একটাই তো জীবন । তো সেটা কি আসলাম গেলাম খেলাম আর ঘুমাল এসবেই কেটে যাবে । জীবনে তো এডভেঞ্চার, রোমান্স, হাসি কান্না সব কিছুর ই দরকার আছে । তাছাড়া জীবন উপ ভোগ করার জন্য কি কোন বয়স আছে । কোন নিয়ম আছে যে এই বয়সের পর এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না । নাকি বয়েসের বাধনে বেধে তারপর জীবন কে পরিচালনা করতে হবে । আরে জীবন তো একটাই সেটাকে কেন যান্ত্রীকতার মধ্যে ডুবিয়ে দেব । জীবন চলুক আপন গতিতে ভালবাস, এভেঞ্চার আর রোমান্সে । হ্যা সব মিলিয়ে হচ্ছে জীবন । “ বাধাই হো ” আপনি ও জীবন উপভোগ করা শিখেছেন ।
কাহিনী সুত্র
নকুল কৌশিক সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে । যে এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত আছে । তার কলিগ রিনি এর সাথে রিলেশনশীপে আছে । তাদের রিলেশনশীপ নিয়ে তারা খুশি । নকুলের একটি ছোট ভাই আছে যে উচ্চ মাধ্যমিক এ পড়ছে । এছাড়া পরিবারে আছে বাবা মা আর দাদী । সব মিলিয়ে তাদের ছোট পরিবার ।
তবে এখানেই প্রশ্ন । দাদী সব সময় নকুলের মা কে সব ব্যাপারেই দোষারোপ করেন । এমন কি ছেলেকেও বকাঝকা করতে ছাড়েন না । তেমনি একদিন নকুলের দাদী তার বউকে বকাঝকা করেছেন । নকুলের মা কষ্টে ঘরে গিয়ে একা একা কাদছেন । নকুলের বাবা তাকে স্বান্তনা দিতে যান । তার প্রকাশিত একটা কবিতা পরে শোনান । সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল বাইরে । সব কিছুই ঠিক ছিল ।
কয়েক দিন পর নকুলের মা একটু অসুস্থ বোধ করল । ডাক্তার দেখানোর পর কনফার্ম হলো যে তিনি প্রেগনেন্ট । নকুলের বাবা পরে গেলেন ঝামেলায় । এই বয়সে এসে লোকে কি বলবে । নকুলের মাও বিব্রত । এখন কি হবে । ডাক্তার বলে দিয়েছে যদি এবোরশন করতে হয় তবে যেন ৪ বা ৫ দিনের ভিতর করে নেয় । না হলে পরে অনেক সমস্যা হবে । কিন্তু না নকুলের মা বাচ্চা জন্ম দেবেন বলে ঠিক করেন ।
এই খবর শোনার পর নকুল, নকুলের ভাই আর তাদের ফ্যামিলি নিয়ে শুরু হয় ঝামেলা । শেষ পর্যন্ত কি হবে নকুলের । সমাজের চোখ কে কি তারা ভিন্ন দিকে নিতে পারবে । নাকি তাদের ফ্যামিলি একটা সারকাস ফ্যামিলিতে পরিনত হবে ।
আলোচনা
“বাধাই হো” মানে হচ্ছে অভিনন্দন । এটি হিন্দি শব্দ । সে যাইহোক, এক মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে । যেখান আছেন এক আশি উর্দ্ধো এক দাদী, এক ছেলে যার বিয়ের বয়স হয়েছে আর ছোট ছেলে যে উচ্চ মাধ্যমিক এ পড়ছে । সেখানে যদি তাদের মা প্রেগনেন্ট হয়ে যায় তবে সেটা একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে । এইটা সত্য । কারন সমাজ এর স্বীকৃতি দেয় না । ৫০ উপরের বয়সের মানুষের রোমান্সের কোন অধিকার নেই ।
তাই নকুলের মা যখন প্রেগনেন্ট সেটা আশে পাশের কেউ মেনে নিতে পারেনি । তবে যাদের সাথে থাকার কথা সেই পরিবার ই সাথ ছেড়ে দিয়েছে । সমাজের কথা বলে তো দোষ নেই । সমাজ আমাদের শিখিয়েছে বাবা মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের জীবন শেষ । তারা এখন বসে থাকবে আর ধর্ম কর্ম করবে । তাদের লাইফ আছে সেটা তারা বুঝতে চায় না ।
