । সমাজ আমাদের শিখিয়েছে বাবা মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের জীবন শেষ । তারা এখন বসে থাকবে আর ধর্ম কর্ম করবে । তাদের লাইফ আছে সেটা তারা বুঝতে চায় না ।




মুভির মধ্যে এটাও তুলে ধরা হয়েছে যে একটা রিলেশনশীপ কখনো একা চলতে পারে না । রিলেশনশীপে দরকার শ্রদ্ধা । ভালবাসার আগেও দরকার শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস । কারন এই দুটি জিনিশ মজবুত হলে রিলেশনশীপ টিকিয়ে রাখা অসম্ভব নয় । এছাড়া বউ আর শ্বাশুড়ীর সম্পর্ক নিয়ে যে ভুল ধারনা আছে সেটাও কেটে যাবে হাসতে হাসতে ।

রিভিউ

এই সিনেমাটি মুক্তির আগে ট্রেইলার দেখেই লিস্টে রেখে ছিলাম । দেখবো বলে ঠিক করে রেখেছি । এই মুভিতে এক বয়স্ক দম্পতির রোমান্স তুলে ধরা হয়েছে । আমাদের এবং সমাজের একটা ধারনা জন্ম নিয়েছে যে ৫০ এর উপর বয়স মানে তার জীবন শেষ । সমাজ বয়স্ক মানুষ মানে তার জীবনের সব কিছু শেষ ।

বলে রাখা ভালো পৃথিবীর অনেক নামীদামী ব্যক্তি তাদের ক্যারিয়ার এবং লাইফ ৫০ এর উপরে গিয়ে শুরু করেছেন । যদিও সেটা আলাদা বিষয় । সব ক্ষেত্রে এটা হবে এমন নয় । তাই এটা ভেবে বসে থাকা চলবে না ।

মুভিটির বিষয়ে বলি, এটি বলা চলে সমাজের আর একটা দিক তুলে ধরা হয়েছে । সমাজ বয়স্ক মানে যাদের ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ের বয়স হয়েছে তাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দেয় । কিন্তু তাদের লাইফেও রোমান্স ভালবাসার দরকার । আর সমাজ এখানেই বাধা দেয় । না করা যাবে না । সব কিছু এখন নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে । সব কিছুতেই ভাবতে হবে সমাজ কি বলবে । মুভিটি যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন ভালবাসা রোমান্সের জন্য বয়স কোন ফ্যাক্টর নয় ।



অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের কথা বলি । আয়ুস্মান আমার প্রিয় অভিনেতার মধ্যে অন্যতম । তাকে আমি ভিকি ডোনার থেকেই পছন্দ করি । তার অভিনয় নিয়ে কোন কথা বলব না এটা আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম । এছাড়া ছিলেন সানায়া মালহোত্রা দারুন অভিনয় করেছেন । একে আপনার আমির খানে “দঙ্গল” মুভিতে ববিতার ভুমিকার দেখেছেন । নিনা গুপ্তা এর কথা বলাটা আমার জন্য কষ্টকর এই গুনী অভিনেত্রী সেই নব্বোই এর দশক থেকে দর্শকদের তার অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করে আসছেন । আরো ছিলেন গজরাজ রাও যিনি “তলোয়ার” মুভিতে ইন্সেপেক্টর ছিলেন, সাবিহা চড্ডা যিনি আয়ুস্মানের সাথে “দম লাগাকে হাইসা” মুভিতে অভিনয় করেছেন, ছিলে সুরেখা সিক্রি যদি টেলিভিশনের অন্যতম গুনী অভিনেত্রী ।

উপরে কলাকুশলীদের দেখেই বুঝা যায় যে মুভিটি কতটা দারুন হয়েছে । এক একজন তাদের নিজ গুনে স্বমহীমায় নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত । এছাড়া মুভির পরিচালক অমিত শর্মা দারুন কাজ করেছেন । এসকল অভিনেতা অভিনেত্রীর দিয়ে কাজটা বের করে নিয়েছেন । এছাড়া সমাজের এই দিকটাও তুলে ধরেছেন । সব দিক থেকে তিনি ভাল কাজ দেখিয়েছেন ।

সবশেষে বলব এর কমিক সেন্স ও হিউমার আপনাকে আনন্দিত করবে আবার ভাবিয়ে তুলবে সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে । এটাই বলব কোন মহাপুরুষ অপু বলেছেন, “ লোকে কি বলবে ভেবে তো আমার কাজ বন্ধ রাখতে পারিনা । লোকে লোকের কথা বলে ।”

বিঃদ্রঃ মুভিটির ভাল প্রিন্ট এখনো আসেনি । আর এই রিভিউ সম্পূর্ন আমার ব্যক্তিগত মতামত ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×