মুভির মধ্যে এটাও তুলে ধরা হয়েছে যে একটা রিলেশনশীপ কখনো একা চলতে পারে না । রিলেশনশীপে দরকার শ্রদ্ধা । ভালবাসার আগেও দরকার শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস । কারন এই দুটি জিনিশ মজবুত হলে রিলেশনশীপ টিকিয়ে রাখা অসম্ভব নয় । এছাড়া বউ আর শ্বাশুড়ীর সম্পর্ক নিয়ে যে ভুল ধারনা আছে সেটাও কেটে যাবে হাসতে হাসতে ।
রিভিউ
এই সিনেমাটি মুক্তির আগে ট্রেইলার দেখেই লিস্টে রেখে ছিলাম । দেখবো বলে ঠিক করে রেখেছি । এই মুভিতে এক বয়স্ক দম্পতির রোমান্স তুলে ধরা হয়েছে । আমাদের এবং সমাজের একটা ধারনা জন্ম নিয়েছে যে ৫০ এর উপর বয়স মানে তার জীবন শেষ । সমাজ বয়স্ক মানুষ মানে তার জীবনের সব কিছু শেষ ।
বলে রাখা ভালো পৃথিবীর অনেক নামীদামী ব্যক্তি তাদের ক্যারিয়ার এবং লাইফ ৫০ এর উপরে গিয়ে শুরু করেছেন । যদিও সেটা আলাদা বিষয় । সব ক্ষেত্রে এটা হবে এমন নয় । তাই এটা ভেবে বসে থাকা চলবে না ।
মুভিটির বিষয়ে বলি, এটি বলা চলে সমাজের আর একটা দিক তুলে ধরা হয়েছে । সমাজ বয়স্ক মানে যাদের ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ের বয়স হয়েছে তাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দেয় । কিন্তু তাদের লাইফেও রোমান্স ভালবাসার দরকার । আর সমাজ এখানেই বাধা দেয় । না করা যাবে না । সব কিছু এখন নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে । সব কিছুতেই ভাবতে হবে সমাজ কি বলবে । মুভিটি যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিন ভালবাসা রোমান্সের জন্য বয়স কোন ফ্যাক্টর নয় ।
অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের কথা বলি । আয়ুস্মান আমার প্রিয় অভিনেতার মধ্যে অন্যতম । তাকে আমি ভিকি ডোনার থেকেই পছন্দ করি । তার অভিনয় নিয়ে কোন কথা বলব না এটা আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম । এছাড়া ছিলেন সানায়া মালহোত্রা দারুন অভিনয় করেছেন । একে আপনার আমির খানে “দঙ্গল” মুভিতে ববিতার ভুমিকার দেখেছেন । নিনা গুপ্তা এর কথা বলাটা আমার জন্য কষ্টকর এই গুনী অভিনেত্রী সেই নব্বোই এর দশক থেকে দর্শকদের তার অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করে আসছেন । আরো ছিলেন গজরাজ রাও যিনি “তলোয়ার” মুভিতে ইন্সেপেক্টর ছিলেন, সাবিহা চড্ডা যিনি আয়ুস্মানের সাথে “দম লাগাকে হাইসা” মুভিতে অভিনয় করেছেন, ছিলে সুরেখা সিক্রি যদি টেলিভিশনের অন্যতম গুনী অভিনেত্রী ।
উপরে কলাকুশলীদের দেখেই বুঝা যায় যে মুভিটি কতটা দারুন হয়েছে । এক একজন তাদের নিজ গুনে স্বমহীমায় নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত । এছাড়া মুভির পরিচালক অমিত শর্মা দারুন কাজ করেছেন । এসকল অভিনেতা অভিনেত্রীর দিয়ে কাজটা বের করে নিয়েছেন । এছাড়া সমাজের এই দিকটাও তুলে ধরেছেন । সব দিক থেকে তিনি ভাল কাজ দেখিয়েছেন ।
সবশেষে বলব এর কমিক সেন্স ও হিউমার আপনাকে আনন্দিত করবে আবার ভাবিয়ে তুলবে সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে । এটাই বলব কোন মহাপুরুষ অপু বলেছেন, “ লোকে কি বলবে ভেবে তো আমার কাজ বন্ধ রাখতে পারিনা । লোকে লোকের কথা বলে ।”
বিঃদ্রঃ মুভিটির ভাল প্রিন্ট এখনো আসেনি । আর এই রিভিউ সম্পূর্ন আমার ব্যক্তিগত মতামত ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৯